এলিজা পর্ব ৫৬+৫৭

এলিজা পর্ব ৫৬+৫৭
Dayna

এলিজা টেবিলে সবার জন্য খাবার বাড়ছে। মনোরা এলিজা-কে সাহায্য করছে‌।জয়ার শরীর ভালো না।কমড়ের বেথা টা বেরেছে। এলিজা জয়ার জন্য আলাদা করে খাবার রেখে দেয়।। তৎক্ষণাৎ পাখি উপস্থিত হয়।পাখি বলল, আমিও কাজ করবো আমাকেও কিছু কাজ দাও। এলিজা মৃদু হেসে বললো,আমি থাকতে তোর কিছু করতে হবে না।তুই সবাইকে ডেকে নিয়ে আয়। অপূর্ব দ্রুত পায়ে রান্না ঘরে এসে এলিজার কপালে চুমু খেয়ে বললো,ম্যাডাম আমাকে যেতে হবে।ল্যাব থেকে আমাকে ফোন করেছে। এলিজা আপত্তি স্বরে বলল,যেতেই হবে।বাড়িতে এত মেহমান।মা অসুস্থ।আজকে আমার মামা মামি চলে যাবে। আপনার সবার সাথে থাকাটা জরুরি। অপূর্ব এলিজার কথায় ভাবতে শুরু করলো,এলিজা তো ঠিক ই বলেছে।যেয়েও বা কি হবে।কয়েন টা তো আর ফিরে পাবো না। এরজন্য অন্য কোন রাস্তা বের করতে হবে। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, ঠিকি বলেছো।আজকে সবার সাথে আড্ডা দেয়া যাক।

এলিজা হাতে খাবার নিয়ে জয়ার ঘরে উপস্থিত হয়।জয়া উল্টো ঘুরে শুয়ে আছে। জাহাঙ্গীর বারান্দায়, চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে।হাতে সিগার। গহিন ভাবনায় মশগুল সে। এলিজা নরম কন্ঠে জয়াকে ডাকে।জয়া ঘুরে সোয়।ক্লান্ত শরীর।এলিজা মৃদু হেসে বললো, আম্মা খাবার এনেছি।উঠে খেয়েনিন। তারপর আমি গরম সেঁক দিয়ে দেবো আপনার কমড়ে। দেখবেন ভালো লাগবে।জয়া উঠে বসে।চোখে চশমা পরে।এলিজা খাবার টা সামনে দেয়।জয়া মৃদু হেসে বললো,মা তোর মত ছেলের বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।যে সবার কথা চিন্তা করে।এলিজা মৃদু হাসে।বললো,আপনি খেয়েনিন।আমি নিচে যাই।এলিজা যেতেই জাহাঙ্গীর এর দিকে নজর পরে। জাহাঙ্গীর আর চোখে এলিজার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এলিজার চোখ পরতেই ,চোখ সরিয়ে ফেলে।এলিজা উপেক্ষা করে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়।সবাই ছাঁদে বসে দিনের শেষ রোদ পোহাচ্ছে।ডালিয়া, চাঁদনী,অর্পা, মমতাজ।আড্ডার আশর বসিয়েছে। তৎক্ষণাৎ পাখি তাদের মধ্যে থেকে উঠে চলে আসে।সবাইকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে। তাদের সাথে সময় কাটাতে পাখির একদম ভালো লাগছে না।পাখি এলিজার ঘরে চলে আসে।এলিজা তার শ্বাশুড়ি কে গরম সেঁক দিয়ে ঘরে এসে বিশ্রাম করছে।পাখি এলিজার ঘরে আসে‌।আপু বলে ডাকতেই এলিজা পেছন ঘুরে। মৃদু হেসে বললো হঠাৎ আমার ঘরে ,আয় বোস।পাখি খাটের উপর বসে। এলিজা মৃদু হেসে বললো, ছাঁদ থেকে চলে এলি যে?
আমার ভালো লাগছে না। তোমার জায়গা অন্য কাউকে দিয়ে পূর্ন হয়না। এলিজা বললো,শশুর বাড়ী তে প্রথম প্রথম এমন ই হয়। আমার ও হয়েছিল। কিন্তু তুই তো এই বাড়িতে প্রথম না তো আরো এসেছিস!যদিও বিয়ের আঁচ টা এমনই ধিরে ধিরে ঠিক হয়ে যাবে।

