এক শ্রাবণ হাওয়ায় শেষ পর্ব 

এক শ্রাবণ হাওয়ায় শেষ পর্ব 
কায়ানাত আফরিন

আজ সকালটা সূচনা হলো কারও উষ্ণ বন্ধনের সংস্পর্শে। পিট পিট করে চোখ খুলে দেখি আমার কোমড় নিজের বলিষ্ঠ হাত দিয়ে আকঁড়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন আনভীর। নিঃশ্বাস পড়ছে ধীর ভাবে। সকালে এমন একটা দৃশ্য দেখে নিমিষেই মন ভালো হয়ে গেলো আমার। এতগুলো সময়ের মধ্যে উনার মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো পরিবর্তন আসেনি। সেই ঘন বড় আখিপল্লব, বন্ধ অবস্থায় তা যেন আরও ঘোর লাগিয়ে দেয়। লালচে গোলাপি রঙের সংমিশ্রনে ঠোঁটগুলো লাগে নেহাৎ বাচ্চাদের মতো। বরাবরের মতো চুলগুলো সামালহীনভাবে পড়ে আছে কপালের একপ্রান্তে।

আমি উনার নিজেকে খুব কষ্টে ছাড়িয়ে নিলাম উনার আগ্রাসী বন্ধন থেকে। পরনে জামা ঠিক করে চোখ বুলালাম ক্যালেন্ডারের পাতায়। সময়গুলো কর্পূরের ন্যায় চলে গিয়েছে। দেখতে দেখতে পার হয়ে গিয়েছে তিন তিনটে শ্রাবণ। প্রতিটা সময়গুলোই আমার কাছে ছিলো স্বপ্নের মতো। আমি আমার দুটো প্রাণকে বড় হতে দেখেছি, আস্তে আস্তে হাঁটতে দেখেছি, আধো আধো মুখে মাম্মাম-পাপাই বলতে শুনেছি। আর আজ আমার সেই প্রাণ দুটোর জন্মদিন, আমার আহিয়ান-আনহির জন্মদিন। আজ তিন বছর হতে চলেছে দুজনের, ভাবতেই আমার মনে ভালোলাগার সঞ্চার হলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তবে আহিয়ান-আনহিকে আমাদের রুমে না দেখে অবাক হলাম আমি। এত সকালে স্বভাবত ওরা উঠে না। আর এখন যেহেতু উঠেছে নিশ্চিত আমাদের ঘুমের সুযোগ নিয়ে ছোট ছোট পা ফেলে দুষ্টু দুটো চলে গিয়েছে দাদুভাইয়ের কাছে। এ আর নতুন না, আমাদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখলেই দুষ্টুর রাজা আহিয়ান নিজে তো জাগবেই , পরে দাদুভাইকেও জাগিয়ে বাইরের রাস্তা দেখতে বেরোবে। ভাইয়ের পিছু পিছু চলে যায় বোন আনহিও। যতই এদের মধ্যে ঝগড়া হোক না কেন, দুজন একসেকন্ডও একজন আরেকজন ছাড়া থাকতে পারবে না।

আমি বারান্দা দিয়ে দেখতে গেলাম ওদের। যা ভেবে ছিলাম তাই। বাবা আহিয়ান আনহিকে নিয়ে গিয়েছে সামনের পার্কে।সাথেই রয়েছে চার বছর বয়সী অয়ন। আনহি গলা ফাটিয়ে কান্না করছে বাবা আহিয়ানকে ঘাড়ে বসিয়েছে বলে। বাবার অবসর নিয়েছেন এক বছর হতে চললো তবুও এই বয়সে উনার শক্তি সামর্থ দেখে অবাক না হয়ে পারিনা। বেচারা অয়ন আনহির হাত শক্তভাবে আকঁড়ে ধরে নীরবে মেয়েটার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। আর কি বলছে তা আমি দূর থেকেই আন্দাজ কযতে পারছি যে, আহিয়ানের পালার পরই দাদুভাই আনহিকে নিবে। আনহি কান্না থামিয়ে দিয়েছে ততক্ষণে। আমি মাঝে মাঝে ভেবে পাইনা অয়ন এত অল্প বয়সে কিভাবে এত ম্যাচুরিটি নিয়ে চলাফেরা করে? তবে এই বয়সেই অয়নের আনহির প্রতি যেটা দিখছি, হতে পারে ওরাই ‘ফিউচার টাইম লাভবার্ডস!’

