এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৮

এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৮
কাফাতুন নেছা কবিতা

” দেখ সুবহা! আমরা যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি!”
” বিয়ের কথা বললে না কেন বাবা?”
মঈন উদ্দিন সুবহার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেই না!
” রেডি হয়ে নে! ১১ টায় কাজি আসবে!”
সুবহাকে রেডি হতে বলে মঈন উদ্দিন চলে যায় তার রুম থেকে! আর সুবহা চুপচাপ বসে থাকে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাবার চলে যাওয়ার দিকে।

——–একটু আগে———-
”’ কে আকাশ চৌধুরী? ”
” আমি! ”
ভিড় ঠেলে কিছু মানুষ সামনে এসে দাড়ায় সুবহার! তার মধ্যে সাদা সুট পরিহিত লোকটা সুবহার সুবহার সামনে দাড়াতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
” কেমন আছো সুবহা!”
” আপনি তো….!”
” আমিই আকাশ চৌধুরী! সালমান হকের বোনের ছেলে! যাকে তোমার কথাকথি প্রেমিক তামিম সরকার পরপারে পাঠিয়ে ছিলো!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আকাশের কথা গুলো সুবহার কানে আসতেই বিষের মতো লাগে! এটা তো সত্যি সালমান হককে তামিম মে’রেছিলো! আর আকাশ চৌধুরী যে সালমান হকের সাথে রাজনীতি করতো এটা ও দেশের কারো অজানা নয়! তার থেকে বড় কথা! আকাশ চৌধুরী আর তামিম সরকারের একজন আরেকজনের প্রতি শত্রুতাও জানা আছে সুবহার!
টিভিতে একবার দেখেছিলো সুবহা! আকাশ চৌধুরীকে কুকুরের মতো গলায় দ’ড়ি দিয়ে ঘুড়িয়ে ছিলো তামিম!কিন্তু কেন সেটা জানার আগ্রহ ছিলো না তার! আজকে সরাসরি আকাশ চৌধুরীকে সামনা-সামনি দেখে সেই পূরানো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো সুবহার!
” আমি জানি, তুমি তামিমকে পছন্দ করো না! আর তুমি যদি আমার বউ হও তাহলে তামিম তোমাকে ও পছন্দ করবে না! এভাবেই তুমি ওর হাত থেকে বাঁচতে পারবে!”
সুবহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মঈন উদ্দিন কথা কেড়ে নিয়ে কুশল বিনিময় করে। আর সুবহাকে নিয়ে যায় অন্য রুমে!

সুবহা উঠে আয়নার সামনে দাড়ায়! তারপর নিজের হাতের দিকে। তামিমের দেওয়া আঘা’ত এখনো স্পষ্ট! পোড়া জায়গা টা ও দগদগ করছে। তামিমের এতো পাপ খোলা বইয়ের মতো পড়ে আছে সুবহার সামনে।আজকে তামিমের বলা একটি কথা বারবার মনে পড়ছে সুবহার!
” আমারে ঠকাইয়ো না সুবহা!”
প্রতিবার দেখা করতে আসলে যাওয়ার সময় তামিম সুবহাকে এই এক কথায় বলতো। তামিমের কথা যেনো সুবহার কানে বাজাতে থাকে!

” আমারে ঠকাইয়ো না সুবহা! আমারে ঠকাইয়ো না সুবহা! আমারে ঠকাইয়ো না সুবহা!
সুবহা নিজের কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর খুব জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে।
” আমি ঠকায়নি তামিম! আমি ঠকায়নি! ”
সুবহা একটু জোড়ে কথা গুলো নিজের আনমনেই বলে উঠে! তার নিঃশ্বাস ভারি হায়ে আসে। কিছু ক্ষণ পর সুবহা স্বাভাবিক হয়ে নিজের চোখ খুলতে থাকে।
সুবহা খুব কান্নায় ভেঙে পরে। কিন্তু বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না তার কান্না! তার আগেই কিছু মেয়ে মণ্ডলী তার রুমে প্রবেশ করে। হাতে তাদের ডালা ভর্তি জিনিস!
তারা ভিতরে আসতেই সুবহা চোখের পানি মুছে ফেলে!
” বাহ! কী সুন্দর হয়েছে আকাশ ভাইয়ের বউটা! একদম পরী!”
একজন মেয়ে এসে সুবহার কানের লতিতে চোখ থেকে কাজল নিয়ে দিয়ে দেই। সুবহা বুঝতে পারে এটা আকাশের বোন!
সুবহাকে তারা সাজাতে থাকে। খুব সুন্দর করে যত্নসহকারে সাজানো হয় সুবহাকে! লাল লেহেঙ্গায় একদম আকাশ থেকে নেমে আসা লাল পরীর থেকে কম লাগছিলো না সুবহাকে।

