এমপি তামিম সরকার পর্ব ১
কাফাতুন নেছা কবিতা 
রাজনীতিতে একটা প্রবাদ আছে,,,,
” শত্রুকে ধরো, ইচ্ছে মতো ব্যবহার করো, তারপর কাঁদায় ছুড়ে মারো!
সিগারে টান দিতে দিতে সামনে পড়ে থাকা লা’শ টিকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলতে থাকে তামিম সরকার।
“ওর জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিলো আমাকে বিশ্বাস করা!”
খুব অট্টহাসিতে ফেটে পরে গোডাউনের চারপাশটা।
” ওর লাশ কু’ত্তা দিয়ে খাওয়া আর হাড়গুলো বুড়িগঙ্গার নদীতে ফেলে দিয়ে আয়। ”
তামিমের নির্দেশ মতো গার্ডরা দুই টুক’রো করা লা’শটাকে নিয়ে যায় মাটির ভিতরে রঙ্গমঞ্চ খানায়। যেখানে হিসাবের বাইরে লা’শকে গুম করা হয়েছে। আজ অব্দি কোনো হুদিস পাওয়া যায়নি লা’শগুলোর।
অবশ্য যেখানে সরকার নিজেই খু’নি সেখানে লাশের হুদিস পাওয়া দুষ্যপ্রাপ্য।
তামিম সরকার। তানভীর সরকারের বড় ছেলে।আরশি নগরের বুকে রাজপুত্রের মতো পরিচিত এই নামটা আসলে একা কোনো সাধারন মানুষের নাম নয়! এটা একটা ভয়, একটা নামের ক্ষমতা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্লেন কালো পাঞ্জাবি, মুখে তীক্ষ্ণ দাড়ি, চোখে কালো চশমা!কেউ জানে না চশমার আড়ালে কী চলছে তার চোখ জোড়াতে , কিন্তু সবাই জানে ওর চোখের দিকে তাকানো মানেই নিজের ভাগ্যকে মৃ’ত্যুর হাতে তুলে দেওয়া।
তার ডান কানে সবসময় একটা ছোট্ট সোনালী ইয়ারপিস থাকে, আর বাম কানে হেডফোন। কেউ জানে না কাদের সঙ্গে সে কথা বলে,, কিন্তু যাদের নাম একবার সেই হেডফোনে লিস্টেড হয়, তারা আর কখনো আলোর মুখই দেখে না।
শান্ত কিন্তু খুব ধারা’লো স্বরে কথা বলে তামিম, কিন্তু ওর নীরবতাও গুলি চালানোর মতো তীক্ষ্ণ। ২৮ বছর বয়সে এম.পি হওয়া চারটে খানি কথা নয়। কিন্তু তার জন্য খুব কঠিন কাজও নয়। যেখানে রাজ্যের সরকার তার জন্মদাতা পিতা। সেখানে এম.পি কেন চাইলেই যে কোনো পরিষদের যোগ দেওয়া যায়!তবে শুধু পলিটিক্স না, সব অন্ধকার চোরাগলি, সব রহস্য, সব অপরাধ, এমনকি মানুষের ভয়,, সবই তার নিয়ন্ত্রণে।
যখন সে রাস্তায় হাঁটে, তখন সড়ক আপনাতেই ফাঁকা হয়ে যায়। কারণ সবাই জানে,,
তামিম সরকার রেগে গেলে আইনও থমকে দাঁড়ায়
তামিমের কাছে ভয়ের থেকে বড় কোনো আইন নেই।
তার বেপরোয়া জীবনি, ম’দের নে’শা, খু’ন খারাবি সবই যেনো নিত্য দিনের ডালখাতের মতো। তানভীর সরকারের পাওয়ারের জন্য তামিমকে কিছু বলার মতো কেউ নেই। যেখানে বাবার থেকে সন্তানের রাজত্ব বেশি সেখানে বাবার আর কি বলার থাকে। দিনের বেলা যুব সাধারণের আইডল হয়ে ঘুরে বেড়ানো তামিম সরকার আর রাতের বেলায় র’ক্তের নেশায় মেতে থাকা তামিম সরকার ভিন্ন দুইজন মানুষ।
আরশি নগরে নির্বাচনের হাওয়া বইছে। শহরের অলিগলি পোস্টারে ভরে গেছে! তানভীর সরকারের দল ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া, অবশ্য এমপি নির্বাচনে যদি তামিম জীতে যায় তাহলে সংসদে ৩৫০ টি আসন থেকে বেশি সংখ্যাক আসনের জয়ী হওয়ার মাধ্যমে এবার ও প্রধানমন্ত্রী তানভীর সরকারই নির্বাচিত হবে,, তাই নির্বাচন নিয়ে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করে আছে তানভীর সরকারের দল। আর ঠিক এই সময়েই, এক উঠতি জনপ্রিয় বিরোধী প্রার্থী সালমান হককে গুলি’বিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় নিজ অফিসে। শুধু যে গুলি’বিদ্ধ তা নয়। রিতিমতো দু’টুকরো করা।কিন্তু ঘুন অক্ষরে ও কেউ জানতে পারেনি ঠিক কী হয়েছিলো সালমানের সাথে।
খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে,,সালমান আত্মহত্যা করেছে!
