এলিজা পর্ব ২৯+৩০

এলিজা পর্ব ২৯+৩০
Dayna

সকাল থেকে সব কাজ আমাকে করতে হচ্ছে।
বয়স বাড়লে নাকি মানুষ অবসরে থাকে। কিন্তু আমার পোরা কপাল। বাড়ির সব কাজ আমাকে করতে হচ্ছে। আজকে আবার মুজিবুর আসবে।
সকাল থেকে মনজুরা কে দেখতে পাচ্ছি না কোথায় যে যায়। মাঝে মধ্যেই গায়েব হয়ে যায়। মনোরা সেও বাড়িতে নেই। আমার বাড়ির কাজের লোকেরাই এমন অদ্ভুত হয়।
সকাল বেলা কাজে অসস্থি হয়ে একা একা বক বক করছে জয়া।

( মুজিবুর চৌধুরী জাহাঙ্গীর এর ছোট ভাই , মমতাজ বেগম তার স্ত্রী। তারা শ্রাবন এর মা বাবা ,তারা বিদেশে ব্যাবসা করেন। )
জয়া কাজ করতে করতে বললো,খোকার বাবা আজকাল যে কি হয়েছে সেই ভালো জানে। কাউকে কিছু না বলেই হুটহাট বেড়িয়ে পরেন।
ছেলেকে যে এক মুহুর্তের জন্য ও চোখের আড়াল করতে চান না।
অর্পা: মা বাবা ভাইয়া কে কি আমার থেকে ও বেশি ভালো বাসে?
জয়া কিছুটা কর্কট কন্ঠে বললো,
বাবা সবাইকেই ভালো বাসে। জানিস না তোর ভাইয়ের কি সমস্যা।
অর্পা: তাহলে ভাইয়া পুলিশের চাকরি কিভাবে পেলো?
জয়া রান্না ঘরে কাজ করতে করতে বেখেয়ালি ভাবে উত্তর দিয়ে দেয়।বললো,খোকার স্বপ্ন ছিলো পুলিশ হবে। তোর বাপের টাকার জোড়ে …………

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জয়া আতংক মুখে মাঝপথে কথা থামিয়ে দেয়।
অর্পা দ্বিতীয় বার কোন প্রশ্ন না করে টিউশন এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।
অর্পা এবার মেট্রিক পরীক্ষা দিবে।
তৎকালীন ঘরে উপস্থিত হয় মনজুরা।
মুনজুরার হাব ভাপ জয়াকে ভাবালেও এড়িয়ে যায়।কারন মনজুরা বরাবরই অদ্ভুত আচরন করে।
তবুও প্রশ্ন না করলেই নয়।
জয়া বললো,গিয়েছিলে কোথায় হাঁপাচ্ছো কেন? সাত সকালে সব কাজ আমাকেই করতে হলো।
মনজুরা বললো, হঠাৎ খবর পাই ছেলেটার শরীর খারাপ তাই দেখতে গেছিলাম। আপনি সরেন আমি সব করতেছি।
আজকাল সবার আচরণ কেমন জানি অদ্ভুত লাগে। জানি না কি হচ্ছে। নাকি সবই মনের ভুল। এসব ভাবতে ভাবতে জয়া নিজের ঘরে চলে গেলেন।

সকাল ১১ টা ______
জাহাঙ্গীর চলে আসে। সাথে একজন লোক। কারো বিয়ের উদ্দেশ্যে কথা বলছে।‌
জয়া সোফাতে বসে পান খাচ্ছে। জাহাঙ্গীর আর ঘটকটিও বসে পরে।
জাহাঙ্গীর: বুঝলা খোকার মা আমি ভালো একটা সম্বন্ধ পেয়েছি। আমাদের অর্পার জন্য। বড় হয়েছে মেয়েটা তাছাড়া চারদিকে বখাটে রা ভরে গেছে। আমার ও বয়স হয়েছে ভাবলাম মেয়েটার একটা ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারলেই শান্তি।‌
জয়া : হঠাৎ করে মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছো আর কিছুদিন পর তো ওর পরিক্ষা।
ঘটক: সমস্যা নাই। পরিক্ষা দেয়ার পরই তারা বিয়ে করবে।
জয়া আপত্তি স্বরে বললো,

আমরা নিজেরা নিজেরা ওর বিয়ের কথা বলতে পারি না। ওর ভাই আছে। ওর ও একটা মতামত আছে।
জাহাঙ্গীর: তা এখন তো আমি কথা পাকা করছি না।ওরা আসুক তারপরে।
অপূর্ব কে শিঘ্রই চিঠি দাও। দ্রুত বাড়ি আসতে বলো।
বলো আমি ওর বোনের বিয়ে ঠিক করেছি।
বলেই ঘটক কে নিয়ে বাহিরে চলে যায়।
জয়া : পেয়েছে একটা কারন। এখন অপূর্ব কে আনার জন্য বেকুল হয়ে যাবে। জানি না কি চায় ইনি।‌হয়তো ছেলেকে এক প্রহরের জন্য চোখের আড়াল করতে চায়না। জয়া
এসব ভাবতে ভাবতে ছাদে চলে যায়।
অর্পা টিউশন থেকে আসার পরেই মেঝেতে ধপাস করে বসে পরে।‌
বই,খাতা, সব মেঝেতে পরে যায়।
পূরো শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। অথচ এখন শীতের দিন।
জয়া , জাহাঙ্গীর,মনজুরা,সবাই দৌড়ে আসে।
জয়া : কি হয়েছে মা কি হয়েছে ।
অর্পা কোন উত্তর দিলো না।
হাঁপাতে থাকলো।

