এলিজা পর্ব ৩১+৩২+৩৩
Dayna
চারদিক থেকে কোলাহল এর শব্দে ভেসে আসছে।
নির্জন প্রহরে চারদিক কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। ব্যাস্ত শহর আজ নিরব হয়ে গেছে।
এটা কি অভিশাপ নাকি পাপ। চারদিকে যা হচ্ছে।
মনে পরলেই বুকের মাঝে হুহু করে উঠে।
হঠাৎ এসব ভাবনা মাথা থেকে ফেলে দেয় জয়া।
অর্পাকে ডাকতে থাকে।
অর্পা গম্ভীর মুখে আসলো।
জয়া বললো,এখানে বস আমি চুল বেঁধে দিচ্ছি।
অর্পার মন যে প্রতি মূহুর্তে কেঁদে উঠছে।অথচ কাউকে বলতে পারছে না।
তার প্রান প্রিয় বন্ধু কে হারিয়েছে।
অর্পার চুল বাঁধতে বাঁধতে জয়া খেয়াল করলো বাড়িতে কেউ ঠুকেছে।চপর চপর পায়ের আওয়াজ।জয়া ভয় পেয়ে যায়। বাড়িতে কেউ নেই। শুধু জয়া,অর্পা,আর মমতাজ আজ এসেই তার বাবা বাড়িতে গেছে সবার সাথে দেখা করতে। জাহাঙ্গীর ঘরে নেই। ডিসি সাহেব এর সাথে দেখা করতে গেছে।
জয়া অর্পাকে তার রুমে রেখে একা একা বের হয়
টিপ টিপ পায় চারদিকে দেখে কেউ নেই।
হঠাৎ ই চোখ পরে এলিজার ঘরের পাশে দুটো মাথার,ছায়া দেখা যাচ্ছে।
জয়া আড়ালে লুকিয়ে যায়। বুকের ভেতর কাঁপা শুরু করে। কারা এরা,ঘাপটি মেরে বসে পরে টেবিলের এক কোনে জয়া।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অচেনা দুজন লোকের মুখে কালো মুখোশ।
চেনা যাচ্ছে না। তাদের দুজনের কথপোকথন থেকে একটা কথা পরিস্কার শোনা, ,গেলো।
এলিজা বাড়িতে নেই, আজ ও বেঁচে গেলো। তবে কতদিন বাঁচবে চল যাই।
এই বলে লোক দুটো বেড়িয়ে যায় হাতে ছিলো বড় রামদা।
এরা কারা জিজ্ঞেস করার মত কোন সাহস পায়নি।
জয়া দৌড়ে গিয়ে অর্পার কাছে বসলো।
অর্পা: মা হাপাচ্ছ কেন?
জয়া গভীর চিন্তায় ভিবোর। কারা এরা এলিজা কে কেন মারতে চায়। কারা পাঠিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে জয়ার বুকের ধুকবুকানি বেড়ে যায়।
তিলকনগর —-
কে সেই মেয়ে যে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে?কিসের জন্য আর কে তার জীবন টা মাঝপথে থেমে গেছে আর কার জন্য।?
পাখি বলতে শুরু করলো —
ওর নাম খুশি। তবে নামের মত ওর জীবন টা খুশিতেই ভরা ছিলো না। আমার একমাত্র ভালো বন্ধু ছিলো।
রোজ সকালে একসাথে ফুল তুলতে যেতাম।রোজ বিকেলে একসাথে খেলতে যেতাম।একে অপরের সমস্ত কষ্ট ভাগাভাগি করে নিতাম। খুশি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।খুশির বাবা একদম ই চায় না খুশি পরাশুনা করুক। কিন্তু খুশির মায়ের খুব ইচ্ছে তার মেয়ে একদিন অনেক বড় হবে। সে তার বাবার বাড়ির জমি(ওয়ারিশ) বিক্রি করে খুশির সমস্ত চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করতো। খুশির বড় ভাই আছে কিন্তু তারা খুশিকে বোঝা মনে করে। কখনো কখনো খুশিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলতো। কখনো বলতো কোন নাগরের হাত ধরে চলে যাচ্ছে না কেন।এসব কথায় খুশি অনেক আঘাত পেত। লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক কাঁদতো। কিন্তু হাল ছাড়ার মেয়ে ছিল না। ও সবসময় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার এর দিকে অটুট ছিলো।
কিন্তু হঠাৎ ই কালো ঝড় আসে ওর জীবনে।
খুশি দেখতেও খুব সুন্দরী ছিল। এলাকার অনেক ছেলেরা ওর পিছন ঘুরতো। কিন্তু ও কাউকে পাত্তা দিতো না। এড়িয়ে চলতো। কারন ও মনে করে ,বিয়ের আগে হারাম সম্পর্ক,সফলতায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।বর্ষন নামে একটা ছেলে খুশিকে অনেক পছন্দ করতো। একবার নয় হাজার বার খুশি কে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু খুশি প্রত্যাখান করে। ছেলেটাকে বলতো,যে আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে ভাবি। ভালো একটা ভবিষ্যৎ গড়তে চাই। কিন্তু বর্ষন তাও মানলো না।
পাখি মাঝপথে কথা থামিয়ে দেয়।
অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে। তারপর কি হলো?
পাখি আবার বলতে শুরু করে। আজ থেকে ২ বছর আগে। আমি আর খুশি স্কুল থেকে আসছিলাম। তখন দেখি ছেলেটা সামনে দাঁড়িয়ে। সেদিন ও ছেলেটা একই কথা বললে,খুশি সেই আগের কথাই বললো। তখন বর্ষন ,ক্রোধের স্বরে বললো,তুই কিভাবে তোর স্বপ্ন পূরন করিস আমিও দেখবো বলেই ছেলেটা খুশির মুখের উপর এ,সিড নিক্ষেপ করে।
বলেই পাখি ফোপাতে থাকে।
অপূর্ব, উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো—তারপর কি হয়েছিল বলো?
পাখি : আমার চোখের সামনে খুশি ছটপট করতে থাকে। চিৎকার করতে থাকে। আশেপাশের মানুষ এলে সবাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
খুশির সেড়ে উঠতে,৬ মাস সময় লেগেছিল। তবে,
খুশির মুখের অর্ধেক টা পুড়ে যায়।ডান চোখে আর সেদিন এর পর থেকে দেখতে পায় না।
অপূর্ব বললো,এখন কোথায় খুশি?
পাখি: সেদিনের পর থেকে খুশি আর ঘরের বাইরে বের হয়না। ছোট্ট একটা ঘরের মধ্যে সারাদিন বসে থাকে। সেদিন এর পর আর কারো সাথে দেখা হয়নি।নিজের মায়ের সাথে ও কথা বলে না।
ছোট্ট একটা জানালা আছে ওর ঘরে। ওর মা বেলা মত খাবার দিয়ে আসে।
একদিন আমি গিয়েছিলাম আমার সাথেও কথা বলেনি। কিন্তু ছোট্ট একটা চিরকুটে লিখে দিয়েছিলো যে, আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আমার জীবনের পথ চলা এখানেই শেষ। সেদিনের পর আর ও স্কুলেও আসেনি।
অপূর্ব: ওর জীবনের পরিকল্পনা কি? কি হতে চেয়েছিলো?
পাখি বলে উঠলো, খুশি চাইতো,যে ও একজন সায়েন্টিস হবে। খুশি সবসময় পরিক্ষায় প্রথম হতো। কিন্তু ওর জীবন……..
পাখি থেমে যায়। কান্না শুরু করে।
অপূর্ব ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,চলো যাওয়া যাক।
পাখি অবাক দৃষ্টিতে বললো, কোথায় যাবেন?
খুশির কাছে।
পাখি: ও কারো সাথে কথা বলবে না। আপনার সাথে ও না।
অপূর্ব: চেষ্টা করে দেখি।
বলেই দুজনে বের হতেই অপূর্ব, হোঁচট খেয়ে পরে যেতেই , এলিজা-আঝাপটা দিয়ে ধরে ফেলে অপূর্ব কে।
অপূর্ব অবাক দৃষ্টিতে এলিজা-কে পরোখ করে।
এলিজা বললো, ছোট-বড় সমস্ত বিপদে আমি আপনার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াব*আমার জীবনের বিনিময় হলেও আপনাকে রক্ষা করবো* কারন আমি যে আপনার অর্ধাঙ্গিনী।
অপূর্ব এলিজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসে।
অপূর্ব বললো, এতদিন শুনে এসেছি মেয়েদের শুধু ছেলেরা রক্ষা করে, কিন্তু আমি দুনিয়ার সব চেয়ে ভাগ্যবান পূরুষ,যার অর্ধাঙ্গিনী তাকে রক্ষা করতে চায়।
এলিজা বললো,জীবন কখনো এক সুতো দিয়ে বাধা যায়না। ভালোবাসা তখনই মজবুত হয়।যখন একে অপরের জন্য পরিপূরক হয়।একে অপরের বিপদে,প্রয়োজনে ঢাল হয়ে দাড়ায়।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয় দাড়িপাল্লার মত। যখন তা এক দিকে বেশি ঝুঁকে তখন অপর দিক বেশি উপরে উঠে আবার তা নিচে পরে যায়।তাই দু’জনকে সবসময় দুজনের প্রতি সমান সমান যত্ন সম্মান রাখতে হয়।
অপূর্ব এলিজার মুখে এরুপ কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
ঢাকা———–
ল্যান্থলাইনে ফোনের আওয়াজ।
জয়ার ভেতরটা ফোনের আওয়াজ শুনেই থমকে যায়।কাপা হাতে ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে– অপূর্ব স্যার , ডিসি সাহেব এর মেয়ে বর্ষার লা,শ পাওয়া গেছে,তবে তার মেয়ের লা,শটি রাজকীয় কনের মত সাজিয়ে দিয়েছে।
ওপাশের কনস্টেবল জানে না ফোন কে ধরেছে।
জয়া ধপাস করে ফ্লোরে বসে পরে।…।।
জয়া ক্রোধের স্বরে বলে উঠে, আমার মৃত্যুর আগে একটাই ইচ্ছা। নিকৃ,ষ্ঠ এই খেলা যে খেলছে তাকে স্ব-চোক্ষে দেখা।
সে কোন মায়ের দুধ খেয়েছে তা আমি দেখতে চাই।
খুশির বাড়িতে অপূর্ব পাখি চলে যায়।
অনেক ক্ষন দরজায় কড়া নাড়ার পর দরজা খুলে এক ভদ্র মহিলা।
আমি সালাম দিলাম। উনি দেখে আমাকে চিনতে পারে। বলে আলির জামাই।
আমি হ্যা সুচক মাথা নেড়ে ভেতরে ঢুকি।
আমি তাকে তার মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে কান্না শুরু করে দেয়।
উনি বললেন, আমার মেয়ের জীবন টা যে নর,ক করে দিছে।তার জীবন টা আল্লাহ শেষ করে দেবে। এক হতভাগা মায়ের কান্না , আল্লাহ সইবো না।
আমি ওনাকে শান্তনা দিয়ে বললাম।আমি খুশির সাথে একবার কথা বলতে চাই।
উনি বললো,খুশি কথা বললো না।আমি বললাম ঘরটা দেখিয়েদেন।আমি চেষ্টা করছি।
একটা ছোট্ট ঘর ভেতরে কোন সাড়া শব্দ নেই।
আমি ছোট একটা ছিদ্র দিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলাম। চুল গুলো এলোমেলো।
মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে ওর কাছে ক্যামি,কেল এর কিছু বোতলের মত। কিছু করছে।হয়তো স্বপ্ন আকড়ে ধরে বাঁচতে চাচ্ছে।
আমি ডাকলাম, খুশি, খুশি। আমি তোমার এক ভাই। দরজা টা খুলবে।
কোন সাড়া নেই। অপূর্ব কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো। খুশি দরজা খুললো না।অপূর্ব ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
খুশি , সমাজে এমন কিছু মানুষ থাকবে যারা সর্বদা তোমাকে নিচে নামানোর চেষ্টা করবে। যে আজকে তোমার এই অবস্থা করেছে ওর মুখ লুকিয়ে থাকার কথা তুমি কেন থাকবে। সফলতার জন্য দরকার চেষ্টা, আত্মবিশ্বাস, প্রচেষ্টা, ধৈর্য খারাপ সময়, কিছু মানুষের খারাপ আচরণ।
সফলত অর্জন করতে শি,কার হতে হয় সমালোচনার।শিকার হতে,হয় খারাপ সময়ের,শিকা,র হতে হয় নিজের রক্তের মানুষদের খারাপ আচরণের।
অন্যর দেয়া কষ্ট থেকে কান্না করাটা বোকামি। অন্যর দেয়া কষ্ট থেকে ধরতে হয় জেদ। মানুষ চাইবে তোমাকে কাঁদাতে, মানুষ চাইবে তোমাকে টেনে হিছরে নিচে নামাতে। কিন্তু তোমাকে তোমার লক্ষ্যর প্রতি কঠোর থাকতে হবে। সংগ্রাম করতে হবে সফলতার জন্য। বার বার ব্যর্থ হওয়ায় পরেও উঠে দাড়াতে হবে।
যারা বলেছে তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না তাদের দেখিয়ে দাও তুমি পারো্, সফলতার জন্য রুপ কোনদিন দরকার নয়। যারা তোমাকে বোঝা মনে করে। তাদের দেখিয়ে দেও, তুমি বোঝা নও তুমি শ্রেষ্ঠ।
আমি সফল হতে চাই থেকে,আমি সফল হতে পেরেছি পর্যন্ত যেতে হয়।
অপূর্ব হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে দেখতে পায়। খুশি হাটু ঘেরে বসে আছে।
অপূর্ব: যদি আমার কথা গুলো তোমাকে এতটুকু অনুপ্রেরণা করে,তবে এই ফর্ম ফিলাপ এর টাকা দিয়ে গেলাম। তুমি পরিক্ষা দিবে। আমরা চাই তুমি পরিক্ষা দাও।
বলেই সেখান থেকে চলে যেতেই ,খুশির ভাই বলে উঠে, পোড়ামুখি আর কি করতে পারবে।
অপূর্ব : অবহেলার শিকর খুব মজবুত হয়।
বলেই পাখিকে নিয়ে চলে যায়।
অপূর্ব পাখিকে নিয়ে চলে যেতেই দেখতে পায়। হিমেল কে।
অপূর্ব অবাক হয়ে যায়,হিমেল চীপস ডুপিয়ালির সাথে অবাক করা ভঙ্গিতে কথা বলছে। এইখানে যদি হিমেল হবে, তবে ওরা মিথ্যা কেন বললো যে,ঘুরতে গেছে। আর এই তিলকনগর কেন? কি আছে এই তিলকনগর ,ওদের সাথে কি সম্পর্ক?…….
