এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৬
কাফাতুন নেছা কবিতা
তামিম রিং পড়িয়ে দিয়ে সুবহার সামনে দাড়ায়, তারপর একটু নিচু হয়ে সুবহার কপাল বরাবর চু’মু দেই! সুবহা ঘৃণায় চোখ বন্ধ করে ফেলে! তামিমের প্রতিটি ছোঁয়া তার কাছে বিষাদ ময় লাগে!
তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে! তামিম সুবহার চোখের পানি মুছে দেয় এবং সুবহার দু-গাল আলতো করে ধরে………!
” এটা শুধু একটা আংটি ছিলো না সুবহা! তুমি তামিম সরকারের আমানত এটা তার প্রমাণ! ”
” বাড়ি_ঘর গুলো পুড়’ছে তামিম!”
” আমার মন আরো বেশি পুড়তাছে সুবহা! সেদিকে ধ্যান দাও!”
তামিমের এমন ভাবহীন কথায় সুবহার মুখ আরো শক্ত হয়ে যায়! সে কী আশেপাশের মানুষ গুলোর আর্তনাদ শুনতে পারছে না? তার কানে কী অসহায় মানুষ গুলোর বুক ফাটা চিৎকার পৌঁছে যাচ্ছে না?
হঠাৎ করেই ঝুম বৃষ্টির মতো পানি পড়া শুরু করে! বৃষ্টির বর্ষণ গুলো খুবই ভারি! কিন্তু বৃষ্টি তো হওয়ার কথা ছিলো না! আর না আকাশ বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস দিয়েছিলো তাহলে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুবহার তখনই মনে পড়ে তার বাবার বলা কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি নামানোর কথা! যেভানে বিমান দ্বারা, সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং সালফিউরিক এসিড মেঘে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম বৃষ্টি করানো হতো! কিন্তু এটা তো আরব আমিরাতে করানো হয়! তাহলে কী বাংলাদেশে ও করানো হলো? অবশ্য প্রধান মন্ত্রীর ছেলের কাছে কী এসব অসাধ্য কিছু? যার মাধ্যমে দেশ চলে তার পাওয়ারে তার ছেলে যে যেকোনো কিছু ধ্বংস করতে পারবে না এটা বলায় বাহুল্য! সেখানে বৃষ্টি করানো, ফাই’টার জেট দিয়ে প্রপোজ করা!,পুরো এলাকা জা’লিয়ে দেওয়া বা একটি পুরো কলেজ উ’ড়িয়ে দেওয়া তো আহামরি কিছু নয়!
টাকা কালোকে সাদা আর সাদাকে কালো ও বলাতে পারে। টাকা জিনিসই এমন! টাকার সামনে শুধু জিনিসপত্র বিক্রি হয় না! এখন মানুষ আরো বেশি বিক্রি হয়!
সুবহা হা মেলে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে। আর তামিম সুবহার ভিজে যাওয়া মুখের পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অত্যাধিক ফর্সা হওয়ায় কিছু ক্ষণ পানিতে থাকায় গোলাপি আভায় পরিনত হয় সুবহার মুখ। সুন্দর্যের দিক দিয়ে সুবহাকে এক নাম্বারে রাখা যায়! তার মুখ দেখলেই যেকেউ ঘায়েল হতে পারে। তামিম ও এক নজরেই ঘায়েল হয়ে যায়!
