এলিজা পর্ব ৪+৫

এলিজা পর্ব ৪+৫
Dayna

ঢাকা—চৌধুরী বাড়ি
নতুন একটি দিনের আগমন নিয়ে আসলো প্রানপন্তর সকাল। চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। কাকের আশরে ভরা শহর।
জাহাঙ্গীর বৈঠকখানায় বসে পেপার পড়ছে। তৎক্ষণাৎ ডাকলো জয়াকে। বললো,জয়া কোথায় গেলে।সকাল হলেই তোমার কাজের শেষ থাকে না ‌। আমার দিকেও তো একটু দেখবে নাকি?

রান্না ঘর থেকে জবাব আসলো জয়ার।বললো,কাজ ফেলে কি সারাদিন তোমার কাছে বসে থাকবো।
জাহাঙ্গীর ভ্রু কুঁচকে বললো,মনোরা কে তো বলতে পারো কাজ করতে। ওরা থাকতেও তোমার করতে হয়।
জয়া : বাড়িতে কাজের মানুষ থাকলেও তার কাজে সাহায্য করতে হয় এটা আমাদের কোরআন বলেছে।
জানো না বুঝি।
বলেই জাহাঙ্গীর কে চা দিতে এসে,আতংক স্বরে প্রশ্ন করলো
জয়া: হ্যাগো অপূর্বর খবর কি আমার ভিষন চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। চারদিকে যা হচ্ছে।ফিরবে কবে আমার খোকা ?
জাহাঙ্গীর চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,এত চিন্তার কোন দরকার নেই। শুনেছি দু এক দিনের মধ্যে ই চলে আসবে ।
জয়া ভারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,তুমি তো সবটা জানো জেনেও এত নিশ্চিত এ বসে আছো।
জাহাঙ্গীর জয়ার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,জয়া, অপূর্ব আমার ও ছেলে আমিও ওকে ভালবাসি ।চিন্তা নেই ও ঠিক ফিরে আসবে আর ওতো একা নয় সাথে অনেক জন।
দরজায় কেউ করা নাড়ার আওয়াজ। সকাল ১০ টা নাগাদ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মনোরা :আমি দেখছি কে!
দরজা খুলতেই দেখে চাঁদনি।জয়ার একমাত্র ভাইয়ের মেয়ে।
চাঁদনী : কেমন আছো মনোরা বুবু
মনোরা :- এইতো ভালো তোমার কি অবস্থা,?
চাঁদনী:এইতো ভালো ই।
মনোরা : ভেতরে যাও।

–চাদনী ভেতরে এসেই জয়াকে দেখে মৃদু হাসলো। চাঁদনী উত্তেজিত কন্ঠে বললো,আসসালামু আলাইকুম ফুপি – বলেই পায় হাত দিতে গেলেই , জয়া ধরে আলিঙ্গন করে নেয়।‌
জয়া : কতদিন পর এসছিস , এতদিনে ফুপির কথা মনে পড়লো?
চাঁদনী : কি করবো , আমার পরিক্ষা ছিল।
আংকেল আপনার কি অবস্থা।
জাহাঙ্গীর : হ্যা মা খুবই ভালো।
ওকে ভেতরে নিয়ে যাও। ভালো মন্দ আপ্যায়ন করো।আমি ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছি।বলেই জাহাঙ্গীর বেড়িয়ে যায়।
চাঁদনির ব্যাগটা মনোরা উপরের রুমে দিয়ে আসে।
চাঁদনী,দেখতে অনেক রূপবতী। সবার খুব আদুরে।
জয়া রান্না ঘরে গেলে চাঁদনিও যায়।