দ্বিতীয় বার জাহাঙ্গীর প্রশ্ন করাতে উত্তরে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
ঐ কালো লোকটা বর্ষা কে তুলে নিয়ে গেছে।
বলেই মেঝেতে ঠলে পরে।
জাহাঙ্গীর আহত কন্ঠে বললো, কিহহহহহ বর্ষা তো ডিসি সাহেব এর মেয়ে। শুনেছি বিয়ে ঠিক হয়েছে এমন সময় কে এমন করলো?
তিলকনগর———— শ্রাবন বাইক চালিয়ে সোজা সূর্য অপূর্বর সামনে থামে।
শ্রাবন মৃদু হেসে বললো,কেমন চমকে দিলাম বল। তোকে ছাড়া মোটেও ভালো লাগছিল না তাই চলে আসলাম।
অপূর্ব ; হঠাৎ এখানে কেন আসলি? বাবা মাকে একা রেখে?
শ্রাবন: একা কোথায় আমার বাবাও চলে আসতেছে আজকের ফ্লাইটে‌।
সূর্য; তাহলে তো ভালো ই হলো। আমাদের অনুপস্থিত তাদের আর গ্রাস করবে না। একসাথে সময় কাটাতে পারবো।
শ্রাবন সহ সবাই ভেতরে চলে যায়।
অপূর্ব মনস্থির করলো, মু্ন্নার পেটে পাওয়া মেমোরি টি_ দেখতেই হবে। তবে সূর্য কিংবা শ্রাবন কে জানানো যাবে না। সবাই একসঙ্গে গেলে এলিজা-চিন্তা করবে।
ঢাকা—-

পূরো শহর তোলপাড় ডিসি সাহেব এর মেয়ে কিডন্যা,প।
চারদিকে পুলিশ ফোর্স।
কন্ট্রোল রুম থেকে শুরু করে সবাই খোঁজাখুঁজি করছে।
কেউ কানা ফিসফিস করছে। হয়তো বিয়েতে রাজি নয় তাই পালিয়ে গেছে।
কেউ কেউ বলছে যদি কিডন্যা,প ই হয় তবে কার এত বড় সাহস যে ডিসি সাহেব এর মেয়ে কে কি,ডন্যাপ করবে!!
এদিকে বসে বসে চোখের পানি ফেলছে বর্ষার মা,।
ছেলেকে হারালো ৩ বছর হয় তার মাঝে মেয়েটাও নিখোঁজ। বলেই হুহু করে কাঁদছে।
তিলকনগর————-
শ্রাবন পাখিকে আলি বাড়ি দেখে অবাক হয়ে যায়।
শ্রাবন: এই পিচ্চি মেয়েটা কে রে ? এখানে কেন।
অপূর্ব: ওয়ে এটা আমার একমাত্র শালিকা ভুলেও নজর দিবি না।
এলিজা সবার জন্য চা করে নিয়ে আসে।
জয়তুন বসে বসে কাঁথা সেলাই করছে।

মেহমান আল্লাহর রহমত আমার ঘরটা রহমতে ভরে গেছে্ । ( রমজান বললো মনে মনে)
সূর্য খেয়াল করলো অপূর্ব গহিন চিন্তায় বিভোর। হয়তো আশেপাশে যা হচ্ছে তা নিয়েই চিন্তা করছে। তবে আমার ওকে এরকম গম্ভীর দেখতে ভালো লাগে না।
সূর্য : শ্রাবন গিটার নিয়ে এসেছিস,চল একটা গান ধরি।
শ্রাবন: সূর্যর অতিত টেনে একটা গান ধরি।
গান শুরু করে।
“*লাল শাড়ি পরিয়া কন্না
‌রক্ত আলতা পায়ে, আমার চোখের জ্বল মিশাইয়া দিলা
তুমি পার,,তুমি ফিরাও চাই,লানা একবার চইলা গেলা হায়,, জানি আজ রাতে হইবা পরের, আর ভাইবো না আমায়……

চান্দের মত মুখটি যখন ভাসতো নয়ন জ্বলে,আদর কইরা মুইছা দিতাম গালে,,
ঘাটে আইসা পাশে বইসা জরাই তো এ বুকে ভুলবো আমি এই কথা কেমনে,,
গানটি এতটুকু পর্যন্ত গাওয়া শেষ করতেই।
সূর্য হাতের উল্টো দিকে চোখ মুছে। বাহিরে চলে যায়।
অপূর্ব পরোক্ষ করলো।
এ যেন কোন অচেনা অজানা বেথা। যা সূর্য কে গ্রাস করে রেখেছে।
রঞ্জনা কে হারানোর বেথায় ছেলেটা আজ ও ভুলতে পারলো না।
,, ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত,,
মানুষ টি চলে গেলেও মায়া যে পিছু ছাড়ে না,,
এসব ভাবতে ই এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে এলিজার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অপূর্ব।
যদি কোনদিন এই মানুষটি কে_ আমি হারিয়ে ফেলি তবে আমার যে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
না,এ আমি কি ভাবছি এলিজা কে হারাবো মানে। আমি থাকতে আমার এলিজাকে কখনো কেউ কেরে নিতে পারবে না।
দিন ফুরিয়ে রাত হয়ে যায়।

__এলিজা জয়তুন এর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।
শ্রাবন আনমনে গিটার বাজাচ্ছে।
পাখি বারান্দায় বসে বসে পড়ছে। পাশের বারান্দা থেকে পেছনের ঝোপঝাড়টা পরিষ্কার দেখা যায়।
পাখির চোখ পরে ঝোপঝাড় এর দিকে। কেউ আছে ওখানে। কে লোকটা লুকিয়ে লুকিয়ে কি করছে?
পাখি একা একাই চলে যায় লোকটিকে দেখতে। মনে মনে ভাবলো, যদি লোকটা চোর হয় তবে দুলাভাইর হাতে তুলে দিলে সে যে বাহবা দেবে।
যেই চিন্তা সেই কাজ।

