এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৫

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৫
তানিশা সুলতানা

কেঁদেকুটে গঙ্গা যমুনা বানিয়ে ফেলছে তন্নি। কিছুতেই সে বিয়ে করতে রাজি না। অর্ণবকে তার পছন্দ না ব্যাপারখানা এমন নয়। ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু এখন এভাবে বিয়ে করতে চায় না।
কলমখানা হাতে ধরছেই না তন্নি। হাত দুটো গুটিয়ে রেখেছে। মহা বিরক্ত অর্ণব সেই রাগে রাগের পরিমাণও বাড়ছে। অথৈ আর্থি সমানে বুঝিয়ে যাচ্ছে তন্নিকে। কারো কথাই সে কানে তুলছে না। কাজি এদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে একখানা মন্তব্য করেই ফেলে

“আপনারা কি মেয়েটাকে জোর করে ধরে এনেছেন?
বিগড়ানো মেজাজ আরও বিগড়ে যায় অর্ণবের। চোয়াল শক্ত করে ধমকে বলে ওঠে
” আর একটু কাঁদলে খু ন করে দিবো তোকে।
কেঁপে ওঠে তন্নি। ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। এতো কঠিন ধমক আগে কখনোই দেয় নি অর্ণব। কাজি ঢেড় বুঝে যায় কেস জন্ডিস। মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে এনেছে ওরা। তবে ভয়ের চোটে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। একেতে মোটা টাকা ফিস অলরেডি তার হাতে চলপ এসেছে তারওপরে গুন্ডা গুন্ডা ভাব ছেলেটার মধ্যে। কিছু বলতে গেলে যদি কাজিকেও শহিদ বানিয়ে দেয়। থাক বাবা সব সময় প্রতিবাদ করার সঠিক কাজ নয়।
অথৈ তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“সাইন কর জান।
নাহলে আবার ধমক দিবে তোকে৷
তবুও কলম ধরতে নারাজ তন্নি। যতবারই কলম ধরার কথা মাথায় আনে ততবারই বাবার রাগী মুখখানা ভেসে ওঠে। নিশ্চয় তন্নিকে ভীষণ বকা দিবে। দুই চারটা থা প্প ড়ও দিবে বোধহয়? তারপর বাড়ি থেকেও বের করে দিবে। বাবা মা ছাড়া তন্নি থাকবে কি করে?
বুক ফেঁটে কান্না আসে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কান্না আটকাতে ব্যর্থ হয়ে ফের ফুঁপিয়ে ওঠে সে।
অর্ণব টেবিলে শক্ত করে ঘুষি দিয়ে বলে

” লাস্টবার বলছি
সাইন করবি কি না?
কাজি ভয়ে খানিকটা পিছিয়ে যায়। চেয়ারসহ পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিয়েছে৷ আশিক এবং আকাশ শুকনো ঢোক গিলে একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। খু নো খু নি হবে না কি এখানে? সেটারই ভয় তাদের।
অবশেষে তন্নি কাঁপতে কাঁপতে কলমখানা তুলে নেয়।
পেপারটা অর্ণব এগিয়ে দেয় তন্নির নিকটে।

জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে আড়চোখে এক পলক তাকায় অর্ণবের পানে। চোখাচোখি হয় দুজনার। সাথে সাথে নজর ফিরিয়ে নেয় তন্নি। অভিমানে বুক ভাড়ি হয়ে আসে। লোকটা একদমই ভালো মানুষ নয়।
কাঁপা-কাঁপি হাতে সাইন করতে গিয়ে ফিরে আসতে নিলে ফের আরেকটা ধমক খেয়ে বসে
“কথা কানে যাচ্ছে না কথা?
তারাহুরো করে সাইন করে তন্নি। হাত খানা তার এখনো কাঁপছে। বুকটা ধুকধুক করছে। চোখের অশ্রু বাঁধ মানছে না। যেনো পণ করেছে নদীনালা না ভরা ওবদি থামবেই না।
অর্ণব বাঁকা হাসে। আশিকের হাত থেকে মালা নিয়ে তন্নির গলায় একটা পরিয়ে দেয় আরেকটা নিজের গলায় পড়ে নেয়।