তামিম একদিনের ব্যবধানে সুবহার জন্ম থেকে শুরু করে এই অব্দি সব কিছুর ইনফরমেশন নেই। এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে রাখেছিলো, যদি সুবহার কোনো বয়ফ্রেন্ড থাকে, তাহলে তাকে দুনিয়া ছা’ড়া করবে! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সুবহা সিঙ্গেল ছিলো। এই যুগে ও এসো আজ অব্দি প্রেম না করায় তামিম আরো বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে সুবহার প্রতি! সেদিন থেকে এই অব্দি তামিমের পাগলামো আরো দ্বিগুণ মাত্রায় বাড়তে থাকে সুবহার প্রতি!।।
বৃষ্টির মাত্রা খুব ভারি হতে থাকায় সুবহা দু -কদম পিছিয়ে যায় এবং উল্টো দিক করে নিজের বাড়ির ভেতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়! সুবহা পা বাড়াতেই তামিম সুবহার বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেই, সুবহা ধাক্কা খায় তামিমের বুক বরাবর! আর তামিমের হ্রদ স্পন্দ আরো বেড়ে যায়! তামিম সুবহার মুখে আসা চুল গুলো সরিয়ে দেই, আর সুবহার মুখ বরাবর নিজের মুখ নামিয়ে বলে…
” তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে… আর কমলো চিন্তা আমার….! ”
তামিমের এমন রোমান্টিক আন্দাজ খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়! কিন্তু আজকে আরশি নগরে বেশিরভাগ মানুষ দেখলো তামিমের এমন অপ্রকাশিত দিক। কিন্তু বেশিক্ষণ কেউ তাকিয়ে থাকেনি। বরং উল্টো দিক হয়ে ঘুরে দাড়ায়! তামিমের লোকরা তাদের ইশারা করে ঘুরতে! তারা ও ঘুড়ে দাড়ায়!
তামিমের এমন আচরণ সুবহার মনে আরো ভয় জাগিয়ে দিলো, তার পরিবার কী তাকে দেখছে এভাবে? বাবা-মায়ের সামনে একজন অবিবাহিত মেয়ের সাথে এমন আচরণ করে তাহলে কী সেই মেয়ে আর তার মা-বাবার সামনে মুখ দেখাতে পারে? নিজের লাজ লজ্জা বলে ও তো একটি বেপার থাকে! এমন পরিস্থিতি যেনো কোনো শত্রুর ও না হয়!
” তিনদিন পর আমার বিয়ে উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকবে! সবাই আইসেন! নাহ! আইসেন না! টিভিতে লাইভ দেইখেন! তামিম সরকারের সাথে সুবহা শিকদারের বিয়ে!”
কথাটি বলেই তামিম তার কালো চশমা ঠিক করে নিজের জীপের দিকে যেতে থাকে! সুবহা ও তার বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়!
আজকে প্রকৃতি যেনো সুবহাকে তার করুন পরিনতির ভবিষ্যতের ইংগিত দিলো!
জীপের কাছাকাছি যেয়ে তামিম আবার পিছনে ফিরে তাকায়! সুবহা তখন তার বাড়ির গেটের সামনে এসে পড়েছিলো!
” এই রাত পরী! ”
হঠাৎ তামিমের ডাকে সুবহা ও পিছনে ফিরে তাকায়! না জানি আর কোন জিনিসের জন্য রাজি করাবে তাকে। সুবহা মনে সংশয় নিয়েই পিছনে ফিরে তাকায়!
” ভুলে ও রিং খোলার চেষ্টা কয়রই না! না-হলে হাত কে’টে সরকার বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে রাখবো! আসতে যাইতে দেখবা আর তামিম সরকারকে স্মরণ করবা!”
তামিম থ্রে’ট দিয়ে সুন্দর মতো চলে যায়! সুবহা ও দাড়ায় না! বাইরে কে-কী বললো সেদিকে ও কোনো ধ্যান নেই তার! তামিম যে কী করতে পারে সেটা এতো দিনে বেশ ভালোই আন্দাজ হয়ে গেছে সুবহার। সুবহা রিং টার দিকে তাকায়! তাতে ভিতরে খোদায় করে সুক্ষ্ম হাতে st লেখা! মানে তামিম এবং সুবহার নামের প্রথম অক্ষর! ডায়মন্ডে এমন কারুকার্য সুবহা দেখেনি! তামিম ও যেমন আলাদা তার কাজ ও তেমন আলাদা!