পাখি মৃদু হাসে।
এলিজা পাখিকে নিজের কোলে সুইয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, শ্বশুর বাড়ীর কেউ আপন হয়না।আপন করে নিতে হয়।সবার মন জয় করে চলতে হয়।সবার মানসিকতা এক নয়।যে যেমন,তার সাথে সেভাবে ই মানিয়ে নিতে হয়।আর তোর শাশুড়ি,ছোট কাকি,সে একটু খিটখিটে কিন্তু তার মন টা ভালো। তার যা পছন্দ সেগুলো করবি।যেমন,সে সাজতে পছন্দ করে মাঝে মধ্যে তার রুপের প্রসংশা করবি।
পাখি ভেজা কন্ঠে বললো, আপু তুমি কতকিছু জানো।
এলিজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু জানতে হয়।তবে কখনো কখনো কিছু জিনিস অজানা থাকলেই হয়তো ভালো হতো‌।
পাখি অনুভব করলো ওর গালে কিছু পরেছে।হাত দিয়ে দেখে পানি। বুঝতে পেরেছে এলিজার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে।

পাখি প্রশ্ন করলো,আপু কাঁদছো কেন?
এলিজা হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো, খুশির কান্না এটা‌। আমার ছোট্ট পাখি আজ কত বড় হয়েছে।বিয়ে হয়েছে।আর তার থেকেও বড় কথা আমার জ্বা হয়েছে।
অপূর্ব ফ্যাক্টরিতে। জাহাঙ্গীর যেতে বলেছে।এখনো ফিরেনি। এলিজা সন্ধ্যায় কিছু নাস্তা তৈরি করে মেহমানদের দিয়েছে‌।সবাই জয়ার ঘরে। এলিজা বৈঠকখানায় বসে আছে ‌। হঠাৎ ই মনে পরে বায়েজিদ এর কথা। আশেপাশে কেউ নেই এখন একবার বায়েজিদ ঘরে যাওয়া যাক।
এলিজা বাহিরে বের হয়। আশেপাশে পরোখ করে। ধিরে ধিরে বায়েজিদ এর ঘরে যায়। হঠাৎ করে এলিজাকে দেখে বাড়ির দারোয়ান,মকবুল হোসেন চমকে উঠে।

মকবুল বললো, মা তুমি এইহানে? এলিজা আমতা আমতা করে বলল,চাচা এমনি এসেছি।ছুটি কেমন কাটিয়েছেন?
মকবুল বললো,হ মা ভালো ই। তোমার চাচীর শরীর টা ভালো না।
এলিজা এদিক ওদিক পরোখ করে। বায়েজিদ কে দেখতে পাচ্ছে না। এলিজা মৃদু হেসে বললো,চাচা বায়েজিদ কোথায়?
চাচা অবাক হয়ে বললো, বায়েজিদ তো গত পরশুদিন,বিকেলে গ্রামে যায়। আবার গতকাল বিকেলে ফিরা আইছে।এখন আবার কই গেছে জানি না।এলিজার খটকা লাগলো। এলিজা স্থান ত্যাগ করে।ঘরে এসে বৈঠকখানায় বসে ভাবছে।যদি গত পরশুদিন বিকেলে বায়েজিদ গ্রামে ফিরে থাকে তবে,রাতে কাঠ কে কাটছিল আর আমি খাবার কাকে দিয়েছিলাম।সে কে ছিলো।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজায় কেউ করা নাড়ে। এলিজা দ্রুত খুলে দেয়। অপূর্ব আর সূর্য এসেছে।
ম্যাডাম , আপনি একা একা এখানে?

