এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩০
কাফাতুন নেছা কবিতা
” মাছ পানিতে ধরা দিয়েছে! এখন জমবে মজা! তামিম পাবে সাজা, সাজবো আমি রাজা….! ”
” কিন্তু যদি টের পাই!”
” শা*লা বহুত হারা’মি আছে! হারা’মিতে পিএইচডি করা! কিন্তু জনগণ তাকেই মানবে যে মানবতার ফেরিওয়ালা হবে! আর সরকারের ছেলের তো রেকর্ড সবার জানা!”
” চেয়ারসসসস”!
” সাকিব, আকাশকে আকাশে পাঠা!”
তামিম সুবহাকে নিয়ে অগ্রসর হয় সামনের দিকে। না সে হেলিকপ্টারে ওঠেনি। তার লোকদের গাড়ির পিছনে রাখা হোম বাস এবং এম্বুলেন্সের সামনে এসে দাড়ায়!! তামিম আগে থেকেই যে হোম বাসের ভিতরে একটি ছোট খাটো হসপিটাল খুলে রেখেছে, সেটার কল্পনা এই অব্দি কেউ করতে পারেনি।। তামিম নিজের রাগ সম্পর্কে অবগত,,, তার ধারণা আছে সে সুবহার ক্ষতি করবে! তাই সে আগে থেকেই একটি মিনি হসপিটাল নিজের সাথে নিয়ে এসেছে। যদি ও বাসটি আসতে দেরি করে। কিন্তু খুব বেশি দেরি হয়নি। তামিম তার হেলিকপ্টার নিয়ে আসার ১ ঘন্টার মধ্যেই এম্বুলেন্স ও হোম বাস চলে আসে।সেখানে কয়েকজন সার্জারী ডাক্তার এবং কয়েকজন নার্স উপস্থিত ছিলো।।
তামিম সুবহাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে বাইরে চলে আসে।।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” যদি ওর কিছু হয়! তাহলে তুই শেষ ডাক্তার! ”
ডাক্তারকে ওয়ার্নিং দিয়ে তামিম সামনে আসতে থাকে। তামিম যে পূর্ব হতে এম্বুলেন্স এবং চিকিৎসার সব কিছু আনিয়ে রেখেছিলো সেটা তার লোকেরা ও আন্দাজ করতে পারেনি।
তামিম ভেতরে আসতেই তার সামনে একটি চেয়ার রাখা হয়! তামিম খুব সুন্দর করে চেয়ারে পায়ের উপরে পা তুলে বসে। আর ভেতরে সুবহার অপারেশন শুরু হয়!!
নিচে আধম’রা হয়ে পড়ে থাকে আকাশ! তামিম আসার আগেই তার পঞ্চ পান্ডবরা আকাশের প্রায় অর্ধেক গেম শেষ করে ফেলে।।
‘তামিম পায়ের উপরে পা তুলে নিকোটি’নের ধোঁয়া উড়াতে থাকে!
” আমার বেইমান শশুড়-শাশুড়ি কইরে!”
” ভাই, ভাবিসাপের মা তো বেহুশ! হের আব্বা আর ভাই দাড়ায় আছে!”
” নিয়ে আয়!”
তামিমের সামনে সুবহার বাবা এবং ভাইকে নিয়ে আনা হয়! এবং তাদের মাটিতে বসানো ভয়!
” আপনার মাইয়ারে যে আমার পছন্দ জানতেন না?”
” হ্যা! জানতাম! ”
” তাহলে অন্য কারো সাথে বিয়া দিতে গেলেন কেন?”
” মেয়েকে বাঁচানোর জন্য! ”
তামিম সিগা’রটি ফেলে দিয়ে হাসতে থাকে শব্দ করে।
” এখন কী বেঁচে গেলো? শুনেন শশুর আব্বা! আপনার মাইয়ার যদি আরো ৫০ জায়গায় বিয়া দেন, আমি সেই ৫০ জনের সাথেই ওর ডির্ভোস করাইয়া নিয়ে আসবো!”
” অন্যের স্ত্রীর সাথে সংসার করবেন আপনি?
” ডির্ভোস হয়ে গেছে ওর!”
” ৯০ দিনের আগে ডির্ভোস কার্যকর হয় না! ”
” বাহ! এতো কিছু জানেন আপনি?? বেশ আইন কানুন জেনেই আমার সাথে খেলতে নেমেছেন দেখি!! শুনেন শশুর আব্বা, আপনার মেয়ের ডির্ভোস একদম ইসলামি শরিয়ত আর বাংলাদেশের আইনের পথ ধরেই হয়ছে!
