এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৪

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৪
তানিশা সুলতানা

দুই ঘন্টায় পুরো বারোটা আইটেম রান্না করে ফেলেছে তন্নি এবং তন্নির মা। পোলাও, গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, ডিম, পটল ভাজি, আলু ভাজি, রোস্ট, জর্দা, ডাল, শাক, পায়েস এবং সেমাই।
হাঁপিয়ে গিয়েছে দুজনই। অথৈ শরবত গুলিয়েছে অনেক আগেই। সবাইকে শরবত খাইয়েও ফেলেছে ইতোমধ্যেই। ফল কেটেও দিয়েছে সবাইকে। এবার দুই মগ শরবত গুলো তন্নি এবং ইতি বেগমকে দেয়। ইতি বেগম মুচকি হাসে। এই মেয়েটির সঙ্গে তার খুব একটা পরিচয় নেই। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে কখনো আলাপ করা হয় নি। মাঝেমধ্যে দেখা হয়েছে এবং তন্নির কাছ থেকে গল্প শুনেছে এই যা। মাঝেমধ্যে তিনি একটু বিরক্ত হতো। এতো বড় বান্ধবী বানানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো না। এমনটা বলে তন্নিকে বকেছেও বহুবার। তন্নি তখন ছলছল নয়নে মায়ের পানে তাকিয়ে থাকতো। প্রতিবাদ করার মতো সাহস কোনো কালেই ছিলো না তন্নির৷ একটা ধমক দিলেই সে কপোকাত। নাকের জলে চোখের জলে এক করে ফেলবে।

আজকে অথৈয়ের এরূপ ব্যবহারে মুগ্ধ হয় ইতি বেগম। মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয়। মনে মনে বলে “তন্নি ভুল মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে নি। বড়লোকদের মনে যে অহংকার নেই এই মেয়েটিই তার একমাত্র প্রমাণ”
তারেকের মনে বেশ মায়া হয়৷ ছেলেটা একা একা রয়েছে কক্ষে। একা থাকতে তো একটুও ভালোবাসে না ছেলেটা। সারাক্ষণ বকবক করেই যায়। একা একা থাকতে নিশ্চয় কষ্ট হচ্ছে। তাই তো মানবতা দেখিয়ে তামিমকে আদর করে চুমু দিয়ে নিয়ে আসে রুম থেকে। নিজের পাশে বসিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রাখে।
অর্ণবও এসে বসেছে নিজের বাবার পাশে। অথৈ তন্নিকে নিয়ে কক্ষে গিয়েছে। এখন তন্নিকে সাজিয়ে আনবে। যতই আগে দেখুক। আজকে তো নতুন করে দেখতেই এসেছে। আংটিও পড়াবে। তাহলে একটু সাজাবে না? সাদামাটা বউ দেখবে? এটা তো হতেই পারে না তন্নি বারংবার আপত্তি করেছে। সে সাজবে না। এই একটা ভালো থ্রি পিছ পড়বে। কিন্তু অথৈ তন্নির কথা মানতে নারাজ। অগত্য অথৈয়ের কথাই শুনতে হচ্ছে তন্নিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইতি বেগম সব কাজ সেরে এসে বসে আশা বেগমের পাশে। তাদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু ব্যবসায়৷ আনোয়ার তার ব্যবসায় নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা শোনাচ্ছে তারেক রহমানকে। অর্ণব চ্যাট করছে আশিকের সাথে। বেচারা আশিক আজকে মারাক্তক খুশি। তার বাচ্চা বউ আজকে তাকে চুমু দিয়েছে। তাও হাতে। দয়ালু আশিক তাতেই খুশি। আজকে হাতে দিয়ে কাল ঠোঁটে দিবেই। আশায় বাঁচে আশিক। একদিন বাসরও হবে তার। বাচ্চা কাচ্চা হবে।
প্রতিদিন রোমাঞ্চ করবে এসবই শোনাচ্ছে অর্ণবকে৷ অর্ণব আফসোসের সুরে মনে মনপ বলে
“আহারে কপালে থাকলে এতোদিনে আমি দুই বাচ্চার মা হতে পারতাম”
কিন্তু হাহহহহ

কপাল খারাপ। বাচ্চা তো দূর বউকেই ভালো করে দেখতে পারলাম না খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গোটা টুকু।
সবাই যে যার আলোচনায় ব্যস্ত। তখন অথৈ তন্নিকে নিয়ে আসে। পেঁয়াজ কালার শাড়ি এবং হালকা সাজে ভীষণ সুন্দর লাগছে তন্নিকে। অর্ণব হা করে তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণ। ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে টুপটাপ কয়েকটা চুমু খেয়ে আসতে। কিন্তু পারছে না। ইসস অথৈ টাও না। একটু প্রাইভেসি দিতে পারতো। চুমু খাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতো। বোন নামের কলঙ্ক সে।
আশা বেগম তন্নিকে দেখে কয়েকবার মাশাআল্লাহ বলে ওঠে।। হাত ধরে নিজের পাশে এনে বসায়। নিজের পার্স থেকে স্বর্নের চেইন বের করে পড়িয়ে দেয় তন্নির গলায়।
তামিম কোনো গন্ধ পায়। নাকে লাগছে বেশ। গন্ধটাও মনে হচ্ছে বাবার দিক থেকেই আসছে।
সরল তামিম নাক চেপে উচ্চস্বরে বলে ওঠে

