এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৩
কাফাতুন নেছা কবিতা
” আপনাকে রেহায় দিলে, আমার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে ম্যাডাম!”
খুবই আবেগময় ভঙ্গিতে কথাটি বললো তামিম! তার চোখে ছিলো এক রাশ মুগ্ধতা! সুবহাকে দেখার মুগ্ধতা! তামিমের কথায় তার তীব্র বাসনা ফুটে উঠেছে!
সুবহা তামিমের কথার ভার শুনে তামিমের মনের দুষ্ট চিন্তা সম্পর্কে ধারনা করতে পারে! তামিম না নিজে ঘুমায় আর না সুবহাকে ঘুমাতে দেয়! দিনের বেলা তামিম সুবহাকে জোড় করে ঘুম পাড়ায়! আর সারারাত বিরক্ত করে! সুবহার কোনো বাহানায় কাজে দেয় না তামিমকে আটকানোর জন্য! তামিমের ১৯/২০ এর লজিকের কাছে, সুবহার সমস্ত লজিক হার মানে!
” সত্যি করে বলুন তো আপনার চরিত্রে কী কোনো সমস্যা আছে?”
” তা তো একটু আছে ম্যাডাম, না-হলে আপনাকে দেখলেই আমি চরিত্রহীন হয়ে যায় কেন!”
তামিম যখন সুবহার খুব কাছে আসতে চাই, সুবহা তামিমকে দূরে সরাতে থাকে! আর তামিম ও জোড় করতে থাকে!
” ছেড়ে দে শয়তান, ছেড়ে দে! তুই আমার দে’হ পাবি কিন্তু মন পাবি না!”
সুবহার এমন ফিল্মি ডায়লগ শুনে তামিম হাসতে থাকে! সাথে সুবহা ও!
” মন লাগতো ও না! ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম শক্ত করে সুবহার হাত চেপে ধরে একহাতে! আর আরেক হাতে সুবহার ওড়না মাটিতে ফেলে দিয়ে মুখ গুঁজে দেয় সুবহার উন্মুক্ত গলায়! পরম আদরে ভাসাতে থাকে সুবহাকে! সুবহা ও তামিমের তালে তাল মিলাতে থাকে! আজকে সে ও তামিমের সাথে ভেসে যেতে চাই ভালোবাসার সাগরে! সুবহাকে রেসপন্স করতে দেখে তামিম আরো মুডে চলে আসে! এমনিতেই তামিম সারাক্ষণ ১৯/২০ করার ধান্দায় থাকে! তার উপরে সুবহা তার সাথে তালে তাল মিলাচ্ছে! এ যে মেঘ না চাইতেই জল! তামিম আরো মত্ত হতে থাকে সুবহার মাঝে!
——গভীর রাতে সুবহা চুপচাপ তামিমের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে! তামিম সুবহার হাত বার বার দেখছিলো আর রাগে ফেটে পড়ছিলো! তার বার বার মনে হচ্ছিল কাল নাগিনী দুটোর হাত আরো কয়েক টুক’রো করা উচিত ছিলো! আর এসি’ডের সাথে আরো কিছু বি’ষাক্ত পদার্থ মিশানো উচিত ছিলো!
সুবহা বেশ অনেক ক্ষণ ধরে লক্ষ্য করে তামিমের এই অদ্ভুত আচরণ! রাগে তামিমের চোয়াল যে শক্ত হয়ে আছে সেটা তার মুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে!
” তামিম…?”
” জ্বি পরী!”
” আপনি আমাকে কী দেখে পছন্দ করেছিলেন?”
সুবহার হঠাৎ এমন কথায় তামিমের ধ্যান পুরোপুরি সুবহার দিকে চলে আসে! তামিম সুবহার হাত ছেড়ে দিয়ে তাকে আরো শক্ত করে ধরে মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে আসে!
” তোমাকে দেখার পর আমার বাঁচতে মন চাইছে! তোমার সাথে সারাজীবন থাকার ইচ্ছা জাগছে! আমি কখনোই তোমাকে নিজের প্রেমিকা হিসেবে দেখিনি সকাল!”
সুবহা খুব মনোযোগ সহকারে তামিমের কথা শুনতে থাকে! চোখের পাতা ও যেনো নড়ছে না তার!
” আমি প্রথম দিন থেকেই তোমাকে বউয়ের নজরে দেখছি! আমার বউ! তামিম সরকারের বউ!”