বেশি কিছু ভাবার সময় হলোনা আমার। আজ জন্মদিন উপলক্ষে বাসায় অনেক মেহমান আসবে তাই আগে ভাগেই গোসল সেরে নিতে হবে।তাই আমি দ্রুত গোসল সেরে আসলাম। বেরিয়ে এসে দেখি আনভীর তখনও ঘুমিয়ে আছেন উপুঁড় হয়ে। আমার ঠোঁটে সুক্ষ্ণ হাসির বহিঃপ্রকাশ হলো। ঘুমন্ত আনভীরকে মারাত্নক লাগে দেখতে। আমি এগিয়ে এসে উনার কাছে বসে পড়লাম। টুপ করে চুমু দিয়ে দিলাম উনার গালে। আমি তারপর উঠতে যাবো তখনই আমার হাত টেনে ধরলেন আনভীর। তৎক্ষণাৎ আমায় নিজের বুকের ওপর ফেলে দিতেই আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আনভীরের সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে এবার দুষ্টু হাসি। উনি তারপর ভ্রু নাচিয়ে বলে ওঠলেন,

-দিস ইজ নট ফেয়ার আহি। আমার ঘুমন্ত অবস্থার এত বড় সুযোগ? কিভাবে পারলে আমার ভার্জিনিটি কেড়ে নিতে?
আমার রীতিমতো মাথা চক্কর দিয়ে ওঠলো উনার আজব কথা শুনে। অবাক গলায় বললাম,
-আপনি দুই বাচ্চার বাপ আনভীর। আমি এখন তবে কিভাবে আপনার ভার্জিনিটি কেড়ে নিবো? আমি তো শুধু…..

-সেটাই তো বলছি যে আমি ঘুমিয়ে গেলে এসব করে বেড়াও আর আমি যখন এগিয়ে যাই তখন লজ্জায় দেখি মুখ দেখাতে পারোনা মেয়ে।
চোখ নামিয়ে দিলাম আমি। চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে লজ্জার রক্তিম আভাস। আনভীর এবার হেসে দিলেন সশব্দে। জড়ানো গলায় বললেন,
-এখন এসব কথা থাক। ফটাফট আরেক গালে কিস করো তো বউ। আমার গালটা তোমার স্পর্শ পাওয়ার জন্য কাতর হয়ে আছে।

-এখন না প্লিজ! একটু পরেই ওরা এসে পড়েছে।
-আহা! তাই জন্যই তো বলছি ফটাফট কাজ সারতে। এখন তো তোমার সাথে কোয়ান্টিটি টাইম স্পেন্ড করার টাইমও পাইনা তোমার ওই বাদর-বাদরিনী দুইটার জন্য। কাম ফাস্ট আহি, এটা ছাড়া তোমায় ছাড়ছিনা।
আমি চোখ বন্ধ করে টুপ করে ঠোঁট বসিয়ে দিলাম উনার গালে। আনভীরের মুখে এবার বিশ্বজয়ের হাসি। আমায় নিজের বাধঁন থেকে আলাদা করতেই আমি উনাকে রুমে রেখে বাহিরে চলে গেলাম।

ড্রইংরুম অতিথিদের আগমনে গমগম করছে। আহিয়ান আনহির তিনবছর হওয়া উপলক্ষে বড় করেই অনুষ্ঠান হবে আজ। আনভীরের চাচা-চাচি, ফুপা ফুপু, উনার চাচাতো-ফুপাতো ভাইবোন সবাই এসেছে। রাফিদ ভাইয়াই শুধু আসতে পারেনি ভাবি প্রেগনেন্ট বলে। এদিকে আজরান ভাইয়ার শ্বশুড়বাড়ির লোকজনও এসেছে, এমনকি আমার বাবাও। বাবা এখানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসেনি। এসেছে শুধু দুই নানুভাইকে দেখার জন্য।

তাছাড়া আমার আনভীরের বিয়ে হওয়ার পর অনেকেই অনেক কথাশুনায় আমায় যে আমার বাবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে আসেননা কেনো। আনভীর কি এখনও ক্ষেপে আছে উনার ওপর? এসব প্রশ্ন এড়াতেই আনভীর অনেকটা বাধ্য হয়ে সপরিবারে সবাইকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে আসেনি কেউই, মামা আর বাবা ছাড়া। মামা অনেকক্ষণ আলাপচারিতা চালালেন আমার সাথে। আনহি-আহিয়ানকে অনেকগুলো গিফটও দিয়েছেন। বাবাও কম কিছু আনেননি ওদের জন্য। তবে দাদুভাইয়ের প্রতি ওদের যেই টান আছে, নানার প্রতি সেই অংশটুকুও নেই। বাবা ছোট্ট শ্বাস ফেললেন। নাতি-নাতনিদের জন্য প্রাণভরে দোয়া করে আমার উদ্দেশ্যে বললেন ,

