এলিজা পর্ব ৫৩+৫৪+৫৫
Dayna
জমজমাট বিয়ে বাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরব হয়ে যায়। সমস্ত নেমন্তন্ন লোক চলে গিয়ে বাড়ি নিরব।যারা চৌধুরী বাড়ির অতিথি তারাই থেকে গেছেন।সবাই বিভিন্ন গল্পে মশগুল।ছোট বাচ্চারা ছোটাছুটি করছে। এলিজা পাখির জন্য দুধ গরম করছে। সকাল থেকে পাখির তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। সাথে ঔষধ আছে। এলিজা দুধ গরম করে নিয়ে যায় পাখির ঘরে।পাখিকে জয়ার ঘরে এখন অবধি রাখা হয়েছে। এলিজা দুধ নিয়ে উপরে যেতেই চোখ পরে অপূর্বর দিকে। সাথে সব বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু সে কিছু ভাবছে। অপূর্বর চিন্তা মুখ এলিজার ভালো লাগে না। কিছুক্ষণ অপূর্বর দিকে পরোক্ষ করে উপরে চলে যায়।পাখি জয়ার ঘরে বসে আছে। সাথে অর্পা , চাঁদনী এবং কিছু মেয়েরা।পাখি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। এলিজা দুধ টা টেবিলের উপর রেখে,পাখির কাছে বসে।পাখির চোখে পানি।এলিজা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দেয়। এলিজা ভেজা কন্ঠে বললো,কাদছিস কেন?
পাখি জ্বল জ্বল চোখে এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, মা বাবার কথা খুব মনে পরছে। এলিজার মা বাবার কথা শুনে মুখের রঙ বদলে ফেলে।এলিজার বুকের ভেতর জ্বলে ওঠে।অতি কম বয়সে মা বাবা কে হারায়।আজ বেঁচে থাকলে কতটা না খুশি হতো। আমাদের ছোট্ট পাখির আজ বিয়ে হয়েছে।মা বাবার কত আদুরে ছিলো পাখি।এসব ভেবেই,এলিজা হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখ মুছে। এলিজা মৃদু হেসে বললো, আমি আছি না আমি ই তোর মা-আমিই তোর বাবা।তোর কোন ইচ্ছা আমি অপূর্ন রেখেছি!বল!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন পর্যন্ত তোর সমস্ত চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করবো।পাখি মৃদু হেসে এলিজাকে জড়িয়ে ধরে।পাশ থেকে চাঁদনী বললো, বউমনি আপনার মা বাবা কিভাবে মারা যায়। এলিজা কিছুক্ষন চুপ থেকে কাপা কন্ঠে বললো, বাবা জ্বেলে ছিলেন। কালবৈশাখীর ঝড় বাবাকে কেড়ে নেয়।বাবার মৃত্যু তে মা খুব শোকাহত হয়। চিন্তায় চিন্তায় একদম শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিভাবে সংসার চালাবে, কিভাবে আমাদের মানুষ করবে। এভাবে কিছুদিন চলার পর মায়ের ডায়রিয়া হয়। চিকিৎসা ব্যাতিত মাও মারা যায়।এলিজা চোখের পানি মুছে।পাখি ফোপাচ্ছে। চাঁদনী পাখির কাদে শান্তনা মূলক হাত রাখে। এলিজা আদুরে গলায় কাদদে বারন করে।পাখি কান্না থামায়।এলিজা পাখিকে দুধ টা দেয়। সাথে খাওয়ার ঔষধ।পাখি খেয়ে নেয়। এলিজা দ্বিতীয় বার পাখির চোখের পানি মুছে অহংকারী স্বরে বলল, চোখের পানি ফেলতে নেই।জীবনে যে পর্যায় ,যত কঠিন পরিস্থিতিতে থাকিস না কেন, ভেঙে পরতে নেই।কারন চোখের পানি দূর্বলতা। পরিস্থিতি যেমন হোক মুখে হাঁসি রাখতে হয়।কারন হাঁসি আমাদের শক্তি জোগায়।পাখি মৃদু হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়ে।
এলিজা মৃদু হেসে বললো,এখন থেকে তুই সবসময় আমার চোখের সামনে থাকবি। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।তুই বোন থেকে আমার জ্বা- হয়ে গেলি।বলেই পাখিকে জড়িয়ে ধরে।
অপূর্ব সমস্ত কেস, তদন্ত সবকিছু মাথা থেকে ফেলে বিয়ের আনন্দে মন দেয়। নিজের হতাশার জন্য সবার আনন্দ নষ্ট হোক সেটা অপূর্ব চায়না। সূর্য কে চীপস ডুপিয়ালির কথা জিজ্ঞেস করে, দ্বিতীয় বার ওকে সন্দেহ করে ওর আনন্দ টা মাটি করতে চাইনা।এসব ভাবতে ভাবতে অপূর্ব সূর্য কে বললো,চল নতুন কনের সাথে একবার কথা বলে আসি।
এলিজা পাখি সবাই মিলে বিভিন্ন কথায় মশগুল।তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় অপূর্ব ও সূর্য।দরজায় ওপাশে দাঁড়িয়ে অপূর্ব গলায় কাশি দিয়ে বললো,আমরা কি মহিলা মহল্লায় আসতে পারি। অর্পা হাত ধরে নিয়ে আসে।
অপূর্ব ভেতরে আসে।এলিজার দুই স্বিনাতে হাত দিয়ে মৃদু হেসে বললো, কনেকে কি তোমরাই রেখে দিবে। আমার ভাই তো তার বউয়ের জন্য দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। এলিজা মৃদু হেসে বললো,সবাই খেয়েনিক। অতিথিদের খাওয়ানোর চক্করে তো বাড়ির লোকদের খাওয়া হয়নি। তারপর আম্মা কে বলে পাখিকে শ্রাবনের ঘরে দিয়ে আসবো।
এলিজা সবাইকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে চলে যায়। অপূর্ব,পাখির কাছে বসে।
