এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৫

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৫
কাফাতুন নেছা কবিতা

” আমি জীবনে কোনো মাইয়ার দিকে তাকায় নাই সুবহা! কিন্তু তোমার দিকে তাকাইছি,, মন ভরে তাকাইছি!”
তামীম আরো শক্ত করে জড়ি’য়ে ধরে সুবহাকে। সুবহার অস্বস্তির মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
” আমি কখনো কোনো মাইয়ার প্রেমে ও পড়ি নাই সুবহা, কিন্তু তোমার প্রেমে পড়ছি! এমন ভাবে পড়ছি, আর উঠে দাড়াতে পারছি না!!”
চুপ হয়ে যায় সুবহা! নিঃশ্বাস টাও যেনো আটকে গেছে তার! ভালোবাসা পবিত্র জিনিস। কিন্তু এমন ভয়ংকর লোকের ভালোবাসা কতটা পবিত্র সেটা জানা নেই সুবহার!
তামীমের জড়িয়ে ধরার মাত্রা আরো শক্ত হয়ে যায়।মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই সুবহা পালাবে।
তামীম সুবহাকে ধরে আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,,

” কিন্তু তুমি যদি আমার সাথে বেইমানি করো, নিজের এই হাত দিয়ে তোমার কব’র খুঁড়বো! ”
তামীমের ঠান্ডা মস্তিষ্কে বলা কথা গুলো সুচের মতো বাঁধলো সুবহার গায়ে। সর্বাঙ্গ কাটা দিয়ে উঠলো তার।
তামীম যে কতটা ভয়ংকর সেটা দেশের বাচ্চা বাচ্চারা ও জানে।
আন্ডা’রওয়াল্ডে ও যার কথাতে চলে তাকে নিজের জীবনের সাথে জড়ানো আর স্বেচ্ছায় বি’ষ পান করা একই কথা! অজান্তেই সুবহার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। জ্বরের মাত্রাটা ও বোধ হয় বাড়লো তার। ব্যাথায় নয়, ভয়ে, আতঙ্কে। তামীমের আতঙ্ক সুবহার মনে গেথে গেছে।
সে না পারছে প্রান খুলে বাঁচতে আর না পারছে তামীমের সাথে নিজের জীবন জড়াতে।।
চোখের পানি কাঁধে পড়তেই তামীম সুবহার দিকে তাকায়। সুবহার চোখ ভীষণ লাল, শরীর ও বেশ গরম।
তামীম সুবহার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” এই সাকিব! গাড়ি বের কর।”
তামীম তাড়াতাড়ি করে উঠে সুবহাকে কোলে তুলে নেয় আর তাকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তার পঞ্চ পান্ডব পিছু নেয় খোলা জীপ নিয়ে।
সারা রাস্তা তামীম সুবহার কপালে হাত দিতেই থাকে। আর সুবহা চুপ করে বসেই থাকে। কী-জানি, কী বলছিলো তার মন। হয়তো জ্বরটা বোধ হয় বেশিই হয়েছিল তাই সুবহার এমন চুপচাপ বসে থাকা।
সুবহার এমন জ্বড়বস্তুর মতো ব্যবহার তামীমের ও চোখে পরে।কিন্তু এটাকে জ্বরের প্রভাব ভেবে তামীম তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
তামীমের গাড়ি হসপিটালের সামনে দাঁড়াতেই ভিতর থেকে হুইল চেয়ার নিয়ে দৌড়ে ছুটে চলে আসে দু-জন ওয়ার্ড বয়।

ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় সুবহাকে। তামীম হুইল চেয়ারে সুবহাকে না বসিয়ে নিজে কোলে করে নিয়ে যায় তাকে।
ইমার্জেন্সিতে থাকা একজন পুরুষ ডাক্তার তামীমকে দেখে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে আসে সেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাকে দেখেই তামীমের রাগ বেড়ে যায়।
” মহিলা ডাক্তার নাই?”
তামীমের কথা শুনে ডাক্তার মাথা নেড়ে না সম্মতি জানায়। এতেই তামীমের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।
” ১৫ মিনিটের মধ্যে লেডি ডাক্তারকে আনেন এখানে। ১৫ মিনিটের এক সেকেন্ড বেশি হলে ও পাবনায় ভর্তি করে দিয়ে আসবো!”

