এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৭

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৭
কাফাতুন নেছা কবিতা

” ছিঃ অশ্লীল মাইয়া! ”
অশ্লীল বলায় সুবহা খানিকটা রেগে যায়! আর হাতের কাছে থাকা শাক_সবজি তামিমের শরীরে ছুড়ে মা’রতে থাকে! তামিম ও কম কিসে?
সুবহার চুল ধরে তার পিঠে মা’রতে যায়, সুবহা ও তামিমের মাথার চুল ধরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে!
একজন আরেকজনের মাথার চুল এমন ভাবে ধরে ৫-৬ বছরের বাচ্চারা ও তাদের সামনে কিছুই না! দেখে মনে হবে সরকার বাড়িতে দু’টো ঝগড়াটে বাচ্চার উদয় হয়েছে!

তাদের মারামারির শব্দ এবং একজন আরেক জনকে বকাবকি করার প্রতিটি বাক্য বাইরে স্পষ্ট শোনা যায়!
মারামারির একপর্যায়ে দু_জনেই দরজার সামনে তাকাতেই,, দাড়িয়ে থাকা আয়েশা সরকারকে দেখে চুপসে যায়! আয়েশা সরকার রাগে ফুলতে থাকে তাদের এই কান্ড দেখে!
” ঠিক কীসের বা’রি দিলে তোরা মানুষ হবি বলতো?”
সুবহা বেচারির মতো মুখ করে আয়েশা সরকারের কাছে চলে যায়!
” আমার কোনো দোষ নেই মা! শয়তান সরকার আমাকে আগে মেরেছে! ”
” ডাহা মিথ্যা কথ্যা আম্মা! কিছু কইলেই মা’রে! ”
আয়েশা সরকার সুবহার দিকে তাকায়! সুবহা সাথে সাথে বেচারি হওয়ার মতো তার মুখের এক্সপ্রেশন করে! তারপর আয়েশা সরকার তামিমের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আমার ভোলাভালা অসহায় ছেমরির গায়ে তুই হাত তুলছোস তামিম? সাহস তো কম না!”
” আম্মা আমি..! ”
” আর একটা ও কথা না! বদজাত তানভীরের ছেলে আর কেমন হবে! বাপের মতোই তো হবে!”
আয়েশা সরকারের কথা শেষ করার আগেই পিছন থেকে হালকা কাশির শব্দ ভেসে আসে!! তামিম ও চুপ হয়ে যায়! সুবহার ও মুখের নকশা বদলে যায়!!
কারণ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তানভীর সরকার আয়েশা সরকারের পিছনে, যাকে তিনি একটু আগে বদজাত উপাধি দিলেন!
কাশির আওয়াজ শুনে আয়েশা সরকার পিছনে তাকায়!
” আপনে তো মানুষ ভালো না কর্তা! লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শুনেন!”
ছেলে এবং ছেলের বউয়ের সামনে নিজের ইজ্জতের ফালুদা হতে দেখে তানভীর সরকার একটু আয়েশা সরকারের দিকে চোখ রাঙ্গানি দেয়!

” আমি আপনার স্বামী আয়েশা! আমাকে সম্মান করা উচিত আপনার!”
” সম্মান আপনে এই জনমে পাইবেন না কর্তা! আমার আব্বার ৭ টা গরু মরছে আপনার জন্য! ”
” কিন্তু পরে তো ১৪ টা গরু পাঠিয়ে ছিলাম গিন্নি!”
” তাতে কী? আমাগো খানদানি বংশের গরু ছিলো ওইগুলা! আপনাদের মতো কুজাত বংশের না!”
” এখন কী সারাজীবন ওই ৭ টা গরুর খোঁটা দিবেন গিন্নি?”
” ম’রার আগ অব্দি! এখন সাইটে দাঁড়ান! ”
আয়েশা সরকার সুবহার হাত ধরে তাকে সাথে করে নিয়ে যায়! আর কিচেনে শুধু তামিম এবং তানভীর সরকারই থাকে!

