এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ২৩

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ২৩
Chadny islam

“”তোমার ভাই ঈশান কাজ টা ঠিক করলো মিসেস আদিল ??
“”মানে!!
আমার ছোট বোন কে জোর করে নিয়ে বিয়ে করছে! ওর কি জানের মায়া নাই!! ও জানে না কার কলিজায় হাত দিছে।
“”ভাইয়া কাকে বিয়ে করছে??
“”মনে হচ্ছে কোনো কিছুই জানো না??
“”আমি সত্যিই কিছু জানি না! ভাইয়া কাকে বিয়ে করছে বলবেন প্লিজ??
“”আমার ছোট বোন জুথীকে!!
ইরার মাথাই জেনো আকাশ ভেঙে পরলো রোশান কিভাবে তার বোন হয়। জুথী ও তো বলতো সে একমাএ মেয়ে তার কোনো ভাই বোন নেই!তাহলে কি জুথী মিথ্যা কথা বলতো! কিন্তু কেনো? আমার থেকে লুকালো কেনো!! ইরা বেশ কৌতুহল নিয়ে রোশান কে জিজ্ঞেস করলো!!

__আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো আমাকে! জুথী তো আমাকে সবসময় বলতো সে একা তার কোনো ভাই বোন নেই। তাহলে আপনি কেমন ভাই হন জুথীর! মিথ্যা বলার একদম চেষ্টা করবেন না।
রোশান বাঁকা হাসি হেসে বললো!!
__তোমাকে মিথ্যা কথা বলা ইমপসিবল! সত্যি টাই বলবো ভরসা রাখতে পারো!
“”হ্যা বলেন আমি ও সত্যি টাই শুনতে চাই !!
ইকবাল খান যিনি আমার বাবা প্রথমে তার পর জুথীর! দাদা ভাইয়ের চাপে পরে ড্যাড আমার মম কে বিয়ে করেছিলো! কিন্তু জুথীর মম মানে আমার ছোট আম্মুর সাথে রিলেশন তখনো কন্টিনিউ ছিলো! ড্যাড লুকিয়ে বিয়ে করেন জুথীর মাকে। এখন সবার চোখে আমরা সৎ ভাই বোন! এমন কি জুথীর চোখেও সে কখনো তার ভাই হিসাবে আমাকে স্বিকীতি দেয় নি।
ইরা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__ওহহহহহ!
“”এখনি এতো কষ্ট পেলে হবে মিসেস আদিল! এখনো তো তারা জানে বেঁচে আছে কষ্ট গুলোকে জমিয়ে রাখো এক বারে না হয় ফেলে দিও। আমার একটা বিষয় নিয়েই অনেক বেশি আপসোস হচ্ছে।
“”মানে!!
আঘাত টা আমি যেখান থেকেই করি না কেনো সবটাই সম্পূর্ণ ভাবে গিয়ে লাগবে তোমার মনে!যার চোখের পানি সহ্য করতে পারি না। তাকে ও কাঁদাতে হবে। পরবর্তী দিন বা সময় কেমন হবে তোমার জন্য জানা নেই। তবে তুমি চাইলে সব কিছু ছেরে আমার কাছে চলে আসতে পারো! আমি হাসি মুখে তোমাকে আমার করে নিবো চাঁদ! টার্স মি.
ইরা তারছিল্লের হাসি হেসে বললো!!

__আবেগ নিয়ে বসে থাকবেন না প্লিজ! জীবন কারোর জন্যই থেমে থাকে না।আমাদের অপ্রতাশিত বিয়ে টা হয়ে গিয়েছে।আর আমি ও এখন বিয়ে টাকে মেনে নিয়েছি। আপনি এমন টা আশা করবেন না প্লিজ! যে আমি নতুন করে আপনার জীবনে ফিরে আপনি নামক মানুষ টাকে পূনতা দিয়ে আসবো। আমার জীবনে খারাপ কিংবা ভালো একটি মানুষ আছে! জানিনা পরবর্তী জীবন টা কেমন হবে। তবে আমি ইচ্ছে পুষণ করছি! ওই মানুষ টিকে নিয়ে সারা জীবন কাটানোর!!

