এলিজা পর্ব ২৩+২৪

এলিজা পর্ব ২৩+২৪
Dayna

রাত বেড়ে চলেছে __
জাহাঙ্গীর ‘ জয়া ,জয়া বলে চেঁচিয়ে উঠে।
জয়া :কি হয়েছে ডাকছো কেন??
জাহাঙ্গীর : খিদে পেয়েছে খেতে দাও।
অনেক কাজ পরে আছে যেতে হবে।
জয়া: এলিজা মা, তুই গিয়ে তোর শ্বশুড় কে খেতে দে।ততক্ষণে আমি তসবিহ পড়াটা শেষ করি।

এলিজা টেবিলে খাবার এনে দিতেই ,, জাহাঙ্গীর রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো, তোমাকে বলেছি না আমার যত্ন নেয়ার কোন দরকার নেই।আমার আশেপাশে আসবে না।এলিজা আজ আর উত্তর না দিয়ে পারলো না।
‘এলিজা: কেন, কি করেছি আমি , কেন আমাকে এড়িয়ে চলেন? আমাকে কি ছেলের বউ হিসেবে আপনার পছন্দ নয় ??
জাহাঙ্গীর অস্থির একটা, ভাব করে , খাবারের টেবিল থেকে উঠে যায়।
এলিজা , পেছন থেকে বললো,
আপনার কিছু বলার হলে বলতে পারেন আমি মনে কিছু করবো না,, জাহাঙ্গীর থম মেরে দাঁড়িয়ে, উপরে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

______সূর্য কে নিয়ে অপূর্ব বাড়িতে চলে যায়।
সবাই জেগে আছে।শ্রাবন ভালো গিটার বাজায়।খুব ভালো গায় শ্রাবন। অপূর্ব সবার মাঝে বসে পরে । রাত ঠিক ২:৩০ মিনিট।সবাই বিভিন্ন গল্পে মশগুল।
কে কি করছে কে কি , ভবিষ্যৎ এ কি করবে।
কার কেমন বউ দরকার,,
বলছে আর হেসে হেসে উঠছে।
অপূর্ব এক কোনেতে বসে আছে
সূর্যর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাবছে,
একটা মানুষ কতটা বাস্তবিক জীবনে অভিনয় করতে পারে,তাও এতটা নিখুত।
যার জীবন টা থমকে আছে ৬ বছরের অতীতে।

সেও সবার সাথে হাসিখুশি ভাবে থাকছে। থাকতে চায়না,, থাকতে বাধ্য হয় ।
কারন মানুষ অন্যর কষ্টে তৈরি করে উপহাস।,আমরা শুধু মানুষের উপর দেখেই তাকে নিয়ে , কত সমালোচনা করি, যেমন আজকে মনের অজান্তেই, সূর্য কে সন্দেহ করলাম কত কি ভাবলাম।
মানুষ যে কতটা মুখো’শধারী তা সূর্য কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
হাঁসির আড়ালে লুকিয়ে ছিল কান্না,
পাথরের মত মনেও লুকিয়ে আছে ভালোবাসা।
এটাই কি ছেলেদের জীবন?
সবসময় ভালো থাকার অভিনয় করতে হয়।
অপূর্ব এসব ভাবতেই সূর্য কে কিছু বলতে চাইলো।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ সূর্য একটা লাইটার বের করে ,, সিগারেট ধরায়।চোখ দুটো লাল।
জ্বল জ্বল করছে চোখের কার্নিশ। সিগারেট এর ধোয়া গুলো উপরে উড়ছে‌।
, অপূর্ব ভালো করেই বুঝতে পারছে,সে যে তার , রঞ্জনার ভাবনায় মশগুল।
চোখ গুলো দেখলেই বোঝা যায়। ভেতরে কি চলছে। হয়তো ভেঙে মুচরে যাচ্ছে।
শেষ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
হয়তো পারছে না।

,,,, অপূর্ব ভাবনা উপেক্ষা করে বললো,
— শ্রাবন আমার বন্ধুর মন ভালো করার জন্য একটা গান ধর”’ আমার সূর্য যে দেওয়ানা হয়ে আছে যে।
শ্রাবন সূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আচ করলো,
কোন হারানো বেদোনা যেন তাকে গ্রা’স করে রেখেছে।
শ্রাবন মৃদু হেসে ,, গিটার টা হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করে।
___ মায়ায় লাগাইছে , পিরিতি শিখাইছে__
দেওয়ানা বানাইছে,—-
কি যাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে–

___ মায়ায় লাগাইছে , পিরিতি শিখাইছে__
দেওয়ানা বানাইছে,—-
কি যাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে–
বসে ভাবি নিরালয়, আগে তো জানি বন্দের পিরিতের জ্বালা ___,
বসে ভাবি নিরালয় ,আগে তো জানি নায় বন্দের পিরিতের জ্বালা
___
ক,ন ইটের ভাটায় কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালাইছে ,
হায় গো,ক,ন ঈটের ভাটায় কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালাইছে।
দেওয়ানা বানাইছে,
কি জাদু করিয় বন্ধু মায়া লাগাইছে।
__ শ্রাবন গান টা ধামিয়ে দেয়– সূর্য সিগারেট হাতে হেলানে বসে সুর ধরে , শ্রাবন এর সাথে সাথে_
____ আমি কি বলিব ই আর _ বিচ্ছেদের
আগুনে পূরে কলিজা আঙ্গার_

আমি কি বলিবো আর_ বিচ্ছেদের আগুনে পূরে কলিজা আঙ্গার _
হায়,গো, প্রান _বন্দের পিরিতে আমায় পাগল করেছে, দেওয়ানা বানাইছে,,
কি জাদু করিয়া বন্দে পাগল বানাইছে ,, কি জাদু করিয়া বন্দে পাগল বানাইছে,, পাগল আব্দুল গায় , ভুলিতে পারিনা আমার মনে যারে চায়—-
এতটুকু শেষ করেই–
এক অদ্ভুত মায়া জড়িত গলায়,, চেঁচিয়ে বলে উঠে
রঞ্জনা,, তোমায়,হীন আমি যে আজ ও পূরছি, আমি আজ ও পুরছি,।
তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমার এই জায়গা কোনদিন কাউকে দেবো না।
হ্যা- প্রেয়সী কাউকে দেবো–না
অপূর্ব ছাড়া , বাকি সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সূর্যের দিকে
পাথরের তৈরি মানুষ টি যেন আজ নিস্তেজ।
— অপূর্ব বিড়বিড় করে বললো,
__ বিষে’র চেয়েও বি’ষাক্ত বিচ্ছেদ”
প্রিয় মানুষ টিকে হারানোর মত , বেদনা যেন কারো জীবনে না আসে…………

অপূর্ব রাতেই বাড়ি ফিরে যায়।
এলিজা তার জীবনে আসার পর যেন তাকে ছাড়া রাতের ঘুম হয়না।
এক প্রহর ও যেন তাকে ছাড়া কাটে না।

গভির রাতে অপূর্ব বাড়ি ফিরে।
অপূর্ব দরজায় কড়া নাড়লে কেউ দরজা খুলছে না।
ডাকাডাকি শুরু করে।
এলিজা, মা, কেউ সাড়া দিচ্ছে না।
তবে কি এলিজা আমাকে রেখেই ঘুমিয়ে পরলো।
চট করে দরজা খুলে দেয়। মনজুরা
দাদাবাবু এত রাতে ফিরলেন সবাই তো ঘুমিয়ে পরেছে।
,,বললো মনজুরা বাড়ির কাজের মহিলা, ছেলের অসুস্থতার জন্য ২ মাস ছুটিতে ছিলো!
অপূর্ব বললো,মনজুরা বুবু, আপনি ফিরেছেন!ভালো ই হয়েছে , মনোরা আর এলিজা-কাজ করতে করতে শেষ।
আপনি এসেছেন এখন আপনি আর মনোরা সব সামলে নিবেন।
এলিজার সাথে বেশি সময় কাটাতে পারবো‌।
মনজুরা বললো, আমি আইছি এবার সব ঠিক করে দিবো!!
বলার ধরন টা একটু অন্যরকম ছিল, অপূর্ব কোন প্রশ্ন করলো না।
কারন মনজুরার কথা বার্তা এমন ই।
কর্কট,স্বভাবের মানুষ।

অপূর্ব গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে তার ঘরের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
দরজায় কড়া নাড়বে ঠিক তখনই দেখে দরজা টা আগে থেকেই খোলা।
অপূর্ব অবাক হয়। একদিন বলেছি ঘরের দরজা খোলা রেখে ঘুমাবে না ।অনৈসিক মেজাজে,,ঘরে ঢুকে,দেখলো,ঘরের লাইট বন্ধ।
— অপূর্ব এলিজা কে অন্ধকারে না দেখতে পেয়েও বললো,
ম্যাডাম আজকে আমাকে রেখেই ঘুমিয়ে পরলেন। সারাদিন কোন না কোন কাজ করেই চলেছেন। দূর্বল তো হতেই হবে। তাই হয়তো ঘুমিয়ে গেলেন।
কিন্তু আমি তো তোমাকে ঘুমাতে দিচ্ছি না।
বলেই অপূর্ব লাইট অন করতেই দেখে ঘর ফাঁকা।
অপূর্বর শরীর আচমকা কেঁপে উঠে।
ঘাম ঝরতে থাকে।

অবাক করা দৃষ্টিতে এদিকে সেদিন দেখলো। এলিজা ঘরে নেই।
এলিজা এলিজা বলে ডাকতে শুরু করে, কোথাও সাড়া শব্দ নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দেখে সেখানেও নেই,,
অপূর্ব ভাবলো, হয়তো মা, অর্পা, চাঁদনী ওদের সাথে আছে।
অপূর্ব জয়ার ঘরে চলে যায়। জয়া কখনো দরজা লাগিয়ে ঘুমোয় না,, কারন সে বলে এতে তার দম বন্ধ হয়ে আসে।
দরজা খুলে লাইট জ্বালিয়ে জয়াকে ডাকতে শুরু করলো।জয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
গায় হাত দিয়ে ডাকতে শুরু করে কোন সাড়া নেই।
পাশেই অর্পা, চাঁদনী ওদের ও কোন সাড়া শব্দ নেই।
ঘুমের গভীরতা দেখে মনে হচ্ছে,, এরা নে,শা করে ঘুমাচ্ছে।
এলিজা এখানেও নেই তাহলে আর কোথায়?
সমস্ত বাড়ি খুঁজলেও এলিজা কোথাও নেই,,

হঠাৎ করে মনে পরে,,সব ঘর খুজলেও জাহাঙ্গীর এর রুমে একবার যাওয়া হলো না।
অপূর্ব ভাবলো,কিন্তু বাবার ঘরে কেন ই বা যাবে?
যেতে যেতে অপূর্ব ভাবতে থাকে,, এলিজা বাবার ঘরে আসবে না,, কারন বাবা, এলিজা কে মন থেকে বউ হিসাবে মানতে পারেনি,কারন, ওদের দরিদ্রতা।
বাবা সবসময় চাইতেন প্রতাবশালী কারো মেয়েকে বউ করবেন,যেমন ছিল চাঁদনী
,, এসব ভাবতে ভাবতে অপূর্ব জাহাঙ্গীর,এর ঘরের সামনে এসে থমকে দাড়ায়
,, অপূর্ব চিন্তায় পড়ে যায় এত রাতে বাবাকে ডাকবো, ঠিক হবে,নাকি এলিজা আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে।
,, বলেই দরজায় কড়া নাড়ার আগেই চট করে দরজা টা খুলে দেয় এলিজা।
অপূর্ব অবাক হয়ে যায়।

এলিজা এত রাতে বাবার ঘরে কি করছে? আমার ভাবনা ভুল ছিলো।
,, এলিজার চোঁখে পানি জ্বল জ্বল করছে।
অপূর্ব কে দেখেই কি যেন, কি বলবে চেয়ে , অপূর্বর বুকের উপর ঝাপটে পড়ে হুহু করে কান্না শুরু করে।
অপূর্ব কিছু বুঝে ওটার আগেই।
জাহাঙ্গীর -কাশি ,দিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে বললো,তোর অপেক্ষায় মেয়েটা একা একা বসে কাঁদছিলো,, ওর চোখ মুখের বিষন্নতা আমার ভালো লাগেনি।
পানি খেতে নিচে নামলে ,,আমার সাথে কথা বলতে চায়, আমি মুখ ঘুমরে ঘরে চলে আসি।
ও আমার পেছন পেছন আসতে থাকে আর জিজ্ঞেস করতে থাকে
আমি কেন ওর সাথে কথা বলিনা,? কেন,অদ্ভুত আচরণ করি?
তাই আজকে ওকে সবটা বললাম।