সুবহাক ভিতরে আসতেই দেখে তার বাবা-মা ও ভাই মুখ গম্ভীর করে বসে আছে! অবশ্য বসে থাকাটায় স্বাভাবিক! সুবহার বুক ভারি হয়ে আসে। আজকে ও কী তার মা-বাবা তাকে ভুল বুঝবে!
কিন্তু তারা তো বাইরে ছিলো! ভিতরে কখন আসলো! হয় তো মেয়ের এমন করুন পরিনতি দু-চোখে সহ্য হয়নি! তাই ভিতরে চলে এসেছে। সুবহা মনে ভয় নিয়েই ভিতরে পা বাড়ায়!
সুবহা ভিতরে আসতেই তার বাবা ভিতর থেকে গামছা এনে সুবহার মাথা মুছে দেয়।
” সুবহা!”
বাবার ডাকে মুখ তুলে তাকায় সে!
” উপরে যেয়ে তোর প্রয়োজনী সকল কিছু গুছিয়ে নে!”
” কিন্তু বাবা……!”
” বাবার উপরে ভরসা নেই? ”
” নিজের থেকে ও বেশি আছে, বাবা!”
” তাহলে যাহ! ব্যাগ গুছিয়ে নে! আজকে রাত ২ টায় তুই আরশি নগর ছেড়ে যাবি!”
সুবহা তার বাবার কথা মতো উপরে চলে যায়। কিন্তু ভয় মনে থেকেই যায়! যেখানে তাঁকে রাজি করানোর জন্য পুরো এলাকা জ্বা’লিয়ে দিলো, সেখানে সে পালাবে আর প্রধান মন্ত্রীর ছেলে জানবে না এটা কী সম্ভব? আর পালিয়ে গেলে ও তাকে খুঁজতে যে ন্যানো সেকেন্ড লাগবে তামিমের সেটা ও তো সুবহার অজানা নয়! কিন্তু আজকে আর বাবাকে নিষেধ করতে পারেনি সুবহা! নিষেধ করা মানে তার বাবার উপরে সন্দেহ করা! কোনো মেয়েই নিজের বাবার শক্তির উপরে সন্দেহ করে না! সুবহা ও করেনি! সে সুন্দর মতো রাজি হয়ে যায়! এবং ব্যাগ গুছিয়ে ফেলে!
” ভাই আপনের বিয়া আর পুরো দেশ নিশ্চুপ এইডা কী মানা যায়?”
কালা মানিকের কথা শুনে সবাই একসাথে ঠিক বলে সহমত প্রকাশ করে!
” তাহলে কী লাইভে যেয়ে নাগিন ডান্স করবো?”
” ওইটা আমরায় করমু ভাই! আপনে শুধু রাজি হন!”
” কীসের জন্য? ”
“‘ পুরো দেশে আতোষ বাজি ফাটা’নোর জন্য! ”
তামিম সিটে গা এলিয়ে বসে পরে, আর কিছু ক্ষণ পর পুরো আকাশে আতোষ বা’জি ফু’টতে থাকে।
খোলা জীপ হওয়ায় পুরো বিষয়টি সবাই স্পষ্ট দেখতে পায়!
সবাই হা হয়ে যায়! তারা সারাদিন পাশে থেকে ও কিছু টের পেলো না! আসলেই তামিম এবং তার কাজগুলো সম্পর্কে জানা কারো সাধ্য নই!
” ভাই একটা কথা কই?”
” বল মাহির!”
” হিরোরা হিরোইনকে চু’ম্মা দিলে প্রেম হয়, আর আমরা ভিলেনরা দিলেন হয় মামলা! বিষয়টা এমন কেন?”
” কারণ সব ভিলেন, সাইকো কিংশুক আর তামিম সরকারের মতো হ্যানসাম হয় না!”
” আমার আর প্রেম করা হলো না! ”
মাহিরের কথা শুনে সাকিব মাহিরের হাত টেনে তার বুকে নেই! মাহির ও অবাক হয় সাকিবের এমন কান্ডে!
