এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৫
কাফাতুন নেছা কবিতা
তামিম উপরে তাকিয়ে থাকে!! সাথে সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও তাকায়!
” ভাই আকাশে কী দেখেন!”
তামিম একটি জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে ফেলে!
” মন হয় কোলন, নেই ডাক পিয়ন, উড়ছে চিঠি বেমানে!”
পঞ্চ পান্ডব তামিমের কথার আগা মাথা ও বুঝে না। তারা ও আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে!
” ভাই!”
” বল সাকিব!”
” আমি বিয়া করমু!”
তামিম সহ বাকি পাঁচ জনই অবাক চোখে তাকায় সাকিবের দিকে। বো’মা সাকিব বো’মা না বানিয়ে বর সাজতে চাইছে! বিষটি অষ্টম আশ্চর্যের থেকে কম না!
” মাইয়া কেডা!”
সাকিব খুবই লজ্জা পায়! আর লবঙ্গ লতীকার মতো নেতিয়ে যায়!
” একটা বোরখা পড়া মাইয়া! ”
সাকিবের বোরখা পরা মাইয়ার কথা শুনে কালা মানিক খুব গর্জে উঠে!
” খবরদার বেডা! ওই দক্ষিণ পাড়ার বোরখা পড়া মেয়েটা কিন্তু আমার!”
” তোমার বা*ল! ওই মাইয়া আমারে ভালুবাসে!”
” তোমার পু** ওই ছেমড়ি আমারে ভালোবসে!”
‘” কাললললললা!”
” বোমমমমম’মমমমা”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কালা মানিক আর বো’মা সাকিব খুব মারাত্মক ভাবে লেগে যায়! আর তামিম খুব রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে! তামিমের দিকে তাকিয়ে দু-জনেই চুপ হয়ে যায়!
” কাহিনি কী!”
” ভাই আমি কমু!”
” না ভাই আমি!”
তামিম আবার মুখ গম্ভীর করে তাকায়!
” ভাই আমি কই!”
” বল রফিক!”
” ভাই, ১০-১৫ দিন ধইরা একটা বোরখা পড়া ছেমরি আমাগো আড্ডা দেওয়ার জায়গা দিয়ে যাতায়াত করে। সাকিব্বা আর মানিক্কা দুইটাকে দেখলেই হাসে! আর কেমন কোমর বাঁকাইয়া হাঁটে! ”
” কিন্তু ছেমরি টা কে?”
” ভাই আমরা কেউ মুখ দেখিনাই! নারে মাহির? ওহ তুই তো দেখোসই নাই!”
তামিম একটু চুপচাপ বসে ভাবার চেষ্টা করে, আসলে দোষটা কার!
” ভাই ওই ছেমরি আমারে ভালোবাসে!”
” ইহহহহহহ! বা*ল বাশে! ভাই ওই আমারে ভালোবাসে! আমার থেকে ৪ হাজার টাকা নিছে!”
কালা মানিকের মুখে চার হাজার টাকার শুনে সাকিব খুবই রাগান্বিত হয়!
” মিছা কথা ভাই! আমি ওরে ৬ হাজার টাকা দিছি পরশু দিন! ”
তামিম উঠে দাড়িয়ে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করে!
” হুম! সবই তো বুঝলাম! কিন্তু ওই ভালো কারে বাসে? কারে আই লাভ ইউ বলছে?”
সাকিব এবং মাহির দু-জনেই চুপ থাকে! তামিম ভ্রু কুঁচকে তাকায় তাদের দিকে!
” আছলে ভাই! ওই কখনো কথা কই নাই ছরাছরি! যাইতে আইতে টানাটানা চোখ দিয়ে তাকাও তো! আবার গায়েব হয়ে যাইতো!”
তামিম তারপর কালা মানিকের দিকে তাকায়!
” আমার ও সেম কেস ভাই! যাইতে আইতে তাকায় তো, আর গায়েব হয়ে যাইতো! ওইদিন শুধু একটা কাগজে লিখছি, অনেক বিপদে আছে টাকা লাগলো। তাই দিছি! আমি তো ভাবছি আমারে মহব্বত করে!”