“”তাহলে কি বলতে চাইছো! তুমি আর কখনো ফিরবে না আমার জীবনে!
“”সেটা অসম্ভব! তার আগে যেনো আমার মৃত্যু মঞ্জুর হয়!
“”এতটা ঘৃনা আমার প্রতি!
“”আপনি এখন আমার জীবমে মৃত্যু সমতুল্য! আমাদের আর কখনো দেখা না হোক!! এই দেখাই শেষ দেখা হোক!!
রোশান বাঁকা হাসি হেসে বললো!!
__এই দেখটাই শেষ নয় বরং শুরু! তোমাকে এই মৃত্যুর সমতুল্য মানুষ টির সাথে বার বার দেখা করতে হবে চাঁদ !!!
আজ আসি!!! বলে ইরা হাটতে শুরু করলো রোশান ও আর বসে রইলো না ইরার পেছন পেছন হাঁটা দরলো। কফি টা পরে রইলো টেবিলে! রোশান পেছন থেকে ইরা কে ডেকে বললো!!

__এই চাদ??
ইরা থেমে গিয়ে দাড়ালো! রোশান এগিয়ে গেলো ইরার ঠিক সামনে এসে দাড়ালো চোখে চোখ পরতেই ইরা বলে উঠলো!!
“”এই অসহায়াত্ব দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকাবেন না প্লিজ!!
“”কেন মায়া হয়??
ইরা চুপ করে আছে! রোশান বাঁকা হেসে বললো!!
__তাহলে কবে যাচ্ছেন মিসেস আদিল গোয়েন্দা গিরি করতে??
অতিদ্রুত! আজ চলে যান আপনি! কেউ দেখলে সমস্যা হবে আমার বলেই ইরা কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠানে ডুকে পরলো!
ইরার ফোন সাইলেন্স ইতিমধ্যে আদিল কয়েক শো বার কল করেছে ইরা কে। ইরার ফোন পার্স সহ কলির কাছে দিয়ে গিয়ে ছিলো।

ঈশান জুথী কে বাড়িতে আসার সময় ইচ্ছেমতো ভয় দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল! তার বউ জানতে পারলে এটা সেটা করবে। বাড়ীর আসার পর তেমন আহামরি কিছুই হয় নি। বরং ঈশান এর পরিবার থেকে খুব তারাতাড়ি জুথী কে মেনে নিয়ে ছিলো। অতিরিক্ত টেনশনে জুথীর বেশ জ্বর এসেছে। জুথীর মা হাজার হাজার বার কল করেছে । অনেক রাতে বেশ বাধ্য হয়ে কল টা রিসিভ করে ছিলো ঈশান! বিয়ের বিষয় টা জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে দেন। ঈশান এখনো ঠিক মতোন জুথীর পরিবার কে চেনেই না! জুথীর জ্বরের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার রাতেই একজন ডক্টর কে কল করে বাসাই এসেছিলো কিছু হালকা মেডেসিন দিয়ে গিয়ে ছিলো।তারপর ও শরীরের তাপমাত্রা না কমলে হসপিটালে যেতে বলেছেন ডক্টর ।ঈশান এর মা সকাল সকাল সুপ আর কিছু ফল নিয়ে এসে জুথী কে খাইয়ে দিয়েছেন এবং ওষুধ গুলাও। ঈশান যেহেতু একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার তার তেমন খুব বেশি কাজের চাপ থাকে না। ইশান এর বাবার শরীর ও আগের থেকে অনেক টাই সুস্থ!!তাই এখন আর ইশান কে কোম্পানির দেখা শোনা করতে হয় না! ঈশান জুথীর পাশে বসে মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে বললো!!

__এখনো কেমন ফিল করছো!!
জুথী কপাল থেকে ঈশান এর হাত কে ছাড়িয়ে অন্য দিক করে সুয়ে বললো!!
__ঠিক আছি আমি টেনশন করতে হবে না আমাকে নিয়ে!!
“”আমি বলেছি একবারও যে আমি তোমাকে নিয়ে টেনশনে করতেছি!
“”আপনার আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না! আপনার আরেকটা বউ আছে না তাকে নিয়ে করেন গা!!
“”ঠিক বলছো আমি বরং ওর কাছে যাই!!
“”এই শোনেন!!
“”কি বলবা তাড়াতাড়ি বলো!!
“”তাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন সত্যি করে বলেন!!
“”কাকে??
”আপনার প্রথম বউ কে??