” তামিম যদি জানতে পারে কাউকে আস্ত রাখবে না আকাশ!”
” তোর কী মনে হয় আকাশ চৌধুরী এতো কাঁচা কাজ করে। এই জঙ্গলের ভেতরে তামিম আসতে আসতে ওর প্রাণ ভোমরার সাথে আমাদের ১৬ জনের বা’সর হয়ে ও যাবে!”
খুব উচ্চ স্বরে ভেসে উঠো বন্ধ ঘরাটায় হাসির আওয়াজ। মনে হচ্ছে কতোগুলো হিংস্র প্রাণি তাদের খাবার পেয়েছে বহুদিন পর!
” যাই বল! মেয়ে কিন্তু একের মা*ল একদম খাসা! তামিমের চয়েস আছে!”
” হুহ! চয়েস থাকলে কী হবে! কাম তো সারবো আমরা! বেচারি বুঝতেও পারলো না তাকে বেস্ট সে’ল গার্ল বানাবো আমি!”
আবার উচ্চ স্বরে হেসে উঠে সবাই।
বাইরে থেকে একজন সার্ভেন্ট এসে জানায়, কাজি চলে এসেছে।
কাজি আসার কথা শুনে সবার মনের শয়তানি জেগে উঠে। একটু পরই তামিমের ইজ্জত শেষ করবে তারা! প্রায় অনেক দিনের প্লান ছিলো তাদের এটা! সরাসরি তামিমের সাথে লেগে পারবে না তাই তার দূর্বল জায়গায়! আঘাত করছে তারা!

সময় ১১:২৩ মিনিট! বিয়ের তোড়জোড় শুরু! কাজি এবং সুবহার পরিবার খোলা জায়গাটায় বসে থাকে। মোটামুটি সজ্জিত! জঙ্গলের ভিতরে হওয়ায় খোলা জায়গা বেশ। সেখানেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
সবাই মোটামুটি গুছিয়ে বসার পর, সুবহাকে আনা হয় বাইরে! সুবহাকে এতো সুন্দর লাগছিলো যে, তাকে দেখে চোখ সরানো মুশকিল।
সুবহাকে নিয়ে কিছু মেয়ে বরের মুখোমুখি বসায়!
সুবহা বসতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে যায়! সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি আর এতো কম সময়ের মধ্যে হয়ে উঠে যে সুবহাকে ঠিক তাল করতে পারে না কি করা উচিত তার।
তামিমকে সুবহাকে ভালোবাসে বিষয়টি এমন নয়! আর না তার সাথে থাকতে চায়! কিন্তু সুবহা নিজের মনের এই ব্যাকুলতা আর এতো ভারি ভাবের অর্থ বুঝতে পারে না! কীসের এতো ব্যাকুলতা তার! আর কিসের এতো উদাসিনীতা!

” আকাশ চৌধুরীর সাথে সুবহা শিকদারের………! ”
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেই! সবার আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু এখন সুবহা এবং আকাশ।
হঠাৎ উপর থেকে হেলিকপ্টারের আওয়াজ ভেসে আসে। এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আওয়াজটা বেশ স্পষ্ট হয়ে যায়।
৬-৭ টা হেলিকপ্টার পর পর খোলা জায়গাটায় নামানো হয়! আশ্চর্যের বিষয় হলো হেলিকপ্টার গুলো ল্যানৃড করার সাথে সাথে সকলের মুখের নকশায় পরিবর্তন হয়ে গেলো।
শুকনো ঢোক গিললো সুবহা!

” বউ আমার! বিয়া করবি তুই? মজায় মজা!”
তামিম তার সিগনেচার গো’ল্ডেন চাপাতি এক হাতে আর আরেক হাতে সিগা’র টানতে টানতে সামনে আসতে থাকে। আর চোখে চিরচেনা সেই কালো চশমা। ঠিক বুঝা যাচ্ছিলো না তার চোখের রাগ কতটা গভীর!
তামিম এগিয়ে আসতেই সবাই দাড়িয়ে পরে। তার সাথে সাথে বেশ কয়েকটা গাড়ি ও প্রবেশ করে। কালো পোশাক পরিহিত লোকগুলো সকলকে ঘিরে দাড়িয়ে ওরে।।
তামিম সোজা হেঁটে সুবহার সামনে আসতে থাকে। এদিকে সুবহার প্রাণ যায় যায় অবস্থা!
তামিমকে সুবহার সামনে আসতে দেখে সুবহার মা এসে সুবহার সামনে দাড়ায়!
তামিম সোজা সুবহার সামনে এসে দাড়ায়!
” সামনে আসো!”

সুবহা তার মায়ের কাধ পিছন থেকে শক্ত করে ধরে। আর কাঁপতে থাকে!
সুবহার মা ও ঢাল হয়ে দাড়ায় সুবহার সামনে!
তামিম একটু মাথা বাকিয়ে সুবহাকে দেখে। বাহ কী সুন্দর করে সেজেছে তার রাতপরী আজকে। কিন্তু তার জন্য না!
তামিম পিছন থেকে সুবহার হাত ধরে খুব জোড়ে টান দিয়ে তাকে ঘুড়িয়ে তার সামনে আসে।
” তামিম যা চায়, তা নিজ থেকে আসে। আর না হয় ছিনিয়ে নেই!”
সুবহাকে সামনে ঘুড়িয়ে আনতে আনতে কঘা গুলো বলতে থাকে তামিম। তামিম সুবহার হাত এতো জোড়ে ধরে ঘুড়িয়ে ছিলো যে সুবহা এসে সোজা তামিমের বুকেই পড়ে।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৭

” যেখানে তোকে বাইরে বের হতেই দেই না, সেখানে অন্যের জন্য বউ সেজে নিলি! ”
তামিম দাঁতে দাঁত পিসতে পিসতে কথা গুলো বলতে থাকে।
” বিয়ে হয়ে গেছে তামিম! সুবহার হাত ছেড়ে দে!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৯