এমপি তামিম সরকার পর্ব ৮
কাফাতুন নেছা কবিতা
ভয় আর ভালোবাসা কখনোই একসাথে থাকতে পারে না। যাকে ভয় পাওয়া যায়, তাকে ভালোবাসা যায় না!ঠিক যেমনটা হয়েছিলো সুবহার সাথে। ঙ্গান হওয়ার বয়স থেকে যার নাম শুনতে ভয় লাগতো, যার নামের সাথে শত র’ক্তের গল্প জড়িত, যার নাম শুনলেই ৮-৮০ সকলে ভয় পায় তাকে কীভাবে ভালোবাসবে সুবহা?
———-পোড়াবাড়ি———–
পোড়া বাড়ি হলো তামিমের র’ক্ত পাতের সূচনার স্থান। যেখান থেকে জন্ম হয় এক রক্ত পিপা’সু লোকের সূচনা। যার না আছে ভয় আর না আছে মনুষ্যত্ব। কিন্তু এই ভয়হীন মানুষটার মনে আজকে প্রেমের দক্ষিণা বাতাস বহমান। তামিম সরকারের মতো হ্রদয়হীন লোক ও যে কারো প্রেমে পড়তে পারে এটাই ছিলো আরশি নগরের সব থেকে আশ্চর্যের বিষয়।
তামিম সারা রাস্তা সুবহার হাত ধরে থাকে। আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।সুবহা ও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। না পারছে তামিমের হাত থেকে নিজের হাতটি ছাড়াতে আর না পারছে নিজের মুখ আড়াল করে বসে থাকতে।
গাড়িতে হঠাৎ ব্রেক পরায় তামিমের ধ্যান সরে যায় সুবহার থেকে।
” কী কাকা! এতো সুন্দর দৃশ্য দেখাতে বাঁধা দিচ্ছো কেন?”
” আগ্গে কর্তা চলে এসেছি!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম সুবহার থেকে নজর সরিয়ে বাইরে নজর দেয়। তামিমের গাড়ি আসার সাথে সাথে তার লোকজন গোল হয়ে দাড়ায় গাড়ির চারপাশে। আর তামিমের দরজা খুলে দেয়।
দরজা খুলতেই তামিম নেমে পড়ে। তামিম নামার সাথে সাথে আরেকজন সুবহার দরজা খুলতে যায়।
” খবরদার! She is my lady! চোখ নামা!”
তামিমের কথা মতো সবাই জড়ো হয়ে দাড়িয়ে নিজের মাথা নিচু করে রাখে। আর তামিম অপর পাশে যেয়ে সুবহার গাড়ির ডোর খুলে দেয়।
তামিমকে ডোর খুলতে দেখে তার পঞ্চপান্ডবের চোখ কপালে উঠে যায়।তামিম সরকার ও যে কারো জন্য এভাবে কাজ করবে সেটা একদমই অবিশ্বাস্য।সাথে সাথে তারা চোখ নামিয়ে নেই।
তামিম ডোর খুলে হাত বাড়ায় সুবহার দিকে। সুবহা প্রথমে আমতা আমতা করলে ও তামিমের চোখ রাঙানো দেখে সাথে সাথে তার হাত ধরে ফেলে।আর গাড়ি থেকে নেমে পরে।
তামিম সুবহাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তার হাত ধরেই সামনের দিকে যেতে থাকে। সুবহা ও তামিমের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। তাদের সাথে তামিমের পঞ্চপান্ড ও পিছু নেই। একটু দূরে যেতেই তামিম দাড়িয়ে পরে আর পিছনে ফিরে।
” শা’লার ভাইরা! ভাই-ভাবির রোমান্স দেখতে যাচ্ছো সাথে? ভাগ এখান থেকে!”