কোন টর্চ ছাড়াই চলে যায় ঝোপঝাড়ে। চারদিকে জোসনার আলো।
চারদিক নিশ্চুপ কোথাও কোন মানুষ নেই শান্ত নদী।
কিন্তু অশান্ত আমার মন। কারন ঐ লোকটিকে যে ধরতে হবে।
পাখি, চুপি চুপি এগোলো।
কে সে, লোকটাকে ঠিক ভাবে পরোখ করতেই।
পাখি এক চিৎকার মেরে উঠে।
সবাই পাখির চিৎকারে বেড়িয়ে ঝোপঝাড়ে চলে আসে। সবাই এসে পাখিকে অজ্ঞান অবস্থায় পেলো।
জয়তুন কান্না শুরু করে।বললো,
আবার ও মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পরলো।
অপূর্ব পাজা কোলে পাখিকে ঘরে নিয়ে যায়।
শ্যামলী পানির ছিটা দিতেই। পাখি চোখ খুলে। সবাই আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো।
অপূর্ব : কি হয়েছে চিৎকার করলে কেন? ঐখানে কেন গেলে, ?
সবার একই প্রশ্ন।

পাখি আতংক কন্ঠে বলে উঠলো ,আমি একজনকে দেখেছি। তবে ওনার অবস্থা খুব নৃশং’স ছিলো। আর ওনাকে আমি খুব কাছ থেকেও দেখেছি।এর আগেও কোথাও ওনাকে দেখেছি।কিন্তু কিছু মনে করতে পারছি না।
বলেই দুই হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো টানতে শুরু করে।পাখি মনে করার চেষ্টা করেও মনে করতে পারলো না।
অপূর্ব দ্রুত পায়ে হেঁটে ঝোপঝাড়ে চলে যায়।
কে আছে দেখতে । অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। কাউকে দেখলো না। অপূর্বর মাথায় আকাশ টা ভেঙ্গে পরেছে। চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কি হচ্ছে কিছু মাথায় আসছে না।
হঠাৎ অপূর্বর মনে পরলো মুন্নার পেটে পাওয়া চীপ( মেমরী) টার কথা।
অপূর্ব মনস্থির করলো। এখনি একবার শহরে যাবে। শ্রাবন এর বাইক টা ঘরের বাহিরে রাখা ছিলো।
কাউকে কিছু না বলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

রাস্তা ঘাট পুরো ফাঁকা। কেউ নেই। অপূর্ব পথ ভুলে যাচ্ছে।
কি হচ্ছে ?এই রহস্য উন্মোচন করতেই হবে তার। তবে কিভাবে কোথাও কোন ক্লু নেই।
তৎকালীন সময় অপূর্বর চোখ পরে বাম দিক থেকে কেউ খুব জোড়ে দৌড়াচ্ছে ।
খুব অদ্ভুত মনে হচ্ছে। কে লোকটা দেখতে হয়।
লোকটা ক্ষেতের ভিতরে থাকায় অপূর্ব বাইক রেখে দৌড়াতে থাকে লোকটার পেছনে।
অপূর্ব: কে তুমি দাড়াও ! দাড়াও বলছি। নয় সুট করে দেবো।
অপূর্বর কথা লোকটির কানে যাচ্ছে না।

অপূর্ব পিস্তল টা বের করে আকাশের উপর তাক করে সুট করে। লোকটি হোঁচট খেয়ে পরে যায়।
হোঁচট খেয়ে লোকটি পড়ে উঠেই আবার দৌড়াতে শুরু করবে ঠিক তখনি ধরে ফেলে অপূর্ব।
লোকটি ভারি অদ্ভুত, কালো মুখোশ পরা। শরীর টা পূরো সাদা। অপূর্ব মূখোশ টা খুলে ফেললে যা দেখে তাতে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
শীতের দিন তবুও শরির থেকে অঝরে ঘাম ঝরতে থাকে।
লোকটির পূরো শরীর সাদা ধবধবে। পিসি গুলো সাদা।
এ কোন বাংলাদেশী নাগরিক নয়। ভিনদেশী তবে এখানে কেন। তিলকনগর কেন।
অপূর্ব: কে তুমি ? এখানে কি করছো?
মনে হয় বাংলা বুঝে না।
অপূর্ব ইংরেজি তে প্রশ্ন করলো

What’s your names? what are you doing here ?
অচেনা লোকটি কর্কট কন্ঠে বলে উঠলো : আই এম চীপস ডুপিয়াল।
বলেই লোকটি কারাতে করে অপূর্ব কে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। অপূর্ব উপর হয়ে পরে যায়।
অপূর্ব অসুস্থ থাকায় কিছুটা কাতর হয়ে যায়। উঠে দাড়াতেই। লোকটি গায়েব——কোথায় গেলো ? কে এই চীপস ডুপিয়ালি ?
আমাদের দেশের কোন ক্ষতি করতে আসেনি তো? নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্যে
হাজারো চিন্তায় অপূর্ব বিষন্নতা হয়ে যায়

জয়া ভিষন চিন্তায় পরে যায়।
কারা বর্ষা কে কিডন্যা,প করলো।
যদি আমার মেয়েটাকেও করে ফেলতো। বুকের ভেতর কেমন চাপ চাপ বেথা হচ্ছে।
চারদিকে কি হচ্ছে।
কোন কিছুতেই আর মন বসাতে পারছি না।
অর্পা আমার কোলে শুয়ে আছে।
ভিষন আতংক এ অর্পা। কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে। ভাইয়াকে নিয়ে এসো।
ভাইয়া কে বলবে।
ভাইয়ার আদুরের যে ছোট বোন।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে অজানা কোন বেথায় এক ফোঁটা জ্বল গড়িয়ে পরে জয়ার,।
অপূর্ব ঢাকা শহরে চলে আসে।
এসেই ফরেন্সিক সেন্টারে চলে যায়।
সেখানে শুধু উপস্থিত ছিলো। ডাঃ জাকির
অপূর্ব অস্থিরতা ভাব নিয়ে বললো,

