এমপি তামিম সরকার পর্ব ৯
কাফাতুন নেছা কবিতা
” সর্বনাশ হয়ে গেছে আমার! ফেঁসে গেছি আমি!”
তামিম খুব জোড়ে জোড়ে নিজেই নিজেকে কথা গুলো বলতে থাকে। আর সাথে সাথে তার পঞ্চপাণ্ডব এসে হাজির হয়!
” কেঠা করলো আপনার সর্বনাশ ভাই! আমারে কন খালি!”
তামিম কালা মানিকের কথা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় আর তার পাশে থাকা টাকলা মফিসের হাত ধরে টান দিয়ে তার টাক মাথা চু’মু খায়।
” এই টাকলায় আমার সর্বনাশ করছে। ধর ওরে!”
তামিমের কথা শুনে বাকি চারজন টাকলা মফিসের উপরে ঝাপিয়ে পরে। আর যে যার মতো কি’ল ঘু’সি মারতে থাকে। অন্য দিকে তামিম তখন ও সুবহাকে জড়িয়ে ধরার মুহুর্ত ভুলতে পারে না।
” আল্লাহরে! মা-রে! বাবা-রে ওরা আমার সর্বসো লুইটা নিলো। ভাই বাঁচান আমারে। ও-ভাই।”
টাকলা মফিসের চিৎকার শুনে তামিমের টনক নড়ে। সে পিছনে ফিরে দেখে আসলেই মফিসকে ধরে বাকিরা রাম কেলানি দিচ্ছে।
” শা’লার ভাইরা থাম! আমার টাকলার টাক ফাটায় তাছোস কেন?”
তামিমের কথা শুনে বো’মা সাকিব প্রতিবাদ করে উঠে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” না ভাই! ওই আপনার সর্বনাশ করছে। ওরে ছারুম না!”
” হো ভাই! আজকা ওরে সানডে মানডে ক্লোজ করুম!”
কালা মানিক আর বো’মা সাকিবের কথা শুনে তামিম নিজের মাথায় নিজেই হাত দেই।
” ওর মতো টাকলা আমার কী সর্বনাশ করবো! ছাড় ওরে।”
তামিমের কথা মতো সবাই টাকলা মফিসকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে মফিসের অবস্থা শেষ প্রায়। মফিসের গেঞ্জি ছেড়া, জুতো ছেড়া আর মুখের আকৃতির প্রায় বারোটা বাজিয়ে দেয় তারা। মফিস ধীরে ধীরে তার ছেড়া জুতো টা হাতে নেই। আর সামনে থাকা চারজনের দিকে তাকায়। আবেগে যে তারা মফিসের ১২ টা বাজিয়ে ছেড়েছে সেটা এতোক্ষণে বুঝে গেছে তারা। যে যার মুখের দিকে তাকায়। মফিস নিজের জুতোর দিকে তাকিয়ে বাকিদের দিকে তাকায়।আর খুব জোড়ে গা’লি দিয়ে তাদের ধাওয়া করে। আর বাকিরা যে যার মতো পোড়াবাড়ির আশেপাশে লুকিয়ে পরে। কারণ টাকলা মফিস আজকে তার টাক দিয়েই বাকিদের শেষ করবে বলে নিয়ত করে ফেলে। আর তামিম তাদের এই দৃশ্য দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
” কপাল করে ৫ টা সঙ্গী পায়ছি। ৫ টায় ৫ প্রকারের পাগল!”
তাদের দৌড়াদৌড়ি এভাবে চলতেই থাকে যতক্ষণ না তামিমের ঝাড়ি পরে। তামিম খুব জোড়ে ধমক দেওয়ার সাথে সাথে সবাই যে যার মতো করে দাড়িয়ে পরে। আর তামিম আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। পায়ের কাছে মোটা লাঠি পরে থাকতে দেখে তামিম তা হাতে নিয়ে নেই। আর তাদের তাড়া করতে থাকে।
” ভাই খেপছে রে! পালারে শা’লার ভাইয়েরা!”