আমার থেকা পরছে যে তোমাকে বলতে হবে! যাও গিয়ে খুঁজে বের করো!!বলেই ঈশান হেঁটে রুমে বাইরে চলে আসলো! জুথী ও তার বিপরীতে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো!
আদিল এত বার ফোন করছে তাও কিনা ইরা কল দরছে না। আদিল মিটিং এর কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে সোজা কল করলো আশরাফ সিকদার কে! যে কিনা এই মূহুর্তে নির্বাচন নিয়ে বেশ ব্যাস্ত !তার পদপার্থী দল হিসাবে। শহরের অন্যতম দলীয় দল অংশগ্রহণ করতে চাইছেন। এর মধ্যে আদিল কল করছে আশরাফ সিকদার কলটা কেটে দিয়ে আবাও নির্বাচন এর দিকে মনোযোগ দিলো এর মাঝে আদিল আবার ও কল করলো আশরাফ সিকদার বেশ বিরক্ত নিয়ে কল টা রিসিভ করে আশরাফ সিকদার বললেন!!

__আমি একটা ইমপোর্টেন্স মিটিং এ আছি! কিছু খন পর কল ব্যাক করছি!
আদিল রাগে রিরিরি করতে করতে বললো!!
__এক্সকিউজ দেয়া বন্ধ করো ড্যাড! আমার বউ কই??
আশরাফ সিকদার এর মূহুর্তের জন্য ভুলেই গিয়ে ছিলো আদিল তাকে বলে ছিলো কোনো ভাবেই জেনো ইরা কে বাড়ীর বাইরে যেতে দেওয়া না হয়। ওহহ মাই গড এখন কি বলবে এই ছেলে কে।আশরাফ সিকদার আমতা আমতা করে কিছু বলবেন তার আগেই ওপর প্রান্ত থেকে আদিলের ভয়ংকর চিৎকার করার আওয়াজ ভেসে আসে!!!!!!
__আমি তোমাকে বলে ছিলাম ড্যাড! ওই মেয়ে কে কোনো ভাবে বাড়ীর যেতে দিও না। তুমি কি করছো এটা।
“”ক্লোল ডাইন মাই সান আমি দেখছি!!
“”যেকোনো সময় সে কোনো জায়গা থেকে ইরার উপর এ্যাটাক হতে পারে। তাড়াতাড়ি আমাদের লোক পাঠাও। আমি আসতেছি ইমডেমনিটি!!

“”মাই সান শান্ত হও! আমি দেখতেছি! আপাতত কিছু খনের জন্য আমার উপর ভরসা করো! তোমার আমানতের খেয়ানত আমি করবো না! প্রমিজ মাই সান! প্লিজ রিলাক্স! গিফ মি 1 Hours!
আদিল আশরাফ সিকদার এর ফোন টা কেটে ইরার ফোনের লোকেশন ট্যাগ করলো! আর ও বেশ কয়েক বার ইরার নাম্বারে কল করলো বরাবরের মতোন কল রিসিভ করলো না। এই মূহুর্তে মাথাই কোনো কিছু কাজ করতেছে না। আদিল ফোন টা বের করে কল করল রিফাত কে। অসিফের বেশ কাছেই কলির কলেজ। রিং হওয়ার সাথে সাথে কল দরলো রিফাত! কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই!!

__রিফাত কই আছো তুমি??
“”ভাই আমি তো ভাবী কে আনতে যাচ্ছি!!
“”কুওার বাচ্চা হারামির বাচ্চা শোওরের বাচ্চা তোর সাহস হলো কিভাবে আমার বউ কে আমার অনুমতি ছাড়া বাড়ীর বাইরে নিয়ে গেছিস!! আমি বাড়িতে আসি তোদের কার ঘাড়ে কইটা মাথা আছে আমি ও দেখবো!
আদিল এর এমন হঠাৎ করে এত রাগের কারন টা রিফাত বুঝতে পারলো না। তবে ধারনা করলো হয়তো কেনো কিছু একটা হয়েছে নয়তো এমন ভাবে কথা বলার মতোন মানুষ আদিল নয়! রিফাত ভয়ার্ত কাপা কাপা গলা নিয়ে বললো!!

