এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪৯

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪৯
Fabiha bushra nimu

কান্নার প্রতিধ্বনিতে আশেপাশে’র মানুষে’র কলিজা কেঁপে কেঁপে উঠছে।মানুষ কতটা নির্দয়া হলে,একটা মানুষ’কে এভাবে নৃশংস ভাবে হ*ত্যা* করতে পারে।হাসনা বেগমে’র বোনেরা কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে।মাহতাব সাহেব পাথরের ন্যায় বসে আছেন।আবির রক্তিম চোখে মায়ের নিথর দেহের দিকে, তাকিয়ে আছে।

চোখ দু’টো অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে গিয়েছে।কথা গুলো আজ স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে।ইফাদ হাসনা বেগমে’র দিকে তাকিয়ে,তানহা’র দু-চোখ ধরে ফেলল।তানহা পুরো রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছে।হাসনা বেগমে’র এমন অবস্থা দেখলে তানহা সহ্য করতে পারবে না।তাই ইফাদ নিজ দায়িত্বে তানহা’কে সেখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে আসলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ চলে আসলো।লাশের কাছে থেকে সবাই’কে সরিয়ে দিল।লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে।একজন পুলিশ কর্মকর্তা,মাহতাব সাহেব’কে প্রশ্ন করল।আপনাদের কাউকে সন্দেহ হয়।মাহতাম সাহেব হাতের আঙুল দিয়ে,আবির’কে দেখিয়ে দিল।

–এই জা*নো*য়া*র*টা নিজের মাকে খুন করেছে।ওকে নিয়ে গিয়ে কঠিন শাস্তি দিন।কাল যখন আমি বাসায় ছিলাম না।তখন আবির বাসায় এসেছিল।আবির চলে যাবার পরেই হাসনা খুন হয়েছে।আমি বাসায় থাকলে
এমন’টা হতো না।

–দেখুন মৌখিক কথায় কিছু হবে না।আইন প্রমাণ চায়।প্রমাণ ছাড়া আইন একটা কথা-ও বলবে না।আমাদের বলা হয়েছে।মৃত্যু ব্যক্তি আত্মাহত্যা করেছে।সঠিক তথ্য বের করার জন্যই,আমাদের এখানে আসতে হয়েছে।পুলিশের কথায় আশেপাশের লোকগুলো বলতে শুরু করল।

–আমরা-ও দেখেছি,আবির কালকে নিজের বাসায় এসেছিল।ওর মায়ের সাথে কথা কাটাকাটি-ও হয়েছে।আবিরে’র হাতে আমরা ধারালো ছুরি দেখেছি৷ কয়েকজন মিলে বলল।
–আমি খুন করিনি।বাবা বিশ্বাস করো।আমি আম্মু’কে শুধু ভয় দেখিয়েছি।কিন্তু আমি আম্মু’কে খুন করিনি।আপনারা সবাই বিশ্বাস করেন।তানহা তুই অনন্ত, আমাকে বিশ্বাস কর।এত জঘন্যতম কাজ আমি করিনি।আমি জানি আমি অনেক বাজে কাজ করেছি।কিন্তু মানুষের শরীরে’র আঘাত করে,কোনো কাজ করি নাই।বলল আবির।

–আমাদের পাড়ার মোড়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।সেখানে থেকে আমাদের বাসা ভালো ভাবে দেখা যায়।আপনি চাইলে,সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখতে পারেন।বলল মাহতাব সাহেব।

মাহতাব সাহেবে’র কথা শুনে,পুলিশ অফিসার কাউকে একটা ফোন দিল।তারপরে হাসনা বেগমে’র লাশ ময়না তদন্তে’র জন্য পাঠিয়ে দিল।সবকিছু কেমন জানি লাগছে।পুরো পৃথিবী’টা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।আবির’কে সবাই ঘিরে ধরে রেখেছে।তানহা বসে বসে দু-চোখের পানি ফেলছে।ইফাদ তানহা’কে আগলে রেখেছে।একটু পরে ফাইয়াজ আর চৈতালি আসলো।ফাইয়াজ’কে দেখে আবির ফাইয়াজ’কে জড়িয়ে ধরে বলল।

