এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩১
কাফাতুন নেছা কবিতা
সুবহা এদিক ওদিক তাকিয়ে সৌরভকে খুঁজতে থাকে! কিন্তু কোথাও সৌরভের দেখা নেই। হয়তো মায়ের মৃত্যুটা সৌরভ মেনে নিতে পারছে না! যার জন্য হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে ভয়ে।।
সুবহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার মায়ের নিথর শরীরটার দিকে! সুবহার বুক ফাটছে কিন্তু মুখ ফাটছে না! তার কাছে সব কিছু কেমন যেনো স্ক্রিপ্টে লেখা নাটক মনে হচ্ছে!! মনে হচ্ছে এই বুঝি তার মা উঠে বসবে। আর তাকে জোড় করে এক গাদা ভাত মেখে খাওয়াবে!!
সুবহার এমন অবস্থা দেখে উপস্থিত মহিলার এবং তামিমের মা তার পাশে বসে। তাকে কাঁদতে বলে। না কাঁদলে দম ফেটে মা’রা যাবে সে বলে তাকে বুঝায়! সকলে তার মাথায়, শরীরে হাত দিতে থাকে, একটু কাঁদার জন্য! কিন্তু সুবহা ভ্রু কুঁচকে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে জড়বস্তুর মতো! একটু আগে ও গাড়িতে তামিমকে ধরে সে খুব কাঁদছিলো। কিন্তু হঠাৎ এমন কী হলো তার!।
হয়তো একেই বলে,, ”অল্প শোকে কাতর আর অধীক শোকে পাথর!”
” শেষ বাবের মতো মা-কে ধরে কেঁদে নে সুবহা! চর মা-কে দেখতে পারবি না তুই!”
বাবার কথা গুলো সুবহার কান অব্দি গেলো ঠিকই কিন্তু মস্তিষ্কে হয়তো সেভাবে ঢুকলো না! হতভম্বের মতো বসেই রইলো!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম এসে সুবহার পাশে বসে! তার মাথায় হাত দেয়, কিন্তু কোনো লাভ হয় না! সুবহার কোনো পরিবর্তন নেই! সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে।।
তানভির সরকার ভেতরে আসার আগেই তার বডিগার্ডরা মোটামুটি লোক সরিয়ে দেয়। একজন প্রধানমন্ত্রী কোথাও যাবে আর সেখানে ভীর জমবে না, মিডিয়ার লোকেরা জানবে না এটা বলায় বাহুল্য!!
কিছু ক্ষণের মধ্যে পুলিশ সদস্যের তিনটি টিম ও চলে আসে!!
” আসসালামু আলাইকুম স্যার! লা’শটি পোস্টমর্টেমে নিতে হবে!”
” নিয়ে যান!”
” নাহহহহ!”
পুলিশ সবাইকে সরিয়ে লাশ নেওয়া জন্য যখনই আসে। সুবহার বাবা তাদের বাঁধা দেই!
” স্যার! এটা আমাদের ডিউটি!”
” আমার স্ত্রী এসবে অনেক ভয় পেতো! সে সব সময় বলতো কখনো সে মা’রা গেলো এসব যেনো না হয়! প্লিজ আপনারা চলে যান! সুবহা চলে যেতে বল ওদের! ”
সুবহা তামিমের দিকে তাকায়……
” ওদের চলে যেতে বলুন! আমার মায়ের পোস্টমর্টেম হবে না!”
তামিম ইশারা করে সবাইকে চলে যেতে বলে!
ধীরে ধীরে সুবহার মা-কে ও নিয়ে যাওয়া হয়! তার শেষ যাত্রার কাজ শেষ করতে!
সবাই সুবহাকে ধরে তার রুমে নিয়ে যায়! পুরোটা সময় ধরে আয়েশা বেগম সুবহার পাশেই ছিলো!
সুবহা তখন ও চুপচাপ ছিলো। সারাটা সময় একটি টু শব্দ ও বের হয় না সুবহার মুখ থেকে! আয়েশা বেগম অনেক চেষ্টা করে ও সুবহাকে কিছু খাওয়াতে পারে না! খাটের এক কোনে চুপচাপ বসে থাকে সুবহা!
——রাত ১:৩০ মিনিট———-
সুবহার মায়ের জানাজা শেষে সবাই যে যার মতো চলে যায়! তানভির সরকার ও সরকার বাড়িতে চলে যায় সুবহার বাবাকে শান্তনা দিয়ে। তামিম আর সুবহার বাবা শিকদার বাড়িতে চলে আসে।
বাড়িতে আসতেই সুবহার বাবা ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফাতে বসে পড়ে! তামিম সোজা সুবহার রুমে চলে যায়! আয়েশা বেগম ও উপস্থিত ছিলো।
তামিম আসাতে আয়েশা বেগম বাইরে চলে যায়! এখন তার বাড়ি যাওয়া উচিত! তামিমের পঞ্চ পান্ডব বাঔরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য!