__ভাই আপনি ঠিক আছেন! শান্ত হন প্লিজ!!
“”আমি ঠিক আছি। তোর ভাবী কে বলবি ইমডেটলি যেনো আমাকে কল করে যদি তার জানের মায়া টা থাকে !
“”ওকে ভাই!!
রিফাত সত্যি সত্যি কলেজের ভেতরে গিয়ে আদিল এর নাম্বারে কল করে ইরার হাতে দরিয়ে দিয়ে বললো! ভাই কথা বলবে ভাবী।
“”তোর ফোনটা কোথাই??
“”পার্সরে!!
“”তোরে ফোন কি আমি পার্সে রাখার জন্য দিছি৷
“”মানে।
“”কুওার বাচ্চা! তোর কি জানের মায়া নেই!
“”না!
“আমাকে বাধ্য করিস না এই মূহুর্তে বাংলাদেশ ব্যাক করতে। তাহলে কিন্তু..
“”কিন্তু আর কি বাসর করবেন তাই তো
আদিল এর ভয়ংকর রাগ টা নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো!
_মনের কথা বুঝলা কেমনে??

আপনার সাথে থাকতে থাকতে আপনার মতোন ফালতু হয়ে গেছি৷ তাই সব কিছু অতিদূত বুঝতে শিখে গেছি!
“””স্বামী হই তোমার সম্মান দিয়ে কথা বলো!!
“”হুম অবশ্যই! আমার মাননীয় সম্মানিত স্বামী মহাশয় মি.আদিল সিকদার বলেন সম্মান এর সাথে বাড়িয়ে আপনি চাইলে এক চিমটি বিশ ও দিয়ে দিতে পারি।
“”হুম জানি জানি তোমার থেকে এর বেশি আশা করা আর পান্তা ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা একি কথা!
ইরা আর কথা না বাড়িয়ে ফোনটা রিফাত কে দিয়ে দিলো! রিফাত হ্যালো বলতেই আদিল বললো!!
__আর বেশি খন ওই খানে থাকাটা তাদের জন্য সেভ নয় তাড়াতাড়ি জেনো সবাই কে নিয়ে বাসাই চলে আসে৷ রিফাত সম্মতি জানিয়ে কল টা কেটে দেয়। এতখন কথা বলার কারনে আরেক টি কল ওয়েটিং ভেবে কেটে গেছে। রিফাত কল লিস্ট চেক করে দেখে আশরাফ সিকদার কল করছেন! রিফাত কল ব্যাক করে ফোন টা কানে নিতেই আশরাফ সিকদার কর্কট গলাই বললেন!!

__এতো কার সাথে লাইন মারো! তোমার আজকে খবর আছে আগে বাসাই আসো!!
রিফাত কাঁদো কাঁদো গলায় বললো!!
__লাইন কেনো বলছেন স্যার! আমার G For Girlfriend ও নাই!!
“”আহারে বেচারা! তোমার এত দুঃখ কষ্ট আমাকে আগে বলবা না!!
“”বলতেই কি হতো স্যার।
আমি একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তুমি ভুলে যাও কিভাবে! তোমাকে সারাজীবন সিঙ্গেল রাখার দায়িত্ব শুধুই আমার!!
“”না এ হতে পারে না আমি বিশ্বাস করি না!!আজকে সকাল সকাল যে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম!!
“”আপনি তো দিন কানা কার মুখ দেখেছেন!
“”তোমার মুখটা দেখছি বিধায় দিন এক খারাপ গেলো।
কি বলছেন এসব। কলির কথা এড়িয়ে ইরা কে উদ্দেশ্য করে বললো!!
__ভাবী ভাই কে না বলে বাইরে আসার জন্য ভাই অনেক রেগে আছে। চলেন বাসায় চলে যায়।
“ওকে..!

দশ তলা ভবন জুড়ে আইরার কোম্পানি! তার অফিস রুম আট তলাই। আজকে প্রিয়াশ কে সাথে করে অফিসে নিয়ে এসেছে। প্রিয়াশ এর আপাতত কোনো কাজ নেই আইরা কে দেখা ছাড়া। প্রিয়াশ মনে মনে ভাবছে সে বরং আইরার কোম্পানিতে একটা জব নেক! চাকরির অজুহাত মাএ বসে বসে তো এই রাত পরী টাকে অন্তত দেখা হবে।
রাত দশ টার পর….!
রোশান এর বলা কথা নিয়ে ইরা এখনো প্রতি মিনিট প্রতি সেকেন্ড ভাবছে। যদি সত্যি তার বোনের মৃত্যুর সাথে কোনো ভাবে জুড়িয়ে পরে এই বাড়ীর সদস্য তখন কি হবে। এমন কি যদি আদিল ও জুড়িয়ে পড়ে!
ফ্ল্যাশ ব্যাক…..!

আজ থেকে দশ,বছর আগের ঘটনা ইরার বয়স যখন সাত বছর! তখন ইরার বড় বোনের বয়স ষোল বছর!আজাদ চৌধুরী তখন ছিলেন ছোট একটি গ্রামের বাসিন্দা ! তখন তাদের এত টাও আরামের জীবন ছিলো না আজাদ চৌধুরী শিক্ষিত আদর্শবান এক জন মানুষ ছিলেন! তাদের অভাব টা ঘরের মাঝে কড়া নারলেও সম্মানে এক চিলতে পরিমান দাগ ফেলতে পারেন নি। আজাদ চৌধুরীর বড় মেয়ে আদ্রিতা চৌধুরী আদ্রি! সবাই ভালোবেসে আদ্রিতা বলেই ডাকে। ছোট বেলা থেকেই আজাদ চৌধুরী হাতে কলমে দরে পড়াশোনা করিয়েছেন আদ্রিতার পড়াশোনার পাশাপাশি তার সৌন্দর্যের ব্যাহির্ক্র কতা জড়িয়ে পরে সারা গ্রাম জুড়ে।আদ্রিতা কেবল এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। রেজাল্ট বের হবে কিছু দিনের মধ্যে! এর মাঝে মাঝে প্রায় প্রতিদিনি ঘটক দের আনাগোনা দেখা যেতে।

আজাদ চৌধুরী মুখের উপর সবাই কে নিষেধ করে দিতেন। তাদের মেয়ে কে তারা অল্প বয়সে বিবাহ দিবেন না। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। গ্রামের মানুষের বাঁকা দৃষ্টি কুনজরের স্বীকার হতো প্রায় প্রতি মূহুর্তে ই আদ্রিতা। এক সময় বেশ বিরক্ত হয়ে বাড়িতে থেকে বের হওয়াই বন্ধ করে দেয় আদ্রিতা । আজাদ চৌধুরী নিজেও ভাবলেম সে চাকরিটা কোনো ভাবে ট্যানাসফার করে অন্য কোথাও চলে যাবেন। এর মধ্যে আদ্রিতা তার ফলাফল ঘোষণা করেন। যেখানে আদ্রিতা ফাস্ট ডিভিশন নিয়ে বেশ ভালো ফলাফল করেন।সারা গ্রাম শহরে ছড়িয়ে পরে আদ্রিতার এই ফলাফল। শহরের উচ্চ কলেজ থেকে এডমিশন নিয়ে আসা হয় তার জন্য।আজাদ চৌধুরীর অতন্ত্য আন্দতি হয়।

সপ্তাহ খানেক পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় আদ্রিতা কে। প্রতিদিন বাড়িতে আসা যাওয়া করতে আদ্রিতা বেশ হিমশিম খেয়ে যেত।তাই আজাদ চৌধুরী ডিসিশন নেন যে আদ্রিতা কে কলেজ হোস্টেলে ভর্তি করবেন। আর তিনি অতি দ্রুত আদ্রিতার কলেজের আশেপাশে বউ বাচ্চা নিয়ে সিপ্ট হয়ে যাবেন। এই ভাবে চলতে থাকলো দিন দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেলো। আজাদ চৌধুরী এর মাঝে কোনো রকম ভাবে স্কুলের চাকরিটা পরিবর্তন করতে পারলেন না। তাই তিনি ডিসিশন নিলেন। চাকরি টা আর করবেন না মেয়ের কলেজের আশেপাশে গিয়ে থাকবেন বাসা নিয়ে। আর ছোট খাটো একটা চাকরি করবেন! ইরার ভাবনার মাঝেই কল আসে ফোনে একটা সুন্দর রিং টন ভেসে আসছে ইরা ফোনটা রিসিভ না করে গান শুনতে লাগলো!!