“বাবা তুমি কি বায়ু দূষণ করেছো? কেমন টিকটিকি পঁচা গন্ধ আসছে। কি যে খাও তুমি।
থমথমে খেয়ে যায় সকলে। তারেক বড়বড় নয়নে তাকায় তামিমের পানে। বায়ু দূষণ সে সত্যিই করেছে। খুবই চেপেচুপে বসে ছেড়েছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে। কিন্তু এই ছেলেটা হাতে হাড়ি ভেঙে দিলো?
তারেক শুকনো ঢোক গিলে। লজ্জাও পেয়েছে। অর্ণব ঠোঁট চিপে হাসে। ইতি বেগম দাঁতে চেপে তামিমের দিকে তাকায়। বজ্জাত ছেলে কোথাকার।
আনোয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে

” আপা খেতে দিবেন না? খিধে পেয়েছে।
লজ্জা পায় ইতি বেগম। সম্মতি জানিয়ে সবাই কে নিয়ে যায় ডাইনিং টেবিলে। তন্নিও যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে। তখনই অর্ণব শাড়ির আঁচল টেনে ধরে তন্নির।
তামিমও ব্যাপারটা খেয়াল করে এবং ফট করে বলে ওঠে
“তুমি আপুর আঁচল টেনে ধরছো কেনো? চুমু খেতে চাও?
সকলের পা থেমে যায়। অর্ণব চটজলদি ছেড়ে দেয় তন্নির আঁচল। মাথা চুলকে এদিক ওদিক দৃষ্টি ফেরাতে থাকে। তন্নি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
তারেক চোখ পাকিয়ে বলে
” এসব কি ধরণের কথা তামিম।

“ভালো কথাই তো বললাম বাবা। সেইদিন স্কুলে যাওয়ার ওথে লাবিবাদের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়েছিলাম। দেখলাম লাবিবার বাবা লাবিবার মায়ের আঁচল টেনে ধরে চুমু খেলো।
তো আমি ভাবলাম ভাইয়াও বোধহয়।
অথৈ মিটমিট করে হাসে। ভাড়ি বিচ্ছু ছেলে।
তারেক বড়বড় পা ফেলে তামিমের দিকে এগিয়ে আসতে নেয়। তামিম দৌড়ে আনোয়ারের পায়ের মাঝখানে চলে যায়। তারেক বলে
” তামিম এদিকে এসো।
বকবো না।
তামিম চর করেই বলে ওঠে
” নাটক কম করো প্রিয়
তুমি যে মিথ্যে করে বলে অভ্যস্ত এটা আমরা সবাই জানি।

তারেক চোখ পাকিয়ে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে ধমকে কিছু বলবে তার আগেই অর্ণব বলে ওঠে
“স্যার প্লিজ উত্তেজিত হবেন না।
খিলখিল করে হেসে ওঠে সকলেই। তারেক হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। মনে মনে বিরবির করে বলে ” এতোদিন এক পাগলের সাথে বসবাস ছিলো। তখন আরেকটা পাগল যুক্ত হলো”
খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে এবং গল্প করছে। অর্ণব আর তন্নিকে পাশাপাশি বসিয়েছে অথৈ। তামিম বসেছে অথৈয়ের পাশে। তামিমের মুখ থামছেই না। লাবিবা এটা করেছে লাবিবা ওটা করেছে, লাবিবাকে চিঠি দিয়েছি। হাবিজাবি অনেকক গল্প তার।

অথৈ একটুও বিরক্ত হচ্ছে না বরং মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
অর্ণব এক মনে খেয়ে চলেছে। তন্নির দিকে একবার তাকাচ্ছেও না। তাকাতে যে ইচ্ছে করছে না এমনটা নয়। কিন্তু তাকালেই যদি আবার তামিম লাফ দিয়ে উঠে বলে “ভাইয়া তুমি আপুর দিকে তাকালে কেনো? চুমু খেতে চাচ্ছো?”
মানসম্মান এমনিতেই কম। বাকি যেটুকু ছিলো সেই টুকুও ধুলোয় মিশে যাবে।
থাক বাবা তাকানো টাকানোর দরকার নেই।
এমনিতেই ভালো।
তন্নি বেশ কয়েকবার আড় চোখে তাকিয়েছে অর্ণবের পানে।

খাওয়া দাওয়া শেষে অথৈ তন্নিকে তন্নির রুমে নিয়ে যায়। তার মনোভাবনা এবার অর্ণবকেও পাঠাবে এখানে। এবং দুজনকে একটু প্রাইভেসি দিবে।
তন্নিকে বসিয়ে রেখে চলে যায় অর্ণবকে ডাকতে।
তন্নি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
তারেক এবং আনোয়ার গিয়েছে একটু হাঁটতে। খাওয়া দাওয়ার পরে একটু হাঁটা হাঁটি করা তারেকের ছোট বেলাকার স্বভাব। তাকেই সঙ্গ দিতে আনোয়ার বেরিয়েছে।

আশা বেগম এবং ইতি বেগম গল্প করছে। তামিম আর অর্ণব ফোন দেখছে। অথৈ অর্ণবের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ইশারায় যেতে বলে। অর্ণব শুকনো ঢোক গিলে এক পলক তাকায় তামিমের পানে। তারপর বলে ওঠে
“না বাবা আমি গেলাম আর এই বিচ্ছুটা লুকিয়ে চুকিয়ে সব দেখে নিলো। তারপর সেটা যদি ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়? তখন লজ্জায় আমি মূর্ছা যাবে।
থাক বাবা দরকার নেই প্রাইভেসির।
অথৈ কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে। তামিম ভ্রু কুচকে বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৩

” আমায় কিছু বললে?
অর্ণব একটু হাসার চেষ্টা করে বলে।
“না না
আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তোমায় কিছু বলবো?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৫