এলিজা পর্ব ১৪

এলিজা পর্ব ১৪
Dayna

অপূর্ব,সাদিক দৌড়াতে দৌড়াতে মৌলবির কাছে যেতেই, মৌলভীর চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে উঠে।
অপূর্বর মাথায় রক্ত উঠে যায়। কাউকে প্রশ্ন করার পর যদি উত্তর না মিলে।,,
সাদিক : আপনি এখানে কি করছেন বলবেন তো,,,
মৌলভি :আমি আপনাদের চিনি না। আআ”” আপনারা কেন মৌলবি মৌলবি ডাকছেন?
চোখে চোখ রেখে উত্তর দিতে পারছে না মৌলভি।
, অপূর্ব:, আপনার কি ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। কিছুদিন আগের কথা ভুলে গেলেন।
মৌলবী:দেহো,, আমারে আটকাইও না, আমি তোমাদের আগে কখনো দেখিনাই। বলেই দ্রুত হাঁটা শুরু করে।
সাদিক :খুব অদ্ভুত না লোকটা।

অপূর্ব:হুম,, কিছু তো গরমিল আছে।
সাদিক : যাইহোক, বাদ দে, তোদের বের হতে হবে। তিলকনগর, এর উদ্দেশ্যে।
বাড়ির দিকে ফিরে যেতে যেতে, অপূর্ব পেছন ঘুরে মৌলবি কে , কয়েকবার পরোক্ষ করে।
কি হয়েছে লোকটার এমন অদ্ভুত আচরন কেন, করলো।
পূরো বাড়ি ফাকা হয়ে গেলো। অতিথি রা সবাই চলে যায়। এলিজা শশুর শাশুড়ি, সহ বাড়ির সকলের কাছ থেকে বিদায় নেয়।
গাড়িতে সবাই উঠে পরে।
সাদিক: সবাধানে যাস। নিজের খেয়াল রাখবি।
অপুর্ব : হ্যাঁ তুই ও।
অপূর্ব তৎক্ষণাৎ কিছু ভেবে বললো,আচ্ছা সূর্য কোথায়?আজকে ওকে কোথাও দেখলাম, আমার সাথে ও দেখা করতে আসলো না।
সাদিক : আছে হয়তো কোথাও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকলে বেড়িয়ে পরে তিলকনগর -এর উদ্দেশ্যে। —
অপূর্ব -এলিজা দুজন পাশাপাশি বসা।
এলিজার মাথা টা অপূর্ব, ওর বুক পাঁজরের উপর।
এলিজা মসৃন কন্ঠে বললো,আপনার বুকে মাথা রাখলে জান্নাতের সুখ পাই। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ তখন আমাকেই মনে হয়। কি আছে আপনার মধ্যে?
অপুর্ব :আছে হয়তো কিছু যা তোমাকে খুঁজতে হবে মহারানি।

কি প্রেম করছো? আমি কিন্তু সব শুনে ফেলেছি।
পিছন থেকে বলে উঠলো পাখি।
এলিজা সরে যায়।
অপূর্ব বললো,হুম প্রেম করছে তোমার হিংসে হয়। তোমার জামাই কে জড়িয়ে ধরেছে।
পিছনে বসে থাকা সকলে হেসে উঠে।
,,, শহীদুল, জয়নাল, রমজান তারা অন্য এক গাড়িতে।
গাড়ি পৌছে যায় তিলকনগর।
পথের বাঁকে দাড়িয়ে আছে জয়তুন।
জয়তুন এলিজাকে দেখেই ছুটে জড়িয়ে ধরে ।হুহু করে কান্না শুরু করে।
নিজের সন্তান না থাকায় মাতৃত্বের ছোয়াটা দ্বিগুন। কাপা কন্ঠে বললো,, ১ দিন পর তোকে দেখছি কিন্তু আমার মনে হইতেছে বহু বছর পর তোরে দেখতেছি। তোর মুখ চোখ কেমন শুকিয়ে গেছে। বলেই আলিঙ্গন এ হুহু করে কেঁদে ওঠে জয়তুন।
এলিজা :এইখানে কয়দিন থাকবো! দেখবে তুমি আমার শুকনো মুখের ছাপ দুদিনে মুছে ফেলবে।

