এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩০
তানিশা সুলতানা
ভাগ্য বোধহয় আজকে তন্নির সহায় ছিলো না। তাই কোনো অটো রিকশা বা সিএনজি খুঁজে পায় না। কাঠফাঁটা রোদ্দুরে পিচ ঢালা রাস্তায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘোরাতে থাকে অনবরত। যতদুর দৃষ্টি যাচ্ছে শুনশান নিরবতা ছাড়া কোনো যানবাহন কিংবা মানুষের আনাগোনা নেই।
থাকবে কি করে? ভার্সিটির পেছনের দিক এটা। এখানে সচারাচর গাড়ি চলাচল করে না। কলেজ ছুটির পরে দুই চারটা রিকশা সিএনজির দেখা পাওয়া যায়। তবে আজকে অনেকক্ষণ আগেই কলেজ ছুঁটি হওয়ার ফলে সব চলে গিয়েছে।
হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে তন্নি। ওড়না দ্বারা রোদের আড়াল করতে চায় মুখখানা। তবে পারে না। পাতলা ওড়না ভেদ করে সূর্য্যমামা চোখে বিঁধে৷ ইতোমধ্যেই ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে।
মনে মনে কয়েকটা কঠিন গালি আওড়ায় সূর্যের উদ্দেশ্যে। শুনলো কি সূর্য মামা?
অর্ণব গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তন্নিকে। অগোছালো রমনীকে বেশ লাগছে। নজর ফেরানো দায়। মানতেই হবে ভাড়ি রূপবতী হয়েছে মেয়েটা। আগে এতোটা ফর্সা ছিলো না। শ্যাম বর্ণের ছিলো। এখন ধবধবে ফর্সা হয়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত চুল দেখার সুভাগ্য হয় নি অর্ণবের। আগের মতোই লম্বা আছে? না কি কেটে ফেলেছে?
চুল কাটলে এই অহংকারী বাপের অহংকারী কন্যাকেও অর্ণব চৌধুরী কেটে ফেলবে।
অর্ণব বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে আসে তন্নির নিকট। সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তন্নির নজর পড়ে। ছোট ছোট চোখ করে তাকায়।
“আমার ওয়ালেট?
হাত পেতে চায় অর্ণব।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তন্নি কাঁধ হতে ব্যাগ নামিয়ে চেইন খুলতে যায় তবে কিছু একটা ভেবে খুলে না। আবারও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বলে
” আপনার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলবো। আসুন আমার সাথে।
বলতে বলতে পা বাড়ায়। অর্ণবও তন্নির পেছন পেছন যায়। দশ মিনিটের মতো হাঁটার পরে রিকশার দেখা মেলে। পরপর দুটো রিকশা ওদের দিকেই আসছে। তন্নি হাত উঁচু করে রিকশা ওয়ালাদের থামায়। একটা রিকশায় নিজে বসে পড়ে। এবং অপর রিকশায় অর্ণবকে উঠতে বলে রিকশা ওয়ালাকে বলে
“আমার রিকশা ফলো করুন।
অর্ণব কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ে। রিকশা ওয়ালা ফলো করতে থাকে।
দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট পরে রিকশা থামে পদ্মা নদীর সামনে। তন্নি নিজ রিকশা সহ অর্ণবের রিকশার ভাড়াও পরিশোধ করে দেয়। এবারেও অর্ণব চুপ। রিকশা ওয়ালারা চলে যায়। তন্নি গিয়ে দাঁড়ায় পদ্মা নদীর একদম পাড় ঘেসে। অর্ণবও এগিয়ে তন্নির পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়ায়
” আমার পিছু কেনো নিচ্ছেন?
অর্ণব বোধহয় একটু বিরক্ত হলো।
“এক্সকিউজ মি
তোমার পিছু আমি নেই নি। বরং তুমিই এনেছো এখান ওবদি।
” তামিমকে দিয়ে ওয়ালেট পাঠানোর কি মানে? এটা পিছু নেওয়া নয়?
