এমপি তামিম সরকার পর্ব ১২
কাফাতুন নেছা কবিতা
“তোর দৃষ্টি যেন শুধু আমার হয়, তোর কান যেন শুধু আমার নাম শোনে, তোর শরীরের প্রতিটি পরত যেন শুধু আমার আদেশে সাড়া দেয়,
এটাই আমার ভালোবাসা সুবহা!”
সুবহার ছবি দেখতে দেখতে কথাগুলো বলতে থাকে তামিম।
” তোকে দেখার, তোকে ছোয়ার একমাত্র দাবিদার যেন আমিই হই সুবহা!”
সুবহার ছবিতে খুব জোরে শব্দ করে চু’মু খায় তামিম।
সুবহাকে তার বাড়ি পাঠিয়ে তামিম এবং তার লোকেরা সোজা পোড়া বাড়িতে আসে। পোড়া বাড়িতে আসার পর থেকে তামিম একা একা সুবহার ছবি দেখে কথা বলতে থাকে। আর তার পঞ্চ পান্ডব তা দেখতে থাকে। তামিমের মতো এতো নৃ’শংস লোক একটি মেয়ের জন্য এতো ঠান্ডা হয়ে যাবে তা কল্পনা ও করা ছিলো মুশকিল৷ কিন্তু আজকে তামীমকে এমন প্রেমিক পুরুষে পরিনত হতে দেখে সবাই বেশ বড়সড় শক খায়!
” ভাই জটিল প্রেরেমে পড়ছে রে! ”
” মুখ বন্ধ রাখ শা’লা! ভাই ছুনলে আমাগো পরপারের টিকিট ধরায়য়া দিবো!”
তামিমের পিছনে দাড়ানো তার পঞ্চ পান্ডবদের প্রতিটি কথা শুনতে পায় সে। আর ফোন পকেটে রেখে তাদের দিকে তাকায়।
তামিম পিছনে ঘোরার সাথে সাথে পাঁচ জন একদম নিরীহ মানুষের মতো দাড়িয়ে থাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে।
” আকাশে কী তোগো ম’রা বাপের ছবি ভাইসা উঠছে তাকিয়ে আছিস? ”
পাঁচ জনই একসাথে তামিমের দিকে তাকায়। আর একসাথে মাথা নেড়ে না সম্মতি জানায়!
তামিম নিজের পাঞ্জাবির হাতা উপড়ে জড়াতে জড়াতে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
” ভাই ক্ষেপছে রে পালা!”
তামিমকে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ৫ জন ৫ দিকে দৌড় লাগায়,,
” আজকে হাতের কাছে পাইয়া নেই শা’লার ভাইরা, খবর আছে তোগো!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম যেনো একটা অভিশাপে পরিনত হয়েছে সুবহার জীবনে। তামিমের অত্যাচারে হাঁপিয়ে উঠেছে সুবহা। মনে মনে দোয়া করতে থাকে, কেউ একজন তো আসুক তার জীবনে। যে তাকে তামিমের হাত থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আরশি নগরের প্রতিটি ইটে ইটে যার র’ক্ত লেগে আছে তার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে কে বাঁচাবে সুবহাকে?
এভাবে প্রায় অর্ধেক রাত অব্দি নীরঘুম ভাবে কাটিয়ে দেয় সুবহা! কী করবে, কোনো কুলকিনারা করতে পারে না সে। কালকে কী জবাব দিবে সে তামিমকে? যদী হ্যাঁ বলে সারাজীবনের জন্য বন্দী। আর যদি না বলে সোজা মর’তে হবে তাকে। কী করবে কিছুই ঠিক করতে পারে না সুবহা! এভাবে প্রায় চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যায় সুবহা।
কিন্তু শেষ প্রহরে সুবহার চোখ জুড়ে ঘুমের রাজত্ব চলে আসে। সকল চিন্তা এক সাইটে রেখে ঘুমিয়ে পরে সুবহা।
সকাল ৭: ৩০ মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে সুবহার। কলেজে যাওয়ার জন্য তার মা তাকে রেডি হয়ে সোজা নিচে নেমে আসতে বলে।
ঘুম থেকে উঠে সুবহা দিব্বি তামিমের কথা ভুলে যায়।কালকে তামিম তাকে কী বলেছিলো সেটা ও মনে নেই সুবহার। খুব তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নিচে নামে সুবহা।তখন সুবহার বাবা নিচেই বসে নাস্তা করছিলেন সাথে তার মা ও বসা ছিলো পাশে তার ১৮ বছরের ভাই সৌরভ । সুবহা নেমে বাবার পাশের চেয়ারটায় বসে পরে।
” শুভ সকাল মা!”
