এলিজা পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫
Dayna
অপূর্ব পায়চারি করতে থাকে। সূর্য লতায় মোড়ানো গাছের টুকরোর উপর বসে আছে। আনমনে সিগারেটে টা”নছে। হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছছে। অপূর্বর ভেতরে নতুন করে আবার ভাবনা জন্ম নিলো।যদি সূর্য সবকিছুর পেছনে না থাকে,তবে এই নির্মম মৃত্যু খেলার পেছনে কে আছে? অপূর্ব ভাবতে থাকল।
____আজকে রাত শেষ ই হচ্ছে না।রাতের গভীরতা বাড়ছে।
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ থেকে সূর্যর পাশে বসে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।তার বন্ধু একজন খু,নি।একটা প্রা,নের বিনিময়ে হাজার টা প্রান নেয়া অপরাধ।তবে রঞ্জনার সাথে যা হয়েছে সেটাও নির্ম,ম । বন্ধুর হাতে হাতকড়া পরাবো,নাকি সুযোগ দেবো? অপূর্বর এসব চিন্তা করতে করতে মাথা ব্যথা হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর শান্ত স্বরে বললো, সেই বাবর রাজ্য কোথায়? আর রঞ্জনার মা বাবা কোথায়?
সূর্য চোখের দৃষ্টি মাটির দিকে পরোখ করে বললো, ওনারা বেঁচে নেই।বাবর তার মেয়ে হারিয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু বরন করে। সেই শোক সহ্য করতে না পেরে ، কল্যানি , তার দু মেয়েকে নিজের হাতে হ,ত্যা করে নিজেই নিজেকে শেষ করে।বাকি ছিলো অন্তিম । বাবর সিকদার মৃত্যুর পর অন্তিম ছিলো একা।জানা যায় অন্তিম কে শেষ করে সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়া হয়। তবে তারপর থেকে সিকদার বাড়ি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়।কেউ আর যায়না সেখানে।
অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করে ,সেই জায়গাটা কোথায়?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সূর্য ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, এখান থেকে অনেক দূর। সকালে বের হলে যেতে যেতে বিকেল।
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো, মৌলবী কে কারা মেরেছে?
সূর্য ঠোঁট কুঁচকে হাসি দিয়ে বলল ،, মৌলবী কে কারা মেরেছে সেটাও আমার অজানা।
অপূর্ব কি বলবে বুঝতে পারলো না।
অপূর্ব আতংক স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
তোর পরবর্তী পরিকল্পনা কি?
সূর্য শান্ত হয়ে স্বরে বললো,
কিছু না।
রাত শেষের দিকে।কোথাও থেকে কোন জ,ন্তু- জা,নোয়ার এসে আক্র,মণ ,করবে তার কোন ভয় নেই।
অপূর্ব সুর্য কে বার বার পরোক্ষ করছে। সূর্য কে দেখে সহজ মনে হলো না।মনে মনে কোন ফন্দি আট,ছে এটাই অপূর্বর মনে হচ্ছে। কিন্তু কোন প্রশ্ন করলো না।
অপূর্ব দাড়িয়ে যায়। কিছু ভাবতে থাকে।ঠিক তখনই সূর্য অপূর্বর সামনে হাঁটুঘেরে বসে পরে।
অপূর্ব হতভম্ব হয়ে যায়।
সূর্য জ্বল জ্বল চোখে,হাত দুটো মুঠো করে অপূর্বর দিকে এগিয়ে দেয়।
কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো, তুই চাইলে আমায় গ্রেফতার করতে পারিস।আমি পাপ করেছি।এই পাপের শা,স্তি তো আমাকে পেতেই হবে।
অপূর্ব থম মেরে দু কদম পেছনে স্বরে যায়।বুকের ভেতর টা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
তাদের বন্ধুত্বের বাধন আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।
অপূর্ব কিছু ভেবে ভেজা কন্ঠে বললো,সময় সবকিছু বলে দেবে।
বলেই হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে।
ভোর হয়ে যায়। অপূর্ব ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরে।সবাই ঘুমিয়ে আছে। দরজা খুলে দেয় মনোরা।
নিস্তেজ শরীর নিয়ে ঘরে যায়।খাটের উপর ধপাস করে বসে পরে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। মনকে কোন ভাবে শান্ত করতে পারছে না।
ঠিক তখনি চোখ পরে আয়নার দিকে। অপূর্ব চমকে যায়।চোখ দুটো বড় বড় করে দেখতেই দেখে,কালো রঙের শাড়ি পরে কেউ চুল মুছছে।চুল গুলো এপাশ ওপাশ করে ঝাপটাচ্ছে।আয়না থেকে বারান্দা সোজাসুজি। অপূর্ব বা দিকে ঘুরতেই দেখে এলিজা।
এলিজাকে দেখা মাত্রই অপূর্বর সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
অপূর্ব পেছন থেকে গিয়েই এলিজাকে জড়িয়ে ধরে।
এলিজা আচমকা জড়িয়ে ধরাতে হকচকিয়ে ওঠে,
অপূর্ব বললো,আমার মহারানি আমাকে না জানিয়ে চলে আসছে যে,আমাকে অবাক করার জন্য?