” আশিক পাপার নাম করে বাকিতে মিষ্টি কিনে গোটা পাড়া মিষ্টি বিলিয়ে দিস।
চটজলদি মাথা নারিয়ে সম্মতি জানায় আশিক।
অর্ণব তন্নির হাত ধরে বেরিয়ে যায় কাজি অফিস থেকে। পেছন পেছন যায় আর্থি এবং অথৈ।
এতোক্ষণে কাজি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
“যেনো টর্নেডো বয়ে গেলো আমার অফিসে”

স্কুল থেকে খবর এসেছে তন্নি স্কুলে যায় নি। চিন্তিত তারেক। একটু পরেই কোর্টে হাজির হতে হবে। মার্ডার কেচের এক আসামির বিপক্ষে কেচ চলছে তার। বাড়িতে যায় নি তন্নি। কোথায় গেলো?
তখুনি স্কুলের দপ্তরি তারেককে জানায় এমপির ছেলে স্কুলের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে তার মেয়েকে। মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে যায় তারেকের। তিনি পুলিশ পাঠায় অর্ণবকে ধরতে। এই-বার ওই অসভ্য ছেলেকে একটা শাস্তি দিয়েই ছাড়বে তারেক। এমনি এমনি একদমই ছাড়বে না। জেলের ভাত খাওয়াবেই।
জরুরি তলবে আনোয়ারকে বাড়ি আনা হয়েছে অফিস থেকে। ডাকা হয়েছে সুমি আদিল ওদেরকেও। এমনকি তারেককেও কল করা হয়েছে। তিনি কোর্টে ছিলেন বিধায় কল তুলে নি। শেষমেশ মেসেজ করা হয়েছে তাকে।
লিভিং রুমের এক কোণায় তন্নিকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত সে। চোখের পানি বোধহয় ফুরিয়ে গিয়েছে।

অর্ণব পায়ের ওপর পা তুলে সোফায় বসে গভীর মনোযোগ সহকারে ফোন দেখছে। আশা বেগম চিন্তিত। ছেলে যে তার কোনো একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে ঢেড় বুঝতে পারছে। তবে কি ঘটনা সেটা ধরতে পারছে না। জিজ্ঞেস করার সাহসটুুকুও তার নেই।
আনোয়ার সদর দরজায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে অর্ণব দাঁড়িয়ে যায়। এবং বলতে শুরু করে
“হ্যাপি বার্থডে পাপা। তোমার জন্মদিনে আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য উকিলের মেয়ে তুলে বিয়ে করে এনেছি। উকিল পুলিশ লাগিয়ে দিয়েছে। এখন তুমি ট্রিট হিসেবে কিছু টাকা পুলিশের মুখের ওপর ছুঁড়ে মেরে তাদের শান্ত করো।

চমকায় সকলে। আনোয়ারের আঁখি পল্লব বড়বড় হয়ে যায় নিমিষেই। যেনো বিশাল একখানা শোক পেয়েছে তিনি। আশা বেগম ধাপ করে বসে পড়ে সোফায়। মাথা ঘুরছে তার। আদিল ভ্রু কুচকে তন্নি অর্ণব দুজনকেই দেখছে। বিশ্বাস হচ্ছে না ঠিক। রেগে আছেন সুমি বেগম।
তিনি দু পা এগিয়ে বলে
” ফাজলামো পেয়েছিস?
জোর করে কেনো বিয়ে করলি? তুই জানিস না ওকে আমরা
সুমির কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই অর্ণব বলে
“আমি তো ওকে জোর করি নি। জাস্ট তিনটে থা প্প ড় আর বারোটা ধমক দিয়েছি তাতেই সুরসুর করে সাইন করে দিয়েছে।

