এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭
কাফাতুন নেছা কবিতা

” তামিমকে আটকানো অনেক মুশকিল হয়ে যাচ্ছে তামিমের বাপ!”
তানভীর সরকার আয়েশা বেগমের কথার কোনো উত্তর দেন না। চুপচাপ বসে থেকে শুধু তার কথা গুলো শুনছিলেন!
” আমি বলি কী তামিমের একটা বিয়ে দাও!”
এইবার তানভীর সরকার একটু নড়েচড়ে বসে!
” গিন্নি আপনার ছেলের মাঝে আমি নিজের যুবক বয়সের ছায়া দেখতে পায়! আপনাকে যেভাবে বাড়ি থেকে তুলে এনে বিবাহ করেছিলাম, দেখবেন আপনার ছেলে ও একদিন সেইম কাজটাই করবে!”
আয়েশা বেগম একটু অন্য মনস্ক হয়ে বলেন…….

” বাপ কা বেটা সিপাহি কা ঘোড়া! কুছ নেতি তো থোড়া থোড়া!”
” কিছু বললেন গিন্নি?”
” না কর্তা! কিছু বলি নাই। বলে লাভ নাই!”
তানভীর সরকার আয়শা বেগমের হাত ধরে বলে
” যেই আয়েশার জন্য আমার মতো লোক সাধারন মানুষে পরিনত হয়েছে তার কথার দাম নেই বলছেন গিন্নি?”
” আমি চাইনা আমার তামিম আপনার যুবক বয়সের রুপ ধারণ করুক কর্তা! আপনি তারে বুঝান।”
আয়েশা বেগমের মনের অবস্থা বুঝতে পারে তানভীর সরকার। একজন মায়ের থেকে বেশি তার সন্তানকে নিয়ে কেউ চিন্তা করে না! তানভীর সরকার উঠে দাড়ায় তামিমের ঘরে যাওয়ার জন্য। না এভাবে সে তামিমকে দ্বিতীয় তানভীর সরকারে পরিনত করতে পারবে না!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তানভীর সরকার এক কাপ কফি নিয়ে তামিমের ঘরে যায় আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খুলে ভিতরে ঢুকে পরেন। তামিম তখন ও এক দৃষ্টিতে স্ক্রিনে সুবহার সেদিনের নাচের ভিডিও দেখছিলো। কে এলো কে গেলো কোনো হেলদোল নেই তার। তানভীর সরকার কফিটা টি-টেবিলে রেখে তামিমের পাশে বসেন আর তার মাথায় হাত দেন। হঠাৎ মাথায় হাত পড়াতে তামিমের ধ্যান ভাঙ্গে সে টিভি অফ করে তানভীর সরকারের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। তানভীর সরকার ও বেশ কিছু ক্ষণ ছেলের মাথায় হাত বুলোতে থাকেন।
” বাবাজান একটা কথা বলি আপনাকে!”
তামিম তার বাবার কোলে মুখ গুজে বলেন…..
” আমাকে কিছু বলার জন্য আপনার কী পারমিশনের দরকার আছে আব্বাজান?”
তানভীর সরকার মুচকি হেসে ছেলের কপালে চু’মু খায়।

” আপনি জানেন আমি এই দুনিয়াতে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি?”
” জ্বী আব্বাজান! আমার আম্মাকে। ”
” আপনাকে ও!”
তামিম চোখ খুলে তার আব্বাজানের দিকে তাকায়।
” বাবাজান আপনি ছাড়া কেউ নেই আমাদের । আমার কলিজার ধন! আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি আর আপনার আম্মা পাগল হয়ে যাবো।”
তামিম উঠে তার আব্বাজানের সামনে বসে আর তানভীর সরকারের হাত ধরে বলে…..
” আব্বাজান ধরেন আপনার চোখ দুইটা অন্ধ হয়ে গেলো, আপনি কী কিছু দেখতে পারবেন? আপনার কী আর বাঁচতে মন চায়বে?”
তানভীর তামিমের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে শুধু তাকিয়ে থাকেন তার দিকে।