–তুই অনন্ত আমাকে বিশ্বাস করবি।আমি নিজের মাকে খুন করার মতো জঘন্য কাজ করতে পারি না।তোর সাথে এতগুলো বছর পড়াশোনা করেছি।তোর সাথে আমার প্রায় ঝামেলা লাগতো।কখনো তোর শরীরে আঘাত করেছি?বলল আবির।
–আবির তুই শান্ত হ আগে,এসব হলো কি করে?তুই এমন পাগলামি করিস না।তুই এমন কিছু না করলে,
পুলিশ তোর কিছু করতে পারবে না।বলল ফাইয়াজ।

–আমি হয়তো মুক্তি পেয়ে যাব।আমার শরীরে যে,কলঙ্ক লাগছে।সেই কলঙ্ক কিভাবে মুছে দিবি ফাইয়াজ।বলল আবির।
ফাইয়াজ আর কোনো কথা বলল না।চুপ করে আবির’কে ধরে রাখলো।আজকে সবাই আবিরে’র বিরুদ্ধে কথা বলছে।চারিদিকে আবিরের নামে,ছিঃ ছিঃ পরে গিয়েছে।আজকে আবিরে’র নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে,প্রায় দুই ঘন্টা পরে পুলিশ আসলো।ফোন থেকে একটা ভিডিও বের করে আবিরে’র সামনে ধরলো।আবির নিজের বাসা থেকে রক্ত মাখা ছুরি নিয়ে বের হচ্ছে,আবির সহ সবাই দেখলো।

–এবার-ও বলবেন আপনি কি করেন নাই।বলল পুলিশ অফিসার।
–স্যার ওটা ফেইক রক্ত ছিল।আমি আম্মুকে ভয় দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছিলাম।তানহা তুই সত্যি’টা বল না।চৈতালি তুমি তো জানো আমি কেমন।তুমি একটু সবাই’কে বোঝাও না।আবির চৈতালি’র দিকে একটু এগিয়ে আসলো।চৈতালি ভয়ে ফাইয়াজ পেছনে লুকিয়ে পড়লো।দু’হাতে ফাইয়াজে’র এক হাত শক্ত করে ধরে আছে।

–অনেকক্ষণ ধরে তোর কাহিনি দেখছি।কাহিনি করবি।থানায় গিয়ে করবি।তোরা ভালো কথা শোনার মতো মানুষ-ই না।পিঠে কয়েক ঘা’ পড়লে-ই গড়গড় করে সব সত্যি কথা বের হয়ে চলে আসবে।বলেই টানতো টানতে আবির’কে নিয়ে চলে গেল।

আজকে সাতদিন পরে,ময়না তদন্ত শেষ করে,হাসনা বেগমে’র লাশ দাফন করার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে।টানা চারদিন আবির’কে জিগ্যাসাবাদ করার পরে-ও আবির মুখ দিয়ে একটা অক্ষর ও’ বের করেনি।তিন দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।একটাই কথা বলেছে আমি খুন করিনি।বর্তমানে আবিরের অবস্থা খুবই গুরুতর।তাই পুলিশ প্রশাসন আবির’কে হসপিটালে চিকিৎসার জন্য রেখেছে।

চৈতালি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় চিরুনি করছিল।তখনই ফাইয়াজ চৈতালি’কে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে।ফাইয়াজে’র কোমল স্পর্শে চৈতালি’র পুরো শরীর কেঁপে উঠে।ফাইয়াজ চৈতালি’কে নিজের দিকে ঘোরায়।চৈতালি কিছু বলতে যাবে।তার আগেই ফাইয়াজ চৈতালি অধরে আঙুল রেখে চুপ করিয়ে দেয়।চৈতালির অধরের কাছে অধর নিয়ে আসতে-ই চৈতালি ফাইয়াজ’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।মানুষ’টা চৈতালি’র কাছে আসলে,
চৈতালি’র দম বন্ধ হয়ে আসে।এই কয়দিনে ফাইয়াজ চৈতালি’র কাছে যতবার আসার চেষ্টা করেছে।চৈতালি ততবারই ফাইয়াজ’কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।চৈতালি অসহায় দৃষ্টিতে ফাইয়াজে’র দিকে তাকালো।ফাইয়াজ চৈতালি’কে একবার পরখ করে নিয়ে,কোনো না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।চৈতালি আহত দৃষ্টিতে ফাইয়াজে’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে আছে।