এলিজা মৃদু হেসে বললো, কখনো কখনো হঠাৎ করে এসেই কিছু মানুষ কে অবাক করতে হয়।
অপূর্ব বললো,ম্যাডাম আপনার মধ্যে হয়তো জাদু আছে।যখনি আপনাকে দেখি পৃথিবীর সমস্ত ক্লান্তি যেন দূর হয়ে যায়।
এলিজা অপূর্বর দিকে ঘুরে মৃদু হেসে বললো,আপনাকে খুব মনে পরছিলো। কতদিন হয় আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমোয়নি। ভালো লাগছিল না তাই চলে আসলাম।
আপনাকে ছাড়াও আমার আমার একাকি লাগছিল।আজকে আপনি না আসলেও আপনাকে আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম।
এলিজা হঠাৎ, উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।কোন ভাবনায় গ্রা,স করেছে।
অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে কি ভাবছো?
এলিজা, উল্টো দিকে ফিরে ই বললো, শ্রাবন এর কথা ভাবছি । আমি রাতেই ফিরেছি। একবার শ্রাবন এর ঘরে গিয়েছিলাম। আমার সাথে কথা বলেনি। কিন্তু….
কিন্তু কি?
এলিজা বললো,শ্রাবন ওর সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে।যেখানে যা ছিল সব ব্রিফকেস করে রেখেছে।হয়তো চলে যাবে। আপনি একবার ওর সাথে কথা বলুন।
অপূর্ব এলিজার দুই স্বিনার হাত দিয়ে মৃদু হেসে বললো,এসব নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।আমি কথা বলে নেবো।আর তুমি আজ আমার জন্য রান্না করবে। কতদিন হয় তোমার হাতের রান্না খাইনি।
এলিজা ভেজা তোয়ালে টা দড়িতে রেখে বললো,এখনি রান্না বসাচ্ছি। ততক্ষণে আপনি গোসল করে আসেন সারারাত বাহিরে ছিলেন।
অপূর্ব শ্রাবনের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ভেতরে যাবে কিনা ভাবছে।
কি জবাব দেবে। ইতস্তত বোধ করতেই , দরজায় কড়া নাড়ে। শ্রাবন কাট গলায় বলল, দরজা খোলা আছে।
অপূর্ব ভেতরে যায়।৩ টা ব্রিফকেস করা। বুঝতে পেরেছে ,বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য তৈরি।
অপূর্ব গলায় কাশি দিয়ে বললো,
কি চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ?
অপূর্ব মনে মনে খুশি ও।যদি বিদেশ গিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে তবে শ্রাবনের জন্য ই ভালো।
শ্রাবন স্বাভাবিক ভাবে বললো,
হ্যা চলে যাচ্ছি।কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। তুই আসতে পারিস।
অপূর্ব কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
শ্রাবন বিদেশ যাওয়ার জন্য ভিসা করতে দিয়েছে। ,২দিন পরেই ভিসা আসবে। শ্রাবন মনস্থির করে তার আগে শেষ বারের মত একবার তিলকনগর যাবে। যদিও সে আমার কেউ নয়।তার উপর আমার কোন অধিকার নেই।সে এখন অন্যর অর্ধাঙ্গিনী। ভাবতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কষ্ট হলেও এটাই বাস্তব ।
আজকেই একবার তিলকনগর যাবো।দূর থেকে পাখিকে এক নজর দেখে আসবো। ওর সাথে কাটানো দিন গুলির কথা ভাবলে বুকের ভেতর ধুকবুকানি টা বেড়ে যায়। মনের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে।
শ্রাবন তিলকনগর এর উদ্দেশ্য বের হয়। ঠিক তখনই দেখে এলিজা-হাতে একটা মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে হয়তো মেডিকেল ই যাচ্ছে।আমি কোন প্রশ্ন করলাম না।যার যা ইচ্ছা হোক।
শ্রাবন বেড়িয়ে পরে।
গাড়ি মাঝপথে থামিয়ে হাটা শুরু করে। যতই রাস্তা এগোচ্ছে ততোই বুকের ভেতর কম্পন টা বেড়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে ।
পাখির কোথায় বিয়ে হয়েছে সেটাও অজানা।তবে মামির কাছ থেকে জেনে নেয়া যাবে। যদি একটা বার পাখি বলে,আমাকে নিয়ে যাও আমি নিয়ে আসবো।যদি কোন মিরাক্কেল হতো।
তবে যে আমার প্রিয় মানুষ টিকে ফিরে পেতাম।এসব ভাবতে ভাবতে শ্রাবন হেঁটে কিছুদূর যেতেই রাস্তায় দেখা মিলে রাশেদের সাথে। শ্রাবন ভ্রু কুঁচকে দেয়। এই সেই রাশেদ যার সাথে পাখির বিয়ে হয়েছে। ইচ্ছে করছে এখানেই পুঁতে ফেলি। শ্রাবন
রাশেদ কে উপেক্ষা করে যেতেই, রাশেদ উত্তেজনা স্বরে বলে উঠলো,
আরে শ্রাবন ভাই না! আপনি এইহানে? আপনি খুব ভালো গান করেন! আপনার গান ঐদিন স্কুলে আমি হুনছি অনেক ভালো লাগছে।( রাশেদ নিরক্ষর)
শ্রাবন অবাক হয়, রাশেদের বয়স ও একটু বেশি তার উপর নিরক্ষর ।পাখি এরকম একজনকে বিয়ে করেছে।
ভাবতেই শ্রাবন মৃদু হেসে আমতা আমতা করে বললো, ধন্যবাদ। কোথায় যাচ্ছেন ভাবি কোথায়?