” আব্বাজান আপনি হয়লেন আমার সেই চোখ। চোখ ছাড়া মানুষ কেমনে বাঁচে বলেন? আপনাকে যারা মা’রার পরিকল্পনা করবে তাদের ম’রা টা ফরজ হয়ে যায় আব্বা!”
” বাবা, কার ম’রা কখনো ফরজ সেটা মহান আল্লাহ ঠিক করবে। আমরা সাধারণ মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের দ্বারাই অন্য জীবের ক্ষতি হয়।”
” সেই জন্যই আপনার ক্ষতি করা সব লো’ককে আমি পরপারে পাঠায় আব্বা! ”
তানভীর সরকার বুঝতে পারে তার ছেলে তার মতোই হয়ে গেছে। কথায় আছে পাপ বাপকে ও ছাড়ে না। হয়তো সেই জন্যই তার পাপের ফল সরূপ তামিম এখন দ্বিতীয় তানভীর সরকারে পরিনত হয়েছে। তানভীর সরকার ছেলেকে আর কিছু বলে না। এখন তামিমকে কিছু বলা নেহাতই বোকামির কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। তামিম ও আবার তার বাবার কোলে শুয়ে পরে।

” তা বাবা আপনি এতো মনোযোগ দিয়ে কী দেখছিলেন!”
” আমার সর্বনাশ আব্বাজান!”
তানভীর একটু ঘাবড়ে যেয়ে ছেলেকে শক্ত করে ধরেন। যার ফলে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায় তার সর্বনাশ।
” এতো বড় সাহস কার আমার ছেলের সর্বনাশ করবে?”
তামিম খুব জোড়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে……
” এই সর্বনাশ সেই সর্বনাশ নয় আব্বা! কঠিন রোগে ধরেছে আমাকে!”
তানভীর সরকার এবার বুঝতে পারেন তার ছেলে কোন সর্বনাশের কথা বলছে।
তানভীর সরকার আর তামিম সরকারের কথোপকথনের মাঝেই তামিমের ফোনে কল আসে। তার প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরের নাম দেখে ফোনটা ধরে।
” মাদার**চ***! কার এতো বড় সাহস? দাড়া আসতাছি!”
তামিম কল সিরিভ করেই খুব রাগান্বিত হয়ে রুমে থেকে বের হয়ে যায়। মাঝে তানভীর সরকার কী হয়েছে জানতে চায়লে ও সে কিছু বলে না। রাগের মাথায় বের হয়ে যায়। তানভীর সরকার ও বুঝে গেছেন কালকের সকালটা ও তার র’ক্ত দিয়ে শুরু হবে।
তামিমকে নামতে দেখে তার পঞ্চ পান্ডব ও তার সাথে বের হয়ে যায়। কারণ তারা জানে ঠিক হয়েছে। তামিম নামতে নামতে হুংকার দিয়ে বলে…..

” এই মাহির! আমার চাপা*তি টা নিয়ে আয়!”
মানিক দৌড় দিয়ে তামিমের অ’স্ত্র খানা থেকে তার গোল্ডেন চাপা’তিটা নিয়ে আসে। আর তামিমের সাথে খোলা জীপে বসে পড়ে। সবার মাঝেই একপ্রকারের আতঙ্ক বাসা বেঁধে।তামিম যেদিন ক্ষেপে যায় সেদিন তার ভিতরের জানো’য়ারটা জাগ্রত হয়। তাকে থামানো মুশকিল।
তামিম জীপ থেকে নেমেই শহরের দেওয়ালগুলো ভালোমতো দেখেন আর রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলেন। প্রতিটি দেওয়ালে তার আব্বাজানের ছবিতে জু’তোর ছাপ দেওয়া। রিতিমতো কালি দিয়ে জু’তোর পিছনে ভরিয়ে তানভীর সরকারের প্রতিটি পোস্টারে দেওয়া।
পোস্টার গুলো দেখা মাত্র তামিমের ভিতরের জানো’য়ারটা নড়ে উঠে সে খুব জোড়ে ধমক দিয়ে উঠে

