এলিজা পর্ব ২৫+২৬
Dayna
৩ বছর পর___________
নির্বিসে, অধিরে,কষ্ট, বেদনায়, রহস্য উন্মোচন, বন্ধু হারানো , একের পর এক নির্মম মৃত্যু,এসব দেখতে দেখতে কেটে যায় তিনটি বছর। এই পর্যন্ত ৪০ টা লা,শ আমাদের নাগালে এসেছে। জানি না আর কত নিরীহ মানুষ মৃত্যু খেলায় প্রান হারাবে এখনো আমরা সেই কি,লার কে খুঁজে পেলাম না। তবে সবকিছুর ই শেষ আছে এর ও হবে।
আজ ও মনে পরে রায়হান কে হারানোর দিনটি।সেদিন পূরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিল। আজ ও আফসোস হয় মৌলবীর মৃত্যু তে , কি বলতে চেয়েছিলো। তারা দুজন। গুন্জন কে কে বা কারা আমার গাড়ির ঢিকিতে রেখেছিলো তা আজ ও অজানা । খেলাটা শুরু যেই করেছে শেষ আমাকেই করতে হবে।
দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেক দিন। তবে আজ ও ভুলতে পারিনি রায়হান কে।
বন্ধু হারানোর ব্যাথাও যে এতটা তিঘ্ন তা আজ বুঝতে পারছি।
সূর্য,পলাশ, হিমেল,মিদুল সবাই দূরে।
সূর্য, ওর মামা বাড়িতে।মামা অসুস্থ দেখার মত কেউ নেই। তাই সূর্য হয়তো ছেলের স্থান টা পূরন করতে চাইছে।
পলাশ, মিদুল , হিমেল ,তিন জন মিলে ছোটখাটো একটা টূরের প্লান করে সেখানে গেছে।
আমাকে বললেও আমি না রাজি হইনি যেতে। কারন সূর্য কাছে নেই। সূর্যের অতীত টা যেদিন থেকে আমি জেনেছি,সেদিন থেকে যেন ওর প্রতি ভালোবাসা টা বেরে গেছে। মায়া হয় বড্ড। কি নির্মম অতিত।
মনে পরে আজ ও।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফেলে আসা কৈশোর,
দুরন্ত ঘুড়ি , প্রথম সাইকেল চালানো
পাড়ার সীমানা ছাড়িয়ে
প্রথম হারিয়ে যাওয়া শহরে ।
দাদা বাড়ি শীতের ছুটিতে
হলুদ বনে সরষের গন্ধ মাখানো শরীর নিয়ে
জল হারানো শান্ত পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি ।
এমনি
আরো অগন্তি স্মৃতিরা ঘিরে ধরে
নীরব কোলাহলে।
আমি হারিয়ে যাই।
সেই মধুর সময় আর আসবে না ফিরে।
হাজারো কষ্টের মাঝে হাহাকারের, মাঝে শান্তি নিয়ে এসছিলো এলিজা।
সবকিছুর মাঝে সে যেন অনন্ত সুখ। তার চোখের দৃষ্টি যেন আমাকে নতুন করে পথ চলা শেখায়।
এলিজা বাড়িতে নেই। সকালে বেড়িয়েছে এখনো আসেনি। একটা এনজিও তে চাকরি নিয়েছে।
অনেক বুঝিয়েছি চাকরি নেয়ার দরকার নেই।
কিন্তু সে করবেই কারন তার মামার,
বয়স হয়েছে, মামি হাস, মুরগি, গরু এসব লালন পালন করেন।
তাতে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পরে। তার উপর পাখি এবার মেট্রিক পরীক্ষা দিবে। টিউশন করতে হয়। স্কুলের ফি দিতে হয়। সব মিলিয়ে এলিজাকে, চাকরি করতেই হতো। কারন সে যে কারোর দয়া নিবে না। আমি অনেক বার বলেছি। আমি তাদের ভরন পোষন এর দায়িত্ব নিবো। কিন্তু তা সে রাজি নয়।
বলে ,স্বামির বাড়ির টাকা কখনো বাবার বাড়িতে দিতে নেই। লোকজন কি বলবে। তাই ভেবে সে নিজেই চাকরি নিয়েছে।
এলিজা, ইন্টারমিডিয়েট শেষ করছিলো।
বাবা মা মারা যাওয়ার পর আর পরাশুনা করতে পারেনি।
আমি কিছুদিন অবসরে।
শ্রাবন কেও পুলিশ এর চাকরি নিয়ে দিলাম।
ছেলেটা বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে। কিন্তু যেদিন সূর্য,র অতিত জেনে যায়,তারপর থেকে বিয়ের কথা বললেই বলে, যদি তাকে হারিয়ে ফেলি তবে সেই কষ্ট সহ্য হবে না, তাছাড়া সহরের কোন মেয়েও নাকি ওর পছন্দ হয়না।
ছাদে বসে একা একা এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে যায় বুঝতেই পারেনি অপূর্ব _
দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হয়তো। এলিজা এসেছে। অপূর্ব নিচে চলে আসে।
এলিজা: মনজু বুবু !উনি কোথায়?
