এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৪
কাফাতুন নেছা কবিতা
একটা ঠান্ডা নীরবতা বয়ে চলে হসপিটালে।তামিম সুবহা স্নায়ু যুদ্ধে নামার মতো প্রস্তুতি নেই! তামিম উদোম শরীরে আছে সেটা দোষের নয়, কিন্তু সুবহা শুধু নাইট সুট পড়ে আছে এটা অনেক দোষের।তামিমের ভাষ্যমতে কেন সে ওড়না নিলো না! আর সুবহার ভাষ্য মতে কেন তামিম টিশার্ট পড়লো না! পারলে একটা সেন্টু গেঞ্জিই পড়তো!
” শোনো বউ! মানুষ দোষ আর পা*ছা কখনো নিজের টা দেখে না! সব সময়ই অন্যের টা দেখে!”
তামিমের লজিক বিহিন কথা যেনো সুবহাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছিলো! সেটা সুবহা ভালোই বুঝতে পারে!।
” তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তো আপনি নিজেই!”
তামিম ভ্রু কুঁচকে সুবহার মুখের দিকে তাকায়! আর মুখ শক্ত করে ফেলে! না ঘরের বউয়ের কাছে হারলে চলবে না! একটা এক রত্নী মেয়ের কাছে তামিম সরকার হেরে যাবে? প্রশ্নই আসে না! তামিম মনে মনে ভাবে এবার এমন কিছু বলতে হবে যেনো পরের কাউন্টারে বলার মতো সুবহার কাছে কিছু না থাকে!
সুবহা চোখ বড় বড় করে তামিমের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার প্রতিত্তোরের জন্য!
” বেডি মানুষ এতো শয়তান!”
তামিম সুবহাকে কাউন্টারে হারানোর জন্য লজিকবিহিন কথা বলবে, সেটা সুবহা জানতো! কিন্তু তাকে যে শয়তান বলবে এটা সে কল্পনা ও করেনি!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিমের কথায় সুবহা এতো রাগ করে,, সে উঠে রিতীমত অন্য দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দেই! তামিম ও বুঝতে পারে বউ যতই ছোটো হোক না কেন, তেজ থাকবেই, বউ জিনিসটাই তেজে ভরা! তাদের উচ্চতা বা বয়স কোনো ম্যাটার করে না, নিজেদের রাগ এবং জেদে এমপি -মন্ত্রীদের ও কোনো খাওয়া থাকে না!
তামিম লক্ষ্য করে সুবহা প্রচন্ড রাগ নিয়ে যাচ্ছে, তার দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না!
” প্রেম শুরু হতেই শেষের পথে!”
তামিম উঠে খুব জোড়ে সুবহার নাম ধরে ডাকে, কিন্তু কোনো সাড়া পাই না! পরক্ষণেই তামিম আবার বসে জোড়ে জোড়ে বলতে থাকে!
” ওই দিকে মরা লাশের আত্মা ঘুড়ে বেড়াইতাছে, যাও একটু কোলাকুলি করে আসো! ‘
থমকে যায় সুবহার কদম! এমতি তে সুবহার ভুতে তেমন একটা ভয় নেই বললেই চলে, কিন্তু এতো রাতে ফাঁকা হসপিটালে না চাইতে ও ভয় লাগছে তার খুব! কিন্তু তামিমের সামনে তো দমে গেলে চলবে না! যেমন জামাই তেমন বউ! ইগোর দিক থেকে কেউ কারো চেয়ে কোনো অংশে কম না!
সুবহা উল্টো পা ফিরে তামিমের দিকে ঘুড়ে আসে৷ আর একদম মুখ বরাবর দাড়ায়!
” আপনার মতো রাক্ষসের সাথে সংসার করে যাচ্ছি, লা’শ আর কী জিনিস!”
তামিম উঠে সোজা সুবহার সামনাসামনি দাঁড়ায়, তামিম সুবহার থেকে একটু লম্বা হওয়ায় সুবহা শুকনো ঢোক গিলে! যদি তাকে তুলে আছাড় মা’রে সে তো মাটিতেই ঢুকে যাবে! কিন্তু তামিমকে তো বুঝতে দেওয়া যাবে না তার ভিতরে কী চলছে!
সুবহা ও বেঞ্চের উপরে দাড়িয়ে পড়ে, আর তামিমের থেকে নিজের উচ্চতা বেশি করতে চায়! কিন্তু বেশি না হয়ে বরাবর উচ্চতা হয়ে যায় তাদের দু-জনের! তামিম সুবহার এমন কান্ড দেখে রিতীমত খুব কষ্ট করে হাসি থামিয়ে রাখে!
” আমাকে বললেই তো কোলে নিতাম! বেঞ্চে উঠার কী দরকার!”
সুবহা ভেবেছিলাো তামিম এমন কিছু বলবে যেটা শুনলে তার রাগে রক্ত টকবক করবে! কিন্তু তামিমের এমন ফ্লান্টিং দেখে সুবহার মুখের নকশা ও পরিবর্তন হয়ে যায়!
” আপনার কোলে কে উঠবে!”
তামিম সুবহার কোমর ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই! আর খুব শক্ত করে ধরে! সুবহা ও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে না! তামিমের গলায় হাত রাখে!
” উঠবা উঠবা! শুধু কোলে না, আরো কত জায়….!”
তামিম পুরো কথা শেষ করার আগেই সুবহা তার মুখ চেপে ধরে! সুবহা তামিমের মুখ ধরার সাথে সাথে তামিম খুব শক্ত করে তার হাতে চু’মু দেই, আর সুবহা ও সাথে সাথে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে ড্রেসে মুছতে থাকে হাত!
” এতো নির্লজ্জ কেন আপনি!”
” একবার ধরা দিয়ে দেখো নির্লজ্জতার শেষ সীমানা থেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে আসবো!”
তামিমের এই লাগামহীন কথার জন্য দমে যায় সুবহা! কিন্তু তামিমের দৃষ্টি দমে না! সে তার চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল সুবহাকে!
সুবহার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হতে চাইছিলো না! ভেতর থেকে পঞ্চ ইন্দ্রিয় যেনো তামিমের ডাকে সাড়া দিতে চাইছিলো!
” এটা হসপিটাল তামিম! ”
” বেড ফাঁকা আছে পরী! ”
একবারে চুপ হয়ে যায় সুবহা! তামিমকে ঘাঁটানো মানে ইজ্জতের ফালুদা করে ফেলা! হসপিটালেই যে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসবে তামিম, সেটা তার হাবভাব দেখলেই বোঝা যায়! তামিম সুবহার মুখ বরাবর নিজের মুখ আনতেই তাদের কানে পরিচিত কন্ঠ ভেসে উঠে!
” বাজান!”
আয়েশা বেগমের ডাক শুনে তামিম সুবহা যে যার মতো আলাদা হয়ে দাড়িয়ে থাকে! তামিম সুবহার কোমর ধরে তাকে নিচে নামায় আর চুল ঠিক করে দেই!
” আমি ঠিক করছি!”
” ছেমরি রোমান্সের ফালুদা করিস না!”
সুবহা আর কী বলবে! তামিম সরকার যে এতো ঠোঁট কাটা সেটা তাকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না! সুবহা ও ভেবেছিলো তাই!
আয়েশা বেগম তাদের কাছে চলে আসে সাথে তানভির সরকার ও!
” জ্বী আম্মা! ”
” আমি এখানে সুবহার কাছে আছি, তুমি আর কর্তা বাড়ি যাও!”
তামিম এবং তানভীর যে যার মুখের দিকে তাকায়!
” গিন্নি, আপনি আর সুবহা মা বাড়ি যান, আমরা দুই বাপ বেটা আছি!”
” আমি থাকি আম্মা! কোনো সমস্যা নাই! আপনে আর আব্বাজান বাড়ি যান!”
আয়েশা বেগম বাপ বেটার দিকে একটু রাগি চোখে তাকায়!
” মানতাছি আমরা সুন্দরী! তাই বলে ২৪ ঘন্টা আঁচল ধরে থাকতে হবে?”
” কিন্তু গিন্নি?”
” কর্তা!”
” জ্বী যাচ্ছি! ”
আয়েশা বেগম রীতিমতো জোড় করে থেকে যায়! তামিম ও থেকে যায়! শুধু তানভীর সরকার বাড়ি চলে যায়! প্রধানমন্ত্রী কোনো হসপিটালে আসবে তাও এতো কম প্রোটেকশন নিয়ে এতে করে তার রিস্ক বেড়ে যায়! তামিম জোড় করে ঠেলে তানভীর সরকারকে বাড়ি পাঠায়!
তানভির সরকার যাওয়ার আগে সুবহাকে অনেক সাহস দিয়ে যায়! একদম নিজের বাবার মতো!
তামিম তার বাবাকে নিয়ে গাড়ি অব্দি দিয়ে আসে।সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও ছিলো!
” সাকিব তোর টিশার্ট খোল!”
সাকিব একটু ভোলা ভালার মতো হয়ে তাকায় তামিমের দিকে! শেষ মেষ তামিম সাকিবের ই’জ্জতে হাত দিলো!
” জলদি খোল বেটা, আমার বউ বকে খালি গায়ে দেখলে!”
সাকিব তাড়াতাড়ি খুলে দেই! আর শুধু একটা গেঙ্জি পড়ে থাকে!
” ভাই তামিম সরকার ও বউরে ভয় পায়?”
তামিম নিঃশ্বাস ফেলে উপরে তাকায়!
” আমার ঘরে আমি মেম্বার, আমার বউ চেম্বারম্যান!”
তামিম চুপচাপ উড়ে উঠে যায়! আর বাকিরা তামিমের কথা শুনে চুপসে যায়!
” আল্লাহ, বাছাইলে এই জনমে আমি বিয়া করমু না!”
” কী সুন্দর মাইয়া রে সাকিব!”
” কই কই?”
বাকি চারজন সাকিবের গায়ে থু ফেলে!
” হা’লাই না-কি বিয়া করতো না, মাইয়া দেখলেই পাগলা কু’ত্তা হয়ে যায়! ”
সুবহা তার ভাইয়ের পাশে বসে থাকে চুপচাপ! আয়েশা বেগম লেডি ডাক্তারের কাছে যায়! সুবহা একা চুপচাপ তার ভাইয়ের কাছে বসে থাকে। এখন সে অনেকটায় স্টেবল! কিন্তু মুভমেন্ট নেই! সুবহা তার ভাইয়ের ক্যানোলা যুক্ত হাতে হাত রাখে!
” আপন বলতে তুই ছাড়া, আর কেউ নেই ভাই! তুই ও কী ছেড়ে চলে যাবি?”
সুবহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার অবচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা ভাইয়ের দিকে!চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে! শব্দ করে কাঁদলে তো ভাইয়ের কষ্ট হবে! তাই সুবহা চুপচাপ শব্দহীন ভাবে কেঁদেই চলছে!।
তখনই সুবহার অনুভব করে তার মাথায় কেউ আদুরে হাত রেখেছে!। সে টলমল পানি নিয়ে তাকায় সেদিকে!
” সিংহের বউ যদি বিলাইয়ের মতো হয় তাহলে তো মুশকিল হয়ে যাবে সকাল!”
সুবহা কিছু না বলে শুধু তামিমের দিকে তাকিয়ে থাকে!
তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে নিয়ে হাঁটতে থাকে! গন্তব্য কোথায় যানা নেই! কিন্তু আজকে তামিম পৃথিবীর শেষ প্রান্তে নিয়ে গেলে ও সুবহা কিছু বলবে না!
লিফ্টে উঠে একদম ১৪ তলার বাটনে ক্লিক করে তামিম! মানে একদম শেষের রুফ টায়! সুবহা ও কিছু না বলে চুপচাপ যেতে থাকে তামিমের সাথে! সারা সময় দু-জনের কেউ কোনো কথা বলে না হাত ও ছাড়ে না!
ছাদের দরজায় দাড়িয়ে সুবহার চোখে হাত দেই তামিম! তারপর তামিম সুবহার পিছনে দাড়িয়ে পড়ে, আর ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে ছাদের মধ্যে সোজা দাড়ায়! কান থেকে চুল সরিয়ে নিজের মুখ সুবহার কান বরাবর নিয়ে যায় তামিম!
” আজকে চাঁদকে তার লেভেল দেখাতে এসেছি! আমার ব্যক্তিগত চাঁদের কাছে তার রুপ কিছুই নয়!’
তামিম সুবহার চোখ ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে আকাশে ইশারা করে।
সুবহার মন জুড়িয়ে যায় সামনে তাকাতেই! মনে হচ্ছে চাঁদটি তাদের খুব নিকটে! হাত দিলেই ধরা যাবে তাকে! সুবহা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চাঁদের দিকে! চাদ বরাবরই সুবহার পছন্দের তালিকায় আছে! কিন্তু সরাসরি কখনো এতো স্পষ্ট ভাবে চাঁদ দেখা হয়নি তার!
” কী চাঁদ হিংসে হয় না-কি? আমার ব্যক্তিগত চাঁদ তোমার থেকে ও সুন্দর! ”
তামিম চাঁদকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলতে থাকে! আর সুবহার মনে শিহরণ জেগে উঠে! তামিম যে একজন খাঁটি প্রেমিক পুরুষ তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই সুবহার!
আধার কালো রাত, ঠান্ডা বাতাস, তার উপরে চাঁদ! পুরোটা যেনো কোনো রোমান্টিক দৃশ্যের শুটিং এর অংশ! আজকে তামিমকে নিজের খুব আপন বলে মনে হচ্ছে তার!
সুবহা তামিমের দিকে ফেরে! এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে! তামিম ও সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে! শুধু তাদের নিঃশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া আর তেমন কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না আজকে!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৩
” তামিম!”
” জ্বী পরী!”
” আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?”
” হ্যাঁ?”
” থ্যাংকিউ!”
সুবহার হঠাৎ আক্রমণে তামিম বোকা বনে যায়! সুবহা তামিমের স্টাইলে তাকে পারমিশন নিয়ে জড়িয়ে ধরে! অথচ তামিম পারমিশন কখন দিলো বুঝলো না!