এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৪

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৪
কাফাতুন নেছা কবিতা

তামিমকে ভেজা শরীরে দেখে তানভীর সরকার তাড়াতাড়ি করে শুকনো কাপড় আনতে বলেন, আর নিজ হাতে ছেলের মাথা মুছে দেন।
” এতো ভিজেছেন কীভাবে বাবাজান?”
” মন, দিল ঠান্ডা করতে আব্বাজান! ”
তামিম সরকার সহজে বৃষ্টিতে ভিজে না!এটা প্রায় আরশি নগরের বাচ্চা থেকে বুড়ো রাও জানে। তানভীর সরকার কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়ে ও করলেন না, কারণ ছেলে-মেয়ে বড় হলে তাদের একান্ত কিছু বিষয় থাকে। সব জায়গা বাবা-মায়ের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় বলে তানভীর সরকার মনে করেন!

” তা বাবা! মন, দিল ঠান্ডা হলো আপনার?”
” জ্বী আব্বা!”
তামিম উঠে দাড়ায় আর ইশারা করে চেয়ারটি নেতাদের সামনে রাখতে।
তামিম তার আব্বাজানকে চেয়ারে বসায় এবং নিজে মাটিতে বসে পরে।
” শোনেন নেতারা! এই ২৮ বছর জীবনের সংখ্যার চায়তে খু’নের সংস্যা বেশি আমার! আমি চাইতাছিনা হাতটা র’ক্তে রাঙ্গাতে।”
তামিমের কথা শুনে সৌজন্য মূলক হাসি টেনে আনে উপস্থিত সকলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আগামী ২৭ই জানুয়ারি তানভীর সরকার প্রধানমন্ত্রী হওয়া চায়!”
” স্যার! অনুমতি দিলে একটা কথা বলি?”
” বলেন খাদ্য মন্ত্রী!”
” স্যার, অপজিশন পার্টি থেকে একটি ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া গেছে।! ”
তামিম খাদ্য মন্ত্রীর কথা শুনে একটু ভ্রু কুঁচকায়!
” মানে স্যার, তারা কুটনৈতিক সম্পর্কটাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। যদি কোনো ভাবে বাইরের রাষ্ট্র গুকোর সাথে এক মত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যায়, তাহলে আমাদের সরে আসতে হবে। তাই স্যার ওখানে সব আটকাতে হবে।”
তামিম উঠে দাড়ায় আর খাদ্য মন্ত্রীর সামনে যায়!

” মিয়া, আপনে খাদ্য মন্ত্রী হলে কী হইবো, পেটে আপনার খাবারের জায়গায় শয়তা’নি টা বেশি! ”
তামিমের কথা শুনে একটু ঘাবড়ে যায় খাদ্য মন্ত্রী।
” তামিম!”
” জ্বী আব্বা! ”
” বিষয়টি কিন্তু জটিল, আমার মনে হয় তুমি নিজে বিষটি দেখলে ভালো হতো!”
তামিম একটু চিন্তা করে রাজি হয়ে যায়। এখন তার সুবহার প্রতি এতোটায় টান বেড়ে গেছে যে তাকে প্রতিদিন না দেখলে আর ভালো লাগে। কিন্তু তার আব্বাজানের কাছে এমন হাজারো সুবহা’কে কুর’বান করতে পারে তামিম।
” কবে যাইতে হবে আব্বাজান?”
” ৩ দিন পর!”
তামিম একটু খুশিই হয় তিন দিন পরে যাওয়ার কথা শুনে, যাক এই তিন দিনে সে তার রাত পরীর সাথে ভালোমতো সময় কা’টাতে পারবে।
তামিমকে উপরে চলে যেতে বলে তানভীর সরকার। গরম কাপড় পরিধান করার জন্য। বেশিক্ষণ ভেজা শরী’রে থাকলে জ্বর আসার আশঙ্কা রয়েছে।
তানভীর সরকারের কথা মতো তামিম উপরে চলে যায় আর ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে।

পোড়া বাড়ি থেকে সুবহাকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকে তামিম কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না।
ঘড়ির কাঁটা যেন ধীরে চলছে, আর সে প্রতিটা সেকেন্ডে সুবহার কথা মনে করছে।
“রাতপরী কবে শুধু আমার হবে?”
নিজের আনমনে কথা গুলো ভাবতে থাকে তামিম।
তানভীর সরকারের নির্বাচন মিটিংয়ে সবাই বসে আছে, কিন্তু তামিমের মন পড়ে আছে অন্য কোথাও।বিষয়টি তানভীর সরকারের চোখ ও এড়িয়ে যায়নি।
” বাবাজান?”
” জ্বী আব্বা? ”
” আপনি কিন্তু এখন সকলের টা’র্গেটে। আশা করবো আপনি স্বাধানে থাকবেন!”
তামিম হালকা হেসে উত্তর দেয়,