আপনি যে চীপ টা পেয়েছিলেন সেটা আমাকে দেখান।
ডা: অপূর্ব তুমি হাপাচ্ছ কেন? কি হয়েছে ?
আগে শান্ত হও।
অপূর্ব: এখন শান্ত হতে পারবো না। চীপ টা ভিডিও প্লেয়ারে চালু করুন।
ডাঃ ভিডিও টি চালু করলে যা দেখে তাতে অপূর্ব অবাক ।
২০ সেকেন্ডের একটা ভিডিও । তাঁতে শুধু একটা মেয়ের নাচের ভিডিও।
মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। শুধু অঙ্গ। নাভির নিচ পর্যন্ত একটা লেহেঙ্গা। সাথে বিছা, সমস্ত শরীর সাদা ধবধবে। কমড় টা হেলেদুলে নাচাচ্ছে।
মুখটা দেখা যায়নি।
ভিডিও টা দেখেই এটাই বোঝা গেলো যে, মুন্না ভিডিও টি লুকিয়ে লুকিয়ে করেছে। তবে ঐখানে এমন কিছু হচ্ছিল যাতে ভয়ে মুন্না ঠিক ভাবে ভিডিও করতে পারেনি। ভিডিও টা ভারি অদ্ভুত ছিলো। এই ভিডিও দ্বারা তো কিছুই বুঝলাম না।

সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব একটা চেয়ারে হেলানে বসে ভাবতে থাকে। ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে সবকিছু।
গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
, হঠাৎ একজন কনস্টেবল আসে।
অপূর্ব কে উদ্দেশ্যে করে বলে স্যার , ডিসি সাহেব এর মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না।
অপূর্ব আহত ভঙ্গিতে বললো,
কিহহহহ বলছো এসব কখন হলো? আর ,আর অর্পা ঠিক আছে তো?
বলেই সেখান থেকে বেড়িয়ে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে অপূর্ব।
ঘরের দরজা খোলা অপূর্বর খটকা লাগলো । কাউকে দেখছে না।
অর্পার ঘরে গেলে অর্পা সেখানেও নেই। একদম নিশ্চুপ চারদিক।
মায়ের ঘর থেকে আওয়াজ আসছে। হয়তো ঐখানে ই সবাই।

অর্পা মায়ের কোলে শুয়ে আছে। অপূর্ব কে দেখা মাত্র ই ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরে,, হুহু করে কান্না শুরু করে। এ কান্না যে ,যে সে কান্না নয়। বন্ধু হারানোর কান্না। অপূর্ব ঠিক বুঝতে পারছে।
অপূর্ব : শান্ত হ , আমি আছিতো। ঠিক খুঁজে নিয়ে আসবো,তোর বন্ধু বর্ষাকে।
অর্পা শান্ত হয়ে বসে।
অপূর্ব বললো,এবার বল তখন কি হয়েছিল? কারা বর্ষাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল? কাদের দেখেছিস? বর্ননা দে আমাকে।
অর্পা,কাপা কন্ঠে বললো,
আমি আর বর্ষা যখন টিউশন এ যাচ্ছিলাম তখন,একটা বড় কালো রঙের মাইক্রো আমাদের পিছু নেয়। তবে আমরা বিষয়টা পাত্তা দেয়নি।
ভেবেছি কত গাড়ি ই তো এভাবে চলতে থাকে।
টিউশন থেকে যখন বের হই

।তখন ও একই ভাবে গাড়িটা পিছু পিছু আসতে থাকে। বর্ষা কে আমি সাবধানের সাথে বলেছিলাম আমাদের জলদি যাওয়া দরকার। কিন্তু বর্ষা বললো, আমার বাবা পুলিশ। কারো সাহস নেই আমাদের কেউ কিছু বলার।
আমরা ধানমন্ডি গলি তে ঠুকে পরি। কিন্তু গলিটা একদম নিশ্চুপ ছিলো।
হঠাৎ মাইক্রো টা সামনে এসে দাড়ায়। আমি ভয় পেয়ে যাই। হঠাৎ একটা,কালো মুখোশ পরা লোক এসে বর্ষাকে ,জোর জাবরদস্তি করে মাইক্রো তে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
আমি চোখের সামনে আমার বন্ধু কে কিডন্যা,প হতে দেখেছি, কিন্তু কিছু করতে পারিনি। বলেই অর্পা অঝরে কেঁদে উঠে।
অপূর্ব অর্পাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।

অপূর্ব ভাবতে শুরু করে ,এতদিন ছেলেরা কিডন্যা,প হতো। আর এখন মেয়েও হচ্ছে ‌।তবে অর্পাকে ছেড়ে দিলো কেন। এর পিছনে যে আছে সে আসলে কি চায়।
অপূর্ব: মা, আমাকে কি ডিসি সাহেব ফোন দিয়েছিলো ?
জয়া : কোথায় নাতো”
অপূর্ব: সব কেসে আমাকে সে ইনফর্ম করে। তবে তার মেয়ের ক্ষেত্রে কেন জানালো না?
তিলকনগর—-
শ্যামলী : সবাই খেতে আসেন?
এলিজা : সূর্য, শ্রাবন আপনারা খেতে বসেন। পাখি তুই ও কিছু খেয়ে নে।
পাখি : আপু তুমি খাবে না?
এলিজা: তোর ভাই না আসলে খাচ্ছি না।
বলেই জয়তুন কে খাবার দেয়। জয়তুন আলাদা ঘরে বসে আছে। সাথে রমজান। দু’জনের ই বয়স হয়েছে। শরীরের অবস্থা ভালো নয়।

