এমপি তামিম সরকার শেষ পর্ব
কাফাতুন নেছা কবিতা
ঘড়ির কাটা বলছে সময় তখন ৪ টা ০২ মিনিট! আস্তে আস্তে পৃথিবী তার অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে ফিরে আসছে! সূর্য টা ও এখন ও পুরোপুরি উদয় হয়নি! কিছুটা দেখা যাচ্ছে!
একটি শীতল আবহাওয়া চলছে পৃথিবী জুড়ে!
তামিম মনোযোগ সহকারে ড্রাইভ করছে, পাশের সিটে সুবহা বসা! তার জানা নেই তামিম তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! থেকে থেকে সুবহা আড়চোখে বার বার তাকাচ্ছে তামিমের দিকে! একটু মন খারাপ ও হচ্ছে বটে! আজ তার জন্মদিন ছিলো, কিন্তু তামিম তাকে ঠিক রাত ১২ টাই ইউস করলো না! অবশ্য মধ্যরাত অব্দি তো তারা একে অপরের সঙ্গে মেতে ছিলো! উষ্ণ ছোয়া আদান প্রদান করতে ব্যস্ত ছিলো! এতোটাই মগ্ন ছিলো একজন আরেক জনের প্রতি সময়ের খেয়াল নেই বললেই চলে!
সুবহা ভেবেছিলো হয়-তো তামিম তাকে ঠিক ১২ টায় রোমান্টিক ফিল্মের হিরোদের মতো ইউস করবে! কিন্তু শেষ পরীক্ষার দিন যা হলো, তামিমের মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক!
সুবহা নিজের মনকে বুঝিয়ে ফেলে, স্বামী তার মহাব্যস্ত! জন্মদিন ভুলতে পারে! কিন্তু তাকে ভালোবাসতে ভুলতে পারে না!
বেশ কিছু ক্ষণ পর আরশিনগরে একদম শেষ ভাগে, যেখানে পাহাড় আর মাটি মিশে গেছে একে অপরের সাথে ঠিক তার উঁচু চূড়াতে গাড়ি থামায় তামিম! সূর্যটা পুরোপুরি উঠবে উঠবে তখন!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” বাইরে এসো সকাল!”
তামিম উইন্ড খুলে সুবহার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়! একটা মুচকি হাসি দিয়ে সুবহা তামিমের হাত ধরে বাইরে আসে! সুবহা বাইরে আসার সাথে সাথে তামিম সুবহার চোখ জোড়া নিজের হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে!
” কী হলো তামিম?”
তামিম সুবহার কানে নিজের মুখ এনে ওষ্ঠ যুগল ছুঁয়ে দেয় সুবহার কানের লতিতে! হালকা কম্পিত হয় সুবহার শরীর!
” তোমাকে একটা নতুন সকাল গিফট করবো সকাল!”
তামিম সুবহার চোখ ধরে একদম উঁচু চূড়ার মাঝ বরাবর দাড় করায়!
” আস্তে আস্তে চোখ খুলবে সকাল! একদম আস্তে!”
তামিম সুবহার চোখ হতে তার হাত জোড়া সরাতেই সুবহা আস্তে আস্তে চোখ খোলা শুরু করে! ঠিক যেমন ভাবে তামিম বলে ছিলো!
চোখ খুলতেই সুবহা এক অন্য জগৎ এ হারিয়ে যায়! কী মনোহর দৃশ্য! সূর্য সবে মাত্র পুরোপুরি উদয় হলো, চারপাশটা এখনো অন্ধকার আচ্ছন্ন! পুরোপুরি দৃশ্য মান হয়নি কিছু! তার মধ্যে পাহাড়ের উঁচু চূড়ার মাঝে দাঁড়িয়ে সুবহা সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখছে! আল্লাহ যেন সমস্ত প্রাকৃতিক সুন্দর্য আজকে সুবহাকে দেখার তৌফিক দিলো!
খুব অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে সুবহা সামনে! হঠাৎ করে তামিম তার পিছনে দাড়ায়! আর একহাত সুবহার মেদ হীন পেট বরাবর রেখে আরেক হাত পাখির খাঁচা সমেত সামনে ধরে ! সুবহা জিজ্ঞেসাবোধ দৃষ্টিতে ঘাড় হালকা বাকিয়ে তামিমের দিকে তাকায়! এসময় খাঁচা সহ পাখি? সে কী করবে?
” পাখিটাকে উড়িয়ে দাও সকাল!”
সুবহা তামিমের কথা মতো খাঁচা খুলে আলতো ভাবে পাখিটা বের করে! তারপর একটু চোখ বন্ধ করে! সামনের দিকে তাকিয়ে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেয় পাখিটাকে!
সুবহা পাখিটাকে উড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে পুরো আকাশ জুড়ে আরো পাখিরা উড়ে যেতে থাকে! দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র কেউ তাদের আজাদী দিলো! কয়েদির জীবন থেকে তারা মুক্তি পেলো! সুবহা খুব অবাক চোখে পুরো আকাশটা দেখতে থাকে! পাখিতে ভরা! হয়তো হাজার খানেক বা তার অধিক হবে!
” শুভ জন্মদিন বউ!”
তামিমের কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই সুবহার ধ্যান ফিরে আসে! তামিম যে তার পিছনে ছিলো সে তো প্রায় ভুলেই গেছিলো!
সুবহা পিছনে ফিরে তাকায় তামিমের দিকে!
” আপনার মনে ছিলো?”
” তোমার চুল থেকে পায়ের নখ অব্দি সবটাই আমার মুখস্ত বউ!”
সুবহার চোখ ছলছল করে উঠে! সে এতোক্ষণ ভেবেছিলো তামিম তার জন্মদিনের কথা মনেই রাখেনি! কিন্তু না! তামিম মনে ও রাখলো আর এতো সুন্দর সারপ্রাইজ ও দিলো!
সুবহা জড়িয়ে ধরে তামিমকে! তার গাল বরাবর আদুরে পরশ একে দেয়! তামিম সুবহার মাথায় হাত বুলাতে থাকে!
” তোমার ২০ তম জন্মদিনে, ২০ হাজার পাখি মুক্তি পেলো বন্দী দশা থেকে!”
সুবহা তামিমের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে! শুধু মাত্র তার ২০ তম জন্মদিন বলে তামিম ২০ হাজার পাখিকে মুক্তি দিলো? এটা কী আদোও সম্ভব!! এতো পাখি কী আছে তাদের দেশে? সুবহার বেশ কৌতুহল হয়! তার চোখে_মুখে ফুটে উঠে সেই ছাপ! তামিম সুবহার কোমর ধরে তাকে কাছে এনে বলে!
” এখানে পুরোপুরি ২০ হাজার পাখি নেই! দেশে-বিদেশ মিলিয়ে সমস্ত জায়গা থেকে একই সময়ে গুনে গুনে ২০ হাজার পাখি মুক্তি পেয়েছে! তাও তোমার জন্য! ”
যেই তামিম সরকার ছিলো ভয়ের রাজা! রিদয়হীন মানুষের প্রতীক! যার জীবনে র’ক্ত ছাড়া ছিলো না কোনো সঙ্গী, সেই তামিম সরকার আজকে একজন সাধারণ মানুষের মতো হয়ে গেলো? তাও তার থেকে ছোটো ৯ বছরের একটা মেয়ের জন্য?
সুবহা কী বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না! এটা কী আদোও সম্ভব? এতো ভালো ও কেউ কাউকে বাসতে পারে?
” আমি চাইলেই তোমাকে সোনা-দানায় মুড়িয়ে রাখতে পারতাম পরী! কিন্তু তোমার মাধ্যমে আজকে যেই অবলা প্রাণী গুলো মুক্তি পেলো! সেগুলোর দোয়া সারাজীবন তোমার সাথে থাকবে!”
চোখ বন্ধ করে ফেলে সুবহা! এমপি তামিম সরকার ভয়ংকর! কিন্তু স্বামী তামিম সরকার তুলনাহীন!
” আই লাভ ইউ তামিম! ”
” আই লাভ ইউ টু শয়তান ছেমরি! ”
সুবহা তামিম একে অপরকে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে খুব শক্ত করে! যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে একজন আরেক জনের থেকে!
” তামিম?”
” জ্বি পরী! ”
” আপনার মনে ছিলো, তাহলে ১২ টাই ইউস করলেন না কেন?”
” করেছিলাম তো!”
সুবহা ভ্রু কুঁচকে তাকায় তামিমের দিকে! সে ইউস করলো আর সুবহা শুনতেই পেলো না!
” কখন?”
তামিম এক চোখ টিপ দিয়ে বলে,
” তখন তুমি অন্য কিছুর ফিল নিতাছিলা, এই জন্য ধ্যান দাও নি!”
” ছি: তামিম!”
সুবহা তামিমের বুকে হালকা বা’রি মারে!
” কিছু কইলেই মা’রে! ”
তামিম ইচ্ছে করে সুবহার সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠে! আজ এতো গুলো দিন পর তামিমকে কাছে পেয়ে সুবহা ও তার সাথে তালে তাল মিলাতে থাকে!
তাদের কথোপকথনের মাঝেই সুবহার কানে ভেসে আসে কিছু শব্দ! যেনো খুব কাছ থেকে প্লেন বা হেলিকপ্টার যাচ্ছে! আওয়াজ গুলো খুব বেশি নিকটে অনুভব হতেই সুবহা আকাশের দিকে তাকায়! গুনে গুনে ১০-১২ টা হেলিকপ্টার হবে তাদের মাথা থেকে আশপাশে অব্দি পুরো আকাশটি দখল করে নিয়েছে!
সুবহা তামিমের দিকে তাকাতে যাবে তার আগেই হেলিকপ্টার গুলো থেকে অতিমাত্রায় ফুলের ভারি বর্ষণ হতে থাকে! যেনো আকাশ থেকে ফুলের বৃষ্টি হচ্ছে আজ!
খুব খুশি হয়ে যায় সুবহা! সে সামনে তামিমের দিকে তাকাতেই দেখে তামিম নেই তার সামনে! হুট করে নিচে চোখ যেতেই দেখে তামিম হাটু পেরে সুবহার সামনে বসে আছে! তাকে এক দৃষ্টিতে দেখছে!
সুবহা পুরোপুরি তামিমের দিকে ঘুরে যেতেই হেলিকপ্টার গুলো অনেক উপরে উঠে যায়! পুরো পরিবেশটায় একদম নিশতব্দতা লেগে যায়! বাতাসের ধ্বনি ছাড়া আর তেমন কিছুই ভেসে আসছে না সুবহার কানে!
বেশ অনেক ক্ষণ ধরে তামিম সেভাবেই হাঁটু পেরে বসে থাকে! আর সুবহা ও তামিমের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে!
তামিম নিজের পকেট থেকে একটি ব্লু ডায়মন্ডের রিং পের করে সুবহার সামনে ধরে!
” সুবহা…! এই পৃথিবীতে তুমি এমন অনেক ভালো ছেলে পাবা নিজের স্বামী বানানোর জন্য ! কিন্তু আমি তোমার থেকে ভালো একটা ও মেয়ে পাবো না নিজের বউ বানানোর জন্য!
—-আমার বউ হবা? ”
অনেকটা আবেগ, আর ভালোবাসা মাখিয়ে তামিম সুবহাকে জিজ্ঞেস করে, ” আমার বউ হব’?” সুবহার মনে পড়ে যায়, সেদিনের কথা, যেদিন তামিম হেলিকপ্টার দিয়ে ঠিক এভাবেই ফুল উড়িয়ে কালো পাঞ্জাবি পড়ে সুবহাকে বলেছিলো, আমার বউ হবা? সেদিন তামিম ভয় দেখিয়ে সুবহাকে রাজি করায়! কিন্তু আজ প্রেক্ষাপট ভিন্ন! আজ সুবহা খুব করে চাই তামিম তার হোক! সারাজীবনের জন্য তার সাথে থাকুক!
” জলদি হ্যা বল ছেমরি! আমার পোলারে আর কত কষ্ট দিবি!”
আয়েশা সরকারের কথা কানে আসতেই সুবহা পাশে তাকায়! দেখে তানভীর সরকার এবং আয়েশা সরকার তাদের থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে! আয়েশা সরকারের হাতে ক্যামেরা! আর তানভীর সরকারের হাতে মুঠোফোন! দু-জনেই তাক করে ধরে আছে!
” জলদি কন ভাবি-মা মোসা কামড়ায়!”
সাকিবের গলা শুনতেই সুবহা আর একটু ঘাড় বাকিয়ে তাকায়! দেখে তামিমের পঞ্চ পান্ডব ব্যানার হাতে দাড়িয়ে আছে যেখানে লেখা আছে ” say yes!” আর শামসু ফুল হাতে!
পুরো বিষয়টি এতোটাই মনোমুগ্ধকর যেনো ফিল্মের কোনো সেট! সূর্য উদয় হচ্ছে, আকাশ থেকে গোলাপের পাপড়ি পড়ছে, আর অন্য দিকে তামিম হাটু পেরে বসে সুবহাকে প্রপোজ করছে! সত্যিই ভাগ্য থাকা লাগে এমন পরিবার পেতে!
সুবহা নিজের ডান তামিমের সামনে তুলে ধরে!
” হবো! আমি আপনার বউ হবো তামিম! ”
” আমি কী তোমাকে জোড় করেছি?”
” নাহ! আমি স্বেচ্ছায় আপনার বউ হচ্ছি!”
তামিম সুবহার হাতে রিং পড়িয়ে দেয়! আর আবারো ফুলের পাপড়ির ভারি বর্ষণ হতে থাকে!
তামিম উঠে সুবহার সামনে দাড়ায়! সুবহার খুব ইচ্ছে করছে তামিমকে জড়িয়ে ধরতে! কিন্তু বাবা-মা আর পঞ্চ পান্ডব তাদের পাশে! সুবহা চেয়ে ও তামিমকে জড়িয়ে ধরতে পারছে না! সুবহার এমন মতিগতি দেখে তামিম হাসতে থাকে! তারপর সবাইকে ইশারা করে উল্টো দিকে ঘুরে তাকাতে!
সবাই উল্টো দিকে ঘুরে তাকানোর সাথে সাথে সুবহা বাদরের মতো তামিমের গলায় ঝুলে পড়ে! তামিম ও সুবহাকে জাপ্টে ধরে! তামিম খুব জোড়ে জোড়ে তার আব্বাজান কে উদ্দেশ্য করে বলে!
” সে আমারে ভালোবাসে আব্বা! সে আমারে ভালোবাসে! ”
তানভীর সরকার এবং আয়েশা সরকার হাসতে থাকে! তামিমের সেই কথাটি তানভীর সরকারের আজও মনে পড়ে! ঠিক রাত ৩ টা-ই, ছাদের মাঝে শুয়ে তামিম হাসতে হাসতে বলেছিলো, ” সে আমারে ভালোবাসে নাই আব্বা, সে আমারে ভালোবাসে নাই! ” সেদিন তামিমের কন্ঠে ছিলো এক বুক ভর্তি আক্ষেপ! এক সমুদ্র সমান হতাশা! আর সুবহাকে না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা!
কিন্তু আজ, আজ তামিমের কন্ঠে নেই কোনো আক্ষেপ , নেই কোনো যন্ত্রণা, আছে শুধু এক প্রাণচাঞ্চল্যর হাসি!
” তামিম! ”
” জ্বি পরী! ”
” আমার স্বামী হবেন?”
” হুমমম! চিন্তা করে জানাচ্ছি! ”
” কীহহহ?”
সুবহা খুব কড়া নজরে তাকায়, তামিমের দিকে! তামিম সাথে সাথে সুবহার কোমর ধরে কাছে টানে!
” আমি জন্ম থেকেই তোমার স্বামী ”
তামিম সুবহার ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ছোঁয়ায়! তারপর সূর্য উদয় পুরোপুরি দেখে দাঁড়িয়ে! সাথে পঞ্চ পান্ডব এবং আয়েশা সরকার এবং তানভীর সরকার ও দাড়িয়ে পড়ে!
একটা নতুন সকালের সূচনা হয় আজকে! যে সকাল বয়ে আনে সকলের জীবনে সুখ আর শান্তি! এক অন্য রকম তামিম সরকারকে দেখে সবাই!
—- ডিসেম্বর ৯….
পুরো আরশিনগর জুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে চলছে! কারণ আজ আরশিনগরের যুবরাজ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তানভীর সরকারের একমাত্র ছেলে তামিম সরকারের বিয়ে! পুরো বিষয়টায় এতোটাই রাজকীয় ছিলো যে, আলোর কমতি নেই কোথাও! এতো ঝড়ঝাপটার পর অবশেষে রাজকীয় ভাবে বিয়ে হচ্ছে তামিম সুবহার! একই বাড়িতে থাকার পর ও প্রায় ৪ দিন তাদের আলাদা করে রাখা হয়! বিয়ের আগে কেউ আরো সাথে দেখা করার ও সুযোগ পায় না! তামিম অনেক বার চেষ্টা করেছিলো সুবহার সাথে দেখা করার! কিন্তু আয়েশা সরকার আর পঞ্চ পান্ডব তামিমের চরম শত্রু’তে পরিনত হয়! তারা সকলে মিলে জুট বেধে তামিমকে সুবহার সাথে দেখা করতে দেয়নি! খুব কষ্টে এই চার দিন কাটে তামিমের! কিন্তু আজ অবশেষে সেই মাহিন্দ্র ক্ষণ!
তামিম সুবহার এক হওয়ার পালা!
বর সেজে সরকার বাড়ির হল রুমে মুরব্বিদের সাথে বসে থাকে তামিম! তানভীর সরকার চেয়েছিলেন খুব বড়সড় ভাবে বাইরে আয়োজন করতে কিন্তু তামিম না করে দেয়! বাইরে সবাই আনন্দ করুক, কিন্তু বিয়ে সরকার বাড়িতেই হবে! তাও কম সংখ্যক মানুষ নিয়ে!
পুরো আরশিনগর আনন্দে মেতে উঠলে ও সরকার বাড়ির অন্দরমহলে বাছাই করা লোকেরা আসে শুধু! বেশ অনেক ক্ষণ ধরে তামিম বসে থাকে সুবহার অপেক্ষায়! বার বার ঘড়ি দেখতে থাকে তামিম! কখন আসবে তার পরী!
” ভাইয়ের মনে হয় হা’গু চাপছে রে! বার বার ঘড়ি দেখতাছে!”
” শা’লার ভাই বিয়ার দিন মা-রই খাইতে চাস?”
” মা-রই খামু কেন মানিক্কাহ?”
” ভাই, ভাবি মার লাইগা অপেক্ষা করতাছে সাকিব্বাহ! ‘:
সাকিব তামিমের এই ব্যাকুলতা বুঝতে পারে না! কিন্তু রাগি চোখে একবার মাহিরের দিকে তাকায়!
” আমার দিকে এমনে তাকাস কেন বো’মার বাচ্চা?”
” তোরে নিয়া হসপিটালে যামু মাহির!”
” কেল্লাই?”
” হাজার হইলে ও তুই আমার প্রথথম ভালোবাসা! তোরে কেমনে ভুলি! তোরে সার্জারী করাইয়া বেডি সাজামু!”
সাকিবের কথা শুনে মানিক ও এসে মাহিরের পাশে দাড়ায়! কারণ মাহির তো তার সাথে ও মেয়ে সেজে ছলনা করেছিলো!
