এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৩

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৩
কাফাতুন নেছা কবিতা

“আমি কী তোমাকে জোর করছি?”
” জ্বী!”
” কীহ?”
” না!”
” দেখো নিজ ইচ্ছেতে আমার প্রেমে সাড়া দিয়েছিলো, এখন, মৃত্যু’র আগ অব্দি আর ছাড়াছাড়ি হবে না!”
সুবহা মাথা নিচু করে শুধু তামিমের কথায় হ্যাঁ সম্মতি দেয়,,
” তোমার মাথায় কী সমস্যা আছে?”
সুবহা তামিমের কথা শুনে চোখ তুলে তাকায়।
” তো, শুধু মাথা নাড়াও কেন, মুখ দিয়ে ও তো কিছু বলতে পারো। ”
“জ্বী!”
” আবার শুধু জ্বী! তোমার এই এ জ্বী ও জ্বী বাদ দিয়ে মন খুলে কথা বলবা আমার সাথে!”
” জ্বী! ”
তামিম উপরে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে

” হাই খোদা! কী মা’ল পাঠাইছো জীবনে! জ্বী, জ্বী ছাড়া তো আর কিছুই বলে না বা*ল!”
সুবহার হাত ধরে তাকে নিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে যেতে থাকে তামিম। নাহ! এখন আর খোলা জীপে নয়। সোজা তার মার্সিডিজে! সুবহার দিকে কেউ তাকাবে সেটা ইদানীং তামিমের খুবই অপছন্দ।
সুবহাকে গাড়িতে বসিয়ে তামিম তার পাশের সিটে বসে পরে। তামিম বসা মাত্র সুবহা একটু গুটিয়ে জানালার সাথে লেগে যায়। বিষয়টি তামিমের ও চোখ এড়িয়ে যায় নি। তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে টান দিয়ে নিজের গা ঘেসে বসায়।
তামিমের এমন কান্ডে সুবহা হতবাক হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকায় তার দিকে। তামিম ও রাগান্বিত হয়ে তাকায় সুবহার দিকে।
” আমার করো’না হয় নাই যে, এতো দূরে বসতে হবে তোমাকে। শক্ত করে ধরো আমার হাত”
তামিমের কাটকাট কথা শুনে সুবহা ভয়ে তার হাত ধরে বসে। সুবহা হাত ধরার সাথে সাথে তামিম সুবহার কোমরে হাত দিয়ে বসে থাকে।
———পোড়া বাড়ি————

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তামিমের নিদের্শ মতো গাড়ি সোজা পোড়া বাড়িতে যায়। সারা রাস্তা তামীম সুবহার কোমর ধরে বসে থাকে।
তামিম গাড়ি থেকে নেমে সোজা পোড়া বাড়ির মাঝখানে চলে যায় সুবহাকে নিয়ে। একটু একান্তে সময় কাটানো দরকার তার এখন।
” আমরা রিলেশন শীপে আছি প্রায় ৪৫ মিনিট হয়ে গেছে, চলো বিয়ে করে ফেলি এখন!”
তামিমের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে সুবহা!
” এতো তাড়াতাড়ি? ”
” হারাম রিলেশনশীপে বেশি ক্ষণ থাকা ঠিক না, আল্লাহ গুনাহ দেয়! তাও ৪৫ মিনিট ওভার হয়ে গেছে! ”
তামিমের কথাতে কী বলবে সুবহা কিছু বুঝে উঠতে পারে না!সুবহা জানে তামিম কিছু চাইলে তাকে আটকানো মুশকিল!

” আমার তো সামনে পরীক্ষা!”
” শিক্ষা বোর্ড উড়া’ইয়া দেই তাহলে?
” না! না!
” আমাদের মাঝখানে যা আসবে তা আমি আ’স্ত রাখবো না পরী!”
সুবহা খুব ঠান্ডা আর নরম গলায় তামিমকে অনুরোধ করে যেনো তার পরীক্ষা অব্দি তাকে সময় দেওয়া হয়। তামিম ও সুবহার অনুরোধ ফেলতে পারে না!
” যেদিন পরীক্ষা শেষ হবে, সেদিন রাতেই তাহলে আমার হয়ে যাবা! ঠিক আছে?”
” জ্বী ঠিক আছে! ”
কালবৈশাখীর সময়, থেকে থেকে ঝড় তুফান লেগেই থাকে। তামিম আর সুবহার কথোপকথনের মাঝেই খুব জোরে বাতাস আসে আর সুবহার উড়না হালকা উপড়ে উঠে যায়। তামীম নিজ হাতে সুবহার উড়না ঠিক করে দেয়। সুবহা একটু অস্তিত্ববোধ করে।