“”ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমাই যহনে
ইরা রাগী কন্ঠে বললো!!!
__এত রাতে কল করেছেন কেনো!!
“”তুমি এখনো ঘুমাওনি কেনো!!
আমার ইচ্ছা হয়নি তাই ঘুমাইনি! আপনি কেন ঘুমান নি।
“”তুমি ঘুমাও নি তাই!! তোমাকে মিস করছি বউ!!
“”তো আমি কি করবো??
“”একটু ভিডিও কল দাও।
“”ব্লক করে দিবো কিন্তু!
ইরা আদিল দুইজনি বেশ কিছু খন চুপ করে রইলো! এর মাঝে ইরা নিজের কৌতুহল দূর করার জন্য আদিল কে জিজ্ঞেস করলো!!

__একটা কথা জিজ্ঞেস করবো!!
“”হুম!!!
“”আপনার বয়স কত! আর আপনি কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতেন!!
“”বয়স দিয়ে কি হবে। আমি তো বুড়ো হয়ে যায় নি তাই না! আমি সাইন্স এর ইসটুডেন!
“”আপনি ইউএসএ কবে গিয়ে ছেলেন পড়াশোনা করতে! মানে ইন্টার পরীক্ষা দেয়ার পর নাকি আগে??
“”ইন্টারের আগে! হঠাৎ করে এসব জিজ্ঞেস করছো কেনো কিছু হয়েছে??
“”না তেমন কিছু নয়! আপনি আমার স্বামী আপনার সম্পর্কে আমার সব কিছু জানা কতব্য তাই আর কি!
ইরার খুব বেশি সময় লাগলো না নয় ছয় মিলাতে!
“”আচ্ছা আমার আগে ও কি আপনার জীবনে কখনো কোনো প্রেম এসে ছিলো??
“”কি বলছো এসব! কি খাইছো মানে পিনিকে আছো।
“”বলেন না প্লিজ!!

না ওই রকম কিছু ছিলো না আমার জীবনে! উল্টা পাল্টা ভাবা বন্ধ করো আমাকে নিয়ে। আমাকে নিয়ে বেশি ভাবতে গিলে নিজেকেই ভুলে যাবে। অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমান কে নিয়ে বাঁচতে শিখো।
“”কেনো! আপনার কি অতীত ভয়ংকর!!
ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে বলেই আদিল ফোন টা কেটে দিলো। যে মানুষ টার কথা শেষয়ি হয় না সে কিনা কথা শুরু করার আগে বাই বলে চলে গেলো। তাহলে কি সত্যি সত্যি আদিল ও জড়িয়ে আছে।
পরের দিন সকাল বেলা……..!
ইরা মাইমুনা সিকদার এর সাথে হাতে হাতে সব কাজ শেষ করে রুমে আসার সময় তাকে বলে এসেছিলো __
ছোট আম্মু কিছুটা অসুস্থতা ফিল করছি। আমি কিছুখন ঘুমিয়ে নেই।প্লিজ কেউ জেনো আমাকে ডাকাডাকি করে না! একটু খেয়াল রাখবেন প্লিজ!!
“”আচ্ছা তুমি যাও!!

ইরা নিজের রুমে এসে দরজা আটকে ফোন করলো জুথীর নাম্বারে। বেশ কয়েকবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো জুথী। অচেনা নাম্বার তাই অপর প্রান্তের জুথী সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই ইরা বলে আমি ইরা!
“”কেমন আছিস ইরা! তাছাড়া তুই ফোন কোথাই পেলি !
“”আরে শান্ত হ আস্তে আস্তে আমি সব বলতেছি। ভাইয়া কোথায়!!
“‘এখানেই আছে।
“”ফোনটা ভাইয়ার কাছে দে জুথী..
জুথী ফোনটা ঈশান এর দিকে এগিয়ে দিতেই ঈশান ফোনটা হাতে নিয়ে কথা বলে ইরার সাথে!!
__হ্যা বুনু বল৷!!
“”ভাইয়া আমাকে একটু বাসা থেকে বের করবা প্লিজ! আমি আব্বুর সাথে দেখা করতে যাবো অনেক মিস করতেছি ওনাদের!
ইশান শান্ত গলাই বললো!!