কিন্তু যারা জানে, তারা জানে ওটা আত্মহত্যা নয়। গুলি ঢুকেছে ঠিক মাথার পেছন থেকে। আর নিজের হাতে গুলি চালানো সম্ভব নয়।
ঘটনাস্থলে প্রথম উপস্থিত হন পুলিশ অফিসার রিদওয়ান রেজা। তিনি বুঝে যান, এটা নেহাত দুর্ঘটনা নয়। কিন্তু তদন্তে নামতে না নামতেই উপর থেকে চাপ আসে,, ”ফাইলটা বন্ধ করো। এটা আত্মহত্যা বলেই ডিক্লেয়ার হবে।”
সেখানেই ধামাচাপা পড়ে যায় কে’সটি! এটা প্রথমবার নয় যখন এইভাবে কেস ধামাচাপা পড়লো! তামিমের সব থেকে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মধ্যে একটি কাজ হলো তার খু’নের কোনো প্রমাণ থাকে না! যার জন্য চেয়ে ও কেউ তার বিরুদ্ধে দাড়াতে পারে না! ধীরে ধীরে তামিম এভাবেই আতঙ্কে পরিনত হয় সবার মাঝে!
প্রতিরাতে তামিম সরকার ও তার দলবলের লোকেরা ম’দের নে’শায় মেতে উঠে ক্লাবে। আজও তার ব্যতীক্রম হয়নি।
”শত্রু আমাকে বিশ্বাস করেছিলো … তাই ওকে মাটির নিচে পাঠানো আমার দায়িত্ব।”
খুব হই উল্লাসে মেতে উঠে তামিম আর তার দলের ছেলেরা!
“ভোট মানেই র’ক্ত। আর সেই র’ক্তের গন্ধেই আমি মাতোয়ারা। ‘”
—পরদিন সকালবেলা—-
নির্বাচনের প্রচারণা করতে আরশি নগরের প্রতিটি স্কুল এবং কলেজে নিজে উপস্থিত হন তামিম সরকার। আজও তার ব্যতীতক্রম নয়। বরাবরের মতোই সাথে তার পঞ্চ পান্ডব (মাহির, পেট মোটা রফিক, কালা মানিক, টাকলা মফিস আর বো’মা সাকিব) আর সাথে খোলা জিপ ভর্তি ছেলে নিয়ে গেছে আরশি নগরের একটি একটি কলেজের কালচারাল প্রোগ্রামে। যুব সাধারণের আইডল হিসেবে প্রায়ই চিফ গেস্ট হয়ে থাকেন থাকে তামিম সরকার।
ট্রেন যাওয়ার ফলে কিছু ক্ষণ দাড়াতে হয় তামিমের সব গাড়িগুলোকে। আর ঠিক তখনই ইতিহাস স্বাক্ষী হয় এক নতুন পাগলামিতে ভরা প্রেম কাহিনীর।
নরম আলোয় ঝলমল করছে এক অপূর্ব রূপী রমনী! থেকে থেকে টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছতে থাকে সে। মৃদু বাতাস তার অবাধ্য চুল গুলোকে উড়াতে সক্ষম হলে ও গরম কমাতে সক্ষম হলো না। বেশ বিরক্ত নিয়ে ট্টেন যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সে রমনী। আর তাকে চোখের নজরে বন্দী করছে তামিম। তামিম এক পলকে তাকিয়ে আছে সেই রহস্য ময়ী রমনীর দিকে। যেন নজরই সরছে না।
” ভাই? ”
” ভাই?'”
” ও ভাই?”
এভাবে মাহির তিন-চারবার ডাকে তামিমকে, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। তামিম এক নজরে তাকিয়ে থাকে সেই রহস্য ময়ী রমনীর দিকে। আর ঠোঁটে মৃদু হাসি দিয়ে বলে,,
”তার চোখে দেখেছি আমার সর্বনাশ! ”
” কেঠা আপনার শর্বনাস করছে ভাই। আমারে কন খালি। হাত ভাই’ঙ্গা ভিতরে হান’দাই দিমু!”
বো’মা সাকিবের কথা শুনে তামিমের ধ্যান ভাঙ্গে। আর সে এক পলক তাকায় সাকিবের দিকে। সাথে সাথেই ট্রেনের পথ ক্লিয়ার হয়ে যায়। আর সেই কাক্ষিত রমনী টি ও হারিয়ে যায় তামীমের নজর থেকে।
” শা’লার ভাই কথা বলার আর জায়গা পেলি না! একটুর জন্য চলে গেলো!”
” কেডা চইলা গেলো ভাই!”
” তোর মরা বাপ!”