জয়া : তা তোর মায়ের খবর কি?
চাঁদনী হেসে বললো,সে আছে বিন্দাস।
চাঁদনী: ফুপি আজকে আমি রান্না করি।
জয়া : আমি থাকতে তুই কেন করবি ।।,
চাঁদনীর চোখ বার বার অপূর্ব কে খুঁজছে। এদিক ওদিক বার বার দেখছে। কোথায় যাবে অপূর্ব ভাবতেই,জয়ার পেছন দিকে সরে যায়।মনোরা নিচে বসে মাছ কাটলে চাঁদনী ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো, বুবু , অপূর্ব কোথায়?
মনোরা :দাদাবাবু তো, দূরে গেছেন বহুদিন। পুলিশ ক্যাম্পিং এ।শুনছি ২,১ দিনের মধ্যে ই চলে আসবো ।
চাঁদনী মনে মনে আনন্দের হাসি হাসলো।
তিলকনগর————-

শায়ান তালুকদার’ দুপুর থেকে নিমতলা পথের বাকে দাঁড়িয়ে আছে।
কাটফাটা রোদ তার গায় লাগছে না।
অপেক্ষা করছে কখন পাখি আসবে ,
অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটলো।দূর থেকে দেখছে স্কুলের ছেলে মেয়েরা আসছে , তাদের মাঝে হয়তো পাখিও থাকবে।
কিছুদূর এলেই দেখা মিললো পাখির ।
শায়ান : পাখি দাড়াও ।
পাখি ভালো করেই জানে কেন ডাকছে ।
পাখি না শোনার ভান ধরে হাটা শুরু করে।
শায়ান : দাড়াতে বলছি না‌।

পাখি দুই কমড়ে হাত দিয়ে,শায়ানের দিকে আড় চোখে পরোক্ষ করো বললো,আপনাকে বলছি না আমার আপুকে বিরক্ত করবেন না।আমি আপনার বলা কোন কথাই আপুকে বলতে পারবো না।বলেই মুখ কুঁচকে দেয়।
শায়ান উৎফুল্ল হয়ে বললো,বাবা মেয়ের কি তেজ। তোমার আপুর পেছন ঘুরবো না। শুধু এই চিরকুট টা নিয়ে তোমার আপুকে দিয়ে দিবে কেমন?
পাখি : না আমি দেবো না।
শায়ান : লক্ষী আপু না, এটা দিবে কিন্তু অবশ্যই। বলেই পাখির বইয়ের ফাকে দিয়ে দেয় চিরকুট টা।
পাখি হাটতে শুরু করলো আপন মনে। কিছুদূর যেতেই পেছন ফিরে একবার শায়ান কে পরোখ করলো। শায়ান বিড়বিড় করে বললো,চিঠি টা জায়গা মত পৌছালে হয়।
দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো।
এলিজা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পাখির উদ্দেশ্য বললো,পাখি পড়তে বস। সামনে ই না তোর পরিক্ষা।
পাখি : তুমি পড়িয়ে দাও
এলিজা : হুম পড়াবো। তুই বোস , মাগরিব এর আজান দিয়েছে আমি নামাজ পরে আসি। নয় মামি যে বকাবকি করবে।

এলিজা চলে যেতেই পেছন থেকে পাখি ওরনাটা টেনে ধরে।
এলিজা থমকে দাঁড়ায়। পেছন ঘুরে মৃদু হেসে বললো,কি হলো আবার?
পাখি আদুরে কন্ঠে প্রশ্ন করলো, আপু , তুমি না আমাকে ঢাকা নিয়ে যাবে।চিড়িখানায় বাঘ দেখাবে।
এলিজা জ্বল জ্বল চোখে, পাখি কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে, বললো,খুব শীঘ্রই নিয়ে যাবো।অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় জানিস তো।

পাখি : সত্যি নিবে?
এলিজা : হুম সত্যি নাও এবার পড়তে বস।
এলিজা ক্লান্তি চোখে কিছুক্ষণ পাখিকে পরোখ করলো। এরপর জয়তুন এবং এলিজা দুজনে উযু করতে চলে যায়।
এলিজা, জয়তুন দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করে নেয়।
জয়তুন নামাজ বসে বসে তসবিহ পড়ছে।পাশ থেকে এলিজা নতসত হয়ে বললো,
মামি বিকেলে নিরু ভাবি ডেকে ছিলো। যাওয়া হয়নি। উনি সারাদিন ই মন খারাপ করে থাকে। এখন যাবো?
জয়তুন মৃদু হেসে বললো,ওমা এভাবে বলার কী আছে।যা,দু’জনে একটু গল্প কর।
আমি ততক্ষণে তোর মামার জন্য কিছু রান্না করি।
এলিজা দৌড়ে পাশের ঘরে চলে যায়।

