এলিজা পর্ব ২৭+২৮
Dayna
এলিজা পাখিকে নিয়ে শায়ান এর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। যেতে যেতে ভয় ও হয়। শায়ানের বাবা যে রাগী মানুষ যদি কিছু বলে। তবুও সেদিন জন্য শায়ানের জবাব দিতে পারিনি যা আজকে দিতে ইচ্ছে করছে।
শায়ানদের বাড়িটা পুরো শ্মুনশান কোথাও কেউ নেই ।আমি দরজায় করা নাড়লাম। অনেকক্ষন অপেক্ষা করলাম।কেউ আসছে না। অনেকক্ষণ পরে দরজা খুললো শান্তা
শান্ত আমাকে দেখেই চমকে উঠে।
চোখের কোণে কোথাও যেন একটি ঘৃণার ছাপ দেখতে পেলাম।
শান্তা ভ্রু ভাঁজ করে একবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।পূনরায় এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে কাট গলায় বললো,এলিজা আপু আপনি এখানে?
এলিজা আমতা আমতা করে বললো, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিবে না? এখানে বসেই উত্তর নিবে?
” আসুন।
ভিতরে গেলাম বাড়িটা অনেক বড় সাজানো গোছানো কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।
এলিজা প্রশ্ন করলো, তোমার মা বাবা কোথায়?
শান্তা নিশ্চুপ মন নিয়ে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো মায়ের ঘরের দিকে।
এলিজা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। দেখলো-
শায়ানের মা উইল চেয়ারে বসে আছে।
এলিজা কে দেখেই অস্থির হয়ে যায়। চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে। তার ভাব ভঙ্গিমা দেখে মনে হয় কিছু বলতে চাইছে। এলিজা শান্তার দিকে আড়চোখে তাকালো। শান্তা এলিজার চোখের দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললো- মা কথা বলতে পারেনা। প্যারালাইসিস হয়ে মুখ,পা অবশ হয়ে গেছে।
এলিজা জিজ্ঞেস করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাকু কোথায়??
শান্তা মাথা নিচু করে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো-বাবা মারা গেছেন। হার্ট অ্যাটাক এ।
শুনেই মনের অজান্তে এলিজার চোখে পানি চলে আসে।
এলিজা শান্তা কে অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করলো,
শায়ান কোথায়??
শান্তা হুহু করে কান্না করে শুরু করে ।
“বলোনা তোমার ভাই কোথায়?
শান্তা আঙুলের ইশারায় বাহিরের দিকে দেখিয়ে দেয়।
এলিজা বাহিরে চলে আসে।
কোথাও তো কেউ নেই। এখানে কেন দেখালো।
শান্তা , একটা টর্চ নিয়ে, তাদের পারিবারিক কবর,স্থানে নিয়ে যায় এলিজাকে।
একটি কবর,রের দিকে দেখিয়ে বললো – ঐ যে ভাইয়া আপনার অপেক্ষায় শুয়ে আছে।
বলেই হাঁটুঘেরে বসে পরে শান্তা।
অঝরে কান্না শুরু করে।
এলিজাও হাঁটুঘেরে বসে পরে ,
কাদো কাদো মুখে বললো- কি হয়েছিল শায়ানের ?
কিভাবে মারা গেলো?
শান্তা রেপিং করা একটা প্যাকেট দিলো এলিজার হাতে।
শান্তা: এটা আপনার জন্য ভাইয়া রেখে গেছে।
বলেই কান্না শুরু করে।
রেপিং করা প্যাকেটে খুলে দেখলো,
কিছু বেলিফুল এর মালা
আর একটা চিরকুট।
চিঠিটায় লেখা ছিল __
___ প্রিয় ___ এলিজা
জানতাম তুমি কোন না কোনদিন আমার খোজে আসবে ।যেদিন তুমি আমার এই চিঠিটা পাবে ।আমি জানি সেদিন আমার জন্য তোমার মনের অজান্তেই অন্তত দু ফোটা চোখের পানি পরবে।
যখনই শুনেছি ঘর বেঁধেছো অন্য কারো থমকে গিয়েছিল আমার হৃদয়। পূরো পৃথিবীটা যেন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল।
শেষ হয়ে গিয়েছিল আমার জীবনটা।
আমি পরিষ্কার দেখতে পেয়েছি সেদিন, আমার জীবনের পথ চলা এখানেই শেষ,যেদিন তোমাকে দেখি,দাড়িয়ে আছো অন্য কারো সাথে ।সেদিন থেকে আমার পায়ের হাটার শক্তি আর ছিল না।
যেদিন দেখেছি তোমাকে অন্য কারো সাথে হাঁসতে, বিশ্বাস করো আমার হাসিটা ওখানেই শেষ বারের মতো বিলীন হয়ে গেছিলো।
যখন ই ভাবি, তোমার নিঃশ্বাস পরছে অন্য কারো বুকে, বিশ্বাস করো আমার নিঃশ্বাস টা সেদিন আটকে আসছিলো। যখন ই শুনেছি তুমি বেঁধেছো অন্য কারো সাথে ঘর , আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, আমার ঘর বাধার স্বপ্ন যে এখানেই শেষ। যখনই ভাবি তোমার হৃদয়ের স্পন্দন,পাচ্ছে অন্য পুরুষ। তখন আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম আমার হৃদয়ের স্পন্দন এখানেই বন্ধ হয়ে গেছে।
কেন গিয়েছিলি আমায় একা করে,পরের ঘরে।
তুমি জানতে না কতটা কষ্ট হবে আমার।
ঐ এলিজা শুনো না ভারি কষ্ট হয় জানো খুব কষ্ট হয়। প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনা যে কতটা নিষ্ঠুর তা তুমি হয়তো কোন না কোনদিন বুঝবে।
তবে আমি চাই সেই দিন তোমার জীবনে না আসুক।
আমার জীবনের প্রতিটি সুখ তোমার হয়ে যাক।
শুনছো , এলিজা। তোমাকে আমি এতটা ভালোবেসেছিলাম যে বেঁচে থাকতে যে তোমাকে ঘৃণা করতে পারবোনা।
বেচে থাকতে যে জীবনে প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে ঘৃনা করে বাঁচতে হবে। সেই জীবন রেখে কি হবে।
বেঁচে থেকে তোমাকে ঘৃনা করার চেয়ে ভালোবেসে মৃত্যু কে বেঁচে নিলাম।
ওহে পৃথীবি বলে দিও তাকে। বেঁচে থাকতে যে আমি আমার ভালোবাসার মানুষ টিকে ঘৃনা করতে পারবো না, তাই মৃত্যু কে বেঁচে নিয়েছি।
।
তাই চলে গেলাম আমি পরপারে।
ঐ এলিজা শোনো না! পরপারে দেখা হলে কোন এক নিমতলায় আমি আবার তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। সেদিন অন্তত আমায় গ্রহন করো।
ভালো থেকো আমার শখের সখী।
_______ইতি
ব্যার্থ শায়ান——
এলিজা থম মেরে বসে পরে। খুব একটা উত্তেজনা দেখলো না এলিজার মধ্যে। পাসান্ড মহিলি (মনে মনে ঘৃনা নিয়ে বললো শান্তা)
এলিজা খেয়াল করলো
কব,রের পাশে বসে একটা মেয়ে গুন গুন করছে।
উকি মেরে দেখলো। এই সেই পাগলি মেয়েটি।
যেই মেয়েটিকে অচিন পাহাড়ে দেখেছিলো।,আজকে সকালেও দেখেছে। কে মেয়েটি?
এলিজা: এই পাগলি মেয়েটা কে?
শান্ত কাপা কন্ঠে বললো,- ইনি মীরা।যিনি আমার ভাইকে ভালোবাসতো। যেদিন শুনেছে ভাইয়া আ,ত্মহত্যা করেছে সেদিন তার ঘরের সিড়ি থেকে ছিটকে পরে গিয়ে ব্রেনে আঘাত পায়।
আপনার জন্য জন্য আমার ভাইয়ের জীবন শেষ হয়েছে।
ভাইকে যেদিন বাবা – মা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লা,শ অবস্থায় দেখেছে, সেদিন ই বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু বরন করেন।
এসব শোক সহ্য করতে না পেরে মা স্ট্রোক করে।
এলিজা মিরার কাছে গেলে শুনতে পায়। ফিস ফিস করে বলছে।
মিরা: আমাকে ভালোবাসলে কি হতো। আমাকে ভালোবাসলে হয়তো জীবন টা থেকে যেতো।
মিরা সেদিনের পর থেকে এই দুটো বাক্যই বলতে পারে।
ঢাকা_____
জাহাঙ্গীর ঘরে সব তছনছ করে ফেলছে।
দেয়ালে থাকা পেইন্টিং গুলো ভেঙে ফেলছে।
যেই সামনে আসছে তাকেই পেটাচ্ছে।
এসব করছো কেন ? শান্ত হও বলতেই জয়ার গালে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দেয় জাহাঙ্গীর।
কর্কট মেজাজে, উত্তেজনায় বলে উঠলো,
কেন যেতে দিলে অপূর্ব কে তিলকনগর ।
বারন করেছি না। আমার ছেলেকে আমার কাছ থেকে দূরে সড়ানোর।
জয়া উঠে দাঁড়িয়ে বললো-
অদ্ভুত আচরণ কেন করছেন?
জাহাঙ্গীর জয়ার দুই সিনায় শক্ত করে হাত দিয়ে, অস্তিরতা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠলো
জাহাঙ্গীর: তুমি কি কিছু জানো না? যদি ওর কিছু হয়ে যায়? যদি সবটা জেনে যায়।
বাড়ির সকলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি বলছে জাহাঙ্গীর কি জানবে!
শ্রাবন প্রশ্ন ছুরে দিলো
শ্রাবন: কে ওর কি করবে? ওখানে গেলে সমস্যা কি?
জাহাঙ্গীর আতংকিত স্বরে আমতা আমতা করে বললো, বড়দের ব্যাপারে নাক গলাতে নেই। বলেই দ্রুত পায়ে হেঁটে উপরে চলে যায়……
শ্রাবন ঘরের এক কোনেতে বসে গিটার বাজাচ্ছে। তবে গিটারের সুর ভুলে গেছে। গানের কোন কলি তার মনে পরছে না। কারন তার বড় চাচার অদ্ভুত আচরণ।
কি বলতে চেয়েছিলেন তখন।বলতে গিয়েও বলেনি।
অপূর্ব কে কেন দূরে সরাতে চান না?ডক্টর ইব্রাহিম তাকে গোপনে কেন ডাকলেন? হাজার টা প্রশ্নে শ্রাবন এর চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
কাকিমাকে তখন জিজ্ঞেস করলাম। উনি তার উত্তরে বললেন, একমাত্র ছেলে তো তাই চিন্তা করে। তাছাড়া অসুস্থ শরীর। হার্টে একটু সমস্যা।
কাকিমার কথায় আমি সত্যতা পেলাম না। তাদের এরকম আচরণ আমার ভালো লাগছে না।
কালকেই আমি তিলকনগর যাবো। কয়দিন ছুটি পেয়েছি। ছুটি টা তিলকনগর কাটাবো।
এসব ভাবতে ভাবতে শ্রাবন নতুন করে সুর ধরে।
জয়া খাটের উপর বসে পান খাচ্ছে। বিড়বিড় করে বললো,
পাপ যে বড়ই অদ্ভুত যাকে ছোয় তার জীবন শেষ করে দেয়।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় মনোরা।হাতে পানির গ্লাস। জাহাঙ্গীর কে পরোক্ষ করলো।
জাহাঙ্গীর, কালো রঙের , রাতের পোশাক পরে,চেয়ারে বসে, দোল খাচ্ছে। হাতে একটা সিগার। চোখ বুঝে মনের গহিনে কি যেন ভাবছে।
লম্বা শরীর। চাপ দাড়ি।চোখ গুলো সবসময় লাল থাকে। যে কেউ ভয় পায় তাকে। তবে আজকের আচরণ সবাইকে অনেক ভাবিয়েছে।
মনোরা চলে যায় রান্না ঘরে।
একা একা বকবক করতে থাকে। বাড়িটা একদম নিঝুম হয়ে গেছে। এখানে আর কাজ করতে ভালো লাগছে না।
পাশ থেকে মনজুরা বলে উঠলো, কখনো কখনো আমাদের অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে না। তবে তাও বাধ্য হয়ে করতে হয়।
মনজুরার কথা গুলো অন্যরকম তবুও মনোরা এড়িয়ে গেলো।
মনজুরার চাল চলন বরাবরই অন্য রকম।
অপূর্ব ধিরে ধিরে হেটে আসছে আলি বাড়ির উদ্দেশ্যে। বার বার এদিক সেদিক দেখছে। হালকা হাওয়াতে গাছের পাতা গুলো নড়ছে।
কেমন জানি মনে হচ্ছে সব রহস্যের দড়িটা আমার হাতের নাগালে কিন্তু আমি ছুঁতে পারছি না।
সূর্য কে সন্দেহ করে হয়তো আমি ঠিক করছি না।
এসব ভাবতে ভাবতে, সামনে এগোতেই খেয়াল করলো অপূর্বর সামনে থেকে ৩ জন মহিলা যাচ্ছে।
খুব দ্রুত পায়ে।
দেখে মনে হচ্ছে শহরে মার্কেট করতে গিয়েছিলো।
আমি পাত্তা না দিয়ে নিয়ে পাশ কেটে যেতেই , তাদের একটা কথা আমার কানে আসলো।
বাক্যটা এমন ছিলো।
বাবর সিকদার বেঁচে থাকলে আজ এসব হতো না।
আমি চমকে উঠলাম এই বাবর সিকদার টা আবার কে?
সবকিছু মাথা থেকে ফেলে আমি আলি বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করি।
এলিজাদের ঠিক ঘরের সামনে এলেই আমি ভেতর থেকে চেনা গলার আওয়াজ পাই।
কয়েকজন মিলে আড্ডার আশর বসিয়েছে। আমি দরজায় কড়া নাড়তেই পাখি দরজা খুলে দেয়।
তারপর আমি যা দেখলাম। আমি সম্পূর্ণ ভাবে বিষিন্নত হয়ে যাই। অবাক হয়ে যাই।
অবাক করার মানুষটি আর কেউ নয় সূর্য আর শ্যামলী।
সবাই মিলে আমাকে দেখা মাত্র ই খিল খিল করে হেসে উঠে।
সূর্য: কি ভাই একদম চমকে দিলাম তো । খুব মনে পরছিলো তোদের কথা। হঠাৎ জানতে পারি সাদিক আর নেই। তাই মামা, বাড়ি থেকে খবর পেয়ে সোজা চলে আসি তোর কাছে। কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বল??
অপূর্ব ভাবলো,উফফফ তারমানে আমার হ্যালোসোলেশন ই হচ্ছিল। ছিহ আমি দ্বিতীয় বার সূর্য কে সন্দেহ করলাম একদমই উচিত হয়নি।
ভাবনা ছেড়ে বললো,হুম সত্যি ই চমকে দিয়েছিস। আমি মনে হয় তোমাদের আড্ডা মহলে আসতে দেরি করে ফেলেছি।
পাখি পানি এনে দেয় অপূর্ব কে।
অপূর্বর চোখ অস্থিরতা। কাকে যেন খুঁজেছে।
সবার বুঝতে আর বাকি নয়।
সূর্য গলা পরিষ্কার করে বললো,আমাদের বউমনি রান্না ঘরে । যান সাক্ষাত করে আসেন।
অপূর্ব মৃদু হাসলো।
এলিজা-বসে বসে রুটি বানাচ্ছে। সব রান্না হয়ে গেছে। মামির শরীর ভালো না তাই ভাত খাবে না। বললো রাতে রুটি খাবে।
অপূর্ব গিয়েই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
বললো, আমার মহারানি কি করছে? আজকে সারাদিন আপনাকে ছাড়া থাকতে যে অনেক কষ্ট হয়েছে। বড্ড অসহায় লেগেছে।
এলিজা: সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরেন।এত শক্ত করে ধরলে যে আমার হার গুলো ভেঙে যাবে।
অপূর্ব এলিজাকে ছেড়ে দিয়ে
একটা পিরিতে বসে পরে।
অপূর্ব এলিজার হাত থেকে ধব করে বেলুন , টা নিয়ে নেয়।
অপূর্ব: আজকে আমি রুটি বানাবো। আমার সামনে তুমি কেন কষ্ট করবে।
তোমার কোন কোন কষ্ট যে সহ্য হয়না।
এলিজা : বাববা,হা এত মায়া , যদি হঠাৎ আমি হঠাৎ মরে যাই ?
অপূর্ব রাগান্বিত হয়ে বললো,এমন বাক্য তুমি কোনদিন উচ্চারন করবে না। আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না ।
অপূর্ব আনমনে রুটি বানাচ্ছে। এলিজা মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কি অপূরূপ দেখাচ্ছে। খাড়া খাড়া কালো চুল। কালো চাপ দাড়ি। জোড় ব্রু। পরনে সাদা সার্ট।
অপূর্ব : কি দেখছো ওমন ভাবে !! নজর লেগে যাবে যে।
এলিজা ভাবলো,যাব বাবা উনি কিভাবে বুঝলেন আমি তাকিয়ে আছি ওনার দিকে?
অপূর্ব : তুমি মনে মনেও যে খুব জোড়ে কথা বলো।
এলিজা মৃদু হেসে খেয়াল করলো অপূর্বর রুটির দিকে। অপূর্বর রুটি গুলো দেখে এলিজা খিল খিল করে হেসে উঠে ।
এলিজার হাসি শুনে। ঘর থেকে রান্না ঘরে চলে আসে সবাই।
সূর্য অট্ট হাসি দিয়ে রুটি গুলো হাতে নিয়ে দেখাচ্ছে। আর বললো,
এই দেখো আমার বন্ধু আসামি ধরার পাশাপাশি ভালো রুটিও বানাতে পারে। একটা হয়েছে ত্রিভুজ, একটা ঢাকার মানচিত্র, একটা তিলকনগর,একটা বাংলাদেশের মানচিত্র।
সূর্যর কথা গুলো শুনে। এলিজা , খিল খিল করে হেসে উঠে ।
অপূর্ব মাথা চুলকাতে চুলকাতে, এলিজাকে পা থেকে পরোক্ষ করছে।
সোনালী রঙের শাড়ি পরনে। চুল গুলো বেনুনি, ভি-কার থুতনি চোখ গুলো হরিনের মত ডাগর ডাগর।
যে কেউ এই আসিতে পাগল হয়ে যাবে।
অপূর্ব উল্টো করে এলিজা কে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে।
এলিজা বললো,সবাই দেখছে ছারুন না
অপূর্ব: তোমার মুখের ঐ হাসি দেখার জন্য, আমি হাজারো রুটিতে মানচিত্র আঁকতে রাজি।
এলিজা: আপনি না পূরাই পাগল হয়ে গেছেন।
অপূর্ব: পাগল তো আমি সেদিন ই হয়েছি। যেদিন আধার রাতের জোসনার আলো নিয়ে এসেছিলেন।ম্যাডাম ,,
সূর্য;; ও ভাই আমরা এখানে ভুলে যাস না।
অপূর্ব এলিজা-কে ছেড়ে দেয়। বললো,
তোদের মত বন্ধু আর শালি থাকলে ঠিক মত প্রেম ও করা যাবে না।
পরদিন সকালে ____
সূর্যের ঝলকে ঝলকে যেন নতুন এক দিনের আগমন ঘটেছে। কুয়াশায় ভরা সকাল। শীঘ্রই আগমন নিয়ে আসবে ফাল্গুনের অনৈসিক ছোঁয়া। মাঘের শুরুটাও যেন মুগ্ধকর।
চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ।
মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় এলিজার।
পাখি টিউশনে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। সামনেই তার মেট্রিক পরীক্ষা।
আর মাত্র দের মাস বাকি। বাকি। দের মাস ও যেন পরিক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুবই ই কম সময়।
ঝটপট তৈরি হয়ে টিউশনে বেড়িয়ে পরে।
এলিজা সবার জন্য খাবার তৈরি করতে থাকে।
সকাল ১১ টা____ পাখি সহ তার দুই বান্ধবী হাতে বই নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটছে।
শ্রাবন হিরো স্প্লেন্ডার প্লাস বাইক , সাথে গিটার নিয়ে,
হিরোর মত ভাব নিয়ে আলি বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতেই। হুট করে বাইকটা থামিয়ে দেয়। চোখ পরে রাস্তায়।
একটা কলম পরে আছে। কলমটা বেশ দামী। কোন সে যে,কলম না। রোদের আলোতে ঝলকাচ্ছে। এটাতে স্বর্নের প্রলেপ দেয়া। খুব অদ্ভুত সুন্দর।
আশেপাশে পরোখ করলো। কলমটা কার। হঠাৎ ই সামনে দেখতে পায় । তিনজন মেয়ে হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে। হয়তো ওদের ই হবে।
বাইক চালিয়ে সোজা মেয়েদের সামনে গিয়ে দারায়।
পাখি হতভম্ব হয়ে থমকে দাঁড়ায়।
পাখি: কে আপনি ? এরকম হুট করে এসেই কেন আমাদের সামনে দাড়ালেন? এখনি দুর্ঘটনা ঘটতো।
শ্রাবন : এই যে পিচ্চি। তোমাদের সামনে আশার কোন ইচ্ছা ই নেই ওকে। আমি শ্রাবন। কোন মেয়েদের পেছন ঘুরি না বরং মেয়েরাই ঘুরে।
এই যে একটা কলম পেলাম। হয়তো তোমাদের কারো । তাই তো দিতে আসলাম।
পাখি আতংক চোখে কলমটি দেখে বললো, এটাতো আমার কলম। কোথায় পেলেন?
শ্রাবন: পিচ্চি,মেয়ে পিচ্চিদের মতই থাকো।
বেশি পেকো না।
বলেই বাইক চালিয়ে চলে যায়।
পাশে থাকা মেয়ে দুটো বলে উঠে ছেলেটা কি সুদর্শন তাইনা।
পাখি কিছু বললো না।
কলমটি বইয়ে ঢুকিয়ে নেয়।
পাশের মেয়ে দুটোর একজন বললো,
কলমটা দেখছি স্বর্নের মত ঝলকাচ্ছে! এত দামী কলম কোথায় পেলি। আর এগুলো তো কয়েক বছর পুরানো কলম।
পাখি: এটা আমার দুলাভাই দিয়েছে।
সূর্য, অপূর্ব রাস্তায় হাটছে । বিভিন্ন কেস নিয়ে কথা বলছে।
এলিজা পর্ব ২৫+২৬
অপূর্ব সূর্য কে উদ্দেশ্য করে বললো,তুই কি শুনেছিলিস! রাজনীতিবিদ জুনায়েদ আংকেল এর ছেলে মুন্নার কথা। ফরেনসিক ল্যাব এ ওর লা,শ পাঠানোর পর ওর পেট থেকে আমি একটা চিপ (মেমোরি)পেয়েছি
সেই চিপে একটা ভিডিও আছে। কিন্তু এখন ও ভিডিও টি দেখিনি…… আমাদের এটা রহস্য উন্মোচন এর এভিডেন্স হতে পারে…..
সূর্য ; পেটে মোমেরি কি বলিস?……