রাশেদ মৃদু হেসে বললো,আমি তো বিয়া করিনাই ভাই। কারন আমি একজনরে ভালোবাইসা বিয়ে করছি।পরে বাচ্চা প্রসবের সময় মারা যায় তারপর আর দ্বিতীয় বিয়ে করি নাই।
শ্রাবন অবাক হয়ে যায়।কি বলছে রাশেদ এসব !বিয়ে তো সেদিন ই করলো।
শ্রাবন রাশেদের দুই স্বিনাতে হাত দিয়ে,কিছুটা কর্কট মেজাজে বললো, আপনার তো পাখির সাথে বিয়ে হয়েছে।সেদিন ই তো বিয়ে হয়েছিল।
রাশেদ মৃদু হেসে বললো,আরে ভাই ওটাতো একটা নাটকিয় বিয়ে ছিল।আর তারজন্য আমারে বড় জামাই অপূর্ব স্যার মোটা অঙ্কের টাকা দিছিলো।
শ্রাবন রাশেদের কাদ থেকে হাতটা সরিয়ে দু- কদম পেছনে স্বরে যায়।কি বলছে এসব।কি শুনছি আমি।তবে ওদিন পাখির বিয়েই হয়নি।
আমি পাখিকে ভুল বুঝেছি।
তবে সবাই মিলে আমার সাথে এই মিথ্যা নাটক কেন করলো।কি হয়েছিল সেদিন।
শ্রাবন অপেক্ষা না করে উল্টো দিকে দৌড়াতে থাকে।চোখ থেকে অঝরে পানি পরছে।চিন্তায় মাথাটা ফেটে যাচ্ছে। অপূর্ব কে আমায় জিজ্ঞেস করতেই হবে।কি লুকিয়েছে ওরা।
শ্রাবন দৌড়াতে দৌড়াতে গাড়ির কাছে চলে আসে।
কিছুক্ষণ এর মধ্যে ই পৌছায় চৌধুরী বাড়ি।
খুব অস্থির শ্রাবন। কি করবে না বুঝতেই পারছে না।
দ্রুত পায়ে হেঁটে অপূর্বর ঘরে যায়। অপূর্ব ডিউটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।
শ্রাবন তৎক্ষণাৎ কর্কট মেজাজে বললো,পাখি কোথায়? অপূর্ব থমকে যায়। শ্রাবন কে এড়িয়ে যেতে চাইলে আবারো প্রশ্ন করে। পাখি কোথায়??
অপূর্ব কিছু না বলে ওয়াকিটকি টা হাতে নিয়ে বের হতেই শ্রাবন বাধা হয়ে দাঁড়ায় ।
বললো,
সত্যিটা বল।কেন বিয়ের নাটক করলি? কিসের জন্য রাশেদ কে মোটা অংকের টাকা দিলি।কেন আমাকে এভাবে পোড়ালি?
অপূর্ব উত্তেজিত হয়ে হাত থেকে ওয়াকিটকি টা বিছানার উপরে ফেলে দেয়।
শ্রাবন অপূর্বর উত্তর এর অপেক্ষায় থাকতে না পেরে অপূর্বর পা ধরে বসে পরে।
ভেজা কন্ঠে বললো,বলনা ভাই। তুই তো আমার বড় ভাই।বড় হয়ে কিভাবে আমার কষ্ট সহ্য করিস। একবার সত্যটা বল।
অপূর্ব কিছুক্ষন থম মেরে থেকে কর্কট মেজাজে বললো,সত্যিটা জানতে চাস তো! সত্যিটা জানতে চাস! চল আমার সাথে।
শ্রাবন অবাক হয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে অপূর্ব। কোথায় পাখি ! শ্রাবনের ভেতরটা যে জ্বলে যাচ্ছে।
অপূর্ব শ্রাবন কে গাড়িতে বসিয়ে নিজেই ড্রাইভ করতে থাকে। শ্রাবন কোন প্রশ্ন করলো না। শুধু ভেতরে ভেতরে একটু পরপর জ্বলে উঠছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামে ঢাকা পিজি হাসপাতালের সামনে ।
শ্রাবন থমকে যায়। শরীর থেকে সমস্ত শক্তি নিমেষেই শেষ হয়ে যায়। অপূর্ব শ্রাবনের ডান হাত টা ধরে নিয়ে যায় ভেতরে।
শ্রাবনের শরীর ধিরে ধিরে অবস হয়ে যাচ্ছে।
যেখানে সব আইসিইউ। সেখানে এসে থামে।
অপূর্ব শ্রাবন কে একটা আইসিইউর রুমের সামনে নিয়ে আচরে ছেড়ে দেয়।
শ্রাবন কাপা কন্ঠে বললো, এখানে কেন নিয়ে এসেছিস ভাই।
অপূর্ব শ্রাবন কে মেজাজ দেখিয়ে বললো,পাখি কোথায় জানতে চেয়েছিস না! ঐ দেখ পাখি শুয়ে আছে। আঙুলের ইশারায় অপূর্ব দেখিয়ে দিলো।
শ্রাবন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে।ভেতরটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। আইসিইউর দরজায় থাকা ছোট গ্লাসের দিকে পরোখ করলো ।পাখি শুয়ে আছে। নাকে অক্সিজেন । শ্রাবনের কথা বলার সর আটকে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো ছিরে যাচ্ছে।
এ আমি কি দেখছি। একটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করলে দেখতে পায় এলিজা পাখির কাছে বসে আছে। তারমানে মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে এলিজা এখানেই আসছিলো।
শ্রাবন এক কমদ দু কদম করতে করতে পেছনে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিস্তেজ হয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে পরে।
কথা বলার কোন শক্তি নেই।তবুও কাপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে আমার পাখির?