” আমারে ভাগে দিস সাকিব!”
” ছিয়য়য়য়! ও ভাইইই!”
তামিম খুব রাগি দৃষ্টিতে তাকায় তার পঞ্চ পান্ডবের দিকে! একে তো তার ধৈর্য কুলায় না! তার উপরে তাদের বাঁদরামো!
রফিক এবং মফিস ভালো মানুষের মতো উঠে গিয়ে সুবহার ভাইকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসে, এবং তাদের পাশে রাখে! তামিম সৌরভের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কী-না! না নেই! সৌরভ কিছুটা মুভমেন্ট করে তার মুখের! একটু হাসার চেষ্টা করে!
কিছু ক্ষণের মধ্যে চারপাশে বউ এসেছে বউ এসেছে বলে ধুম পড়ে যায়! তামিম উঠে দাড়িয়ে সামনে সিঁড়ির কাছে এসে দাড়ায়!
” মাশাল্লাহ ”
টকটকে মেরুন রঙের লেহেঙ্গাতে সুবহাকে দেখে নিজের আনমনেই মাশাল্লাহ বলে উঠে তামিম!! মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে নেমে আসা পরী! তার উপরে সুবহার দোপাট্টায় লেখা ছিলো ” তামিমের বউ”’ যেনো জন্ম থেকে এই অধিকার নিয়ে এসেছে সে! মুখটা ঢাকা! কিন্তু দোপাট্টা দিয়ে সুবহার মুখের ঝলক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! আর সেটাই তামিমকে মহোনীত করছে! সুবহার সাজ বিখ্যাত মেক-আপ আর্টিস্ট দিয়ে করানো! কারণ সুবহার ইচ্ছে ছিলো সে মন মতো সাজবে! বর্তমানের সে সিম্পল ট্রেন্ড ফলো করে নিজেকে সাজাবে না! হলো ও তাই!
সুবহা যতটা কদম বাড়াচ্ছিল, তামিমের হৃদস্পন্দন ততই বেড়ে যাচ্ছিল!
তামিমকে বর সেজে দেখে সুবহার চোখে এক অন্য ধরনের আবেশ দেখা দিতে থাকলো! এটা প্রথম বার ছিলো যখন তামিম সুবহা বর_বউ সেজে একে অপরের সামনে এসেছে! অনুভূতিটাই আলাদা!
সুবহার মনে শুধু একটাই গান বাজতে থাকে..
” আকাশ হারায় যেখানে… তোমায় ছুবো সেখানেনননন!”
তামিম নিজের চোখের ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়…
” ভালোবাসো এখনইইই…পরে কী হয় কে জানে!”
হালকা হেঁসে উঠে সুবহা! যেনো তামিম তার মনের কথা গুলো পড়তে পারছে!
সুবহা নিচে আসতেই তামিম হাত বাড়িয়ে দেয়! খুশি মনে তামিমের হাত ধরে ফেলে সুবহা! তাকে নিয়ে সোজা বউয়ের আসনে বসায় তামিম! তারপর সে নিজে ও তার জায়গায় বসে পড়ে! মাঝে শুধু ফুল দ্বারা তৈরি একটা আস্তরণ দেওয়া হয় পর্দা হিসেবে! পুরোটাই সাদা ছোটো ছোটো ফুল দ্বারা তৈরি!
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন! আয়েশা সরকার সুবহার পাশে এবং তানভীর সরকার তামিমের পাশে দাড়ায়! দোয়া শেষে কাজী_সাহেব সুবহাকে আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলতে বলেন!
তামিম অধির আগ্রহে বসে থাকে! কখন সুবহা তাকে কবুল বলবে! সুবহা একটু সময় নিয়ে কবুল বলে ফেলে! সবাই খুশি হয়ে একজন আরেক জনের সাথে কোলাকুলি করে! দু-জন সাইন করে!
বিয়ে পড়ানো শেষে! তামিম ফুলের আস্তরণ ভেদ করে সুবহার সামনে আসে! তারপর তার ঘোমটা সরায়!