আপনার জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম।
অপূর্ব এলিজাকে নিয়ে উপরে যায়। সূর্য বৈঠকখানায় বসলো
। অপূর্ব সূর্য কে বললো, তুই বোস আমি আসছি।
সূর্য এদিক সেদিক পরোক্ষ করছে। অপূর্ব দোতলায় থেকে বললো, সূর্য উপরে চলে আয়। সূর্য দ্রুত পায়ে উপরে উঠতেই, ধাক্কা লাগে ডালিয়ার সাথে।ডালিয়া পা পিচলে পরতেই সূর্য হাতটা ধরে ফেলে।ডালিয়া অপলক দৃষ্টিতে সূর্য কে দেখে। সূর্য ডালিয়াকে দাড় করিয়ে বললো, চোখে দেখে হাঁটতে পারো না।ডালিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো, ধাক্কা আপনি দিলেন আর দোষ আমাকে দিচ্ছেন। সূর্য কর্কট মেজাজে বললো, যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা,এই রুপের ঝলকে নাকি আমি আবার ধাক্কা দিবো।কত শখ।বলেই উপরে চলে যায়। রেলিং এর আড়ালে থাকা অপূর্ব বেড়িয়ে ডালিয়ার কাছে আসে। অপূর্ব বললো, কেমন লাগলো?

ডালিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,খুব সহজে সূর্য কে বাগে আনা যাবে না।
বলেই দুজন খিল খিল করে হেঁসে উঠে।
অপূর্ব সূর্য কে নিজের কাছে রাখার মনস্থির করলো। সূর্যর সারাদিন কোন কাজ নেই। সূর্যর বাবা একজন রিটায়ার্ড সেনাবাহিনী ‌। একমাত্র ছেলে, কিছু করার প্রয়োজন পরে না। সূর্য পরাশুনা টাও শেষ করতে পারেনি। রঞ্জনার জন্য। রঞ্জনা চলে যাওয়ার পর সূর্য সব দিক থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
সূর্য ছাদের এক কোনেতে বসে আছে। আকাশের তারা গুনছে। অপূর্ব এসে পাশে দাঁড়ায়। ভাবতে থাকে নতুন করে জীবন সাজানোর কথা বলবো নাকি। অপূর্ব সেসব প্রসঙ্গ না তুলে কেসে নিয়ে কথা তুলে।
এলিজা রান্না ঘরে তৎক্ষণাৎ ল্যান্থলাইনে ফোন বেজে ওঠে।কার না কার ফোন, তুলবে কিনা ভাবতেই ফোনটা কেটে যায়। দ্বিতীয় বার ফোন বাজে , এলিজা ফোনটা তুলে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে কাপা কন্ঠে কেউ বললো, অপূর্ব দ্রুত ল্যাবে আসো দ্রুত। তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।আমি জেনে গেছি সেই কয়েন চু,রি করা ছদ্মবেশী কে। ফোনটা কেটে যায়। এলিজা পেছন ঘুরতেই দেখে জয়া দাড়িয়ে।
জয়া জিজ্ঞেস করল,কে ফোন করেছে।

এলিজা বললো, আম্মা কেউ আপনার ছেলেকে ল্যাবে ঠেকেছে।আমি তাকে গিয়ে বলে আসবো?
জয়া বললো, না বলিস না।এই পুলিশের চাকরি আমার একদম ভালো লাগে না। সারাদিন ছেলেটা চিন্তায় থাকে।বলিস না তুই।তুই আমার কমড়ে সেক দিয়ে দে।এলিজা তাই করলো।
গ্লাসকোফ ফরেন্সিক ল্যাব–

ডাঃ জাকির একা আজ ল্যাবে।রাত অনেক। প্রাই ১১ টা। খুব অস্থির জাকির।ঘাম ঝরছে অঝরে। কোন অচেনা ভয় তাকে গ্রা,স করে রেখেছে। হঠাৎ করেই ল্যাবের বিদ্যুৎ চলে যায়।জাকির হতভম্ব হয়ে যায়।এটা কি করে সম্ভব।ল্যাবের বিদ্যুৎ তো কখনো যায় না। জেনারেটর আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও, সাথে সাথে জেনারেটর চালু হয়।আজ হয়নি। জাকির ভয়ে চাপসে যাচ্ছে।ল্যাবে ১১ টার পর কেউ থাকে না। কিন্তু উনি আজ অপূর্বর জন্য অপেক্ষা করছে।জাকির একটা টর্চ ওন করে। চারদিক নিস্তব্দ।জাকির এর বুকের ধুকবুকানি হঠাৎ বেড়ে যায়। এদিক সেদিক পরোক্ষ করে।জাকির অনুভব করছে তার আশেপাশে কেউ আছে।কারো উপস্থিতি সে বুঝতে পারছে।জাকির এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখে।জাকির এর বয়স ৪০। শরীরে জোড় শক্তি ভালো কিন্তু আজ হঠাৎ নিস্তেজ।জাকির বাহিরে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে এগোয়।ধিরে ধিরে এগোতে থাকে। এর ভিতরেই কেউ দরজায় কড়া নারে।জাকির চমকে উঠে।কে আসলো এত রাতে,জাকির ভাবলো হয়তো, অপূর্ব এসেছে। জাকির দরজা খোলার আগে ,দরজার সেইফটি গ্লাস থেকে বাহিরে পরোখ করতে দেখে কেউ একজন জোকারের মুখোশ পরে দাড়িয়ে আছে।জাকির ছিটকে পেছনে পরে যায়।কে এই মুখোশধারী? জাকির ভয়ে একাকার।

সূর্য অপূর্ব বেশ কিছুক্ষণ ছাঁদে গল্প গুজব করে। চারদিক নিস্তব্দ। শীতল হাওয়া ‌বইছে। চাঁদনী রাত। চারদিক জোসনায় আলোতে আলোকিত হয়ে আছে। অপূর্ব হঠাৎ করে বলে উঠলো, আমার বিশ্বাস করতে অনেক টা কষ্ট হচ্ছে।যে,রায়হান একজন ধ’র্ষক। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হওয়া। রায়হান কে কখনো ওরকম মনেই হয়নি। আমার কোথাও একটা গড়মিল মনে হচ্ছে। সূর্য ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে। অপূর্ব সূর্যর দিকে পরোখ করে। সূর্য কিছু বলতে চাচ্ছে হয়তো, কিন্তু পারছে না। সবসময় কোন না কোন ভাবনায় মশগুল থাকে। অপূর্ব গলায় কাশি দিয়ে বললো, চুপ আছিস যে!
সূর্য বলল,অতীত কে নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।যা হবার হয়েছে। নিয়তি হয়তো এটাই চেয়েছিল ‌। রঞ্জনার জন্য আজ ও বুকের ভেতর টা পুড়ে।ওর হাঁসি,কান্না,ওর বলা প্রতিটা শব্দ গুলো কানের কাছে ভাসে।কি করে ভুলে যাবো রঞ্জনা কে।
অপূর্ব চুপ হয়ে যায়।কি বলবে বুঝতে পারছে না। সূর্য কে শান্ত না দেয়ার মত কোন শব্দ পাচ্ছে না। অপূর্ব সূর্য কে নিয়ে নিচে আসে। অনেকক্ষন ছাঁদে ছিল। একবার অর্পা ডেকে গেছে। কিন্তু অপূর্ব যায়নি।