তামিম তার খোলা জীপ থেকে চারপাশে ভালোমতো তাকাতে থাকে। যদি সেই রহস্য ময়ী নারীর দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু ভীরে হারিয়ে যায় সে।
খুব বিরক্ত নিয়ে বিদ্যালয়ে পৌছায় তামিম। তামিম যাওয়া মাত্র তাকে তাকে ফুল দিয়ে বরং করা হয় আর প্রোগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রিন্সিপাল আর তামিম সবার সামনের আসরে বসেন। প্রথমে একটু ভাষণ আর পরে নাচের প্রোগ্রাম শুরু করা হয়। মাঝে মাঝে প্রিন্সিপাল আর তামিমের মধ্যে একটু আধটু কথোপকথন ও হন। কিন্তু কথোপকথনের এক পর্যায় কিছু একটা দেখে চোখ আঁটকে যায় তামিমের।
সানগ্লাসটি খুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্টেজে দলীয় নৃত্য পরিবেশ করা এক রকমনীর দিকে। সকালের দেখা পরম সুন্দরীকে যে -সে এই সময় এখানে দেখতে পারবে তা কল্পনা ও না করতে পারেনি তামিম। যতক্ষণ যাবত নাচ চলেছে ততক্ষণ যাবত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তামিম।
নাচ শেষে তামিমকে স্টেজে ডাকা হয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়ার জন্য। তামিম স্টেজে উঠা মাত্র হাত তালিতে ফেটে পরে চারপাশ।
তামিম তার ভাষণ শুরু করে কিন্তু কথা বলার এক পর্যায় তার চোখ পড়ে সকালের সেই রহস্য ময়ী রমনীর দিকে। তামীম ভাষণ না দিয়ে কিছু ক্ষণ চুপ হয়ে যায়। আর মাইক নিয়ে সুবহাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
” সী-গ্রীন শাড়ি পড়া,লম্বা চুল ওয়ালা মাঝের সারিতে বসে থাকা মেয়েটি স্টেজে আসো!”
তামিমের কথা শুনে সবাই হা মেলে সুবহার দিকে তাকায় আর তাকে স্টেজে যাওয়ার জন্য বলতে থাকে। সকলের মধ্যেই একটু করে ভয় কাজ করে। করারই কথা। তামিমকে ভয় পায়না এমন মানুষ আরশি নগরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চারপাশের সকলে কানাঘষা শুরু করে দেয় রিতিমতো। সুবহার বান্ধবীরা ও বলতে থাকে যে, সে কী এমন করেছে যে তামিম সরকার একা তাকে স্টেজে ডাকছে!
সুবহা ভয়ে যেতে চায় না! জড় হয়ে বসে থাকে চেয়ারেই। তামিম কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে স্টেজ থেকে নিচে নেমে সুবহার দিকে আসতে থাকে। তামিমকে আসতে দেখে সুবহা ভয়ে কান্না শুরু করে দেয়। সকলের মধ্যে থমে থমে নীরবতা চলতে থাকে।
তামিম এসে সোজা সুবহার পাশে দাড়ায়। তামিমকে দাড়াতে দেখে সুবহা ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে তামিমের সামনে দাড়ায়। সুবহা দাড়ানোর সাথে সাথে তামিম তার হাত ধরে নিজের সাথে স্টেজে নিয়ে যায়। হঠাৎ সুবহার হাত ধরাতে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায় সুবহার! তামিম ভীরের মধ্যে দিয়ে সুবহার হাত ধরে নিয়ে যায় আর তার পাশে দাড় করিয়ে মাইক হাতে নেই। আর সুবহার দিকে ইশারা করে বলে,,
” She Is My lady!”
তামিমের কথা শুনে সুবহা চোখ বড় বড় করে তামিমের দিকে তাকায়! তামিম ও সুবহার দিকে তাকায়।
” আজকের পর থেকে ওর আশেপাশে যদি কোনো ছেলেকে দেখেছি, সে যেনো নিজ দ্বায়িত্বে নিজের কাফনের কাপড় কিনে রাখে।”
প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়া সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক শিক্ষিকার ভিতরে আতঙ্ক বাসা বাঁধে। যার ভয়ে আরশি নগরের কেউ কথা বলতে পারে না তার নজরে সুবহার মতো ১৯ বছর বয়সি একটি কিশোরি মেয়ে কীভাবে পড়লো?
তামিম সকলকে থ্রেট দিয়ে সানগ্লাসটি খুলে তাতে ফুঁ দিয়ে আবার পরে নেই। আর ভদ্রলোকের মতো সেখান থেকে চলে আসে। আর সুবহা জড়বস্তুর মতো ওইখানেই দাড়িয়ে থাকে। তামিম যাওয়ার সময় হঠাৎ মাঝপথে থেমে যায় আর পিছনে ঘুরে সুবহার দিকে তাকায়
“” এই পরী! আই লাভ ইউ! ”
তামিমের ছেলেরা সবাই যে যার মতো শীটি বাজাতে থাকে। আর তামিমের সাথে উল্লাস করতে করতে যেতে থাকে। আর সুবহা স্টেজেই দাড়িয়ে থাকে।
 