সমস্ত ঢাকার শহর আজ ব্যাস্ত।চারদিকে ভয়ের আচ্ছন্ন। প্রতিটা মানুষের মনে আতঙ্ক। ডিসি সাহেব এর মেয়ে খু,ন।তবে শুধু খু,ন নয়। ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী বর্ষা কে ধ,র্ষন করা হয়েছে ।আকাশটা আজ বড্ড নিশ্চুপ। মনে হচ্ছে কোন দূর্ঘটনা নয় বরং কারো পাপের ফল।
বললো জয়া-
জাহাঙ্গীর: তুমি এত বেশি কথা বলো কেন? নিজের মেয়ের খেয়াল রাখো সেইটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
জয়া ভ্রু কুঁচকে ভাবলো ,এই মানুষটির মনে কি কখনো কারো জন্য মায়া জন্মাবে না! কতটা পাষান। সব ভালোবাসা হয়তো তার ছেলের জন্য ই আছে।
কনস্টেবল এর কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর অপূর্ব কে জানাইনি। কারন চাই না ছেলেটা চিন্তায় থাকুক।
বর্ষা যেদিন থেকে কি,ডন্যাপ হয় সেদিনের পর থেকে আর অর্পাকে স্কুলে যেতে দেয়নি।
বড্ড ভয় হয়। ভাবতে ভাবতে শুয়ে পরে জয়া।
তিলকনগর————-
এলিজা সবার জন্য রান্না করেছে। সূর্য, শ্রাবন চৌকিতে বসে বসে গান গাইছে।
শ্যামলী, সূর্য বিভিন্ন কথা বলছে আর হাসছে। যদিও শ্যামলী এলিজার থেকে বয়সে বড়। তবুও মিশুক ।
শ্রাবন গিটার টা সূর্যর কাছে রেখে ঘরে আসে পানি খেতে আসে। তৎক্ষণাৎ মনে মনে ভাবলো বাড়িটা একটু ঘুরে দেখি।
কাঠের ঘর হলেও বেশ বড় আর সুন্দর।
কয়েকটা ঘর আছে ।
একটা ঘরে এখনও যাওয়া হয়নি।
ভেতরে অনেক পূরানো জিনিস রাখা। পারিবারিক এ্যালবাম।
তবে ছবিটা ভালো বোঝা যাচ্ছে না।
অনেক পূরাতন। একটা ডায়েরি ও পেলাম। তবে ডায়েরিটা পূরানো হলেও যখন খুলে দেখি তখন অবাক হই। কারন ডায়রির লেখা গুলো একদম নতুন।
সমস্ত লেখা ইংলিশে।আর লেখা গুলো পূরাতন নয়। সদা লেখা ডায়েরি। ভেতরে একটা কাগজ, কৌতুহল হলো কাগজটি দেখার।
কাগজটি খুলতেই যা লেখা দেখলাম। পরিষ্কার বোজা না গেলেও, , এরকম কিছু লেখা, A , ফর এ,লিয়েন L ফর, লায়,ন মানে সিং,হ । তারপর G ফর গার্ডেন।
কি অদ্ভুত শব্দ রে বাবা এরকম শব্দের অর্থ ও প্রথম শুনলাম। ভেবেই মৃদু হাসে শ্রাবন।ডায়েরি তে যা লেখা আছে তা পরতেই, এলিজা খেতে ডাকে শ্রাবন কে। বাকি সবাইকেও ডাকে।
ভিষন খিদে পাওয়াতে আমিও খেতে চলে যাই। তবে পরে ডায়েরিটা পরতে হবে।
সবাই খেতে বসে ।
তবে কারো অপূর্বর জন্য কোন চিন্তা ই নেই……
অপূর্ব পাখিকে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে হিমেল এর কাছে পৌছাতে চাইলেই পাখি অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পরে যায়।
অপূর্ব পাখিকে উঠিয়ে হিমেল এর দিকে দেখলে ওরা আর সেইখানে নেই। চীপস ডুপিয়ালি সেও নেই হিমেল ও নেই। কোথায় যাবে ওরা । কি করছে এরা সবাই মিলে? আমি ঠিক দেখেছি। নাকি মনের ভুল।
পাখিকে আলি বাড়ির সামনে ছেড়ে আমি আশেপাশে খুঁজতে গেলাম। চারদিকে আপছা কুয়াশা। শীতল হাওয়া। একদম গা ঝিমঝিম অবস্থা।
কোথাও কোন জনব মানব নেই। পিস্তল টা হাতে নিয়ে চারদিক খুঁজছি। নজরে তেমন কিছু দেখছি না। তবুও কোথায় একটা তো গড়মিল আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে রওনা দিতেই পেছন থেকে চপর চপর আওয়াজ আসে। কেউ বের হচ্ছে ঝোপঝাড় থেকে।আমি ক্ষেতের পাশে ঘাপটি মেরে বসে আছি।আজ দেখতেই হবে ওরা কি করছে।
অনেক ক্ষন থেকে দেখছি, যেদিক থেকে আওয়াজ আসছে। ঝোপঝাড়ে কেউ আছে কিন্তু কেউ বের হচ্ছে না।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটলো। ঝোপঝাড় থেকে বের হলো, হিমেল সাথে চীপস ডুপিয়ালি। দুজনে এমন ইশারায় কথা বলছে যেন কাউকে মেরে ফেলা,র পরিকল্পনা করছে । ওঁদের থেকে আমার দূরুত্ব অনেক টা । আমি আজ দেখবো ওরা কোথায় যাচ্ছে।ওরা দিগন্ত নদীর দিকে হাঁটা শুরু করছে। আমিও ওদের পিছু নেই।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা পৌছে যায় রুশরাজ্যে ,
আমি দেখছি আর অবাক হয়ে যাচ্ছি। শরীর থেকে অঝরে ঘাম ঝরছে।
রুশরাজ্যে থেকে কেউ একজন বের হয়েছে। মুখটা ঘুরানো আমি দেখতে পেলাম না।