সূর্য চেয়ার টেনে বসে। অপূর্ব পাখির সাথে নানান কথা বলছে।পাশে কিছু মেয়েরা হাজারো কথায় মশগুল। সূর্য জানালার দিকে ঘুরে,দাত দিয়ে ডান হাতের নক কাটছে।পাশেই বসা চাঁদনী, চাঁদনীর সাথে চাঁদনীর বান্দবি ডালিয়া।
অপূর্বর হঠাৎ চোখ পরে ডালিয়ার দিকে।ডালিয়া অপলক দৃষ্টিতে সূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে।কালো বুট,কালো হুডি জ্যাকেট,শ্যমবর্ন শরীর,গোপ গুলো সূর্যর কিছুটা বড়,দুদিকে নোয়ানো,গলায় চেন চোখ গুলো সূর্যর সবসময় লাল থাকে। ডালিয়ার ভাব ভঙ্গিমা দেখেই অপূর্ব বুঝতে পেরেছে, সূর্যর উপর ফিদা হয়ে গেছে। সূর্য অপলকে দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাহিরে দেখছে। অপূর্ব গলায় কাশি দেয়। সূর্য অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে। পরে কথা হবে বলে , অপূর্ব পাখির কাছ থেকে বিদায় নেয়। অপূর্ব সূর্য কে নিয়ে নিচে আসে।
অপূর্ব সূর্যর দিকে পরোখ করে ভাবতে শুরু করলো,যদি সূর্য নিজের অতিত ভুলে নিজের জীবনটা নতুন করে সাজাতো কতই না ভালো হতো।আমাকে সূর্যর অতিত ভুলিয়ে দেয়ার জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হবে।অপূর্ব তৎক্ষণাৎ সূর্য কে কিছু বললো না।ভাবলো এই বিষয় পরে কথা বলবে।সবাই রাতের খাবার খেতে বসে। এলিজা খাবার পরিবেশন করছে। অপূর্ব খাচ্ছে আর বার বার এলিজার দিকে পরোখ করছে।সবাই এলিজার রান্নার প্রশংসা করছে। তৎক্ষণাৎ অপূর্ব অহংকারী স্বরে বলে উঠলো, আমার বউয়ের রান্না ভাল তো হতেই হবে। সূর্য পাশ থেকে বলে উঠলো,দেখতে হবে না বউটা কার, আমার বন্ধুর।সবাই খিল খিল করে হেসে উঠে। অপূর্ব খেতে খেতে বুঝতে পারলো কেউ পা দিয়ে অপূর্বর পায়ে আলাপ করছে।
অপূর্বর খটকা লাগলো।সামনের দিকে খেয়াল করলো। টেবিলের অপর প্রান্তে বসা,অর্পা,ওর দুটো বন্ধু, চাঁদনী,আর ডালিয়া।ডালিয়া অপূর্বর মাঝ বরাবর। অপূর্বর বুঝতে আর বাকি নেই।পাশেই বসা সূর্য,তার পা মনে করে আমার পায়ের সাথে আলাপ করা হচ্ছে। অপূর্ব ডালিয়ার দিকে পরোখ করলো,সে খাওয়া ছেড়ে সূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে। অপূর্ব মিটিমিটি হাসছে। তৎক্ষণাৎ এলিজা-এসে অপূর্বর কাছে দাড়ায়। অপূর্ব দৃষ্টি সরিনে নেয়।এলিজা সবাইকে এড়িয়ে অপূর্বর প্লেটে মাংস দেয়ার বাহানায় ফিসফিস করে বলল, খাওয়ার সময় ও অন্য মেয়েদের দিকে তাকানো হচ্ছে তাই না।ঘরে এসো।
সমস্ত মেয়েকে তোমার সামনে এনে দিবো।অপূর্ব তৎক্ষণাৎ কাশি দিয়ে উঠে।জয়া বললো,ভিষন লেগেছে।এলিজা পানি ঠেলে দিলো।
বিয়ে বাড়ি পুরোপুরি শান্ত।
চারদিক নিশ্চুপ। কোন কোলা’হল নেই।শীতের শীতল হাওয়া বইছে। পাখি অপেক্ষা করছে। কখন শ্রাবন আসবে। শ্রাবনের ঘরে এই প্রথমবার এসেছে।তাও বউ হয়ে। পাখির খুব আনন্দ হচ্ছে। শ্রাবন কে দেখলেই পাখি এক অন্যরকম শান্তি অনুভব করে।যে শান্তি আর কোথাও নেই। শ্রাবনের পাগলামি পাখিকে নতুন করে হাসতে শিখায়।
পাখি শ্রাবনের দেয়া ফুলটা হাতে নিয়ে জ্বল জ্বল চোখে একা একা বির বির করে বলছে, আমার কেন এই মরনব্যাধী রোগ হলো।যদি আরো কয়েকটা দিন আমার প্রিয় মানুষটির সাথে বাঁচতে পারতাম।আরো কিছু টা পথ তার সাথে চলতে পারতাম। তাকে দেখলেই যে আমার বাচার ইচ্ছা টা বেড়ে যায়।যতই সবার সামনে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি না কেন।ভেতর ভেতর জ্বলছে। আমিই কি সেই হতভাগী,যার প্রিয় মানুষটির সাথে জীবন কাটানোর সময় টা বোধহয় বলতেই…
শ্রাবন ঘরে ঠুকে।পাখি বা হাতের উল্টো দিক চোখের পানি মুছে। শ্রাবন এসেই ধপাস করে পাখির সামনে কাথ হয়ে শুয়ে পরে।পাখি চমকে উঠে। পাখি লাল বেনারশী পরনে,ঠোটে লাল লিপস্টিক,ভারী গহনা সাথে ধবধবে ফর্সা ত্বকে একদম পরীর মত লাগছে।পাখি মাথানত করে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। শ্রাবন পাখি কে পরোখ করে মৃদু হেসে বললো, মাশাআল্লাহ।
পাখি মুচকি হাসে। শ্রাবন এক হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে শুয়ে পাখিকে দেখছে, অমৃদু হেসে বললো, আমি হেরে গিয়েও জিতে গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমি আমার পিচ্চি বেয়ান কে আমার করে পেলাম।আজকে একটা কথা বলতেই হচ্ছে,ভাগ্যে থাকলে সৃষ্টিকর্তা তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসবেই। তাই না পিচ্চি বেয়ান!
পাখি বিছানা থেকে নেমে যায়। শ্রাবন উঠে বসে।পাখি শ্রাবনের পা ধরে সালাম করে। শ্রাবন হাসি দিয়ে পাখিকে জড়িয়ে ধরে।
বার বার বলতে থাকে,আজ আমি ভিষন খুশি।ভিষন খুশি। আমার পাখিকে আমি পেয়ে গেছি।পাখি আওয়াজ করে হেসে উঠে।
শ্রাবন পাখিকে পাজা কোলে করে বসিয়ে দেয় ফুলের বিছানায়। শ্রাবন পাখির সামনে বসে পরে। হাঁটুর উপর, বা হাতের উপর,ধুতনি টা রেখে শ্রাবন পাখির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।পাখি লাজুক মুখে বললো,এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না আমার লজ্জা লাগে। শ্রাবন মৃদু হেসে বললো, তোমার লাজুক মুখের হাঁসি আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।যতই দেখিনা কেন তোমাকে ,দেখার ইচ্ছা যে মিটে না।বুঝলে পিচ্চি বেয়ান।
রাত বেরে চলেছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে । অপূর্ব, সূর্য,মিদুল এক ঘরে।জয়া, চাঁদনী,অর্পা ডালিয়া একঘরে। মমতাজ, এলিজা সাথে দুজন অতিথি মেয়ে তারা একঘরে। রাত ১ টা নাগাদ।এলিজা যে ঘরে সে ঘরের বারান্দা থেকে বাড়ির সামনের দিকটা পরিষ্কার দেখা যায়।এলিজার জীবনে অপূর্ব আশার পর থেকে, অপূর্বর বুকের উপর ছাড়া এলিজার ঘুম আসেনা ।এলিজা বিছানার এপাশ ওপাশ করতেই কানে আসে লাকরী কাটার আওয়াজ।এলিজা থমকে ওঠে।এত রাতে কে লাকরী কাটছে।এলিজা ভিষন চিন্তায় পরে যায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো এটা ভেবে যে,হয়তো ভুল শুনছি সারাদিনের তোরঝোপ এর জন্য। কিন্তু না এলিজার ধারনা ভুল নয় ।সত্যিই কেউ লাকরী কাটছে।এলিজা শরীরের উপর থেকে লেপ টা সরিয়ে উঠে জানালার কাছে আসে। এলিজা জানালা টা খুলে। ভালো করে পরোখ করতেই দেখে কালো চাদর পরে উল্টো দিকে মুখ ঘুরে কেউ লাকরী কাটছে। এলিজার খটকা লাগলো। চারদিক নিস্তব্ধ। শ্মুনশান । কোথাও কেউ নেই।এত রাতে কারো থাকার কথাও নয়।লোকটি কিছুটা দূরে বসে লাকরী কাটছে।যতদূর পর্যন্ত ঠিক মত বাড়ির সামনের বাতির আলো পৌছায় না। এলিজা মনস্থির করলো লোকটিকে দেখবে। কে সে? এত রাতে লাকরী কাটছে।ভারী অদ্ভুত
চারদিক নিশ্চুপ। শীতল হাওয়া বইছে।পূরো বাড়ি যেন হঠাৎ শ্মুনশান হয়ে গেছে। এলিজা এদিক সেদিক পরোক্ষ করে।কেউ
ষড়’যন্ত্র করে, পরিকল্পনা মোতাবেক কিছু করছে না তো। বিভিন্ন ভাবনা ,এলিজা উপেক্ষা করে,হাতে রাম,দা সাথে টর্চ নিয়ে দরজাটা খুলে বাহিরে বের হয়। আশেপাশে দেখছে । কোথাও কেউ নেই।বাড়ির দারোয়ান সে ছুটিতে গেছে।
এলিজা সাহস করে এক কদম দু কদম এগোতে থাকে।
লোকটির কাছে এগোতেই লোকটি লাকরী কাটা বন্ধ করে দেয়। এলিজা থেকে লোকটি কিছু দূরে। অচেনা লোকটি এলিজার উপস্থিতি বুঝতে পেরেছে। এলিজা তেজ দেখিয়ে বলে উঠলো,কে তুমি এত রাতে কাঠ কাটছো কেন?লোকটি উল্টো দিকে ঘুরে আছে। এলিজা দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলো,কে আপনি চুপ করে আছেন কেন?লোকটি আবার কাঠ কাটতে শুরু করে।এলিজার রাগ উঠতে থাকে।কি অদ্ভুত লোক। এলিজা আবার প্রশ্ন করতেই লোকটি বলে উঠলো, বউমনি খিদে পেয়েছে। এলিজা চমকে উঠে।এটা তো বায়েজিদ। কিন্তু বায়েজিদ শীতের ভিতর এত রাতে কি করছে।
এলিজা চিন্তিত কন্ঠে বললো, এত রাতে তুই এখানে কি করছিস। এরকম অদ্ভুত আচরণ কেন করছিস।তোর খিদে পেয়েছে তুই ঘরে এসে একটা বার বলতিস। বায়েজিদ কোন কথার উত্তর না দিয়ে বিৎঘট কন্ঠে বললো,বউমনি খিদে পেয়েছে। এলিজা কথা না বাড়িয়ে বললো তুই অপেক্ষা কর আমি নিয়ে আসছি। এখানে বসে খেতে হবে না।তুই ঘরের সামনে আস।এলিজা ভেতরে চলে যায়। এলিজা বায়েজিদ এর জন্য খাবার বাড়ছে। কিন্তু এলিজার ভেতর বায়েজিদ কে নিয়ে নতুন চিন্তা গ্রা,স করে। বায়েজিদ হঠাৎ করে এরকম আচরণ কেন করছে। কিভাবে কথা বললো। এলিজা ভাবনা ছেড়ে বায়েজিদ এর জন্য খাবার নিয়ে যায়। রাত ১:৩০ মিনিট। বায়েজিদ একটু পেটুক।এলিজা নিজের ছোট ভাইয়ের মত দেখে। কিন্তু আজকের আচরণ এলিজাকে ভাবাচ্ছে। খাবার নিয়ে আসে এলিজা। বায়েজিদ কিছুটা এগিয়ে বসেছে। চাদর মুড়ি দেয়া।এলিজার অনেক মায়া হলো।একই তো এক চোখে দেখে না তার উপর এত শীতে বাহিরে।যদিও অপূর্ব কাজের লোকদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এলিজা খাবার টা বায়েজিদ কে দেয়। এলিজা আতংক স্বরে বলল,তুই আমাকে এখন থেকে শুধু আপা ডাকবি। বউমনি না। বায়েজিদ হ্যা সুচক মাথা নারে।মাছ ভাত সাথে মাংস পেয়ে বায়েজিদ দ্রুত খেতে শুরু করলো।
এলিজার গড়মিল মনে হচ্ছে। বায়েজিদ হঠাৎ এরকম আচরণ করছে কেন।
এত রাতে আর বাহিরে থাকা যাবে না। “তুই খেয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পর আমি আসছি”বায়েজিদ খাওয়া বন্ধ করে অদ্ভুত স্বরে বলল,আপা তুমি খুব ভালো। এলিজা ঘরের দিকে চলে যেতেই চট করে অপূর্ব সামনে পরে। এলিজা চমকে উঠে। এলিজা আমতা আমতা করে বলল, আপনি এখানে এত রাতে?
একই প্রশ্ন তো আমার।তুমি এত রাতে কি করছো। আমার তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছিল না।তাই নিচে আসি।এসে দেখি দরজা খোলা।( বললো শান্ত স্বরে অপূর্ব)
এলিজা মৃদু হেসে বললো, বায়েজিদ এত রাতেও কাঠ কাঠছিলো।আমি শুনতে পেয়ে নিচে আসি।তখন ও আমাকে বলে ওর খিদে পেয়েছে ।তাই আমি খাবার নিয়ে আসি।
অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে রেগে বললো, তোমার সাহস অনেক দেখছি।যদি কোন অঘটন ঘটতো। তাহলে কি হতো! তুমি না সত্যিই পাগল! এত রাতে কেউ একা বের হয়।
এলিজা মৃদু হেসে বললো, আমাকে নিয়ে এত চিন্তা হয় আপনার।
তোমার তো কাজ ই আমাকে চিন্তায় ফেলার।বলেই অপূর্ব এলিজার হাত ধরে ভেতরে চলে যায়। এলিজা যেতে যেতে একবার বায়েজিদ এর দিকে ঘুরে দেখে, বায়েজিদ অদ্ভুত ভাবে এলিজার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা চোখ না থাকায় ভারী অদ্ভুত দেখাচ্ছে। এলিজা বিষিন্নত হলো।এলিজাকে বায়েজিদ এর অদ্ভুত আচরন ভাবাচ্ছে।
অপূর্ব এলিজার হাত থেকে রাম, দা টা নিয়ে দূরে রাখে।সোফাতে দুজন বসে পরে। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, অসহায়দের জন্য তোমার ভালোবাসা আমার খুব ভালো লাগে।কারন যার অন্যর জন্য ভালোবাসা থাকে সে সর্বদা পবিত্র থাকে।তার মনে খারাপ চিন্তা গ্রা,স করতে পারে না।
এলিজা অপূর্বর দিকে এগিয়ে বসলো। আতংক স্বরে বলল,একটা কথা বলবো?
হ্যাঁ বলো!
আমি এই বাড়িতে আশার পর থেকেই বায়েজিদ কে দেখছি।ওর আচরণ আমি ভালো করে জানি। কিন্তু আজকে আমি এক অন্য বায়েজিদ কে দেখলাম।ওর আচরণ বড্ড অন্য রকম ছিলো।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,এসব তোমার মনের ভুল।ও সবসময় এরকম। আর তুমি এরকম একা একা বাহিরে বের হবে না।কি না কি হয় বলা যায়না। এলিজা মৃদু হেসে বললো, আমার কিছু হবে না।যতদিন আপনার ভালোবাসা আছে।এখন গিয়ে শুয়ে পরুন। অনেক রাত হয়েছে।
অপূর্ব ঘরে চলে যায়। এলিজা বায়েজিদ এর চিন্তায় মশগুল ।কি হয়েছে ওর কিছু বলতে চাচ্ছে।নাকি অন্য কিছু।এসব ভাবতে ভাবতেই মমতাজ এর ঘরের জানালা আর একবার খুললো। এলিজা দেখতে পায় বায়েজিদ এখনো বসে আছে। এলিজা ভাবনা ছেড়ে ঘুমাতে যায়। কিন্তু কোনভাবেই ঘুম আসছে না।
সকাল হয়ে যায়। মনোরা রান্না ঘরে চলে যায়। সাথে মনজুরাও। সকাল সকাল মনজুরা এসে হাজির। মনোরা প্রশ্ন করলো, কোথায় থাকো , হুটহাট না বলেই চলে যাও।
মনজুরা বলল, ছেলেটার শরীর আগের থেকে খারাপ হয়েছে।তাই কোন কিছুতে মন বসাতে পারি না।
মনোরা বললো, তা বাড়ির মালকিন কে বলে তো যেতে পারো!
মনজুরা জবাবে বললো,আমি কবেও বা বলে গিয়েছিলাম।
মনোরা কথা বাড়ালো না। এলিজা হাত মুখ ধুয়ে রান্না ঘরে চলে আসে।এলিজার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। মনোরা মৃদু হেসে প্রশ্ন করলো, বউমনি কিছু হয়েছে। এলিজা চা পাতা নামাতে নামাতে না সূচক মাথা নাড়ে। মনোরা এড়িয়ে যায়।
ঘুম থেকে উঠে অপূর্ব সূর্য মিদুল ছাঁদে যায়।কড়া রোদ উঠেছে আজ।শীতের মাত্রা কিছুটা কম।
সূর্য উল্টো দিকে ঘুরে ব্যায়াম করছে।অপূর্ব ভাবছে কিভাবে সূর্য কে বলা যায়,যে তোর জীবনের পথ এখনো অনেক বাকি। এভাবে নিজেকে সবসময় একাকিত্ব ভরে রাখিস না। কিন্তু সূর্য এত সহজে রঞ্জনা কে ভুলে যাবে,সেটাও অসম্ভব। অপূর্ব মনস্থির করলো আগে সূর্য কে কিছু বলবো না।ডালিয়া মেয়েটাকে দেখি,সত্যিই সূর্য কে পছন্দ করে কিনা। যদি করেও থাকে , তবে আমার ওকে কিছু কৌশল শিখিয়ে দিতে হবে।যে, কিভাবে সূর্যর কাছে আসা যায়। মিদুল হাতে তুরি দিয়ে অপূর্বর ভাবনা ভাঙিয়ে দেয়।
মিদুল হেসে বললো,কিরে কি ভাবছিস?
অপূর্ব উল্টো ঘুরে ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, নতুন ভাবনা।তৎক্ষণাৎ অর্পা ছাদে দৌড়ে আসে। অপূর্ব কে উদ্দেশ্য করে বললো, ভাইয়া ল্যান্থলাইনে তোমাকে কেউ ফোন করেছে।সে লাইনেই আছে তোমাকে চাচ্ছে।
অপূর্ব দ্রুত পায়ে হেঁটে নিচে নামে। অপূর্ব হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ডাঃ জাকির বললো তুমি ফরেন্সিকল্যাবে আসো। বলেই ফোন কেটে দেয়। অপূর্ব চমকে উঠে।কি হয়েছে,এত সকাল সকাল ফোন করলো।কোন খারাপ খবর নয়তো। অপূর্ব চলে যায় থানার উদ্দেশ্যে।
শ্রাবন, সূর্য, মিদুল, চাঁদনী সহ সকলে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। শ্রাবন গিটার নিয়ে গাইছে। সবাই তালে তালে হাততালি দিচ্ছে। এলিজা সবাইকে খাবার এনে দেয়।সবাইকে আড্ডার আশরে বসেই খেতে বললো। এলিজা চোখ বুলিয়ে দেখলো অপূর্ব নেই। অর্পাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার ভাই কোথায়, অর্পা খেতে খেতে বললো, ভাইয়া থানাতে গেছে।
_গ্লাসকোব ফরেন্সিক ল্যাব_
অপূর্ব কিছুক্ষন এর মধ্যেই হাজির হয় ল্যাবে।ডাঃ জাকির কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। অপূর্ব তাকে ডাকলে সাড়া দেয়। অপূর্ব কাপা কন্ঠে বললো,কি হয়েছে কোন খারাপ খবর নয়তো।
ডাঃ জাকির বেশকিছু ক্ষন নিশ্চুপ থেকে কাপা কন্ঠে বললো, অপূর্ব আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে দেয় বললো,কি হয়েছে আমাকে খুলে বলুন।
ভেজা কন্ঠে ডাঃ জাকির বললো, তুমি যে কয়েনটা আমার কাছে রাখতে দিয়েছিলে সেটা কেউ চু,রি করে নিয়ে গেছে।
অপূর্ব থমকে দু কদম পেছনে স্বরে যায়।চোখ গুলো বড় বড় করে ফেলে। শরীর থেকে ঘাম ঝরতে তাকে। অপূর্ব আতং,ক স্বরে বললো,কি বলছেন, এখানে এত পাহারাদার থাকতে কি করে সম্ভব!! ডাঃ জাকির নিশ্চুপ থাকে।কোন কথার উত্তর সে দিতে পারছে না।
শুধু আফসোস করছে। অপূর্ব চিন্তিত হয়ে পরে। কিভাবে এটা হলো। অপূর্ব এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে রাত হয়ে যায়।
চৌধুরী বাড়ির সবাই ঘুমে। কিন্তু এলিজা জেগে আছে অপূর্বর জন্য। এখনো আসছে না কেন। সকালে না বলেই বেড়িয়ে গেলো। এলিজা চেয়ারে বসে দোল খেতে খেতে, শুনতে পেলো কেউ গেইট খুলছে। এলিজা গেটের আওয়াজ পেয়েই বারান্দায় এসে। কিন্তু এলিজা যা দেখলো, তাতে পুরোপুরি অবাক হয়ে গেলো। অপূর্ব বায়েজিদ এর সাথে কি যেন বলছে। এলিজার
খটকা লাগলো।এত কি বলছে।তাও রেগে কেন?
এলিজা জানালার কাছে অনেকক্ষন দাড়িয়ে দেখছে অপূর্ব বায়েজিদ এর সাথে কথা বলছে।এলিজা ভিষন চিন্তায় পরে যায়। কিছুক্ষণ পর অপূর্ব বায়েজিদ এর সাথে কথা শেষ করে ঘরের উদ্দেশ্যে আসে। এলিজা দৌড়ে নিচে নামে। বায়েজিদ গতকাল যা আচরণ করলো , হঠাৎ ওর কি হয়েছিল তা জানতে হবে। অপূর্ব দরজায় কড়া নাড়লে এলিজা সাথে সাথে খুলে দেয়। অপূর্ব এলিজাকে দেখেই মৃদু হেসে সালাম দেয়। এলিজা সালামের উত্তর দেয়। অপূর্বর মুখে হাসির ছাপ থাকলেও কোথাও যেন হতাশার ছাপ দেখা যাচ্ছে। এলিজা কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই অপূর্ব বলে উঠলো, প্রচন্ড খিদে পেয়েছে, কিছু খেতে দাও। এলিজা অপূর্ব কে খাবার দেয়। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,আমি জানি তুমিও আমার জন্য খাওনি। বোসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি। এলিজা অপূর্বর পাশে বসলো।এলিজার ভেতরে বায়েজিদ এর চিন্তা গ্রা,স করে রেখেছে ।কখন প্রশ্ন করবে।নাকি প্রশ্ন করা উচিত হবে না।
অপূর্বর খেতে খেতে হঠাৎ বিশন লাগে,এলিজা অপূর্বর মাথায় হাত দেয়।যাতে বিশন কমে যায়। অপূর্ব অপলকে এলিজার দিকে পরোখ করে। এলিজা মৃদু হেসে বললো,এত কি ভাবছেন কি হয়েছে, আমার সাথে ভাগ করুন। আপনার ও ভালো লাগবে।আমি জানি আপনি চিন্তায় আছেন।অপূর্ব এলিজার দিকে একবার দৃষ্টি স্থাপন করে।ভাত মাখাতে মাখাতে শান্ত স্বরে বলল, এক অচেনা লোক আমায় একটা কয়েন দিয়েছিল।লোকটি অচেনা। আমি ফরেন্সিক ল্যাবে কয়েনটা নিয়ে যাই।ডাঃ জাকির জানান কয়েনটিতে একটা জায়গার নকশা আছে। কিন্তু কোন জায়গায় সেটা জানার আগেই কয়েনটি ল্যাব থেকে কেউ চু,রি করে। এলিজা মৃদু হেসে বললো,এটার জন্য আপনি এত চিন্তা করছেন।যা কিছু হবে তারজন্য আমাদের সর্বদা মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। অপূর্ব হ্যা সুচক মাথা নাড়ে। অপূর্ব এলিজাকেও খাবার খাইয়ে দেয়।
অপূর্ব সারাদিন বাহিরে থাকায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরে। এলিজার ঘুম আসে না বায়েজিদ হঠাৎ ওরকম আচরণ কেন করলো?ওনাকেও জিজ্ঞেস করা হয়নি। এলিজা এসব ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তে ঘুমিয়ে পরে।
রাত প্রাই অনেক।
শ্রাবন ঘুমোয়নি পাখিকেও ঘুমাতে দেয়নি। শ্রাবন পেইন্টিং এর যাবতীয় কিছু জিনিস স্টোর রুম থেকে সংগ্রহ করে। পাখির ছবি আঁকবে বলে। পাখির চুল গুলো ছেড়ে সাদা রঙের থ্রিপিছ পরিয়ে কাদ হয়ে শুয়ে আছে। শ্রাবন এর আব্দার পূরন করতেই হবে। শ্রাবন যেভাবে বলেছে সেই ভঙ্গিমাই সুয়ে আছে।যতক্ষন না পাখির ছবি আঁকা হবে ততক্ষণ শুয়ে থাকতে হবে।পাখি শ্রাবন কে দেখছে আর মিটিমিটি হাসে। বাচ্চাদের মত কত পাগলামি করতে পারে শ্রাবন।
পাখি মৃদু হেসে বললো, এই ছবি এঁকে কি হবে?
শ্রাবন ছবি আঁকাতে আঁকতে বলল,যাতে আমার বাচ্চারা তাদের বাচ্চাদের বলতে পারে,যে দেখ তোদের নানি কত সুন্দরী ছিল।পাখি আওয়াজ করে হেসে উঠে। শ্রাবন আর চোখে পাখিকে দেখে। মৃদু হেসে বললো, ওয়ে পিচ্চি এভাবে হেসো না।পাগল হয়ে যাবো যে। পাখি সোয়া থেকে উঠে দুই কমড়ে হাত দিয়ে বললো, আমাকে পিচ্চি ডাকবেন না।আমি ছোট নই। আপনার থেকে অনেক বড়। শ্রাবন পাখির কাছে এসে মৃদু হেসে বললো,ঘার উচু করে আমার সাথে কথা বলতে হয় দেখেছো।পাখি চট করে খাটের উপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এই দেখেন এবার আমি কত বড় হয়ে গেছি। আপনি আমার কমড় পর্যন্ত।হুমম বলেই মুখ কুঁচকে দেয়। শ্রাবন বা হাত দিয়ে পাখিকে খাট থেকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, তেজ দেখছি তোমার অনেক।
পাখি মৃদু হেসে বললো , কত তেজ দেখবেন বলেই শ্রাবনের হাত থেকে পেইন্টিং করার রং নিয়ে শ্রাবনের শরীরে মাখিয়ে দেয়। শ্রাবন আওয়াজ করে বলে উঠলো, আরে পিচ্চি কি করছো।আর বলবো না পিচ্চি।পাখি পেছনে সরে যায়। শ্রাবনের শরীর রঙে মাখা।শ্রাবন নিচে পরে যাওয়া রং উঠিয়ে দু হাতে মেঘে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বললো, এবার কে বাঁচাবে তোমাকে।তোমাকেও একটু রং মাখিয়ে দেই।আমাকে মাখিয়েছো,তুমি কেন বাদ যাবে। শ্রাবন পাখির দিকে এক কদম দু কদম সামনে এগোতেই পাখি দরজা খুলে বাহিরে দৌড় দেয়। আওয়াজ করে হেসে বললো,পারলে আগে আমাকে ছুঁয়ে দেখান। শ্রাবন পেছনে দৌড়াতে থাকে। তৎক্ষণাৎ রান্না ঘরে মমতাজ পানি নিতে আসে। মমতাজ এর চোখে ঘুম।পানির পিপাসা লাগাতে মাঝরাতে পানি খেতে আসতে হলো। মমতাজ রান্না ঘর থেকে বের হতেই, চোখ পরে দোতলায়। মমতাজ এর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়।পূরো শরীর ভয়ে কেঁপে উঠে। মমতাজ দেখতে পায়।একটা মেয়ে সাদা রঙের জামা পরে দৌড়াচ্ছে তার পেছনে শ্রাবন দৌড়াচ্ছে । মমতাজ কাঁপতে কাঁপতে আওয়াজ করে বললো, বাবা শ্রাবন তুই ভুতের পেছনে দৌড়াচ্ছিস কেন।ওটা ভূত ওটা ভূত।আরে কে কোথায় আছো, তারাতাড়ি এসো, আমার ছেলে ভূতের পেছনে দৌড়াচ্ছে। তোকে মেরে দেবে তো।
পাখি নিচে নেমে মমতাজ এর সামনে এসে দাড়ায়।পেছনে শ্রাবন।পাখি শ্রাবন দুজনেই মমতাজ কে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। পাখি মমতাজ কে দেখে মৃদু হেসে বললো, শ্বাশুড়ি মা আমি আপনার বউমা।ভূত না। মমতাজের হাত থেকে জগটা পরে যায়। মমতাজ কাপতে কাপতে বললো,আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।আমাকেও ছেড়ে দেও। আজকের পর আর তোমাকে কটূ কথা শোনাবো না। তোমার সাথে ভূত আছে আগে জানতাম না। মমতাজ দেখলো পাখির জামায় লাল রঙ তা থেকে আরো ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,তু তু তুমি কাকে মেরে এসেছো।তোমার জামায় র,ক্ত কেন। শ্রাবন সামনে এসে মৃদু হেসে বললো মা তুমি উলটো পাল্টা কি বলছো ও পাখি। মমতাজ শ্রাবন কে চুপ করতে বললো। তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সবাই। জাহাঙ্গীর,জয়া,অর্পা,এলিজা অপূর্ব। সবাই হাই তুলতে তুলতে বেড়িয়ে আসে।সবাই পাখি আর শ্রাবনের অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। এলিজা পাখির কাছে এসে আতং’ক স্বরে বলল, কি হয়েছে তোর? তোর গায়ে র,ক্ত কেন? পাখি হেসে বললো, আপু এটা র,ক্ত নয়। পেইন্টিং রং। জাহাঙ্গীর কর্কট মেজাজে বললো,এত রাতে রং দিয়ে কি করছো?