তন্নির কন্ঠে তেজ স্পষ্ট।
আসমানের পানে তাকায় অর্ণব। ধীর গলায় জবাব দেয়
“কথা বলতে চাচ্ছিলাম তোমার সাথে।
” কেনো কথা বলতে চাইবেন? আমাদের কথা অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অর্ণব। তাকায় তন্নির মুখপানে।
“প্রেম আলাপ করতে চাচ্ছিলাম না। সাগরের পেছনে আঠার মতো লেগে আছো তুমি। তোমার সুবিধাবাদি বাপ সাগরের ঘাড়ে তোমাকে চাপাতে চাচ্ছে।
রাগ হয় তন্নির। এটা বলতে এসেছেন উনি?
” তোহহ?
সাগরকে বিয়ে করবো আমি।
“সে করবে আমি জানি। বেটার পেলেই গলা জড়িয়ে ধরার স্বভাব তোমার এবং তোমার বাপের সেটা জানা আছে আমার।
অথৈ সাগরকে পছন্দ করে সেটাই বলতে চেয়েছিলাম। তোমাদের লোভে আমার বোন কষ্ট পাবে।
চোয়াল শক্ত করে ফেলে তন্নি। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। আঁখি টলমল করছে।
“বেটার খুঁজি নি কখনো। বেটার পেয়ে ভাবনা চিন্তা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বোকা আমি নই।
মানুষের ইমোশনের দাম আছে আমার কাছে। নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেই না। অমানুষের মতো
বলতে বলতে দুই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েকফোঁটা পানি।
অর্ণবের মাথা বিগড়ে যায়। দুই হাতে শক্ত করে ধরে তন্নির দুই বাহু। ঝাঁকিয়ে বলে
” আমার মতামত তোমার ওপর চাপিয়েছি? তোমার মত ছিলো না? আমি অমানুষ?
একটা ছেলে সারাক্ষণ তোমার পেছনে ঘুরঘুর করছে। রাতে তোমার রুমে যাচ্ছে। চুমু দিচ্ছে। অথচ তুমি চুপচাপ মেনে নিলে। কঠোর গলায় কখনো কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলে না। সম্মতি না থাকলে অবশ্যই কঠোর হতে।
তন্নির বাহু ছেড়ে দেয় অর্ণব৷ একই সুরে আবারও বলে ওঠে
“ওহহহহ
ছেলেদের ছোঁয়া ভালো লাগে খুব? সে***** করতে ইচ্ছে করে কিন্তু বিয়ে করতে ইচ্ছে করে না।
বিয়ে করলে তো একটা ছেলের সাথেই থাকতে হবে এখানেই প্রবলেম ছিলো তোমার।
তাই অমনুষ পদবি পেলাম। ভুল আমারই। বিয়ে করাই ভুল ছিলো।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তন্নি। শরীর কাঁপছে। এমন জঘন্য কথা অর্ণব বলতে পারে ধারণা ছিলো না তার।
অস্ফুরণ কন্ঠে তন্নি বলে ওঠে
” আপনার এই মুখটা আর কখনো দেখাবেন না আমায়।
তরতর করে বেড়ে যায় অর্ণবের রাগ। খপ করে ধরে তন্নি ডান হাত।
“আল্লাহর কসম আজকের পর থেকে তোর সামনে আমি আসবো না। অথৈয়ের জীবনও তোকে নষ্ট করতে দিবো না। জাস্ট চুপচাপ আমার সাথে চল
বলতে বলতে টেনে নিয়ে যেতে থাকে তন্নিকে। তন্নি প্রতিবাদ করতে পারে না। কান্না আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে পা বাড়াতে থাকে অর্ণবের সাথে। আশিককে অর্ণব গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছিলো। মেইন রোডে উঠতেই আশিকাহ গাড়ির দেখা মেলে। ওদের আসতে দেখে গাড়ির দরজা খুলে দেয় আশিক। অর্ণব তন্নিকে ছুঁড়ে মারে গাড়িতে পরপর নিজেও বসে পড়ে। আশিক শুকনো ঢোক গিলে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালানো শুরু করে।
দশ মিনিটের মধ্যে আশিকের বাড়ির সামনে গাড়ি থামে।
অর্ণব দরজা খুলে নেমে পড়ে। তন্নি মৃদু স্বরে বলে
” আমাকে এখানে আনার মানে কি?