__আরে বুনু তুই তো আংকেল কেই বলতে পারিস ওনি নিয়ে আসবে তোকে।
ভাইয়া তুমি কেনো বুঝতেছো না। আব্বু আম্মু তো আমাদের কে এখবো মেনে নেই নি।তাছাড়া ওনার মতোন একজন সম্মানিত মানুষ কে আমি কখনো আমার পরিবার এর সামনে অপমানিত হতে দেখতে পারবো না। আব্বু ভিষণ রেগে আছে আমার উপর তুমি একটু আসবা প্লিজ।।
বোনের এমন ভাবে আকুতি মিনতি দেখে না করতে পারলো না ঈশান। তাই ইরাকে শান্তনা দেয়ার জন্য বললো!!
__ঘন্টা খানেক পর আসতেছি বুনু।
“”জুথী কে সাথে করে নিয়ে এসো ভাইয়া প্লিজ!
ওকে। কথা শেষ করে ঈশান কল টা কেটে দিলো। আর জুথী কে বললো রেডি হওয়ার জন্য এখন তাড়া বের হবে। জুথী ও আপওি করলো না হয়তো ইরা বলেছে যাওয়ার জন্য।জুথী উঠে রেডি হয়ে নিলো।
রিফাত কোম্পানির কাজে যখন তখন বাসাই আসে! আশরাফ সিকদার এর সাথে দেখা করতে। আশরাফ সিকদার প্রিয়াশ কে কয়েক বার বলে ছিলেন। রিফাত এর সাথে অসিফে যাওয়া জন্য। সে যাবে না তাকে জুর করা টাও বোকামি। আশরাফ সিকদার অনেক টাই ব্যাস্ত নির্বাচন নিয়ে।সামনেই নির্বাচন হাতে গুনা মাস খানেক আছে। রিফাত আশরাফ সিকদার এর জন্য ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করছে।কলি বসে বসে টিভি দেখছে। রিফাত কে দেখে তার দুষ্ট বুদ্ধি মাথাই আসলো তাই রিফাত এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো!!

___কেমন আছেন মি. দিন কানা??
হাই আল্লাহ কাকে কি বলেছি দেখা হলেই কিনা সেই কানা বলে ডাকে। রিফাত রাগে করকস গলাই বললো!!!
__ম্যাম দয়া করে কানা বলবেন না আমাকে?? নিশ্চয় আমি এত টাও অন্ধ নয়! আর আমি অন্ধ হলে নিশ্চয় আপনার বাবা চাচারা আমাকে বসে বসে বেতন দিতো না তাই না।
“”আমাকে এমন ভাবে বলছেন কেনো!আপনিই তো বললেন যে আপনি দিন কানা!!
“”আরে ম্যাম ওইটা তো মজা করে বলছি। আমি কি জানতাম নাকি আপনি মজা বুঝেন না!!
“”আমাকে ইনসাল্ড করলেন কেনো??
“”এতটা সাহস হয় নি ম্যাম আমার!তারপর ও যদি আপনার মনে হয় আমি আপনাকে ইনসাল্ড করেছি। তাহলে আমি দুঃখিত।
আশরাফ সিকদার আস্তে ধীরে এসে বসলেন রিফাত এর পাশে!! রিফাত কে উদ্দেশ্য করে বললেন!!

__তোমার জন্য একটা পাএী দেখেছি!!
রিফাত খুশিতে গদগদ হয়ে বলললো!!
__সত্যি স্যার!!
“”হ্যা!
“‘মেয়েটা দেখতে কেমন?
“” সেই সুন্দর আছে তবে একটি সমস্যা আছে৷!!
রিকাত কপাল কুঁচকে বললো!!
__কি সমস্যা??
“”””একটু চোখে কম দেখে! মানে রাতে চোখে দেখে না রাত কানা আর কি!
“”কলি পাশ থেকে বলে৷ উঠে! পারফেক্ট ম্যাচিং বড় আব্বু!একজন দিন কানা তো আরেক জন রাত কানা!
রিফাত কাঁদো কাঁদো গলায় বলে!!

__বিয়ে ক্যান্সেল! আমি বিয়ে করবো না!!
ঈশান আর জুথী বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করতেই আশরাফ সিকদার ঈশান কে ইঙ্গিত করে বললো!!
__দিস ইস নট ফেয়ার ইয়াং ম্যান! তুমি কাজ টা ঠিক করো নি!
ইশান আশরাফ সিকদার এর পাশে বসে আশরাফ সিকদার মানানোর জন্য বললো!!
__সরি আংকেল! আমার একদমি মনে ছিলো না তবে আপনার জন্য আজকে একটা সারপ্রাইজ আছে!
“”কি!!
“”আমি তো শুভ কাজটা সেরে ফেলেছি।
আশরাফ সিকদার এর আগেই পাশ থেকে রিফাত বলে উঠলো!!
__ভাই কাজী কিন্তু আমার একশো টাকা এহনো ফেরত দেয় নাই।
“””চুপ সালা ফকির!!

