এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৬
তানিশা সুলতানা
বৃষ্টি থেমে গেছে৷ একদম হুট করেই৷ এই তো কিছু মুহুর্ত পূর্বেই ঝমঝম শব্দে মুখোরিত হচ্ছিলো চারিপাশ। এখন শুনশান নিরবতা। ছোট্ট বাতরুমে দুই নরনারীর ভাড়ির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। হাত পা ছেড়ে দিয়েছে তন্নি৷ হাঁটু মুরে বসে পড়েছে ফ্লোরে। অর্ণব নিজ কোমরে হাত দিয়ে দাঁত দ্বারা ঠোঁট কামড়ে কিছু চিন্তা করছে। গভীর ভাবে ভাবছে কিছু। ভাবনার বিষয়টা তন্নি। এভাবে কন্ট্রোললেস হয়ে এখানেই রোমাঞ্চ শুরু করা একদমই উচিত হয় নি।
ভাবনার মাঝেই উচ্চ শব্দে দরজায় করাঘাত হওয়ার শব্দ শোনা যায়। অথৈয়ের ননস্টপ ডাক ভেসে আসছে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে অর্ণব৷ আরেহহহ ভাই বিয়ে করা বউ। একটু প্রাইভেসি দিবি না? ফুপি ডাক শোনার কি ইচ্ছে নেই? বেয়াদব মেয়ে। অর্ণবের ঠোঁটের ফাঁক ফোকড় দিয়ে বেড়িয়ে আসে অশ্লীল কিছু বার্তা।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে। এই মানুষটাও এমন গালি দিতে জানে?
অর্ণব ঝুঁকে তন্নির দিকে। ভেজা টকটকে লাল রং ধারণ করা ওষ্ঠে হাত বুলিয়ে বলে
“আসছি হ্যাঁ
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাতে আমার কাছে না গেলে অথৈয়ের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাবো। মাইন্ড ইট
হাত সরিয়ে নিতে চাইলে তন্নি হাতের ওপর হাত রাখে। দৃষ্টি মেলে তাকায় অর্ণবের মুখ পানে। প্রেয়সীর চোখের ভাষা পড়ে নেয় অতি দ্রুত। মৃদু হেসে বলে
” সেম ফিলিংস জান। উস্কে দিও না প্লিজ
বেরিয়ে যায় অর্ণব। রেখে যায় লজ্জা এবং অস্বস্তিতে জর্জরিত তন্নিকে।
অর্ণবের কালো রংয়ের টিশার্ট ভিজে জবুথবু হয়ে গিয়েছে। শুধু টিশার্টই ভিজেছে আর কিছু না। অথৈয়ের ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নেয়। নাহহ সবটাই ঠিকঠাক। শুধু টিশার্টে সমস্যা। ঝাঁকড়া চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঠেলে দরজা খুলে দেয়। অথৈ রাগী দৃষ্টিতে তাকায় অর্ণবের পানে
” কখন থেকে ডাকছি৷ দরজা বন্ধ করে হা ডু ডু খেলছিলি?
অথৈয়ের ভোঁতা নাক টেনে অর্ণব বলে ওঠে
“খেলতাম
মানুষ পেলাম না
বলেই বেরিয়ে যায় কক্ষ থেকে৷ নাক মুখ কুঁচকে নিজের নাকে হাত ঘসে অথৈ। পেছন থেকে বলে অনেক কিছু তবে অর্ণব ফিরেও তাকায় না
অর্ণবকে বকে এবার বাথরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অথৈ।
ধীর গলায় বলে
“আর কতে তন্নি? জলদি বের হ। ঠান্ডা লেগে যাবে।
তন্নি যেনো এই ডাকের অপেক্ষায়ই ছিলো। তাই চটজলদি ড্রেস পাল্টে বেরিয়ে পড়ে। হাত পা এখনো কাঁপছে। ওড়না দ্বারা গলা ভালো করে ঢেকে এসেছে। জখম হয়ে গিয়েছে। রাক্ষস বেডা কা ম ড়ে কা ম ড়ে তন্নির সুন্দর গলা খানা অসুন্দর বানিয়ে ফেলেছে৷ অথৈ বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে এক নজর তাকায় তন্নির পানে। ঝাঁঝালো স্বরে বলে
” কাঁপছিস ঠান্ডায়৷ আরও কিছুক্ষণ সময় নিয়ে গোসল করতিস। তাই ঠান্ডা কম লাগতো।
