এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৮

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৮
কাফাতুন নেছা কবিতা

” শোন আমার বউ যদি তোগো সাথে রাগারাগি করে কিছু মনে করিস না! ওর মন খুব ভালো, ফুলের মতো নরম আমার বউ!”
পঞ্চ পান্ডব তামিমকে এর আগে কখনো এতোটা অসহায় দেখিনি! যেই তামিম সরকারের ভয়ে সকলে থরথর করে কাপে, আজকে সেই তামিম সরকার ও ভয় পাচ্ছে?
পঞ্চ পান্ডবের চোখে পানি চলে আসে! তারা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকায়! আর একজন আরেকজনের হাত শক্ত করে ধরে ওয়াদা করে!
” যেই মাদারবোর্ডের জন্য আজকা আমাগো ভাইয়ের চোখে পানি আইছে, আমাগো মায়ের মতো ভাবি-মা এতো কষ্ট সহ্য করছে, আল্লাহর কসম ওগো এক এক টারে নিজের বানানো বো’ম দিয়া না উড়াইলে নিজের নাম সাকিব থাইকা কু’ত্তা রাখমু!”

” আরেহহ! আমার মাথা নষ্ট হইয়া গেলো রে! আমার ভাই ভাবিরে কান্দানো হগ্গলরে ধইরা আমার টাক দিয়ে
মাথা ফা’টামু! ”
” আমার গায়ের রং যতোটা কালা, তার থেকে ও বেশি কালা বুড়িগঙ্গার পানিতে চুবাইয়া মার’মু!”
” ওগো জীন্দা চাবাইয়া খা’ইয়া আমার এই মোটা পেটে সাপ্লাই দিমু!”
” তার আগে আমার মাস্টার প্ল্যান দিয়া ওগোরে যদি না ধরছি, নিজের নাম মাহিরের জায়গায় নেড়ি কু’ত্তা রাখমু!”
পঞ্চ পান্ডব একজনের হাতের উপরে আরেকজনের হাত রেখে ওয়াদা করে! আর চোখের পানি মুখে তামিমের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—-তামিম এসে দেখে সুবহা নিজের মাথা ধরে চুপচাপ বসে আছে! তামিম তাড়াতাড়ি করে সুবহার কাছে চলে যায়!
” কী হয়েছে বাবু!”
” হালকা একটু মাথা ব্যাথা করছে তামিম!”
তামিম উঠে তাড়াতাড়ি করে মেডিসিন নিয়ে সুবহাকে খাইয়ে দেয়! আর বাম দিয়ে সুবহার মাথায় মালিশ করে! সুবহার পিছনে বসে তার পুরো মাথায় আস্তে আস্তে মালিশ করে হালকা করে টিপে ও দেয়!
সুবহা নিজের সমস্ত ভর তামিমের উপরে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে!

” তামিম!”
” জ্বি পরী?’
” আপনি এতো কিউট কেন?”
” বউ তিন বেলা ধরে মা’রে তাই!”
সুবহা তামিমের কথা শুনে খুব জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে! তামিম ও খুশি হয়ে যায় সুবহাকে হাসতে দেখে!
” আর কত ক্ষণ লাগবে বাংলাদেশে যেতে?”
” এই তো আর ৭ ঘন্টার মতো!”
সুবহা হাতে হিসাব করে দেখে মোট ৯ ঘন্টার মতো সময় লাগছে বাংলাদেশে যেতে! কিন্তু প্রাইভেট জেটে ও এতো সময়!

” আপনার প্রাইভেট জেট ভালো না! দুই নাম্বার! ”
” কেন বউ? এ কথা কেন বললা?”
” আমি রিলসে দেখতাম নায়করা , এক ঘন্টার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে চলে আসতো! কিন্তু আপনার জেট তো গেলোই না!”
” হো বউ! রাস্তা তো ওগো বাপে তৈরি করতো তাই এতো তাড়াতাড়ি চলে যেতে! ওগো ঠ্যাং বিশাল বড় ছিলো এক ঠ্যাং দেশে আর আরেক ঠ্যাং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিয়ে রাখতো তাই চলে আসতো!”
তামিমের কথা শুনে সুবহা খুব উচ্চ স্বরে হেসে উঠে!
” আগে আপনাকে দেখলে আমার অনেক ভয় লাগতো জানেন! কতো রাগি, ভয়ে কেউ কথায় বলতে পারতো না! আর এখন!”

” এখন কী পরী!”
” সব থেকে হাসি-খুশি মানুষ লাগে আপনাকে! এতো কিউট! ”
তামিম সুবহাকে নিজের কোলে বসায়! আর শক্ত করে তাকে জাপ্টে ধরে!
” শোনো বউ! দুনিয়ার সামনে বেডা মানুষ সিংহ হলে ও বউয়ের সামনে ভিজে বেড়াল হয়েই থাকে!”
সুবহা ছোটো ছোটো চোখ করে তাকায় তামিমের দিকে! তামিম সুবহার গাল টিপে দেয়!
” আমরা যতই সিংহ হয় না কেন, বউয়ের সামনে আমাদের কোনো ওস্তাদী চলে না! কিন্তু এতে আমাদের ইগোতে ও লাগে না, কারণ জানো, আমাদের এই একটা দিক শুধু বাউরা দেখে! আর কেউ না!”
সুবহা তামিমের গালে চু’মু দেয়! আর নিজে ও গাল পেতে দেয় তামিমের মুখ বরাবর! তামিম সুবহার এমন ছেলে মানুষি দেখে খুব খুশি হয়! অজস্র চু’মু দিতে থাকে সুবহার মুখে!

” আলাবু শয়তান সরকার! ”
” আই লাভ ইউ টু শয়তান ছেমরি! ”
সুবহা তামিমকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে! তামিম চোখ বন্ধ করে ফেলে! আর সুবহার মাথায় হাত বুলাতে থাকে!
কিছু ক্ষণের মধ্যে সুবহা গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়! তামিম আরো কিছু ক্ষণ সুবহা জড়িয়ে ধরে বসে থাকে! যখন পুরোপুরি সুবহার ঘুম আরো গভীর হয়ে যায়, ঠিক তখনই তামিম সুবহাকে শুইয়ে দেয়! আর শরীরে কম্ফোর্টার দিয়ে দেয়!

তামিম সুবহার হাত ধরে নিচে বসে আর এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত সুবহার মুখটি দেখতে থাকে! গা’লে তার দেওয়া থাপ্প’ড়ের দাগগুলো স্পষ্ট! মনে হয় না এতো সহজে যাবে! নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে তামিমের!
” তোরে ছুঁইয়া কথা দিতাছি বউ! যারা তোরে কষ্ট দিছে এক একটার কলি’জা নিজের হাতে বে’র করে কু’ত্তা দিয়ে খাওয়াবো!”
তামিম সুবহার কপালে খুব ডীপলি চু’মু দেয়!
” তামিম সরকার বউয়ের জন্য জা’ন দিতে ও পারে, আবার বউয়ের জন্য জা’ন নিতে ও পারে!”
তামিম লাইট অফ করে বাইরে চলে যায়! তামিম বের হতেই তার পঞ্চ পান্ডব এসে হাজির হয়!

” ভাই!”
” শামসুরে খবর দে মাহির! দেশে ফিরে কয়েকজনকে পরপারের টিকিট ধরিয়ে দিতে হবে!”
” ঠিক আছে ভাই!”
তামিম হাত ভাজ করে দাড়িয়ে পড়ে!
” এমপি তামিম সরকার ভয়ংকর! কিন্তু স্বামী তামিম সরকার ভয়ংকরের তিন কাঠি উপরে!”
পঞ্চ পান্ডব বুঝে যায় তাদের কাজ কী! যে যার মতো কাজে লেগে পরে! প্লেন ল্যান্ড করার আগেই অনলাইনে তারা সমস্ত কিছু গুছিয়ে রাখে!

—–প্রায় ৯:৩০ ঘন্টার জার্নির পর তামিমের প্রাইভেট জেট গন্তব্য স্থানে এসে পৌঁছায়! তামিমের বডিগার্ডরা আগে থেকেই গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ছিলো সেখানে! আর সাথে প্রেস-মিডিয়া তো আছেই! সরকারের ছেলের জীবন যাপন কোনো সিনেমার হিরোর গল্পের থেকে কম নয়! মিডিয়া সব সময়ই চেষ্টা করে তামিমকে কাভার করার! কিন্তু পারে না! তামিম কোথায় যায়, কোনো হুদিস তারা সহজে পায় না! কিন্তু আজকে তারা ঠিক খবর পেয়ে চলে এসেছে!
তামিম সুবহাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তাকে ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে বলে!
তামিম নিজে ও রেডি হয়ে যায়!
তামিম সুবহার হাত ধরে নিচে নেমে সোজা গাড়িতে উঠে বসে! সেখান থেকে এক নাম্বার গেটে চলে যায়!
গেটে আগে থেকেই মিডিয়ার লোকেরা ছিলো!

” তামিম পায়ের হিল খুলে ফেলি!”
” আনকম্ফোর্টেবল লাগছে সকাল?”
” জ্বি!”
তামিম হাটু পেরে বসে সুবহার হিল খুলতে থাকে! আর তাকে নিজের লোফার পড়িয়ে দেয়!
তামিম সুবহার পার্স আর হিল একহাতে ক্যারি করে আরেক হাতে সুবহার হাত ধরে খালি পায়ে সামনে যেতে থাকে! কিছু অপেক্ষা করলেই নতুন জুতো পড়তে পারতো তামিম! কিন্তু সুবহার জন্য সে কাউকে বিরক্ত করে না! কিছু ক্ষণেরই তো ব্যাপার! তামিমের এই দিকটা প্রায় উপস্থিত সকলে কাভার করে! বিশেষ করে তামিমের হাতে সুবহার পার্স আর হিল জুতো, নিজে খালি পায়ে হাঁটা সব কিছু ফোকাস করে দূর থেকে!
সুবহা খুশি মনে হাঁটতে থাকে! বাইর তাদের গাড়িগুলো রাখা! বডিগার্ডদের জন্য মিডিয়ার লোকরা চেয়ে ও তাদের ধারে কাছে ও যেতে পারলো না!।।

তামিম সুবহাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে! উদ্দেশ্য সরকার বাড়ি!
সারারাস্তা সুবহা তামিমের কাঁধে মাথা দিয়ে রাখে! তামিমের পঞ্চ পান্ডব অন্য গাড়ি গুলো দিয়ে তাদের পিছু পিছু আসতে থাকে!
রাত ঠিক ১০ টা নাগাত গাড়ি এসে থামে সরকার বাড়িতে! সরকার বাড়িতে গাড়ি থামতেই সুবহা একটু অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে! সে যে আয়েশা সরকারকে ঠকিয়েছে, তার মুখ বরাবর দাড়ানোর মতো সাহস পায় না সুবহা!
তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে ভরসা দেয়! তামিমের ভরসাতেই সুবহা গাড়ি থেকে নামে!
গাড়ি থেকে নেমে তামিম লক্ষ্য করে সুবহার গলায় তার দেওয়া লাভ বাইট গুলো স্পষ্ট! তামিম তাড়াতাড়ি করল সুবহার গলা ঢাকতে থাকে!

” কী করছেন তামিম?! ”
” তোমার গলায় দাগ দেখলে, আমার আব্বা আমাকে ভুল বুঝবে! ভাববে আমি খারাপ হয়ে গেছি! আসতাগফিরুল্লাহ! ”
তামিমের কথা শুনে সুবহা চোখ বড় বড় করে তাকায় তার দিকে!
” আপনাকে দেখে শয়তান ও কনফিউজড হয়ে যাবে! আপনি থাকতে তাদের কেন বানানো হলো!”
” শয়তান ছেমরি! ”
” খবিস বেডা! ”
সুবহা তামিম মা-রামারির জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিল, ঠিক তখনই আয়েশা সরকার আর তানভীর সরকার বাইরে চলে আসে!
আয়েশা সরকারকে দেখে সুবহার চোখে পানি চলে আসে! লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে! কী বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৭

আয়েশা সরকার এসে সোজা সুবহাকে জড়িয়ে ধরে! সুবহা ও আয়েশা সরকারকে জড়িয়ে ধরে!
” ছেমরি একা একা ঘুরতে গেলি! আমাকে সাথে নিতি! এই বুড়োর সেবা করতে করতে আমি তো শেষ প্রায়!”
আয়েশা সরকারের কথা শুনে উপস্থিত সকলে হেঁসে উঠে! কিন্তু তানভীর সরকার মুখ ভারি করে ফেলে!
” গিন্নি বুড়ো কাকে বললেন?”
” বাড়িতে অনেক আয়না আছে কর্তা! যে-কোনো একটাই যেয়ে নিজের থোবড়া দেখে আসুন!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৯