সূর্য, শ্রাবন আনমনে খাবার খেতে খেতে শ্রাবন বললো, অপূর্ব আমাদের রেখে এভাবে চলে গেলো। কি অদ্ভুত তাইনা।
সূর্য: গোটা দুনিয়াটাই অদ্ভুত। আর আমরা তো মানুষ। হয়তো কাজ পরে গেছে তাই চলে গেছে।
সূর্যর ভাব ভঙ্গিমা ভালো লাগেনি শ্রাবনের।
শ্রাবন খাবার খেতে খেতে বার বার পাখির দিকে পরোখ করছে।
পিচ্চি তবে ভারি মিষ্টি, মায়াবি চাহনি,ফর্সা গায়ের রং,ভি কার থুতনি একদম এলিজার মতই তবে,পাখির চুল গুলো কোকরানো।
ভিষন আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে ‌।
শ্রাবন এর হাব-ভাব দেখে
সূর্য বললো,ঐ বেটা,কি দেখছিস ? সামথিং সামথিং?
শ্রাবন: আরে কখনো ই না আমাকে পটানো এত সহজ । তাছাড়া আমার কারো প্রতি অনুভূতি আসে না। বলেই খাবার শেষ করে উঠে যায় শ্রাবন।

শ্রাবন হঠাৎ, হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে সবাইকে। এই অভ্যাসটা ওর বরাবর ই আছে।
শ্রাবন এলিজা কে বললো,আঁচ্ছা বউমনি,তোমার নামের অর্থ কি?
এলিজা অহংকারী স্বরে বললো,- নামের অর্থ সময়ের সাথে সাথে হয়ে যায়।
শ্রাবন: তোমাদের প্রথম দেখা কিভাবে হয়েছিল?
পাশ থেকে শ্যামলী হাসতে হাসতে বলে উঠে।
কিভাবে আবার লুকোচুরি খেলতে গিয়ে।
শ্রাবন: লুকোচুরি মানে?
আমরা প্রতি মেলাতে সব মেয়েরা মিলে লুকোচুরি খেলতাম, তখনই একদিন রুশরাজ্যে দুলাভাই কে, আমরা দেখি।আর তখনই এলিজার পছন্দ হয়ে যায় তাকে। আমার বান্দবী এতটাই তার প্রতি আবেগময় হয়ে পরে,প্রথম দেখাতে, যে পরদিন একা একাই রুশরাজ্যে চলে যায়। তাকে দেখতে। আর সেদিন ই অপূর্ব ভাইয়া ধরে ফেলে। তাইনা, ?
এলিজা হাসলো।

শ্রাবন হই করে উঠেই বললো, ও তারমানে ভালোবাসার প্রথম অনুভূতি টা শুরু হয়, বউমনির থেকে।
কিন্তু আমি তো শুনেছি রুশরাজ্যে কেউ যায়না তবে তোমরা লুকোচুরি খেললে কিভাবে?
শ্যামলী: আমাদের জন্ম এখানে তাই ভয় হয়নি।তাছাড়া, তখন মেলা চিলো তো। তাই ভয় হয়নি।
সূর্য: অনেক ঘুম পেয়েছে ঘুমানো যাক। তোমরা গল্পে থাকো।
হঠাৎ ই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। এত রাতে কে!
এলিজা দরজা খুলতে যাবে ঠিক তখনই শ্রাবন বাধা দেয়।
শ্রাবন: খুলো না,এত রাতে কে না কে!!
এলিজা নিশ্চিত ভঙ্গিতে মৃদু হেসে বললো, আমার পুলিশ বাবু এসেছে।
শ্রাবন থমকে যায়। –না দেখেই কিভাবে নিশ্চিত হয়ে বললো।
এলিজা: ওনার উপস্থিতি আমি অনুভব করতে পারি।
শ্রাবন: ভালোবাসা গভির ও থেকে গভীর ও তম হলেই,তার উপস্থিতি হয়তো উপলব্ধি করা যায়,,
এলিজা দরজা খুলতেই দেখে অপূর্ব –
অপূর্ব কে দেখেই এক আকাশ পরিমান শান্তি মিললো এলিজার। তার ভাব ভঙ্গিমা তে প্রকাশ পায়,যে তার প্রিয় মানুষটির পথ চেয়ে ছিলো।

অপূর্ব: মনে পরছিলো আমায় খুব। তাই না?
এলিজা: আপনাকে ছাড়া যে এক প্রহর কাটে না।
কি করে বুঝাবো আপনাকে। বলেই বুকের উপর মাথা রাখে অপূর্বর।
অপূর্ব : ম্যাডাম , আপনি আমাকে বাহিরেই রাখবেন? প্রচুর ঠান্ডা যে।
শ্রাবন, সূর্য,শ্যামলী,পাখি তিনজন পাশাপাশি দাড়িয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। একজন আরেক দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে বলছে,এলিজা কি করে বুঝলো,যে অপূর্ব এসেছে।
এলিজা: আপনি আসুন খেতে দেই!! অপূর্ব, খেতে যেতেই , চারজনার থুতনির নিচে হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করে মৃদু হাসি দিয়ে বললো,মুখে মসা ঠুকবে।