তামীম বলতে দেরি।কিন্তু ডাক্তারের দৌড় দিতে দেরি নেই।। শুধু যে ডাক্তার নিজেই দৌড় লাগিয়েছিলেন বিষয়টি এমন নয়, সাথে বেশ কয়েকজন নার্স, ওয়ার্ডবয় ও দৌড় শুরু করেন। যে যাকে পারছে কল করে আসতে বলছে। কিন্তু রাত বেশি হওয়ায় খুব সহজে কেউ ফোন ধরলো না। আবার যারা যারা ধরেছে তারা তারা দৌড়ের উপরে আছেন।
ডাক্তার না, পুরো হসপিটাল স্টাফেরই ঘাম ছুটে যায় তামীম সরকারের হুমকিতে!
তাঁর নামই যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়াতে। আর এখন যখন সামনে দাঁড়িয়ে, তখন তো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
সুবহাকে বেডে বসিয়ে তার সামনে চেয়ার পেতে বসে তামীম। সুবহা তখন ও একদম বরফের মতো ঠান্ডা ছিলো, কি-জানি, কী চলছিলো তার মনে।

তামীম এক পলকে তাকিয়ে ছিলো তার রাতপরীর দিকে। চোখের পলক ফেললো কী-না একমাত্র তামীমই জানে। দিন দিন সুবহার প্রতি তামীমের পাগলামো যেনো বেড়েই চলছিলো।
যেই তামীম সরকারের ভয়ে, বাঘে-গরুতে একঘাটে পানি খায়, আজকে সেই তামীম সরকার ও একজন সাধারন মেয়ে মানুষের জন্য পাগলামো করে বেড়াচ্ছে বিষয়টি সত্যিই অবিশ্বাস্য!
তামীম বসে থাকার মধ্যেই মানিক দৌড়ে আসে, ভিতরে।

” ভাই!”
তামীম ভ্রু কুঁচকে তাকায় মানিকের দিকে।
‘” ভাই, হসপিটালের সামনে রেসিং চলতাছে! একটার পর একটা গাড়ি ভিতরে ঢুকতাছে খালি!”
তামীম একটু বাঁকা হেসে তার ঘড়ির দিকে তাকায়, ১৫ মিনিট হতে আরো ১ মিনিট বাকি আছে, তামীম তার রিভল’বারটি বের করে ট্রিগা’রে টান দিতেই ইমার্জেন্সি রুমের দিকে খুব জোরে হেটে আসার আওয়াজ পাওয়া যায়।
১৫ মিনিট পার হওয়ার আগেই ১৭জন লেডি ডাক্তার ছুটে আসে। কিন্তু রুমে বেশি জায়গা না হওয়ায় শুধু অধ্যাপক যারা তারা ৫ জনই ভিতরে ঢুকে পড়ে। আর বাকিরা বাইরে।
তামীম একপলক তাকিয়ে দেখে নেয়। নিশ্চিন্ত হয় যে নারী ডাক্তারই এসেছে। তারপর ধীর গলায় বলে
“যত যত্নে দেখবেন, মনে রাখবেন,,এমপি তামীম সরকারের বউয়ের গায়ে হাত দিয়েছেন আপনি!”
ডাক্তার হালকা কাঁপা কণ্ঠে মাথা নাড়েন,

“জি স্যার!”
তামীম একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নেয়। কিন্তু ভেতরের অস্থিরতা যেনো কিছুতেই থামে না।
সুবহার মুখটা এতো বিষন্ন দেখার পর থেকে তার মন ছটফট করা শুরু করে!!
একজন নার্স বের হয়ে বলে,
”স্যার, পেশেন্ট হাই ফিভারে ছিলো। শরীরে ইনফেকশনও রয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এখন রেস্ট দরকার।”
তামীম হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
সাথে সাথে ভিতরে ঢুকে পড়ে। তামীম ভিতরে ঢুকতেই লক্ষ্য করে সুবহার চোখ কিছু একটা দেখে বড় বড় হয়ে গেছে। তামীম চোয়াল শক্ত করে সামনে তাকায়।এমন কী আছে যেটা দেখে তার রাতপরী ভয় পেয়ে গেছে।
কিন্তু পরক্ষণেই তামীমের রাগ ঠান্ডা হয়ে যায়।
সুবহা ইনজেকশন দেখে তার চোখ ভয়ে বড় বড় করে ফেলে। তামীম তার পাশে যেয়ে বসে, আর লেডি ডাক্তারের দিকে তাকায়।

