এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৯

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৯
তানিশা সুলতানা

দিন শেষে মানুষ নিজের দায়িত্বের কাছে হেরে যায়। সকল পিছুটানকে পেছনে ফেলে দায়িত্বকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে। আর যদি হয় মেয়ে মানুষ। তাহলে তো তার দায়িত্ব আকাশ ছোঁয়া।
সম্পর্ক, ভালোবাসা, পিছুটান সব গুলোকে উপেক্ষা করেও শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারে পারছে না তন্নি। প্রতি মুহুর্তে নিজের সাথে যুদ্ধ করে টিকে রয়েছে জগত সংসারে।
প্রচন্ড ভালোবেসেও নিজেকে শক্ত খোলসে আবদ্ধ করে রেখেছে। দিন শেষে নিস্তব্ধ রাতে নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে সে। বালিশ আঁকড়ে কেঁদে ফেলে আপনাআপনি। তবে সেই কান্নার শব্দ হয় না। বাবা মা শুনে ফেললে জবাব দিতে পারবে না যে। অবশ্যই জবাব চাইবে না। তারা বুঝে ফেলবে মেয়ের চাপা কষ্ট। তবে তন্নি চায় না তারা সেটা বুঝুক। পড়ে ফেলুন তন্নিকে।

ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলা হয়েছে গোটা কক্ষ। তন্নি নিজে হাতে সাজিয়েছে এই কক্ষ। এখানেই আজকে বিবাহিত জীবনের সূচনা করবে আকাশ সাথী। তন্নির খুব করে ইচ্ছে করছিলো আকাশকে বলতে “ভাই সাথী আজ আমার সাথে ঘুমাক। বাচ্চা মানুষ আপনার সাথে থাকতে ভয় পাবে”
তবে সংকোচে বলতে পারে না। আকাশের বাবা আফসার উদ্দিন ভীষণ ভালো মানুষ। হেসে কথা বলেন সকলের সাথে। আর মা রাজিয়াও ভীষণ মিশুক। তবে স্পষ্ট বাদি। তার যেটা ভালো লাগবে না মুখের ওপর বলে দিবে। এই গুণটা তন্নির বেশ পছন্দ। মানুষ তো এমনই হওয়া উচিত।
পেছনে কথা বলা মানুষ গুলো ভয়ংকর। সামনে বলে কষ্ট দেওয়া ভালো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তন্নি বিছানায় লাভ সেভ এঁকে তাতে গোলাপের পাঁপড়ি দিচ্ছে ভরে দিচ্ছে। অথৈ কথা বলছে তো বলছেই। কলেজে আজকে এটা হয়েছিলো কালকে ওটা হয়েছিলো। পৌরসু সাগর ভাইয়াকে দেখেছি। তন্নির একটুও বিরক্তা লাগছে না। বরং মনোযোগ দিয়ে শুনছে প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর বক্তব্য। চটজলদি একটা ব্যাপার বুঝে ফেলে “অথৈ নামক এই চঞ্চল হরণী সাগর নামক সুপুরুষকে মারাক্তক ভালোবাসে। জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসা যাকে বলে”
মনে মনে বেশ খুশি হয় তন্নি। সাগর ভালো ছেলে। সে অথৈয়ের মতোই একটা ভালো মেয়েকে ডিজার্ভ করে। ভীষণ সুন্দর হবে তাদের জুটি। দুজনকে একসাথে বড্ড মানাবে।
আনমনে হাসে তন্নি।