এলিজা ঘরে নিরাকে না পেয়ে বললো,ছোট চাচী, নিরা ভাবি কোথায়?
আনোয়ারা : নিরা পিছনে নদীর তীরের দিকে গেছে। এলিজা দ্রুত পায়ে চলে যায় নদীর পারে।
ছোট করে শ্মান করা সিড়ি বেয়ে গেছে নদীতে। নিরা শেষ শ্মানে বসে, দুটো পায়ের অর্ধেক পানিতে ভিজিয়ে বসে আছে। পরনে কাপড় টা হাটুর নিচ অব্দি।চোখ মুখ শুকিয়ে থাকে সারাক্ষণ।কোন এক অজানা ভাবনায় মশগুল থাকে।
চারদিকে জোসনার আলো ।
সন্ধা হওয়াতে গরম একটু কমেছে।
এলিজা : নিরা ভাবি ,আপনি এখানে।
নিরা এলিজার কন্ঠ পেয়ে হকচকিয়ে উঠে। হাতের উল্টো দিক চোখের পানি মুছে বললো,তুই! আয় বোস।
নিরা কাপা কন্ঠে বললো,তোর মামি আবার তোরে বকবো না?
এলিজা : না মামিকে বলেই আসছি।

নম্র গলায় এলিজা, প্রশ্ন করলো, ভাবি তুমি সবসময় কেন মন খারাপ করে থাকো কেন? লুকিয়ে লুকিয়ে কাদো, মুখে কখনো হাসি দেখি না, তার কারন কি?
নিরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ভুল করেছিলাম আমি সেদিন ভুল করেছিলাম। শান্ত চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে,ঘৃনিত কন্ঠে বললো,

শুনতে চাস !কেন সারাক্ষন হতাশায় থাকি! মুখে কখনো হাসি ফুটে না!তবে শোন
নিরা বলতে শুরু করল,আজকে থেকে ৫ বছর আগে,তোর হাশেম ভাইয়ার সাথে, আমার ৩ বছরের সম্পর্ক ছিল। মন উজার করে ভালোবাসতো আমায়। আমার ব্যাথায়, সে ব্যাথা পেতো, আমার কান্নায় সে কান্না করতো, একবার রান্না করতে গিয়ে হাত কেটে যায় আমার, সেই কথা শুনে তোর হাশেম ভাই নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে।
এরকম চলতে থাকে আমাদের প্রেম কাহিনী।আমার ভাই, যে বাবার মৃত্যুর পর সেই ছিল আমার বাবা, কথায় আছে বড় ভাই বাবার সমান। হঠাৎ একদিন সে জেনে যায় সবকিছু। অনেক দিন তোর হাশেম ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ থাকলে সে পাগল হয়ে যায়।ভাইয়া আমায় কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন আমি বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম। তখন হাশেম,তার মা বাবার কাছে সবকিছু বললে তারা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়।দেরি না করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে ।

আমার দাদাকে কথায় গলিয়ে রাজি করিয়ে নিলে, সেও রাজি হয়। কিছু দিন পর,ধুমধাম করে বিয়ে হয়। এই নদী থেকে ই শ্বশুর বাড়িতে আমার প্রথম যাত্রা শুরু হয়। তোর হাশেম ভাই আমাকে পেয়ে সেদিন যেন ঘরে চাঁদ পেয়েছিল।কিন্তু এই শুখ বেশি দিন স্থায়ী হইলো না।
বলেই আকাশের তাকিয়ে-ভারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পরে।
এলিজা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,তারপর কি হয়েছিল? বলো না ভাবি।
নিরা হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছে বললো,বেইমান ছিল হাশেম বেইমান।
এলিজা ভ্রু কুঁচকে বললো, বেইমানির কি করেছিল?