রমজান : সকলকে ঘরে নিয়ে আসে।
জয়নুল , শহিদুল তারা বাজারে চলে যায় ,, জামাই এসেছে, ভালো মন্দ খাওয়া তে, হবে।
,,, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
পাখিকে জোড় করে পরতে বসিয়েছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা।
শ্যামলী -বান্দবীর জামাইর সঙ্গে যেন আড্ডার আশর বসিয়েছে।দুলাভাই এটা ওটা ব্লা-ব্লা ,, হাজার ও কথা বলছে।
অপূর্বর সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে কখন এলিজা আসবে।
,, হঠাৎ কি যেন মনে পরতেই অপূর্ব বলে ওঠে,আঁচ্ছা শ্যামলী– বলতে পারো এলিজার মা বাবা কিভাবে মারা যায়।???
কথাটা শুনেই শ্যামলীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। উপেক্ষা করে বললো,
দুলাভাই আপনি বসেন আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসছি।
অপূর্ব ঠিক বুঝতে পারলো ,।কিছু লুকিয়েছে।একজন পুলিশ অফিসার,, তার থেকে কিছু লুকানো কঠিন। অপূর্ব জোড় করলো না।

— রাত ঠিক ১১ টা নাগাদ ,, কয়েক ধরনের রান্না হয়,,
সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে নিলো।অপূর্ব গামছা দিয়ে হাত মুছতে মুছতে খেয়াল করলো, এলিজা- হুমকি স্বরুপ ,, শ্যামলি ,, কে কিছু বলছে ,, কাছে এগোতেই স্পষ্ট শুনতে পেলো‌, এলিজা বলছে,
দেখ তুই আমার মহারাজার দিকে একদম চোখ তুলে তাকাবি না।
অপূর্ব ঠিক বুঝতে পারলো কথাটা,, অপূর্ব কে দেখেই বলেছে। এতক্ষণ অন্য প্রসঙ্গে ছিল। অপূর্ব উপেক্ষা করলো।কথা বাড়ালো না।
দুলাভাই শুভ রাত্রি,, বলেই শ্যামলি চলে যায়,,
এলিজা :রান্না কেমন ছিলো ?
অসাধারণ ম্যাডাম।
এলিজা : চলেন ঘুরে আসি।
এত রাতে কোথায়??
এলিজা :এত রাত তো কি হয়েছে! আমি একজন পুলিশ অফিসার এর বউ।কোন ভয় নেই আমার।অপূর্ব মৃদু আওয়াজ এ হেসে উঠলো।
হাটতে হাঁটতে দুজন আলি বাড়ির পিছনে,, নদীর তীরে চলে যায়। দুজন পাশাপাশি বসে আছে। এলিজার মাথা টা অপূর্বর কাদের উপর।

,, অপূর্ব:নদী, চন্দ্র,তারা সব কিছু সাক্ষী রেখে আরেকবার,, বলতে ইচ্ছে করছে,,
ভালোবাসি মহারানি,, জনম জনম ধরে তোমার হাত ধরে থাকতে চাই!পরপারেও যেন , কোন এক নদীর তীরে বসে, আবার আমার ভালোবাসা নিবেদন করতে পারি। ,,,,,,,
—– নিরবে , নির্ভিঙে,, দুজন বসে আছে। জোসনায় আলোতে চারদিক।আলোকিত হয়ে আছে।
ঘাটেই ছিল বাঁধা নৌকা ।
অপূর্ব: নৌকায় উঠবে?
এলিজা :কে বৈঠা ধরবে শুনি ??
অপূর্ব :কেন ম্যাডাম তোমার মহারাজা।
এলিজা :আমার ভয় করছে।
অপূর্ব :কোন ভয় নেই।
এলিজা : যদি কোন জ,,ন্ত জানো”য়ার আসে ?
অপূর্ব:সেই জানো,য়ার যদি এসেই যায় ম্যাডাম আমি বুক পেতে দেবো।,,
বলেই দুজন নৌকায় উঠে যায়,, একপ্রান্তে এলিজা অপর প্রান্তে অপূর্ব বৈঠা বাইছে।
এলিজা আনমনে গান ধরে-

