এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৬
কাফাতুন নেছা কবিতা
জ্বরটা একটু বেশিই বেড়ে যায় সুবহার, তাই পরের দিন কলেজে যায়নি সে। তামীমের লোকরা ও গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু সুবহা না আসাতে তামীমকে ইনফর্ম করে দেয় তারা! তামীম তখন ও ঘুমাচ্ছিলো। কিন্তু সুবহার কলেজের না যাওয়ার কথা শুনে ঘুম একি বারেই চলে যায় তামীমের।
তামীম সুবহাকে কল দেয় কিন্তু কোনো রেসপন্স পায় না। তামীম বুঝতে পারে সুবহার জ্বরটা বোধ হয় খুব বেশিই এসেছে। কিন্তু সে চাইলে ও সুবহাকে দেখতে এখন যেতে পারবে না। সয়ং এমপি কোথাও যাবে আর সেখানে ভীর জমবে না এটা তো অসম্ভব। তার উপরে যদি হয় দেশ নেতার একমাত্র বড় ছেলে।
তামীম সাকিবকে কল দিয়ে সুবহার বাসায় কয়েক জন লেডি ডাক্তার আর নার্স পাঠাতে বলে। আর তাদের প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর সুবহার খবর দিতে বলা হয়।
তামীমের নিদের্শ মতো খুব তাড়াতাড়ি ডাক্তার আর নার্সদের পাঠানো হয়।
———শিকদার বাড়ি ——-
সুবহার জ্বর অতিরিক্ত বাড়াতে তার মা পানি পট্টি দিতে থাকে তাকে। কিন্তু হঠাৎ দরজায় বেল বেজে উঠে…..!
” তোর বাবা এলো হয় তো। আমি এখনই আসছি।
সুবহার মা নিচে নেমে আসে। আর দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলার সাথে সাথে ৫-৬ জন লেডি ডাক্তার আর কয়েকজন নার্সকে বাইরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু বিসম খায় সুবহার মা!
” আপনারা?”
” আমাদের স্যার পাঠিয়েছে, সুবহা মা কেথায়?”
” উপরে!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুবহার মায়ের ইশারা করতে দেরি কিন্তু ডাক্তার আর নার্সদের উপরে যেতে দেরি নয়। ডাক্তার আর নার্সদের এমন ইমমেচুয়র ব্যবহার দেখে একটু অবাক হলে ও সুবহার শরীরের কথা চিন্তা করে তেমন কোনো রিয়াকশন দেয় না উনি। যেহেতু স্যার বলেছে, সেহেতু সুবহার বাবাই হবে। লোকটা তেমন একটা পরিবারকে সময় দিতে না পারলে ও মেয়েকে যে খুব ভালোবাসে তা বুঝাই যায়। সুবহার মা আর সাত-পাঁচ না ভেবে উপরে উঠে যায় দরজা লাগিয়ে।
উপরে উঠে, সুবহার মায়ের চোখ কপালে উঠে যায়। ডাক্তারগন সুবহার চারপাশে ছড়িয়ে আছে। নার্সরা ব্যাগ থেকে কি কি যেনো বের করছে। মানে এলাহি কান্ড বলা চলে একদম।
” আপনি নিচে চলে যান ম্যাডাম, আমরা আছি, কিছু লাগলে বলবো!”
সুবহার মা একটু আমতা আমতা করলে ও এতো সিনিয়র ডাক্তারদের কথা না শোনা একটু বেমানান হয়ে যায় বিধায় উনি নিচে চলে যায়। আর রান্না চাপায়।
সব কিছু গোছগাছ করার সময় আবার দরজায় বেল বেজে উঠে, সুবহার মা হাত ধুয়ে আবার চলে যায় সরদ দরজায়!
দরজা খুলে আবার বড়সড় ধাক্কা খায় সুবহার মা!
বেশ কয়েকজন লোক বড় বড় ডালা হাতে দাড়িয়ে আছে।
” আপনারা?”
” ম্যাডাম, স্যার পাঠিয়েছে,!
” সুবহার বাবা?”
” ম্যাডাম ভিতরে রাখি এগুলো, বাইরে অনেক গরম।!”
” লোকগুলোকে বাইরে ঘামতে দেখে, তাদের ভিতরে আসতে বলে! আর জিনিস পত্র গুলো নিচেই রাখতে বলে।”
সব কিছু নিচে রেখে চলে যায় লোকগুলো। আর সুবহার মা ফোন নিয়ে সুবহার বাবাকে কল করে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেন না। হয়তো খুব বিজি
কিন্তু এতো কিছু কেন পাঠালো এটাতে একটু চিন্তায় পরে তার মা। হয়তো মেয়ে অসুস্থ তাই পাঠিয়েছে তার পছন্দের সব কিছু।
সুবহার মা সব কিছু গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। আর উপরে ডাক্তাররা তার চিকিৎসা চালিয়ে যায়।
এতো ডাক্তার আর নার্সদের দেখে সুবহা ঠিকই বুঝতে এটা তামীমের কাজ। কিন্তু তার মা বিষয়টি কীভাবে নেবে সেটা ভেবে সুবহার আতঙ্ক লেগেই থাকে।
সুবহার চিন্তার মাঝেই হঠাৎ কল আসে তামীমের। সুবহা দেখে ও কল ধরে না। খুব চিন্তায় পরে যায় সে, এতো লোকের মাঝে কল ধরবে কী-না! পরক্ষণেই সবার ফোনে টেক্সট আসার নোটিফিকেশন বেজে উঠে একসাথে।
সবাই টেক্সট সিন করে আর একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকায়!