–আমি মনে হয়।একটু বেশি করে ফেলছি।মানুষ’টা অনেক কষ্ট পেয়েছে।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো চৈতালি।
তানহা গভীর ভাবে,কিছু একটা চিন্তা করছে।তখনই ইফাদ এসে তানহা’র কোলের মধ্যে শুইয়ে পড়ে।সেদিকে তানহা’র খেয়াল নেই।ইফাদ তানহা’র সামনে তুরি বাজিয়ে বলল।

–এত কি ভাবছো বউজান”?
–জানো আমার মনে হয়।আবির ভাই সত্যি কথা বলছে
।আবির ভাই চাচিকে খুন করে নাই।অন্য কেউ চাচি’কে খুন করেছে।এবং সবকিছু জেনে বুঝেই আবির ভাই’কে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

–তুমি কি করে জানলে,আবির ভাই খুন করে নাই?
–আবির ভাই খুন করতেই পারে না।তোমার মনে আছে।তোমাকে যখন কিডন্যাপ করা হয়েছিল।তখন আবির ভাই আমাকে,তোমার খোঁজ দিয়েছিল।আবার এটা-ও বলেছিল।আমি যেনো কোনো দ্বিধা ছাড়াই ওদের কাগজে সাইন করে দেই।কারন বাড়িটা আমার নামে ছিলই না।বাড়িটা চাচি তার নিজের নামে করে নিয়ে ছিল।

আমি চাচা-চাচিকে অনেক বিশ্বাস করতাম।কত-শত কাগজ আমি সাইন করেছি।কিন্তু চাচি আমার সাথে এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা করবে,আমি কখনো কল্পনা-ও করতে পারি নাই।আবির ভাই আমাকে বলেছিল।তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি।তোর বাড়ি তোকে ফিরিয়ে দিয়ে,যদি নিজের অন্যায়ের বোঝা কমাতে পারি।তাহলে তোর থেকে বেশি খুশি আমি হব।তুই চিন্তা করিস না।মা’কে বলে তোর বাড়ি তোকে ফিরিয়ে দেওয়া’র দায়িত্ব আমার।

–তুমি আমাকে এসব কথা আগে,বলো নাই কেনো?
–তুমি অসুস্থ ছিলে,তোমাকে চিন্তা দিব না।ভেবে কিছু বলা হয় নাই।যখন বলতে চেয়েছি,তখন চৈতালি’র বিয়ের ঝামেলা ছিল।
–আসতে পারি?বলল মাহতাব সাহেব।মাহতাব সাহেব’কে দেখে ইফাদ দ্রুত উঠে বসলো।তানহা উঠে চাচার কাছে গেল।
–আরে চাচা আপনি কোনো দরকার পড়লে,আমাকে ডাকতেন আমি গিয়ে,আপনার সাথে দেখা করতে আসতাম।বলল তানহা।

–অসুস্থ শরীর নিয়ে,আর কতো আমার কথা ভাববি।আমাকে নিজের কাজগুলো নিজেকে করতে দে?এই নে,তোর বাড়ির দলিল।আবির সত্যি হাসনা’কে খুন করে নাই।হাসনা’কে ভয় দেখিয়ে,তোর বাড়িটা তোর নামে লিখে নিয়েছে।না জেনে ছেলেটা’কে ভুল বুঝলাম।আসলে হয়েছে কি জানিস।বাঘ এসেছে গল্পটা নিশ্চয়ই শুনেছিস।আবিরে’র ক্ষেত্রে-ও সেটাই হয়েছে।ও’ এত খারাপ কাজ করেছে।তাই ওর ভালো কাজটা কেউ বিশ্বাস করে নাই।হাসনা ওর পাপের শাস্তি পেয়েছে।কথায় আছে না।

পাপ তার বাপকে-ও ছাড়ে না।তেমন হাসনা তোর মাকে ভাতের সাথে বিষ দিয়ে মেরেছিল।ওর শাস্তি ও পেয়েছে।ভাবছিস আমি এতকিছু জানলাম কি করে?এই ডায়েরি’টা পড়বি।এখানে থেকে সবকিছু জানতে পারবি।আজকে আমি আসছি।আবিরের কাছে যাব।ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে।বলেই চলে গেল।তানহা’র পুরো পৃথিবী থমকে গেল।এতক্ষণ যে,মানুষটা’র জন্য কষ্ট হচ্ছিল,মুহুর্তেই মানুষটা’র ওপরে ঘৃণায় দু-চোখ ভরে এলো।