” সাকিব!”
” ভাই এখনই উ’ড়াই দিতাছি!”
” না! ওরে ধয়রা রঙ্গমঞ্চ খানায় নিয়ে আয়!”
বো’মা সাকিব আর কা’লা মানিক বের হয়ে যায় কামাল পাটোয়ারিকে আর তার দলের ছেলেদের ধরার জন্য। আর তামিম, মাহির বাকিরা সোজা চলে যায় রঙ্গমঞ্চ খানায়।আজকে আরেকবার আরশি নগরে র’ক্তের বন্যা বয়বে।আজকে আরেকবার আরশি নগর লাল রং এ রঞ্জিত হবে। আজকে আরেকবার আরশি নগরে লা’শের বিছানা পড়বে।
ঠিক ২০ মিনিট পর কামাল পাটোয়ারী আর তার দলের লোকদের ধরে নিয়ে আসা হয়। এসেই তামীমের পায়ের নিচে রাখা হয়। তামীম কালাম পাটোয়ারীকে দেখা মাত্র তার সিগা’রটা ফেলে দিয়ে চা’পাতিটা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে কামাল পাটোয়ারী উপরে।

” কু’ত্তার বাচ্চা! তুই আমার আব্বার পোস্টে জুতা’র কালি লাগাস। তোর পা আজকে আমি ৬ টুক’রো করবো মাদার***! ”
তামিম হিংস্র পশু’র মতো ঝাপিয়ে পড়ে তাদের উপরে।
এক এক করে ১৭ জনকে তামিম পর’পারে পাঠায়।
” ভোর হয়তে আর কতক্ষণ সময় আছে?”
মাহির ঘড়ি দেখে জানায় আড়াই ঘন্টা।
” এই আড়ায় ঘন্টার আগে আমার আব্বার পোস্টর গুলি নতুন করে লাগা। আর সাবিক?”
” ভাই রেডি এখনই উ’ড়ায় দিতাছি!”
তামিমের নির্দেশ মতো লা’শগুলোকে গাড়িতে রেখে বো’মা ব্লা’স্ট করানো হয়। যেনো এইটা নরমাল ঘটনা লাগে।
প্রায় সারারাত ধরে চলে তামিমের হ’ত্যা কান্ড। শেষ প্রহরে তামিম বাড়ি চলে আসে তার পোশাক পরিবর্তন করার জন্য। কারণ আজকে সে তার বিশেষ মানুষের সাথে দেখা করবে। তামিম হাজার হিংস্র হলে ও ইদানীং সুবহার সামনে কেমন শান্ত ছেলের মতো থাকে।

————শিকদারবাড়ি————-
প্রায় সারারাত কেটে যায় সুবহার চিন্তা আর ভয়ে। তামিমকে যেমন গ্রহণ করা তার জন্য কঠিন। ঠিক তেমনই তাকে অস্বীকার করা আরো বেশি কঠিন।এভাবেই রাত পার করে সুবহা।
খুব সকালে সুবহার ঘুম ভাঙ্গে। সে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। মাকে রান্নায় সাহায্য করার জন্য। সুবহার মা ও মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায়। তার এই এক রত্তি মেয়ে কী সুন্দর বড় দের মতো সব গুছিয়ে কাজ করে।
সুবহা মায়ের সাথে সাহায্য করে নাস্তা করে উপরে চলে যায়। রুমে এসে সুবহা দেখে তার ফোনে ১২ টা মিসডকল আর ৬ টা টেক্সট। নাম্বার দেখা মাত্র সুবহার গলা শুকিয়ে যায়। তামিম এতো সকালে তাকে টেক্সট দিয়েছে। সুবহা খুব ভয় পেয়ে যায়। তারপরই টেক্সট দেখে। তামিম ৫ টা এংরি ইমোজি দিয়েছে। তারপর আবার সুবহার ফোনে টেক্সট আসে বারান্দায় আসার জন্য। সুবহা সাথে সাথে বারান্দায় চলে যায়।

তামিম দু-হাত ভাজ করে সুবহার বারান্দায় দিকে তাকিয়ে নিচে দাড়িয়ে আছে। চোখে কালো চশমা থাকলে ও সে যে খুব রেগে আছে এটা বুঝাই যাচ্ছে। সুবহা আসা মাত্র সাকিব একটি কাগজ ছুড়ে মারে সুবহার বারান্দায়। এতো দিন বো’মা মা’রতে মা’রতে তার হাতের সই একদম ঠিক হয়ে গেছে। সোজা নিশানা অনুযায়ী কাগজ যায়।
তামিম সুবহাকে ইশারা করে কাগজটি নেওয়ার জন্য। সুবহা ভয়ে ভয়ে কাগজটি নেই। আর খুলে দেখে।
” ১৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসো! না-হলে আমি উপরে আসবো!”
তামিমের থ্রে’ট শুনে সুবহা শুকনো ঢোক গিলে।কিন্তু সে কীভাবে এতো সকালে বের হবে। সুবহার চিন্তার মাঝেই তার মা চলে আসে তাকে ডাকতে। সুবহা মায়ের গলার আওয়াজ পেয়েই সাথে সাথে রুমে চলে আসে।
” কীরে সুবু! তোর কলেজ থেকে যে আজকে তোদের নতুন কলেজ দেখাতে নিয়ে যাবে বলিসনি তো!”
সুবহা তার মায়ের কথার আগামাথা কিছু বুঝে না। কলেজ তো বো’মা দিয়ে ব্লা’স্ট করা হয়েছিলো তাহলে আজকে কীভাবে নিয়ে যাবে।