“মায়াবতী
হাত থেমে যায় তন্নির। মাথা তুলে দরজার পানে তাকায়। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। হাতে তার দুধের গ্লাস। কোঁকড়া চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কপাল জুড়ে। তা হতে টপটপ করে পানি পড়ছে। শর্ট হাতার সাদা রংয়ের টিশার্ট গায়ে চাপিয়েছে বুকের ওপরে লেখা “forever” দুই হাতের মাছেল ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কালো রংয়ের টাউজার খালি পা। ব্যাসস এই টুকুই
তবুও বেশ ভালো লাগছে তন্নির কাছে। দেখতেই ইচ্ছে করছল শুধু। কোঁকড়াচুল গুলো মুছে দিতে ইচ্ছে করছে। শক্তপোক্ত বুকে মাথা রেখে হৃৎস্পন্দন শুনতে ইচ্ছে করছে। চাপ দাঁড়িতে নিজের গাল ঘসে নিতে মন চাচ্ছে।
তন্নিকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু কুচকায় অর্ণব। সেটাও এক সৌন্দর্য। দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে ভাজ ফেলেছে। কপালে তিনটে ভাজ পড়েছে। বিলাই আঁখি জোড়া খানিকটা বড়বড় হয়ে গিয়েছে।
আনমনেই তন্নি বলে ওঠে

“আমাকে মায়াবতী বলে ডাকবেন না প্লিজ।
অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টানে। বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে আসে। অথৈ সরু দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে তন্নিকে। এক পর্যায়ে মাথায় গাট্টা মেরে বলে
” এই তন্নি কি হয়েছে?
তন্নির হুশ ফেরে। এদিক ওদিক দৃষ্টি ফিরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করতে থাকে। ছিহহ ছিহহ এতোক্ষণ কি নিলজ্জের মতো লোকটার দিকে তাকিয়ে ছিলো? কি ভাবলো উনি? তন্নিকে নিশ্চয় বেহায়া ভেবেছে”
অর্ণব টি-টেবিলে দুধের গ্লাস রেখে বলে
“জলদি কর তোরা। রাত প্রায় শেষ হতে চললো। ওরা আসবে তো।
অথৈ সাথে সাথে জবাব দেয়
” অল মোস্ট ডান দাভাই। ওদের নিয়ে আয়।
“ওকে
বাট তোরা না বেরুলে কি করে আনবো?

বারবার তোরা শুনে বেশ রাগ হয় তন্নির। তোরা কি? তন্নিকেও কি তুই বলে সম্মোধন করলো? কেনো? তন্নি কি লোকটার বোন লাগে না কি আশ্চর্য?
গোলাপের পাঁপড়ি গুলো ফ্লোরে ফেলে দেয় তন্নি। শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে জবাব দেয়
” তোরা বের হ অথৈ।
তোরা না বেরুলে ভাইয়া আসবে না। নিলজ্জ কি না তোরররা
অর্ণব ফিক করে হেসে ফেলে। অথৈয়ের কাঁধে জড়িয়ে বলে
“তন্নি সোনা তুই আগে বের হ। আমরা তোর পেছন পেছন আসছি।

রাগে নাকের পাটা ফুলতে থাকে তন্নি। ডিরেক্টলি তুই বললো? কতোবড় সাহস। মনে মনে অর্ণবকে বকা দিতে দিতে বেরিয়ে যায় কক্ষ হতে। অর্ণবও অথৈয়ের কাঁধ জড়িয়ে বের হয়। রাজিয়া বেগমের কাছে অথৈকে শুয়িয়ে দিয়ে আসে। তারপর আশিক সাথীকে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দেয়।
সাথী জরসরো হয়ে বসে পড়ে খাটের এক কোণায়। এই সুযোগে অর্ণব পকেট থেকে বের করে কাঙ্ক্ষিত জিনিস৷ আশিকের হাতে গুঁজে দেয় এবং ফিসফিস করে বলে

” পাঁচ প্যাকেট আছে। সব গুলো কাজে লাগাতে না পারলে তোর ইয়ে কে টে ফেলা হবে শালা
আশিক শুকনো ঢোক গিলে নিজের হাতের মুঠোয় দৃষ্টি দেয়। সব গুলো ব্যবহার করা পসিবল?
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে অর্ণবের মতোই ফিসফিস করে বলে
“তোর জন্য রেখেছিস কয় প্যাকেট?
অর্ণব মেকি হেসে বলে
“তোর মতো দুর্বল না কি আমি? এক প্যাকেটই রেখেছি। তাও জানি আগামীকাল দোকানে ফেরত দিয়ে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ আনতে হবে।।
এবার আশিক হেসে ফেলে। অর্ণব আশিকের মাথায় চাটি মেরে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বাইরে থেকে দরজা লাগাতেও ভুলে না।