-আমি চলে যাচ্ছি মা?
-কোথায়?
-আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর চাকরির সুবাদে অন্য শহরে যেতে হবে। আমাকেও তাই চলে যেতে হবে ওখানে।
আমি প্রতিক্রিয়া করলাম না। বাবা তারপর কিছু বলতে গিয়েও বললেন না, হয়তো পূর্ব কাজসমূহের জন্য অনুতপ্ত। তাছাড়া শুনেছিলাম বাবার দ্বিতীয় ঘরের ছেলে নাকি বাবার খোঁজখবরই তেমন একটা করেনা। টাকা পেলেই খুশি আর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এটা প্রাপ্যছিলো উনার। টাকার পেছনে এতটা অন্ধ ছিলেন যে নিজের মেয়ের কথাও পরোয়া করেননি। বাবা তারপর অনুষ্ঠান অর্ধসমাপ্ত রেখেই চলে গেলেন বাড়ি থেকে।

কেক কাটার সময় হয়ে গিয়েছে। আমি কাজকর্ম শিউলি ভাবিকে বুঝিয়ে আহিয়ান আনহিকে খুঁজে চললাম এদিক ওদিক। আনভীরও আশপাশে নেই। ব্যাপার কি, বাপ-বেটা-বেটি মিলে উধাও হয়ে গেলো নাকি? তখনই একপাশে তিনজনকে দেখে থমকে গেলাম আমি। আনভীর একপাশে দাঁড়িয়ে আছে নীরবে। কোলে আনহি আর আহিয়ান। আনভীর শার্ট পাল্টে সাদা পায়জামা আর নীল পান্জাবি পড়ে এসেছেন, হাতা দুটো সুন্দর করে ভাঁজ করা। উনি সচরাচর পান্জাবি পড়েন না বললেই চললে। তাই এমন হৃদয় ঘায়েল করা দৃশ্য দেখে আমার নিঃশ্বাস আটকে এলো।

আনভীরের সাথে ম্যাচিং করে আমাদের প্রিন্স চার্মিং আহীয়ানও পান্জাবি পড়েছে।হাতাগুলো বাবার মতোই ভাঁজ করা। আনহি ম্যাচ করে পড়েছে একই রঙের হাতা কাটা ছোট্ট ফ্রক। পরনে লাল জুতো। দুপাশে সিল্কি চুলগুলো সুন্দরভাবে লাল ঝুটি দিয়ে বেঁধে রাখা। ওদের যে আনভীরই এভাবে রেডি করে এনেছেন এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আনহি বাবার কোলে থাকা অবস্থাতেও ফোস ফোস করে কাদছে। কারন পাপাই, ভাইয়ের মতো সেও পান্জাবি পড়বে। আনভীর বেচারীকে বুঝাতে পারলোনা যে মেয়েরা পান্জাবি পড়েনা। কে শুনে কার কথা। পরে আহিয়ান ভেংচি মারলেই বাবার কোলে থেকে এলোপাথারি মারতে থাকলো ভাইকে। আমার ওদের দৃশ্য দেখে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। তারপর উনার কাছে এগিয়ে আনহিকে কোলে নিয়ে বললাম,

-প্রিন্সেস! তুমি না গুডগার্ল? ভাইকে এভাবে কেউ মারে?
-আমি আহিয়ানের পান্জা পলবো!
আনভীর ফিক করে হেসে দিলেন এই কথায়। সেই সাথে আমিও। আনহি আবার বলে,
-পাপাই শুদু ওল জন্যই পান্জা আনসে আমাল জন্য আনেনি। তুমি পচা পাপাই। মাম্মাম আমালে পান্জা কিনে দিবে।
কোনোমতে বুঝিয়ে সুজিয়ে আমি শান্ত করলাম আনহিকে। আনভীর হঠাৎ সবার অগোচরে আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
-সুন্দর লাগছে বউ।

আমার ঠোঁটে চাপা হাসি ফুটিয়ে তুললাম এবার। কেক কাটার সময় হয়ে গিয়েছে বলে এক হাতে আহিয়ানকে আর একহাতে আনহিকে ধরে এগিয়ে গেলো। এভাবেই শেষ হলো কেক কাটার পর্ব। আনভীর প্রথমে আনহিকে কেক খাইয়ে দিয়েছে বলে আহিয়ানের কি অভিমান। পরে অয়ন বাধ্য হয়েই নিজের পিস আহিয়ানকে খেতে দেয় ঝগড়াঝাটি থামানোর জন্য। সবাই বলে অয়ন হলো এই টুইন সিস্টার-ব্রাদারের বিগ ব্রাদার। অর্থাৎ অয়ন যাই বলে আনহি আহিয়ান মাথা পেতে তাই মানে। একে একে অতিথিরা চলে যেতে থাকলো সবাই। এবারও ধ্রুবের সাথে মিষ্টি করে কথা বলেননি উনি। ধ্রুব ভাইয়া আমায় আগে পছন্দ করতো মানতাম তাই বলে এখনও তা নিয়ে পড়ে থাকবে? এটাই বোঝাতে পারলাম না আনভীরকে। ড্রইং রুম , ডাইনিং রুম সব পরিষ্কার করে আমি আর ভাবি সবার সাথে গিয়ে বসলাম। মা গল্প শোনাচ্ছে আনহি আহিয়ানকে ওদের জন্মের সময়ের। আজরান ভাইয়া এবার টিটকারি সুরে বললো,

-আহিয়ান আনভী, তোমরা জানো তোমাদের জন্মের সময়ে তোমার পাপাই কি করেছিলো?
-কি কলেছিলো বড় পাপাই?
-খুশির ঠ্যালায় সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।
আমরা সবাই মিটমিটিয়ে হেসে দিলাম এবার। আনভীর একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালো আজরান ভাইয়ার দিকে। প্রথমে কিছুই বুঝলো না অয়ন, আহিয়ান আর আনহি। পরন্তু মনে ভয়াবহ কৌতুহল জেগে ওঠাতে একেবারে দাদুর কাছে ঘেঁষে বসে পড়লো। আহিয়ান বললো,
-দাদুভাই। আজ আমলা তোমাল সাথে ঘুমাবো। আমি পাপাইয়েল গপ্পো শুনবো।

ওরা তিনজন একপ্রকার জোরাজোরি করেই চলে গেলো বাবার ঘরে। আমি আর আনভীরও তারপর নিজ রুমে চলে গেলাম। রাত হয়েছে অনেক। বাইরে মৃদু বাতাসের ছড়াছড়ি। সকালে গোসল সেরেছি বসে এখন আর গোসল করবো না। আমি বাধা চুলগুলো এবার খুলে দিতেই হঠাৎ পেছন থেকে খপ করে কোমড় জরিয়ে ধরলেন আনভীর। গলায় মুখ গুঁজে দিলেন সন্তর্পণে। আমি বিমূঢ় হয়ে রইলাম। গলা আটকে আসছে ক্রমশ। তবুও বলে ওঠলাম,
-ক ক কি করছেন?

উনার ভাবান্তর নেই। অতঃপর জড়ানো কন্ঠে বলে ওঠলেন,
-আজ তোমায় মারাত্নক লাগছে আহি। মনে হচ্ছে যে নতুন নতুন আবার তোমার মায়ায় পড়ে যাচ্ছি। এমন রূপে আমার বুকে আগুন ধরিয়ে কিভাবে ঘুরে বেড়ালে তুমি আহি? এখন যে আমার বুকের চিনচিন ব্যাথা নিরাময় করার জন্য তোমায় প্রয়োজন?

আমি জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজালাম ধীর ভাবে। উন্মাদ লাগছে আনভীরকে দেখতে। উনি এবার হঠাৎ আমায় টেনে বারান্দায় নিয়ে গেলেন আমায়। ইশারায় দেখালেন ফুল টবগুলোর দিকে। টবে অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল গজিয়েছে, যা দেখে নিমিষেই মন ভালো হয়ে গেলো আমার৷ আনভীর ডিভানে বসালেন আমায়। তারপর বসলেন আমার পাশে। ঘোরলাগা কন্ঠে বলে ওঠলেন,
-আজকের এই সিক্ত পরিবেশ, এই বিশাল রাতের আকাশ দেখে কিছু মনে পড়ছে তোমার?
-না তো?

অবাক হয়ে বললাম আমি। আনভীর মৃদু হাসলেন। অতঃপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠলেন,
-ঠিক এই সময়ে সাজেকে প্রথম গিয়েছিলাম আমরা। তারপর…….মনে আছে তো?
আমার মুখের সর্বত্র রক্তিম আভাস ছড়িয়ো পড়লো উনার কথা শুনে। আনভীরের চোখে মুখে কৌতুহলতা। উনি হঠাৎ আমার হাত টেনে ফট করে নিজের কোলে বসিয়ে দিলেন আমায়। আমি ভড়কে গেলাম উনার এমন কান্ডে। আমি আনভীরের কপালে হাত দিয়ে বললাম,
-কি হয়েছে আপনার? শরীর ঠিক আছে তো?

-আই এম অ্যাবসোলুটলি ফাইন আহি মেরি জান! এখন আমার প্রিন্স প্রিন্সেস তার মাম্মামকে পাপার কাছে হস্তান্তর করে গিয়েছে। বলেছে তারা যেমন ঘুমানোর আগে মাম্মামকে আদর করে আমাকে তেমনভাবেই আদর করতে হবে৷ তো এখন ওদের কথা শুনতে হবে না? তাছাড়া তোমার এই স্টানিং লুকে ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি আমি। দুই বাচ্চার মা হওয়ার পরও তুমি কত্ত হটটট…..
আমি ছোট্ট শ্বাস ফেললাম। চোখ রাঙিয়ে বললাম,
-অসভ্য কোথাকার।
-অসভ্য হয়েছিলাম বলেই আহিয়ান আনহি পৃথিবীতে এসেছে।
-কদিন পর আরেকজনও আসবে।
-থাপ্পড় চিনো মেয়ে। এর আগে আমায় সেন্সলেস করে খুশি হওনি? আর তোমায় নিয়ে রিস্ক নিচ্ছি না আমি। অসম্ভব।

এক শ্রাবণ হাওয়ায় পর্ব ৫৬

আমি আনমনে হাসলাম। বাইরে বহমান ফুরফুরে বাতাস। সে তাজা বাতাস ছাড়িয়ে পড়ছে আমাদের চোখে মুখে৷ আমার হঠাৎ আমাদের সাজেকের সেই প্রথম স্মৃতিগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। হয়তো আনভীরেরও৷ উনি আমার চুলে মুখ গুঁজে প্রাণভরে শ্বাস টেনে নিলোন। চোখে মুখে উন্মাদনার ছড়াছড়ি৷ শ্রাবণের বিধ্বংসী হাওয়ার আড়ালে আবডালে উড়ে চলছে শুভ্র পর্দাগুলো। কদমের মৃদু ঘ্রাণ নাকে এসে হানা দিতে মগ্ন। আমি আনভীর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। তবে উনি ছাড়লেননা, আমার কোমড় শক্তভাবে চেপে গলায় মুখ গুঁজে ফেললেন। আমি জড়ানো গলায় বললাম,

-ঘুমাবেন না আনভীর?
-উহু! আজ মিশে যাবো, পুনরায় তোমার সাথে মিশে আর ‘এক শ্রাবণ হাওয়ায়’ এর গল্প লিখবো। তুমি আমার কাছে ভালোবাসার চাইতেও বিশেষ কিছু আহি৷ আমার জীবনের প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে তোমায় অনুভব করা প্রয়োজন৷ আজ ঘুমাবো না আহি। কতদিন তোমার সাথে নির্ঘুমে রাত কাটাই না!❤️

____সমাপ্ত____

সমাপ্ত লিখতে গিয়ে হাত কাঁপা-কাঁপি করছিলো আমার৷ মানতে কষ্ট হচ্ছে যে অবশেষে আনভীর আহির অধ্যায়ের ইতি টেনেছি। সত্যি কথা বলতে পুরো যাত্রাতে এই গল্পের প্রতিটি চরিত্রই জীবন্ত মনে হয়েছে আমার। মনে হয়েছে ওরা বুঝি সত্যিই আছে বাস্তবে। গল্পটা নিতান্তই আপনাদের ভালোলাগার জন্য লিখা পাঠকবাসী।
অনেক জায়গায় প্রচুর টাইপিং মিসটেক করেছি, কিছু কিছু জায়গা নিতান্তই অবাস্তব হয়েছ। তবুও সবাই অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন আমায়। তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ যারা আমার ভুলক্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়ার সাথে শুধরিয়ে দিয়েছেন। একটা অনুরোধ, এই গল্পের মতো ‘কায়ানাত আফরিন’ কে মনে রাখবেন আপনারা? আপনাদের ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা আমায় এই জগতে অনেক কিছু দিয়েছে। তাই কেউ এই কায়াবালিকাকে ভুলে যাবেননা প্লিজ! শেষ বারের মতো সবাই এক শ্রাবণ হাওয়ায় গল্পটি নিয়ে মন্তব্য করবেন কিন্ত। আপনাদের এই কায়াবালিকা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে❤️

(লেখাঃ কায়ানাত আফরিন ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন

1 COMMENT

Comments are closed.