এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ৪৩

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ৪৩
Chadny islam

ভোর সকাল পাঁচটা! বাইরে তীব্র ঠান্ডা শীতল আবহাওয়া শরীরের প্রতিটি শীরা উপশীরা শীতে ঠকঠক করে কাঁপা কাঁপা শুরু করছে ইতিমধ্যে ! দুই প্রান্তে দাড়িতে থাকা দুইটি মানুষ! আদিল নরম সুতির পাঞ্জাবি পরছে তো অন্য দিকে ইরা কালো রংঙের সিল্কের শাড়ি পরছে! শাড়ি টা এত বেশি পাতলা যে শীতের ঠান্ডা শীতল হাওয়া শাড়ী ছেদ করে ভেতরে প্রবেশ করছে। প্রায় ঘন্টা খানেক দরে দাড়িয়ে আছে দুই জন! আদিল ইতিমধ্যে কয়েক বার ইরা কে মানানোর জন্য কাছাকাছি আসলে ইরা আরও দুরত্ব নিয়ে দূরে চলে যায়।আদিল এক দীর্ঘ শ্বাস টেনে ভিরভির করলো!!

____চাইলে ও সুন্দর একটি মূহুর্তে সাক্ষী হতে পারতো তারা দুইজন! হঠাৎ করে কি যেনো হয়ে গেলো হাজার হাজার মাইলের মতোন দূরত্ব রয়ে গেলো। এই দূরত্ব হাটিয়ে কবে একে অপরের কাছাকাছি আসবে জানা নেই! ভালোবাসা টা যেমন সত্যি ঠিক তেমনি মিলন টাও তত টাই গুরুত্বপূর্ণ!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরা ঠকঠক করে শীতে কাঁপা-কাঁপি করছে!তারপর ও নিজের রুমে চলে যাচ্ছে না! এত রাগ হয় কিভাবে একটা মেয়ে মানুষ এর। যেখানে পুরুষ এর রাগ থাকবে অধিকাংশ বেশি সেখানে কিনা তার বউয়ের রাগ থার্টডিগ্রি! ইরাকে এমন কাঁপা কাঁপা করতে দেখে আদিল এগিয়ে গেলো ইরার দিকে। আদিল সিকদার তো আর পাশান্ড নয় তার বউ এর মতোন,আদিল ইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে দুই হাতে জড়িয়ে দরলো ইরা কে! ইরার সমস্ত বাহু ঠান্ডায় বরফ জমে গেছে! ইরা যে আদিল কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবে ঠিক তত টুকু পরিমান শক্তি নেই শরীরে! আদিল ইরার বাহু টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো ! ইরার চোখে মুখে বিস্ময় কপাল ভাজ শুধু ঠেকাতে পারছে না আদিল কে। আদিল এক সেকেন্ড ও দেরি করলো না,বরং এক হাতে ইরার কোমর তো অন্য হাতে ইরার গাড় গুরিয়ে উষ্ণ ঠোঁটের বাঝে ঠোট বুঁজে দিলো।

পরপর কয়েক সেকেন্ড ইরার নরম তুলতুলে ঠোঁটে ঠোট বুঁজে রাখলো।ইরা শক্ত হাতে খামচে ধরে দরেছে আদিল এর পাঞ্জাবি! পরপর একে অপরের তপ্ত নিঃশ্বাস ভেসে আসছে বারবার।এত ঠান্ডার মাঝেও মূহুর্তেই একে অপরের শরীর গরম উষ্ণ হয়ে উঠছে।আদিল এবার ঠোঁট ছেড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো ইরার গাড়ে! বেধে রাখা কোমর গড়ানো চুল গুলো কে একটানে খুলে ফেললো!আদিল একের পর এক শব্দ করে চুমু খেয়ে যাচ্ছে! আদিল এবার কোলে তুলে নিলো ইরা কে! ইরা শক্ত করে পাঞ্জাবি বাজে খামচে দরে রেখেছে! আদিল ছাদ থেকে কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে গেলো রুমের দিকে। বিছানার উপর ছুরে ফেলে দিয়ে, রুমের দরজা আটকে এগিয়ে গেলো ইরার দিকে। আদিল এক টানে পাঞ্জাবি খুলে ফেললো ছুরে মারলো ফ্লোরে! অনুমক্ত শরীর নেশাই জড়ানোর মতোন! আদিল বিছানার দিকে এগুতেই ইরা এক লাফে বিছানা থেকে নেমে গেলো। আদিল ইরার অন্য দিকে যাওয়া দেখে অপ্রস্তুত হয়ে এগিয়ে গেলো ইরার দিকে, ইরার হাত টেনে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে দরে গাড়ে মুখ বুঁজে দিয়ে বললো!!