আয়েশা সরকার চলে যাওয়ার পর তামিম সুবহার সামনে এসে দাড়ায়!
তামিম সামনে দাঁড়াতেই সুবহা বসা থেকে উঠে দাড়ায়!
” সুবহা….! ”
ঠাস করে তামিমের গাল বরাবর একটি থাপ্প’ড় লাগিয়ে দেই সুবহা!
” খু’নি….! আমার মায়ের খু’নি…!”
সুবহা খুব জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে করতে তামিমকে মা’রতে থাকে। তামিম ও আটকাইনা সুবহাকে।
” আপনার জন্য আমি আমার মা হারিয়েছি তামিম! ”
সুবহা খাটে বসে খুব শক্ত করে হাত ভর দিয়ে কাঁদতে থাকে।।
তামিম সুবহার পায়ের নিচে বসে।সুবহার পা নিজের হাঁটুতে রাখে!
” দুই বছর আগে একটা মুভি দেখছিলাম! নাম ছিলো এন্যিমেল! হা’লাই পরকীয়া কয়রা বউয়ের পা ধইরা মাফ চায়! ওর একশোটা খু’ন ওর বউ মাফ করে। কিন্তু পরকীয়া না! আমি তো পরকীয়া করি নাই সুবহা! তোকে দুইটা গু’লিই মা’রছি। এটার জন্য কী ক্ষমা করবি না?”
সুবহা তামিমের দিকে হিংস্র বাঘিনীর মতো তাকায়!
” সেখানে তো নিজের বউয়ের মা-কে মে’রে ফেলিনি!”
” আমি মা’রি নাই তোর মা-কে সুবহা!”
” আমাকে গু*লি খেতে দেখেই তো মা হার্ট অ্যাটাক করলো!”
” তুই যদি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো চুপচাপ না থাইকা বলে দিতি বিয়া হয় নাই, তাহলে আর এতো কিছু হয়তো না সুবহা!”
সুবহা উঠে তামিমের মুখ বরাবর দাড়ায়,
” একজন থ্রেট দিয়ে বিয়েতে রাজি করাবেন, আরেকজন থ্রে’ট দিয়ে বিয়ের সত্যি না বলার জন্য পরিবারকে জি’ম্মি করবেন, আর আমাকেই বলছেন মুখ খুলতে! আপনারা কী মানুষ? জানো’য়ারের থেকে ও খারাপ আপনারা! ”
সুবহা দু-হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে।
” এর আগে আমি পাগল হয়ে যায়, আপনি প্লিজ যান তামিম! চলে যান এখান থেকে! ”
তামিম চুপচাপ ভদ্রলোকের মতো চলে যেতে থাকে। পরক্ষণেই আবার সুবহার সামনে দাড়িয়ে তার মাথায় হাত দেই,
” তোরে ছুঁইয়া কসম কাটলাম সুবহা! তোর গা’য়ে আর একটা ফুলের টোকা ও দিবো না! কিন্তু তুই অন্য করো হলে তোকে ছেড়ে ও দিবো না!”
তামিম হনহনিয়ে বেরিয়ে পরে সুবহাদের বাড়ি থেকে। বের হতেই সুবহার বাবার সম্মুখীন হয়! পরক্ষণেই তার নজর পরে সুবহার বাবার শার্টের কলারে।
” আপনার শার্টে র’ক্তের দাগ কীসের?”
” সুবহার মায়ের! ঙ্গান ফিরার পর চিৎকার দেয়, তখনই ওর কান দিয়ে রক্ত বের হয়! আর……!”
বাকি কথা শেষ করার আগেই সুবহার বাবা আবার কান্নায় ভেঙে পরে। সাথে সাথে সুবহা নিজের ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
” আপনি এখন ও যাননি!”
সুবহার কথায় পিছনে ফিরে তাকায় তামিম!
” যাইতাছি! চেতিস না! ”
তামিম সুন্দর মতো বের হয়ে চলে যায়!