অপূর্ব নিচে আসলে মনোরা খেতে দেয়। অপূর্ব আর সূর্য কে। এলিজা জয়ার ঘরে।জয়ার কোমড়ে সেক দিচ্ছে। এলিজা জয়া বিভিন্ন কথায় মশগুল। এলিজা জয়াকে একটু পর পর জিজ্ঞেস করছে, আম্মা আগে আপনি কেমন ছিলেন?দেখতে কেমন ছিলেন? স্বভাব কেমন ছিলো? বাবার সাথে পরিচয় কিভাবে? জয়া হেঁসে হেসে উত্তর দেয়।জয়া মৃদু হেসে কথা বলছে‌।এলিজা অপলকে দেখছে।এলিজা জয়ার দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।জয়া খেয়াল করলো, এলিজা-একমনে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে।জয়া এলিজার দিকে ঘুরলো।জয়া আদুরে গলায় বলল,কি হয়েছে মা কি ভাবছিস? এলিজা জ্বল জ্বল চোখে বললো,কই কিছু নাহতো।

বলনা কি ভাবছিস ?আমিতো তোর মায়ের মত? এলিজা ভেজা কন্ঠে বললো, আম্মা আপনাকে দেখতে কিছুটা আমার মায়ের মত।আপনাকে দেখলেই মায়ের কথা খুব মনে পরে।জয়া হাত থেকে পানের কৌটাটা রেখে দেয়। এলিজা কে কাছে টেনে বললো,আমি তোর মা।হয়তো আমি তোটে পেটে ধরেনি। কিন্তু তোকে আমি আমার ছেলের বউ নয়, আমার মেয়ের মতই দেখি। এলিজা মৃদু হেসে জয়াকে জড়িয়ে ধরে,হুহু করে কান্না শুরু করে।জয়া বিষিন্নত হয়।হয়তো এলিজার ওর মায়ের কথা মনে পরছে।

এলিজা জড়িয়ে ধরে বললো, আম্মা আপনার শরীর থেকে আমি আমার মায়ের গন্ধ পাই। আপনার কাছে আসলে খুব শান্তি পাই।জয়া এলিজার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,পাগলী মেয়ে আমি তোর মা ই তো।কখনো বলবি না যে তোর মা নেই।জয়া তার শাড়ির আঁচল দিয়ে এলিজার চোখের পানি মুছে দেয়। তৎক্ষণাৎ ঘরে উপস্থিত হয় জাহাঙ্গীর।চোখে মুখে হতাশার ছাপ।ঘরে এসেই হাত থেকে কিছু কাগজপত্র টেবিলে রেখে হাত মুখ ধুতে যায়। এলিজা জয়াকে ঘুমাতে বলে স্থান ত্যাগ করে। জাহাঙ্গীর ঘরে আসে। তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে।জয়া কাপা কন্ঠে বললো,কি হয়েছে ? কোথায় ছিলেন?
জাহাঙ্গীর কর্কট মেজাজে বললো,কাজ ছিল ফ্যাক্টরিতে।তাই আসতে দেরি হয়ে গেলো।
এলিজা ঘরে আসে। অপূর্ব সূর্য কে অতিথি ঘরে ঘুমাতে বলে চলে আসে‌।

অপূর্বর কিছুদিন ধরে হালকা হালকা জ্বর হয়।সাথে সর্দি। এলিজা অপূর্বর জন্য,হলুদ দেয়া গরম দুধ আনে। অপূর্ব খেয়ে নেয়। হলুদ দেয়া দুধ খেয়ে অপূর্ব কিছুক্ষণ এর মধ্যে ই ঘুমিয়ে যায়। এলিজা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পেছন ঘুরে দেখে তার মহারাজা ঘুমিয়ে পরে। এলিজা অপূর্ব কে পরোখ করে মৃদু হাসে। হঠাৎ এলিজার মনে পরে বায়েজিদ এর কথা। অপূর্বর সাথে বায়েজিদ কে নিয়ে কথা বলবে, কিন্তু তার আগেই অপূর্ব ঘুমিয়ে পরে।
এলিজা চিন্তায় পরে যায় সেদিন কে ছিল বায়েজিদ এর ছদ্ম,বেশে।নাকি বায়েজিদ ই ছিল।যদি বায়েজিদ না হতো।অন্য কেউ হলে তার কন্ঠ ও ভিন্ন হতো। তাছাড়া বায়েজিদ তো দেখেও ছিলাম। এলিজা এসব ভাবতে ভাবতে সুয়ে পরে‌।
ফরেন্সিক ল্যাব।——