অপূর্ব এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে বললো,পাখির ব্রেন টিউমার।
শ্রাবনের মাথার উপর সমুদ্র টা আচরে পরে।গোটা পৃথিবীর সমস্ত ভার শ্রাবণের শরীরে বহন করে। উৎফুল্ল মন, নিমিষেই নিঃস্ব হয়ে যায়
সকাল থেকে নামাজে বসে কাঁদছে জয়তুন। ফজরের নামাজ শেষ করে আর ওঠেনি। সন্তান না থাকায় পাখি আর এলিজাকে নিজের সন্তানের মত আগলে রেখেছে।ভালোবেসেছে।পাখি খুব ছোট থেকে ই রোগে ভুগছিল।৯ বছর বয়স থেকে হঠাৎ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতো।ভাবতো এটা হয়তো সাধারণ কোন সমস্যা হবে। ধিরে ধিরে সমস্যা টা মারাত্মক হয়।এক সময় ডাক্তার দেখালে তারা জানায় ব্রেন টিউমার।
অপারেশন করালে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি।কারন তখন রোগটা সবে মাত্র বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু টাকার অভাবে হয়নি।
জয়তুন অঝরে কাঁদছে।
রমজান ভেজা কন্ঠে বললো, কেঁদো না। দোয়া করো। আল্লাহ আমগো বাড়ি মারে ঠিক সুস্থ করবো।ওর কাছে যে এলিজা আছে।এত চিন্তা কইরো না।
শ্রাবন মেঝেতে বসে আছে। পাখির কাছে যাওয়ার শক্তি নেই।ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। নিঃস্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।পূরো হাসপাতাল নিস্তব্ধ।
অপূর্ব পাশের সিটে বসে আছে।
শ্রাবন কান্না জড়িত কন্ঠে প্রশ্ন করলো, কি হয়েছিল? বিয়ের নাটক সত্যটা লুকিয়ে রাখা,এসব কেন করেছিলিস তোরা?
অপূর্ব ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
যেদিন তুই সবার সামনে পাখিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলিস আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম।কারন তোকে আমরা চিনি জানি।তুই কতটা মহান মনের মানুষ।এলিজা খুব খুশি হয়েছিলো।একজন বিশ্বস্ত ছেলের হাতে পাখিকে তুলে দিতে পারলেই শান্তি।
সেদিন রাতে তুই থাকাকালীন ই তো মামা মামী রাজি হয়। তারপর দিন আমরা সেখান থেকে চলে আসি। সবকিছু ঠিকঠাক ই ছিলো।
অপূর্ব থেমে যায়,বলতে গিয়েও থমকে যাচ্ছে।
“এলিজা বলেছিলো ওর এনজিওর কাজের জন্য থেকে যাবে আমি রেখে আসি। ঠিক তার ১৫ দিন পর এলিজা আমাকে চিঠি পাঠায় পাখি অসুস্থ হয়ে পরেছে।আর তোকে যেন সেটা না জানাই।আমি থানা তে যাওয়ার নাম করে তিলকনগর যাই।
পাখি অজ্ঞান ছিল।আমি পুলিশ গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। পাখিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আশা হয়।ডাক্তার চেকআপ করে জানায় পাখির ব্রেন টিউমার। ধিরে ধিরে রোগটা এক থেকে অধিকে চলে গেছে। অবস্থা খুব ভালো না। যদি অপারেশন করা হয় বাঁচার সম্ভাবনা ২০ পার্সেন। তার ও কম। এলিজা রাজি হলো না।
পাখির জ্ঞান ফিরে।
পাখির জ্ঞান ফেরা মাত্র শুধু তোকেই খুজছিলো।
পাখির অবস্থা মোটামুটি ভালো ছিল।ডাক্তার বললো বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। আমরা বাড়িতে নিয়ে যাই।এলিজা প্রচন্ড ভেঙে পরেছিলো। সাথে ওর মামা মামী।
সবার ভেতরটা ভেঙে চুরে যাচ্ছিল।আমি তোকে মিথ্যা বলে তিলকনগর থেকে গিয়েছিলাম । তাদের পাশে থাকাটা দরকার ছিলো।
সেই সময় তোদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়।
পাখি খুব হতাশ ছিল।পাখি তোকে ওর জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
পাখি সারাক্ষন তোর কথাই ভাবতো।কি করিস না করিস। কেমন আছিস । সারাদিন শ্রাবন শ্রাবন বলেই মাতিয়ে থাকতো।
পাখি তোর ভালোবাসা টা বুঝতে পারতো।ও বুঝতে পারতো তুই ওর জন্য কতটা দূর্বল। একদিন পাখি বললো তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।আমরা চিন্তিত হই কি বলবে। রাতে আমরা সবাই এক হই।তখন পাখি বললো,তোমরা কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো! আমরা তখন অবাক হই।হ্যা বলি।