“গড প্রমিজ করেছি। প্রশ্ন ছাড়া আজকের রাতটা আমাকে দিবি। কাল থেকে তোর মুক্তি।
” আমি কোনো খারাপ মেয়ে নই যে
তন্নির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অর্ণব বলে ওঠে
“আই নো দ্যাট
তুই ভালো মেয়েও না।
বিয়ে করেছি তোকে। এখনো ডিভোর্স হয় নি। হক আছে আমার। চুপচাপ আমার কথা মেনে না নিলে ডিরেক্ট চলে যাবো তোর বাড়িতে। হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দিবো তারেক রহমানের সাথে।
বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে তন্নি। নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। অর্ণবের আগে আগে ঢুকে পড়ে বাড়িতে। আশিক দরজা খুলে দিয়ে চলে গিয়েছে। তন্নি ঢুকে পড়ে বাড়িতে। প্রথমেই নাকে লাগে গাঁদাফুলের ঘ্রাণ। পরপর বেলি এবং নাম না জানা বিভিন্ন ফুলের গন্ধ। রুমটা যেনো ফুলের গন্ধে ম ম করছে। উৎস খুঁজতে তন্নি পা বাড়ায় বেড রুমের দিকে।
যা ভেবেছিলো তাই। বাসর সাজানো হয়েছে। মনে মধ্যে ভয় দানা বাঁধে তন্নির। লোকটা উল্টাপাল্টা কিছু করবে কি?
তখনই নিজের ঘাড়ে কারো নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব টের পায়। পরপর পেটে হাতের ছোঁয়া। চমকায় তন্নি ছিঁটকে দূরে যেতে নেয়। শক্ত হাতের বাঁধনে আটকে পড়ে।
কামিজের ফাঁকে হাত গলিয়ে দেয় অর্ণব।
তন্নি কাঁপা-কাঁপি গলায় বলে
” আজ না অর্ণব প্লিজ
শোনে না অর্ণব। তন্নির কাঁধ হতে ব্যাগ নিয়ে সেটা ফেলে দেয় ফ্লোরে। ওড়না টেনে সেটাও ফেলে দেয়। অতঃপর মুখ ডুবিয়ে দেয় তন্নির গলায়। কুচকুচে কালো তিলে একেরপর এক চুমু খেতে থাকে। তন্নি নিজের সব টুকু শক্তি দিয়ে অর্ণবকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই বক্ষদেশে চাপ অনুভব করে। যত ছটফট করছে চাপের প্রবণতা তত বাড়বে। ব্যাথা পাচ্ছে বেশ। থেমে যায়। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। অস্ফুরণ স্বরে আর্তনাদ করে ওঠে।
অর্ণব বোধহয় একটু বেশিই বেপরোয়া হয়ে উঠলো। মুহুর্তেই তন্নিকে কোলে তুলে নিয়ে বড়বড় পা ফেলে বিছানার কাছে আসে। ফুলে সজ্জিত বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও আধশোয়া হয়।
তন্নি অসহায় গলায় আবারও বলে ওঠে
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৯
“প্লিজ অর্ণব ছেড়ে দিন৷ আমি যা বলবেন তাই শুনবো। আজকে না প্লিজ।
অর্ণব বাঁকা হাসে
“আপাতত আমার সঙ্গ দিতে বলছি