____প্লিজ! টাস্ট মি.আর হার্ট করবো না তোমাকে!
ইরা অন্য দিকে তাকিয়ে আদিল কে উদ্দেশ্য করে বললো!!
____আপনি প্লিজ সব ছেড়ে দেন! আমি আপনার পাশে থাকবো!
আদিল শক্ত গলাই ইরা কে নিজের দিকে গুরিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো !!
____যদি না ছাড়ি??
ইরার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বার বার! আদিল এর অনুমক্ত বাহু বারবার টানছে তাকে। কেনো এত দুরত্ব এলো তাদের মাঝে! ইরা নিজের থেকে আদিল কে সরাতে সরাতে বললো!!
____ছাড়ুন আমাকে।
আদিল রাগে রিরি করে বলে উঠলো!!!

____তুমি আমাকে বাঁধা দিতে পারো না!
___অধিকার দেখাচ্ছেন!!
__যদি বলি হ্যা অধিকার দেখাচ্ছি!
___তুমি তো আমার জন্য হালাল! তোমার উপর আমার পরিপূর্ণ অধিকার আছে!
আদিল ইরার গালে নরম স্পর্শের পরশ একে দিয়ে বলে উঠলো!!
____প্লিজ! আমাকে একটি বার তোমাকে ভালোবাসা সুযোগ করে দাও! টাস্ট মি ঠকবে না তুমি! প্রথম ছোঁয়া টা জোর জবরদস্তি করে হোক আমি মোটেও চাই না।
ইরা কোনো কথা না বাড়িয়ে দূত বেরিয়ে গেলো রুমে থেকে।আদিল রাগে ফুসফাস করে উঠলো! দাঁতে দাঁত খিসে গম্ভীর গলাই বলে উঠলো!!

____সালার কুওা কপাল! বাসর ছাড়াই জীবন পার করে দিতে হবে। যে বউ আমার যেনো আস্ত একটা বাঘিনি!
আদিল এবার গা এলিয়ে দিলো বিছানায়! আদিল মোটামুটি সিউর ছিলো ইরা অনন্ত বাড়ি থেকে রেগে বেরিয়ে যাবে না।
সকাল আট টা…….
আশরাফ সিকদার সহ বাড়ির প্রতিটি লোক নিচে ড্রয়িংরুমে খাবার খেতে চলে এসেছেন। সেই সাথে ঈশান রিফাত তো আছেই।গত কাল রাতে সবাই একসাথে ছাএলীগ এর সাথে ছিলো, বাড়িতে ফিরতে ফিরতে তিন টার মতোন বেজে গিয়ে ছিলো সেই সুবাদে আর বাড়ি ফেরা হয় নি। তাছাড়া আজকে আদিব এর নতুন ডক্টর এর চেম্বার ওপেন করা হবে।আশরাফ সিকদার সহ আদিল সবাই সেখানে থাকবে। অহনা সিকদার নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আইরার সাথে লেনদেন শুরু করেছেন। আজকাল তিনি একা একা সব টা সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান। এখন থেকে আদিল ও রাজনীতি নিয়ে বেশ ব্যাস্ত থাকবে।অহনা সিকদার পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে রিফাত সব কিছুর সব সময় দেখা শোনা করবে।