” আই লাভ ইউ তামিম! ”
তামিম কোনো উত্তর না দিয়ে সুবহার ঠোঁটে কি’স করে দেয়! সুবহা ও হেসে ফেলে! সুবহা তামিমের গলা খুব শক্ত করে ধরে!
” আজকে সারাদিন কোথায় ছিলেন? বাসায় ও যে লেট করে আসলেন?”
” তোমার জন্য স্পেশাল জুতা বানাইতে দিছি বউ!”
” জুতো?”
” হ্যাঁ! স্পেশাল চামড়া দিয়ে! খুবই রেয়ার! সহজে পাওয়া যায় না এ চামড়া!”
” আচ্ছা! কীসের চামড়া!”
” কালনাগিনী! ”
” কীহহহহ!”
” তোমার কোনো আইডিয়া নেই আমি কী কী করতে পারি তোমার জন্য! ”
” আচ্ছা! তা শুনি কী কী করতে পারবেন আপনি আমার জন্য!?”
” তেরে ভাস্তে ফালাক হে মে চান্দ লা ইউনগা, সোলা সাতরা সিতারে সাঙ্গ বান্ধ লা ইউনগা! ”
” আপনি চাঁদ থেকে আসতে আসতে আমি আরেক বেডার সাথে ভাইগ্গা যাবো গা!”
” সুবহার বাচ্চচচচচচা”
” জ্বি জাতির জামাই?”
” জাতির জামাই? কে?”
” কেন আপনি! সবাই তো আপনাকে জাতির জামাই হিসেবে দেখে! ”
” তাই না? আর তুই? ”
” শয়তান হিসেবে দেখি!”
” কীহহহ!”
” হ্যাঁ!”
তামিম এবং সুবহা মেতে উঠে খুনসুটিতে ! খানিকটা ছোটো ছেলেমেয়ের মতো!
কিন্তু তামিম সরকার যে তার বউয়ের গায়ে হাত দেওয়ার জন্য, অপরাধীর চামড়া দিয়ে জুতো তৈরি করে তার বউকে গিফট করবে, এটা কল্পনাতে ও কেউ ভাবতেই পারেনি! একেই হয়তো বলে মাস্টারমাইন্ড!
বর্তমান ***********
তামিম ফুলের বুকে নিয়ে তার ফুপির বাড়িতে রওনা দেয়! পথে যাওয়ার সময় সুবহার টেক্সট আসে তামিমের ফোনে!
” ঝড় এসে কারেন্ট নিয়ে যায়, তামিম এসে সুবহাকে নিয়ে যেতে পারে না?”
তামিম সুবহার টেক্সট দেখে খুব কষ্ট করে হাসি থামায়!
” কাছে থাকলে পাত্তা দেও না! দূরে গেলে পীরিত কমে না! শা’লার জিন্দেগী!!! ”
সুবহার তামিমের টেক্সট দেখে হাসিতে গড়াগড়ি খায়! তারপর আবার ও আরেকটা টেক্সট পাঠায়!
” বলেন তো সাত তালা বিল্ডিং! ”
তামিম সুবহার টেক্সটের আগামাথা বুঝে না! সে কেন এটা বলবে? কিন্তু বউ বলেছে, বলতে তো হবেই! তাই তামিম রিপ্লাই দেয়!
” সাত তালা বিল্ডিং! ”
” কু’ত্তা আপনার ডা’র্লিং! ”
” শা’লার জিন্দেগী! ”’
সুবহা অনেক গুলো হাসির ইমোজি পাঠিয়ে দেয়! আর তামিম রাগের! যেখানে ম’রা বাড়িতে সকলে দুঃখ ভরা মন নিয়ে যায়, সেখানে তামিম তার বউয়ের সাথে ফ্লাট করতে করতে যাচ্ছে! অবশ্য মৃ’ত ব্যক্তিদের তো তামিম নিজেই পরপারে পাঠিয়েছে! এতে তার কষ্ট কীসের?
এক এক করে তামিমের সকল গাড়িগুলো তার ফুপির বাড়ির সামনে দাড়ায়! তামিম আর তার পঞ্চ পান্ডব ভিতরে যেতে থাকে!
তানভীর সরকার এবং আয়েশা সরকার আগে থেকেই সেখানে ছিলো, কিন্তু সুবহাকে সাথে নেইনি তারা! সুবহার জন্য এমন পরিবেশে আসা উচিত নয়! তাই তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বাড়িতেই থাকতে বলে! আর তামিম ও সুবহাকে বলে যায়, বাড়িট বাইরে না যেতে!
সুবহা এখন প্রায় সব কিছু যেহেতু ভুলে যাচ্ছে! তার বাড়ি থেকে বের হওয়া ও ঠিক না!
