এক মায়াবতীর প্রেমে শেষ পর্ব

এক মায়াবতীর প্রেমে শেষ পর্ব
তানিশা সুলতানা

প্রোগ্রাম অলমোস্ট শেষ। ছাঁদ এখন পুরোপুরি ফাঁকা। এতোক্ষণ হৈ হুল্লোড় এর আওয়াজ পাওয়া গেলেও এখন শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে চারিপাশে। সাউন্ড বক্স বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। লাইটিং এর সংখ্যা কমেছে।
অথৈ ছাঁদের রেলিঙ ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার আসমান পানে। তার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাগর। তার দৃষ্টি অথৈয়ের পানে। বলা বাহুল্য আজকে রীতিমতো মেয়েটিকে দেখে ক্রাশ খেয়েছে সে। কই আগে তো এতো সুন্দর লাগে না। না কি সেভাবে খেয়াল করে নি?

হবে হয়ত।
প্রোগ্রাম শেষের দিকে সাগরই অথৈকে টেক্সট দিয়েছিলো ছাঁদে আসতে।
দীর্ঘক্ষণ নিরবতা পালন করে অথৈই আগে মুখ খোলে
“আমি জানি আপনি তন্নিকে পছন্দ করেন। বাট আনফরচুনেটলি তন্নিকে আমার ভাইয়া বিয়ে করেছে। এতোক্ষণে আপনিই জেনে গিয়েছেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাগর জবাব দেয় না। চুপচাপ শুনে যায়। অথৈ ফের বলে
” আপনি তন্নিকে জাস্ট পছন্দ করেন৷ ওকে ভালো লাগে আপনার। এইটুকুই। ভালোবাসেন না। ভালোবাসলে আর যাই হোক তার বিয়ের কথা শুনে এতোটা রিলাক্স থাকতে পারতেন না৷
সাগর মৃদু হাসে। সত্যিই তার এতোটা খারাপ লাগে নি। বা বাঁচবো না টাইপের ফিল হয় নি।
অথৈ এবার সাগরের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে
“আপনাকে আমি ভালোবাসি। যতটা ভালোবাসলে তন্নিকে পছন্দ করেন জাবার পরে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কান্না পাবে। ঠিক ততোটাই ভালোবাসি।

এবং আপনাকে আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি। আমাকেই ভালোবাসতে হবে। আমি মানে আমিই।
অথৈয়ের চোখে পানি টলমল করছে। সাগরের বেশ হাসি পায়৷ প্রপোজ করছে না কি ফোর্স করছে ঠিক বুঝতে পারছে না৷ তবে মেয়েটার কথাগুলো ভীষণ ভালো লাগছে।
” যদি ভালো না বাসি তাহলে কি করবে?
“মে রে ফেলবো৷ আমি ভীষণ প্রসেসিভ একজন মানুষ। যেটা আমার সেটা আমারই৷ আপনাকে আর তন্নিকে আমি কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না।
“আচ্ছা

সাগরের দায় ছাড়া জবাব ভালো লাগে না অথৈয়ের। তাই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। তখনই সাগর হাত চেপে ধরে অথৈয়ের। শান্ত গলায় বলে
” এভাবেই সারাজীবন অধিকার ফলাতে হবে। আমাকে তোমার রং এ রাঙাতে হবে। পারবে?
অথাে মুচকি হাসে। সাগরের হাত ছাড়িয়ে চলে যায় দৌড়ে। সাগর আসমান পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। জীবন মন্দ না। ভালোই।

আজকে আর্থির বিয়ে। তামিম আর লাবিবার ভাব হয়ে গিয়েছে। দুজন এখন গলায় গলায় ঘুরছে৷ এক সাথে খাচ্ছে এক সাথে হাত ধরে ঘুরছে৷ তো কখনো অর্ণবের ফোন টেনে গেমস খেলছে। তন্নি মুচকি হাসে ওদের ভাব দেখে। বড় হলে এই মেয়েটির সাথেই ভাইয়ের বিয়ে দিবে ভেবে ফেলে।
নিধি গতকালই চলে গিয়েছে৷ সাথে নয়নাকেও নিয়ে গিয়েছে। সব ঝামেলা শেষ।
তন্নি অথৈ আর্থি তিনজনই পার্লারে সেজেছে।

খুবই সুস্থ এবং সুন্দর ভাবে বিয়েটা মিটে যায়। আজকে তারেক এবং ইতিও এসেছে। রাতে বাড়ি ফেরার সময় তারেক বলে সে তার মেয়ে এবং ছেলেকে নিয়ে যাবে৷ অর্ণবের মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়ে। চারটে দিন বউকে কাছে পেয়েছে মাত্র। আর শশুর কি না বলছে নিয়ে যাবে। তারেকের কথায় সায় জানায় আনোয়ার। তন্নির পড়ালেখা শেষ হওয়ার পরে অনুষ্ঠান করে বাড়ির লক্ষী বাড়িতে তুলবে৷ অর্ণবকে অপেক্ষা করতে হবে তিন বছর।
তামিম তো বাড়ি যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া। কেনোনা লাবিবা চলে গিয়েছে বিকেলে৷ তাহলে সে এখানে থেকে কি করবে?
অর্ণব আর আটকাতে পারে না। চলে যায় তারেক তার বাচ্চাদের নিয়ে। অসহায় অর্ণবকে সঙ্গ দিতে আশিক রাতে তার সাথে ঘুমায়। দুই বন্ধু মনের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়।