নিরা বললো, বিয়ের ঠিক এক মাস পরে তোর হাশেম ভাই নিখোজ হয়।তার হদিস কোথাও পাওয়া যায়নি। আমি পাগলের মত চারদিকে ছুটতে ছিলাম।কয়দিন পর হাশেমের চিঠি এলো। তার চিঠি থেকে জানা যায়,সে তার সাবেক প্রেমিকা রেখা কে বিয়ে করেছে। সে নাকি তাকে ভুলতে পারছিলো না‌। আমাদের বিয়ে হওয়ার পর ও সে ফিরে আসলে তাকে আবার গ্রহণ করে।

বলেই অঝরে কান্না শুরু করে নিরা।
এলিজাও ফোপাতে শুরু করে।
নিরা ভেজা কন্ঠে বললো,তারপর আমি আত্মহ’ত্যার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু মনে পরলো ভাইয়ের কথা। আমি চলে গেলে তার যে আপন বলতে আর কেউ থাকবে না।
নিজের মন কে শক্ত করলাম।ভাইকে চিঠি লিখলাম।আমাকে নিতে এসো।
, ৩ দিন পর ভাইয়ের উত্তর আসে। ভাই আমায় নিতে আসছে ।
সময় টা ছিল কালবৈশাখীর।১৯৯২ সাল।
অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম ভাই নিতে আসছে বলে। কিন্তু সেদিন থেকে ৭ দিন পর্যন্ত ভাইয়ের কোন খবর নেই।

নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়েছিল ‌।
ভাই ও শেষ অবধি বেইমানি করলো।
নিরা থমকে যায়।কথার বাকরুদ্ধ হারিয়ে ফেলছে।
শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললো, কিন্তু,আমার ধারনা ভুল ছিল। কিছুদিন পর তোর মামা রমজান, চাচার কাছে জানতে পারি‌ ।সেদিন ভাই সত্যিই আমায় নিতে আসতে ছিলো।একটা টলার করে আসতে ছিলো। তখন নাকি ,হঠাৎ ই শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়।আর এই কালবৈশাখীর ঝড় কেড়ে নিয়েছিল আমার ভাইকে।
নিঃস্ব করে দিয়েছিলো আমায়। গোটা দুনিয়া টা অন্ধকার হয়ে গেছিলো‌।
আমার ভাই আমার জন্য তার জীবন কোরবান করেছে ।
বলেই হু হু করে কান্না শুরু করে। , নিরার কান্নায় যেন প্রকৃতি ও থমকে যাচ্ছে।
এলিজা নিশ্চুপ চাহনি তে নিরাকে পরোখ করছে।
নিরা হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,জানিস এলিজা ,আমার ভাইয়ের অপেক্ষায় আমার ও আজ গাইতে ইচ্ছে করে । পথ চেয়ে বসে থাকতে থাকতে ভেসে আসা মাঝি কে দর্পন করে জোড় গলায় গাইতে ইচ্ছা করে,

—- তোরা কে যাস রে গাটি গাঙ বাইয়া —- আমার ভাই ধনরে বইলো নাইউর নিতে কইয়া — তোরা কে যাস কে যাস –বছর খানি ঘুইরা গেলো গেলো রে ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, আ পাইলাম না –
কইলজা আমার পুইড়া গেলো গেলো রে ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না। —
নিরার কান্না শুরু হয়। থমকে যায় চারোপাশ। নিস্তব্ধ আকাশ।বাতাশে বেদনা।
এলিজা ওড়না দিয়ে চোখ মুছে দেয় নিরার। নিরা এলিজার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বললো,মানুষ চিনা বড় দায়, মানুষ হলো মুখোশোর আড়ালের নেয়।
যদি কোনদিন বিয়া করছ আগে তারে সঠিক ভাবে চিনবি, মনে রাখিস মিষ্টি কথার আড়ালে লুকিয়ে থাকে বিষাক্ত ছোবল।