ছেলের বউ হিসেবে, এলিজা-যোগ্য আমি তা আছ বুঝতে পারছি।
অপূর্বর বুকে থাকা অবস্থায়, জাহাঙ্গীর পেছন থেকে এলিজার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে স্বরে বললো,
পারলে আমায় ক্ষমা করিস,আজ থেকে আমি ই তোর বাবা।
জাহাঙ্গীর এর মুখে এরকম কথা শুনে অপূর্ব অসৈর্যিক আনন্দ পায়।
মনে মনে ভাবলো, এলিজা আজ থেকে তার শ্বশুর কে বাবা,রুপে পেলো।
এলিজার চোখ মুছে দিয়ে ঘরে নিয়ে আসে অপূর্ব।
, অপূর্ব বললো,__

ম্যাডাম, আপনি আমার অপেক্ষায় থেকে এভাবে কাঁদলেন, সত্যি ই আমি দুনিয়ার ভাগ্যবান পূরুষ,
যার সামান্য অনুপস্থিতিতে তার অর্ধাঙ্গিনী শূন্যতা অনুভব করে।
এলিজা অভিমানী স্বরে বলল,সেই কখন থেকে আপনার পথ চেয়ে ছিলাম ।আপনি বুঝেন না আমার কষ্ট হয়,বড্ড খালি খালি লাগে,, “আমার এই শুন্যতা ভরা,জীবনে আপনি ই একমাত্র পূর্নতা”
আপনার স্বল্প অনুপস্থিত,,
আমাকে অনেক কাদায়।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,কখনো কখনো তোমার থেকে দূরে চলে যেতে হবে ক্ষানিক সময়ের জন্য!
, শুধু মাত্র তোমার চোখে আমাকে হারানোর ভয় দেখার জন্য –তুমি যখন আদুরে গলায় তোমার মনের ভাব প্রকাশ করো,,,
তখন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি গুলো,এসে আমার হৃদয় বাসা বাঁধে। রাত গভীরতর হচ্ছে। এলিজা অপূর্ব ঘুমিয়ে পরে

পরদিন সকাল বেলা—-
তিলকনগর————-
রমজান: পাশের ঘর থেকে হাশেমের মায়ের কান্নার আওয়াজ আইতেছে, তুমি যাইয়া একটু দেখতা।
জয়তুন বললো,আর কি দেখুম মানুষ টা যে বড়ই দূর্ভাগা, আজ কেন জানি এই কথাটা বলতেই হলো।
,, একমাত্র ছেলে টা ,,, দ্বিতীয় বিয়ে কইরা যে গেছে আর খবর নাই,,
মেয়ের মতন ছিলো,বউ,
কোন কালো বাতাস যে তার জীবন টা,কেড়ে নিলো –নিরা,রে।
বলেই জয়তুন দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
রমজান; আমার একটা জিনিস নিয়া এখনো খটকা লাগে বুঝলা,, হাশেম যে গেলো ,, আর আইলো না,, হাশেম তো ওর মায়রে একাকার কইরা ভালোবাসতো।

জয়তুন: মানুষ মূলত স্বার্থপর। পাসা,ন্ঠ, মানুষের রং বদলাইতে কি সময় লাগে –?
রমজান:-তবুও আমার কেমন জানি মনে হয়, হাশেম এমন নয়,, কোথাও ঘাপটি মেরে আছে।
জয়তুন: এসব ছাড়ুন,আপনি বাজারে যান, গিয়ে কিছু মাছ কিনে আনুন, ছোট চাচী রে কয়টা ভাত দিতে হইবো-দুনিয়ায় তো ওনার কেউ নাই।
______ ঢাকা—–বিকেল,৪ টা
প্রতি ৬ মাস পর পর , অচিন
পাহাড়ে, ওয়াক- রাউন্ড খেলা হয়, সমস্ত দম্পতি সেখানে অংশগ্রহণ করে
বলা হয় আজ পর্যন্ত কেউ এই খেলায় জয়ী হতে পারেনি।কারন অচিন পাহাড়ে উঠতে হলে,১০০ সিড়ি পার হতে হয়।
শ্রাবন মনস্থির করে তারা আজ বিকেলে অচিন পাহাড়ে যাবে।
শ্রাবন অপূর্ব কে উদ্দেশ্য করে বললো,ভাই চল আজকে আমরা অচিন পাহাড়ে যাই।অংশগ্রহণ তো করতে পারবো না তবে , অন্যদের খেলা তো দেখতে পারবো।

অপূর্ব: তোর আইডিয়া ,টা
দারুন, এলিজার মন টা ভালো নেই, বার বার বলছে মামা,মামির কথা মনে পরছে।
এলিজা কে বলে দেখি যেতে রাজি হয় কিনা।
___এলিজা যাওয়ার জন্য রাজি হয়___ এলিজা তৈরি হচ্ছে।সাথে,অর্পা, চাঁদনী,
অর্পা ভিষন খুশি,কারন অচিন পাহাড় অনেক দূরে হওয়ায় যাওয়া হয়না।
আজ যেতে পারবে বলেই যেন,ঈদের মত আনন্দ হচ্ছে।
চাঁদনী:— আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। এত দূর ফিরে আসতে আসতে যে রাত হয়ে যাবে।
অর্পা : তাতে কি পুলিশ ভাই আছে,সাদিক ভাইয়া, সূর্য ভাইয়া,,এরা তো আছেই তাইনা ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। বলেই মৃদু হেসে দেয় অর্পা।

___ যাওয়ার জন্য সবাই বেড়িয়ে পরে,।
একটা গাড়িতে, সবাই উঠে পরলো। আজ গাড়ি চালাচ্ছে, অপূর্ব বাম পাশে তে এলিজা-,পেছনে, অর্পা, সাদিক, সূর্য শ্রাবন
সাদিক, সূর্য আনমনে কিছু বলছে আর খিল খিল করে হেসে উঠছে।
অপূর্ব, লুকিং গ্লাস দিয়ে, সূর্যর দিকে, দেখছে।
আর ভাবছে__ একটা মানুষ কতটা নিখুঁত অভিনয় জানলে , ভেতরে কষ্ট চেপে ধরে হাঁসতে পারে।
,,,গাড়ি থামলো অচিন পাহাড়ে,,, হাজার হাজার মানুষ এখানে আসে ,, চারদিকে সবুজ স্যামল মাঝখানে অচিন পাহাড়।
এই পাহাড়ের চুড়াই উঠতে ১০০ টা সিড়ি পার হতে হয়।
কেউ কেউ, একা একা হেটে যায়,
তো কেউ সর্ত দেয়,তার স্বামী কে ,পাজা কোলে করে,তার বউকে নিয়ে উঠতে পারলে ১লক্ষ টাকা টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
আজ পর্যন্ত কেউ ই অচিন পাহাড় এ , তার স্ত্রী _কে নিয়ে উঠতে পারেনি।তবে অপূর্ব মনস্থির করে সে উঠবে,তবে টাকার জন্য নয়, তার ভালোবাসার জন্য।

***চারদিকে, মানুষের কোলা’হলে ভরে গেছে ।
অর্পা, চাঁদনী এদিক সেদিক, ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাদিক, সূর্য,গাড়ির সাথে হেলানে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আশপাশ পরোক্ষ করছে,, শ্রাবন গিটার বাজাচ্ছে।
অনেক দম্পতি, চেষ্টা করে তার প্রিয় মানুষ টিকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে,তবে সবাই ব্যার্থ হয়।
,, এই দেখে অপূর্ব এলিজা কে-বললো,
ম্যাডাম,, চলেন একবার আমরা চেষ্টা করে দেখি।
এলিজা হেসে উঠলো, বললো_ কখনোই পারবেন না।কারন এগুলো সিনেমা,তে হয়,বাস্তবে নয়।
অপূর্ব ইতস্তত বোধ করলো।

,এলিজা মৃদু হেসে, অপূর্ব কে ইঙ্গিত করে বললো, সে নাকি আমাকে নিয়ে অচিন পাহাড়ের চূড়ায় উঠবে। অপূর্ব, বললো,যদি পারি, তাহলে কি দিবে আমাকে?
এলিজা, অহংকারী স্বরে বললো,পারবেন না।আর যদি পারেন,তাহলে এই জীবন টা, আমি আপনার জন্য,,কোরবা’ন,করে দেবো।
অপূর্ব: কোর,বান করতে হবে না,, শুধু জনমে জনমে আমার হয়ে থেকো।
বলেই, এলিজা-কে পাঁজা কোলে করে নেয়,,
সূর্য,সাদিক , অর্পা, চাঁদনী,সহ আশেপাশের সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
তৎখানিক সাদিক , বললো, ,ওরা কি সিনেমার কৌশল ধরলো নাকি!বলেই হেসে উঠলো।
*সূর্য অপূর্ব কে বাধা দিতে যাবে ঠিক তখনই, সাদিক সূর্যর হাত টা ধরে ফেলে।
সাদিক:কি করছিস ওকে বাধা কেন দিতে চাইছিস?
সূর্য‌ অস্থিরতা ভাব নিয়ে বললো,, তুই জানিস না ওর কি সমস্যা…..
বলতেই সূর্য কথা থামিয়ে দেয়।
সাদিক: মানে?কি সমস্যা?

সূর্য সংযত দৃষ্টিতে বললো,এত দূর ভারী একজন মানুষ নিয়ে উঠলে ,শরীরের ক্ষতি হবে যে…
সাদিক মৃদু হেসে বললো,,ভালোবাসার জন্য হাজার ও পথ পারি দিতে পারে যদি সে মানুষ টা,, পাশে থাকে।
আশপাশ থেকে সবাই বলে উঠছে,, পারবে না পারবে না,,
অপূর্ব কারো কথায় কান না দিয়ে,,
অচিন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে থাকে,, এক সিড়ি ,দুই,সিড়ি, করতে করতে অনেক সিড়ি পার হয়।
সূর্য সাদিক, পেছন থেকে বলো উঠলো,তোকে যে পারতেই হবে, অপূর্ব,তুই পারবি,, তুই যে আমাদের বন্ধু তোকে পারতেই হবে।
এলিজা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অপূর্বর দিকে।ভাঙা গলায় বললো,আমাকে ছাড়ুন কষ্ট হচ্ছে আপনার,ছাড়ুন।
অপূর্ব উঠতেই থাকে।

আশেপাশের হাজারো মানুষ তাকিয়ে আছে, কেউ বলছে,এগুলো সিনেমাতে হয়, বাস্তবে কেউ পারবে না, কিছুক্ষণ এর মধ্যে ই অপূর্ব অচিন পাহাড়ের চুড়ায়,পৌছে যায়।
সবাই হইহই করে ওঠে। , কোলা’হলে অচিন পাহাড়, আচ্ছাদিত হয়ে ওঠে।
কেউ কেউ বলছে, মেয়েটা হয়তো , সৃষ্টিকর্তার তৈরি এক ভাগ্যবতী,যে এমন স্বামী পেয়েছে।
,, এলিজাকে কোল থেকে নামিয়ে,, অপূর্ব হাঁপাতে থাকে,,
এলিজা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,চোখে জ্বলজ্বল পানি।
এলিজা বললো,এতটা ভালোবাসেন আমাকে?
অপূর্ব আকাশের দিকে তাকিয়ে,হাত দুটো দুদিক করে। উল্টো দিকে ঘুরে,ভারি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো। ভালোবাসি ম্যাডাম,আমি আপনাকে,নিয়ে ১০০ কেন,১ হাজার পথ, পারি দিতে পারি, যদি থাকেন আপনি পাশে।আপনার হৃদয়ের কার্নিসে কার্নিসে, আমার ভালোবাসার ফুল ফুটে ভরে যাক।আপনার হৃদয়ের বাগানের মালি হয়ে থাকতে চাই সারাজীবন।

,, এলিজা-জ্বল জ্বল চোখে মৃদু হেসে,পেছন থেকে অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে।
তাদের দুজনের ভালোবাসা দেখে যেন আজ প্রকৃতিও আনন্দে আত্মহারা,,হয়ে গেছে ,পাহাড়ে থাকা সবুজ স্যামল যেন আজ , নতুন রূপ পেয়েছে। সূর্য, অসৈর্য ,কার্নিস চোখে তাকিয়ে থেকে,বলছে। এ যেন, পৃথিবীর বুকে ,
শাহজাহান,আর মমতাজ কে দেখতে পাচ্ছি।
—–রাত ৮ টা নাগাদ —

বাড়ি,, ফেরার জন্য সবাই গাড়িতে উঠতেই,,
এলিজার চোখ পরে,একজন অল্প বয়সী পাগলী, মেয়ে বসে আছে। হাতে কারো ছবি।
এলিজা অবাক হয়ে দেখতে থাকে,,
মেয়েটিকে কাছ থেকে দেখতে যাবে ঠিক তখনই,অপূর্ব বললো,সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে,, তারাতাড়ি চলো।
বলেই গাড়ি স্টার্ট করে বেড়িয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
নির্জন রাত,, পরিবেশ একদম ঠান্ডা,,
রাস্তার দু পাশ থেকে গাছ গুলো হেলিয়ে পরেছে।