ইসলামে একবার তালাক দিলে ইদ্দতের সময় থাকে,, তিন মাস। এই তিন মাসে স্ত্রীকে ফেরত না নিলে তালাক কার্যকর হয়ে যায়। আর বাংলাদেশে? ইউনিয়নে তালাক রেজিস্ট্রারিতে জমা দিলে, সালিশ বোর্ড বসে। সেখানে স্বামী স্ত্রীকে গ্রহণ না করলেই তাকাল হয়ে যাবে। কিন্তু!! আকাশ তো পরপারে যাবে! তাহলে?? ম’রার আগে কেউ সুবহাকে নিজের বউ দাবি করুক এটা আমি কীভাবে মেনে নেই বলেন? ”
তামিম আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জড়ো করে চু’মু খাওয়ার মতো শব্দ করে।
“ডির্ভোস পেপার তো আগেই হাতে ধরায় দিছি,… এখন মৃত্যু’সনদটা বাকি ছিলো!”
পরপর ৫-৬ টি গু’লি মে’রে আকাশের বু*ক ঝাঁজরা করে দেই!!
” আকাশ! আকাশে ভালো থাকিস ভাই! জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে যেন তোর ঠায় হয়!”
তামিমকে দেখলে মনে হয় শয়তা’ন ও কনফিউজড হয়ে যাবে, সে মানুষ না-কি তাদের খালাতো ভাই! যে নিজেই মানুষ মা’রছে, আবার তার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য ও বলছে। অথচ সব থেকে পা’পিষ্ঠ কাজ একটু আগে সে নিজেই করলো।
তামিমের এতো ভয়ংকর রূপ দেখে সুবহার বাবা চুপসে যায়! শুকনো ঢোক গিলে সে।
” রাজনীতি আমার রক্তে শশুর আব্বা! আমার সাথে রাজনীতি কয়রেন না! কখন কী হয় সকল কিছুর আইন আমার জানা আছে! একটু খোঁজ নিয়ে দেইখেন তামিম সরকারের শিক্ষাগত যোগ্যতা কত টুকু!!””
তামিম পিছনে পা ফিরিয়ে আবার সুবহার বাবার সামনে দাড়ায়,,
” বিধবা মেয়েদের তো বিয়ে করা যাবে তাই না শশুর আব্বা? আপনার মেয়ে তো এখন বিধবা মানুষ! একটু আগেই তার স্বামী নিজের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। এখন তো তার বিয়ে হলে ও সমস্যা নাই! ”
তামিম উঠে দাড়িয়ে সোজা কাজির কাছে চলে যায়! তারপর তার মাথায় হালকা হাত রাখে।
” বুইড়া, তোর একটু আগে ভুলভাল বলার জন্য আমি হার্ট অ্যাটাক করতে করতে বাঁচলাম! বুইড়া হয়ে গেছোস হাদিস জানোস না? ”
কাজী থরথর করে কাঁপতে থাকে! কিন্তু জায়গা থেকে উঠলো না! হয়তো বয়সের ভার জেগে ধরেছে।।
তামিম উঠে হোম বাসের কাছে চলে যায়! আর চেয়ার নিয়ে সামনে বসে থাকে। ভেতরে সুবহার অপারেশন চলতে থাকে। আর সুবহার পরিবার সহ বিয়েতে উপস্থিত ৩০ জনই সেখানেই থাকে!!
প্রায় ৫-৬ ঘন্টা যাবত চলে সুবহার অপারেশন! এর মধ্যে সুবহার কয়েক ব্যাগ ব্লাডের ও প্রয়োজন হয়! তামিমের সাথে রক্তের গ্রুপ মিল থাকায়, সে এক ব্যাগ রক্ত দেয় সুবহাকে। তামিম চেয়েছিলো তার শরীরের সমস্ত রক্ত যেনো সুবহাকে দেওয়া হয়! কিন্তু একজন মানুষ একদিনে এক বারই ব্লাড দিতে পারে। তাই তামিম ব্লাড দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।
” ভাই একটা কথা কমু!”
” বল মাহির!”
” ভাবি সাপের বু’কে গু’লি ক…..!”
মাহির তার সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই তামিম চোখ বড় বড় করে তাকায় তার দিকে। ভয়ে মাহির চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।
” যেই বুকে তামিম সরকারের রাজত্ব, সেই বুকে তামিম গু’লি চালাইনি!”
সবাই খুব অবাক হয়ে যায় তামিমের কথা শুনে। তারা স্পষ্ট দেখেছে তামিম দুটো গু’লি চালিয়েছে, আর সুবহার হাত ছিলো বুক বরাবর! তাহলে তামিমের কথার সাথে একটু আগের দৃশ্যের মিল কেন পেলো না তারা!
” তামিম সরকারকে কী তোর বলদ মন হয়, যে নিজের প্রাণ পাখির বুকে গু’লি চালাবে এটা যেনো ও তার প্রাণ ঘাতি হতে পারে!!”
সকলে যে যার মুখে তাকায়! তারপর গোল হয়ে তামিমের পাশে মাটিতে বসে!
” বক্ষস্থিতে গু’লি চালাইছি আমি! হ্রদ পিন্ডের উপরে। সারাদিন চিকিৎসা না হলে ও সহজে ম’রতো না!”
” ভাই, আপনি একটা জিনিয়াসসসস! মাগার আপনের মাথা গরম হইলে তো কিছু পরওয়া……!”
সাকিব পুরো কথা শেষ করার আগেই নিজের মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে।
” থুক্কু! মাফ কয়রা দেন ভাই! মুখ ফসকে বের হইছে!”
” আমার বয়স কতো সাকিব?”
” ভাই সাড়ে ২৮ বছর!”
” এই ২৮ বছরে আমি খু’ন কয়টা করছি?”
” হিসাবের বাইরে ভাই!”
” কারে, কেমনে মা’রলে ম’রবো সবই আমার জানা!”
তামিম যে একজন পেশাদার খু’নি সেটা তার কথার ওজনে আন্দাজ করা যায়! একজন মানুষ ঠিক কতটা বিচক্ষণ হলে এতো কিছু সম্পর্কে জানে তা হয়তো কেউ আন্দাজ করতে পারবে না!
” সুবহা আমার জান! ওই আরো ১০০ টা বিয়া করলে ও আমার ওরেই লাগবে! কিন্তু আমি ছাড়া অন্য কাউকে কবুল বলছে এটার শা’স্তি পাওয়া ওর জন্য ফরজ হয়ে গেছিলো!”
” আব্বু! তুমি সত্যিটা কেন বললে না?”
” কীসের সত্যি? ”
” সুবহা আপুর বিয়ে তো হয়নি……. আহহহহহহহহহহ!”
———-রাত ৮ টা—————
একটু একটু করে চোখের পাতা খুলে সুবহা! সারা শরীর অসার হয়ে আছে তার! কিন্তু মাঝে মাঝে একটু করে একম কাঁপনী লাগছে তার শরীরে। যেনো সে ঝুলছে! নাহয় দোল খাচ্ছে।
সুবহা একটু একটু করে চোখের পাতা খুলে। চোখ খুলে কিছু ক্ষণ সামনে তাকিয়ে থাকে। সামনে তাকাতেই সুবহার ভ্রু কুঁচকে যায়! তারপর নিজের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হয় সুবহা!
সুবহা নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করে। তারপর পাশে মাথা ঘুড়াতেই দেখতে পায়, তামিম স্যালাইন হাতে নিয়ে চোখে কালো চশমা পরে বাইরে তাকিয়ে আছে! পরক্ষণেই সুবহা নিজের হাতের দিকে তাকায়! চলন্ত স্যালাইন তামিম ধরে আছে, যেটা তার শরীরে যাচ্ছে।
সুবহা কিছু না বলে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেই। নিজেই মা’রে নিজেই স্যালাইন ধরে, একেমন মানুষ!!
রাত ৯ টার মধ্যে সরকার বাড়িতে গাড়ি পৌঁছে যায়! যেখানে তানভীর সরকার, আয়েশা সরকার সহ আরো অনেকেই উপস্থিত থাকে।
শরীর নড়াচড়া করার মতো ০% শক্তি ও অবস্থিত নেই সুবহার শরীরে। সে চুপচাপ বসে থাকে।
তামিম নেমে স্যালাইন টা মাহিরের হাতে ধরিয়ে দেই। তারপর সুবহাকে কোলে তুলে নেই।
তামিম আসতেই সকলের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়!
এই প্রথম বোধ হয় কেউ লাল বেনারসির জায়গায় হসপিটালের ড্রেস পরিয়ে, হাতে চলন্ত স্যালাইন ধরে বউ নিয়ে প্রবেশ করছে।
সিনেমার শুটিং এর অংশকে ও হার মানাবে এ দৃশ্য!!
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা হাজির হয় তার বাবা মায়ের সামনে।
” মাফ করবেন আব্বাজান, আপনার সামনে কোনো মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়াই আছি! বেয়াদবি নিয়েন না!”
” মেয়ের হাতে স্যালাইন কেন বাপ!”
” আমাকে বিয়া করার খুশিতে হার্ট অ্যাটাক করছিলো, তাই স্যালাইন লাগাইতে হয়ছে আম্মাজান!”
তানভির সরকার সুবহার মাথায় হাত দেয়!
” আমার ছেলে কী আপনাকে জোড় করে তুলে এনেছে?”
সুবহা ছলছল চোখে তাকায় তানভির সরকারের দিকে!
” জ্বী!”
” কীহ?”
” নাহ! আমি স্বেচ্ছায় এসেছি!”
তামিমের খুব জোড়ে ” কীহ” বলাতে সুবহা বুঝে যায় এখন তাকে আরো ৫-৬ টা গু’লি খেতে হবে!
” আপনি শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ করেন আব্বা! আমি মেয়ে তুলে আনার মতো লোকই না!”
তানভির সরকার আর কিছু না বলে তামিমকে ভিতরে আসতে বলে।
তামিম সুবহাকে নিয়ে এসে সোফায় বসায়! তারপর আস্তে আস্তে তার স্যালাইন খুলে দেই!
সুবহা চুপচাপ বসে থাকে। কিছু বলার মতো বা করার মতো শক্তি অবস্থিতি নেই সুবহার! সে শুধু এখন নীরব দর্শকদের মতো বসে আছে!
তামিম সুবহার পাশে বসতেই একজন বোরখা পরিহিত মহিলা ভেতরে ঢোকে। তার সাথে সাথে কয়জন গার্ড ও দৌড়ে ভেতরে আসে।
” সুবহহহহহহাাা!”
আগন্তুক মহিলার মুখে নিজের নাম শুনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই কন্ঠস্বর আগে শুনেছে বলে মনে হয় না তার!
” সুবহাা! তোমার মা!”
নিজের মায়ের নাম শুনতেই সুবহা নড়েচড়ে উঠে! কিন্তু অসুস্থ্যতার ভারে উঠতে পারে না!
” কী হয়েছে আমার মায়ের?”
” তোমার মা আর নেই সুবহা!”””
একয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সুবহার চোখের সামনে কালো অন্ধকার নেমে এলো! নাহ! কেউ একজন খুব ব্রিছ্রি মজা করছে তার সাথে।
” তোমার মা আর নেই! তাড়াতাড়ি চলো!”
সুবহা উঠে দৌড় দিতে যায়! কিন্তু সাথে সাথে পিছনে পড়ে যায়! তামিম তার শক্ত হাত দিয়ে ধরে ফেলে সুবহাকে।
” আমার মা আর নেই তামিম!”
তামিম খুব শক্ত করে সুবহাকে জড়িয়ে ধরে! কান্নার বাঁধ যেনো ভেঙে গেছে আজকে।
তামিম সুবহাকে কোলে তুলে নিয়ে সামনে হাঁটতে থাকে। সারা রাস্তা সুবহার চোখের পানিতে ভিজে যায় তামিমের পাঞ্জাবি!!
সুবহাদের বাড়ির সামনে এসে দাড়ায় তামিমদের গাড়ি। তামিমের সারাক্ষণ ছিলো সুবহার পাশে!!
নিচে নামতেই সকলের আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু হয় সুবহা এবং তামিম! এতো লোক! লোকে গিজ গিজ করছে সুবহাদের বাড়ি!
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা ভেতরে চলে যায়! সুবহাকে দেখে তার বাবা চলে আসে।
” সুবহারে….. তোর মা আর নেই! ”
প্রচন্ড কান্নায় ভেঙে পরে সুবহার বাবা!
সুবহাকে সোজা নামানো হয় তার মায়ের রাখা লা’শের সামনে! মা’কে এভাবে সাদা কাপড় পড়ে শুয়ে থাকতে দেখে দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে সুবহার!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৯
একজন সন্তানের কাছে এর থেকে ভয়ংকর দিন বোধ হয় আর হতেই পারে না! একজন সন্তান কল্পনা তো দূরে থাক তার চিন্তাতে ও এমন কিছু আনে না! কিন্তু সুবহার মা তো সকাল অব্দি ভালো ছিলো! তাহলে এমন কী হলো তার?
সুবহা এদিক ওদিক তাকিয়ে সৌরভকে খুঁজতে থাকে।