কেটে যায় দুই মাস৷ তন্নির শরীর ইদানীং একটুও ভালো যাচ্ছে না। মাথা ঘোরায়। খাবার খেতে পারে না। দুর্বলতা জেঁকে ধরেছে। চিন্তিত তারেক মেয়ে নিয়ে ডাক্তার খানায় যায়। বিভিন্ন রকমের পরিক্ষা নিরিক্ষা করা হয়৷ রক্ত পরিক্ষা করে।
অতঃপর জানা যায় তন্নি প্রেগন্যান্ট। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তারেক এর। মেয়ে তুলে দিলো না এখনই শুনছে প্রেগন্যান্ট।
আড়চোখে তাকায় তন্নির পানে। লজ্জায় তন্নির মাথা কাটা যাচ্ছে। ছিহহহহ
বাসায় ফিরতে ফিরতে আনোয়ারকে কল করে তারেক। বলে অর্ণবকে নিয়ে এখুনি চলে আসতে৷ আনোয়ার চিন্তিত হয়ে পড়ে। এতো জরুরি তলব কেনো?
আর্থি এসেছে বাবার বাড়িতে। আনোয়ার তিন ছেলে মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সন্ধ্যার আগেই হাজির হয় তারেক এর বাড়িতে।

আলোচনা সভা বসানো হয়েছে। সকলের দৃষ্টি তারেক এর পানে। আর তারেক এর দৃষ্টি অর্ণবের পানে। যেনো চোখ দিয়ে খু ন করবে তাকে। শুকনো ঢোক গিলে অর্ণব। আশেপাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তন্নিকে খুঁজে। আহারে পনেরোদিন হয়ে গেলো বউটাকে দেখা হয় না। পনেরো দিন আগে আশিক এর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো বেড়াতে। সময় কাটিয়ে এসেছে বেশ অনেকক্ষণ।

“ভাই কি হয়েছে বলবেন?
আনোয়ার জিজ্ঞেস করে। তেঁতে ওঠে তারেক। ঝাঁঝালো স্বরে বলে
” কি হয়েছে আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করুন
অর্ণব শুকনো ঢোক গিলে। আমতা আমতা করে বলে
“আমি কিছু করি নি৷ আমার শশুরের টাকের কসম।
ফুঁসল ওঠে তারেক। কিছু বলবে তার আগেই আনোয়ার থামিয়ে দেয় ওদের। বলে
” না বললে বুঝবো কি করে কি হয়েছে?
“আমি বলেছিলাম না আমার মেয়ের পড়ালেখা শেষ হলে তারপর তাকে তুলে দিবে? বলেছিলাম না?
” হ্যাঁ বলে ছিলেন তো।

“তাহলে আমার মেয়ে প্রেগন্যান্ট হলো কি করে?
বেষম খায় অর্ণব। তন্নি প্রেগন্যান্ট। তারেক এর রাগকে পাত্তা না দিয়ে সকলেই হৈ হুল্লোড় শুরু করে দেয়। অথৈ আর্থি দৌড়ে চলে যায় তন্নির কক্ষে। তাকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে রাখে বেশ অনেকক্ষণ। আনোয়ার কল করে মিষ্টি অর্ডার দেয়৷ বাজারপ যত মিষ্টি আছে সব তার লাগবে। তামিম চুপিচুপি চলে যায় লাবিবার কাছে। তাদের বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে সেটা জানাতে।
তারেক হতাশ হয়। এরা কেউ তার কষ্টটা বুঝলো না।
অর্ণব শার্টের কলার ঠিক করে তারেককে বলে

” এবার আমি আমার বউ নিয়ে যাবোই। কেউ বাঁধা দিতে আসলে তাকে আয়না ঘরে রেখে আসবো।
বলেই উঠে যায়। কল করে আশিককে।
“আশিকক বাবা হচ্ছি আমি।
“কস কি মামা
” ঠিক কইলাম। তোর ভাবি প্রেগন্যান্ট ভাই। তোর থেকে আগে বিয়ে করছি বাবাও আগে হচ্ছি। আজকে থেকে বড় ভাই বলে ডাকবি।

বলেই কল কাটে। আশিকক চিন্তায় পড়ে যায়। বাসর করলো একবার তাতেই প্রেগন্যান্ট। আর আশিক এতোবার বাসর করলো তাও তার বউ প্রেগন্যান্ট হলো না। ছিহহহ আশিক ছিহহহ।
তন্নিকে নিয়ে যাওয়া হয় শশুর বাড়িতে৷ কয়েক ঘন্টায় ভালোই আয়োজন করে ফেলেছে। গোটা পাড়া মিষ্টি বিলানো শেষ। অনেকেই তো অবাক হয়ে বলেছে “অর্ণব কবে বিয়ে করলো”
অর্ণব এর কক্ষটা ফুল দিয়ে সাজানে হয়েছে৷
সেখানে বসে আছে তন্নি৷ অর্ণব এসেছে সবে৷ এসেই প্রথমে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে।
তন্নি চুল টেনে দেয়,অর্ণবের।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫০

ছাড়িয়ে নেয় নিজের থেকে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে
“কতোটা লজ্জা পেলাৃ বাবার সামনে।
অর্ণব ফট করে চুমু খায় তন্নির ঠোঁটে এবং বলে
“প্রথমবার তো তাই লজ্জা পেলে। যখন দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ বার মা হবে তখন আর লজ্জা লাগবে না।

সমাপ্ত