উপস্থিত সকলে ভেবে পায় না! এরা কোন বোরখা পড়া মেয়ের কথা বলছে! কেউ দেখেনি কিন্তু গায়েব হয়ে যাচ্ছে!
” লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! ভাই জ্বীন হইবার পারে!”
টাকলা মফিসের কথা শুনে সাকিব আর মানিক দু-জনেই শুকনো ঢোক গিলে!
” আচ্ছা! সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে আইতো মাহির! মাহির? ”
তামিম মাহিরকে ডাকার সাথে সাথে দেখতে পায় মাহির তাদের থেকে বেশ অনেকটা দূরে চলে যাচ্ছিল!
” কী-রে তুই এতো দূরে কেন?”
” ভাই হা*গু চাপছে!”
” এই সময়?”
মাহির কিছু না বলে চুপচাপ যেতে থাকে! আর তামিমের সন্দেহ হয় তার যাওয়ার উপরে। মাহির যথেষ্ট ফিট। তামিমের সাথে জীমে পড়ে থাকে। তার হেল্থ নিয়ে সহজে কোনো গরবর হয় না!
” ওরে ধরে নিয়ে আয়!”
তামিমের নির্দেশ মতো বাকি চারজন দৌড় লাগায়! আর তাদের দৌড়াতে দেখে মাহির ও খুব জোড়ে দৌড় দেয়! তামিম তখনই বুঝতে পারে কিছু তো একটা রহস্য আছে!
মাহিরকে ধরে সকলে তামিমের সামনে নিয়ে আসে!
” সত্যি কইরা বল! কী করছোস!”
” আসলে ভাই! আমি!”
” সিরিয়ালের নায়কা গো মতো না কইরা বল!”
” ওই বোরখা পড়া ছেমরি ডা, আর কেউ না! আমি নিজেই! ”
তামিম সহ সকলে হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে চোখ বড়সড় করে। আর মাহির কালা মানিক আর সাকিবের দিকে তাকায়!
” হা’লা আমার টাকা দে!”
” কু*ত্তা আমার চার হাজার টাকা দে!”
কালা মানিক আর সাকিব দু-জনেই মাহিরকে আরম ধোলাই দিতে থাকে!
” ভাই বাঁচান! ওরে আল্লাহ রে! ওরে মা-রে! ওরে বাবারে! ”
তামিম কিছু না বলে শুধু চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে!
তারপর তার ঝাড়িতে সবাই ঠান্ডা হয়ে বসে যায়!
” জীবনের প্রথ্থম বার একটা প্রেমের করলাম তাও বেডা!”
” আগে যদি জানতাম এইটা বেডা আক্তার বেডি জীবনে ও প্রেম করতাম না!”
মাহির চুপচাপ বসে তাদের কথা গুলো হজম করতে থাকে! আর ব্যাথা জায়গায় মলম লাগাতে থাকে।
” আমি কী কইছি, আমি তোগোরে ভালোবাসি! তোরাই তো মাইয়া দেখলে কু*ত্তা পাগল হয়ে যাস!”
সাকিব আর মানিক খুব কড়া নজরে তাকায় মাহিরের দিকে!
” মাইয়া দেখলে হই! তোর মতো বেডা দেখলে না!”
” হা’লার ভাই! আমার যৌবনের প্রথম প্রেমে এমনে বরবাদ করে দিলি!”
মাহির মিটমিট করে হাসতে থাকে!
” এখন আবার সাকিব খানের মতো গান গাইস না আমারে নিয়া! প্রতি নিঃশ্বাসে নাম তোমার!”
” তোর বা*ল গাইমু!”
তামিমের পঞ্চ পান্ডব একজন আরেকজনের সাথে লেগে থাকে। আর তাদের ঝগড়া শেষ হয় না! কিন্তু তামিমের আজকে তেমন কোনো সতেজ রুপ দেখা গেলো না! এই শান্ত তামিমকে তারা চিনে না!