মাহিরের চিৎকার শোনে বাকিরা যে যার অবস্থান থেকে লুকিয়ে পরে। এভাবেই সারা বিকেল পার হয় তাদের।
—-খন্দকার বাড়ি————-
সারা রাস্তা সুবহা খুব ভয়ে ভয়ে আসে। তার কাধে এখনো মানুষের র’ক্ত লেগে আছে। আর সারা শরীরে তামিমের। সুবহা খুবই নম্র-ভদ্র হওয়ায় কখনো কোনো ছেলের সাথে মেলামেশা করেনি সে। পড়াশোনা ছাড়া কখনও বাড়ির বাইরে ও বের হতো না সুবহা।কিন্তু আজকে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরলো। তার বয়সি মেয়েরা যেখানে এতো এডভান্স সেখানে সুবহা নিজেকে রেখেছে অতী সাধারন। প্রতিটি মেয়ের মতো সুবহা ও তার বিয়ে নিয়ে, জীবন সঙ্গী নিয়ে অন্য রকম চিন্তা করতো। বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় সব সময় সুবহা বলতো খুব ভালো একজন মানুষের সাথে তার বিয়ে হবে। অতী সাধারন একজন মানুষ তার জীবন সঙ্গী হবে। কিন্তু কে জানতো তামিমের মতো এমন রগচটা মানুষের পাল্লায় পড়বে সুবহা।
বাড়ির সদর দরজায় দাড়িয়ে সুবহা খুব আতঙ্কে থাকে। যদি তার মা জানতে চায় কী বললে তাকে। কোথায় থেকে আসলো এতো র’ক্ত তার শরীরে।সুবহার চিন্তার মাঝেই তার মা দরজা খুলে দেয়।
” কী-রে! বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেন?”
” এমনি মা!”
” আয় জলদি। ”
সুবহা মায়ের সাথে ভিতরে ঢুকে পরে।। আর মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে যেন তার মা কিছু জানতে না পারে।
” মেয়েটা এখন কেমন আছে রে সুবু?”
” কোন মেয়ে মা?”
” আরে যার এক্সিডেন্ট হলো তুই যাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে গেছিলি।”
সুবহা তার মায়ের কথার মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে পারে না। শুধু বুঝার চেষ্টা করে ঠিক কী বলতে চাচ্ছে তার মা!
” দেখেছিস কতো রক্ত লেগে আছে গায়ে। মেয়েটা কী অনেক ব্যথা পেয়েছে?”
সুবহা তার মায়ের কথা এবার বুঝতে পারে। কিন্তু তার মাকে এই ঘটনা কে সাজিয়ে বললো? সুবহার চিন্তার অবসন ঘটিয়ে তার মা জানায়, তাদের বাংলা মিস জানিয়েছে কল দিয়ে। আর কালকে নতুন কলেজে নিয়ে এডমিশন করাবে সেটা ও বলেছে। সুবহার আর বুঝতে বাকি থাকে না এগুলো কার কাজ।সুবহা তার মায়ের সাথে কথা বলেই রুমে চলে যায়। আর লম্বা সাওয়ার নেই। সুবহা তার চুল মুছতে মুছতে ফোনে টেক্সট আসার শব্দ পায়। চুল মুছতে মুছতে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তামিমের টেক্সট। সুবহা খুব দ্বিধা নিয়ে টেক্সটটা অপেন করে।
” সাজবে আমার জন্যে, তাছাড়া নয়!”
সুবহা তামিমের টেক্সটের আগামাথা কিছু বুঝতে পারে না।বিছানায় ছুড়ে মারে ফোনটা।
পোড়াবাড়ির দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তামিম সরকার। একটা হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে রেখেছে, আর অন্য হাতে ধরে রাখা সিগা’রের ধোঁয়া ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। তামিম আজকে আর তার মধ্যে নেই। আটকা পরে গেছে এক রমণীর মায়ায়।
” এই ২৮ বছরের জীবনে কোনো নারীকে স্পর্শ না করা আমি কীভাবে একটা ১৯ বছরের মেয়ের মায়ায় আটকালাম বলতো!”
তামিমের আবেগী কথা শুনে তার পঞ্চপান্ডবের মুখে হাসি চলে আসে। অবশেষে তামিম সরকারের মতো বদমেজাজি লোক ও কারো মায়ায় আটকালো।
” ছবই প্রেরেম ভাই! বহুত খারাপ জিনিস! যারে ধরে ত্যানা ত্যানা কয়রা ছাড়ে।”
মানিকের কথা শুনে তামিমের মুড নষ্ট হয়ে যায়।
” শা’লা মুডটায় নষ্ট করে দিলি।! ”
তামিমের কথার মাঝেই মাহির বলে সরকার বাড়ি থেকে কল এসেছিলো তামিমকে যেতে বলেছে তানভীর সরকার।
মাহিরের কথা শুনে তামিম আর বাকিরা রওনা দেই বাড়ির উদ্দেশ্যে। তামিম তার খোলা জীপ নিয়ে রওনা দেই। আর বাকিরা বাইক দিয়ে তার পিছু পিছু আসে।
সরকাবাড়ি
আজকে সরকার বাড়িতে যেনো চাঁদের হাট বসেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গন এসেছে আজকে সরকার বাড়িতে। ভোটে তানভীর সরকারের জিতে আরেকবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ প্রায় ৯৭% শতাংশ। সে-সুবাদে প্রায়ই নেতারা এসে ভির করে। কিন্তু আজকের এই মিটিং একটু অন্য রকম ও বটে। তামীম সরকারের বিয়ের কথা হচ্ছে আজকে।
” স্যার, আমি বলি কী তামিম বাবা আসলেই তার সাথে একবার কথা বলুন!”