অপূর্ব এলিজাকে নিয়ে রাতে হাঁটতে বের হয়।
দুজন মিলে রাতের তারা গুনে।‌ কত সুন্দর জোসনায় রাত। ভরাকান্ত আকাশ। শীতল হাওয়া। তার মাঝে অপূরুপা এলিজা।
আমি যতই দেখি ততই অভাক হই। কতটা মায়াবী,নিস্পাপ একজন মানুষ। এলোকেশী চুল গুলো উড়ছে।
আমার সামনেই দাড়ানো এলিজা।
অপূর্ব এসব ভাবতেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে এলিজাকে।
সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তাই না?
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,হাজারো ব্যাস্ততার মাঝেও যে আপনি আমার অনন্ত শান্তি ম্যাডাম। যখনই তোমার সংস্পর্শে আসি, তোমার ঐ নিঃশ্বাস যখনই আমার বুকেতে লাগে,তখনই আমার ভেতরের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়।
এলিজা মৃদু হেসে শান্ত স্বরে বলে উঠলো

— একটা কথা বলবো?
হুম বলো,,
এই তিনবছর তো অনেক বার , বাচ্চা কনসিভ করলাম , কিন্তু আমার সমস্যা নাকি। তাই বাচ্চা থাকে না। বন্ধ্যা নারী আমি।
আপনার ও তো বাবা ডাক শোনার ইচ্ছা করে। আপনি চাইলে আরেকটা বিয়ে……
বলতেই অপূর্ব এলিজাম মুখ চেপে ধরে।
অপূর্ব: আমি সেই সন্তানের বাবা হতে চাইনা,যে সন্তান তোমার গর্ভের নয়,, সন্তান সৃষ্টিকর্তার দান।
তোমার সমস্যা তাই বলে তোমাকে হারাবো কখনো ই না।,, আমি আপনাতে থেকেই সারাজীবন বাঁচতে চাই।
পেছন থেকে দুষ্টু স্বরে
শ্রাবন, সুর্য,
লালালালা,, বেসুরো ভাবে বলতে থাকে।

সূর্য: আরে ইয়ার বিরক্ত করছি না,, কর ভাই তোরা প্রেম কর আমরা তো আকাশ দেখতে আসছিলাম।
অপূর্ব আশেপাশে লাঠি খুঁজে বললো,তোদের জ্বালায় দেখছি প্রেম ও করা যাবে না,তবে রে বলতেই সূর্য, শ্রাবন এক দৌড় ,পেছনে দৌড়াচ্ছে অপূর্ব।
এই দেখে খিল খিল করে হেসে উঠে,এলিজা,শ্যামলী ,পাখি।
পাখি: তাদের বন্ধুত্ব কত সুন্দর তাই না। কোনদিন যেন এই বন্ধন না ভাঙে।
দৌড়াতে গিয়েই হঠাৎ তিনজন থমকে দাড়ায়।
তিলকনগর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে একটি কালো মাইক্রো।
অপূর্ব খেয়াল করলো এটাতো সেই মাইক্রো, যার বর্ননা অর্পা দিয়েছিলো……

ভরাকান্ত সূর্য।
রৌদ্রজ্জ্বল দিন। চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ।
শান্তময় শীতের হাওয়া।
সব মিলিয়ে সকাল টা পরিপূর্ণ।
কিন্তু মনের ভেতর যে কুহু ডাকছে। কোন কিছুতে মন বসছে না। কি হবে না হবে। মেয়েটার ফ্যাকাশে মুখ যে আর ভালো লাগছে না। বর্ষা কিডন্যা,প হওয়ার পর মুহূর্ত থেকে ই চুপচাপ বসে থাকে কিছু খাচ্ছে ও না অর্পা। আল্লাহর কাছে একটাই অনুরোধ। বর্ষাকে যেন সুস্থ সবল ফিরিয়ে দেয়। পাপের ছায়া যেন কাটিয়ে দেয়। এই বয়সে এসেও এত চাপ আর নিতে পারছি না।

এসব ভাবতে ভাবতে রান্না করছে জয়া।
মনজুরা: আপা ,, ভাজি পূরে যাচ্ছে।কি ভাবছেন এত?
বলেই সবজি ভাজি টা মনজুরা ,চুলা থেকে নামালো।
জয়া এক পাশে সরে যায়।
জয়ার মুখে যে আতংকের ছাপ।
মনজুরা: পাপ বাপকেও ছাড়ে না। একদিন না একদিন পাপের আগুনে জ্বলতেই হতো।
(বললো অহংকারী স্বরে)
তিলকনগর————-।
অপূর্ব, সূর্য, শ্রাবন চৌকিতে বসে চা খাচ্ছে ‌।

অপূর্ব: গতকাল রাতে মাইক্রো টা একটুর জন্য ধরতে পারলাম না। আমি নিশ্চিত,ঐ গাড়িতে করেই নিয়ে গেছে বর্ষাকে।
সূর্য: কিন্তু আমরা তো পূরো তিলকনগর খুজলাম । কিছু তো পেলাম না। এখানে ওদের আস্থানা নেই মনে হচ্ছে।
শ্রাবন: তবে কি নতুন কারো শিকা,রে আসছিলো!
অপূর্ব উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে করতে বললো,সে যাইহোক আমাকে এর শেষ অবধি যেতেই হবে। যা কিছুর শুরু আছে তার, শেষ ও আছে।
এলিজা ,অপূর্ব কে উদ্দেশ্যে করে বললো,শুনছেন পাখির আজ টিউশনে দেড়ি হয়ে গেছে। আপনি যদি পাখিকে স্কুলে বাইকে করে ছেড়ে দিতেন!!
শ্রাবন হুট করে দাঁড়িয়ে বললো,