” শুভ সকাল বাবা!”
” নতুন কলেজ কেমন?”
” ভালো বাবা!”
” কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানিয়ো!”
সুবহা মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতি জানায়। কিন্তু তার জীবনে সব থেকে বড় সমস্যার কথা কী সে বলতে পারবে তার বাবাকে?
নাস্তা চলাকালিন সময়ে কলি-কাকলী চলে আসে সুবহাকে নিতে। বাড়ি কাছাকাছি হওয়াতে তারা তিনজন সব সময় একসাথেই যাতায়াত করে।আজকে ও তার ব্যতীক্রম নয়।
সুবহা কলি এবং কাকলীর সাথে বেরিয়ে পরে কলেজে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাড়ির সামনের রাস্তায় আসতেই মুখ গম্ভীর হয়ে যায় সুবহার। সেখানে তামিমের লোক মাথা নিচু করে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য।
” আসসালামু আলাইকুম ভাবিসাপ। গাড়িতে উইঠা পরেন!”
সুবহা চারপাশে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে পরে। সাথে কলি এবং কাকলী ও ছিলো। সারা রাস্তা তিনজন একদম নীরবতা পালন করে আসে।
কলেজে আসতেই সুবহা এবং তার বান্ধবীরা তাড়াতাড়ি করে নেমে পড়ে যেনো কেউ তামীমের গাড়ি করে আসাটা না দেখে।
” ভাবিসাপ, গাড়ি এহানেই থাকবো, আমরা আসেপাসেই আছি, কিছু হইলে খালি একটা ডাক মাইরেন!”
সুবহা মাথা নেড়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
” এ কোন বিপদে পড়লি তুই সুবহা!”
” জানি না রে। আল্লাহ ঠিক কোন পাপের শাস্তি স্বরুপ উনার মতো একজন ভয়াংকর লোককে আমার জীবনে পাঠালো কিছুই জানি না!”
” কাদিস না সুবু! আশেপাশের মানুষ জন দেখছে।!”
সুবহা চোখের পানি মুছে নিজের ক্লাসে চলে যায় তার বান্ধবীদের সাথে। কিন্তু পড়াতে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না। সব সময় একটা ভয় লেগেই থাকে তার মনে।
স্যার ক্লাসে লেকচার দেওয়ার সময় অন্য মনুষ্ক হয়ে থাকে সুবহা। যার ফলে কোনো কথায় ঠিক মতো শুনতে পায়নি সে। সুবহাকে অন্য মনুষ্ক হতে দেখে তাকে খুব জোরে ধমক দিয়ে দাড় করায়।
” ধ্যান কোথায় থাকে? পড়াশোনা ভালো লাগে না? বাবাকে বলো বিয়ে দিতে! ”
স্যার খুব অপমান জনক ভাবে কথা বলে সুবহার সাথে। এমন ব্যে’ত দিয়ে বারি ও দেয় তাকে কয়বার।ক্লাসের বেশিরভাগ মানুষই হাসে তার এই অবস্থা দেখে।
সুবহার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে থাকে।
১:৩০ এ ক্লাস শেষ করে কলেজের বাইরে আসে সুবহা এবং তার বান্ধবীরা। তামিমের গাড়ি সেখানেই রাখা ছিলো। সুবহা বাইরে আসতেই তামিমের লোকেরা গাড়ির দরজা খোলে দেয়। আর তারা তিনজন বসে পরে গাড়িতে।
” হাতে কী খুব ব্যাথা করছে সুবু?”
কাকলীর প্রশ্নে সামনে বসে থাকা তামিমের দু-জন লোক একজন আরেকজনের দিকে তাকায়।সুবহার দিকে তাকানো বারণ বিধায় তারা সুবহার বর্তমান অবস্থা বুঝতে পারে না।
” নাহ! কমে গেছে।! ”
” এই স্যার একটা জল্লাদ রে। এভাবে কেউ মা’রে।!”
” চুপ কর না কলি!”
সামনে বসে থাকা, রফিক আর মানিকের কাছে ততক্ষণে পুরো বিষয়টায় ক্লিয়ার হয়ে যায়। তারা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে। আজকে যে একটা ঝড় আসতে চলেছে তার পূর্ব আভাস পেয়েছে তারা।
তামিমের লোকেরা সুবহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সোজা গাড়ি নিয়ে চলে যায় পার্টি অফিসে। তামিম তখন নেতাদের সাথে মিটিং এ ব্যস্ত!
তামিমের লোকেরা সোজা তার চেম্বারে ঢোকে পরে। যদি তাদের আগে অন্য কেউ সুবহার মা’র খাওয়ার বিষয়টি বলে দেয় তামিমকে তাহলে আজকে আর ঘাড়ে তার মাথা থাকবে না! তারা সোজা মিটিং এর মাঝেই ঢুকে পড়ে। তামিম একটু ভ্রু কুচকে তাকায় তাদের দিকে।
” ভাই!”
” বল!”
” ভাবি সাপ….!”
বাকি কথা শেষ করার আগেই তামিম হাত উপরে উঠিয়ে থামিয়ে দেয় তাদের। আর নেতাদের দিকে তাকায়!
” দরজা ওইদিকে এক এক করে বের হন!”
তামিমের নিদের্শ মতো সবাই বের হয়ে যায়। আর তার বাকি লোকরা ও ভিতরে ঢুকে পড়ে। সাথে দু-জন বোরখা পরা মেয়ে ও।
অপরিচিত দু-জন বোরখা পরা মেয়েদের দেখে বাকিরা একটু অবাক হয়। কারণ তামিমের চেম্বারে কোনো মেয়ে আসা নিষিদ্ধ।
” ভাই!”
” বল!”
” ভাবি সাপ রে মা’রছে হের মাস্টার!”
তামিম চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাড়িয়ে থাকে। সাথে সাথে সেই দুই বোরখা পরিহিতরা বলে উঠে।
” ভাই, আমরা পুরো বিষয়টি ভিডিও করছি!”
বোরখার ভিতর থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসাতে তার পঞ্চ পান্ডব একটু অবাক হয়। তামিম হাত বারিয়ে ফোন টি নেই। আর ভিডিও অন করে।
ভিডিও অন করার সাথে সাথে তামিমের চোখ রক্তিম বর্ন ধারণ করে। সুবহার হাতে ৩-৪ টা বা’রি মারে আর ক্লাসে উপস্থিত বেশ কয়েকজন হাসে।
” মানিক!”
” ভাই এখনই উঠায়য়া আনতাছি!”
” সাকিব!”
” ভাই এখনই উড়া’য় দিতাছি!”
তামিমের লোকেরা বেরিয়ে পরে যে যার কাজে। আর তামিম তার খোলা জীপ নিয়ে সোজা সুবহার কোচিং এ চলে যায়।
দুপুরের খাবার খেয়ে কিছু ক্ষণ আগে কোচিং এ এসেছে সুবহা এবং তার বান্ধবীরা। ক্লাস শুরু হয়ে ও বেশি ক্ষণ হয়নি। ক্লাস চলাকালীন সময়ে থেকে থেকে সুবহা তার হাতে অন্য হাত দিয়ে মালিশ করে। সাওয়ার নেওয়ার পর ব্যাথাটা যেন একটু বেশিই বেরেছে।
ক্লাস চলাকালীন এক পর্যায়ে তামিম হনহনিয়ে ঢোকে সুবহার ক্লাস রুমে। তামিমকে ঢুকতে দেখে সবাই দাড়িয়ে যায়। আর কোচিং শিক্ষক সাইটে দাড়িয়ে খুব ভয়ে সালাম দেয় তামিমকে।তামিম কোনো কথা না বলে সোজা সুবহার সামনে দাড়ায়। আর তার হাত ধরে দেখে ঠিক কতটা দাগ বসেছে।
তামিমকে হঠাৎ এভাবে আসতে দেখে সুবহার প্রান যায় যায় অবস্থা।
তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।ঠিক তখনই কোচিং এর প্রিন্সিপাল চলে আসে। তামিম সুবহাকে নিয়ে যেতে যেতে বলে
,” ওর ফিরতে দেরি হবে। বাসায় কীভাবে সামলাবেন ওইটা আপনার ব্যাপার!”
