এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩
কাফাতুন নেছা কবিতা

তামিম খুব রেগে সরকার ভিলা থেকে বের হতে থাকে। । অবশ্য এই রাগের কারণ তার শখের নারী! বো’মা সাকিব আর কালা মানিকই বাড়িতে এসে তামিমকে টেক্সট পাঠাই সুবহার গাড়িতে করে কলেজে না যাওয়ার জন্য! তানভীর সরকারের সাথে আলোচনা করতে থাকায় টেক্সটি দেখতে তামিমের একটু দেরি হয়!! টেক্সট দেখার ৫-৬ মিনিট পর তামিম খুব রেগে বাইরে আসতে থাকে!
তামিম বের হতেই তার পঞ্চ পান্ডব এসে হাজির হয়! অবশ্য তামিম যখনই রেগে বের হয় তখনই কারো কারো র’ক্তে নিজের হাত পরিষ্কার করে! তামিম জীপের কাছে আসতেই তার পঞ্চ পান্ডব ও যে যার মতো জায়গায় বসে পড়ে!
” ভাই কারে উড়াইতে হয়বো?নাম কন খালি!”
বো’মা সাকিব সব সময় উত্তেজিত থাকে মানুষ উড়া’নোর ক্ষেত্রে। তার নিজ হাতে বানানো বো’ম দিয়ে সে এই পর্যন্ত অনেক মানুষকে উড়ি’য়েছে।
তামিম কারো কথা না শুনে সোজা গাড়িতে উঠে বলে…..
” গাড়ি সোজা সিটি কলেজের দিকে নিয়ে যা!”

—————————– সিটি-কলেজ———————–
রোদ ঝলমলে দুপুরে কলেজ চত্বর কাঁপিয়ে কালো জীপ এসে থামে।
আরশি নগরের বাতাস যেন থেমে গেলো তামিম সরকারকে নামতে দেখে!
চারদিক কড়া নিরাপত্তায় ঘিড়ে ফেলে তার দেহরক্ষীরা।
কেউ কিছু বোঝার আগেই, সে উঠে যায় দ্বিতীয় তলার ক্লাসরুমে। দ্বাদশ শ্রেণির ‘বি’ সেকশনে! তখন সুবহার ক্লাস চলছিলো। সে খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছিলো। কালকের ঘটনার পর তার জন্য কলেজে আসা খুবই মুশকিল ছিলো। কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরনে সে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে কলেজে আসে। আর মুখ বুঝে ক্লাস করতে থাকে। সহপাঠীরা অবশ্য তাকে নিয়ে বেশ কানা ঘোষা করে। কিন্তু তেমন একটা পাত্তা দেয়নি সুবহা।
ক্লাসে যখন সবাই খুব মনোযোগী ঠিক তখনই তামিম আর তার পঞ্চ পান্ডবদের নিয়ে ক্লাসে উপস্থিত হয়। তামিমকে দেখা মাত্র শিক্ষক ক্লাস বন্ধ করে দিয়ে দাড়িয়ে পরে। আর ক্লাসে পিং ড্রপ সাইলেন্টের নিরবতা বিরাজ করে। সবার মুখে ইতিমধ্যে একটা ভয় চলে আসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তামিম সোজা সুবহার বেঞ্চের সামনে দাড়ায় আর সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে। তামিম দাড়ানো মাত্র সুবহার সহপাঠীরা উঠে অন্য দিকে চলে যায়। আর সুবহা মাথা নিচু করে তখনও বসে থাকে। ভয়ে তার হাত পা কাঁপতে থাকে। যার সামনে আরশি নগরের কেউ ভয়ে কথা বলতে পারে না সে কি-না তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
তামিম খুব কোড়া ভাবে বলে…………
” গাড়ি পাঠিয়ে ছিলাম? ”
সুবহা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।আর মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝায়!
তামিম খুব জোড়ে ঝাড়ি দিয়ে উঠে সুবহাকে!
” তো আসিস নি কেন?”
তামিমের ধমকে কেঁপে উঠে সুবহা।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
তামিম একটু ঝুঁকে সুবহার মুখ বরাবর নিজের মুখ নিয়ে আসে
” আমি কিন্তু খুব ভালো লোক না! যা বলবো চুপচাপ শুনবি!”
সুবহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়!
সব ছাত্র-ছাত্রী স্তব্ধ। শিক্ষক নির্বাক।বডিগার্ডদের ইশারা করে বেরিয়ে যায় তামীম।
———————-প্রিন্সিপাল অফিস———————-

প্রিন্সিপাল রুমে সিনিয়র টিচার গন এবং বেশ কিছু শিক্ষক মন্ডলী মুখ গম্ভীর করে বসে থাকে। পিয়নকে দিয়ে সুবহাকে ডেকে পাঠানো হয়। সুবহা এসে সবাইকে সালাম দেয়। কয়েকজন উত্তর নিলো তো কয়জন চুপ করেই থাকলো।
“কিছু দিনের জন্য তোমাকে বিরতি নিতে হবে সুবহা! তুমি আর কলেজে এসে না!”
চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে সুবহার!
“আমার অপরাধ কী জানতে পারি স্যার?”
” দেখো সুবহা, তোমার কোনো অপরাধ নেই, জানি। কিন্তু পরিস্থিতি তো বোঝে না, ধরতে গেলে আরশিনগরে আমাদের কলেজ খুবই বিখ্যাত, বির্তক হোক এটা কখনোই কাম্য নয়! আশা করি তুমি বুঝেছো!”
সুবহা নিঃশব্দে বেরিয়ে। কী বা বলবে সে। তার বলার মতো ভাষা তো নেই।
———————-রাত ৯টা, শিকদার বাড়ি—————–

বাড়ি ফিরে আজকে কী হয়েছিলো তার সাথে তা মাকে জানাতে পারেনি সুবহা। খুব ভয় আর আতঙ্কে থাকে সে। যদি তার বাবা জানতে পারে তার যে কী অবস্থা করবে সেটা ভালো মতোই জানে সুবহা।
সুবহা চুপচাপ বসে থাকে। মোবাইলে একটার পর একটা অজানা নাম্বার থেকে কল আসতে থাকে।
সবগুলো কেটে দেয় সে।কারণ সে জানে এগুলো কার কল। সুবহা ফোন অফ করে চুপচাপ পড়াতে মনোযোগ দেয়।
এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠে। দুই-থেকে তিনবার বাজার পর ও যখন কেউ দরজা খুলে না সুবহা নিজে নিচে মেনে আসে। হয়তো মা কোনো কাজে ব্যস্ত তাই শুনতে পায়নি। সুবহা দরজা খুলতেই দেখে একটি খাম রাখা!
খামের ভেতরে একটি ছোটো সাদা কা’ফনের কাপড় আর একটি ছোট নোট……….
“আর একবার ফোন রিসিভ না হলে এটা কিছু ক্ষণের মধ্যে দরকার হবে তোর!”
সুবহা থরথর করে কাঁপতে থাকে। আর দরজা বন্ধ করে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।আর ফোন অন করে। সাথে সাথে কল আসে তামীমের। সুবহা কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে।

” কে?”
ফোনের ওপাশ থেকে খুব গম্ভীর একটা কন্ঠ ভেসে আসে,,
” আমি ছাড়া আর কেউ কল দেয় তোকে?”
সুবহা তামিমের গলা শুনে শুকনো ঢোক গিলে।
” কীরে কথা বল!”
সুবহা আধ ভাঙা গলায় জবাব দেয় না!
” যদি সঠিক সময়ে কল সিরিভ না হয় তো আমার থেকে কেউ খা’রাপ হবে না!”
সুবহা শুধু জ্বী আচ্ছা বলে।

” কালকে লাল ড্রেস পড়বি! না-হলে যেই ড্রেস পড়বি সেটায় তোর র’ক্ত দিয়ে লা’ল করবো।”
তামিমের কথা শুনে খুব ভয় পেয়ে যায় সুবহা। আর তামিম ফোন কেটে দেয়। কিন্তু লাল ড্রেস পরে সুবহা যাবেটা কোথায়। তাকে তো কলেজে যেতে না করেছে প্রিন্সিপাল।
সুবহার সাথে কথা বলে তামিম মৃদু হাসি দেয়। নিজের অজান্তেই কীভাবে যে বয়সে ৯ বছরে ছোটো একটি মেয়ের জন্য পাগলমী শুরু করলো তামিম সেটা সে নিজেও বুঝতে পারেনি। তামিমের চিন্তার মাঝেই তার দরজায় নক পড়ে, কালা মানিক ভয়ে ভয়ে এসে জানায় তারা খুব আর্জেন্ট কথা বলতে চায় তার সাথে। তামিম ও নিচে এসে আসে।
তামিমকে নিচে আসতে দেখে বাকি চারজন একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। আর একজন আরেকজন কে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে কীভাবে বলবে……

” কী বলবি জ্বলদি বল!”
” ভাই আছলে! আমরা হগলে একটু আগে জানবার পারছি খবরটা!”
” কীসের খবর?”
” ভাই!”
” মেয়েদের মতো হেয়ালি না করে বল!”
” ভাই, ভাবি সাপরে কলেজ থাইকা বের করে দিছে ওই প্রিন্সিপাল! ”
সুবহাকে বের করে দেওয়ার কথা শোনা মাত্র তামিমের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে!
” সাকিব?!
” ভাই!”
” যেই কলেজ আমার শখের নারীকে বের করে দিয়েছে সেই কলেজ যেনো না টিকে থাকে! ”
” আমি এহনি বো’মা মার:তাছি ভাই!”
সাকিব তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্য।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ২

” মানিক?!
” জ্বী ভাই! ”
” প্রিন্সিপাল আর যারা ছিলো তাদের নিয়ে আয়!”
” ওকে ভাই!”
কালা মানিক ও বেরিয়ে পরে সুবহার শিক্ষদের আনতে।
আর তামিম চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে থাকে। এতো বড় কলিজা কার সে দেখবে আজকে।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