তামিমের ধমক পড়ার সাথে সাথে সবাই যে যার মতো দৌড় দেই! আর তামিম ও সুবহাকে নিয়ে একদম পোড়াবাড়ির মাঝে চলে আসে।
তামিম সুবহাকে মাঝে দাড় করায় আর সুবহার দুই হাত ধরে। সুবহা তখন ও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে। তামিম সুবহাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সুবহা অনুভব করে কিছু একটা পড়ে তার কাঁধ ভিজে যাচ্ছে। সুবহা সাথে সাথে তার কাঁধের দিকে তাকায় আর আঁতকে উঠে। সুবহা ভয় নিয়ে তামিমের দিকে তাকায়। তামিম তখন ও স্টেচুর মতো দাড়িয়ে আছে সুবহার দিকে তাকিয়ে। ভয়ে আর আতঙ্কে সুবহা নিজের ঙ্গান হারিয়ে তামিমের বুকে ঢোলে পরে। আর তামিম তার শক্ত বাহু দিয়ে সুবহাকে ধরে রাখে। সাথে সাথে তার পঙ্গ পান্ডব হাজির হয়। তাদের মুখে ও ভয়ের আভাস পাওয়া যায়।
” ভাই……!”
” ইসসসস! কোনো কথা না!”
তামিম এক ঝাটকা দিয়ে তার ধরে থাকা চাপা’তিটা ফেলে দেয়। আর সুবহার উড়নার এক সাইট ছিড়ে হাতে পেচিয়ে নেই। সুবহাকে আধকোলা করে গাড়িতে বসিয়ে রেখে ডোর লক করে দেয়। আর খুব হিংস্রতা নিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে থাকে।
” মাহির! চাতা’পি দে!”
তামিমের হুংকারের সাথে সাথে মাহির তাকে চাপা’তি দিয়ে দেয়। আর তামিম তা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। তামীম সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বো’মা সাকিব বাইক নিয়ে চলে আসে আর তামিম তাতে উঠে পরে।
———কিছু ক্ষণ আগে——————-
তামিম সুবহার দুই হাত ধরে তার মনের কোথা বলতে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই একটি উড়ন্ত পাচা’তি সুবহার কাঁধ বরাবর আসে আর সাথে সাথে তামিম তা এক হাত দিয়ে ধরে ফেলে। চাপা’তির গতি একটু বেশি হওয়ায় তামিমের হাত বেশ অনেকটা ক্ষত হয়ে যায় আর সুবহার কাঁধ ভিজে যায় র”ক্তে। এমন দৃশ্য দেখে সুবহা নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।নেতিয়ে পড়ে তামিমের বক্ষে।
—————বর্তমান———
তামিম চাপা’তি হাতে নিয়ে বাইকে চড়ে দু’জন লোককে তাড়া করে। লোক দুটোর দৌড়ানোর গতি বেশ জোরে। কিন্তু যান্ত্রিক মেশিনের কাছে তাদের গতি কিছুই নয়। তাই খুব সহজেই ধরা পরে যায় তারা।
সাকিব চলন্ত বাইক থেকে নেমে পড়ে।আর তামিম ফুল স্পিড দিয়ে সেই লোক দুটোকে ধরে ফেলে।
লোক দুটোর কাছে যেতেই তামিম বাইক তাদের চারপাশে ঘুরানো শুরু করে। আর অপর হাতে থাকা চা-পাতি দিয়ে তাদের মা’রতে শুরু করে। কোনো কিছু বলার সুযোগ দেয় না তামিম। হিংস্র বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়ে তাদের উপরে। দু-জন লোকের র’ক্তে রাস্তাটা প্রায় লাল হয়ে ভরে যায়। কিছু ক্ষণ পর তামিমের পঞ্চপান্ডব চলে আসে।
” সাকিব!”
” ভাই এখনই উড়া’ইতাছি!”
” মানিক?”
” ভাই সব ক্লিয়ার করতাছি!”
তামিম তার চাপা’তিটা নিজের পাঞ্জাবিতে মুছে মাহিরের হাতে দিয়ে দেয়। আর সিগা’রে টান দিতে দিতে পোড়া বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
তামিম পোড়া বাড়িতে এসেই গাড়ির কাছে চলে যায়। আর ডোর খুলে দেখে সুবহা তখন ও অঙ্গান হয়ে আছে। তামিম সুবহাকে কোলে নিয়ে পোড়াবাড়ির ভিতরে চলে যায়। আর সুবহাকে নিজের কোলে বসিয়ে তার গালে কয়েকবার টোকা দেয়। কিন্তু সুবহা উঠে না।
” এই কাকা! ”
” আগ্গে কর্তা! ”
” পানি নিয়ে আসেন তো!”