” হ্যালো বাবা
আমি আশিক ভাইয়াদের বাসায়ই থেকে যাবো আজকে। অথৈ রয়েছে এখানে। কাল সকাল সকালই বাসায় পৌঁছাবো। পাক্কা প্রমিজ
ওপাশ থেকে কি বলে অর্ণব শুনতে পায় না। তবে তার জবাবে তন্নি বলে
“কান অন পাপা
এতো ভয় কেনো পাচ্ছো। এখানে আন্টি রয়েছে আংকেল আছে অথৈ আছে। আমি সেভ থাকবো। এই তো এখনই আন্টি আর অথৈয়ের সাথে ঘুমবো।
তখনই অর্ণব তন্নির ফোনখানা টেনে নিয়ে নেয়। তন্নি চমকায়। ধরফরিয়ে ওঠে বুক খানা। অর্ণব মুহুর্তেই ফোন কানে তুলে ফটফট করে বলে

” শশুর মশাই আপনার মেয়ে আর আমি এক সাথে ঘুমবো আজকে। শুধুই ঘুমবো। টেনশন করবেন না। আপনার মেয়ে একদম সেভ থাকবে। একটা চুমুও খাবো না। আপনার টাকলু মাথার কসম।
বলেই ফট করে কল কেটে দেয়৷ তন্নি চোখ মুখ খিঁচে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কি বললো এসব? কান গরম হয়ে উঠেছে। ধোঁয়া বেরুচ্ছে বোধহয় কান দিয়ে। বাবা কি মনে করলো? এই মুখ নিয়ে কি করে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?

তন্নির মুখ পানে তাকিয়ে অর্ণব বাঁকা হাসে। মানতেই হবে আশিকদের বাড়ির ছাঁদটা ভীষণ সুন্দর। ছাদের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে জোছনা আর ঝিরিঝিরি হাওয়া। এই মুহুর্তে ওরা দাঁড়িয়ে আছে চিলেকোঠার সামনে। অর্ণব এক হাত রাখে তন্নির কোমরের পাশে দেয়ালে। ইচ্ছে করছিলো হাত খানা নরম উদরে রাখার। তবে ইচ্ছেটা দমন করলো। অপর হাত মাথার ওপরে দেয়ালে।
মুখটা খানিকটা ঝুঁকিয়ে থেমে থেমে বলে
“দুরত্ব লুকোচুরি অভিমান আর ভালো লাগছে না। এবার সবটা ঠিকঠাক করতে চাই নয়ত সবটা শেষ করতে চাই।
শুকনো ঢোক গিলে তন্নি। পিটপিট করে চোখ খুলে। সিগারেটে পোরা ওষ্ঠের পানে তাকায়। হৃৎস্পন্দন তার নিজ গতিতে লাফিয়েই যাচ্ছে। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।উহু হাত দিয়ে নয়। অধর দিয়ে।
নিজ ইচ্ছেকে ধামাচাপা দিতে নজর ফিরিয়ে রিনরিনিয়ে প্রশ্ন করে

” বাবাকে এসব না বললেই হতো না কি?
ঠোঁট কামড়ে হাসে অর্ণব৷ আবছা আলোতে সেই হাসি বুকে বিঁধে তন্নির। ডান হাতটা আপনাআপনি চলে আসে অর্ণবের গালে। আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়। মাথাটা এলিয়ে দেয় অর্ণবের বুকে। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে অর্ণব। প্রিয়তমার নিজ উদ্যোগে প্রথম স্পর্শ।
“বললাম
লুকোচুরি ভালো লাগছে না। এবার যা করবো ওপেন এ।
তন্নি ফের মাথা তুলে তাকায় অর্ণবের পানে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৮

” কিন্তু
অর্ণব চটজলদি মাথার ওপরে থাকা হাত খানা নামিয়ে আনে তন্নির ঠোঁটে। এক আঙুল ঠোঁটে ঠেকিয়ে মোলায়েম স্বরে বলে
“হুশশশশ
কোনো কথা নয়। এবার থেকে কথা বলবো আমি। শুনবে তুমি।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪০