এলিজা পর্ব ২০
Dayna
দরজায় করা নাড়ার আওয়াজ।
কেউ এসেছে, নিশ্চয়ই অন্য কোন মুখোশধারী। এলিজা, মনস্থির করলো। এবার যে এসেই সামনে দাঁড়াবে,তাকেই শেষ করে দেবো।
বাড়ির চারদিকে নিস্তব্ধ।কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।সবাই এত গভীর ঘুমে ঘুমোচ্ছে যেন, নে,শায় আশক্ত।
ধিরে ধিরে দরজায় সামনে এগোয়। ঢক,ঢক করে কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে।
বাহিরে বৃষ্টি পরছে ।এবার আর বোকার মত প্রশ্ন করবো না, বাহিরে কে।,
দরজা খোলা মাত্রই রাম,দা দিয়ে তার….
এলিজা দরজাটা খোলা মাত্রই,, পেছন ঘুরে থাকা লোকটির দিকে রামদা চালালেই সে রাম,দাটা ধরে নেয়।
আরে আরে ম্যাডাম কি করছো আমি তোমার অপূর্ব।
অপূর্ব হাতের একটা আঙুল কেটে র’ক্ত বের হয়।এলিজা অপূর্বর হাতে র’ক্ত দেখে বিড়বিড় করে বললো,এটা আমি কি করলাম নিজের স্বামী কেই আঘাত করলাম। এলিজা মাথা ঘুরে মেঝেতে লুটিয়ে পরে যায়।
অপূর্ব বিষিন্নত কন্ঠে বললো,
ম্যাডাম, চোখ খুলো ম্যাডাম।
অপূর্ব আওয়াজ করে হেসে উঠলো।
বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আঘাত করলো আমাকে ,র’ক্ত বের হলো আমার। মাঝখান থেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো, আমার পাগলী ম্যাডাম।
অপূর্ব মৃদু হেসে , এলিজাকে পাজা কোলে করে ,, নিয়ে সোফাতে সুইয়ে দেয়।
রান্না ঘর থেকে পানি এনে এলিজার চোঁখে ছিটাতে থাকে।
সরু গলায় বললো,ম্যাডাম চোখ খুলোন ,, কিছু হয়নি আমার।
এলিজা টিপ টিপ করে চোঁখ মেললো।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,এতটা ভালোবাসেন, আমাকে? সামান্য আমার হাত কেটে র’ক্ত বের হতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে।
এলিজা ভাবলো,
কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা অপূর্ব কে বলা যাবে না। মানুষ টি অযথা চিন্তা করবে।
তার মুখে আমি চিন্তার ছাপ নয়, বরং সবসময় হাসি দেখতে চাই।
অপূর্ব:চুপ করে কেন কিছুতো বলো হাতে রা’মদা নিয়ে তুমি কি করছিলে?
একা একা ভয় করছিলো?
এলিজা: কেমন যেন মনে হয়েছিল।দরজার বাহিরে থাকা লোকটি অন্য কেউ,!
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ থাকলো।ভাবলো,
এলিজার এমন কেন মনে হলো?
এলিজা – অভিমানী ভঙ্গিতে বললো, আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।সকালে না বলে বেড়িলে গেলেন।
আপনার জন্য কত পদ, রান্না করলাম।
সকাল থেকে অপেক্ষা করছি আপনার কোন খবর নেই। ,
অপূর্ব :ম্যাডাম, আমাকে নিয়ে এত চিন্তা হয় আপনার!