_শোনার ও পাললঙ্কের ঘরে ,, লিখে রেখে ছিলাম, তারে,,
যাও পাখি বলো তারে সে যেন ভোলেনা মোরে,,,
শুখে থেকে ভালো থেকো,, মনে রেখো এই আমারে ,,
বুকের ভেতর নোনা বেথা,,
চোখে আমার ঝরে কথা,,
এপার ওপার তোলপাড় একা,, বুকের ভেতর নোনা বেথা,চোখে আমার ঝরে কথা,,, এবার ওপার তোলপাড় একা,,
যাও পাখি বলো তারে সে জেন ভোলেনা মোরে,,, শুখে থেকো ভালো থেকো মনে রেখো এই আমারে,,,
,,, অপূর্ব এলিজার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এলিজার কন্ঠে এত সুন্দর গান।ম্যাডাম,চমৎকার,, আমার ম্যাডাম দেখি,, গায়িকা।
এলিজার গলায় গান,, নিস্তব্ধ পরিবেশ,,মিলিয়ে অর্শনগ্র স্বর্গিয় দুজন মানুষ ভাসছে নদিতে।
নৌকা ঘাটে নিয়ে আসলো।
এলিজার হাত ধরে উপরে তুললো।,,,
ঠান্ডা পরিবেশ,, কোন জনব মানব নেই,, কোথাও একটা ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ নেই।,,, কিন্তু হঠাৎ অপূর্ব শুনতে পায়

ডান দিকে কিছুটা দূরেই ঝোপঝাড়, সেখানে থেকে চপর চপর আওয়াজ আসছে।
রাত প্রাই — ১ টা নাগাদ
, অপূর্ব ঠিক শুনতে পাচ্ছে।ডান দিকে চপর চপর আওয়াজ।কেউ আছে,,
এলিজা ও শুনতে পেলো‌।
অপূর্ব: , তুমি এখানেই দাড়াও
কোথাও যাবে না
এলিজা শুনোন না বলতেই অপূর্ব চুপ নির্দেশক ইশারা করলো। পাজামার রবারে আটকানো পিস্তল টা বের করে। সামনে তাক করে অপূর্ব এগোচ্ছে‌।ঘা ঝিম ঝিম।মাথার উপর থেকে হঠাৎ একটা বাদুর উড়ে গেলো।অপূর্ব কোন ভয় পেলো না।

,, অপূর্ব মৃত্যুর বুকেও বুক পেতে দিয়ে হলেও সত্য উদঘাটন করবে,, বরাবরই এরকম।
পিস্তল টা বের করে ই সামনে যেতেই দেখলো, দুজন লোক দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ঝোপঝাড় থেকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। সামনে কেউ সাদা পাঞ্জাবি পরা,তার , সামনে উল্টো ,মুখ ঘিরে কেউ। তার পরনে কালো জ্যাকেট,কালো প্যান্ট।
কারা আপনারা,, এত রাতে এখানে কি করছেন???

এলিজা পর্ব ১৩

অপূর্ব সামনে গিয়েই মুখ দেখতেই ,
অপূর্বর পায়ের তলা থেকে , মাটি সরে যায়।
সামনে আর কেউ নয় ,, তার ই প্রান প্রিয় বন্ধু সূর্য ,,,, তার সাথে, সেই মৌলভী ।

এলিজা পর্ব ১৫