ড্রাইভার পানির বোতল এনে তামিমের হাতে দেয়।আর তামিমের ইশারাতে চলে যায়।
তামিম সুন্দর মতো একটু পানি নিয়ে সুবহার মুখে ছিটে ফুটা দেয়। পানি দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে সুবহা ধীরে ধীরে চোখ খুলে। চোখ খোলার সাথে সাথে সুবহা তামিমের মুখটি দেখতে পাই! আর ভয়ে তাড়াতাড়ি করে উঠতে যায়। কিন্তু তামিম তাকে খুব শক্ত করে ধরে ফেলে। সুবহা ভালোমতো লক্ষ করে সে তামিমের কোলে। তামিম কোনো কথা না বলে সুবহাকে জড়িয়ে ধরে। আর তার গায়ে লেগে থাকা র’ক্ত গুলো সুবহার শরীরে লেগে যায়। তামিম এতো জোরে সুবহাকে ধরে যে, সুবহার নিঃশ্বাস নিতে ও কষ্ট হয়। কিছু ক্ষণ পর তামিম সুবহাকে ছেড়ে তার গালে লেগে যাওয়া র’ক্ত গুলো মুছতে থাকে। তামিম সুবহার মুখ পরিষ্কার করতে করতে বলে!
” এতো শুকনা হাড্ডি কেন তুমি?”
সুবহা হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে কী বলবে কিছু ভেবে পায় না!
” জ্বী? ”
” এতো চিকনা কেন তুমি? ওজন বলতে কিছু নাই। বাপ-মা খাইতে দেয় না?”
সুবহা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বলে…..
” জ্বী দেই”
” বা**ল দেই! খেয়েদেয়ে ওজন বাড়াবা। শুকনা মাইয়া আমার পছন্দ না!”
সুবহা শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি জানায়। তামিম সুবহাকে নামায় তার কোল থেকে আর সে ও উঠে দাড়ায়।
” এই কাকা!”
তামিমের ডাক শুনে ড্রাইভার তাড়াতাড়ি চলে আসে।
” জ্বী ছোটো কর্তা!”
” ওরে বাড়ি দিয়া আসেন!”
” জ্বী!”
তামিমের নিদর্শন মতো ড্রাইভার সুবহাকে নিয়ে যেতে থাকে। আর তামিম তাকিয়ে থাকে সুবহার যাওয়ার দিকে। সুবহা একটু দূরে যেতেই তামিম খুব জোড়ে সুবহার নাম ধরে ডাক দেয়।
” এই সকাল!”
তামিমের ডাক শুনে সুবহা থমকে যায়। আর দাড়িয়ে পরে সেখানে। তামিম দৌড় দিয়ে সুবহার কাছে চলপ চলে আসে আর তার মুখ বরাবর দাড়ায়।
” তোমারে একটু জড়ায় ধরি?”
” জ্বী?”
” থ্যাংকিউ!”
তামিম থ্যাংকিউ দিয়েই সুবহাকে জড়িয়ে ধরে। আর সুবহা হতভম্বের মতো দাড়িয়ে থাকে। সে তামিমকে ধরার জন্য সম্মতি দেয়নি। কিন্তু তামিম সুবহার জ্বীকে সম্মতি ভেবে তাকে জড়িয়ে ধরে। কিছু ক্ষণ পর তামিম সুবহাকে ছেড়ে দেয়।
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭
” যাও বাড়ি যাও!”
সুবহা মাথা হেলিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।আর তামিম সুবহার গাড়ির দরজা লাগিয়ে তাকে বিদায় দেয়। সুবহাট গাড়ি না যাওয়া অব্ধি তামিম তাকিয়ে থাকে।
” সর্বনাশ হয়ে গেছে আমার! ফেসে গেছি আমি!”