এলিজা দৃষ্টি সরিয়ে বললো,কাউকে কষ্ট দিয়ে,ঠকিয়ে কেউ বেশিদিন ভালো থাকতে পারে না। সৃষ্টিকর্তা এর ঠিক বিচার করবো।
হঠাৎ পেছন থেকে এলিজাকে ডাকতে শুরু করে জয়তুন। জয়তুন বললো,তুই কখন ঘর থেকে বের হয়েছিস। ঘরে চল তোর মামা আসছে। নিরা তুমিও আমাদের ঘরে আসো।আলাপ করো।
বলেই চলে যান জয়তুন।
রুশরাজ্যে ———–

ডিসি সাহেব সহ সবাই রিসোর্ট এ সি,রিয়াল কিলা,র কে আলোচনা করছে। তৎক্ষণাৎ ডিসি সাহেব বললো,
তোমরা যে লা,শ টা পেয়েছো সেটা কি করেছো?
অপূর্ব : স্যার ওটা আমরা ফরেনসিক ক্লাবে পাঠিয়ে দিয়েছি।
ডিসি সাহেব : Good job- তা কোন তথ্য পেয়েছ?
অপূর্ব : না স্যার এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।তবে খুব শীঘ্রই এই কিলা,র কে ধরে ফেলবো।
পরদিন সকাল বেলা—-
অপূর্ব এক কোনেতে বসে বসে নুপুরটি দেখছে।
সাদিক অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,কি ভাই আজ সন্ধ্যায় তো আমাদের ঢাকা ফিরে যেতে হবে । আর এই নূপুর টি দেখে আর কি হবে।

অপূর্ব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,মায়া মায়া ।আমি ওর মায়ায় পরে গেছি।
সাদিক : তুই কোথায় আর ও কোথায় কতটা ভেদাভেদ।কতটা দূরত্ব।
অপূর্ব : ভালোবাসা মানে না দূরত্ব।
সাদিক :তুই গেছিস ভাই।
অপূর্ব : আচ্ছা চল আজ একবার তিলকনগর যাই।
সাদিক বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বললো ,আমি যাচ্ছি না কোথাও।আমি আর পানি খেতে পারব না।
অপূর্ব : আরে তোর পানি খেতে হবে না। এলিজা আমার জন্য নিমতলা অপেক্ষা করবে।
সাদিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

মানে কি বলছিস এসব ? স্বপ্ন দেখছিস না তো।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,
গর্ধুভ তোর কি আমাকে কাচা খেলোয়াড় মনে হয়।
সেদিন যখন এলিজার বোনের জন্য আমার ঠিকানা দিয়ে আসছিলাম।
সেই পৃষ্ঠার অপর প্রান্তে লিখে দিয়েছিলাম।
সাদিক :কি লিখে দিয়েছিলিস?
অপূর্ব নুপূরটির দিকে তাকিয়ে উপর হয়ে সুয়ে বললো, লিখেছিলাম –
“রাতের আঁধারের রানি ”

সেদিন জঙ্গলের চারদিকে অন্ধকার থাকলেও তোমার রুপের ঝলকানিতে, চারদিক আলোকিত হয়ে গিয়েছিল।
আমি জানি না তুমি সেই কিনা তবে , আমার মন কখনো ভুল বলে না।
বেশি কিছু লিখতে পারলাম না।তবে প্রথম দেখাতে কারো মায়ায় পরাটা হয়তো তোমার কাছে অবাক করার মত।
আগামীকাল আমরা চলে যাচ্ছি — যদি একটা বার আমার কথা তোমার স্মরণ হয় , যদি এতটুকু আমার অনুভূতি বুঝতে পারো তবেই এসো।তোমার জন্য বিকেলে নিমতলা অপেক্ষায় থাকবো।
সাদিক :ভাই এখানে নিমতলা আছে তুই জানলি কিভাবে আরে চিঠি কখন লিখেছিস?
অপূর্ব : চিঠি আমি আগেই লিখেছিলাম । জায়গাটার নাম গতকাল যাওয়ার সময় পরখ করি, । যখন ওর মামাকে কাগজটি দেই ঠিকানা লিখে ,তখন,নিমতলার কথাটিও লিখে দেই। আমার ঠিকানা ছিল সঠিক তবে উনি নিরক্ষর সেটা আমি ওনাকে দেখেই বুঝেছিলাম।