” দেখুন পানি মন্ত্রী! তামিম কাকে বিয়ে করবে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।আমি কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছি না!”
” তাও স্যার! মেয়েটা জীদ ধরেছে তামীম বাবাকেই বিয়ে করবে!”
” কে- কাকে বিয়ে করছে মন্ত্রী? ”
তামিম অন্দরমহলে ঢোকার সাথে সাথে কেমন যেনো একটা নীরবতা শুরু হয়ে যায় সেখানে। তামিমকে ভয় পায় না এমন লোক খুব কমই আছে।
” আসলে, বাবা আপনার বিয়ের কথা বলছিলাম! ”
” তাই না-কি। যতদূর জানি আমি তো এটিম না। বাপ আছে আমার এখনো। আপনার চিন্তা করতে হবে না!”
তানভীর সরকার মুখে একটু হাসি নিয়ে তামিমের কাছে যায়।
” বাবাজান, এবার কিন্তু আপনার বিয়ে টা করা উচিত।!”
” আপনার ছেলের বউ এখনো অনেক ছোটো আব্বা! আমাকে সামলানোর ক্ষমতা তার নেই। ইন্টার পরীক্ষা শেষ হোক তার। তারপর তুলে আনবো নে।!”
তামিমের কথা শুনে উপস্থিত সকলে একটু চমৎকে যায়। শেষমেশ তানভীর সরকারের ছেলে একটি ইন্টার পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে! যদিও সকলের মধ্যে একটু আলোচনা শুরু হয়,কিন্তু তামিম সরকারের ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলবে এমন সাহস কারো নেই।
তামিম কথা গুলো বলেই উপরে চলে যায়। আর দরজা লক করে দেয়।
লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে তামিম এসে সোজা তার বেডে বসে পরে। আর নিজের ফোন বের করে সুবহার ছবি দেখে।
” আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে তুমি আরামে ঘুমাবা তা-তো হবে না সকাল।”
তামিম কিছু ক্ষণ চিন্তা করে তার লোকদের ফোন দেয়!
” তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা কর, আমার ঘুম আসতাছে না!”
তারপর তামিম রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে। সাথে তার লোকরা ও থাকে। কিছু ক্ষণ পর গাড়ি থামে সুবহাদের বাড়ির সামনে।তামিম নামা মাত্রই সুবহাদের বাড়িওয়ালা তার কাছে চলে আসে। আর থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে চাবি তার হাতে দেয়।
” মাহির!”
” ভাই?”
” দে!”
” জ্বী ভাই!”
তামিমের নির্দেশনা মতো সুবহাদের বাড়িওয়ালাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেই মাহির। কারণ সুবহাদের বাড়ির ডুবলিকেট চাবি তাকে এনে দেয় সে। যেটা দিয়ে দরজা খুলে তামিম সুবহার কাছে যাবে। তাই খুশি হয়ে তামিম তাকে পুরস্কার দেয়।
” মানিক?”
” ভাই! আমি এখনই যায়তাছি!”
তামিমের কথামতো মানিক আগে বাড়ির ভিতরে ঢুকে আর সবাইকে ক্লোরোফম দিয়ে অঙ্গান করে ফেলে। সুবহাকে ছাড়া।
” ভাই একটা কথা কই?”
” বল! ”
” আপনি চাইলেই তো যেকোনো বাড়ির ভিতরে যায়তে পারেন। বাঁধা দেওয়ার মতো কারো সাহস নাই। তাহলে এই গোপনীয়তা?”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৮
মাহিরের কথা শুনে তামিম উপরে তাকায় আর আসমানের দিকে ইশারা করে বলে….
” আমি চাইতাছি না সে ভয় পাক। তার পরিবার তাকে কোনো প্রেশার দিক। “”
তামিম কথাগুলো বলেই ভিতরে ঢুকে পরে আর বাকিরা যে যার মতো গাড়িতেই শরীর এলিয়ে দেয়।
তামিম বাড়ির ভিতরে ঢুকে সোজা সুবহার রুমে চলে যায়। আর তার মাথার কাছে যেয়ে বসে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুবহার দিকে। আজকে যেনো তামিমের পরীকে রাতপরীর থেকে কম লাগছে না!
” এই রাত পরী?”
তামিম এভাবে বেশ কয়েকবার সুবহাকে ডাকে।কিন্তু রাত বেশি হওয়ায় বেশ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে সুবহা।
