এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৯

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৯
কাফাতুন নেছা কবিতা

” সে আমারে ভালো বাসে নাই আব্বা! সে আমারে ভালোবাসে নাই! ”
মনের সমস্ত আবেগ বের করে দিয়ে হাসতে হাসতে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো তামিম সরকার! না তামিম সরকার তো কাদে না! সে কাদায়! তামিম সরকারের ডিকশিনারিতে কান্নার কোনো অপশন নেই! আছে শুধু অন্য কে কাঁদানোর অপশন! ব্যাস এইতো তামিম সরকার!
তামিম ফ্লোরে শুয়ে হাসতে হাসতে কথা গুলো বলতে থাকে! তানভীর সরকার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে! নাহ! এটা তো সেই ভয়ংকর তামিম নয়! আজকের তামিম সরকার তো সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ!
তানভীর সরকার ও ছেলের পাশে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে!

” যখন আপনার মা-কে বিয়ে করি, তার বয়স ছিলো ২০! আর আমার ২৯! ”
তামিম হাসি থামিয়ে তার আব্বাজানের দিকে তাকায়!
” প্রায় ১৫০ জনের বেশি লোক নিয়ে যেয়ে আপনার মা-কে তু’লে এনেছিলাম! ”
তামিম একটু অন্য মনস্ক হওয়ার চেষ্টা করে! নিজের বাবার এমন কাহিনি গল্পে শুনতে খুবই ভালো লাগে! কিন্তু সরাসরি শুনলে বিষয়টা অত্যান্ত লজ্জাদায়ক হয়ে যায়!
তানভির সরকার ছেলের হাবভাব দেখে বুঝতে পারে তার মনে একটু হলে ও বিবেক বাকি রয়েছে! তাও লজ্জা এক পাশে রেখে ছেলের সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“বিয়ের পর ও সে আমাকে দেখতে পারতো না! আমি আমার আয়েশার চোখে একটু ভালোবাসা দেখার জন্য ছটফট করতাম! কোনো লাভ হয়নি! কারণ সে কুখ্যাত এমপি পুত্র তানভীর সরকারকে নয়, তার অপকর্ম গুলো ঘৃণা করতো! একদিন বৃষ্টির রাতে আয়েশা বাড়ি ছাড়ে! আমি রীতিমতো তার পায়ে পড়েছিলাম ফিরিয়ে আনার জন্য! সে শর্ত দেয়, হয় ভালো মানুষ হও, না-হয় তা’লাক দাও! ”
তামিম চুপচাপ তার বাবার কথাগুলো শুনতে থাকে! যেমন টা ছোটোবেলায় করতো সে! বাবা গল্প বলতো আর তামিম চুপচাপ শুনতো!

” আমি এক মুহুর্তের মধ্যে সব ছেড়ে দিয়ে তওবা করি! সেদিন ঝড়ের রাতে আমার আয়েশার জন্য অ’স্ত্র ছেড়েছিলাম, আজ ও ধরিনি! যেই তানভীর সরকার ছিলো সকলের ভয়ের কারণ, আজকে সে একজন নীরহ মন্ত্রী! আমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পিছনে ও আপনার আম্মা জানই ছিলো! ”
” আপনি আম্মাকে খুব ভালোবাসেন না আব্বা জান? ”
” খুব! এতোটা যে এখন ও ভয় লাগে, যদি কোনো উল্টো পাল্টা কিছু করি আর সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়! ”
তামিম এবং তানভীর একজন আরেকজনের দিকে বেশ অনেক ক্ষণ তাকিয়ে থাকে! বাপ বেটার মুখে সহজে কোনো কথা আসছে না আজকে! হয়তো কথাগুলো গলায় দলা পাকাচ্ছে। কিন্তু স্বর হয়ে আর বাইরে আসছে না!
” আব্বা, আপনি অ’স্ত্র ছাড়লেন কেন?”
” নিজের ভালোবাসার মানুষকে বাচাঁতে ”
” আপনি অ’স্ত্র ছাড়লেন, আপনার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে, আর আমি অ’স্ত্র ধরলাম আমার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে! ”

তানভির সরকার চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে! তারপর তামিমের মাথায় হাত দেই!
” আমার কাছে আপনার থেকে আপন আর কেউ নাই আব্বা! আপনাকে বাঁচানোর জন্য তামিম সরকার হাজারটা অ’স্ত্র নিয়ে ঘুড়তে পারে!”
তানভীর সরকারের চোখ ছলছল করে উঠে! না সুখে নয়! বরং অত্যান্ত কষ্টে! তার যৌবনকালের পাপ হয়তো ছেলে রুপি ফিরে এসেছে তার কাছে!
” সুবহার জন্য পরিবর্তন হতে পারবেন?”
” আপনার জন্য জীবন দিতে পারবো!”
” ভালোবাসেন তাকে?”
” ভিষণ! ”
” ঘরে যান তামিম! রাত অনেক হলো!”

তামিম উঠে তার বাবাকে ও উঠায়! তারপর দু-জনে হাত ধরে নিচে নামতে থাকে! তানভির সরকারের ঘরের তিনটা ঘর পরেই তামিমের ঘর! এমন অনেক রাত গেছে যখন তানভীর সরকার ছেলের জন্য জেগে জেগে কাটিয়ে দিয়েছে! তানভীর সরকারের সব থেকে বড় আফসোস ১১ বছর আগের সেই ২৭ শে জানুয়ারি! অত্যাধিক বেশি ভালো হওয়া যে জীবনের জন্য ক্ষতিকর সেটা তানভীর সরকার প্রতি সেকেন্ড সেকেন্ড টের পাচ্ছে!
তামিম তার আব্বাকে রুমে দিয়ে নিজে যেতে থাকে!
” শুভ রাত্রি বাবাজান!”
” শুভ রাত্রি আব্বাজান!”

তামিম চুপচাপ ঘরে আসতে থাকে! আর তানভীর সরকার তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে! হঠাৎ তার কাঁধে কারো হাত অনুভব করে তানভীর সরকার! সে বুঝতে পারে এটা কার হাত!
” এখনো ঘুমাননি গিন্নি!”
” আপনাকে ছাড়া ঘুম হয়?”
তানভির সরকার পিছনে ফিরে আয়েশা সরকারকে জড়িয়ে ধরে!
” বুড়ো বয়সে ও ভাব গেলো না আপনার!”
” আপনি দিন দিন এতো সুন্দর হলে, আমার কী করার আছে বলেন?”
” কর্তা! ”
” হুম!”
” আমার পোলারে কী আগের মতো…..!”
” হবে গিন্নি! ভরসা রাখেন!”
রাতের প্রায় শেষের দিকে!

তামিম রুমে প্রবেশ করে! ড্রীম লাইটে বিছানায় সুবহাকে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে! তামিম দরজা লক করে সুবহার পাশে বসে! তার কপালে হাত দেয়, না জ্বর আসেনি! হয়তো এসির জন্য ঠান্ডা লাগছে তার!
তামিম পায়ের নিচ থেকে কম্বল নিয়ে সুবহার গায়ে জড়িয়ে দেই! আর নিজে পাশে শুয়ে পড়ে!
তামিম পাশে শুয়ে পড়তেই চোখ খুলে সুবহা! কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর সুবহা উঠে! তারপর তামিমের পায়ের জুতো জোড়া খুলে ফেলে, ঘড়ি, তার স্বর্নের ব্রেসলেট খুলে সাইটে রেখে দেই! তামিম এবং তার মাঝে কোলবালিশ দিয়ে কম্বলের এক পাশ তামিমের শরীরে উঠিয়ে দেই! তারপর চুপচাপ শুয়ে পড়ে!
সুবহা শুয়ে পড়তেই তামিম চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসে! তারপর মাঝখান থেকে কম্বল সরিয়ে সুবহার কোমর ধরে শুয়ে পড়ে!

” তুই আমার কত কাছে, কিন্তু তোরে ছোয়ার অধিকার নাই আমার!”
সুবহা তামিমের কথা শুনে ও ঘুমানোর ভ্যান ধরে থাকে! একদম নড়াচড়া ও বন্ধ করে দেয়!
বেশ রাত করে ঘুমানোর ফলে তামিম, সুবহার সকালে ঘুম ভাঙ্গতে ও দেরি করে! সকাল প্রায় ১০ টার বেশি বেজে যায়! তামিম, সুবহা তখন ও ঘুমে!
তামিমের ঘুম একটু আলগা হতেই সে দেখে সুবহা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে! যেনো তামিম সরকারই সুবহার কোলবালিশ!

” আমার বুক তোর জন্য খুবই নিরাপদ! ”
তামিম ও না উঠে আবার সুবহাকে ধরে শুয়ে পড়ে!এভাবে প্রায় বেলা ১১ টার কাছাকাছি যখন সুবহার ঘুম ভাঙ্গে! সে ভালো ভাবে চোখ খুলে দেখে তামিম সরকার তার খুব কাছে! সুবহা একটু একটু করে নিজের হাত-পা সরিয়ে আনে তামিমের থেকে! সুবহা যতই হাত-পা সরিয়ে আনতে থাকে, তামিম ততই তাকে আরো কাছে ধরে! রীতিমতো টানাটানি শুরু হয়ে যায় সুবহার হাত-পা নিয়ে! তামিম এক পর্যায়ে খুব বিরক্ত হয়ে যায়!
” নড়ো না সুবহা! তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাছি!”
” আমাকে নিয়ে?”

তামিম হুট করে চোখ খুলে ফেলে!
” না! কিরিম আপাকে নিয়ে! ”
সুবহা রাগে চোখ বন্ধ করে ফেলে। তামিমের সাথে কথা বাড়ির লাভ নেই!
সুবহা উঠে যেয়েই তামিম তার হাত ধরে ফেলে!
” তোমাকে একটা চু’ম্মা দেই? ”
” জ্বী? ”
” থ্যাংকিউ!”
তামিম সুবহার গাল ধরে খুব জোড়ে চু’মু দেই!
” পারমিশন কখন দিলাম!”
” মাত্র দিছো! মুসলমানের এক কথা!”
তামিম উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়! আর সুবহা তাদের ঘর গুছাতে থাকে!
” সুবহা! এই সুবহা!”
তামিম খুব জোড়ে জোড়ে ওয়াশরুম থেকে ডাক ফেলে সুবহাকে! তামিম তো সচারাচর এইভাবে ডাকে না সুবহাকে! সুবহা ভাবে হয়তো কোনো সমস্যা! তাই তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ছুটে যায়!
সুবহা এদিক-ওদিক তাকিয়ে তামিমকে না দেখতে পেয়ে আরো ভেতরে চলে যায়! দেখে তামিম ঝর্ণার নিচে উল্টো দিক হয়ে খা’লি গায়ে দাড়িয়ে আছে!

” জ্বী! ”
” পানি ছেড়ে দাও!”
তামিম পানির নিচে দাড়িয়ে আছে উল্টো দিক হয়ে! অথচ তার পাশেই বাটন আছে! সে নিজে না ছেড়ে সুবহাকে ছাড়তে বলে! পাশে বাথটাব ও পানিতে ভরা! কিন্তু তামিম তো তামিমই! তাকে বুঝা এতো সহজ না!
সুবহা বুঝতে পারে না তামিমের মতিগতি! সে চুপচাপ তামিমের পিছনে দাড়িয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে আসতে থাকে!
সুবহা আসতেই তামিম তার হাত ধরে টেনে নিয়ে দেওয়ালের সাথে চে’পে ধরে!
” ভিজে যাচ….!”
” হুশশশ!”

তামিম সুবহার ঠোঁটে আঙুল রাখে! তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ ও দেয় না! পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যায় তামিম সুবহা! তামিমের দৃষ্টি সুবহার দিকে! সুবহা ও তামিমের দিকে তাকিয়ে থাকে!।। আজকে হয়তো আর শেষ রক্ষা হবে না! ধরা দিতেই হবে তামিমের কাছে!
তামিম সুবহার গা’লে কি’স করতে থাকে! কখনো এ গা’লে তো কখনো ওগালে আবার কপালে ও! তামিম কি’স করতে করতে সুবহার গলায় নেমে যায়! চোখ বন্ধ করে ফেলে সুবহা! তামিম সুবহাকে ঘুরিয়ে তার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে ফেলে! তারপর কাঁধে ও সমান তালে কি’স করতে থাকে!
তারপর সুবহাকে ঘুড়িয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!

” ইচ্ছে করছে, একটা খাঁচায় তোকে বন্দী করে রাখি!”
” আমি তো বন্দীই আছি!”
” এটা তো কিছুই না শখের বউ! যতটা শখ করে তোকে বিয়ে করছি, ততটা শখ করে পুষে রাখবো!”
তামিম সুবহাকে ছেড়ে দিয়ে তার হাতে বডি ওয়াশ ধরিয়ে দেয়!
” চল তাড়াতাড়ি পিঠ ঘসে দে!”
” আমি?”
” বিয়া কয়টা করছি?স্বামীর সেবা কর বেহেশতে যাওয়ার দোয়া দিবো!”
” আপনার দোয়া কবুল হবে?”
” কিছু কইলি ছেমরি?””
” নাহ!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৮

সুবহা চুপচাপ তামিমের পিঠ ঘোসতে থাকে এক রাশ বিরক্ত নিয়ে!
” ঠিক করে ঘস!”
সুবহা রাগে খুব জোড়ে জোড়ে ঘোসতে থাকে!
” আআআ! ছাল তুলে ফেলবি না-কি বেডি!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪০