এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৭

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৭
কাফাতুন নেছা কবিতা

” আজকে অবশেষে সেই রাত, যেই রাতে আমাগো ভাই হালাল হইবো!”
” আমি হালাল হমু কি-না জানি না! কিন্তু তোর দিন শেষ! ”
মাঠে যখন পঞ্চ পান্ডব তামিম আর সুবহাকে নিয়ে খুশগল্পে মেতে ছিলো, ঠিক তখনই তামিম একহাতে জুতা সহ হাজির হয়! তামিমের চোখে মুখে রাগের ছায়া স্পষ্ট!
তামিমকে এতো রাগে দেখে তার পঞ্চ পান্ডব শুকনো ঢোক গিলে! তামিম তেরে আসতেই যে যার মতো দৌড় লাগায়! আগে বাঁচতে হবে তারপর বাকিটা!
” পাঁচ অব্দি গুনবো, এর মধ্যে বাইরে না আসলেই আজকেই তোগো শেষ দিন!”
তামিমের হুংকার শুনে পাঁচ জনই নাদান বাচ্চার মতো মুখ করে সামনে এসে দাড়ায়!

কিছু ক্ষণ পর
” উহহহ! আস্তে ধর জা’ওরা ব্যাডা….!”
” আহহহা! একটু দূরে বো মানিক্কাহ, আমার কান্ধা শেষ! ”
” সরবার পারুম না, টাকলা, আমার তলদেশের অবস্থা খারাপ! ওই পেটলু তুই সর!”
” আমি আর নাই রে… ও মাহির তোর পা’ছা সরা বেডা, পাদ দিলে আমি শেষ! ”
” সবই হয়ছে এই সাকিব্বাহর জন্য! নাইলে এই রাতে আমাগো উপর দিয়া ঝড় তুফান যায়!”
পঞ্চ পান্ডব তামিমের হাতে উত্তমমধ্যম খেয়ে ঘাসে যে যার মতো পড়ে থাকে! কারো চোখ কালো, তো কারো মুখের নকশার অবস্থা শেষ! আবার বাকিদের পিছন সাইটে চলেছে লা’ঠি চার্জ!
পাঁচ জন গার্ডেনের ঘাসে বসে বিলাপ করতে থাকে! আর তামিম মাঝে বসে সিগা’রে ফুঁ দিতে থাকে! দৃষ্টি তার বারান্দায়! যদি তার পরী দেখা দেয়! কিন্তু না তার পরীর দেখা নাই!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” যাহার লাগি বন বেবাগি, সে তো বুঝলো নারে মন!”
” তার না বুঝার লাইগা আমাগো তলদেশ শেষ! ”
তামিম আবার ও রাগি দৃষ্টিতে তাকাই সাকিবের দিকে! তামিম তাকানোর সাথে সাথে সাকিব মাটিতে শুয়ে পড়ে চোখে কালো চশমা দিয়ে!
” পূর্ব পারের মাঠে আমারে মাটি দিস!বিদায় শা’লার ভাই রা!”
সাকিব শুয়ে পড়ার সাথে সাথে বাকিরা ও কালো চশমা পড়ে শুয়ে পড়ে! যদি তামিমের দয়া হয়! আর তাদের উপরে লাঠি চা’র্জ না করে!
তামিম ও চুপচাপ বসে থাকে! কিন্তু তামিমের মনে এখন ও একটু ডাউট থাকে! সুবহা একদিন আগে ও তাকে ঘৃণা করতো, ভয় পেতো হঠাৎ এমন কী হলো সুবহা তাকে এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিলো! নিজ থেকে ধরা দিতে চাইলো! পুরোটাই স্বপ্নের মতো লাগছিলো তামিমের কাছে!
হয়তো, অনেক সাধনায় পাওয়া জিনিস সহজে হাতে চলে আসলে নিজের উপরে বিশ্বাস থাকে না! যেমনটা হচ্ছিল তামিমের সাথে! সুবহার কাছে আসা তার জন্য যেমন আনন্দের ছিলো, তেমনি এতো কাছে আসা ও সন্দেহের কারণ ও ছিলো! যদি তাকে ছেড়ে চলে যায় আবার! যদি ধোঁকা দেয়! তাও এবার তামিম ঠিক করে তার পরীকে সে বিশ্বাস করবে! মন দিয়ে বিশ্বাস করবে!

সকাল বেলা
দেরি করে ঘুমানোর জন্য তামিমের ঘুম ভাঙ্গে সকাল ৯ টায়! সারা রাত সে এবং তার পঞ্চ পান্ডব বাইরে কাটিয়ে দেয়!
তামিমের ঘুম ভাঙ্গতেই সে উপরে উঠে আসে! এতোক্ষণে হয়তো তার পরীর রাগ কিছু টা হলে ও কমেছে!
তামিম উপরে এসে দেখে সুবহা নেই! বিছানা সুন্দর কটে গোছানো! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৯ টা! হয়তো ভাইকে দেখতে গেছে!

তামিম ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে নিচে নেমে পড়ে! নিচে নেমেই দেখে সুবহা তার মায়ের সাথে কিচেনে কাজ করছে!
আয়েশা বেগম খুশগল্পে মেতে উঠেছে সুবহার সাথে! আর তামিমের ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে! তামিম জীম করার জন্য বরাবরই লো ফ্যাট এবং হেল্থি ব্রেকফাস্ট খায়! সুবহা খুব মনোযোগ সহ সেগুলো দেখছে!
আয়েশা বেগম চা নিয়ে গার্ডেনে চলে যায়! তানভীর সরকারকে দিতে! আর সুবহার সাথে ৪-৫ জন কুক থাকে কিচেনে তাকে হেল্প করার জন্য! তামিম আসতেই তারা এক এক করে বাইরে বেরিয়ে যায়!
তামিম এসে সোজা সুবহার পিছনে দাড়ায়! আর তাকে পিছন থেকে জাপ্টে ধরে! অবশ্য তামিম পিছনে দাঁড়াতেই সুবহা বুঝে যায়! কারণ তামিমের পারফিউম ক্লাইফ ক্রিশ্চিয়ান এর ঘ্রাণ সুবহা খুব ভালো মতোই চিনে! ধরতে গেলে দেশে একমাত্র তামিমই এই ব্রান্ডের পারফিউম ব্যবহার করে। প্রধান মন্ত্রীর ছেলের জন্য এটা তেমন বড় কথা ও নয়!
তামিম ধরতেই সুবহা জড়বস্তুর মতো দাড়িয়ে পড়ে!

” গুড মর্নিং মাই প্রিন্সেস!”
” গুড মর্নিং হ্যান্সাম!”
” বলুন আপনার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য কী করতে পারি! হার্ট কেটে থালাতে দিয়ে দেই?”
সুবহা কিছু ক্ষণ চুপচাপ থাকে! তামিম ও সুবহার কাধে মুখ গুঁজে দেই!
” যা বলবো তাই করবেন?”
” আপনার থেকে দূরে থাকা না বলে সব কিছু! ”
” আমার ভাইকে কী বাইরে পাঠানো যায়, চিকিৎসার জন্য! ”
” এটা চাওয়ার মতো কিছু হলো! আচ্ছা নির্বাচনের পরেরই পাঠাচ্ছে! ”
” না! কাল পরশুর মধ্যে! ”
” এতো তাড়া কেন বেগম সাহেবা?”
” আসলে যত তাড়াতাড়ি যাবে, তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে, আর আমি ও একটু নিশ্চিতে থাকবো! প্লিজ তামিম ওকে কাল পরশুর মধ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন!”
” জো হুকুম মাই বেগম!”
তামিম সুবহার গালে কি’স দিয়ে নিজের গাল ঘোষতে থাকে! সুবহা ও কিছু বলে না! আস্তে আস্তে তামিমের হাত উপরে উঠতেই সুবহা হাতে বা’রি দেই!

” বেডি মানুষ এতো শয়তান! রোমান্সের র ও করতে দেয় না!”
” লাখ টাকার খাট কিনে লাভ কী? যদি ডার্ক রোমান্স হিরোদের মতো যেখানে সেখানে শুরু হয়ে যান!”
” চলো রুমে চলো!”
” তামিম…ধৈর্য! ”
তামিম সুবহার হাতে লেগে থাকা এভোকাডো পেস্ট নিজের মুখে ঢুকিয়ে নেই! হঠাৎ হাতের আঙ্গুল তামিম এভাবে মুখে নিবে সেটা সুবহা কল্পনা ও করেনি!
” আই কান্ট ওয়েট সকাল! তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য এক মিনিট ও এক বছরে সমান!”
” আমি কাছেই আছি তামিম!”
তামিম সুবহার গালে কি’স দিয়ে চলে যেতে থাকে! তারপর আবার ফিরে এসে সুবহাকে ঘুরিয়ে তার কোমর জাপ্টে ধরে!

” আমাকে ঠকাইয়ো ও না পরী! খুব ভালোবাসি তোমাকে!”
” ঠকাবো না তামিম!”
” তোমাকে একটা চু’ম্মা দেই? ”
” জ্বী!”
সুবহা গাল পেতে দেই তামিমের দিকে! কিন্তু তামিম তার মুখ ধরে সামনে ঘুড়িয়ে ঠোঁট বরাবর চু’মু দেই!
” থ্যাংক ইউ!”
” শয়তান সরকার!”
” বজ্জাত বেডি!”
তামিম ভালো মানুষের মতো চলে যায়! আর সুবহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার চলে যাওয়ার দিকে!
ব্রেকফাস্ট শেষে তামিম চলে যায় পার্টি অফিসে, আর সুবহা চলে যায় তার ভাইকে দেখতে। সারাদিন ভাইয়ের সাথে থাকবে বলে ঠিক করে সুবহা!
সুবহা এসে তার ভাইয়ের সামনে বসে! তারপর কান্নায় ভেঙে পরে! বেশ অনেক ক্ষণ যাবত চলে সুবহার কান্না! তারপর চোখের পানি মুছে শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার ভাইয়ের দিকে!

সন্ধা ৬ টার দিকে তামিম হসপিটালে আসে সুবহাকে নিতে সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও! তামিম এসেই দেখে সুবহা ছোটো সোফাতো গুটিসুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে! হয়তো সারাদিন ভাইয়ের সেবা করতে করতে অনেক ক্লান্ত সে!
তামিম এসে সুবহার কপালে হাত দেয়! জ্বর এসেছে কী-না চেক করে! না জ্বর আসেনি!
তামিম সুবহার কপাল আর গলায় হাত দিতেই সুবহা চোখ খুলে! অসম্ভব লাল ছিলো তার চোখ! তামিম নে’শা করলে ও হয়তো এতো লাল চোখ তার হয় না! যতটা সুবহার হয়েছে!

” কেঁদেছো কেন পরী!”
” কাদানি তো! ঘুমিয়ে ছিলাম!”
তামিম সুবহার বাহু ধরে তাকে নিজের বিশাল চওড়া বুকে নিয়ে নেই! তারপর মাথায় হাত বুলাতে থাকে!
” মন খারাপ করো না পরী! আমি আছি তো!”
” আমার ফোন লাগবে তামিম! ”
হঠাৎ ফোনের আবদার করে বসে সুবহা! কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ ফোন কেন চাইছে সুবহা বুঝতে পারে না!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৬

” আমার ফোনই ব্যবহার করো!”
” না নিজের ফোন লাগবে! প্লিজ বেইবি!”
” তুমি এইভাবে আবদার করলে তো কলিজা কেটে ও দিতে পারি পরী! ফোন আর কী জিনিস!”
সুবহা তামিমের গা’লে কি’স করে!
” চলো বাড়ি চলো! ”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৮