” সুবহা মা, তামীম স্যার কল করছে একটু ধরুন তাড়াতাড়ি! ”
ডাক্তারদের কথা শুনে কপালে ভাজ পরে সুবহার। সে বুঝতে পারে, একটু আগে সকলের ফোনে কার টেক্সট এসেছিলো।
ঠিক তখনই আবার ভিডিও কল আসে তামীমের। আর সকলে বারান্দায় চলে যায়। সুবহা বহু সংকোচ বোধ করলে ও কলটি রিসিভ করে।
সুবহা কল ধরার সাথে সাথে তামীম তার দিকে খুব রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
” কল ধরস নাই কেন?”
সুবহা কিছু না বলে চুপচাপ চোখ নিচের দিকে করে রাখে
” তোর কী মনে হয়, আমি কিছু জানি না তুই করছিস। প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর তোর ভিডিও আসে আমার কাছে।”
তামীমের কথা শুনে সুবহা একটু অবাক হয়।
” অসুস্থ্য তাই কিছু বললাম না! পরের বার এমন হলে সোজা তোর রুমে চলে আসবো!”
তামীমের ঠান্ডা মেজাজে হুমকি শুনে ভয় পায় সুবহা।
” সরি, আর এমন হবে না!”
সুবহার মুখে প্রথম বার সরি শুনে তামীমের রাগ গলে পানি হয়ে যায়।
” আই লাভ ইউ, ফোন রাখ!”
তামীম আই লাভ ইউ বলেই কল কেটে দেয়, সুবহার মুখ থেকে কোনো উত্তর ও শুনতে চায়নি সে। সুবহা ও কিছু চিন্তা না করে ফোন রেখে দেয়।
———–রাত ১২ টা ৪৫ মিনিট ———-
বিকেল হতেই সকল নার্স আর ডাক্তাররা চলে যায়। সুবহার বাবা ও একটু লেট করে ফিরে বাসায়। অধিক কাজের চাপ থাকায়, সুবহার মা সারা দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো আর বলে না তাকে।
সুবহার বাবা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে, মেয়েকে দেখে নিজের রুমে চলে যায়।
সুবহার জ্বরটা বিকেল হতে একটু কমে যায়। তাই মেডিসিন নিয়ে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে সুবহা।
ঘুমের ঘোরে হঠাৎ সুবহার মনে হতে থাকে সে শূন্যে ভাসছে,, পিটপিট করে চোখ খুলে সুবহা দেখে তামিম খুব সুন্দর করে তাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। হঠাৎ এমন হওয়ায়, একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে সুবহা। চিৎকার দিতে যেয়ে ও দেয় না। তামীম নিজের মতো তাকে নিয়ে যায় আর গাড়িতে তার ক’লেই বসায়। সুবহা কিছু না বলে মাথা হেলিয়ে রাখে তামীমের বুকে।
——-পোড়া বাড়ি—————-
তামীম সুবহাকে নিয়ে সোজা পোড়াবাড়িতে চলে যায়। আর একদম মাঝে যেয়ে বেঞ্চে বসে পরে সুবহাকে ধরে।
তামীম সুবহার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপে। না এখন ঠিক আছে তার রাত পরী।
” কিছু খাবে?”
সুবহা মাথা নেড়ে না বুঝায়।
” আমি কাল লন্ডন চলে যাচ্ছি কয়েকদিনের জন্য রাতপরী।”
তামীমের চলে যাওয়ার কথা শুনে হঠাৎ সুবহার ভিতর থেকে একটু শান্তির বাতাস বয়ে যায়।
” আজকের রাতটা আমার সাথে থাকো রাতপরী!”
তামীম জড়ি’য়ে ধরে সুবহাকে। আর তার কাঁধে কি’স করে।
এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৫
” ফিরে এসেই আমরা বিয়ে করবো রাত পরী। তোমাকে ছাড়া এক একটি সেকেন্ড ও একবছরের সমান!”
সুবহা শুধু চুপচাপ তামীমের কথা গুলো শুনে যায়। তার তো এটা ভেবেই ভালো লাগছে, তামীম কয়দিন তার জীবনে থাকবে না!
” যে-ভাবে রেখে যাচ্ছি, সেভাবেই যেনো এসে পায় রাতপরী। না-হলে তুমি জানে আমি কী কী করতে পারি!”