প্রায় দশ টার দিকে আশরাফ সিকদার আদিব ঈশান রিফাত বেরিয়ে যায় নতুন চেম্বার ওপেন করার উদ্দেশ্য! আদিল কে আশরাফ সিকদার একটা টেক্স পাঠিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। গত রাতের ব্যাস্ততা অতিরিক্ত টেনশন সব মিলিয়ে সারা দিন খুবি ব্যাস্ত কেটেছে।
প্রায় এগারো টার দিকে আদিল সম্পূর্ণভাবে রেডি হয়ে চলে গিয়েছে আশরাফ সিকদার এর পাঠানো লোকেশনে! তাছাড়া নির্বাচন অফিস থেকে কিছু লোক এবং আমেরিকা নিউ ইয়র্ক শহর থেকে আদিল এর খুবি কাছাকাছি বন্ধুরা আসবে।আদিল এর বাংলাদেশ ফেরার পর থেকে তেমন খুব বেশি আর আমেরিকা যাওয়া হয় নি। রাজনৈতিক সমাবেশ আরও বিভিন্ন কার্যকর বিষয় নিয়ে খুবি ব্যাস্ত থাকবে। দিন দিন ব্যাস্ততা ঠিক যতটা বাড়ছে ঠিক ততটাই কাজের পেসার পরছে। অফিস, রাজনীতি, মাফিয়া সংগঠন সব মিলিয়ে বেশ ব্যাস্ত।

উদ্দবদনের মহা সম্মিলন এর কাজ চলছে! আদিব সহ আশরাফ সিকদার পাশেই আদিল সবাই মিলে গেটের ফিতা কেটে ভেতরে প্রবেশ করলো।আদিব এর কিছু ক্লোজ সহপাঠীরা ও এসেছে। আদিল সকালে দূত বাসা থেকে বেরিয়ে চলে এসেছে। ইরার সাথে দেখা পর্যন্ত হয় নি সকালে। আদিল ভেবে ছিলো ইরা হয়তো রাগ করে তার রুমে আসছে না। তবে দিন শেষ অভিমান কিছু টা কমে গেলে ঠিল চলে আসবে তার কাছে। আশরাফ সিকদার রিফাত কে দিয়ে কিছু বিরিয়ানি এবং সাথে মিষ্টি মুখ করার ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

আজকে লাস্ট এক্সাম তার পর থেকে বেশ কিছু দিন এর জন্য বন্ধ থাকবে কলেজ! রিমঝিম এবং কলি এক্সাম শেষ করে রাস্তার পাশে ছোট একটা দোকান থেকে ফুচকা খাচ্ছে। তারা বরাবরি এই ছোট দোকান থেকে ফুচকা খায়।কলি বেশ অনেক দিন আগে বলে রেখছিলো রিমঝিম কে লাস্ট এক্সাম এর দিন সাথে করে সিকদার মহলে নিয়ে যাবে। ফুচকা খাওয়া শেষ করে কলি এবং রিমঝিম গিয়ে বসলো গাড়িতে। সাথে সাথে ডাইবার গাড়ি নিয়ে রওনা দিলো সিকদার মহলের উদ্দেশ্য!

আদিস সিকদার আজকে অফিসে এবং আদিব এর নতুন চেম্বারে কোথাও যায় নি। আজকে প্রিয়াশ কে আমেরিকা পাঠানো হবে। আগের ডক্টর বলেছেন প্রিয়াশ এর অবস্থা আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক এখন, আপনারা চাইলে ভালো কোনো ডক্টর দেখাতে পারেন। তাই আশরাফ সিকদার সব কিছুর ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন মাইমুনা সিকদার এর রিকুয়েষ্টে। এখন তো মাইমুনা সিকদার একা একা সব কিছু স্লোব করতে পারবেন না, তাই বাধ্য হয়ে আদিস সিকদার ওনার ওয়াইফ মাইমুনা সিকদার কে হেল্প করবেন। ব্যাস যাকে বলে দায়িত্ব আপাতত সেই টাই পালন করছেন তিনি।
রিমঝিম কলির সাথে পুরো বাড়ি টা গুরে গুরে দেখছে! বাড়িতে আপাতত কোনো ছেলে নেই সেই সুযোগে কলি আদিব এর রুম ঘুরাঘুরি করছে। এত খন আদিব বাসায় থাকলে হয়তো আঠার মতোন পেছন পেছন গুরগুর করতো। কলি মিনমিনে বলে উঠলো!!

____কবে আসবি আমার ভাবী হয়ে??
রিমঝিম গা জারা দিয়ে বলে উঠলো!!!
___কখনোই আসবো না তোর ভাবী হয়ে!!
কলি কপাল কুঁচকে ফেললো!!
____কেনো??
“””প্রপোজ করার মুরোদ নেই যায়! বিয়ে করার মুরোদ কি তার হবে!
“””তুই কি কোনো ভাবে আমার ভাইয়া কে বোকা ভাবছিস??
“”না একদম বোকা ভাবছি না। আমি জানি ওনি তো আস্ত একটা গাধা!
“””হুম ঠিক বলেছেন মিস!.জিগার লাগে গাধার বাড়িতে এসে গাধার নামে বদনাম করতে???
হঠাৎ করে কোথা থেকে কথা ভেসে আসছে!তাই রিমঝিম এবং কলি পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকাই! দরজায় তাকাতেই দুই জন কপাল কুঁচকে ফেলে! আদিব ভেতর প্রবে করতে করতে বলে উঠলো!!!
____মিস. রিমঝিম আপনার গাধাটা কিন্তু একজন ডক্টর! আপনার গাধাটা তো অনন্ত একটু সম্মান ডির্জাব করে আপনার থেকে!

রিমঝিম লজ্জায় মাথা নয়ে রেখেছে। সে তো জানতো বাসায় কেউ নেই। তাই কলির সাথে এসেছে৷ কিন্তু হঠাৎ করে আদিব কোথা থেকে চলে আসলো। রিমঝিম কে এক রস্টা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কলি বলে উঠলো!!
____আরে ভাইয়া শোনো….
আদিব থমথমে মুখে বলে উঠলো!!!
_____তুই চুপ কর! বড়দের মাঝে কথা বলতে নেই!
কলি রাগে ফুসফুসিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে উঠলো!!
____আইছে জাতীর দাদা তুমি কয় দিনের বড় আমার!
বলেই কলি রিমঝিম এর হাত টেনে রুমে থেকে চলে যাওয়া প্রস্তুতি নিলে, আদিব অন্য হাতে রিমঝিম এর আরেক হাত টেনে বললো!!

____তোর সমস্যা হচ্ছে তুই বেরিয়ে যা! আমার জিনিস নিয়ে টানাটানি করছিস কেনো???
কলি একটু উঁকি মেরে দেখলো! সত্যি কি অন্য কিছু নিয়ে যাচ্ছে নাকি! কিন্তু না তো সে তো অন্য কোনো কিছুই নিচ্ছে না বরং রিমঝিম এর হাত দরে রেখেছে। রিমঝিম তার জিনিস হলো কিভাবে! কলি কপাল কুঁচকে ফেললো!!
____রিমঝিম বুঝি তোমার জিনিস???
আদিব এক উওরে বলে উঠলো!!
___হ্যা!!
কলি এবার সিরিয়াস হয়ে বললো!!

____তাহলে বাড়ির সবাই কে ডেকে আনি! আমি ও দেখি তারা তোমার জিনিস টাকে চিনে নাকি!!
আদিব গম্ভীর গলাই বলে উঠলো!!!
_____যা মামুনি কে সাথে করে নিয়ে আসবি! আর হ্যা মনে করে এক কাপ কফি ও!!
বলেই কলি এক ছুটে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে! এর মধ্যে রিমঝিম কলির পেছন পেছন চলে যেতে চাইলে আদিব! এক হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হাঁটু ভেঙে ঠিক রিমঝিম এর সামনে বসে বললো!!
___গাধা মনে হয় আমাকে!
রিমঝিম ভয়ে ভয়ে মাথা অল্প নেড়েচেড়ে বললো!!
___না.!

আদিব এবার উঠে দাড়ালো রিমঝিম এর ভয়ের কারন টা বুঝতে!আদিব কিছুটা সময় নিয়ে বললো!!
___বিয়ের আগেই শশুর বাড়িতে ঘুরাঘুরি করছেন?? কাজ টা কিন্তু মুটেও ঠিক না!
রিমঝিম লজ্জায় মাথা নয়ে ফেললো!আদিব কি আজ তাকে ইচ্ছা করে লজ্জায় ফেলছে। সে তো শশুর বাড়ি ঘুরতে আসেনি! সে তো এসেছে বান্ধবীর বাসায়! তাহলে তাকে কেনো আদিব উল্টো পাল্টা বলছে। রিমঝিম কে এমন নাজে হাল দেখে আদিব ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো! এর মাঝে কলি হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে থমথমে মুখ নিয়ে চলে এসেছে রুমে। আদিব এর হাতে কফির কাপ টা এগিয়ে দিয়ে থমথমে মুখে বলে উঠলো!!
____বাড়ির সবাই কোথায়! আম্মু কেও তো বাসায় দেখছি না!