আর ওটা নিয়ে এলিজার হাতে দিবে তাও বুঝতে পেরেছি।
সাদিক : তুইতো রোমিও হয়ে গেছিস আর এত বুদ্ধি।
অপূর্ব : চল নিমতলা যাই ।
সাদিক : ঐ মেয়ে কোনদিন আসবে না।
অপূর্ব : দেখাযাক কি হয়।
বিকেল ঠিক ৪ টা নাগাদ –
নিমতলা অপূর্ব ও সাদিক অপেক্ষা করছে।
সোনালী রৌদ্রর।নিলাকাশ মেঘ। দমকা হাওয়া বইছে।মাটির রাস্তার ধুলিকনা গুলো বাতাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।প্রবল মূলক বাতাসে ,গাছ গুলো নেতিয়ে পড়ছে।
অপূর্ব সাদিক বেশ অনেকক্ষন দাড়িয়ে আছে নিমতলা পথের বাঁকে। কিন্তু কারো কোন খবর নেই।
সাদিক :ঐ মেয়ে আসবে না।
। অপূর্ব : আসবে আসবে।

অপেক্ষা করতে করতে অপেক্ষার প্রহর কাটলো।
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে কেউ আসছে। সাথে ১৩-১৪ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে। বুঝতে আর বাকি রইলো না।
এলিজা আসছে।
অপূর্ব মহাখুশি । এলিজা কে দেখতে জান্নাতি হুরের মত। খায়েল করা চোখ। চিকচিক করা দেহখানী। পরনে নিল রঙের থ্রিপিস। এলিজা অপূর্বর কাছাকাছি আসতেই ,শায়ান তালুকদার’ দৌড়ে এসেই দাড়ায় এলিজার সামনে।
এলিজা থমকে যায়। অপূর্ব সাদিক দুজন দুজনার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। অপূর্ব হতবাক হয়ে যায়।
শায়ান অস্থির ভঙ্গিতে বললো,আমি জানতাম তুমি আসবে। তুমি জানো তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি।, গত ৪ বছর ধরে আমি তোমাকে ভালোবেসে তোমার পিছন পিছন পাগলের মত ঘুরেছি। , ভালোবাসা তো কোন অপরাধ নয়।

এলিজা চুপচাপ শুনছে।
শায়ান পাখির মাথায় হাত দিয়ে বললো, এই বুড়ি তোমার জন্য চকলেট, চিরকুট টা তোমার বোনকে দেয়ার জন্য।
পাখির চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে যায়।
সাদিক অপূর্ব কে উদ্দেশ্য করে বললো,কি ভাই তোমার স্বপ্নের রানি তো দেখছি…..
অপূর্ব ক্রোধের ভঙ্গিতে গাছের সাথে এক ঘুষি। তৎক্ষণাৎ চোখে রক্ত উঠে যায়।
এলিজা উল্টো দিকে মুখ ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।
শায়ান আমতা আমতা করে বলল,আমি কাল চলে যাবো শহরে।
৩ মাস পরে আসবো। তখন তোমার মামার কাছে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেবো।
অপূর্ব বিড়বিড় করে বললো,ইচ্ছা করছে ওকে এখানে ই পুতে ফেলি।
এলিজা কিছু বললো না। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে শায়ানের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,বাড়ি যেতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে

শায়ান : হ্যাঁ অবশ্যই চলো এগিয়ে দিয়ে আসছি ।
এলিজা : না দরকার নেই।
শায়ান : দরকার নেই মানে কি ,একা একা তোমার মত স্বর্গীয় পরীর পথ চলা ঠিক নয়।
এলিজা না চাইতেও বাধ্য হয়ে শায়ানের সাথে চলে যায়।
অপূর্ব চেয়ে চেয়ে দেখলো। এলিজার যাওয়ার পানে দেখলো।
কর্কট মেজাজে বললো,এখানে কোন গড়মিল হয়েছে ।
সাদিক : গড়মিল মানে ?
অপূর্ব : হ্যাঁ গড়মিল। যদি এলিজা একবার পেছন ফিরে তাকায় তাহলে ভেবে নেবো আমার ধারনাই সঠিক।
সাদিক : তাকাবে না, এই ছেলেই ওর নাগড়, ।
অপূর্ব : সাদিক মুখ সামলে।

হাঁটতে হাঁটতে শায়ান, এলিজা অনেক দূর চলে যায়। শায়ান ওর মতো করে বক বক করেই যাচ্ছে ‌‌।
এলিজার সেদিকে কোন ধ্যান ই নেই।
অপূর্ব সামনের দিকে এগিয়ে বারবার বলতে লাগলো,তাকা তাকা। একবার তাকাও তাহলে ই বুঝবো…..
হঠাৎ এলিজা-পেছন ঘুরে দেখলো।
অপূর্ব উঠেই এক লাফ,, তাকিয়েছে।
সাদিক অপূর্ব কে পরোখ করে বললো,এ গেছে মাতোয়ারা হয়ে।
অপূর্ব : দেখেছিস ও তাকিয়েছে ।
সাদিক : তো এবার কি করবি।
অপূর্ব : যা করার তাই , চল এখন ফিরে যাই।
সাদিক জানি না এ ছেলের মাথায় কি ঘুরছে।-(বললো মনে মনে)
ক্যাম্পে সন্ধ্যা হতেই জাহাজ আসে।
সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে জাহাজে চলে যায়।
সাদিক : – চল বসে আছিস কেন।

অপূর্ব ভরাকান্ত মনে বলে উঠলো ,,রুশরাজ্যে, তিলকনগর খুব মনে পরবে।
সাদিক : তার চেয়ে বল এলিজা কে মনে পরবে।
অপূর্ব সাদিকের কথা শুনে আওয়াজ করে হেসে উঠলো।
সন্ধা হয়ে যায়। জাহাজ ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। , অপূর্ব অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুশ রাজ্যের দিকে। নুপুরটি বের করে দেখছে। নুপুরটির দিকে তাকিয়ে বলল,, আপনার জন্য। আবার আসবো।…
তিলকনগর————-

এলিজা রাগান্বিত হয়ে পাখিকে বললো,এই বদমাইশ, শায়ান তালুকদার’নাকি চিঠি দিয়েছে সেটা কোথায়, ?
পাখি বইয়ের দিকে দেখিয়ে দেয়। এলিজা
বইটা ঝট করে খুলে দেখলো চিরকুট টা।
সেখানে লেখা ছিল,।
() যদি তুমি আমাকে এতটুকু ভালোবেসে থাকো। তবে আজ বিকেলে নিমতলা এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। কারন আমি আগামীকাল ঢাকাতে চলে যাবো।
এলিজা,কপালে হাত দিয়ে বললো, হায়রে এটা আমি কি করলাম।
আমি তো ওনার চিঠি পরেই ওখানে গিয়েছিলাম।
পাখি- কার চিঠি?