তামিম যাওয়ার পর সুবহা তার বাবার কাছে আসে। দুই বাপ বেটি কান্নায় ভেঙে পরে।
” তোর মা চলে গেলো রে সুবহা।”
সুবহা কোনো কথা না বাড়িয়ে শুধু কান্না করতে থাকে।
” বাবা, সৌরভ কোথা”
” তোর মা-কে নিয়ে আসার সময় সৌরভ গা’ড়ির নিচে পড়ে! হসপিটালে ভর্তি! কোমায় চলে গেছে! ”
নিজের ভাইয়ের এমন পরিনতির কথা শুনে সুবহা যেনো পাথর হয়ে যায়! একদিকে তার ভাই! আরেকদিকে তার মা! একই দিনে যে নো পুরো পরিবার টায় শেষ হয়ে গেলো সুবহাদের!
তামিম বাইরে এসে জীপ নিয়ে সোজা পোড়াবাড়িতে চলে যায়! সেখানে তার পঞ্চ পান্ডবরা আগে থেকেই অপক্ষা করেছিলো!
তামিম আসতেই তারা তাকে ঘীরে দাড়ায়,
” ভাই আপনের গালে হাত কেন?”
” বউয়ের হাতে চ’ড় খেয়ে আসছি!”
তামিমের কথা শুনে তার পঞ্চ পান্ডব শুকনো ঢোক গিলে। যেই তামিম সরকারের ভয়ে বাঘে গরুতে এক ঘাটে পানি খায়, সেই তামিম সরকার শেষ মেষ একটি এক রত্নি মেয়ের হাতে চ’ড় খেলো!
” সাকিব…..!”
” এখনই উড়ায় দিতাছি ভাই!”
” কী উড়া’বি?”
” কেন, ভাবি সাপের বাড়ি!”
“শা’লার ভাইরা আমার! সব সময় উড়ানোর জন্য লাফাস কেন?”
” আপনারে মা’রছে ভাই তাই ভাবছিলাম….!”
” বা*ল ভাবছো তুমি আমার! বউয়ের হাতে মাই’র খাওয়া লোক শহীদ হয়! ”
পঞ্চ পান্ডব যে যার মুখের দিকে তাকায়!
” বিয়েতে উপস্থিত সকলে ডিটেইলস আমার চায়! কোন সু”দির ভাই আমার বউরে থ্রে’ট দিছে আমি ও দেখবো!”
———–পরেরদিন————
” বাবা আমি ও সাথে যায়?”
” নাহ! মা! তুই অনেক অসুস্থ্য! তুই বাড়িতে থাক। আমি সৌরভকে দেখতে যাচ্ছি! ”
অনেক জোড়াজুড়ি করে ও কোনো লাভ হয় না! সুবহার বাবা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজিই হয় না!
সুবহার বাবা বের হবে ঠিক এমন সময় দরজায় বেল বেজে উঠে! সুবহার বাবা দরজা খুলে দেই! তারপর সুবহার বাবার সাথে চারজন মানুষ ভেতরে আসে!
তাদের ভেতরে আসতে দেখেই সুবহার চোখ বড় বড় হয়ে যায়!
” আপনি তো…..!”
” সালমান হকের বড় ছেলে, সালাউদ্দিন হক!আকাশ চৌধুরীর মামাতো ভাই! ”
” টিভিতে দেখেছি আপনাকে।”
” সোজা কথায় আসি সুবহা! তোমার মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিলো আমার সাথে তোমার বিয়ে হোক! ”
” মানে?”
” তোমাকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর যখন আন্টির ঙ্গান ফিরে তখন আমি ছিলাম সাথে, উনি বলেছিলো তোমাকে যেনো আমি নিয়ে আসি। আকাশ নেই তো কি হয়েছে! আমি যেনো তোমাকে তামিমের থেকে বাঁচায়!”
সুবহা এক ধ্যানে তার কথা গুলো শুনতে থাকে।
” দেখো সুবহা! আমি জানি তোমার উপরে কী যাচ্ছে! কিন্তু নিজের মায়ের শেষ ইচ্ছে পূর্ন করবে না?”
” কাল আমার মা মা’রা গেছে আর আজকে আপনি…!”
” না করিস না সুবহা!”
বাবার কথায় আকাশ থেকে পড়ে সুবহা! এটা কী আদোও সম্ভব? মা মা’রা গেলো! ভাই কো’মাতে! এখন কীভাবে সুবহা বিয়ে করবে?”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩১
” তোর মায়ের শেষ ইচ্ছে রাখবি না সুবহা?”
চার পাশ থেকে বেশ পেশার পড়ে সুবহার উপরে। এক পর্যায়ে হ্যাঁ বলেই দেই!
তারপর নিজের রুমে চলে যায় সে।
সুবহা রুমে যাওয়ার পর নিচে মোট পাঁচ জন উপস্থিত ছিলো!
” তামিমের চয়েস আছে বলতে হবে। মেয়ে আপনার জলজ্যান্ত পরী!