বলতেই অপূর্ব সিড়ি থেকে নেমেই বললো,
ম্যাডাম, আপনার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে যে,কত প্রহর কেটে গেছে।
এতক্ষনে আসার হলো।
এলিজা মৃদু হেসে, অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার খুব শান্তি লাগে,যখন আপনার চোখে আমার জন্য অপেক্ষার ছাপ দেখি।
এলিজা:বাড়ির সকলে কোথায়?
অপূর্ব: অর্পা টিউশন থেকে ফেরেনি এখনো। মা ঘুমোচ্ছে। বাবা বাহিরে।
শুনছেন, গতকাল চিঠি এসেছে পাখির।
ওর তো কিছুদিন পর মেট্রিক পরীক্ষা। মামির শরীর টা ভালো নেই। ওর ঘরের কাজ করতে হয়।
এই সময়ে ওর পরার দরকার তা রেখে যদি কাজ করে,তবে ফলাফল খারাপ করবে।
আমি চেয়েছিলাম আমরা যদি কিছুদিন তিলকনগর গিয়ে ,থেকে আসি তবে
আপনার কি কোন সমস্যা হবে? -বললো এলিজা।
অপূর্ব মৃদু হেসে উত্তর দেয়, আমার কোন আপত্তি নেই। আমার ম্যাডামের সাথে, আমি কাঁটা -জড়িত পাহাড়েও থাকতে রাজি।
রাত ১১ টা——-
ল্যান্থলাইনে কলের আওয়াজ।
ল্যান্থলাইনে বেশিরভাগ অপূর্ব কে ,থানা থেকে ই ফোন দেয়া হয়।
অপূর্ব দ্রুত পায়ে নিচে নেমে ফোনটা তুললে ওপাশ থেকে বলে উঠলো।
স্যার,, ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ কিছু জঙ্গি রা আক্রমন করেছে। আপনাকে ডিসি সাহেব দ্রুত টিম নিয়ে সেখানে যেতে বলেছেন। জঙ্গিরা ,, ছাত্র-ছাত্রীদের আক্রমন করার আগে আপনাকে পৌঁছাতে বলেছেন।
ওপাশ থেকে বলা কথা গুলো খুব হতাশায় ভরা ছিলো।
অবসরে থাকার পরেও আজ যেতে হচ্ছে। কারন,এটা আমার দায়িত্ব।
অপূর্ব দ্রুত গতিতে, পুলিশ ইউনিফর্ম পরে,একটা রাইফেল নিয়ে বেড়িয়ে পরে।
এমন সময় সাদিক ও হাজির হয়। অপূর্ব সাদিককে দেখেই বুঝতে পেরেছে কেন এসেছে।
দু’জনে গাড়িতে উঠে চলে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
পূরো টিম সেখানে।
চারদিকে গুলির আওয়াজ।
গুলির আওয়াজে চারদিক টা এলোমেলো হয়ে গেছে।
রাইফেল, থেকে বের হওয়া ধোয়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে।
কোথাও যেন একটা কাঁক নেই। যে শহর কাঁকের আহা,জার সেই শহর জঙ্গিদের আক্রামনে নিরব।
শুধু শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দ।
সাদিক বরাবরই ভিতু। যেকোনো সাংঘাতিক মূহুর্তে সে ভয় পেয়ে যায়।
অপূর্ব,সাদিককে গাড়িতে বসে থাকতে বলে।
কিন্তু সাদিক রাজি হলো না।
বলে,তোকে একা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আমি শান্তি তে বসে থাকতে পারবো না।
অপূর্ব, মেজাজ দেখিয়ে বললো,
তোকে বলেছি এখানে,বসে থাকতে তো থাকবি, আমাদের বন্ধুত্বের কসম। আমি আসছি বলেই, অপূর্ব জঙ্গিদের উপর একের পর এক,গুলি ছুরতে থাকে।
একের পর এক, একের পর এক, লা,শ পরতে থাকে।
নি’হত হয় অনেক পুলিশ অফিসার।
নিরিহ পুলিশ অফিসারদের জীবনের বিনিময় জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক জন জঙ্গি প্রান হারায়।
বাকিদের পুলিশেরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
জরো হয় হাজারো মানুষ।
জরো হয়, হাজারো সন্তান, হারা মা। চারদিকে কান্নার আহা,জারি বইছে্।
এ্যাম্বুলেন্স এসে মৃতু লা,শ গুলো নিয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় এর পেছন থেকে বেড়িয়ে আসে অপূর্ব,
হাতে রাইফেল।
শরীরে রক্ত। পুরো শরীর টাই রক্তে ভিজে গেছে।
সাদিক দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে হুহু করে, কান্না শুরু করে।
সন্তান হারা মায়েদের আর্তনাদের চেয়েও সাদিকের আর্তনাদ বেশি ভয়ংকর।
সাদিক কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো—-কেন আমায় বন্ধুত্বের কসম দিয়ে স্বার্থপরের মত দূরে রেখে একাই মৃত্যুর মুখে ঠেলে পরলি।
অপূর্ব বললো,
বন্ধু হারানোর বেঁদনাও যে বড্ড কাঁদায়। একজনকে হারিয়ে আজ ও পুড়ছি।
যদি তোর কিছু হয়ে যায় তাই দূরেই রাখলাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষার্থী রা বেড়িয়ে আসে।
ইট পাথরের রাস্তা আজ র’ক্তে রঞ্জিত।
অপূর্ব, মাটিতে পরে থাকা একটা ওয়ালেট দেখতে পায়।
ওয়ালেটে কি আছে দেখতেই নিচ থেকে তুলতেই,সাদিক- দূর থেকে দেখতে পায় একজন জঙ্গি লুকিয়ে আছে। তার হাতের
বন্ধুক টা ঠিক অপূর্বর দিকে নিশানা করা।
এখনই গুলি করবে।
সাদিক চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো—-সরে যা অপূর্ব, বলেই অপূর্ব কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজেই মৃত্যুর সামনে বুক পেতে দেয়।
সাদিক ঢলে পরে যায় রাস্তায়। সাদিকের বুকের মাঝে গুলি লাগে।
অপূর্ব চিৎকার দিয়ে উঠেই জড়িয়ে ধরে সাদিককে।
চারদিকের সবাই আবার ছোটাছুটি করছে।
গুলি করা জঙ্গি কে ধরে ফেলে একজন পুলিশ অফিসার।
চারদিকে কালো ধোঁয়া নেমে আসছে। আকাশ টা আজ বড় একা হয়ে আসছে।
অপূর্বর পুরো শরীর সাদিকের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়।
অপূর্ব অঝরে কাঁদদে কাঁদদে বললো,
এই সাদিক এই সাদিক কি করলি এটা ,
সাদিকের রুহটা চলে যাচ্ছে প্রাই, সেই ভরাকান্ত অবস্থায় সাদিক বললো,
আমি থাকতে তোর কি করে ক্ষতি হবে। হা বলনা , আমার সামনে তোকে কেউ মেরে ফেলবে আমি তা দেখবো, আমি যে,তোকে বড্ড ভালোবাসি। আমার সামনে তোর মৃত্যু যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারবো না।
অপূর্ব : তোকে না আমি কসম দিয়েছি , বিপদের বুকে পা না বাড়াতে ,তবে এলি কেন আমার সামনে ,কেন তোর বুক পেতে দিলি। অপূর্বর কান্নায় পুরো শহর থমকে গেছে। আকাশ টাও অঝরে কাদছে।
প্রকৃতি আজ একা হয়ে গেছে। আকাশের নিল রঙ নিমিষেই কালো হয়ে গেছে।
অপূর্ব ভেজা কন্ঠে বললো,*কসম ভঙ্গ করাতে যদি পাপ হয়”” আর আমি পেলাম জীবন* বলেই অপ্রুভ ভাবে কাঁদদে থাকে।
সাদিক দুটো হেঁচকি তুলে চোখ দুটো চিরদিনের জন্য বুঝে ফেলে।
এই চোখ আর কোনদিন দুনিয়া দেখবে না। এই চোখ আর কখনো, বন্ধুকে দেখবে না।
অপূর্ব অঝরে কাঁদদে থাকে।
কাপা কন্ঠে বললো,এই সাদিক ওঠ না ওঠ, তুই কি করে ছেড়ে চলে যেতে পারিস, কে আমাকে অপূর্ব অপূর্ব বলে ডাকবে।
কে আমাকে সঙ্গ দেবে।
কেন কসম ভঙ্গ করলি,
আমি নিষ্ঠুর, আমার সামনে আমার বন্ধু কে শেষ হতে হলো। আমি যে বাঁচাতে পারলাম না। পারলাম না বাঁচাতে।
বলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে ফাটিয়ে এক চিৎকার।
সবাই আশপাশ থেকে দেখছে, অপূর্বর কান্না দেখে তারাও কাঁদছে।
কি নির্মম পরিহাস। নিজের চোখের সামনে রক্তাক্ত বন্ধুর লা’শ।
সাদিকের লা,শ টা
এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে চাইলে অপূর্ব নিতে দিতে চাচ্ছে না। সে কিছুতেই তার বন্ধুর লা,শ নিতে দিবে না কিছুতেই না।
২জন কনস্টেবল অপূর্ব কে সরিয়ে নেয়।
তার বন্ধুকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা তার সহ্য হচ্ছে না।
এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে গাড়ি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে।
অপুর্ব অ্যাম্বুলেন্স এর পিছন পিছন ছুটতে থাকে ,
সাদিক যাসনা_ যাসনা আমায় একা করে যাসনা।
এ্যাম্বুলেন্স টি চোখের আড়াল হয়ে গেলো
অপূর্ব, হাটুঘেরে রাস্তায় বসে পরে।
সমস্ত কিছু আজ এলোমেলো লাগছে।
আমি বড় দূর্ভাগা—— কসম ভাঙাতে যদি পাপ হয়,তবে আমি কেন জীবন পেলাম !!
তোর আর আমার বন্ধুতের বন্ধন থাকবে চিরদিন। —
রাত ৩ টা নাগাদ অপূর্ব বাড়ি ফিরে।
দরজা খোলাই ছিলো।
সবাই সজাগ,কেউ ঘুমোয়নি সবাই জেগেই ছিলো। অপূর্বর অপেক্ষায়।
মনজুরা,মনোরা, জাহাঙ্গীর,জয়া ,অর্পা, শ্রাবন, সবাই অপূর্বর র’ক্ত মাখা শরীর দেখে শিহরিত হয়ে ওঠে।সবার মুখের রঙ নিমিষেই বদলে যায়। হতভম্ব হয়ে যায় সবাই
অপূর্ব ধপাশ করে হাঁটু ঘেরে, মেঝেতে বসে পড়ে। আজ পূরো পৃথিবীটা নিস্তব্ধ, আকাশ টা বড্ড অভিমান করে আছে আমার সাথে। আমি যে,আমি যে আমার বন্ধু কে বাঁচাতে পারিনি।
চোখের সামনে রক্তাক্ত শরীর টা বার বার আমায় বলছিল। বাঁচতে চাই আমি বাঁচতে চাই। একসাথে তোর সাথে আরো কিছু টা সময় দীগন্ত পথ চলতে চাই।
একসাথে সেই, ছোট্ট বেলার লুকোচুরি খেলা খেলতেই চাই।
,, হাঁটুঘেরে বসে থাকা অপূর্বকে এসেই জড়িয়ে ধরে এলিজা।
হুহু করে কান্না শুরু করে।
এলিজা : কেন গেলেন আপনি? কিসের দরকার ছিল জঙ্গিদের সাথে লড়ার,যদি আপনার কিছু হয়ে যেতো তবে আমার কি হতো?
জয়া : কাউকে কিছু না বলেই এভাবে চলে গেলি যদি তোর কিছু হয়ে যেত তবে আমরা মরে যেতাম,তুই যে বেঁচে থাকার একমাত্র সম্ভল।
বলেই মুখের উপর কাপড় দিয়ে জয়া কান্না শুরু করে।
অপূর্ব চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখতে লাগলো। মাথাটা ঘুরছে। বমি বমি ভাব হচ্ছে। এমন অনুভূতি হতেই,,হঠাৎ করেই অপূর্ব মেঝেতে ঠলে পরে যায় ।
সবাই হতাশ হয়ে যায় কি হলো,কি হলো ওর।
হঠাৎ করেই সবার কান্নায় চৌধুরী বাড়ি এলোমেলো হয়ে যায়।
মনজুরা দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে আসে।
পানির ঝাপটা দেয়ার পরেও অপূর্বর কোন জ্ঞান ফেরে না। হাতের পাল্স পর্যবেক্ষন করলে তা নিস্তেজ।
শ্রাবন, এ্যাম্বুলেন্স কে ফোন করে। কিছুক্ষণ এর মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স আসে।
ঢাকা ,পিজি হাসপাতালে অপূর্ব কে নিয়ে যাওয়া হয়।
অর্পা,জয়া অঝরে কাঁদতে থাকে।
শ্রাবন দেয়ালের সাথে পিট ঘেষে দাড়িয়ে আছে। চোঁখের কার্নিস দিয়ে পানি পরছে।
জাহাঙ্গীর ভরা গম্ভীর মুখ নিয়ে বসে আছে।
কোন অজানা চিন্তায় যেন সে বিভোর।
এলিজা হাসপাতালের মেঝেতে বসে বসে ফোপাচ্ছে।
অপূর্বর ,চেকাপ করে বেড়িয়ে আসে ডাক্তার , ইব্রাহিম।
ডা: ইব্রাহিম, চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক ডাক্তার ।
ডাক্তার বেড়িয়ে আসার সাথে সাথে এলিজা কাঁপা কন্ঠে বললো, কি হয়েছে ওনার ?বলুন না কি হয়েছে?
সবাই ডাক্তারের কাছে চলে আসে।
ডা: ইব্রাহিম বললো, তেমন কিছু না হার্ট দুর্বল হয়ে গেছে।
বলতে পারেন,মিনী এ্যাটাক।
জাহাঙ্গীর কাপা কন্ঠে বললো,আমার ছেলের কিছু হবে না তো ?
বললাম তো চিন্তার কোন কারন নেই। ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি ৪৫ মিনিট পর জ্ঞান ফিরবে।তখন দেখা করবেন।
ইব্রাহিম: চৌধুরী সাহেব আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
বলেই জাহাঙ্গীর কে নিয়ে চলে যায়।
শ্রাবন পরোক্ষ করলো ডা: ইব্রাহিম এর ব্যাপার টা কেমন জানি মনে হলো। কি বলতে নিয়ে গেলো তাকে। খুব অদ্ভুত মনে হলো।
শ্রাবন তাদের অনুসরণ করে।
হাসপাতালের এক কোনে বসে দুজন কথা বলছে।
পরিষ্কার কিছু শোনা যাচ্ছে না।
তবুও কিছু শোনার চেষ্টা করলে , শ্রাবন শুনতে পায় জাহাঙ্গীর বলছে,আপনি কাউকে এই কথা বলবেন না। * কখনো ই না।
শ্রাবন ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে বললো,কি বলবে না, কিসের কথা বলছে,তবে কি অপূর্বর খারাপ কিছু হয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে শ্রাবন সেখান থেকে পদত্যাগ করে।
৪৫ মিনিট পর———-
অপূর্ব,টিপ টিপ করে চোখ খুলছে। চারপাশে গোলাকার ভাবে সবাই বসে আছে ।
অপূর্ব : কি হয়েছিল আমার, আমি এখানে কেন?
সবাই ধুব্রে অপূর্ব কে পরোখ করছে।
তৎক্ষণাৎ অপূর্ব অস্থির ভাবে বলে উঠলো,
সাদিক , সাদিক ,সাদিক কোথায়। সাদিককে কোথায় নিয়ে গেছে ওরা।
বলেই হাতের ক্যা,মো টা ছুটাতেই এলিজা বা ,পাঁজরের উপর হাত দেয় বললো,শান্ত হন , আপনার শরীর ঠিক নেই। আপনার এই মুহূর্তে উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়।
এলিজার নরম গলায় কথা গুলো শোনা মাত্রই অপূর্ব শান্ত হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে হাজির হয়
একজন কনস্টেবল।
কনস্টেবল কে দেখেই অপূর্ব সোয়া থেকে উঠে বসে পরে।
আপনি এখানে সব ঠিক আছে তো?