আমি থাকতে অপূর্ব কেন যাবে। অপূর্ব তোমার সাথে সময় কাটাক আমি নিয়ে যাচ্ছি। হাজার হোক পিচ্চি বেয়ান।
তারমানে মনে ধরেছে (সূর্য বললো মনে মনে)
পাখি: আমি আপনার সাথে যাচ্ছি না। সারাদিন শুধু পিচ্চি পিচ্চি করেন।
এলিজা: বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে না।এখন তারাতাড়ি তার সাথে যাও।
শ্রাবন বাইক নিয়ে বের হয়। পেছনে পাখি।পর পুরুষের সাথে গা-ঘেসে বসতে অসস্থি বোধ করছে।
দু’পাশে ধান ক্ষেত। মাঝখানে মাটির রাস্তা। কুয়াশায় কিছুটা আচ্ছন্ন।
বাইক চলছে স্কুলের উদ্দেশ্যে।
শ্রাবন লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখছে পাখিকে।
পাখি শ্রাবন কে না ধরেই বসছে।
শ্রাবন ,: ঐ পিচ্চি ধরে বসো নয় যে পরে যাবে।
পাখি অহংকারী ভঙ্গিতে বললো, ধরবো না আমি আপনাকে ।পরে গেলে গেলাম।
শ্রাবন: ধরবে না তাইতো।

বলেই বাইক হঠাৎ ব্রেক করতেই পাখি শ্রাবন এর গাঁয়ের উপর ঘেসে পরে।
শ্রাবন খিল খিল করে হেসে উঠে। কি পিচ্চি ধরবে না নাকি।
পাখি ; ভারি অ,সভ্য লোক তো আপনি।
বলেই বাইক থেকে নেমে সোজা রাগী ভঙ্গিতে হাটা শুরু করে।
শ্রাবন পাখির পেছন পেছন ধীরে ধীরে বাইক চালাতে থাকে।আর ডাকতে থাকে।
শ্রাবন : ওই পিচ্চি বেয়ান
রাগ কেন করলে দাড়াও বলছি।
কে শোনে কার কথা। পাখি আনমনে হাটতে থাকে।
শ্রাবন পাখিকে পরোখ করছে। শুকনো শরীর। চুলের বেনুনি টা ধুলছে।সাথে চাদর,হাতে বই। চলার ধরন ই যে এত সুন্দর যে কেউ প্রেমে পরে যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতে চলে আসে তিলকনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
পাখি ভেতরে চলে যায়।
ঠিক তখনি একজন মহিলা পাখিকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে। রত্না কেমন আছে। পাখি থমকে দাড়ায়। মহিলাটির বয়স ৪৫-৫০ হবে।

শ্রাবন খেয়াল করলো কিছু জিজ্ঞেস করছে।
পাখি: আমি তো কোন রত্না কে চিনি না। আপনি কার কথা বলছেন।
মহিলাটি : ও তোমারে দেখতে একদম রত্নার মতন লাগলো তাই জিগাইছি। কিছু মনে করো না (সেকেলের মানুষ)
বলেই মহিলাটি চলে যায়।
শ্রাবন কিছুটা অবাক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে পাখিকে।
কে এই মহিলাটি? আর রত্নাই বা কে?
পাখি: হয়তো ওনার কোথাও ভুল হচ্ছে। বয়স হয়েছে হয়তো গুলিয়ে ফেলেছে।
বলেই ভেতরে চলে যায়।
শ্রাবন – অদ্ভুত তো। মহিলাটি ততও বয়স্ক না, যে গুলিয়ে ফেলবে। কিন্তু রত্নাই বা কে। জিজ্ঞেস করে দেখি।
শ্রাবন দৌড়ে গিয়ে মহিলাটি কে দাড় করায়।
শ্রাবন: আচ্ছা আন্টি আপনি একটু আগে যে রত্নার কথা বলছিলেন কে সে?
মহিলাটি রত্নার কথা শুনতেই ভয়ে, আতংক এ চাপসে উঠে।
অবাক দৃষ্টিতে শ্রাবন এর দিকে তাকিয়ে। দ্রুত পায়ে চলে যায়।
শ্রাবন বলে উঠলো,কি আজব মহিলা। হয়তো পাখি ঠিকি বলেছে। মাথায় সমস্যা ওনার।

— তিলকনগর বাজার–বাজারের নাম অন্তিম বাজার।
অপূর্ব, সূর্য হাটতে হাঁটতে বাজারে চলে আসে।
অপূর্ব বাজারে থাকা ল্যান্থলাইন থেকে,ঢাকাতে কথা বলবে। ডিসি সাহেব এর সাথে। বর্ষার খোজ পাওয়া গেলো কিনা জানতে।
চারদিক পরোখ করতেই অপূর্ব যা দেখলো। অবাক হয়ে যায়। চোখ গুলো ছানাবরা হয়ে যায়।
সেই কালো মাইক্রো গাড়ি টা। কারো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। অপূর্ব ধীরে ধীরে গাড়িটার দিকে এগোতেই যা দেখে তাঁতে আকাশ টা মাথার উপর ভেঙে পরে।
। কোথা থেকে দৌড়ে আসলো হিমেল।খুব অস্থির দেখাচ্ছে।হিমেল গাড়িটাতে উঠে পরে। ওঠা মাত্রই ছেড়ে দেয়।
অপূর্ব গাড়িটা ধরার জন্য দৌড়াতে থাকে।
কিন্তু চোখের পলকে হারিয়ে যায়।