” কিছু হুনতে পারোস?”
” হই তোর বুক ধকাস ধকাস করতাছে”!”
” নারে শা*লার ভাই! বো*ম ফুটাতাছে!”
তামিম সহ বাকি চারজন সাকিবের দিকে তাকায়!
” আব্বে হা’লা গাড়ি চা’লা! ছামনে দেক! না-হলে ভাইয়ের শাদি মোবারকের বদলে, আমাগো ৪০ শা খাইতে লোকজন আইবো!”
” সাকিব্বাহ তোর মনে বো*ম ফুটতাছে, বিষয়টা তো হজম করার মতো না-রে!”
” কমু না আমার সরম করে!”
” তুই কী প্রেমে পড়ছিস সাকিব?”
” বিসমিল্লাহ কয়রা পয়রা গেছি ভাই!”
সাকিবের কথা শুনে টাকলা মফিস খুব জোরে গাড়ি ব্রেক মা’রে। আর তামিম সহ সবাই সাকিবের দিকে তাকায়! সাকিব ভদ্র ছেলের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘ ভাইয়ের বিয়ার আতোশ বাজি! মেলা ছুন্দর লাগতাছে!”
সাকিব সকলের ধ্যান অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করলে কেউ আকাশের দিকে তাকায় না! বরং সাকিবের দিকেই তাকিয়ে থাকে।
তারপর সাকিবের পাশে বসা মাহির, কালা মানিক, টাকলা মফিস, সাকিবকে উড়াধুড়া চ’ড় ঘু’সি মারতে থাকে।
” আমার হয়ে ও দে শা’লারে!”
সামনে থাকা পেট মোটা রফিক সবাইকে আরো উৎসকে দেই!
” শা* লা আমাগো আগে প্রেমে কেমনে পড়লি তুই?”
”’ তোগোরে নিয়াই তো পড়তে চায়ছিলাম, কিন্তু তোরা বি:ড়ি খাইতে ব্যস্ত ছিলি! তাই আমি একায় পড়ছি!”
তামিম তার পঞ্চ পান্ডবের কান্ড কারখানা দেখে নিজের কপালে নিজেই চা’টি মা’রে! ভাগ্য করে পেয়েছে এই পাঁচ জন ম্যান্টাল পিস কে। প্রেমে ও যে সকলে মিলে একসাথে পড়া যায় এটা তামিমের জানা ছিলো না!
” হা’লা বেইমানি! একা একায় প্রেরেমে পড়লি!”
তামিমকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সকলে একসাথে তার দিকে তাকায়। আর শুকনো ঢোক গিলে। তামিম ভিজা কাপড়ে যে বসে আছে এটা তারা ভুলেই গিয়েছিলো।
তামিম সুন্দর মতো নিজের চশমা খুলে পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে উপরে উঠাতে থাকে। তামিমকে নিজের হাতা উপরে উঠাতে দেখে সকলে বুঝে যায় আজকে কপালে শনি রবি সবই আছে!
” পালা রে………….”!
” শা’লার ভাইরা খারা আজকে!”
সকলে যে যার মতো দৌড় লাগায়, আর তামিম লা’ঠি দিয়ে তাদের পিছনে তারা করে! প্রায় অনেক রাতেই তামিমের তারা খেয়ে চলে যায় তাদের! আজকে ও এর নতুন কিছু না!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৫
আতোষ বাজিগুলো সুবহার চোখে ও পড়ে। বারান্দায় থেকে সে ও দেখে সব! কিন্তু এই আতোষ বাজি যেনো কোনো কাল হয়ে না দাড়ায় এটায় সুবহার চিন্তা!
সুবহার পালানোর বিষয়টি যদি তামিম জানতে পারে তাহলে তাকে যে, এই আতোষ বা’জির সাথে বেধে তাকে ও উড়িয়ে দেবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই!
সুবহা মন শক্ত করে ভিতরে চলে যায়! আজকে রাত দুটোই হবে তার নতুন জীবনের সূচনা!