” তাড়াতাড়ি রেডি হয় তোদের মরনিং বিভাগের হেড মিস নিচে অপেক্ষা করছে তোর জন্য।”
কলেজের ম্যাডাম তার জন্য অপেক্ষা করছে। সুবহার কাছে পুরো বিষয়টিই কেমন যেনো লাগে। সুবহা কোনো কিছু চিন্তা না করে রেডি হয়ে নিচে চলে যায়।নিচে সুবহার কয়েকজন শিক্ষক আর কিছু শিক্ষার্থী বসে ছিলো। পুরো বিষয়টা এমন যেনো তারা সব শিক্ষার্থীদের বাড়ি যেয়ে যেয়ে তাদের সাথে নিয়ে আসছে। সুবহা তাদের সাথে বেরিয়ে পরে বাইরে।
কিন্তু বাইরে বের হতেই সুবহা দেখে সবাই তামিমের গাড়ির কাছে যাচ্ছে। তামিমকে দেখা মাত্র সুবহার ভয় আরো বেড়ে যায়। সবাই তামিমের গাড়ির একটু কাছে যেয়ে তাকে সালাম দেয়। তামিম সালাম নিয়ে সো’জা সুবহার সামনে দাড়ায় আর তার হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে তার সাথে

” সুবহা সন্ধার আগে বাড়ি ফিরবে না। বাকিটা দেখেন ওর পরিবারকে কীভাবে ম্যানেজ করবেন!”
সুবহার কলেজ টিচাররা মাথা ঝাকিয়ে তামিমকে নিশ্চিত করেন যে তারা বিষয়টা সামনে নিবে।
তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে গাড়িতে বসায়। আর পাশের সিটে নিজে বসে পরে। সুবহা খুব জড়োসড়ো হয়ে তামিমের পাশে বসে। তামিম খুব কমই তার মার্সিডিস এ বসে। সারাদিন খোলা জীপ নিয়েই থাকে। কিন্তু সুবহা সাথে থাকায় তামিম আজকে মার্সিডিজ এ বসে। তামিম বসা মাত্র লক্ষ করে সুবহার হাত কাঁপছে থর থর করে। সে নিজে ও খুব ঘামছে। তামিম সুবহার পাশের সিটে বসে তার হাত ধরে ফেলে।

” এখনো ও তো কাঁপা-কাঁপি মতো কিছু হয়নি। নার্ভাস হচ্ছো কেন?!
সুবহা কিছু বলে না। শুধু মাথা নিচু করে থাকে।
” কাকা! গাড়ি পোড়া বাড়িতে নিয়ে চলেন!”
” জ্বী ছোটো কর্তা!”
তামিমের কথা মতো গাড়ি পোড়া-বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সারারাস্তা তামিম সুবহার ডান হাত ধরে রেখে তার দিকে এক পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আর সুবহা মাথা নিচু করে বসে থাকে। সে না পারছে কিছু বলবে আর না পারছে নিজের হাত ছাড়াতে। হঠাৎ গাড়িতে গান বেজে উঠে,,,,

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬

” kya jaane tuh mere irade! Ley jaanuga sanshe churakey!”
সুবহার ভয় আরো বেড়ে যায়। তামিম শুধু সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” ধরে নাও গানটার প্রতিটি লাইন তোমার জন্য গাওয়া হচ্ছে! ”
তামিমের কথা শুনে সুবহা তার চোখ বন্ধ করে ফেলে। না জানি কী হতে যাচ্ছে তার সাথে।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৮