তামিমের হাতে ঝাড়ু দেখে তানভীর সরকার সার্ভেন্টদের ডাকে! পুরো কিচেন পরিষ্কার করার জন্য!
তানভীর সরকার ছেলেকে নিয়ে রুমে চলে যায়! আর তয়লা দিয়ে তামিমের গায়ে লেগে থাকা ময়লা গুলো পরিষ্কার করতে থাকে! আর প্রায় অনেক দিন পর তামিম এবং তার বাবা একসাথে আছে!
” আব্বাজান! আপনি কী আমার উপরে নারাজ?”
তানভীর সরকার কিছু ক্ষণ তামিমের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে!
” আপনার উপরে আমি নারাজ থাকতে পারি না বাবাজান!সম্ভব না!”
তামিম আর কোনো কথা না বলে তানভীর সরকারের কোলে মাথা রাখে!
” ভালোবাসার মানুষকে নিজের দূর্বলতা নয় তামিম! শক্তি হিসেবে দেখুন!”
” আমি ভয় পায় আব্বা! ভিষণ ভয় পায়!”
” কেন ভয় পান?”

” আমার অর্বতমানে তার সাথে কী হয়েছে সেটা ভাবলে আব্বা! তাকে জিজ্ঞেস করার মতো সাহস আমার নেই! সে আমার কাছে সব সময় পবিত্র! কিন্তু তার কষ্ট গুলো? সেগুলোর কথা ভাবলে রাতে ঘুম হয় না আব্বা!”
তানভীর সরকার ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পারে! সুইজারল্যান্ডে সুবহার সাথে ঠিক কী হয়েছিলো সেটা এখন ও জানে না তামিম! তার শরীরে ৭ টা কীসের ইনেজকশন এটা এখন ও পরীক্ষা করে জানতে পারেনি তামিম! রোগ সম্পর্কে জানতে পারলে ও ইনজেকশন সম্পর্কে কিছু জানতে পারেনি তামিম! কারণ পরীক্ষা করালে সুবহা সবটা জেনে যাবে!
হয়তো এমন কিছু আছে যেটা সুবহা জানাতে চায় না! তামিম ও নিজ থেকে কিছু জানতে চাই না! কেনই বা জানতে চাইবে তামিম?

” সুইজারল্যান্ডের আমার সাথে খুব অত্যাচার হতো তামিম!”
সুবহার কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই তড়িৎ গতিতে দরজার দিকে তাকায় তামিম এবং তানভীর সরকার! সুবহা এবং আয়েশা সরকার দাড়িয়ে আছে! তামিম উঠে দাঁড়ায়! কিন্তু তার হাঁটু প্রচন্ড নড়বড় করছিলো! ঠিক এই ভয়টাই তামিম পাচ্ছিলো!
তামিম সব সহ্য করতে পারলে ও সুবহার কষ্ট সহ্য করতে পারে না! তারপর ও তামিম শক্তিশালী পুরুষ গনের মতো উঠে দাড়ায়! তার পরী যেহেতু নিজ থেকে সব বলছে, সে শুনবে সবটা!
” প্রতিরাতে নি’র্যাতন করা হতো! কখনো ফুপি মারতো, তো কখনো রিক! ”
সুবহা জামার হাতা উঠিয়ে লাল চিহ্ন গুলো দেখিয়ে বলে,

” মাঝে মাঝে স্ত্রী দিয়ে হাতে সেক দিতো, তো কখনো কখনো গরম পানি ঢেলে দিতো! ”
সুবহার বলা প্রতিটি কথা তামিমের বুকে কাচের সুচের মতো বিধলো! চোখে পানি টলমল করতে থাকে তামিমের! পাশে থাকা আয়েশা সরকার নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না! তাও শক্ত হয়ে সুবহার সাথে! এখন ভেঙে পড়লে তো হবে না!! সুবহার মন পরিষ্কার করাটা জরুরি! তাকে বলতে দিতেই হবে!
” যেদিন পালিয়ে সুইজারল্যান্ড গেলাম তার কিছু দিন পর থেকেই শুরু হলো অত্যাচার! দলিলে সাইন করানোর জন্য! যতবার না করতাম ততবার হতো অত্যাচার! সব সময় ভাবতাম সকাল হলেই থানায় যাবো! কিন্তু সকাল হতেই আমার আর কিছু মনে থাকতো না! সব কিছু স্বাভাবিক লাগতো! কিছু দিন পর আবার ও একই রকম অত্যাচার! কিন্তু সকালে উঠেই সব ভুলে যেতাম! আপনার সাথে দেখা হওয়ার সময় ও আমার কিছু মনে ছিলো না! শুধু মনে ছিলো আপনি আমার ভাইকে মা’রতে চেয়েছিলেন! যেদিন আপনি আমাকে খুঁজে বের করলেন তার আগের দিন ও রিক…! ”