আদিব বললো!!
____প্রিয়াশ ভাইয়া কে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে গিয়েছে!
“””বড় ভাইয়া, বড় আম্মু তারা কোথায়??
আদিব কপাল কুঁচকে ফেললো!!
____তাদের কি কোনো কাজ নেই তোর মতোন থাকে নাকি তারা। ভাইয়ার আমেরিকা থেকে কিছু বন্ধু আসবে তাদের সাথে দেখে করবে। আর মম তো অফিসে ফিরতে লেট হবে। নতুন প্রজেক্ট এর কাজ শুরু করেছে!
কলি দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললো!!
____ওহহহ!!
ভাইয়া বিরিয়ানি অডার করো! রিমঝিম প্রথম বার আমাদের বাড়িতে আসছে না! ওরে কি আর প্রথম প্রথম মাছ ভাত খাওয়ানো যাবে তুমিই বলো!
আদিব দাঁত চেপে হেসে বললো!!

____কত বড় ধান্দাবাজ! তোর খেতে ইচ্ছে করছে তোর নাম বল শুধু শুধু বেচারি আমার বউ টাকে ফাসিয়ে দিচ্ছসিস কেনো।
রিমঝিম অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো!!
____কি বললেন???
আদিব সিরিয়াস হয়ে বললো!!
____কি বলেছি এমন, মনে পরছে না তো??
আদিল বড় সড় একটা রেস্টুরেন্ট বুক করে রেখেছে!আমেরিকা থেকে তার কিছু বন্ধু এবং তার দলের কিছু সদস্যরা আসবে। তাদের জন্য পাশেই একটা হোটেল বুক করা হবে। বাংলাদেশে বেশ কিছু কাজ রয়েছে তাদের। সেগুলা শেষ করতে সাত আট দিন মিনিমাম সময় লাগবে। আদিল খালি রেস্টুরেন্টে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে ফোন দেখছে। তার পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টরা সব রেস্টুরেন্টের বাইরে দাড়িয়ে! প্রায় মিনিট পাচ পরে।কালো সুট বোট পরিহিত ফর্সা রং এর এক অর্ধবয়স্ক যুবক এসে হাজির হয় রেস্টুরেন্টে
আদিল এর সাথে দেখা মাএ হাত মিলিয়ে সহমত প্রকাশ করে টেবিলে বসলো। যার নাম “রিজ লুমান” যে কিনা আমেরিকার সব থেকে বড় মাফিয়া দের মধ্যে একজন! আদিল কে মাফিয়া জগৎ প্রবেশ এর প্রথম মাধ্যম টাই তিনি। রিজ লুমান মুটামুটি বাংলা ভাষায় কথা বলতে জানেন! আদিল একজন ওয়েটার ডেকে কিছু খাবারের ওডার করে দিলো। রিজ লুমান বলে উঠলো!!

____কংগ্রাচুলেশনস! শুনলাম এমপি হয়ছিস!!
হুম!!
“”বাঘ তো বাঘি হয়।বাঘ যেই খানেই থাকুক না কেনো স্বীকার করা কখনোই ভুলে যায় না ঠিক তোর মতন!!
আদিল অল্প হেসে বললো!!
___বাঘ দিন দিন বিড়াল হয়ে যাচ্ছে। বাঘের ঘরে আস্ত একটা বাঘিনী ডুকে পরেছে।
রিজ লুমান শব্দ করে হেসে বলে!!
____ঘরে বিড়াল থাকুক!তবে বাইরে যেনো বাঘ হয়েই রাজত্ব করে।
আদিল কে চুপ থাকতে দেখে রিজ লুমান বলে উঠলো!
___এবার মেয়ে লোকের এর সর্বোচ্চ বয়স যেনো আঠারো হয়।তাদের চাহিদা অনেক বেশি! ফ্রান্স থেকে মেয়ের জন্য এডভান্স টাকা পেমেন্ট করে দিয়েছে! আমি ও তোর ব্যাংকে ট্রান্সফার করে দিয়েছি! চেক করে দেখে নিস। এবার মেয়ের সংখ্যা কমছে কম একশো লাগবেই!
আদিল নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। সে কেবল এমপি হয়েছে এই মূহুর্তে এত গুলা মেয়ে উধাও হয়ে গেলে সব রিক্স তার উপর এসে পরবে। তাই আদিল বললো!!