বাচ্চা ছেলে আমি। এখনই বিয়ে করার প্ল্যানিং ছিলো না।
বলার মতো আর কিছু খুঁজে পায় না সুমি বেগম। দাঁতে দাঁত চেপে দু পা পিছিয়ে যায়। আদিল নিজেও মনে মনে তন্নিকে পছন্দ করে। স্বপ্ন সাজিয়েছিলো। সাদির এহেম কান্ডে বেশ বিরক্ত সে।
আনোয়ার শুকনো কাশি দিয়ে অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়ায়। খানিকটা কঠোর গলায় শুধায়
” আমাকে বললে না কেনো?
অর্ণব ফের বসে পড়ে পায়ের ওপর পা তুলে।
“বললে কি সারপ্রাইজ থাকতো?
আনোয়ার বিরবির করে বলে
” এমন সারপ্রাইজ না দিয়ে জুতো দিয়ে দুটো বারি দিতিস। তবুও ভালো লাগতো।
বাবার কথা পুরোপুরি শুনে না অর্ণব। তবুও আন্দাজ করে নেয়।
“পাপা সারপ্রাইজ পছন্দ হয় নি?

আনোয়ারের ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে দুটো চর মারতে ছেলের গালে। তবে আদরের কলিজা কি না। তাকে চর মারতে গেলে আনোয়ার নিজেই হার্টফেল করবে।
পিনপিন নিরবতা বিরাজ করছে গোটা লিভিং রুম জুড়ে। আশা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। তন্নিকে তার অপছন্দ ব্যাপারখানা এমন নয়। তবে এইভাবে ছেলের বিয়ে মানতে পারছে না।
তারেক এসেছে। হাঁপাচ্ছে রীতিমতো। ভীষণ তারাহুরো করে এসেছে সকলেই বুঝতে পারছে। মেয়ের চিন্তায় কোর্টে কনসিনক্রিয়েট করতে পারে নি ঠিকঠাক। ফলসরূপ কেচটা প্রায় হারতে বসেছে।
তারেক এসে সর্বপ্রথম নিজের কন্যাকে বুকে আগলে নেয়। তন্নিও বাবাকে পেয়ে পূণরায় কেঁদে ওঠে। অথৈ এক গ্লাস পানি এনে দেয় তারেককে। বীণা বাক্যে পানিটুকু পান করেন তিনি।

সোফায় এক পাশে বসেছে তারেক এবং তন্নি অপরপাশে অর্ণব এবং আনোয়ার। অথৈ আর্থি পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। আদিল চলে গিয়েছে। এসব দেখার ইন্টারেস্ট তার নেই। তন্নির মাথাখানা নিচু।
এক পর্যায়ে আনোয়ার বলে
“যা ভুল করার করে ফেলেছে। এবার একটা সমাধান দরকার।
ফুঁসে ওঠে তারেক। কঠিন গলায় বলে
” সমাধানের কিছু নেই। আমার বাচ্চা আমি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
সাথে সাথে অর্ণব জবাব দেয়। যেনো তার ঠোঁটের সাথেই জবাব লেপ্টে ছিলো
“বউ ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
থতমত খেয়ে যায় আনোয়ার এবং তারেক। লজ্জায় তন্নির নিচু মাথা আরও একটু নিচু হয়ে যায়।
তারেক দাঁতে দাঁত চেপে বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৪

” এমপি সাহেব আপনার ছেলেকে সামলান।
আনোয়ার কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্ণব বলে ওঠে
“পাপাকেই সামলায় মাম্মাম তিনি আবার আমাকে কি সামলাবে।
অথৈ এবং আর্থি কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে।
আনোয়ার লজ্জায় নুয়িয়ে পড়ে। আশা বেগম সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। নহয় তিনিও লজ্জায় আধম রা হতেন।
তারেক আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের মুখের দিকে। একটা ছেলে এতোটা বেয়াদব কি করে হতে পারে?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৬