কিন্তু আমি ওদের কিছু বলছি না। কারন এদের আস্তানা কোথায় তা আমাকে জানতে হবে। আমি একটা ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে পরি। ওরা তিনজন কথা বলতে বলতে নদীর তীরে অবস্থিত হয়। নদী পথে হাজির হয় একটি স্পিডবোট । তিনজন উঠেই ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
আমি হতভম্ব হয়ে যাই। হাঁটুঘেরে বসে পরি কি হচ্ছে এসব। হিমেল যে বললো ওরা টুরে গেছে। তাহলে এখানে কেন।
কিসের জন্য মিথ্যা বললো।
আচমকা ঘাষের উপর শুয়ে পরেছি।এই চাপ আর নিতে পারছি না। ঠান্ডা হাওয়া, ক্লান্ত শরীরে হঠাৎ চোখ বুঝে যায়।
বেশ কয়েক মিনিট পর অপূর্ব দেখতে পেলো, রুশরাজ্যের ঝোপঝাড় থেকে কেউ একজন বেড়িয়ে আসছে। ভিষন ভয় পেয়ে যাই। অপূর্ব চৌধুরী কখনো কিছু ভয় পায়না সে হঠাৎ আজ ভয়ে চাপসে যাচ্ছে।
রক্তা’ক্ত একজন লোক।
সাদা পাঞ্জাবি,পরনে পাগড়ি,তার পাঞ্জাবি তে রক্তের দাগ।
আমার দিকেই আসছে। আমি আতংক দৃষ্টিতে তার দিকে দেখছি।
সে আর কেউ নয়। মৌলবী সাহেব।
আমার হাত পা সমস্ত কিছু কাঁপছে। নদীতে অথৈই জোয়ার হচ্ছে।
সে আমাকে বলে উঠলো, অপূর্ব তুমি সত্যর খুব কাছে,খুব কাছে,খুব কাছে, । সত্যর দড়ি তোমার হাতে। তুমিই পারবে এই পাপের খেলা বন্ধ করতে। মৌলবী আহত কন্ঠে বলে উঠলো,ওরা আমাকে বাচতে দেয়নি ওরা আমাকে বাচতে দেয়নি,, তুমি এর শেষ করবে।
চট করেই অপূর্বর ঘুম ভেঙে যায়।
বুকের ভেতর ধুকবুকানি পরিস্কার শোনা যাচ্ছে। তারমানে এটা দুঃস্বপ্ন ছিলো…. উফ সারাদিন বদ চিন্তায় মাথা যে যাচ্ছে।
তবে এই রহস্যর উন্মোচন আমাকে করতেই হবে। …….
জড়ন্ত হিমেল হাওয়া বইছে। নিশ্চুপ আকাশ। অভিমানী মেঘ। রৌদ্রজ্জ্বল সূর্যের কিরন।সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সকাল।
পাখি ঘুম থেকে উঠেই, বেরিয়ে পরে টিউশন এর উদ্দেশ্যে। শীতের সকাল কুয়াশায় আচ্ছন্ন। প্রানপৈত্রিক সরষে ক্ষেত বয়ে গেছে রাস্তার দু’পাশে।
মাঝ প্রান্তর রাস্তায় বান্ধবীদের সাথে স্কুলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে পাখি।
কোন এক অজানা কারনে আনন্দিত সে।
শ্রাবন, সূর্য, শ্যামলী সবাই মিলে নদীর পারে রোদ পোহাচ্ছে। শ্রাবন গিটার বাজাচ্ছে। সূর্য বেসুরো কন্ঠে গান করছে।
শ্যামলীর বয়স ওদের থেকে বেশি হলেও সে সবসময় মিশুক প্রকৃতির মেয়ে।
অপূর্বর ঘুম দেখে এলিজা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
‘কতটা মায়া মানুষ টার মুখে। যে দেখবে সেই তার অনন্ত মায়ায় পরে যাবে। সারাদিন ক্লান্ত শরীরে ছুটতে থাকে। আসা,মি অ,পরাধি কে শনাক্ত করার ধান্দায়। গতকাল রাতে ঘরে ফিরেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পরে।আমি বলেছিলাম আপনি ঢাকা ফিরে যান। কিন্তু সে রাজি নয়। আমাকে একা রেখে যাবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে এলিজা গিয়ে ঘুমন্ত অপূর্বর পাশে বসে। ঘুমন্ত স্বামির কপালে মায়াবী মুখে চুমু খায় এলিজা। ফিসফিস করে বলল,
আমি চাই,পরকালে কোন এক কারনে আপনি আবার আমার পিছু নেন। যখনই আপনার চোখে আমাকে হারানোর ভয় দেখি ভেতরটা খুশিতে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
এলিজা এসব বলে অপূর্বর কাছ থেকে উঠে যেতেই, অপূর্ব পেছন থেকে হাত টা ধরে টান নিয়ে নিজের কাছে বসিয়ে নেয়।
এলিজা থমকে বসে।
অপুর্ব শান্ত স্বরে বলে উঠলো,এত টা ভালোবাসো যদি কোনদিন কারো বুলেটের আঘাতে শোনো আমি নেই তখন কি করবে।
এলিজা অপূর্বর কথা শুনে আতংক স্বরে বললো,আমি সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি , যেন আপনার আগে আমার মৃত্যু হয়।
অপূর্ব: আর আমি চাই এটা না হোক।বলেই মৃদু হাসে।
এবার উঠুন আপনাকে খাবার দেই। আমি এনজিও তে যাবো দরকার আছে।
বেলা ১১ টা—
পাখি টিউশন থেকেই ফিরেই উত্তেজিত হয়ে তার দুলাভাই কে খুঁজতে থাকে।
এলিজা,জয়তুন তারা বার বার জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলে না।
জানতে পারে তার দুলাভাই, নদীর পারে।
দৌড়ে সেখানে চলে যায় নদীর তীরে। পেছনে জয়তুন, রমজান তারাও আসতে থাকে।
অপূর্ব পাখিকে হাঁপাতে দেখে জিজ্ঞেস করে,কি হয়েছে হাপাচ্ছ কেন? কেউ কিছু বলেছে?
পাখি না সূচক মাথা নাড়ে ।
সবাই অবাক হয়ে পাখিকে দেখছে।
কি হয়েছে বুঝতে পারছে না।
অপূর্ব পাখির দুই স্বিনাতে হাত দিয়ে, শান্ত স্বরে আবার প্রশ্ন করে ,কি হয়েছে বলো।
পাখি অস্থিরতা নিয়ে বলে উঠলো,ভাইয়া খুশি আজকে স্কুলে আসছে। এবং তোমার দেয়া টাকা দিয়ে পরিক্ষার জন্য ফর্ম করেছে।
পাখির মুখে এই কথা শুনে রমজান,জয়তুন, এলিজা সবাই অবাক হয়ে যায়।
যে মেয়েটা গত দু বছর ধরে ঘরবন্দি,কারো সাথে কথা বলেনি, নিজের মায়ের সাথে ও না সে আজ অপূর্বর কথায় অনুপ্রেরণীত হয়ে নিজেকে প্রদর্শন করছে।
অপূর্ব: দেখবে খুশি চাইলে ,ওর জীবনে অনেক বড় হবে।
ঢাকা——
জাহাঙ্গীর সকাল থেকে গম্ভীর মুখে বসে আছে।
কারো সাথে কথা বলছে না। সকালের খাবার টাও সে খায়নি। হাবভাব দেখে মনে হয় কোন এক ফন্দি আটছে। সত্যি ই কি আমার ধারনা ঠিক। নাকি অতিরিক্ত ভাবছি।
সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
এসব ভাবতে ভাবতে জয়া প্রশ্ন করেলো,
জয়া: শুনছেন। সকাল থেকে এভাবেই বসে আছেন। কিছু খাননি,আমি আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসবো??
জাহাঙ্গীর ধপ করে চেয়ার থেকে উঠ দাঁড়িয়ে কর্কট মেজাজে বলে উঠলো,বলেছি তোমাকে, আমায় নিয়ে চিন্তা করতে! যদি আমাকে নিয়ে চিন্তা ই করতে । তবে আমার ছেলেকে আমার থেকে দূরে সরাতে পারতে না।
এসব বলেই একটা সিগার ধরায়,চোখ গুলো একদম লাল। দেখে মনে হচ্ছে এখনি রক্ত বের হবে।
জাহাঙ্গীর,জয়াকে আবার ধমকের সুরে বলে উঠলো,
আমার ছেলেকে ঐ তিলকনগর থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এনে দিবে। যদি আমার ছেলের কিছু হয়। তবে আমি কাউকে ছারবো না।তোমাকেও না।
জাহাঙ্গীর মেজাজ দেখিয়ে ঘর থেকে চলে যায়।
অর্পা দরজার আড়াল থেকে তার বাবার এরকম রুপ দেখে অর্পার ভেতর থেকে রুহ বের হয়ে যাচ্ছে।
জয়া মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। কান্না করতে থাকে।
অর্পা এসে তার মাকে শান্ত না দিতে থাকে।
কিন্তু কোন প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছে না।
তবুও জিজ্ঞেস করলো
মা ,বাবা এরকম আচরণ কেন করে? ভাইয়া তিলকনগর তাতে কি হয়েছে? আমাকে বলো না মা!!
জয়া চোঁখের পানি মুছে
বলে উঠলো,তোর বাবা তার ছেলের ভালোবাসায় অন্ধ।
অর্পার খটকা লাগলো।
মায়ের জবাবে সত্যতা পায়নি।
তিলকনগর ——–
নদীর ঘাটে বসে আছে সবাই। সূর্য, শ্রাবন ، অপূর্ব বিভিন্ন কথায় মশগুল।
তবে অপূর্ব কোন কিছুতে শান্তি পাচ্ছে না।
তার মাথায় হাজার টা প্রশ্ন তবে কাউকে বুঝতে দেয়না।
এলিজাও বাড়ি নেই। বললো এনজিওর হে,ড অফিস থেকে লোক আসছে কোথায় মিটিং হবে সেখানে গেছে।
তৎকালীন,নদীর তীরে একটা টলার এসে পৌছায়।
শহর থেকে একজন মহিলা এসেছে।বয়স খুব একটা নয়। দেখতেও সুন্দর।
মহিলাটি টলার থেকে নেমে এদিক সেদিক দেখছে। হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে এই গ্রামে নতুন।
হঠাৎ মহিলাটি আমাদের উদ্দেশ্য ই আসে।
অপূর্ব দাড়িয়ে পরে।
অচেনা মহিলাটি বললো, আঁচ্ছা ভাইয়া, এখানে হাশেম আলীর বাড়ি কোথায় বলতে পারেন?
অপূর্ব কিছুটা অবাক হয়ে যায়,
হাশেম একটা স্বার্থপর লোক। নিজের স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। সে থাকলে হয়তো নিরার আজ এমন অবস্থা হতো না। (বললো অপূর্ব মনে মনে)
অপূর্ব: হ্যাঁ চিনিতো। তবে উনি আপনার কি হয়?
অচেনা মহিলাটি বলে উঠে,উনি আমার কিছু হয়না।
অপূর্ব: তবে ওনার খোঁজ করছেন কেন?
মহিলাটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
একসময় ওনার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো। অনেক ভালোবাসতাম ওনাকে।তবে একটা ভুল বোঝা বুঝির জন্য সম্পর্ক টা ভেঙে যায়।
এরপর উনি নিরা,আপুকে বিয়ে করে নেন।তাই দেখতে আসলাম দাম্পত্য জীবনে তারা কেমন আছে। বলেই মহিলাটি মৃদু হাসে।
এই কথা শুনে, অপূর্ব অবাক হয়ে যায়। শরীর থেকে অঝরে ঘাম ঝরতে থাকে।
তবে,আমরা যে শুনেছি হাশেম দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে গেছে।তবে ইনি কে। আর হাশেম যদি,এনাকে বিয়ে না করে থাকে তবে সে কোথায়।
এসব অপূর্ব মনে মনে ভাবতেই।
প্রশ্ন করলো অচেনা মহিলাটি কে,আপনি যা বলছেন সব সত্যি তো?
মহিলাটি কিছু টা অবাক হয়ে উত্তর দেয়, মিথ্যা কেন বলবো!! যদি মিথ্যা হতো তবে কি এখানে আসতাম!!
অপূর্ব আলি বাড়ির দিকে দেখিয়ে দেয়।
অপূর্ব পেছন থেকে ডেকে মহিলাটি কে জিজ্ঞেস করে, আপনার নাম টা কি? মহিলাটি বললো , আমার নাম রেখা।
বলেই চলে যায় আলি বাড়ির উদ্দেশ্যে।
মহিলাটির চলার ধরন একদম ভিন্ন।শাড়ি পরা একদম অন্যরকম, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখা যাচ্ছে।
অপূর্ব ভাবতে থাকলো, এরকম একজন মহিলার সাথে হাশেম ভাই,কি করে সম্পর্কে জড়াতে পারে। শুনেছি উনি ধার্মিক ছিলো।
সূর্য : ভাই এত ভাবছিস কি? হতে পারে হাশেম অন্য কোন মেয়ের সাথে সম্পর্কে ছিলো।
অপূর্ব: আমি যতটুকু, জানি জয়তুন মামির থেকে শুনেছি,উনি খুব দ্বিনদার একজন মানুষ ছিলেন।
এরকম একজন নারীর সাথে ওনার সম্পর্ক থাকতে পারে না।
সূর্য: তোর কাজ হচ্ছে সবসময় সবাইকে সন্দেহ করা। তাই তোকে বুঝিয়েও লাব নেই।
অপূর্ব ভাবতে থাকলো,আমাকে আরেকবার মামির সাথে কথা বলতে হবে।
অপূর্ব, সূর্য বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
শ্রাবন একা একা বসে আছে কোন অজানা চিন্তায় মশগুল।
এতক্ষণ এখানে কি হলো তা যেন খেয়াল ই করেনি।
আজ এলিজা বাড়ি নেই ।সমস্ত কাজ পাখি করছে।
ডান দিকে ফিরতেই দেখি পাখি কলসি কাঁকে আসছে।, হয়তো নদীতে পানি নিতে আসছে।
শ্রাবন পাখিকে দেখা মাত্রই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
শ্রাবন: আমি জানতাম পিচ্চি বেয়ান, আপনি আসবেন।
পাখি: আপনি কি করে জানলেন!আমি আসবো! আজিব কথাবার্তা।
শ্রাবন হিরোদের মত ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
শ্রাবন: আমার জন্য শহরের সমস্ত মেয়ে পাগল। তুমিও আমায় এখানে দেখে কথা বলতে চলে আসলে। পানি নেয়াটা তো বাহানা মাত্র।
পাখি: ফালতু বক বক করবেন না।
বলেই নদীর ঘাটে নামে পানি তুলতে।
পেছন থেকে শ্রাবন বলে উঠলো, পিচ্চি ধপাস করে পরে জাইয়েন না।
পাখি: আমি আমাকে সামলাতে পারি।
শ্রাবন ও পাখির সাথে ঘাটে নামে।
পাখি কলসিতে পানি তুলে উপরে উঠতেই পা পিচলে ধপাস করে পরে যেতেই শ্রাবন ধরে ফেলে।
শ্রাবন খিল খিল করে হেসে উঠে।
কি পিচ্চি বললাম না,পরে যাবেন। এখন আমি না থাকলে কি হতো? হুমমমম
পাখি লজ্জা ভঙ্গিতে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
পানির কলসিটা নিচে পরে যায়। শ্রাবন কলসিতে পানি ভরে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। পাখি দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে।