জাকির দরজা খুললো না।কে এই ছদ্ম,বেশী এখানে কি চায়।জাকির ঘেমে একাকার। শীতের দিন অথচ সে ঘেমে যাচ্ছে।জাকির ডকডক করে পানি খেয়ে নেয়।টর্চ নিয়ে এক কোনে ঘাপটি মেরে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে বিদ্যুৎ চলে আসে। জাকির আলো দেখে একটু সাহস পায়।

জাকির এক কদম দু কদম সামনে এগোতে থাকে। দরজার সেইফটি গ্লাস দিয়ে দেখলো,লোকটি নেই।ভালো করে পরোখ করলো যতদূর পর্যন্ত চোখ যায়। জাকির মনে মনে ভাবলো,হয়তো চলে গেছে‌।জাকির দ্বিতীয় বার দরজার দিকে দেখতেই , চট করে জোকার এর মুখোশ পরা লোকটি চট করে দরজার সামনে চলে আসে।জাকির ভয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। হঠাৎ করে কিছু বাতির আলো নিভে যায়।জাকির বার বার ঢেক গিলতে থাকে।জাকির বা” দিকে গ্লাসের দিকে দেখলো , কারো ছায়া।জাকির থমকে যায়।কার ছায়া,কে আছে আমি ছাড়া এখানে! জাকির কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো,কে ওখানে। কোন উত্তর নেই। দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলো কে ওখানে? কোন জবাব নেই। জাকির হেটে হেটে ছায়াটার কাছে যায়।হাতে একটা সিজা,র নিয়ে।কাছ থেকে টর্চটা মারলে দেখতে পায় কেউ নেই।ডাঃ জাকির ভয়ে , আতংক বিষিন্নত হয়ে পরে। জাকির কর্কট স্বরে বললো, আরে কে আছো সাহস থাকে তো বেড়িয়ে আসো। চারদিক নিশ্চুপ কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।জাকির আশপাশ দেখে।কোথাও কেউ নেই।জাকির এদিক ওদিক পায়চারি করতে থাকে। ল্যান্থলাইনে থেকে পুলিশ কে ফোন করবে মনস্থির করলো,ফোন টা কানের কাছে নিতেই,,জাকির এর পেছন থেকে কেউ একজন বিৎকট কন্ঠে বলে উঠলো, পুলিশ কে ফোন দেয়ার দরকার কি,আমরা আছিতো!

জাকির থম মেরে যায়। চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়।ফোনটা হাত থেকে পরে যায়।জাকিরের কপাল থেকে অঝরে ঘাম ঝরতে থাকে।মনে হচ্ছে চারদিকে কালো ছায়া নেমে এসেছে।
জাকির ধিরে ধিরে পেছন ফেরে।ঢেক গিলতে থাকে।