” মরা’র পাখনা জগায়ছে তাই আমারে টার্গেট করছে আব্বাজান।
তামিম সরকার আইন দেখে না, আইন তৈরি করে!
আমারে যেহেতু টার্গেট করছে, আমার আইন বলে ওদের ম’রা ফর’জ হয়ে গেছে।”
তামিম উঠে সদর দরজার কাছে চলে যায়।
” কোথায় যাচ্ছো বাবাজান?”
” রঙ্গমঞ্চ খানায় আব্বা! কয়েক জনকে উপরে পাঠানোর সময় হয়ে গেছে।! ”
তামিম বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে পরে। তামিমকে বেরোতে দেখেই তার পঞ্চ পান্ডব তার সাথে যোগ দেয়।
তামিম যতবার রঙ্গমঞ্চ খানায় যায়, ততবার আরশি নগরে র’ক্তের বন্যা বয়ে যায়। আজ ও হয়তো তার ব্যতীক্রম হবে না!

————পরদিন সকালবেলা———
প্রতিদিনের মতো আজে সুবহার ক্লাস ছিলো সকালে। তাই যথারিতি সে কলি কাকলির সাথে বের হয়। কিন্তু আজকে তামিমের গাড়ি তাদের বাড়ির আশেপাশে না দেখতে পেয়ে ভিষণ খুশি হয় সুবহা। মনের আনন্দে বান্ধবীদের সাথে কলেজে যেতে থাকে।
” জানিস সুবহা, বাবার থেকে শুনলাম কালকে নাকি গভীর রাতে ড্রেনে কয়েকজন নেতাকর্মীদের লা*শ ভাসতে দেখা গেছে। ”
কথাটি সুবহা ও শুনেছিলো তার বাবার মুখ থেকে ডাইনিং টেবিলে, কিন্তু খুব বেশি একটা পাত্তা দেয়নি সে, এখন কলির কথা শুনে একটু খারা’প লাগে সুবহার। অসহায় লোকগুলোর কে এমন অবস্থা করলো!
” শুনেছি তামিম সরকারই না-কি কালকে ওই লোকগুলোর এমন…..!
কাকলির বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই থমকে যায় সুবহার পা! তামিমের নাম শুনতেই গা শিউরে ওঠে তার। অবশ্য আজকে প্রথম বার নয় যে, সে তামিম এমন অপকর্মের কথা শুনেছে।কিন্তু এখন যেনো একটু বেশিই এই নামটিকে ভয় পায় সুবহা!

” কীরে সুবু? দাড়ালি কেন?”
” এমনি! চল!”
সুবহা তার বান্ধবীদের সাথে কলেজে চলে যায়। যথারিতি ক্লাস ও করে। কিন্তু মনে একটু ভয় থেকেই গিয়েছিলো! যদি আবার ক্লাস শেষে তামিম তাকে দেখতে চলে আসে।।
ক্লাস শেষে সুবহা মনে মনে দোয়া করতে থাকে, যেনো তামিমের সাথে তার দেখা না হয়। হলো ও তাই। কলেজের বাইরে যখন তামিমের গাড়ি দাড়ানো দেখতে পেলো না সুবহা। নিজের অজান্তেই খুব খুশি হলো সে। আজ আজকে আর তামিম তার চোখে আসলো না। দিনটি ভালোই যাবে বোধ হয়।
————-বিকেল বেলা———

সারাদিন তামিমের সাথে দেখা না হওয়াতে মনটা বেশ ভালোই ছিলো সুবহার। তার উপরে আজকে কোচিং এ ক্লাস ও কম ছিলো। খুব তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায় তার।
পরবর্তী ক্লাস না থাকায় সুবহা এবং তার বান্ধবীরা মিলে ঠিক করে দোল খাবে বড় বট গাছটার নিচে। বড় বট গাছটার চারপাশে ও কিছুটা প্রাকৃতিক সুন্দর্যে ঘেরা। তাই দু-দন্ড বসলে মনটা জুড়িয়ে যায়।
এক এক করে সবাই দোল খাওয়ার পর সুবহার পালা চলে আসে। সে বসে পরে দোলনায়। আর তার বান্ধবীরা ধাক্কা দেয় পিছন থেকে।
খোলা চুল, চোখে কাজল, হালকা লিপস্টিক আর লাল ড্রেসে সুবহা যেনো রাতপরী থেকে দিন পরীতে রূপান্তরিত হয়েছিলো।
বেশ কয়েকবার দোল খায় সুবহা। তার মন আজকে খুবই ফুরফুরে। থেকে থেকে বান্ধবীদের সাথে হাসি তামাশাতে ও ভরে মেতে আছে সে।
ঠিক সেই সময়, একটা কালো SUV এসে দাঁড়ায় বট গাছ থেকে একটু দূরে।