প্রিন্সিপাল রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে। আর তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে জীপে বসায়। খুব জোরে গাড়ি স্টার্ট দেয়। সুবহা ভয়ে ভয়ে থাকে।
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা তার গোডাউনে নিয়ে যায়। আর ভিতরে ঢুকে পড়ে।
গোডাউনে ঢুকতেই সুবহার চোখ কপালে উঠার মতো হয়ে যায়। সামনে তার শিক্ষক হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসা। এবং কয়েক জন সহপাঠী।
” কোন হাত দিয়ে মার’ছিলো ও তোমাকে?”
সুবহা ভয়ে কোনো কথা বলে না! তামিম খুব জোড়ে চেচিয়ে উঠে।
” চাপা’তি দে মানিক!”
তামিমকে এমন ভয়ংকর রুপে দেখে সুবহার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। সে বুঝতে পারে এখানে খুব ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে।
সুবহা সোজা তামিমের হাত ধরে তাকে রিকুয়েষ্ট করতে থাকে।
” প্লিজ ওনাদের কিছু করবেন না! প্লিজ! ”
তামিম নিজের হাতের দিকে তাকায়। এই প্রথম বার সুবহা নিজ থেকে তার হাত ধরেছে।
” তুমি এভাবে বললে তো কলিজা কে’টে ও তোমার হাতে দিয়া দিতে পারি পরী।!”
সুবহা সাথে সাথে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেই। আর তামিম ও স্বাভাবিক হয়।
” ওদের ছেড়ে দিয়াই মাহির!”
” আচ্ছা ভাই!”
এই প্রথম বার কেউ তামিমের গোডাউনে এসে জী’বন নিয়ে ফিরে গেলো।তার লোকেরা একজন আরেকজনের মুখ দেখে আর তামিমের ভাবমূর্তি বুঝার চেষ্টা করে।
তামিম পিছনে ফিরে তার লোকদের দিকে তাকায়।
” ভাই-ভাবীর রোমান্স দেখতে দাড়িয়ে আছো শা’লার ভাইরা”!
তামিম চোখ রাঙ্গানো মাত্র তার লোকেরা বাইরে চলে যায়। আর তামিম সুবহার দিকে তাকিয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে থাকে। তামিম যত এগিয়ে যেতে থাকে সুবহা ততো পিছিয়ে যেতে থাকে। এক সময় দেওয়ালের সাথে আটকা পড়ে সুবহার পিঠ!
তামিম এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে আরেক হাত সুবহার মাথার উপরে রাখে।
” কিছু একটা বলার কথা ছিলো রাত পরী!”
সুবহা খুব শক্ত করে নিজের জামার সাইট ধরে।
” উত্তর টা দাও!”
সুবহা কী বলবে কিছু ভেবে পায় না!
তামিম সুবহাকে চুপ থাকতে দেখে বেশ বিরক্ত হয়ে যায় তাই জোড়ে ধমকিয়ে বলে,,,
” উত্তর দে! ”
সুবহা তামিমের ধমক শুনে চমকে উঠে আর ভয়ে বলে দেই।
” আই লাভ ইউ টু!”
“ঠিক করে বলো!”
” আই লাভ ইউ টু তামিম!”
তামিম মাথা নিচু করে সুবহার গালে কি’স করে।
” আমি কী তোমাকে জোর করেছি? ”
” জ্বী!”
” কীহ?”
” নাহ!”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ১১
” দেখো নিজ ইচ্ছায় আমার প্রেমে সাড়া দিয়েছো। এখন মৃত্যু র আগ অব্দি আর ছাড়াছাড়ি নেই। ”
সুবহা তামীমের কথা শোনে শুধু আফসোস করে। যেখানে তামিম জোড় করে ভয় দেখিয়ে তাকে আই লাভ ইউ টু বলিয়েছে, সেখানে নিজ ইচ্ছেতে কীভাবে সে তার প্রেমে সাড়া দিলো?