তামিম সোজা তার ফুপির সামনে গিয়ে দাড়ায়! তামিম দাড়াতেই তন্বী বেগম ছুটে এসে তামিমকে ধরে!
” ওরে তামিম রে! এ কী হয়ে গেলো রে! আমার মেয়েটা যে আর নেই রে!”
তন্বী বেগমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তামিম বলে..!
” চিন্তা করবেন না ফুপি! আল্লাহ বোনকে জান্নাত বাসি করুক!”
তামিম তার ফুপিকে সুন্দর মতো শান্তনা দিতে থাকে! তামিমের এতো নিখুঁত অভিনয় দেখে তানভীর সরকার তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে! এসবের পিছনে যে তামিমই আছে এটা তানভীর সরকার খুব ভালোমতোই জানে! তাছাড়া তানভীর সরকার তার যুবক বয়সে আয়েশা সরকারের জন্য যা যা করেছিলো, তামিম ও সুবহার জন্য ঠিক সেগুলোই করছে!
শত্রুকে পরপারে পাঠিয়ে তাদের মৃত্যুর মহফিলে ফুল নিয়ে হাজির হয়ে শান্তনা দেওয়া তো কেউ তামিমের থেকে শিখুক! একদম পাক্কা প্লেয়ার তামিম!
তামিম তার চোখ তানভীর সরকারের দিকে দেয়! তার মুখের অস্বাভাবিক হাসি বলে দিচ্ছে এসব করে সে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা করছে না! তানভীর সরকার ও চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে সব ঠিক আছে!
তামিম একটা ক্রিমিনালী হাসি দিয়ে আবার ও বেরিয়ে পরে! সাথে আয়েশা সরকারকে ও নেয়! গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে! তামিমের দৃষ্টি খুবই কড়া! তামিম আরো ভয়ানক শা’স্তি দিতে চেয়েছিলো সুবহার দোষীদের! কিন্তু হলো না!
” একজন আমার হাত ধরছিলো ভার্সিটির মাঠে! তোর বাপ তার হাত কা’ইট্টা আমার বাড়ির সামনে রাখছিলো গিফট হিসেবে! ”
আয়েশা সরকারের কথা শুনে তামিম তার দিকে তাকায়! আয়েশা হাত মেলে তামিমকে নিজের কাছে ডাকে! যেমনটা ছোটোবেলা ডাকতো! তামিম জড়িয়ে ধরে তার আম্মাজানকে! আয়েশা তামিমের মাথায় হাত বুলাতে থাকে!
” বাপ! তুই আমার কলিজার টুকরা! আর তোর কলিজা ও আমার কলিজার টুকরা! চিন্তা করিস না! মায়ের কাছে সন্তান কখনো খু’নি হয় না!”
” আম্মা জান! তারে আমি খুব ভালোবাসি! এতো ছোটো বয়স থেকে মেয়েটা শুধু হারিয়েই এসেছে! প্রথমে বাপ, তারপর মা, এখন ভাই! তার উপরে আমি তো আছিই! নিজের হাতে তারে ৪৫ টা থাপ্প’ড় দিছিলাম আম্মা! কত কষ্ট পাইছে সে! আগু’নে হাটাই ছিলাম! আল্লাহই জানে কতটা কষ্ট পাইছিলো! আম্মা আমি এতো অমানুষ কীভাবে হইলাম?”
আয়েশা সরকার চোখ বন্ধ করে ফেলে! তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে!
” জানেন আম্মা! যখন তার শরীরে ৯ টা ইনজে’কশনের দাগ দেখি ভিতরটা ভয়ে শেষ হয়ে গেছিলো! ভোর রাতে হসপিটালে নিয়ে যায় আর দোয়া করতে থাকি, আমার অবর্তমানে তার সাথে যেনো খারাপ কিছু না হয়ে থাকে! কিন্তু মন শক্ত করে রাখি! সে ততটাই পবিত্র, যতটা আগে ছিলো! আমার কাছে সে সব সময় পবিত্র! ”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭২
” সুবহা মা, কিছু বলেছে তার সাথে কী হয়েছিলো?”
” না আম্মা! আমি জানতে ও চাই নাই! সে নিজ থেকে না বলা অব্দি, আমি জানতে চাইবো না!”
” বাপ! আমরা মেয়েরা যদি পাশে স্বামীকে পায়, পুরো দুনিয়া উল্টাইয়া গেলে ও আমাদের কিছু যায় আসে না!”