____আগে বাংলাদেশ টা ইনজয় কর! পরে কাজ নিয়ে ভাবা যাবে।
আদিল কে এমন উদাসীন ভাবে কথা বলতে দেখে রিজ লুমান বলে উঠলো!!
___আর ইউ সিরিয়াস! আই হাব টেকেন দ্যা এডভান্স মানি!
আদিল বললো!!
___ইফ ইটস এ প্রোবলেম ফর দেম টু ওয়েট!সেন্ট দ্যা মানি ব্যাক! রাইট নাও!
রিজ লুমান কপাল কুঁচকে বললো!!
____টাকা ফেরত পাঠিয়ে দিবো! ইমপজিবল! আমি সময় নিচ্ছি তুই রিলাক্স হো!
আদিল এবং লুমান বেশ কিছু মিনিট নিজেদের মতোন কথা বলে,লুমান কে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আদিল বাড়িতে চলে আসার প্রস্তুতি নেন।

আশরাফ সিকদার ছাএলীগ দের সাথে মিলেমিশে কিছু বেকার লোক এবং কিছু রাস্তা ঠিক করার নিয়ে কথা বলছিলো। অহনা সিকদার এর কোম্পানিতে সব গুলাকে চাকরি দেয়া হবে। এই নিয়ে বিকাল থেকে বেশ ব্যাস্ততায় কাটিয়ে দিয়েছেন বিকাল থেকে।
রাত নয় টার কাটায়!
রাতের খাবার রেডি করেছেন অহনা সিকদার! মাইমুনা সিকদার এবং আদিস সিকদার বাসায় ফিরেন নি। অহনা সিকদার কে কিছু মহিলা সারবেন্ট রা মিলে সাহায্য করছেন। কলি এতখনে এসে বসেছে খাবার টেবিলে সাথে আদিব ও! আশরাফ সিকদার এবং আদিল তারা কেউ এখনো বাসায় ফিরে নি। অহনা সিকদার টেবিলে ইরা কে দেখতে না পেয়ে কলি কে জিজ্ঞেস করলেন!!

____ইরার কি পড়াশোনা শেষ হয় নি এখনো! সে কি জানে না এখন সবার খাবার সময়??
কলি মূহুর্তে বলে উঠলো!!
____আজকেই সারাদিন তো ভাবীর সাথে দেখাই হয় নাই!
মূহুর্তেই অহনা সিকদার কপাল কুঁচকে বলে উঠলেন!!
___কি বলছো এসবে! রাত নয় টার উপরে বাজে এখন বলছো আমাকে।
কথা শেষ করেই অহনা সিকদার ইরার রুমের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন! সাথে কলি এবং আদিব ও উঠে দাড়িয়ে হাঁটা দরলো অহনা সিকদার এর পিছু পিছু!এক মিনিট এর ব্যবধানে এগিয়ে গেলেন ইরার রুমে। রুমে দুহাতে ঠেলে দরজা খোলে ভেতরে প্রবেশ করলেন! যা দেখে রীতিমতোন সবাই অবাক হয়ে গেলো। আদিল এর পুরো রুম টাই এলেমেলো ফ্লোরে অগননিত কাজের টুকরো পরে আছে। টেবিল সহ কয়েক টা ফুলদানি পরে আছে নিচে। অহনা সিকদার বিষয় টা মুটেও স্বাভাবিক ভাবে নিলেন না! তৎক্ষনাৎ কল করলেন আদিল কে! দুই বার রিং হওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ করলো আদিল! অহনা সিকদার মূহুর্তেই গমগমে আওয়াজ তুলে বলে উঠলো!!