এলিজা পাখির দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, তুমি এটা আমাকে দাওনি কেন?
পাখি :মনে ছিল না আপু।
এলিজা: মনে ছিল না বলে যেটা হয়েছে। জানি না কি হবে।
পাখি :আপু শায়ান ভাইয়া কিন্তু অনেক সুন্দর।
এলিজা: ধাত কি যে বলিস।বলেই শায়ানের চিঠিটা এলিজা ছিড়ে ফেলে।
ঢাকা চৌধুরী বাড়ি —
দরজায় করা নাড়ছে।
মনে হয় খোকা চলে এসেছে।

জয়া দরজা খুলতেই দেখে অপূর্ব। অপূর্ব কে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দেয় জয়া।কাপা কন্ঠে বললো,আমি তোর চিন্তায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম খোকা।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,এত চিন্তা করার দরকার কি মা। তোমার খোকা এখনো কি ছোট আছে!!ভেতরে চলো আর তোমার হাতে রান্না খাবো। আজ কতদিন ধরে তোমার হাতের খাবার খাইনা। খুব খিদে পেয়েছে।পরে সব গল্প করবো।
জাহাঙ্গীর সিড়ি থেকে নামতে নামতে শক্ত গলায় বললো,কে এসেছে আমার বীর সাহসী ছেলে?
বাবা বলেই জড়িয়ে ধরে অপূর্ব ‌।
অপূর্ব নিজের ঘরে যায়। চেয়ারের উপর ক্লান্তি শরীর নিয়ে বসে পড়লো। অপূর্বর চোখ হঠাৎ কেউ চেপে ধরে।
অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে বললো,কে ?

কোন সাড়া নেই। অপূর্ব ,হাত টা ধরেই সামনে আনতেই বললো আমাদের চাঁদনি আপা তাইতো!??
চাদনি অমৃদু হাঁসি দিয়ে বলল,কি করে বুঝলি?
অপূর্ব : আমি একজন পুলিশ আর পুলিশ কে ফাঁকি দেয়া এত সহজ নয়। অপূর্ব জিনিস পত্র ব্যাগ থেকে বের করতে করতে বললো ,খুব টায়ার্ড কাল কথা হবে।
চাঁদনী :আরে খাবার টা তো খাবি নিচে চল।তোর পছন্দের সমস্যা খাবার রান্না করা হয়েছে।টেনে অপূর্ব কে নিচে নিয়ে আসে। সবাই একসঙ্গে খাবার খাচ্ছে

চাদনি অপূর্ব কে মায়াবি চাহনিতে পরোক্ষ করছে। হাত ভর্তি পশম, নেশাযুক্ত লাল চোখ।জোড় ভ্রু।বা ভ্রুর উপরে ছোট একটা তিল।চিকচিক করা গায়ের রং। যেকোনো মেয়ে অপূর্বর সৌন্দর্যর প্রেমে পরবে।
বাড়ির সবাই খুব আজ আনন্দিত। অনেক দিন পর অপূর্ব কে দেখে তাদের মোহতা কাটছে না।
রাত ১২ কা নাগাদ । অপূর্ব ঘুমোয়নি। ঘরের ভেতর এলিজার নুপুরটি নিয়ে পায়চারি করছে।
তৎকালীন অপূর্ব বুঝতে পারলো বাড়ির গেট খোলার আওয়াজ।
এত রাতে কে ? মনে মনে ভাবলো, কোন চোর নয়তো।চোর ই বা কি করে হবে। দারোয়ান আছে। অপূর্ব টর্চ নিয়ে বেরিয়ে যায়। চারদিকে নিস্তব্ধ।দূরে দু একটা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে ।গেটের কাছে যেতেই দেখে সূর্য।
অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে বললো,একি সূর্য এত রাতে তুই এখানে? ব্যাপার কি ল্যান্থলাইনে ফোন দিতে পারতি। কোন দরকার পরলে।

সূর্য আতংকিত স্বরে বললো— রায়হান কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অপূর্ব আহত দৃষ্টিতে বললো,কিহ কি বলিস! রায়হান তো সকালে বাসার দিকেই গিয়েছিল !
সূর্য :- হ্যা কিন্তু ও বাড়িতে ফিরেনি।- কোন বন্ধু বান্ধব এর বাসায় ও নেই।
বাকি ছিল তুই তার তোর কাছে আসলাম

এলিজা পর্ব ২+৩

কি বলিস কোথায় যাবে রায়হান –
কি হলো ওর—?

এলিজা পর্ব ৬+৭