কনস্টেবল বললো,
স্যার – রাজনীতিবিদ জুনায়েদ খান, এর ছেলে মুন্না, ২ মাস আগে নিখোঁজ হয়েছিল তার লা,শ পাওয়া গেছে।
আর তার লা,শের উপর চামড়া গুলো নিকৃষ্ট ভাবে কে’টে লিখে দেওয়া হয়েছে..
অপূর্ব আতংক ভরা কন্ঠে প্রশ্ন করলো,কি লেখা আছে?
কনস্টেবল: আমার পাপের সম্রাজ্য যে একবার আসে যে আর হৃদয় নিয়ে ফিরে যেতে পারে না। যেতে হয় হৃদয়হীন ভাবে।
তাছাড়া অবাক করা বিষয় হলো মুন্নার শরীর থেকে হার্ট বের করে নেয়া হয়েছে।
জয়া,শ্রাবন ,অর্পা সহ সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।
জয়া বললো,কে এই জঘন্য খু’নি। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি , লুকিয়ে থাকা কিলা,রটি যেন খুব শীঘ্রই ধরা পরে। আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয় ।
মনজুরা বললো,
সন্তান হারানোর ব্যাথা খুব তিঘ্ন তাইনা আপা?
মনজুরার বলা বাক্যে গুলো অপূর্ব কে কিছু ভাবায় তবুও এড়িয়ে যায়।
২ দিন পর——-
চলন্ত গাড়ি থেকে বাহিরের ভরাকান্ত,উষ্ন , চিত্র গুলো দেখতে অসাধারন লাগছে।
জানালা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া বইছে।
রোদের উজ্জ্বলে ধুলিকনা গুলো দেখা যাচ্ছে। আজকের সূর্য টা একদম নতুন। প্রকৃতি গুলো আজ সতেজ।
ওনাকে অনেক মনে পরছে ।
বলেছিলাম আমার সাথে তিলকনগর- চলে আসেন। কিছুদিন থাকলে মন টা হয়তো ভালো হবে।
বন্ধু হারানোর বেঁদনা তাকে গ্রা’স করেছে ।
তবে সে বললো আজকে রাতে আসবে । থানাতে কি কাজ পরেছে। তাই এখন আসতে পারলো না। আমার চোখে সেরা একজন মানুষ, আমার স্বামী। সকলকে নিয়ে কত চিন্তা তার।
পবিত্র একজন মানুষ।
এলিজা এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়ি এসে থামে আলি বাড়ির সামনে।
এলিজা গাড়ি থেকে নামতেই দৌড়ে আসে পাখি। হুহু করে কান্না শুরু করে দেয়। কতদিন পর সে তার প্রিয় বোনকে দেখছে।
এলিজা কে ভেতরে নিয়ে যেতে ই দেখে সেই পাগলি মেয়েটিকে দেখে। যেই মেয়েটিকে দেখেছিলো অচিন পাহাড়ে। হাতে একটি ছবি ।
এলিজার দেখে মনে কৌতূহল জাগলো । মেয়েটির সাথে কথা বলবে বলে মনস্থির করলো।
এলিজা: পাগলি টা কে রে এলাকাতে আগে দেখেনি?
পাখি : গত ২-৩ বছর ধরেই এই পাগলি মেয়েটা হাতে একটা কি নিয়ে ঘুরে। কাউকে ধরতে দেয়না।
এলিজা: রাতেও কি এদিকে থাকে ?
পাখি হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।
এলিজা পাগলি মেয়েটিকে পরোখ করতে করতে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
জয়তুন এলিজাকে দেখে খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে। হুহু করে কান্না শুরু করে দেয়।
জয়তুন : এতদিন পর মামিকে মনে পরলো ? অনেক বড় হয়ে গেছিস তাই না। মামিকে ছেড়ে দূরে থাকতে শিখে গেছিস ।
বলেই এলিজার সাথে আলিঙ্গন করে নেয়।
জয়তুন নিজের লালন করা,দেশি মুরগি জ,বাই করে, বিভিন্ন কিছু রান্নার আয়োজন করে সাথে এলিজাও।
রাতে অপূর্ব আসবে তাই ভালো মন্দ তো রান্না করছে।
রাত ৮ টা —
এলিজা উঠানে পায়চারি করতে থাকে। কোন অজানা চিন্তায় বুকের ভেতর চিন চিন করছে।
শান্তি পাচ্ছি না কোনভাবে।
খুব অসহায় লাগছে। মা বাবাকে , ভাইকে অকাল ভাবে হারিয়ে ফেললাম।
এক হতভাগা নারী আমি।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পরে শায়ান এর কথা।
সেদিন শায়ান,বার বার জিজ্ঞেস করছিলো ,ভালো যদি নাই বেসেছিলে তবে আমার ডাকে সাড়া কেন দিয়েছিলে।
শায়ান এর ভুল টা ভাঙাতে পারিনি। সেদিন নিমতলা যে আমি অন্য কারো জন্য গিয়েছিলাম । ওনার জন্য নয়। বলেই ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেললো এলিজা।
এলিজা মনস্থির করলো আজ এক্ষুনি একবার শায়ান দের বাড়ি যাবে। অপূর্ব আসার আগে।
শায়ান বাড়ি না ঢাকা তা জানা নেই। তবে বাড়ির অন্য কারো কাছ থেকে খোঁজ তো নিতে পারবো।
হয়তো এখন বিয়ে করেছে । শুখে সংসার করছে। তবুও কেন জানি মন টা কুহ ডাকছে।
পাখি কে সাথে নিয়ে একবার যাওয়া যাক।
ততক্ষণে উনি আসুক।
রাত ৯ টা ——
অপূর্ব তিলকনগর-এ চলে এসেছে।
গাড়িটা এসেই তিলকনগর স্টেশনে ধামে।
আজকে অপূর্ব বাসে করে এসেছে। গাড়ি দুটো গ্যারেজে।
তিলকনগরে কাউকে সন্ধ্যার পর আর রাস্তা ঘাটে দেখা যায় না। নির্জন হয়ে যায়।
চারদিক কি শ্মুনশান।
নিরব পরিবেশ। এমন মনে হচ্ছে এখনি কোথাও থেকে জন্তু, জানোয়া,র এসে হানা করবে।
গ্রাম টা এত নির্ঝন কেন কে জানে।
এসব ভাবতে ভাবতে অপূর্ব নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে।
হঠাৎ ই চারদিক থেকে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
আশেপাশের শশ্য শ্যামল গুলো নেতিয়ে যাচ্ছে ।
হঠাৎ ই চোখ পরে রঞ্জনার কবরের দিকে।
অপূর্ব যা দেখলো তাতে তার মাথার উপর আকাশ টা ভেঙ্গে পরে। পৃথিবীর সমস্ত ভার তার শরীরের উপর আচরে পরে। অপূর্বর বুকের ভেতর কম্পন শুরু হয়।
রঞ্জনার কবরের কাছে সূর্য আর শ্যামলী ,
দুজনে কথা বলতে বলতে এমন ভাবে ইঙ্গিত করছে যেন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাসিল হয়েছে।
কিন্তু সূর্য তো বলেছিলো ও ওর মামা বাড়ি তবে এখানে কি করছে। তবে কি আমাকে মিথ্যা বলেছে।
অপূর্ব ঘাপটি মেরে বসে পরে। গাছের আড়ালে।আজ দেখতেই হবে এরা কি করছে।
দু’জনে মিলে কোথাও যাচ্ছে।
আমি ও ওদের পিছু পিছু যাই।
হাঁটতে হাঁটতে, ওরা দুজন পৌঁছালো রুশরাজ্যে।
আমি আরো অবাক হই ওরা ওখানে কেন।
রুশরাজ্যে অতিক্রম করে ওরা চলতে শুরু করে ঝোপঝাড় এর ভিতরে।
গহিন অন্ধকারে কি করছে ওরা। আমি কি ঠিক দেখছি নাকি হ্যালোসোলেশন হচ্ছে।
পিস্তল টা বের করে আমিও ঠুকে পরি ঝোপঝাড়ে
, কিন্তু হঠাৎ করেই দুটো মানুষ গায়েব কোথাও নেই।
কোথাও কোন পায়ের শব্দ নেই। কোথায় গেলো?
এলিজা পর্ব ২৩+২৪
নাকি আমি বন্ধু হারানোর বেঁদনায় হয়তো উল্টো পাল্টা দেখছি। ব্রেনে চাপের জন্য কি হ্যালোসোলেশন হচ্ছে। অনেকক্ষন খোঁজার পর ও ওদের হদিস পেলাম না।
হয়তো মনের ভুল।
অপূর্ব এসব ভাবতে ভাবতে, উল্টো দিকে রওনা,হয়। তবে কি আমরা ভাবনা ভুল নাকি যা দেখেছি সব সত্যি আর যদি সত্যি হয় তবে কি লুকোচ্ছো সূর্য –