তখন পাখি ওর কাপা হাত টা আমাদের দিকে এগিয়ে বললো,আমাকে ছুয়ে কসম কাটো আমি যা বলবো,তোমরা তাই করবে।আমরা ইতস্তত বোধ করি।
তবুও ওর হাতে হাত রেখে ওয়াদা করি।ও যা বলবে তাই করবো।
তখন পাখি,পাখির পরিকল্পনা বলতে শুরু করলো, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি আমার বিয়ে হবে।তবে শ্রাবন নয় অন্য কারো সাথে।সত্য বিয়ে নয় নাটকিয় বিয়ে হবে। যাতে তুই পাখিকে ঘৃনা করিস।
এবং খুব দ্রুত তুই ওকে ভুলেও যেতে পারিস।
আমি ওর কথা মত, রাশেদ কে ঠিক করি। রাশেদ ছোটখাটো নাট্যমন্চ অভিনেতা।কিছু টাকা দিয়ে ওকে রাজি করাই।
এরপর,ওর পরিকল্পনা মত তোর চোখের সামনে ওর বিয়ে হয়।
তবে তোর থেকে পাখির বেশি কষ্ট হচ্ছিল। তুই সেদিন ফিরে আসার পর পাখি আবারো অজ্ঞান হয়ে যায়।আমরা আবারও হাসপাতালে নিয়ে আসি।
আর তখন থেকে পাখি এভাবেই আছে।ডাক্তার জানায়।ডিপ্রেশন পাখিকে গ্রা,স করে রেখেছে। তোর ভাবনায় ও আরো দূর্বল হয়ে গেছে।
পাখি এখন ও হয়তো সুস্থ থাকতো। যদি না তোর চিন্তা থাকতো।পাখি চায়নি ওর ক্ষুদ্রতম জীবনে তোকে জড়াতে। ডাক্তার সময় দিয়েছে ৬ মাস এর আগেও কিছু হতে পারে।অথবা তার পরে বলেই অপূর্ব থেমে যায়।
আমি কতটা বোকা।আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে ভুল বুঝেছি।কতটা নিষ্ঠুর আমি।আমার প্রিয় মানুষ নির্বাচন করায় আমি ভুল করিনি।ভুল ছিল আমার।
এসব ভাবতে ভাবতেই শ্রাবন চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ায়।
ধিরে ধিরে রুমের দিকে এগোয়। সাথে অপূর্ব ।
শান্ত স্বরে বললো,এখন কেমন আছে?
অপূর্ব শ্রাবন এর কাঁদে হাত রেখে বললো,খুব একটা ভালো নয়।তবে তুই ওর কাছে যা।হতে পারে তোর উপস্থিতি,স্পর্শ, ভালোবাসার টানে মিরাক্কেল হতেও পারে।
শ্রাবন ।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় একজন নার্স। উনি শ্রাবন কে ভেতরে যেতে দেখে বললো,
আপনি যাবেন না।ভেতরে একজন আছেন উনি বের হলে আপনি যাবেন।আমি চেকআপ করে পরে জানাচ্ছি।
এলিজা শ্রাবন কে দেখে বাহিরে বের হয়ে আসে।
অপূর্বর সাথে চোখে চোখে কিছু বললো। অপূর্ব ভরসা সূচক ইঙ্গিত করলো।
শ্রাবন ধিরে ধিরে পাখির কাছে যায়। হাতে ক্যামো,সাথে অক্সিজেন।
নিস্তেজ দেহ নিয়ে সুয়ে আছে। শ্রাবন পাখির পাশে টুলের উপর বসে।
বুকের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে।
পাখির হাতের উপর হাত রাখে। কান্না জড়িত ধির কন্ঠে বলতে শুরু করলো, পিচ্চি বেয়ান, পিচ্চি বেয়ান। একবার চোখ খুলে দেখো, তোমার শ্রাবন এসেছে। বদমাইশ শ্রাবন এসেছে। তোমার শরীরে হাত দিয়েছি,তোমাকে পিচ্চি পিচ্চি বলছি।কিছু বলবে না আমাকে।ধমকাবে না।তখন তো খুব জোড় তেজ দেখাতে আমাকে পিচ্চি বলে ডাকবে না। তুমি পিচ্চি নও। তাহলে এখন কেন চুপ করে আছো! উঠো ঝগড়া করো আমার সাথে।
শ্রাবন ফোপাতে থাকে।
হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখ মুছতে থাকে।
অপূর্ব, এলিজা বাহির থেকে দেখছে। এলিজা অপূর্বর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।
শ্রাবন কাপা কন্ঠে বলতে শুরু করে,ঐ পিচ্চি বেয়ান।আমাকে একা করে দূরে যাবে না।সহ্য করতে পারবো না । এতদিন তোমায় ছাড়া থাকতে আমার ভিষন কষ্ট হয়েছে।
এবার আর তোমাকে হারাতে চাই না। সৃষ্টিকর্তা আমার প্রানের বিনিময় তোমার প্রান টা দিয়ে যাক।
না, এরকম হলে তো আবার তুমি থেকে যাবে।আমি চলে যাবো।তখন তো তোমার তো কষ্ট হবে।
“তার চেয়ে আমার আয়ুর অর্ধেক তোমার হয়ে যাক। দুজনে মিলে একসাথে কিছুটা সময় আকাশের তারা গুনবো। একসাথে কিছুটা পথ চলবো। দিগন্ত নদীর তীরে একসাথে বসে গল্প করবো। উঠো না বেয়ান।চোখ খুলো
বলেই শ্রাবন নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের মানি মুছতে থাকে।
ঠিক তখনি পাখির দিকে তাকিয়ে দেখে পাখি চোখ মেলে তাকিয়ে আছে।
পাখি শ্রাবন কে দেখছে কিছু বলছে না।পাখির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। পাখি শ্রাবন কে ভালো ভাবে পরোখ করছে।দাড়ি ,বড় বড় চুলে একাকার হয়ে আছে।হয়তো নিজের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে।সেই সু দর্শন শ্রাবন আজ কত পাল্টে গেছে।
ভাবতেই পাখির হুহু করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না।
শ্রাবন পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে ভরসা কন্ঠে বললো, আমি চলে এসেছি, আমি সব জেনে গেছি। এখন দেখবে ধিরে ধিরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নার্স শ্রাবন কে তারা দেয়।
অনেকক্ষন হয় বেডে এসেছে। শ্রাবন চোখ মুছে উঠে আসে।পাখি শ্রাবন এর যাওয়া অপলকে দেখতে থাকে।
নার্স পাখির পাল্স পর্যবেক্ষন করলে দেখে আগের থেকে অনেক টা দ্রুত চলছে।নার্স কিছুটা অবাক হয়ে ভাবলো,
ভালোবাসার ক্ষমতা অনেক ‘অসুস্থ মানুষ টাকেও খুব সহজে সুস্থ করে তুলতে পারে।
শ্রাবন অনেকক্ষন নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।
অপূর্ব দাড়িয়ে আছে। এলিজা শ্রাবন এর কিছুটা দূরে বসে আছে।
শ্রাবন ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
আমি পাখিকে বিয়ে করতে চাই —-
জাহাঙ্গীর ভোর বেলা বেরিয়েছে। তারপর থেকে আর খবর নেই। তার হাবভাব সাধারণ নয়। আজকাল ভিষন উদাস থাকে।কোন না কোন ভাবনা তাকে গ্রা’স করে রেখেছে।তবে তা অজানা। মনোরা রান্না করছে।মনজুরা বাড়িতে নেই। সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।
এসব ভাবতে ভাবতে,জয়া মমতাজ কে উদ্দেশ্য করে বললো, আমাদের একবার যাওয়া দরকার হাসপাতাল।পাখি মাকে দেখতে। বলছিলাম না, পাখি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে না নিশ্চয়ই কোন গরমিল আছে।
মমতাজ কিছু বললো না।মুখ কুঁচকে অন্য দিকে ফিরলো।
চারদিকে যা হচ্ছে তার কোন সুত্র পেয়েও হারিয়ে ফেললাম। সেদিনের পর থেকে সূর্য কে বিশ্বাস করতে পারছি না।সিভিল পোশাকে অফিসার রাখা হয়েছে। যদিও তারা আমার ঠিক করা কনস্টেবল। সূর্য কে ২৪ ঘন্টা নজরদারি করার জন্য রাখা হয়েছে।তবে তারাও কোন তথ্য দিলো না যা থেকে সূর্য কে সন্দেহ করবো।তবে কে আছে এর পেছনে। এসব ভাবতে ভাবতে অপূর্বর বা কাঁদে হাত রাখে শ্রাবণ।সান্ত স্বরে বললো,কি ভাবছিস! কোন সমস্যা?
অপূর্ব না সূচক মাথা নাড়ে।
সূর্যের কথা কাউকে বলা যাবে না।অযথা চিন্তা করবে।
অপূর্ব মৃদু হেসে বলল,তুই কি সত্যি ই পাখিকে বিয়ে বিয়ে করতে চাস?
শ্রাবণ অমৃদু হাঁসি দিয়ে বললো, আমি পাখিকে হারাতে চাইনা।যখন ভেবেছি পাখি অন্যর হয়ে গেছে তখন শুধু ভাবতাম এমন কোন মিরাক্কেল হতো ,যাতে পাখিকে ফিরে পাই।সেই আমি পাখিকে ফিরে পেয়েছি।আর হারাতে চাইনা।
ওর ছয় মাস ক্ষুদ্র জীবনে আমি আমার পরবর্তী ৬০ বছর দেখতে পাচ্ছি।আমি ওর ছয় মাসের ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকবো। তবে প্রতি মুহূর্তে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যাতে আমার আয়ুর অর্ধেক ওর হয়ে যায়।
অপূর্ব শ্রাবণের কাঁদে হাত রেখে মৃদু হেসে বলল,তোর মতন জীবনসঙ্গী প্রতিটি মেয়ের জীবনে আসুক। এবং শেষ অবধি থেকে যাক। ভাই হিসেবে তোকে নিয়ে আমার গর্ব হয়।
রাত হয়ে যায়। এলিজা কে জোড় করে অপূর্ব বাড়ি পাঠায় । কিছুতেই যেতে চাচ্চছিলো না।
পাখির অবস্থা আগের থেকে কিছুটা ভালো।তবুও ডাক্তার কাছে যেতে দিচ্ছে না।বেস কিছুক্ষণ ডাক্তার চেকআপ করার পর অপূর্ব আর শ্রাবন কে ভেতরে ডাকে।
পাখির মুখে অক্সিজেন নেই। শ্রাবন কিছুটা সস্তি পেলো।শুয়ে আছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পাখি।
শ্রাবন টুলের উপর বসে ,পাখির ডান হাতের উপর হাত রাখে। শ্রাবন সান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো,আগের থেকে কিছুটা ভালো লাগছে?