ইরা কোথাই!! কলি বললো ভাবী তো রুমে। জুথী উঠে কলির সাথে সাথে ইরার রুমে গেলো। ইরার দরজার সামনে গিয়ে কড়া নারতেই ইরা দরজাটা খুলে দিলো! কলি কে সাথে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো তাই কিছুটা চালাকি করে কলি কে পানির কথা বলে নিচে পাঠিয়ে দিলো। ইরা জুথীকে বললো এই মূহুর্তে পেট ব্যাথার নাটক করতে! তাকে যেভাবেই হোক বাড়ীর বাইরে যেতে হবে। জুথী আর কোনো কথা না বলে কান্না করতে শুরু করলো পেট ব্যাথা বলে ঈশান সহ ড্রয়িং রুমের সবাই ছুটে চলে আসলো ইরার রুমে। কি হয়েছে জানতে চাইলে ইরা জানাই জুথীর অনেক পেটে ব্যাথা করছে। এখনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। ঈশান আর দাড়াই না সোজা জুথী কে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে তোলে। রিফাত যেতে চাইলে ইশান জানাই। এখন যেতে হবে না যদি দরকার পরে আমি কল করবো তখন আসবি। জুথী কে ইরা শক্ত করে দরে বসে আছে।ইরা ফোনটা বাসায় রেখে এসেচে ইচ্ছাকৃত ভাবে যাতে করে আদিল লোকেশন ট্যাক করতে না পারে৷ ঈশান কাছাকাছি একটা হসপিটালে নিয়ে যেতে চাইলে ইরা বলে ভাইয়া “”” Black Rose””” বাড়ির লোকেশন টা কই বলতো!
ঈশান কিছুটা কৌতূহল নিয়ে বললো!!

__কেনো??
“”এমনি বলো না!!
ঈশান লোকেশন টা ইরা কে বলে দেয়। সেদিন ইরা জ্ঞান শূন্য ছিলো বলে জায়গা টা চিনতে পারেনি! তবে আজ ঠিক খুঁজে বের করে নিবে। হসপিটালে জুথী কে ভর্তি করা হলো আপাতত দুই দিনের জন্য। অথচ জুথীর কিছুই হয়নি। সব টাই ইরার নাটক! ইরা ঈশান কে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে বললো!!
__ভাইয়া তুমি চলে যাও কালকে সকালে আবার আইসো। আমি জুথীর পাশে আছি। যদি কোনো প্রয়োজন হয় আমি অবশ্যই তোমাকে কল করবো।

ইরা কোনো রকম ঈশান কে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।ইরা আর এক মিনিট ও দাড়াই না ইরা একা ওই ভয়ংকর বাড়িতে যেতে চাইলে জুথী বলে অসম্ভব। আমি ও যাবো তোর সাথে।ইরা জুথী কে কোনো ভাবে মানাতে না পারে না তাই সাথে করে নিয়ে যায় সেই ভয়ংকর বাড়ি টিতে ।
ইরার ফোনটা বেজেই চলেছে! প্রায় ঘন্টা খানেক দরে। আদিল রাগে কটমট করতে লাগলো। নিজেকে কন্টোল করতে না পেরে সামনে রাখা ছোট ট্রি – টেবিল বরাবর সহ জুড়ে এক লাথী মারে সাথে সাথে গুরিয়ে ভেঙে যায়।এমন শব্দ পেয়ে পাশের রুম থপকে অহনা সিকদার এবং আদিব দৌড়ে ছুটে আসে আদিল এর কাছে!!!
অহনা সিকদার গম্ভীর গলাই জিজ্ঞেস করলেন!!

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ২২

__হোয়াটস রং উইথ ইউ! এমন ভাবে পাগলামি করছো কেনো???এটা তোমার বাসা নই!!
আদিল রাগে দাঁতে দাঁত পিসে রিরিরি করতে করতে বললো!!
__ওই হারামির বাচ্চা আমাকে জীবনেও শান্তিতে থাকতে দিবে। আমার সুখ কেন ওর সহ্য হয় না। আমার পাসপোর্ট রেডি করো! আই এম গোয়িং টু বাংলাদেশ!!!

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here