কথায় কথায় র’ক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া তামিমের এমন শান্ত চরিত্র বড্ড বেমানান তাদের কাছে!তারা একজন আরেকজনের দিকে ইশারা করে, তামিম এক দৃষ্টিতে নিজের বেলকনির দিকে তাকিয়ে ছিলো। এখন ও লাইট জ্বলছে! হয়তো সুবহা এখনো ও ঘুমাইনি!
তামিম চলে যাওয়ার পর সুবহা চুপচাপ বেডের একসাইটে বসে থাকে। এতো বড় ঘর তার উপরে অপরিচিত! ঘুম যে আসবে না, তা বলায় বাহুল্য!
সুবহা কিছু ক্ষণ পায় চারি ও করে। কিন্তু অশান্ত মন! একদিনে পরিবারের সব শেষ! এতো কিছু সুবহা মানতে পারছে না! সকল কিছুর জন্য সুবহা তামিমকেই মনে মনে দায়ি করে। না তামিম তার জীবনে আসতো আর না এতো কিছু ঘটতো!
কিন্তু সুবহার সব থেকে বড় ভয় হচ্ছে তার ভাইকে নিয়ে! তার ভাইকে সে হারাতে পারবে না! এতো বড় পৃথিবীতে তার ভাই ছাড়া আর কেউ নেই এখন!
সুবহা পায়চারি করতে করতে মনের অজান্তেই বারান্দায় যায়! যদি মনটা ভালো লাগে! তামিমের বারান্দাটা বেশ বড় হওয়ায় এখানে খোলা বাতাসে হাটতে ও তার ভালোলাগবে!
‘~~যখনই ওইরুপ সরণ হয়! লাগে না লোক ও লজ্জার– ভয়! ~~
খুব সুন্দর ছেলে কন্ঠস্বর ভেসে আসে একটু দূর থেকে! সুবহা একদম বেলকনির কিনারাতে চলে যায়! এতো মনোমুগ্ধকর গলা! একবার শুনলেই যে কেউ ফিদা হয়ে যেতে পারে।
সুবহা একদম কিনারাতে যেয়ে দেখতে পায়, তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব বসে আছে! ঘাসের উপরে গোল হয়ে। তামিম মাঝে বসে গান গাইছে!
সুবহা খুব অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে।
এতো মনোমুগ্ধকর গলা তামিমের! অবশ্য ছেলেদের গলায় খাটি বাংলা গান মারাত্মক সুন্দর লাগে। সুবহার খুব ইচ্ছে ছিলো যার সাথে তার বিয়ে হবে সে যেনো তাকে গান গাইয়ে শুনাই! কিন্তু তামিমের সাথে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে হওয়াতে তার সকল ইচ্ছে নষ্ট হয়ে যায়! দাবা পরে মনে!
তামিম গান গাওয়ার এক পর্যায়ে বেলকনিতে তাকায়! আর হঠাৎ তার গান বন্ধ করে দেই! সুবহাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে! তামিম চুপ হওয়ার সাথে সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও তাকায় সেদিকে। কিন্তু সুবহা দেখের সাথে সাথে তারা চোখ নামিয়ে ফেলে। সকল কে কড়া নির্দেশ দেওয়া কেউ যেনো সুবহার দিকে ভুলে ও না তাকায়!
তামিম উঠে বেলকনির নিচে দাঁড়াতেই সুবহার ধ্যান ভাঙ্গে! এতোক্ষণ যে সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তা মনেই ছিলো না! কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলো সুবহা!
” কী বউ? স্বামীকে ছাড়া ভালোলাগে না? আসবো না-কি উপরে?”
‘সুবহা মাথা নেড়ে চুপচাপ ভিতরে চলে যায়! আর তামিম হাসতে থাকে!
” ডরাইছে!”
তামিমের পিছু পিছু তার পঞ্চ পান্ডব ও এসে দাড়ায়!
” ভাবিসাপ মনে হয় আপনেরে মিস করতাছে ভাই! সরমে কইবার পারতাছে না!”
তামিম সাকিবের কথা শুনে একটু অন্য মনস্ক হয়ে পরে। সুবহা তামিমের আশেপাশে থাকলে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না! তামিম নিজে ও মাঝে মাঝে ভেবে কুল পায় না! এই এক রত্তি মেয়ের জন্য এতো পাগল কেন সে!
” ওর লজ্জা ভাঙ্গতে হবে আমার! না-হলে তোরা চাচা ডাক শুনতে পারবি না এই জন্মে! ”
পঞ্চ পান্ডব খুব খুশি হয়ে যায়! আর তামিম চুপচাপ বাড়ির ভেতরে চলে যায়! তামিম মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আজকের রাতটা স্মরণীয় বানাবে!
তামিম চুপচাপ পাসওয়ার্ড দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে! পুরো রুম অন্ধকার! শুধু ড্রীম লাইট জ্বলছে! সুবহা কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে! তামিম সুবহার পাশে যেয়ে দাড়ায়!
” কম্বলের জায়গায় আমাকে ও তো জড়িয়ে ঘু’মাতে পারতো! শয়তান ছেমরি! ”
তামিম চুপচাপ ওয়াশরুম চলে যায়! আর ফ্রেশ হয়ে শুধু মাত্র একটা টাওজার পড়ে বের হয়! তারপর চুপচাপ সুবহার পাশে শুয়ে পড়ে! কিছু ক্ষণ পর কম্বলের ভিতরে ও ঢুকে পড়ে!
সুবহা কতো সুন্দর করে চুপচাপ শুয়ে আছে পাশ ফিরে। আর তামিম তার দিকে হয়ে অন্ধকারেই তাকিয়ে আছে! এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকে তামিম! তারপর হুট করে সুবহার খুব কাছে গিয়ে তার কোমরে শক্ত করে ধরে! আর নিজের সাথে মিশিয়ে নেই! আবার কিছু একটা মনে হতেই সুবহার কোমর ছেড়ে একটু সরে আসে!
” ইয়া আল্লাহ! বউকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করার তৌফিক দান করো! আমিন!”
তামিম নিজেই নিজের মনে কথাগুলো বলতে থাকে। এটা প্রথম বার ছিলো, যখন সুবহা তামিম একসাথে, একখাটে! তামিম জীবনে কখনো কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে নি! কিন্তু যখন পড়লো, তার মনের অজান্তেই খুব করে পড়ে গেলো।
জীবনের প্রথম বার কোনো মেয়ের সাথে শুয়ে আছে তামিম! তাও তার শখের নারী! সুবহা চুপচাপ ঘুমালে ও তামিমের চোখে ঘুম নেই! সে উপরের দিকে সোজা হয়ে শুয়ে থাকে। দৃষ্টি তার সিলিং এর দিকে!
এভাবে,বেশ কিছু ক্ষণ পর তামিম চমকে উঠে! কারণ সুবহা ঘুমের মধ্যে সুবহা তামিমকে কোলবালিশ ভেবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে! তামিমের পায়ের উপরে এক পা! আর শরীরে উপরে হাত দিয়ে শুয়ে থাকে।
তামিম মনে মনে খুব খুশি হয়!
” ইয়া আল্লাহ, আপনি স্বাক্ষী! আমি জোড় করি নাই! ও নিজ থেকে আসছে আমার কাছে!”
তামিম ও সুযোগের সত ব্যবহার খুব ভালোমতোই করে।সে ও সুবহাকে জ’ড়িয়ে ধরে! তারপর তার গা’লে কি’স করে খুব!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৪
সুবহা একটু আড়মোড়া দিয়ে উঠলে ও জাগনা পায় না! রাত ভারি হওয়ায়, ঘুম ও অনেকটায় গভীর ছিলো তার! কিন্তু তামিম থেমে নেই! সে একটু পর পর সুবহার গালে, গলায়, কি’স দিতে থাকে।
” খুব ভালোবাসি সুবহা!”
তামিম আরো শক্ত করে জড়ি’য়ে ধরে সুবহাকে!!