এভাবে আমাকে এতিম করে দিল।মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কেনো?আম্মু’কে মেরে সে,কি পেয়েছে।নিজে-ও কিছু পেল না।আমার থেকে আমার আম্মুকে আলাদা করে দিল।এখন নিজে-ও মরে গেল।কেউ চিরদিন থাকতে আসে নাই।সবাই চলে যাবে।মানুষ মানুষকে মেরে কি লাভ হয়।

“এরা কেনো বুঝে না।এরা পৃথিবীর অতিথি মালিক নয়”।
ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারো’টা ছুঁই ছুঁই।চৈতালি কখন থেকে ফাইয়াজে’র জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু ফাইয়াজে’র আসার নামে কোনো খোঁজ নেই।অন্যদিন আগেই চলে আসে।চৈতালি’র সাথে কত দুষ্টামি করে।তবে কি একটু বেশি কষ্ট পেয়েছে।ভেবেই চৈতালি মন খারাপ করে বসে আছে।

নিজেকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে।অনেকক্ষণ ধরে ফাইয়াজে’র জন্য অপেক্ষা করছে।ফাইয়াজ আসছে না,দেখে ওয়াশরুমে যাবে,এমন সময় ফাইয়াজ রুমে প্রবেশ করে।চৈতালি’র মুখে হাসি ফুটে উঠে।খুশি হয়ে ফাইয়াজে’র সামনে এসে দাঁড়ালো।ফাইয়াজ মুখ’টা গম্ভীর করে রেখেছে।

–আমাকে কেমন লাগছে?
–সুন্দর।
–শুধু সুন্দর আমি এত সময় নিয়ে,এত কষ্ট করে তোমার জন্য সাজলাম।আর তুমি বলছো সুন্দর।স্বামীর মুখে এতটুকু প্রশংসা শুনে মন ভরলো না।এত বেশি বেশি প্রশংসা শুনতে হবে।তাহলে মন ভরবে।

–এই মেয়ে আজকে আমাকে শেষ করার চিন্তা করেছো?এমনিতেই এত সুন্দর করে সেজেছো?তার ওপরে তুমি তুমি করে বলছো?তুমি জানো তোমার এই রুপ আমাকে কিভাবে এলোমেলো করে দিচ্ছে।তুমি আমাকে সামনে থেকে চলে যাও।তা-না হলে আমি তোমাকেই এলোমেলো করে দিব।চৈতালি ফাইয়াজে’র কথায় হেসে দিল।ফাইয়াজ’কে জড়িয়ে ধরে বলল।
–আমি কারো কাছে এলোমেলো হয়ে চাই বলেই,

নিজেকে প্রস্তুত করে তুলেছি।তাই কেউ আমাকে এলোমেলো করে দিলে,আমি কিছু মনে করবো না।ফাইয়াজ চৈতালি’কে নিজের সাথে গভীর ভাবে মিলিয়ে নিয়ে বলল।
–কেউ যখন নিজ দায়িত্বে আমার কাছে এলোমেলো হতে এসেছে।আমরা-ও তাকে এলোমেলো করে দিতে কোনো সমস্যা নেই।বলেই রুমের লাইট অফ করে দিল।চৈতালি’র কাছে এসে,চৈতালি’কে কোলে তুলে নিল।অতঃপর একটি রাত সাক্ষী হলো তাদের মধুচন্দ্রিমার।

আজকে তিন মাস পরে আবির জেল থেকে মুক্তি পেল।হাসনা বেগমে’র শরীরে আবির ছাড়া আরো একজনে’র হাতের স্পর্শ পাওয়া গিয়েছে।পুলিশ আবিরদে’র সকল আত্নীয়-স্বজন দের হাত পরিক্ষা করে দেখেছে।কারো হাতের সাথে মিলে নাই।
–আমি মনে হয়।এবার ধরা পড়ে যাব।আমি যদি ধরা পড়ে যাই।তাহলে ইফাদ’কে আমি বাঁচতে দিব না।ইফাদ’কে মেরেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলবো।আজকের মধ্যেই ইফাদ’কে শেষ করতে হবে।

ওর বউ আর বোনের জন্য আমার সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে।এগারোটা’র দিকে ইফাদ চার রাস্তার মোড় দিয়ে যায়।তখনই শেষ করে দিবি।বলেই সবাই বেড়িয়ে পড়লো।
রোদের প্রখরতা বেড়েই চলেছে।ইফাদ গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে।ক্লান্ত পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগোচ্ছে।ইফাদ ‘কে দেখে একটা গাড়ি তার দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো।

