এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৩
তানিশা সুলতানা
প্রহেলা সেপ্টেম্বর চিঠি দিবস। অনেকের মতে চিঠি দিবস আবার কি ভাই? এতো দিবস কেউ পালন করে? যতসব আদিক্ষেতা। আবার অনেকের মতে আবেগ প্রবল দিন এটা। গোটা একটা পৃষ্ঠা কালো, লাল, নীল কালির প্রলেপে কিছু অক্ষর লিখে মনের ভাব প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম। প্রিয় জনকে মনের কথা প্রকাশ করার একটা দিন।
তামিম শুনেছে কিছু দিন আগেই। এবং মনেও রেখেছে।
কোচিং থেকে থেকে বাড়ি ফিরে নি। সোজা স্কুলে চলে গিয়েছে। নয়টায় ক্লাস শুরু হয়। স্কুল খুলেছে দারোয়ান। তামিম নিজ কক্ষে প্রবেশ করে সব গুলো সিট ঘুরে ঘুরে দেখে। কোন সিটে লাবিবা বসতে পারে এটাই চিন্তা করতে থাকে।
অতঃপর চোখ বন্ধ করে অপু দশ বিশ গুনতে শুরু করে। একশো হয় চতুর্থ নং সিটে। সেখানে বসে পড়ে। সুপার গ্লু আঠা বের করে ব্যাগ হতে। তারপর পকেট থেকে চিরকুট বের করে। সেথায় সুন্দর করে নিজ মনের বক্তব্য লিখে ফেলে। আর আঠার সাহায্যে সিটে লাগিয়ে দেয়।
যাককক বাবা চিঠি দেওয়া শেষ এবার শুধু লাবিবা দেখার অপেক্ষা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তারেক গভীর ভাবনায় বিভোর। যেভাবেই হোক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি বেশ জানে মেয়েটা ওই লেজ ছাড়া বাঁদরকে বেশ ভালোবাসে। এখন ওদের আলাদা করে রাখাটা ঠিক হচ্ছে না। যে বেহায়া ছেলে কবে জানি রাত দুপুরে পুলিশ নিয়ে হাজির হয়ে বলবে “দেখুন স্যার এই উকিল আমার বউকে আটকে রেখেছে। কাছে যেতে দিচ্ছে না। কেস ফাইল করুন ওনার নামে”
মানসম্মান তখন তারেকের তাল গাছে উঠবে। তার থেকে ভালো বসে কথা বলে সবটা ঠিকঠাক করে নেওয়া। কিন্তু কথাটা বলবে কার সাথে? আনোয়ারের নাম্বার তো নেই তার কাছে। ওই লেজ ছাড়া বাঁদরকে কল করে নাম্বার চাইলে হাজারটা কথা বলবে। মেজাজ গরম করে দেবে তারেকে।
তাছাড়া আর কার কাছে নাম্বার চাওয়া যায়?
ইজি চেয়ারে দুলতে দুলতে চোখ বন্ধ করে ভাবছে তারেক। ইতি বেগম পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। সেদিকে খেয়াল নেই তারেকের। আর ইতি বেগমও ডাকার সাহস পাচ্ছে না।
কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? ডাকতে তো হবেই। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে ইতি রিনরিনিয়ে বলে
“শুনছেন?
তারেক ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় ইতির পানে। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে ” কি”
ইতি নিজের হাতের ফোনখানা এগিয়ে দেয় তারেকের পানে। ভয়ার্তক স্বরে বলে
“তামিমের স্কুল থেকে কল এসেছে। আপনাকে যেতে বলছে।
মেজাজ গরম হয় তারেকে। ছেলে তার বেশ বড়সর কতো গন্ডগোল বাঁধিয়েছে বেশ বুঝতে পারে। আর ওই ছেলের লেজ কাটবে তবেই তারেক ভাত খাবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফোন খানা পকেটে পুরে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। ইতি মনে মনে দোয়া করে ছেলের জন্য।
টিচার্স রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে তামিম৷ তারই পাশে দাঁড়িয়ে আছে তারেক। হেড মাস্টার আজিজুল বাবা ছেলেকে এক পলক দেখে। একখানা চিরকুট এগিয়ে দেয় তারেকের পানে।
তারেক চিরকুট পড়ে
প্রিয় লাবিবা
মন আমার উদাসী
তোমায় ভাবে দিবানিশি
করতে চাই তোমায় বিয়ে
ছিঁড়া টুপি মাথায় দিয়ে
তুমি আমি করব জয়
টাকলু উকিলকে করবো না ভয়।
ইতি
তোমার তামিম
হাতের মুঠোয় চিরকুট খানা মুচড়ে ফেলে তারেক। আজিজুল হতাশার স্বরে বলে
“আপনার ছেলে ক্লাস র
বাকিটা শেষ করার আগেই তামিম বলে ওঠে
” মুরব্বি উহু উহু উহু
সমালোচনা করা পাপ কাজ। আপনি গুরুজন আমার নামে সমালোচনা করে নিজের পাপ বাড়াবেন না প্লিজজ। আমি মেনে নিতে পারবো না।
তারেক হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে ভয়ঙ্কর নয়নে তাকায় তামিমের পানে। সাথে সাথেই তামিম তারেকের পায়ের কাছে বসে পড়ে
“পিলিজ আমায় ক্ষমা করে দাও বাবা। তোমার চুলের কসম আমি আর দুষ্টুমি করবো না।
রাতের রান্না হয় নি বাড়িতে। ভয়ঙ্কর রেগে আছে তারেক। তামিমকে ইচ্ছে মতো পি টিয়েছে তারেক। মা রের ঠেলায় জ্বর চলে এসেছে তামিমের৷ সেই দুঃখে ইতি বেগম রান্না করে নি। তন্নি এসেছে বিকেলে। ভাইয়ের জ্বর দেখে তারও রান্না করতে মন সায় দিলো না।
তারেক উঠোনে বসে আছে। ছেলের জন্য মন তারও পুরছে কিন্তু কিছু বলছে না বা ছেলের কাছে যাচ্ছে না। এতো দুষ্টু ছেলেটা। লোহার গেইটে উঁকি দিচ্ছে রিদি নামের মেয়েটা। তারেক ঢেড় জানে তামিমের সাথে কথা বলার জন্যই মেয়েটা উঁকি দিচ্ছে। এদের বয়স কতো? এখনো দাঁত পড়ে দাঁত উঠলো না।
তারেকের এতোসব ভাবনার মাঝেই বড়সর একটা গাড়ি এসে থামে গেইটের সামনে। রিদি দৌড়ে পালায়। তারেক উৎসুক দৃষ্টি তাকায়। কে আসলো এখন?