____ইরা কোথায়??
আদিল মূহুর্তেই শুকনো ডোক গিলে বলে উঠলো!!
____কেনো! ইরা বাড়িতে নেই??
অহনা সিকদার প্রচন্ড রাগের তোপে বলে উঠলেন!!
____বাবার মতোন ডিসিপ্লিন হয়ে যাচ্ছো! সব কিছু তেই ফোকাস করছো! শুধু প্যারসোনাল লাইফ ছাড়া! এইটা তোমার থেকে আশা করি নি আমি!!
বলেই অহনা সিকদার মুখের উপর কল কেটে দিলেন! কলের পিংপং আওয়াজে আদিল কান থেকে ফোন নামিয়ে নিলো!রাগে অগ্রসর হয়ে কপাল বেয়ে দু’ফোটা ঘাম ঝরে পরলো। গাড়িতে ঠান্ডা এসিতে ও বসে বসে ঘামছে আদিল। অতিরিক্ত রাগে ফুসফুস করে উঠলো। গম্ভীর গলাই মিনমিনিয়ে বলে উঠলো!!

___আর কত ছার চাই তোর বউ! আগে তো বিষয় টা বন্ধ রুমের ভেতরে ছিলো। আর এখন প্রকাশ্যে করছিস। সবার সামনে আমাকে হাসির পাএ বানিয়ে দিলি। তোর সীমানা ঠিক কত দূর এই আদিল সিকদার খুব ভালো করে জানে।
আদিল গাড়ির স্পিড অনেক টাই বাড়িয়ে দিলো! সেই সাথে গাড়ির ভেতরে ফুল সাউন্ডে গান ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে গুন গুন করে গেয়ে উঠলো!!!
তোমার আমার প্রেম আমি আজ ও বুঝিনি
ওই চোখের চাওয়াতে প্রেম আজ ও দেখেনি
দূরে তবু দূরে সরে থাকতে পারেনি
কাছে এসে কেনো কাছে আসতে পারেনি
আমি আজও বুঝিনি…..!
আশরাফ সিকদার এতখনে বাসায় পৌঁছে গিয়েছেন।ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া নিজের রুমেই করছেন। আসতে বেশ লেট হয়েছে তাই! তাছাড়া চাকরির বিষয়ে অহনা সিকদার এর সাথে বেশ কথা ও আছে অনেক! অহনা সিকদার কে থমথমে মুখ নিয়ে বসে থাকতে দেখে আশরাফ সিকদার বলে উঠলেন!!!

____কি হয়েছে রাগিণী!
অহনা সিকদার কোনো কথা না বারিয়ে চলে গেলেন বেলকনিতে। তার মুড টা একদম ভালো নেই।
রাত দশটা একুশ মিনিট!!!.
আদিল থমথমে মুখ নিয়ে কলিং বেল চাপলো বেশ কয়েক বার! এত রাতে বারবার কলিং বেল এর শব্দে আজাদ চৌধুরী এসে রুমের দরজা খোলে দিলেন। আজাদ চৌধুরী আদিল কে এত রাতে এই দেখে বেশ অবাক হলেন না৷ বরং আদিল লম্বা সালাম জানিয়ে বললে!!
___কেমন আছেন আব্বু!!
আজাদ চৌধুরী সালাম এর উওর জানিয়ে সহমত প্রকাশ করে বসতে বললে,আদিল জিজ্ঞেস করলো!!
___ইরা কোথায়??
আজাদ চৌধুরী বললেন!!
___ওর রুমেই আছে! তুমি যাও আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি!
আদিল যথেষ্ট সম্মান এর সাথে বললো!!

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ৪২

___আমি রাতে বাইরে থেকে খাবার খেয়ে এসেছি! আপনি টেনশন করবেন না।আপনি বরং শুয়ে পরেন!
আদিল হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে গেলো ইরার রুমে। ইরার রুম টা খোলা থাকায় সোজা প্রবেশ করলো রুমে, রুমের দরজা আটকে দিলো আদিল। দরজার শব্দে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে আদিল! ইরা কপাল কুঁচকে বলে উঠলো!
___আপনি এইখানে??
আদিল উপরের লং জ্যাকেট টেনে খুলতে খুলতে বলে উঠলো!!
____বউ যেখানে স্বামী তো সেখানেই থাকবে তাই না! ইট’স নরমাল বেইবি!

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ৪৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here