পাখি মাথা নিচু করে। অপূর্ব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,সবাই ঘুমাতে যাও। এখানে কিছু হয়নি।আর কাকি ও তোমার বউমা কোন ভূত না।যাও যাও।ঘুমাতে যাও।সবাই চলে যায়। অপূর্ব এলিজা শ্রাবনের কাছে। অপূর্ব মুখে হাত দিয়ে বললো, এত রাতে তোরা রঙ খেলছিস।আগে জানলে আমি আর আমার ম্যাডাম ও খেলতাম। শ্রাবন হাঁসি দিয়ে বলল,আরে ইয়ার লজ্জা দিচ্ছিস। পেইন্টিং আকছিলাম।এলিজা পাখিকে বললো,ঘরে গিয়ে জামা পরিবর্তন করে শুইয়ে পর। এলিজা অপূর্ব ঘরে চলে যায়।
পাখি আলমারি থেকে থ্রিপিস বের করে। শ্রাবন বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে বের হয়। পাখি বাথরুমে যেতেই শ্রাবন পথ আটকে দেয়।পাখি ইতস্তত বোধ করে বললো,সড়ুন না। কাপড় পরিবর্তন করতে হবে। শ্রাবন মৃদু হেসে বললো, চলো আমিও যাই। আমারও কাপড় পরিবর্তন করতে হবে।পাখি চোখ সরিয়ে বললো, ছিঃ।
শ্রাবন পাখিকে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার বউটা কত লজ্জাবতী।
পাখি বললো,এবার তো যেতে দিন।রাত অনেক হচ্ছে।
শ্রাবন পাখিকে ছেড়ে দেয়।পাখি বাথরুমের ভেতর যেতেই শ্রাবন উল্টো ঘুরে অহংকারী স্বরে বলল, পিচ্চি , তোমার দেহের প্রতি আমার কোন লোভ নেই।এটা সবসময় মাথায় রেখো।
সকাল হয়ে যায় —
চারদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন।দিন হলেও কুয়াশার জন্য অন্ধকার হয়ে আছে।সূর্য মামার কোন হদিস নেই। এলিজা সকালে উঠেই রান্না ঘরে চলে যায়। মনোরা সবকিছু কেটে ধুয়ে গুছিয়ে দেয়। এলিজা সবার জন্য খাবার তৈরি করে।
চাঁদনী, ডালিয়া দুজনে ছাঁদে বসে চৌধুরী বাড়ি নিয়ে কথা বলছে।দক্ষিনা হাওয়া বইছে। শীতল পরিবেশ। চাঁদনী ডালিয়া দুজনে চাদর পরা। ডালিয়া হঠাৎ করে চাঁদনী কে প্রশ্ন করলো, একটা কথা বলবো।
চাঁদনী হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।
ডালিয়া শান্ত স্বরে বলল,তোর আর অপূর্ব ভাইয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল না। চাঁদনী কথাটাই শুনেই উল্টো দিকে ঘুরে ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, প্রিয় মানুষ টা অন্যর হয়ে যাওয়া এবং তাকে অন্যর সাথে সুখি দেখাটার মধ্যে ও এক ধরনের তৃপ্তি পাওয়া যায়।ডালিয়া চাঁদনীর দিকে কিছুটা এগিয়ে ভেজা কন্ঠে বললো, তুই এখনো অপূর্ব কে ভালোবাসিস আমি জানি।তাই তো তুই তোর বাবার পছন্দের ছেলেকে বার বার প্রত্যাখান করিস।
চাঁদনী প্রসঙ্গ পাল্টে নেয়। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় অপূর্ব সূর্য।ডালিয়া সূর্য কে দেখেই ভ্রু কুঁচকে দেয়।
সূর্য ব্যায়াম শুরু করে। অপূর্ব চাঁদনী ও ডালিয়ার কাছে আসে। চাঁদনী কে হানতান বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে অপূর্ব। চাঁদনী উপেক্ষা করে বললো,তোরা কথা বল আমি আসছি।ডালিয়া দেখতে অনেক টা সুন্দর। চুলগুলো কিছুটা কোকরানো। অপূর্ব ডালিয়ার সাথে এটা ওটা অনেক কথা বলে।ডালিয়া কথা বলতে বলতে বার বার সূর্যর দিকে দেখলো। অপূর্ব খেয়াল করে। অপূর্ব মনে মনে ভাবলো সূর্য কোনদিন কাউকে আর ভালোবাসবে না। সেটা আমি জানি।কিন্তু একবার চেষ্টা করে দেখি। অপূর্ব ডালিয়াকে উদ্দেশ্যে করে বললো, সূর্য কে ভালো লাগে?ডালিয়া চমকে উঠে। হতভম্ব হয়ে যায়।কি বলছে সে।ডালিয়া রেলিং ধরে সামনে ফিরে না সূচক মাথা নাড়ে। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,আমাকে বলতে পারো।আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো।ডালিয়া অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, সূর্য খুব মায়াবি যে কেউ তার মায়ায় পরবে। অপূর্ব ফিস ফিস করে বললো,খুব সহজে সূর্য কে পটানো যাবে না। এরজন্য কৌশল দরকার ।ডালিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো, যেমন ?
যেমন, সূর্যর সাথে তুমি এটা ওটা বিভিন্ন কথা বলবে।ওর ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবে।তোমাকে খুব চঞ্চল হতে হবে। সূর্য চঞ্চল মেয়ে পছন্দ করে।ডালিয়া হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।ডালিয়া নিচে চলে যায়। অপূর্বর হঠাৎ করে চিন্তা গ্রা,স করে।কে কয়েনটা চুরি করলো, আর এটা তো আমি ছাড়া আর কেউ জানতো না যে,এটা গ্লাসকোফ ফরেন্সিক ল্যাবে রেখেছি।তবে কিভাবে গায়েব হলো। ভাবনা ছেড়ে অপূর্ব সূর্য কে নিয়ে নিচে খেতে নামে। তৎক্ষণাৎ ল্যান্থলাইনে ফোনের আওয়াজ। অপূর্ব দ্রুত পায়ে ফোনটা রিসিভ করে।
এলিজা পর্ব ৫১+৫২
ওপাশ থেকে ডাঃ জাকির বললো,আমরা সিসিটিভি ফুটেজ টা গতকাল দেখতে তো ভুলেই গিয়েছি ।আমরা জানতে পেরেছি এটা কে চু,রি করেছে। অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কে দ্রুত বলুন।ডাঃ জাকির বললো, মেয়েটার নাম রিয়া। এবং মেয়েটা মেডিকেল এ্যাপ্রন পরে গতকাল তোমার নাম করেই ল্যাবে আসে।আর ঐ মেয়েটাই কয়েনটি চু,রি করে।
অপূর্ব থমকে যায়।এই রিয়া সেই ছদ্ম,বেশী যে পিজি হাসপাতালে ও আমাকে বোকা বানিয়েছে। কে এই মেয়েটা কি চায়? আর এদের আস্তানাই বা কোথায়?