পাখি : আপনাকে যা মানিয়েছে না।
শ্রাবন: ওয়ে পিচ্চি , তোমাকে সাহায্য করছি আর তুমি হাসছো। বলেই বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে।
পাখি পেছন থেকে শ্রাবন কে পরোক্ষ করছে। পরনে কালো শীতের পোশাক,কালো জুতো,গলাতে চেন, লম্বা টে শরীর মিলিয়ে ভারি দেখাচ্ছে।
শ্রাবন: পেছন থেকে কি দেখছো।পাশে এসো।
পাখি আমতা আমতা করে বলল, আপনি কি করে বুঝলেন আমি আপনাকে দেখছি।
শ্রাবন: মানুষের চোখ থাকে দুটো।
অপূর্ব, সূর্য,রেখাকে অনুসরণ করে হাশেম দের ঘরে চলে যায়।
হাশেমের মায়ের বয়স,৫৬ প্রাই । ছেলে আর বউয়ের শোকে একদম আধমরা হয়ে গেছে।
রেখা গিয়ে হাশেমের মাকে সালাম দিতেই, হাশেমের মা হাতের লাঠি দিয়ে রেখাকে পেটাতে শুরু করে।
কাঁপা কন্ঠে বলতে থাকে,বেহায়য়া,বে*শ্যা,অন্যর সংসার ভাঙ্গছো,ওহন আইছো কি আমার লা,শ দেখতে!! বলেই হুহু করে কান্না শুরু করে হাশেমের মা।
অপূর্ব: তারমানে ইনি ই তার প্রাক্তন প্রেমিকা। হয়তো আগেও দেখেছে তাই চিনতে পেরেছে।
সূর্য: হয়তো।
রেখা ডং করে বলে উঠলো,আসলে আন্টি আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। হাশেমের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল।তবে তা অনেক আগে।সে আমায় ভুল বুঝে চলে গিয়েছিল। তারপর নিরা কে বিয়ে করে।
হাশেমের মা অবাক হয়।কি বলছে মেয়েটা। হাশেম ওরে বিয়ে করে নাই। তবে কোথায়।
ঘন্টাখানেক পর —
অপূর্ব, সূর্য,রেখা ,আর আনোয়ারা বিবি( হাশেমের মা)
সবাই বসে আলোচনা করলো।
অপূর্ব: যদি আপনার কথা সত্যি হয় তবে উনি কোথায়।
কি হয়েছে তার।
রেখা : আমিও সেটাই ভাবছি কোথায় যাবেন উনি। আর আমি যতটুকু জানি নিরা কে উনি খুব ভালোবাসতেন।
অপূর্ব: কোথাও কোন কারনে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
সূর্য: হতেপারে কোন নোং,রা কাজ করেছে তাই ধরা খেয়ে লুকিয়ে আছে।
আনোয়ারা: আমার পোলারে গ্রামের সবাই চেনে ওর চরিত্রে কোন দাগ ছিল না।
একেক জনের একেক কথা অপূর্ব কে অনেক ভাবালো।
হাশেমের মায়ের কথা সে চরিত্রবান একজন মানুষ তবে উনি কোথায়।
রাত ৯ টা–
জয়তুন,পাখি দু’জন মিলে অনেক কিছু রান্না করলো।
হাজার হোক, রেখা বাড়ির অতিথি।
হাশেমের মায়ের যা অবস্থা। তার কিছু করা সম্ভব নয়।
এলিজা সকালে বেড়িয়েছে। এনজিও তে কি কাজ। এখনো আসছে না।
কেমন জানি বিষন্ন অনুভূতি হচ্ছে,মনে হয় সব রহস্যের সুত্র আমার সামনে অথচ আমি দেখছি না।বসে বসে ভাবছে অপূর্ব।
সবাইকে খাবার দিচ্ছে জয়তুন।
সূর্য, শ্রাবন,রেখা সবাই খেতে বসছে।
অপূর্ব খাবার সামনে গভীর চিন্তায় মশগুল।
হঠাৎ শ্রাবন বলে উঠলো,
হাশেম ভাইয়ের বিষয়টা আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে।
হাশেমের নাম শুনতেই পাখি, অস্থির হয়ে যায়।
কাঁপা কন্ঠে বললো,আমি দেখেছি,আমি দেখেছি,ঐ,ঐ ঐদিন আমি তাকেই দেখেছি।
অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,কাকে দেখেছো, কি বলতে চাচ্ছ তুমি ?বলো।।
এলিজা পর্ব ২৯+৩০
পাখি: সেদিন ঝোপঝাড়ের পেছনে তাকে আমি দেখেছি। তবে উনি খুব রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ ধাওয়া করছে।আমি তো কিছু মনে রাখতে পারি না।তাই মনেই পারছিলো না।বার বার শুধু মনে হয়েছে ওনাকে কোথাও দেখেছি।কাছের মানুষ।এখন মনে পরলো।
জয়তুন পাখির মুখে এই কথা শুনে,তার হাত থেকে ধপাস করে পানির জগ টা পরে যায়।
কাপা কন্ঠে বলে উঠলো, গত ৫-৬ বছর ধরে তার খবর নেই। তাহলে কি হাশেম কে কেউ অপ,হরণ করেছে……