পেছন ঘুরেই দেখে কেউ একজন জোকারের মুখো,শ পরা।জাকির এর বুকের ভেতর ধুকবুকানি পরিস্কার শোনা যাচ্ছে।জাকির কাপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো, কে তুমি এখানে কি চাও? মুখোশধারী বিৎকট কন্ঠে বললো,জানা টা কি খুব জরুরী?বলেই হাতে পিস্তল নিয়ে জাকির এর দিকে এগোতে থাকে।জাকির এক কদম দু কদম, পেছনে স্বরে দরজা টা খুলে দেয়। হঠাৎ দেখতে পায় নিচতলা থেকে আর একজন মুখোশধারী উপরে উঠছে।জাকির কি করবে বুঝতে না পেরে উপরে দৌড়াতে থাকে।সিড়ি বেয়ে দ্রুত পায়ে উপরে উঠে। জাকির হাপাচ্ছে। কোথায় যাবে বুঝতে পারছে না ‌‌। কিছুক্ষণ থম মেরে দাড়ায়‌। পেছনে মুখো,শধারী দুজন ধাওয়া করছে। জাকির ল্যাবের ছাঁদে চলে যায়।ছাদে এদিক সেদিক পরোক্ষ করতে যা দেখে , তাতে ডাঃ জাকির পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে যায়।একটা মেয়ে রেলিং এর উপর বসে বসে সিগা,রেট খাচ্ছে,এই মেয়েটি সেই মেয়ে টা যে, কয়েন চু,রি করে।জাকির থমকে যায়।পূরো শরীর ভয়ে কাঁপছে।মেয়েটি উল্টো দিকে ঘুরেই বিৎকট কন্ঠে বললো, পালাচ্ছিস কেন এখন? খুব সখ আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবি।তাইনা!!বোকা তুই বোকা,কারন তুই আমাদের খেলায় পা দিয়ে ফেলেছিস।আর যে এই খেলায় একবার ভুল করে পা দিয়ে ফেলেনা সে,আর বেঁচে ফিরতে পারে না।
জাকির কাঁপা গলায় বললো, আমার ভুল হয়ে গেছে ছেড়ে দাও আমায়।আমি কাউকে কিছু বলবো না।

মেয়েটি মুখোশধারী ছেলে দুটোর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, তোরা কি বলিস ছেড়ে দেবো?
প্রশ্ন ই ওঠেনা।কারন পথের কাটা রাখতে নেই।
মেয়েটা সিগারেট ফেলে,নিচে চলে যেতে যেতে বললো,কাজ শেষ করে চল আস!
জাকির ছেলে দুটোকে দ্বিতীয় বার অনুরোধ করলে, একজন মুখোশধারী গু,লি করে জাকির এর বুকে।জাকির লুটিয়ে পরে।জাকির কয়েকবার খিচুনি দেয়।ছেলে দুটোর হাতের দিকে খেয়াল করে।খুব পরিচিত মনে হচ্ছে।জাকির এর নিঃশ্বাস বেড়িয়ে যাচ্ছে।জাকির কিছু একটা র,ক্ত দিয়ে ফ্লোরে লিখে। ধিরে ধিরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
সকাল ৮ টা নাগাদ —

এলিজা পর্ব ৫৩+৫৪+৫৫

সবাই ঘুম থেকে উঠে যায়। এলিজা ঘুম থেকে উঠে অপূর্বর কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা দেখে‌। এরপর জয়ার ঘরে চলে যায়।তার শরীরের অবস্থা এখন কেমন সেটা জানতে। শ্রাবন তৎক্ষণাৎ অপূর্বর ঘরে উপস্থিত হয়। শ্রাবন অস্থিরতা ভাব নিয়ে অপূর্ব কে ঘুম থেকে জাগায়। অপূর্ব চোখ ডলতে ডলতে প্রশ্ন করলো কি হয়েছে,? শ্রাবন কাপা কন্ঠে বললো,কেউ ডাঃ জাকির কে খু,ন করেছে।আর তার ল্যাপটপ সহ,পেইনড্রাইপ সবকিছু গায়েব। অপূর্ব চট করে উঠে বসে। অপূর্বর চোখ গুলো ছানা,বরা হয়ে ওঠে। আতং,ক স্বরে বলল,কি বলছিস এসব কখন হলো? শ্রাবন বললো, গতকাল রাত ১১:৩০ এর দিকে।অবাক করা বিষয় হচ্ছে উনি ওনার র,ক্ত দিয়ে লিখে গেছেন,
অপূর্ব চোখ বড় করে বললো,কি লিখেছে।
The Gold…

এলিজা পর্ব ৫৮+৫৯