এলিজা :কেন আমি করবো না, কে করবে তাহলে? অন্য কোন রমনী-
বলতেই অপূর্ব এলিজার মুখটা চেপে ধরে।
এই বুকে শুধু একটা মানুষের স্থান, সেই মানুষটি আমার এলিজা।
এই অশান্ত মন, শান্ত করে দিতে পারে আপনার ঐ লাজুক হাসি।
তুমি আমার ব্যাক্তিগত এক চাঁদ, যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি রাতের পর রাত।
আজকে নিজের হাতে তুমি খাইয়ে দেবে।বললো অপূর্ব।
বাহিরে বৃষ্টি,মেঘলা আকাশ, নিস্তব্ধ পরিবেশ, সবমিলিয়ে প্রিয় মানুষটির সাথে,, মাঝরাতে সময় কাটানো এক অপূরুপ মোহময় শুখ।
কত ধরনের রান্না,মাছের ভুনা, ডাল ভুনা, খিচুড়ি, মিষ্টি।
অপূর্বর সমস্ত পছন্দের খাবার।
টেবিলের চেয়ারে অপূর্ব বসে। এলিজা পাশে দাঁড়িয়ে, ভাত মাখাচ্ছে,।
অপূর্ব হুট করে উঠে দাড়িয়ে এলিজার, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
কানের কাছে চুল গুলো সরিয়ে দেয়,,, লাল র’ক্ত মাখা গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, এত কেন রূপসী আমার ম্যাডাম, স্বর্গের পরীরাও তোমার কাছে হার মানে।
,, এলিজা: আপনি সুযোগ পেলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান কেন??
অপূর্ব হেসে উঠলো।বললো, তোমার মুখে যত বার ই ,এই কথাটা শুনি ততবারই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে।
এলিজা বললো,এবার খেয়ে নিন।
অপূর্ব সব ধরনের রান্না থেকে একটু একটু খেলো।
অপূর্ব দেখলো টেবিলের এক কোনে পরে আছে পায়েশের বাটি।
অপূর্ব :পায়েশ টা খাওয়ালে না!
এলিজা আমতা আমতা করে বললো ,ওটা ভালো হয়নি।
অপূর্ব বাটিটা কাছে নিয়ে বললো, তবুও এটা আমি খাবো।কারন আমার বউ ভালোবেসে রান্না করেছে।
অপূর্ব সব টুকো পায়েশ খেয়ে নেয়। তৃপ্তি নিয়ে বললো,অনেক স্বাদ ছিলো।
এলিজা : আপনার চিন্তায় চিন্তায়,, পায়েশে চিনির বদলে নুন দিয়ে দিয়েছিলাম,, বিষে’র মত হয়ে গেছিলো আর আপনি এটা খেয়ে নিলেন!
অপূর্ব বললো,”পৃথিবীর সব বিষে’র প্রভাব সহ্য করতে পারবো, যদি তুমি পাশে থাকো।
আর তুমি যদি কোনদিন ছেরে যাও, সেই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারবো না, ম্যাডাম।
তুমি যে আধার রাতের জোনাকির আলো, তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না কোনদিন ভালো।
__ __ রাত গভীরতর হচ্ছে।__
শায়ান কারো কাছ থেকে জানতে পারে তারে তার বাবা,, এলিজার বিয়ের আগে আলি বাড়িতে গিয়ে, এলিজাকে বেইজ্জত করে।
নিশ্চুপ ঘরের মধ্যে সন্ধ্যা থেকে বসে আছে শায়ান। বিড়বিড় করে বললো,
ছোট বোনটা বার বার ডাকছে, মা ডাকছে বাবা ডাকছে,, কারো ডাকে সাড়া দেওয়ার মত,, শক্তি আমার নেই।
কারন আজ যে আমি বড় ক্লান্ত।
ভালোবাসার রাস্তায় আমি এক অসহায় পথিক,, দুইধারে কত মানুষ,, কিন্তু আমার যেন কেউ নেই,, কেন আজ এমন অনুভূতি হচ্ছে?
