এমপি তামিম সরকার পর্ব ১০
কাফাতুন নেছা কবিতা
“এই রাতপরী!”
তামিম ধীরে ধীরে বেশ কয়েকবার ডাকে সুবহাকে। কিন্তু রাত গভীর হওয়ায় সুবহা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে।তামিমের ডাকার পর ও উঠে না। তামিম সুবহার মুখ বরাবর নিজের মুখটি নিয়ে যায়।
” আমার ঘুম কাইড়া নিয়া, তুমি ঘুমাইতাছো! বিষয়টি বরই বেমানান সুবহা!”
তামিমের কণ্ঠে অদ্ভুত এক কোমলতা আর নে’শাত্ব ভাব চলে আসে । তামিম সুবহার আরো কাছে নিজের মুখটি নিয়ে নেই। তাদের ঠোঁ’ট প্রায় ছুই ছুই অবস্থা!
হঠাৎ মুখে গরম নিঃশ্বাস পড়াতে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট
হয় সুবহার। ঘুমের ঘোরে আবছা আবছা ভাবে চোখ খুলে সুবহা। চোখ খোলার সাথে সাথে তামিমকে নিজের এতো কাছে দেখে গায়ের সব রক্ত যেন বরফ হয়ে যায় তার। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সুবহা। তামিম তখন ও শান্ত ভাবে বসে থাকে সুবহার সামনে।
“আ-আপনি?!”
তামিম ভ্রু কুঁচকে তাকায় সুবহার দিকে…..
” কেন? অন্য কেউ আসার কথা ছিলো?”
” নাহ! কিন্তু আপনি? ভিতরে কীভাবে? ”
তামিম হঠাৎ করে সুবহার হাত ধরে ফেলে…
” তোমাকে দেখতে মন চায়ছে চলে আসছি। একটা বাড়ির দরজা কী আমাকে আটকাতে পারবে তোমার কাছে আসা থেকে?”
“আপনি এখানে কেন?! প্লিজ যান এখান থেকে…”
সুবহার চলে যাওয়া বলাটা বোধ হয় তামিমের খুব একটা পছন্দ হয়নি। সে হুট করে উঠে দাড়ায়, আর সুবহার হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে।সুবহা খুব ভয় পেতে থাকে। যদি তার মা-বাবা জেগে যায় তাহলে কী হবে।
তামিম সুবহাকে নিয়ে হঠাৎ দরজার সামনে দাড়ায়।আর তার দিকে তাকায়। সুবহার পা থেকে মাথা অব্দি সুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” মাথায় ঘোমটা দাও! বাইরে তোমার দেবররা আছে!”
তামিমের কথামতো সুবহা মাথায় ঘোমটা দিয়ে নেই।
ঘোমটা দেওয়া সুবহাকে দেখে তামীমের মুখে হাল্কা হাসি ফুটে উঠে।
” তোমাকে আমার বউয়ের মতো লাগতাছে এখন!”
তামিমের কথা শোনে সুবহা শুকনো ঢোক গিলে। তামিম আবার সুবহার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যায়। তামিম সুবহাকে নিয়ে আসার সাথে সাথে সবাই মাথা নিচু করে ফেলে। কারণ তামিমের কড়া নিদের্শ সে ছাড়া আর কেউ সুবহার দিকে তাকাবে না!
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা তার জীপে বসে পরে। উদ্দেশ্য পোড়াবাড়ি।
————-পোড়াবাড়ি রাত ২:৩০ মিনিট————–
চাঁদের আলোয় ভিজে আছে পোড়াবাড়ি। তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা পোড়াবাড়ির মাঝখানে চলে যায়। আর বেঞ্চে সুবহাকে বসায়।সুবহা এক কোণে বসে,, তামিম কোনো কথা না বলে সোজা সুবহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তামিমের এমন কান্ডে কিছুটা ঘাবড়ে যায় সুবহা।তামিমের দিকে তাকালে বুকটা কেঁপে উঠে সুবহার। তামিম আরাম করে শুয়ে পরে সুবহার কোলে।
” কাল থেকে আমি ঘুমাইনি রাতপরী। আমাকে ঘুমাতে দে। ”
সুবহা একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। কারণ তামিম কেন ঘুমাইনি সেটা তো সুবহার জানার কথা।এতে সুবহার কী দোষ সে ঘুমাইনি। খুব খারাপ লাগতে থাকে সুবহার।থর থর করে কাঁপতে থাকে সে। যাকে সবাই জোমের মতো ভয় পায়, সে আজকে তার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
সুবহার এমন কাঁপা-কাঁপিতে ঘুমে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে তামিমের।
” এতো কাঁপা-কাঁপি কেন করছিস পরী? কাঁপা-কাঁপির মতো তো এখন ও কিছু করি নি। যখন করবো তখন কাঁপিস। ”
তামিমের এমন ইঙ্গিত পূর্ণ কথা শোনে সুবহার ভয় বেড়ে যায় আরো হাজার গুন। চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। কিছু ক্ষণ পর তামিমের গলা শোনে চোখ খুলে সুবহা।
“এই ২৮ বছরের জীবনে শিখেছি কিভাবে মানুষ খু’ন করতে হয়। এখন শিখতেছি নিজের থেকে বয়সে ছোটো মেয়ের সাথে কীভাবে প্রেম করতে হয়। হাইরে কপাল!”