পুরো কথাটি শেষ করার আগেই সুবহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ে! চোখ দিয়ে টলমলিয়ে পানি গড়িয়ে পরে! তামিম এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুবহাকে!
” তুই আমার কাছে ফুলের মতো পবিত্র সুবহা! তোর মধ্যে কোনো দাগ নেই! ”
সুবহা তামিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে!
” সেদিন বার বার মনে হচ্ছিল যদি আপনি থাকতেন! অনেক কষ্টে নিজেকে বাঁচিয়ে ছিলাম, ভেবেছিলাম সকাল হলেই পালাবো, কিন্তু তারপর আর রাতের কথা কিছু মনে ছিলো না! যদি আপনি তারপরের দিন না আসতেন, তাহলে হয়তো আমি ও অন্য মেয়েদের মতো…!”
” চুপপপপ! তুই পবিত্র! আল্লাহ আমাকে বানাইছে তোকে রক্ষা করার জন্য! আমি থাকতে তোর চুল ও কেউ ধরতে পারবে না!”
সুবহা প্রচন্ড কান্নায় ভেঙে পড়ে! তামিম নিজের অজান্তেই তার রক্ষক হিসেবে এসেছিলো! তাকে বাচিয়ে ছিলো এতো বড় বিপদ থেকে!

” একটা অনুরোধ রাখবি সকাল?”
”’ কীহহ?”
” আজকের পর থেকে তুই আর কাঁদবি না! প্রমিজ কর!”
” প্রমিজ!”
” তিন সত্যি! ”
” তিন সত্যি! ”
” মনে রাখিস মুসলমানের এক কথা!”
সুবহা হালকা হেসে উঠে! সাথে তানভীর সরকার আর আয়েশা সরকার ও!
” তামিম! আপনি কী আমাকে ছেড়ে দিবেন? আমি তো পাগল না!”
তামিম সুবহাকে ছেড়ে দু হাত দিয়ে তার চোখের পানি মুছে ফেলে!

” এই ভুত তোর মাথায় কে ঢুকাইছে?”
” বড় আন্টি বললো যে! আপনি আমার সাথে আর থাকবেন না! আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি তাই!”
তামিম নিজের চোয়াল শক্ত করে ফেলে! বড় ফুপির কপালে যে কী আছে সেটা তামিম নিজে ও জানে না! তার বউকে পাগল বলা?
” ধরতে গেলে ৮০% মানুষই নিজের রাগের উপরে কন্ট্রোল করতে পারে না, তাহলে কী সবাই পাগল?”
সুবহা মাথা নেড়ে না বোঝায়!
” তুই তো ট্রিটমেন্ট নিলেই সুস্থ হয়ে যাবি, কিন্তু যারা সত্যি সত্যি পাগল হবে, তাদের কী হবে?”
সুবহা তামিমের কথার মাথা মুন্ড কিছু বুঝতে পারে না!কিন্তু তামিম ঠিকই বুঝতে পারে আজকে আরো একজনের কপালে শনি আছে!

” ছেমরি, আমার পোলা তোর জন্য পাগল কিন্তু! ওরে কান্দাস না!”
সুবহা আয়েশা সরকারের কথা শুনে হেসে উঠে! তামিম সুবহার চুল ঠিক করে দেয়! তারপর আয়েশা সরকার সুবহাকে নিজের সাথে নিয়ে যায় তার রুমে! আর তানভীর সরকার তামিমের সাথেই থাকে!
সুবহা যেতেই তামিমের কাঁধে হাত রাখে তানভীর সরকার!
তামিম কোনো কথা না বলে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে তার আব্বাজানকে!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৬

” আব্বা, আপনার পাওয়ার লাগবে আমার এখন! ”
” আমার সব কিছুই আপনার বাবা জান!”
” সুইজারল্যান্ড থেকে রাজ স্বাক্ষী করে ওই কু’ত্তার বংশ ধররে নিয়ে আসেন আব্বা! ”
” তিন দিনের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে বাবাজান! কিন্তু এখন আপনার কাজ ভিন্ন! ”
তামিম তানভীর সরকারের দিকে তাকায়! আর কী কাজ আছে যেটা তামিম করেনি?

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here