সুবহা তখন ও দোল খাচ্ছিল। দোল খাওয়ার একসময় তামিম চেয়ার নিয়ে সুবহার সামনে বসে পরে। আর তার পা দুটো তামিমের শরীরে লাগে। তামিম খপ করে ধরে ফেলে সুবহার পা। সুবহা ও বেসামাল হয়ে পরে।একটুর জন্য পড়তে পড়তে পড়লো না সে, তাল সামলিয়ে নেই। তামিম তখন ও সুবহার পা দুটো ধরে রেখেছিলো।
তামিম সুবহার পা-থেকে মাথা অব্দি খুব সুক্ষভাবে পরখ করে নেই। এক হাত দিয়ে পা ধরে রেখে অন্য হাত দিয়ে তার চোশমা খুলে ফেলে।
” চুল কী বেশি লম্বা হয়ছে পরী?”
তামিমের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে সুবহা।
” তোমাকে খাঁচা’য় ভরে রাখলে কেমন হয় বলো?”
” আমি……!”
” চুপ!”

গর্জে উঠে তামিম। চোখ লাল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে।
চোয়াল খুব শক্ত। তামিমের রাগের পরিনতি যে কতটা ভয়ানক সেটা ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছে সুবহা। এবার নিজের চোখে দেখার পালা।
তামিম উঠে দাড়ায়, আর সুবহার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় তার গাড়ির কাছে। দরজা খুলে রীতিমতো ধা’ক্কা দেয় সুবহাকে তামওম। খুব জোরে দরজা লাগিয়ে দেয়।
সারারাস্তা তামিম খুব ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুবহার দিকে। এক বার ও পলক ও বোধ হয় ফেললো না সে। আর সুবহা মাথা নিচু করে বসে রইলো। চোখ দিয়ে তার অনবরত পানি পড়তেই আছে।
” আমি কী মার’ছি তোমাকে?”
সুবহা মাথা নেড়ে না সম্মতি জানায়।

” তো কাদতাছো কেন? চোখের পানি বেশি হয়ছে?”
খুব জোরে ধমকিয়ে ধমকিয়ে কথা গুলো বলে তামিম।
সাথে সাথে চুপ হয়ে যায় সুবহা। কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়া কমার জায়গায় আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
গাড়ি সোজা তামিমের পার্টি অফিসে যেয়ে থামে। তামিম নেমে সুবহার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় উপরে।
উপরে উঠে স্বজোরে একটা থাপ্প’ড় লাগিয়ে দেয় সুবহার গালে।
তামিমের থাপ্পড়ে’র গতি বেশ জোরেই ছিলো। মাটিতে পরে যায় সুবহা। তামিম ও গিয়ে সুবহার সামনে বসে তার গলা ধরে মুখ ঘুরি’য়ে নেই নিজের দিকে।

” তোরে না করছিলাম, না এমনে বের হতে?’
” কীরে? না করছিলাম না-কি? ”
সুবহা মাথা নাড়ায় তামিমের কথায়।
” তাহলে বের হলি কোন সাহসে? আমার কথার অবাধ্য হওয়ার পরিনতির সম্পর্কে জানোস না তুই?”
তামিম খুব শক্ত করে চেপে ধরে সুবহার গ’লা। এক পর্যায়ে উঠে দাড়ায় তামিম আর দরজা খুলে কিছু একটা নিয়ে সাথে সাথে ভিতরে ঢুকে তামিম।
তামিম সোজা সুবহার সামনে বসে আর তার চু’ল ধরে বেশ অনেক টুকু কেটে ফেলে। সুবহা অনেকবার বাধা দিলে ও কাজ হয় না।

সুবহার চুল প্রায় কোমর অব্দি কেটে ফে’লে তামিম। সুবহা কখনো তার চুল কা’টেনি। খুব যত্নে বড় করেছে সে তার চুল। কিন্তু আজকে তামিমের রাগের ব’লি হতে হলো সুবহার চুলকে।
সুবহা নিজের কা’টা চুল গুলো দেখে আরো জোরে জোরে কেঁদে উঠে।
তামিমকে সরি না বলে সুবহার এমন মা’রা কান্না দেখে খুব বিরক্ত হলো তামিম।সে উঠে সুবহার হাত ধরে তার চেম্বার থেকে বের করে দেয়।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৩

” বের হয় আমার চোখের সামনে থেকে তুই।।”
খুব জোরে ধা’ক্কা দেয় তামিম সুবহাকে।
” এই, ওরে বাড়ি দিয়ে আয়! আমার চোখের সামনে থেকে দূরে নিয়ে যা!”
খুব জোরে জোরে ধমকিয়ে কথা গুলো বলে তামিম। আর দরজা বন্ধ করে নিজের চেম্বারের।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৫