সুবহার চোখ বেয়ে পানি পড়ে। কারণ তামিম সরকার তাকে ভালোবাসুক এটা কিছুতেই চায় না সে।
সুবহার চোখের পানি গড়িয়ে তামিমের মুখে পড়ে। পানি পড়তেই তামিম উঠে বসে আর নিজের হাত দিয়ে সুবহার চোখের পানি মুছে দেয়।
“আমি ভালো মানুষ না সুবহা! তোমার উচিত হয়নি আমার চোখে পরা। এখন সারাজীবন ভুগতে হবে তোমাকে!”
তামিমের কথা শোনে সুবহা চোখ বন্ধ করে খুব জোড়ে জোড়ে কেঁদে উঠে। সুবহাকে কাঁদতে দেখে তামিম উঠে দাড়ায়। তারপর সুবহার হাত ধরে তাকে দাড় করায়। তারপর তাকে নিয়ে চলে যায় জীপের কাছে। সুবহাকে বসিয়ে তামিম খুব জোড়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ির গতি এতো জোরে ছিলো যে সামনে কেউ পড়লে সোজা পি’ষে যেতো। তামিমের চোয়াল খুব শক্ত। সে সুবহাকে তাদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসে। সুবহা ও বাড়ি আসার সাথে সাথে ভিতরে ঢুকে পরে। তামিম এবং তার পঞ্চপাণ্ডব রওনা দেই সরকার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
তামিমকে এতো রাগান্বিত দেখে কেউ কিছু বলার সাহস পাই না। সবাই চুপচাপ থাকে গাড়িতে। সরকার বাড়িতে আসা মাত্র তামিম হনহনিয়ে ভিতরে চলে যায়। তানভীর সরকার তখন ও জেগে আছে।
” আব্বাজান!”
” জ্বী বাবাজান!”
” আমি বিয়ে করতে চায়!”
” আলহামদুলিল্লাহ!”
” যে-কোনো দিন মেয়েকে উঠাইয়া নিয়ে আসতে পারি। আগে থেকে বলে রাখলাম আপনাকে!”
তামিম কথাগুলো বলে সোজা তার রুমে চলে যায়। তানভীর সরকারকে কিছু বলার সুযোগ টুকু ও দেয় না।
তামিম রুমে এসে সোজা শুয়ে পড়ে বিছানায়। আর ফোন বের করে সুবহার ছবি দেখে।
” এখন তো তোকে আমার লাগবেই সুবহা!”
তামিম খুব জোড়ে সুবহার ছবিতে কি’স করে।
——সকালবেলা——–
তামিমের নিদর্শন মতো সুবহা সহ বাকিদের এডমিশন করে দেওয়া হয় তামিমের পার্ট অফিসের সাথের কলেজে। যেন সে সুবহাকে খুব কাছে থেকে দেখতে পারে।
নতুন কলেজে ভর্তি হয়ে ক্লাসে বসে পড়ে সুবহা সহ আরো অনেকেই। কারণ বোর্ড পরীক্ষা তাদের জন্য থেমে থাকবে না। আর হাতে বেশিদিন সময় ও নেই। তাই এডমিশন নেওয়ার সাথে সাথে তাদের ক্লাস শুরু করে দেওয়া হয়।
ক্লাস শেষে সুবহা তার বান্ধবীদের সাথে বের হয় বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু কলেজ থেকে বের হয়ে সুবহাকে পড়ে এক মহামশকিলে।
গেটের বাইরেই তামিমের গাড়ি রাখা। কাল রাতের পর তামিমের সামনে যাওয়াটা ও ঠিক মনে করছে না সুবহা। কিন্তু তার চাওয়াতে আর কী হবে। হবে তো সেটায় যে তামীম চায়বে।
সুবহা বের হওয়ার সাথে সাথে তামিমের লোকেরা গাড়ির দরজা খোলে দেয়।
” ভাবিসাপ – ভাই অপেক্ষা করতাছে আপনের লাইগা। জলদি উঠেন!”
সুবহা এদিক-ওদিক তাকিয়ে গাড়িতে উঠে পরে। কলেজ থেকে তামিমের পার্টি অফিস বেশ কাছে হওয়াতে খুব একটা সময় লাগে না সেখানে যেতে।
সুবহা গাড়ি থেকে নেমে সোজা তামিমের লোকদের সাথে উপরে উঠে যায়। তামিম তখন ও মিটিং এ ব্যস্ত। সুবহাকে করিডোরে বসিয়ে মাহির ভিতরে চলে যায় তামীমের রুমে।
” ভাই! ভাবি সাপ আইছে!”
সুবহার আসার কথা শোনে মাঝ পথে মিটিং থামিয়ে দেয় তামীম!
” দ্যা মিটিং ইজ ওভার! আপনারা বিসমিল্লাহ বলে রওনা দেন!”
তামিমের নিদর্শন মতো সব নেতারা এক এক করে বেরিয়ে পরে।
সবাইকে বেরিয়ে পড়তে দেখে সুবহা কিছুটা অবাক হয়। সে আসার সাথে সাথে সবাই বের হয়ে যাচ্ছে কেন? কিন্তু আরো অবাক করার বিষয় হলো কেউ সুবহার দিকে তাকাচ্ছে না। সবাই মাথা নিচু করে বেরিয়ে পরে।
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৯
সবাই যাওয়ার কিছু ক্ষণ পর তামিম এসে সুবহার সামনে দাড়ায়। তামিম হঠাৎ এসে দাড়াতে সুবহার হ্রদ স্পন্দ বেড়ে যায়। তামিম কোনো কথা না বলে সুবহার হাত ধরে সোজা তার চেম্বারে নিয়ে যায়। আর দরজা বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে সুবহাকে।
” তোমাকে একটা চু্’ম্মা দেয়?”
” জ্বী???”
” থ্যাংকিই!”