ঘোমটা সরানোর সাথে সাথে তামিম বুকে হাত দিয়ে পিছনে পড়ে যায়! এবং পঞ্চ পান্ডব তাকে সাথে সাথে ধরে ফেলে!
” কী হলো বাপ?”
” হার্ট অ্যাটাক আম্মা! ”
সকলে খুব জোড়ে হেসে উঠে! তামিম উঠে সুবহার মাথা ধরে কিছুটা নিচু করে কপালে আদুরে পরশ ছুঁইয়ে দেয়!
” শাদি মোবারক বউ!”
” শাদি মোবারক স্বামী! ”
তামিম সবার সামনেই সুবহাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে! তামিমের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে! আজ তার জীবনের সব থেকে খুশির দিন! সে অবশেষে তার সকাল, তার পরী, একমাত্র শয়তান ছেমরিকে পেলো!
–রাত তখন ৯ টা ১১ মিনিট!
গোলাপ ফুল দ্বারা সজ্জিত বিছানায় বসে আছে সুবহা! সে এসেছে প্রায় অনেক ক্ষণ! তামিমের কোনো দেখা নেই!
দরজায় পিন পড়ার শব্দ ভেসে আসতেই একটু নড়েচড়ে বসে সুবহা! বুকটা কেমন ধকধক করে উঠে তার!
তামিম রুমে ঢুকে দেখে তার বিছানায় একটি জলজ্যান্ত পরী বসা! দরজা লাগিয়ে চুপচাপ এসে সুবহার সামনে এসে বসে! সুবহা তখন ও নিচে তাকিয়ে থাকে! তামিম এসে আধ শোয়া হয়ে চুপচাপ সুবহার মুখ বরাবর তাকিয়ে থাকে! এভাবে বেশ অনেক ক্ষণ চলে যায়! তামিম কিছুই বলে না! সুবহা বেশ কয়েকবার তামিমের দিকে তাকায়! কিন্তু কোনো লাভ হয় না! তামিম কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় না!
শুধু মিটমিট করে হাসে! সুবহা আবার ও তামিমের দিকে তাকায়! কিন্তু এবার ও তামিম গালে হাত দিয়ে সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে চুপচাপ! সুবহা বুঝতে পারে তামিম তার সাথে দুষ্টমি করছে! সুবহা তামিমকে হালকা ধাক্কা দেয়!
” শয়তান সরকার! ”
তামিম হেঁসে উঠে! তারপর সুবহার হাত ধরে তাকে নিজের বুকের মাঝে আনে!তারপর তাকে অজস্র চু’মুতে ভরিয়ে দেয়!
” ভালোবাসি সকাল! খুব ভালোবাসি!”
” আমি ও আপনাকে খুব ভালোবাসি তামিম!”
” কাছে আয়, কত দিন পর পেলাম তোকে!”
” কই কতদিন! মাত্র তো চার দিন!”
” ওমন দূরসম্পর্কের বউয়ের মতো কথা বলিস না পরী! চার দিন! চারশো বছরের মতো!”
” শয়তান সরকার ”
তামিম সুবহাকে খুব জোড়ে জড়িয়ে ধরে! এক এক করে তার সমস্ত সাজ-সজ্যা নষ্ট করে ফেলে! মেতে উঠে একে অপরের!
প্রায় গভীর রাতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে তামিম সুবহা! মুখে যেনো কোনো কথা নেই!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৯০
” সকাললল!”
”’ হুমম!”
” আমি শুধু রেজাল্ট দেখবো! ”
” কীহহহ! ”
লাফিয়ে উঠে সুবহা! খুব কড়া চোখে তাকায় সে তামিমের দিকে!
” বিয়ের দিন ও আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?”
” আগে দেখালে তো বিয়ে করতা না! ১৯/২০ ও করতে দিতে না! ”
সুবহা তামিমের চুল ধরে তাকে খুব জোড়ে জোড়ে মার’তে থাকে!
” আহহহহহ! কিছু কইলেই মা’রে! ”