আর্ত’নাদ করে কান্না করতে থাকে শায়ান।,
শায়ানের আর্ত’নাতে দেয়াল গুলো চুপসে যাচ্ছে।
ভাঙা গলায় বললো,ভালোবাসা এত কেন নিষ্ঠুর?কেউ একজন আসো।
এসে আমার হৃদয়টাকে নিয়ে নাও ।সেখান থেকে এলিজার নামটা মুছে , আবার আমাকে দিয়ে যাও।,, এই যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না। তুমি যদি আমাকে ভালো নাই বাসলে,, তাহলে আমার ডাকে সাড়া কেন দিয়েছিলে সেদিন।
ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে শায়ান
হাতে কলম নিয়ে,, কাগজে কিছু লিখতে থাকে।
পরদিন সকাল বেলা—-
ফজরের আজান পরেছে।
কাকের আনাগোনা ,অল্পকিছু পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ আসছে।
এলিজা ঘুম থেকে উঠে, মুখহাত ধুতে যাবে ,, তখনই চোখ পরে নিচের তলায়।
অচেনা এক লোক,, পরনে ,কালো বুট জুতা,কালো জ্যাকেট, একটা কাপড় মুড়ি দিয়ে কি যেন খুঁজছে।
এটা নিশ্চয়ই চোর ,, মামি বলেছিলো,, শহরে ভোর রাতে চোর আসে।
এলিজা টিপটিপ পায়ে নিচে নামে।কি দিয়ে আঘাত করবে । কিছু খুঁজে না পেয়ে , রান্না ঘর থেকে রুটি বানানোর , বেলুন টা এনে,, ঠাস ঠাস করে পেটাতে থাকে।আর চেঁচাতে থাকে।চোর এসেছে চোর এসেছে।,
আমি চোর ধরেছি বলেই চেচাতে থাকে,, পুলিশ বাবু নিচে আসুন মা আব্বা।
সবাই দৌড়ে আসে। অচেনা ছেলেটি,, পর্দার কাপড়টি ফেলে দেয়।
জয়া : বাবা তুই?
ডার্লিং কেমন আছো আদুরে গলায় বলেই জড়িয়ে ধরে জয়া কে।
জয়া বললো,কত বড় হয়ে গেছিস এত বছর পর সবার কথা মনে পরলো?
শ্রাবন :এই মেয়েটা কে হিং,স্রর মত আমাকে পেটাতে ছিলো।
অপূর্ব, :মেয়েটা না তোর বউমনি!
শ্রাবন :আরে ইয়ার — তুই বিয়েও করে ফেলেছিস!
মৃদু হেঁসে দুইভাই আলিঙ্গন করলো।
,,
এলিজার সামনে হিরোর মত ভাব নিয়ে, শ্রাবন বললো,
হেলো মিসেস আমি শ্রাবন , বলেই *হ্যান্ডশেক* করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।,
এলিজা মনে মনে বললো,আপনি শ্রাবন হোন ,, বা ভাদ্র তাঁতে আমার কিছু যায় আসে না।
দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
__এলিজা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা তারা দেখছে।ভাবছে,
মামা মামীর জন্য মনটা জানি কেমন করছে ।কোন কিছু ভালো লাগছে না। মনস্থির করে, মামা মামী,পাখির উদ্দেশ্য চিঠি লিখবে।
শ্রাবন , অপূর্ব,, জয়া সবাই মিলে আড্ডায় মশগুল,।
দরজায় কড়া নাড়ছে,।
জয়া:এই সন্ধায় কে আসলো।
মনোরা দরজা খুলতেই সূর্য,সাদিক চট করে ঘরের ভেতর ঢুকেই, অস্থির ভঙিতে বললো,অপূর্ব কোথায় তুই?
বেড়িয়ে আসে অপূর্ব ।
কি হয়েছে হাপাচ্ছিস কেন তোরা?
আমাদের রহস্যময় উন্মোচন এর এভিডেন্স নেই আর
অপূর্ব :মানে কি বলতে চাইছিস??
খুলে বল।
এলিজা পর্ব ১৯
সাদিক: গুঞ্জন ,কে কেউ খু,,ন করেছে।
অপূর্ব অবাক হয়ে যায়।আকাশটা ভেঙে অপূর্বর মাথার উপরে পরে।আ’হত কন্ঠে বললো,
কি বলছিস, কোথায়?
লা,শ কোথায় পেলি?
সাদিক : দিগন্ত নদীতে——