তন্নি একটু হাসার চেষ্টা করে বেলকনির দিকে ছোটে। ভেজা জামাকাপড় মেলে দিয়ে আয়নার সামনে বসে পড়ে।
ঠোঁট দুটো ফুলে গিয়েছে। অথৈয়ের পানে একবার নজর দেয়। সে পড়ার টেবিল গোছাচ্ছে। তন্নি লুকিয়ে চুকিয়ে ওড়না সরায়। দেখে ক্ষত। ইতোমধ্যেই কালসিটে হয়ে গিয়েছে। চারটা দাঁতের চিহ্ন স্পষ্ট।
মনে মনে বেশ কয়েকটা গালি দেয় অর্ণবকে। লোকটা এতোটা বেপরোয়া কেনো? একটু ধৈর্য সহ্য কিছুই নেই।
আর্থি ডাকছে খেতে। অথৈ তন্নির হাত টেনে নিয়ে যায়। তন্নি যেতে চাচ্ছিলো না। যাবে কিভাবে? ওই লোকটার সামনে পড়লেই তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা হয়ে যাবে।
অর্ণব আগে থেকেই বসে ছিলো ডাইনিং টেবিলে। ইতোমধ্যে দুটো আলুর চপ এবং এক পিছ ইলিশ মাছ সাবার করে ফেলেছে। একটু খিচুড়িও মুখে তুলে টেস্ট করে নিয়েছে।
আর্থি সবার প্লেটে খাবার দিচ্ছে। আনোয়ার নিজ কক্ষে। খিচুড়ি তিনি পছন্দ করে না। তার জন্য এখন ভাত চড়িয়েছে আশা বেগম।
অথৈ আর তন্নি আসতেই অর্ণব হুশিয়ার দিয়ে বলে ওঠে
“অথৈ আমার বউকে আমার পাশে বসতে দে।
অথৈ ভেংচি কাটে। তন্নি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। মান সম্মান আজকে বুড়ি গঙ্গায় ভাসিয়ে দিবে এই লোকটা বেশ বুঝতে পারছে।
অথৈ আঙুল তুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আর্থি বলে
” অথৈ বসতে দে। জামাই বউ পাশাপাশি বসলে ভালোবাসা বাড়ে।
অথৈ আর কিছু বলে না। তন্নিকে বসিয়ে দেয় অর্ণবের পাশে। আর্থি সবার প্লেটে খাবার বেরে দেয়। অর্ণব এক মনে খেয়েই চলেছে। ভীষণ ভালোবাসে সে খিচুড়ি খেতে৷ অথৈও তেমন। আর্থি খাচ্ছে আর ফোন দেখছে। তন্নি আড়চোখে সবাইকে একবার পরখ করে একটুখানি খিচুড়ি মুখে তুলে। ঠোঁটে লাগতেই “ইসসসসস” শব্দ করে ওঠে। সকলের দৃষ্টি তন্নির পানে। অথৈ বিচলিত হয়ে বলে
“কি হলো তন্নি?
শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে
” ও…ওই কিছু না। ঠ…ঠোঁটে কামড় লেগেছিলো তো। তাই ব্যাথা পেলাম খেতে গিয়ে।
অথৈ যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তন্নির প্লেট থেকে মরিচ বাছতে বাছতে বলে
“আস্তে আস্তে খা। তাড়াহুরোর কোনো দরকার নেই।
তন্নি মাথা নারায়।
অর্ণব এক মুঠো খিচুড়ি দলা পাকায়৷ তারপর বোনদেরকে আদেশের সুরে বলে
“তোরা দুজন দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকতে পারলে ডায়মন্ডের দুল কিনে দিবো দুজনকেই।
অথৈ আর্থি আনন্দে নেচে ওঠে। তখুনি চোখ বন্ধ করে ফেলে। এরই ফাঁকে অর্ণব তন্নির গালে হাত দ্বারা চাপ প্রয়োগ করে হা করায়। এবং পরপরই মুখে খিচুড়ির দলা পুরে দিয়ে আলতো করে চুমু খায় ঠোঁটে।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৫
তন্নি টুপ করে গিলে নেয়। নয়ন জোড়া বড়বড় হয়ে গিয়েছে তার। এই লোকটা
অর্ণব পরবর্তীতে একই কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখনই ভেসে আসে এক বাচ্চামো কন্ঠস্বর
” ভাইয়া তুমি কি চুমু খেলে? না কি আমি ভুল দেখলাম?
চট করে চোখ খুলে ফেলে অথৈ আর্থি। চমকায় অর্ণব। শুকনো ঢোক গিলে বিরবির করে বলে
“আরেহহহ শা লা তুই এখানে আসলি কি করে?