” তুমি রিলেশন শীপে আছো, কিন্তু তোমার বয়ফ্রেন্ডকে জড়িয়ে ধরো নায় এটা তো বেমানান রাত পরী।! ”
সুবহা তামিমের কথা শুনে একটু চিন্তায় পরে যায়। একটু আগে ও যে মানুষটি হারাম রিলেশন শীপে না থাকার কথা বলছিলো, সেই মানুষটি এখন তাকে জড়িয়ে ধরতে বলছে। এ যেনো ভুতের মুখে দোয়া-কালাম!
সুবহা তামিমের কথায় প্রচন্ড অস্বস্তি বোধ করে তাই ধরবে কী ধরবে না ভাবতে থাকে। কিন্তু সুবহার এই চিন্তা ভাবনা তামীমের ঠিক পছন্দ হয় না! সে খুব জোরে ধমকি’য়ে উঠে সুবহাকে।
” কী হলো, ধরো!”
তামিমের ঝাড়ি শুনে সুবহা তাকে তাড়াতাড়ি জড়িয়ে ধরে।
” টাইট করে ধরো!”

সুবহা তামিমকে টাইট করে জড়িয়ে ধরতেই তামিম ও সুবহাকে জোরে জরিয়ে ধরে।
” আজকে বিয়েটা করা উচিত ছিলো রাতপরী! একা একা আর কতো ঘুমাবো!”
তামিম লাগামহীন ভাবে সুবহার সাথে কথা বলতে থাকে
আর কিছু ক্ষণের মধ্যে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। তামিম সুবহা ভিজে একাকার হয়ে যায়। সুবহা তামিমকে ছেড়ে ছাইনিতে যাওয়ার জন্য সামনের দিকে পা বাড়ায়, তামিম সাথে সাথে সুবহার হাত ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরো শক্ত করে জ’ড়িয়ে ধরে।
এতো বাতাস আর ঝুম বৃষ্টির মাঝে ও তামিম সুবহাকে ছাড়ে না। সেই বৃষ্টিতেই দাড়িয়ে থাকে সুবহাকে ধরে।কিন্তু সুবহা খুব নড়াচড়া করে। এতো বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থাকতে সুবহার শরীরে কম্পন শুরু হয়ে যায়।
” মুডে আছি সুবহা, নড়ো না!”

এভাবে বেশ অনেক ক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থাকে তামীম সুবহা। কিন্তু খুব জোরে বাজ পড়াতো সুবহা ভয় পেয়ে যায় আর তামিমকে আরো শক্ত করে ধরে।
“Dill samhal jah zara, fir mohobbat kar ney chala hey tuh!”
তামিমের মুখে গান শুনে সুবহা হালকা আচ করতে পারে, কোনো ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে তার সাথে।
তামিম সুবহার হাত ধরে ছাউনিতে নিয়ে আসে। সুবহা পানিতে প্রায় কাক ভিজা হয়ে গেছে। তামিম সুবহার হিজাব খুলে ফেলে। আর উড়না দিয়ে সুবহার মুখ মুছতে থাকে।
ভেজা উড়না দিয়ে ঠিক কত টুকু পানি মুছবে মুখের ঠিক জানা নেই সুবহার। তাও তামিমকে আটকাতে পারছে না সে।
মৃদু বাতাস, আর বৃষ্টির ফোঁটা, তামিমের মতো একজন হ্রদয়হীন মানুষকে আজকে প্রেমিক পুরুষে রূপান্তরিত করে ফেলছে।

তামিম থেকে থেকে সুবহার দিকে তাকায়, আর নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে থাকে।
” তুমি আর পাঁচ মিনিট আমার সামনে থাকলে, কিছু একটা হয়ে যাবে সুবহা!”
তামিমের কথার অর্থ বুঝতে পেরে খুব ভয় পেয়ে যায় সুবহা। কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে সে তো নিরুপায়।
তামিম তার লোকদের কল দিয়ে গাড়ি ভিতরে নিয়ে আসতে বলে, আর সুবহাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিয়ের আগে তামিম সুবহার কাছে যেতে চায় না, আবার থেকে থেকে নিজেকে আটকাতে ও পারে না!