শ্রাবন, গান গাইছে,,
এলিজা চুপচাপ বসে আছে,, অপূর্ব এক ধ্যানে, গাড়ি চালাচ্ছে।
গাড়ি মাঝ পথে আসতেই অপূর্বর চোখ পরছে
ডান দিকের লুকিং গ্লাসের দিকে,, কেউ একজন দৌড়াচ্ছে ,
অপূর্ব অবাক হয়।
, চারদিক থেকে যেন কালো ছায়া নেমে আসছে,, করন লোকটি আর কেউ নয়
লোকটি, গুঞ্জন।
গাড়ির পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে,,
হাত দিয়ে এমন ইশারা করছে মনে হয় ,গাড়ি থামাতে বলছে। কিছু বলতে চাচ্ছে,।
, সাদা পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পাগড়ি,, অক্লান্ত শরীরে দৌড়াচ্ছে,।
অপূর্ব নিজের মন কে শান্ত না, দিচ্ছে
হ্যালোসুলেশন, হচ্ছে।

চোখের পাতাগুলো টিপ টিপ করে, আবার দেখলো না এটা ভুল নয় , এটাতো গুঞ্জন ই, তবে সে কি মারা যায়নি,, সূর্য সাদিক ওরা যে বললো গুঞ্জন মারা গেছে।
ধব,করে গাড়িটা ব্রেক করলো।
সূর্য বললো,কি হলো গাড়ি থামালে কেন??
অপূর্ব ভাবলো, মেয়েদের কিছু বলা যাবে না ভয় পাবে। ভাবনা ছেড়ে বললো,গাড়ি থেকে নাম চাকায় সমস্যা হয়েছে,,
তোমরা বসো।
শ্রাবন ঘুমিয়ে পরে,,তাই ওকে আর ডাকেনি।
সাদিক,অপূর্ব, সূর্য নামলো

,, গুন্জন কে দেখা মাত্রই,, সবার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়,, চারদিক থেকে যেন কালো ধোঁয়া জর্জরিত করে, চাঁদনী আলো ,নিভিয়ে দিয়েছে।
অপূর্ব থেকে গুঞ্জন এর দূরুত্ব প্রাই – ৫০ হাত অনেক টাই দূরে।
তোরা যে বললি গুঞ্জন খু,ন হয়েছে তবে এই কে?
সাদিক:, আমাদের কাছে তো এটাই খবর এসেছিল,,
অপূর্ব বললো, ‘লা’শ কি নিজের চোখে দেখেছিস,?
সাদিক, সূর্য না সূচক মাথা নাড়ে।

গুন্জন থম মেরে দাঁড়িয়ে, আচমকা, উল্টো দিকে দৌড়াতে শুরু করে , এমন মনে হলো সে, আজ,রাইল দেখেছে।
হঠাৎ দৌড়াচ্ছে কেন?
কিছু তো গড়মিল আছে,
সূর্য:এর খোঁজ কাল করবো এখন ছার, বাড়িতে ফিরতে দেরি হচ্ছে।
অপূর্বর যেন সবকিছু ঘোলাটে লাগছে,,
মনে হচ্ছে,সব সূত্র আমার চোখের সামনে তবে আমি দেখছি না,
কে এই গুঞ্জন আমাদের পেছনে কেন পরে আছে, যদি নাই,খু,ন হয়ে ছিল তবে ভুল তথ্য কে দিলো , হাজার টা প্রশ্ন যেন মাথা ঘুরছে।
পরদিন সকাল বেলা—-
জয়া কাঁপা কন্ঠে অপূর্ব কে ডাকলো।বললো, দরজা খোল, বাবা দরজা খোল,,
অপূর্ব চোখে ঘুম নিয়ে দরজাটা খুলে দেখলো,জয়াকে।,জয়ার চোখে মুখে ভয়ের ঝাঁপসা।
কি হয়েছে ডাকছো কেন?

এলিজা পর্ব ২১+২২

জয়া কাঁপা কন্ঠে, বলে উঠলো।
তোরা যে , গুঞ্জন কে নিয়ে আলোচনা করেছিলিস, তার লা,শ আমাদের গাড়ির,ঢিকিতে পাওয়া গেছে.

এলিজা পর্ব ২৫+২৬