পাখি মৃদু হেসে হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।
অপূর্ব মৃদু হেসে বলে উঠলো,ভাই তোরা প্রম কর আমি আসছি।
শ্রাবন অপূর্বর দিকে ফিরে প্রশ্ন করলো, কোথায় যাচ্ছিস?
অপূর্ব সান্ত স্বরে বলল, কিছু কাজ আছে। তুই থাক আমি আসছি।পাখির খেয়াল রাখিস।
অপূর্ব দ্রত পায়ে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বের হতেই চোখ পরে হাতের ডান দিকে কিছুটা দূরে।
অপূর্ব তৎখানিক থম মেরে যায়। ডাঃ ইব্রাহিম এর সাথে চীপস ডুপিয়ালি কথা বলছে। অপূর্ব অবাক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।
ঠিক তখনই পেছন থেকে অপূর্বর শরীরে কেউ হাত রাখে। অপূর্ব পেছন ঘুরতেই দেখে একজন নার্স।
কি হয়েছে ? গায়ে হাত দিলেন কেন?
নার্স টি অপূর্বর হাতে একটি কাগজ দিয়ে বললো,এই ঔষধ টা লাগবে। আপনাকে শ্রাবন স্যার আনতে বলেছেন। তখন বলতে ভুলে গিয়েছে।
অপূর্ব নার্সটির আপ্রোনের উপর নাম টি পরোখ করলো। নার্সটির নাম রিয়া।
অপূর্ব হাত থেকে কাগজ টি নিয়ে হ্যা সুচক মাথা নারে। নার্সটি চলে যেতেই পেছনের দিকে , চীপস ডুপিয়ালি আর ডাঃ ইব্রাহিম কে পরোখ করতেই দেখে তারা নেই। অপূর্ব এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে।ডাঃ ইব্রাহিম,চীপস ডুপিয়ালি কেউ নেই।এত কম সময় কোথায় যাবে। আর আমি যদি ভুল না করে থাকি তবে ডাঃ ইব্রাহিম এর সাথে ঐ কিলা,র এর কি সম্পর্ক কি।
আমাকে এর খোঁজ নিতেই হবে।তবে এখন না।
অপূর্ব স্থান ত্যাগ করে বাহিরে বের হয়। অপূর্ব থানাতে যাবে।সেই উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠবে ঠিক তখনি দেখে চীপস ডুপিয়ালি একটা মাইক্রো তে উঠে চলে যাচ্ছে,আর এটা সেই মাইক্রো যেটার বর্ননা অর্পা দিয়েছিলো। এই গাড়িতে করেই বর্ষা কে তুলে নেয়া হয়। অপূর্ব গাড়িতে উঠে অনুসরণ করতে থাকে।
অপূর্বর সমস্ত শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে।শীতের দিন অথচ অপূর্ব ঘামছে।
অনুসরন করতে করতে রেড সিগন্যাল পরে,ততক্ষনে গাড়িটা ট্রেনের রাস্তা অতিক্রম করে যায়। অপূর্ব ট্রেনের রাস্তার এপার। মাঝখান থেকে ট্রেন যাচ্ছে। অপূর্ব
ক্রোধে স্টেরিংএ জোড়ে এক ঘুষি মেরে বললো,এবারো আমি ব্যার্থ হলাম। তবে কতদিন ওরা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকবে।ঠিক ধরে ফেলবো।
অপূর্ব গাড়ি ইউ টার্ন নিয়ে থানাতে চলে যায়।
রাত অনেক হয়।অর্পা ঘুমোচ্ছে। মমতাজ ছেলের চিন্তায় মশগুল।একটা মেয়ের জন্য দিনরাত হাসপাতালে পরে আছে।এটা তার মোটেই ভালো ই লাগছে না। তাদের ভিসা চলে আসবে । বিদেশ ফিরতে হবে। মমতাজ ভাবতে থাকে তার ঘরে বসে।
জয়া তার ঘরের বারান্দায় বসে বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। জাহাঙ্গীর ভোর বেলা বেড়িয়েছে।এখনো খবর নেই।ফ্যাক্টরিতেও নেই। তাহলে কোথায় যাবে। জয়া এসব ভাবতে ভাবতে তৎক্ষণাৎ ঘরে উপস্থিত হয় মনোরা।
পানি চেয়েছিলো জয়া।
জয়াকে পানি দিতে দিতে শান্ত স্বরে মনোরা প্রশ্ন করলো,আফা আপনারা আগে তিলকনগর থাকতেন! তারপর শহরে আইলেন কেন! আর বড় দাদাবাবু সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকে কেন?