যখনই গাড়িটা ইফাদ’কে চাপা দিতে যাবে।ঠিক তখনই কেউ একজন ইফাদ’কে ধাক্কা দিয়ে, সরিয়ে দিল।ঘটনা এত দ্রুত ঘটায়,সবকিছু বুঝে উঠার আগেই শেষ হয়ে গেল।রাস্তার মাঝখানে শ্রুতির নিথর দেহ’টা পড়ে আছে।মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁকা রাস্তা’টা রক্তে মেখে গেল।ইফাদ অবাক নয়নে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে আছে।ঠিক তখনই স্রুতির বাবা গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসলো।চিৎকার করে বলল।

–স্রুতি এটা তুই কি করলি মা।সামান্য রাস্তার ছেলে’কে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনে’র ঝুঁকি নিলি।তোর বাবা থাকতে তোর কিছু হবে না।বলেই স্রুতিকে হসপিটালে নিয়ে চলে গেল।
–আমি তোমার সব কথা শুনে ছিলাম বাবা।তাই ইফাদ’কে বাঁচাতে চলে এসেছিলাম।এমনিতে-ও তুমি আর বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে পারবে না।বলেই দু-চোখ বন্ধ করল স্রুতি।
ইফাদ রাস্তার মাঝখানে বসে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেল।মেয়েটা তাকে বাঁচাতে গিয়ে,নিজের এতবড় ক্ষতি করে ফেলল।ইফাদ বাসায় এসে তানহা’কে সবটা জানালো।

সময় চলেছে সময়ে’র নিয়মে,খারাপ সময় গুলো যতটা স্থায়ী হয়।ভালো সময় গুলো তার বিপরীত দেখতে দেখতে কেমন করে সময় গুলো চলে যায়।তা’ বুঝে ওঠা মুশকিল।আজ’কে তানহা’র বাচ্চা হবার ডেট।হসপিটাল বসে আছে তানহা,ইফাদ,রোকেয়া বেগম।ইফাদ’কে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।হাত-পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে।তানহা’র শুকনো মুখের দিকে তাকালে,বারবার ইফাদে’র কলিজা কেঁপে উঠছে।তানহা’র মাথায় হাত রেখে বলল।

–চিন্তা করো না পাখি।তোমার কিছু হবে না।আমি আছি না,তোমার সাথে,সুস্থ হালে যাচ্ছো।আল্লাহ তায়া’লার রহমতে আবার সুস্থ হালে ফিরে আসবে কেমন বউজান’
।বলেই নিজের বুকের সাথে আগলে নিল।ইফাদে’র কথায় তানহা ভরসা পেল।অধরের কোণে হাসি বজায় রেখে বলল।
–আচ্ছা আল্লাহ তায়ালা চাইলে অবশ্যই ফিরে আসবো।তাহলে তুমি আমাকে একটা কথা দাও।আমি ফিরে আসলে,তুমি আমাকে #এক_এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি উপকার দিবে।

ইফাদ হেসে তানহা’র দিকে তাকালো।তানহা’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।
–চুড়ির কথা তোমার এখনো মনেই আছে।আচ্ছা তুমি সুস্থ হালে ফিরে আসলে,আর আমাদের যদি মেয়ে হয়।তাহলে আমাদের মেয়ের যখন পাঁচ বছর পূর্ণ হবে।সেদিন তোমাকে এগুলো চুড়ি উপহার দিব।কথা দিলাম।
–বারে স্বামীর থেকে প্রথম কিছু মুখ ফুটে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু আমার প্রাণপ্রিয় স্বামী আমাকে সেটা দেয় নাই।তাহলে আমার আক্ষেপ থাকবে না।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪৮

–জানো তানহা আমার খুব ভয় লাগে।আমি খুব ভয় পাই।চুড়ি দেওয়ার পরে যদি ভাইয়ার মতো আমি’ও তোমাকে হারিয়ে ফেলি।
–এসব কিছু হবে না।সব তোমার মনের ভুল বুঝছো?ইফাদ কিছু বলল না।তানহা’কে নিজের বুকে আগলে নিল।একটু পরে একটা নার্স এসে তানহা’কে নিয়ে চলে গেল।ইফাদ আহত দৃষ্টিতে তানহা’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে রইল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি শেষ পর্ব