সুবহা চলে যাওয়া অব্দি তামিম তাকিয়ে থাকে তার গাড়ির দিকে,,
” যখনও ওই রুপ সরণ হয়, লাগে না লোক ও লজ্জার ভয়!”
” কীসের লজ্জা ভাই?!”
মাহিরের কথা শুনে তামিমের ধ্যান ভাঙ্গে, আর সে তাকায় পিছনে। তার পঞ্চ পান্ডব পিছনে ভোম ভোলার মতো তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
” ভাই কইলেন না তো, কীসের লজ্জা! ”
” আরে প্রেরেমের লজ্জা বুঝোস না!”
তামিম মাহির আর সাকিবের কথা শুনে নিজের পাঞ্জাবির হাতা উপরে উঠায়। তামিমকে নিজের হাতা উপরে উঠাতে দেখে বুঝতে পারে আজকে তাদের কপালে শনি- রবি- সোম- মঙ্গ সবই আছে!
” ভাই, ভাবি সাপের কসম, আইজকা আমাগো ধো,লায় দিবেন না!”
সুবহার কসমের কথা শুনে তামিম শান্ত হয়ে যায়,
” শা’লার ভাইরা বুইঝা গেছোস তামিম সরকারের দূর্বলতা!”
পাঁচ জনই দাত বের করে মিট মিট করে হাসতে থাকে।

বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে তামিম আর তার পঞ্চ পান্ডব রওনা দেই সরকার বাড়ির উদ্দেশ্যে। আজকে তানভীর সরকারের নির্বাচন নিয়ে বিশেষ আলোচনা করার মিটিং আছে। আর তামিমকে তো।থাকতেই হবে।
মাহির গাড়ি চালায়, আর পাশের সিটে তামিম বসে, তার পিছনের সিটে বাকি চারজন।
” ভাই সবার হিসাব মিলে, কিন্তু আমার হিসাব তো মিলে না!”
” কী হিসাব মিলে না তোর!”
” ওই বোরখা পড়া বে’ডি গো মুখ থেকে বে’ডা মাইনষের গলা কীভাবে বের হলো!”
তামিম নিজের চুল ঠিক করতে করতে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকায়……..

” বে’ডা মানুষের গলা দিয়া তো বে’ডার আওয়াজই বের হইবো!”
তামিমের কথা শুনে পাঁচ জনই তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়!
” আব্বে হা’লা গাড়ি চালা! না হলে বাড়ির জায়গায় উপরে যায়তে হইবো!”
” তা-তো চালামু সাকিব্বাহ! মাগার ভাইয়ের কথা তো বুঝলাম না!”
তামিম গা ছেড়ে দিয়ে তার সিটে বসে…..

” ওই দু-জনকে আমি এডমিশন করাইছি ওইখানে যতক্ষণ সুবহা থাকবে তার প্রতি সেকেন্ডের ভিডিও আমাকে পাঠাতে!”
” মানে! বে’ডা আক্তার বে’ডি ওই দুইটা!”
” আরেজ না, মহি’লা আক্তার পুরু’ষ! ”
মাহির আর সাকিবের কথা শুনে তামিম ও হাসতে থাকে। ভাগ্য করে পাঁচজন সঙ্গী পেয়েছে সে। পাঁচটায় পাঁচ প্রকারের তা’ড় ছিড়া!
শখের নারীর উপরে নজর রাখতে নিজের লোকদের বোরখা পরিয়ে মহিলা কলেজে ক্লাস করতে পাঠানো এমপি তামিম সরকারের দ্বারাই সম্ভব !
——–সরকার বাড়ি—————

তানভীর সরকারের মুখে কিছুটা চিন্তার ছাপ। অপজিট পার্টির লোকেরা এবার বাইরে থেকে লোক আনবে তামিমকে আটকাতে। যদি নির্বা’চন হয় আর তামিম না থাকে তানভীর সরকার এবার আর প্রধা’নমন্ত্রী হতে পারবে না।
” স্যার, তামিম স্যারকে বিষয়টি কী জানানো ঠিক হবে!”
” আমি ও তাই ভাবছি! ”
” ভাবা-ভাবির তো কিছু নাই আব্বা জান!”
বেশ বড় গলা করে কথা বলে তামিম সরকার বাড়ির অন্দরমহলে ঢুকে।তামিমকে দেখা মাত্র বাকিদের ঘাম ছুটে যায়। তামীম কথা কম বলে, কিন্তু তার হাত বেশি চলে!
” তামিম বাঁইচা থাকতে তার আব্বাজানরে কী চিন্তা দিতাছো নেতা? জীবনের মা’য়া শেষ নাকি? ”
” সা..স্যার! মানে!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১২

” নির্বা’চন হোক কিংবা না হোক। প্রধা’নমন্ত্রী আমার আব্বাজানই যেনো হয়। সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯০ টায় আমার টা”কায় কেনা! যে বেইমানি করবেন আল্লাহর অস্তে আঞ্জুমান মুফাস’সলে নিজের কব’রের জায়গাটা ঠিক করে যাবেন!”
তামিমের কথা শুনে নেতারা নিজেদের কপালের ঘাম মুছতে থাকে।আর মুখে জোর করে হাসি টেনে আনে।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৪