জয়া পানি হাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে বললো, মনোরা তুই বলতে পারিস! সব পাপ কি মোছা যায়?
মনোরা কিছুটা অবাক হল।এই কথার এমন প্রশ্ন মনোরা কে ভাবালেও মনোরা উপেক্ষা করে বললো, কিছু কিছু পাপ আছে যা কোনদিন মোচন হয়না। নিজের মধ্যে পুশে রাখতে হয়। নিজের পাপে নিজেই পুড়ে যায়।
জয়া আড় চোখে মনোরা কে দেখলো। সান্ত স্বরে বলল, তুই যা ঘুমিয়ে পর।আমি পরে দরকার পরলে ডেকে নেবো।
শ্রাবন পাখির কাছে। পাখি খুব কষ্টে উঠে বসলো। শ্রাবন বেডের উপর বসে পাখিকে দেখছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন কয়েক যুগ পর দেখছে।
পাখি কাপা কন্ঠে বললো, অসুস্থ হওয়ার পর নিজের যত্ন নিতে পারেনি।সুন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। তাও ওভাবে কি দেখছেন?
শ্রাবন মৃদু হেসে বললো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।হয়তো ভালোবাসা টা শুরু হয় ভালোলাগা থেকে। কিন্তু যখন এটা ধিরে ধিরে ভালোবাসাতে রূপ নেয় তখন,তার রুপ,যৌবন শেষ হয়ে গেলেও ভালোবাসা শেষ হয়না।যখনি তুমি কারো মায়ায় পরবে তখন তার এলোমেলো চুল,ফ্যাকাসে মুখ, অসুস্থ শরীর,চোখের নিচের কালো দাগ সব কিছুতে তার জন্য কষ্ট হবে।মায়াটা আরো বাড়বে। আর যখন তুমি কারো রুপ ,গুনের প্রেমে পরবে , তারপর যখন সে অক্ষম হয়ে যাবে তখনই মুগ্ধতা কেটে যাবে।তখন আর তাকে চাইবে না।ছুরে ফেলে দিতে চাইবে।
আর আমার তোমার প্রতি সেই মায়া কাজ করে,যে মায়া কোনদিন ও ফুরাবে না।
আমি তোমার শরীর নয়, মনকে স্পর্শ করে সারাজীবন থাকতে চাই।
পাখি শ্রাবন এর কথা শুনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষ কিভাবে এতটা ভালো বাসতে পারে।
পাখি মৃদু হেসে বললো, আপনাকে এলোমেলো চুল,ঘন দাড়িতে খুব সুন্দর লাগে।
শ্রাবন সব চুল গুলো এলোমেলো করে বললো,দেখোতো এখন জোকারের মত লাগছে না?
পাখি কিছুটা আওয়াজ করে হেসে দেয়।
শ্রাবন জ্বল জ্বল চোখে পাখিকে পরোখ করে বললো, তোমার এই হাসি দেখার জন্য হাজার বার জোকার হতে পারবো।
কিছুক্ষণ পর হাজির হয় অপূর্ব। কিছু খাবার আর ঔষধ নিয়ে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় একজন ডাক্তার।
শ্রাবন উঠে সরে দাড়ায়।
ডাক্তার আদুরে গলায় পাখিকে বললো,এখন কেমন আছো মা!
পেছন থেকে অপূর্ব ঔষধ টা ডাক্তার এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,এটা আনতে বলেছিলো।দেখেনিন ঠিক আছে কিনা।
ডাক্তার টি ঔষধ টা হাত থেকে নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে বললো,এটা তো আমরা কেউ আনতে বলেনি।
অপূর্ব বললো, শ্রাবন বলেছে।
শ্রাবন অবাক হয়ে বললো,আরে ইয়ার আমি কখন বললাম।
অপূর্ব থমকে যায়।কি বলছে এরা।
অপূর্ব আতংক নিয়ে প্রশ্ন করলো, ডক্টর আপনাদের হাসপাতালে রিয়া নামে কোন নার্স আছে?
ডাক্তার অবাক বললেন, ছিলো তবে ও এখন নেই।
অপূর্ব অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, নার্স রিয়াই আমাকে এই ঔষধ টা আনতে বলেছে।
ডাক্তার থম মেরে বললো,এটা কি করে সম্ভব! নার্স রিয়া তো মারা গেছে।আর ওর শেষ চিকিৎসা আমি নিজের হাতে করেছি।
এলিজা পর্ব ৪০+৪১+৪২
অপূর্ব দু কদম পেছনে সরে যায়।
তবে কে ছিলো! যে আমাকে বোকা বানিয়েছে।
তৎক্ষণাৎ ডাক্তার কিছু একটা ভেবে বললো, মি.অপূর্ব দুদিন আগে রিয়ার আপ্রোন টা স্টোর রুম থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। কেউ নিয়ে গিয়েছিল তবে আমরা মাথা ঘামায়নি। হয়তো সেই আপনাকে বোকা বানিয়েছে।
অপূর্ব থমকে যায় কে ছিলো রিয়ার ছদ্মবে,শে? এইখানে কি করছিলো?