” এতো বড় ইনজেকশন কেন ডাক্তার? ছোটো সুই আনেন!”
তামীমের ঝাড়ি শুনে ডাক্তার নার্সকে বলে আরেকটি ছোটো ইনজেকশন আনতে। তামীম সুবহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,,
” ভয় পেলে আমাকে দেখে পাও, আর অন্য কিছুকে দেখে নয়!”
সুবহা মাথা নিচু করে ফেলে।
নার্স এসে ডাক্তারকে ইনজেকশন দেয়,, সুবহা আবার ও ইনজেকশন দেখে ভয় পেতে শুরু করে।
সুবহাকে ভয় পেতে দেখে তামীম তার নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়!
” আগে আমার হাতে ইনজেকশন পুশ করেন। ব্যাথা কেমন লাগে আগে আমি দেখবো!”
” কিন্তু স্যার…….!”
” কথা কম!”

ডাক্তার তামীমের কথা মতো আগে তার হাতে ইনজেকশন পুশ করেন। তামীম সুবহার দিকে তাকিয়ে বলে…..
” একটু ও ব্যাথা নাই সুবহা! আরামছে নাও। চোখ বন্ধ করো!”
তামীম নিজের হাত দিয়ে সুবহার চোখ চেপে ধরে।
সুবহা অন্য হাত দিয়ে তামীমের পাঞ্জাবির সাইটে শক্ত করে ধরে। তামীম হালকা হাসি দেয়।
” এইভাবেই তুমি আমাকে ধরে থাকো সুবহা। আর ছাইরো না।।
সাথে সাথে তামীমের পাঞ্জাবি ছেড়ে দেয় সুবহা।
তামীম নিজেই নিজের মনে মনে বলে উঠে।।।।
“তুমি আমার দুর্বলতা… আবার শক্তির চূড়ান্ত রূপও!”
প্রায় মাঝ রাতে তামীম সুবহাকে নিয়ে তার বাড়িতে দিয়ে আসে। আর নিজে চলে আসতে থাকে সরকার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
গাড়িতে তামীম তার হাত চেপে ধরে বসে থাকে।

” সবার অঙ্গ মিলে, মাগার আর টা তো মিলে না!”
” তুই গাধা ছাত্র যে তাই সাকিব্বা!”
” আহারে আমার তিনবার এইচএসসি ফেল করা ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। এই অঙ্গ সেই অঙ্গ না!”
তামীম নিজের চশমা খুলে ফুঁ দিয়ে আবার পড়ে ফেলে।
” কীসের অঙ্গ মিলে না তোর?”
” ভাই! যেখানে আপনি চা’পাতি, রাম’দা দিয়ে চলেন সেখানে সামান্য ইনজেকশনের জায়গা ধরে আছেন!”
তামীম হেঁসে অন্য দিকে তাকায়…..
” তোর ভাবির কতটা কষ্ট হয়ছে সেটায় ফিল করতাছি।”!
” ওহ হো!!”””
পাঁচ জন একসাথে বলে উঠে। তামীম ও তাদের কিছু বলে না। আজকাল তামীম তেমন একটা রাগ ও করে না। সুবহার নাম তার সামনে নিলেই রাগ গলে পানি হয়ে যায়।
—– সরকার বাড়ি———

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৪

তামীম সরকার বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে সোজা বিছানায় শু’য়ে পরে। আর ফোন বের করে সুবহার ছবি গুলো দেখতে থাকে!!
” মাদ’কের নেশা’র থেকে ও বড় হলো মানুষের নে’শা!”
” আমাকে তোর নে’শা ধরেছে রে সুবহা! ”
তামীম সুবহার ছবিতে ডিপলি চু’মু খায়,, আর বুকের উপরে ফোন রেখে ঘুমিয়ে পরে।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৬