সূর্য: কি হলো দৌড়াচ্ছিস কেন? পাগলের মত কেউ রাস্তার মাঝে এভাবে দৌড়ায়।
অপূর্ব হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
ঐ কালো মাইক্রো টা দেখেছি । আর সেই গাড়িতে হিমেল ছিলো।
সূর্য: খিল খিল করে হেসে উঠে। তুই পাগল ওরা এখানে আসবে কেন! হিমেল,পলাশ ,মিদুল ওরাতো ঘুরতে গেছে। সারাদিন কেস, আসামি নিয়ে ভাবতে ভাবতে তোর বার বার হ্যালোসোলেশন হচ্ছে।
অপূর্ব: হয়তো তোর কথাই ঠিক।
বলেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সকাল ১১- টা
শ্রাবন পাখিকে নিয়ে ফিরছে।
বার বার লুকিং গ্লাস দিয়ে পাখির দিকে পরোক্ষ করছে।
পাখি: ওভাবে দেখতে থাকলে সোজা ক্ষেতে পরবো। সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালান।
বলেই মৃদু হাসে।
শ্রাবন পাখির হাসিটা দেখে বললো,

পিচ্চি বেয়ান, তোমার ঐ মিষ্টি হাসি দেখার জন্য আমি হাজার বার দূর্ঘটনায় পরতে রাজি।
বলেই বাইক দ্রুত গতিতে চালিয়ে আলি বাড়ি ফেলে রেখে সোজা চলে যায় দিগন্ত নদীর পারে।
পাখি: আপনি এখানে কেন নিয়ে আসলেন? বাড়ির সকলে যে চিন্তা করবে।
আজিব লোক তো আপনি। আপনাকে বিশ্বাস করাই আমার ভুল হয়েছে।
শ্রাবন মৃদু হেসে বললো,তুমি রাগলে কিন্তু দারুন লাগে। এখানে তোমাকে না নিয়ে আসলে এভাবে রাগ দেখার সৌভাগ্য হত ?
পাখি উল্টো দিকে ঘুরে মৃদু হাসে।
শ্রাবন ঘাসের উপর বসে পরে।
পাখি বইহাতে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবন পাখির দিকে বার বার দেখছে।
পাখি: ওভাবে তাকাবেন না।

শ্রাবন: কিভাবে তাকাবো শিখিয়ে দাও।
কিছুক্ষণ এভাবে দুজন চুপ থাকে।
কিছুক্ষণ পর শ্রাবন বলে উঠলো, শুনেছি তোমাদের স্কুলে পুনর্মিলনী উপলক্ষে কনসার্ট হবে।
পাখি হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।
শ্রাবন: তুমি কি নাচ গান, এসবে অংশগ্রহণ করেছো?
পাখি: মামা মামি, আপু এগুলো পছন্দ করেন না। আর আমিও না।
শ্রাবন: আমি গান করি তাতো জানো। কিছু রেকর্ড ও বের হয়েছে। কিছু মানুষ আমাকে এই গানের জন্য চিনে।তাই তোমাদের স্কুলে আমাকে গান গাইতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পাখি : তাতে আমার কি!
শ্রাবন : কিছু না তবে , আমি তোমাকে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ওদিন এসো। সমস্যা নেই সাথে তোমার বোন দুলাভাই ও থাকবে।
পেছন থেকে অপূর্ব, সূর্য গলায় কাশি দিয়ে উঠে।
কি চলছে এখানে? এই বুঝি দরকারি ক্লাস?
বলে উঠলো অপূর্ব।

শ্রাবন আমতা আমতা শুরু করে দেয়।
কি বলবে বুঝতে পারছে না। অপূর্ব, সূর্য খিল খিল করে হেসে উঠে।
অপূর্ব: ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। তাছাড়া দু’জনকে ভালো মানিয়েছে।
পাখি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
অপূর্ব খেয়াল করলো ঘাসের উপর কিছু একটা পরে আছে।
উঠিয়ে নিলে দেখতে পায় একটা ওয়ালেট।
আশ্চর্য হয়ে যায়। এটা কার ওয়ালেট।
ওয়ালেট টা খুলতেই দেখে।
কিছু টাকা,আর একটা আইডি কার্ড।
অপূর্ব অবাক হয়ে যায়। এটা আর কারো নয়। চীপস ডুপিয়ালির আইডি কার্ড। তবে এটা মেডিকেল আইডি কার্ড। তারমানে উনি একজন ডাক্তার!!!
বিদেশী ডাক্তার এখানে কি করছে।
আলি বাড়িতে সবার আড্ডার আশর বসিয়েছে।
নানান কথা নিয়ে হাসাহাসি করছে।‌
শ্যামলী, সূর্য,শ্রাবন,এলিজা।

বারান্দার চৌকিতে বসে চা খাচ্ছে আর বিভিন্ন কথায় একজন আরেকজনের উপর হেসে হেসে পরছে।
অপূর্ব এক কোনেতে দাড়িয়ে আছে।
অপর বারান্দায় পাখি পরছে। অপূর্ব পাখির কাছে যায়। পাখি কিছু লিখছে।
অপূর্ব অবাক হয় পাখির কলমটি দেখে।
অপূর্ব শান্ত গলায় পাখিকে বললো,কলমটা অনেক সুন্দর। দেখে মনে হয় স্বর্নের । কে দিয়েছে কলমটি?
পাখি কিছু চিন্তা করে বললো,
আমার আব্বা মৃত্যুর আগে দিয়ে গিয়েছিলেন।
হঠাৎ সূর্যর ডাক পরে। অপূর্ব চৌকি থেকে উঠে যেতেই। পাখি পেছন থেকে অপূর্বর হাতটি ধরে ফেলে।
অপূর্ব থমকে দাঁড়ায়।
অপূর্ব: কিছু বলবে?
পাখি চোখে হতাশা নিয়ে বলে উঠলো,
পর্দার আড়ালে থাকা একজন হতভাগি মেয়ের কথা বলবো। যার জীবনের পথ চলাটা একজন মাঝপথে ই শেষ করে দেয়।

এলিজা পর্ব ২৭+২৮

অপূর্ব পাখির মুখে এরকম কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়।
কে সেই মেয়ে ?????

এলিজা পর্ব ৩১+৩২+৩৩