গাড়ি থেকে একে একে বেরিয়ে আসে অর্ণব অথৈ আর্থি আনোয়ার এবং আশা বেগম।
মনে মনে বেশ খুশি হয় তারেক। তবে মুখটা গম্ভীর রেখে এগিয়ে যায়। আনোয়ার এবং আশার সাথে কথা বলে।
অর্ণব প্যান্টের পকেটে হাত পুরে সিঁস বাজাতে বাজাতে চলে যায় তন্নির রুমে দিকে। অথৈ এবং আর্থিও অর্ণবের পেছনে যায়।
ইতি বেগম যেনো মাঝ সমুদ্রে পড়ে গেলো। মেয়ের শশুর বাড়ির লোকজন প্রথমবার বাড়িতে আসলো। অথচ তাদের খেতে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। চটজলদি ফ্রীজ থেকে গরুর মাংস নামিয়ে ফেলে। পেঁয়াজ মরিচ কাটতে শুরু করে।
তারেক আনোয়ার এবং আশা বেগম বসেছে সবার ঘরে।
“ভাই ছেলে মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করে। এতো রাগ অভিমান পুষে রেখে ছেলেমেয়ে দুটোকে কষ্ট দিবেন না ভাই।
আশা বেগমের কথা শুনে তারেক বলে
” আমিও সেটাই ভেবেছি। তবে এই মুহুর্তে আমি আমার মেয়ে তুলে দিবো না। অনার্স শেষ করুক তারপর ভাববো।
আশা বেগম যেনো হতাশ হলো। আর চার বছর অপেক্ষা করতে হবে? শশুর বাড়ি গিয়ে কি পড়ালেখা করা যায় না? তবে এই কথা তারেকের সামনে বলতে পারে না। বললে না আবার বেকে বসে।
ছেলের মুখ চেয়ে এখন চুপ থাকায় শ্রেয়।
আনোয়ার কিছু একটা ভাবে তারপর বলে
“ঠিক আছে। আপনি যেরা বলবেন সেটাই হবে।
তবে বড় মেয়ের বিয়ে। সেখানে যাবে না তন্নি?
” বিয়েতে নিশ্চয় আমাদেরও ইনভাইট করবেন। আমাদের সাথে গিয়ে দাওয়াত খেয়ে আসবে।
আশা বেগম উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে
“এটা হয় না ভাই। অথৈ এটা মানবে? বান্ধবীকে ছাড়া বোনের বিয়ে। অন্তত বিয়ের কয়টা দিন আমাদের বাড়িতে থাকুক।
অমত করতে গিয়েও করতে পারে না তারেক। সম্মতি দিয়ে দেয়।
তন্নি আর অথৈ ইতি বেগমের সাথে রান্না করছে। অথৈ শুধু বসে বসে সব কিছু ধুঁয়ে দিচ্ছে। তন্নি কেটে কুটে দিচ্ছে। আর ইতি বেগম চুলায় দিচ্ছে।
অর্ণব আর আর্থি তামিমের নালিশ শুনছে।
স্কুলে কি ভাবে সিটে চিঠি রেখেছি। লাবিবা কিভাবে চিঠি দেখে কেঁদেছিলো। লাবিবার কান্না থামাতে তামিম টুস করে লাবিবার গালে চুমু দিয়েছিলো। হেড স্যারের কাছে বিচার দিয়েছিলো। স্যার তারেককে সব বলে দিয়েছে। তারপর তারেক পি টি য়ে ছে।
সব শুনে আর্থি হো হো করে হেসে ওঠে। অর্ণব তামিমকে স্বান্তনা দিয়ে বলে
” থাক দুঃখ পেয়ো না। একদিন দেখবা লাবিবা তোমার প্রেমে পাগল হয়ে যাবে।
তামিম আহত স্বরে বলে
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪২
“আর জীবনেও প্রেম ট্রেম নিয়ে ভাববো না গো ভাই। এবার শুধু পড়ালেখা করবো।
তামিমের নালিশ খানিকক্ষণ শুনে অর্ণব চলে যায় তন্নির খোঁজে। এসেছে সেই কখন। অথচ মেয়েটা কাছে আসলো না। একমাত্র জামাই প্রথমবার শশুর বাড়িতে এসেছে৷ একমাত্র বউ সারাক্ষণ গা ঘেসে থাকবে তা না লা পাত্তা হয়ে গেছে। পরপর বিহেভিয়ার করছে। যেনো পালিত জামাই।
মুখ বাঁকায় অর্ণব। সোজা ঢুকে পড়ে রান্নাঘরে।