এলিজা পর্ব ৬৪+৬৫
Dayna
সূর্য বসা থেকে উঠে দাড়ায়। সিগারেট এর ধোয়া উপরের দিকে দিয়ে বললো, আমার অজানা।তুই এখানে এমন কিছু পেয়েছিস! যেটা থেকে আমাকে সন্দেহ হচ্ছে!বা আমি এই নোংরা হত্যা’কান্ডের পেছনে আছি?
অপূর্ব সূর্যর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। অপূর্বর সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব মনে মনে ভাবলো,সূর্য কে বিশ্বাস আর করা যাবে না।এখান থেকে চলে যাওয়ার আগে একবার হাশেম এর কাছে যেতে হবে।ওনার কাছে দ্বিতীয় কোন কয়েন আছে কিনা,যেটা থেকে আমি জানতে পারবো,যে আসলে সেই , কয়েনে কোন জায়গার নকশা আছে। সূর্য কিছুক্ষন থম মেরে থাকে। সিগারেট এর অর্ধেক টা ফেলে দেয়। অপূর্বর সামনে এসে বসে। অপূর্ব হাত দুটো,হাটুর উপর রেখে বসে আছে। সূর্য বলল, ওরা মাথায় আঘাত করেছে! লেগেছিল খুব? অপূর্ব ঠোঁট কুঁচকে হেসে বললো,তোর মিষ্টি অভিনয় বন্ধ কর।যে নিরীহ মানুষদের হ’ত্যা করতে পারে,সে অন্য কে ভালোবাসতে পারে না। সূর্য কিছু বললো না। অপূর্ব উঠে দাঁড়ায়। সূর্য বললো, কোথায় যাচ্ছিস? অপূর্ব কর্কট মেজাজে বললো, ভালো করে এই পাপি মহল টা একবার দেখতে।
দেখতে না খুঁজতে?
যেটা মনে করিস। বলেই অপূর্ব সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। সূর্য ওর চালাদের ডাকলো,বললো, অপূর্ব যা দেখতে চায়, যেভাবে এই জায়গাটা পর্যবেক্ষন করতে চায়,করুক।ওকে যেন কেউ বাধা না দেয়।তোরা ওর সাথে যা।চালা দুটো অপূর্বর সাথে যায়। অপূর্ব প্রথম ঘরটাতে যায়। S. ROOM D,EATH… । অপূর্ব দেখলো সেই মেয়েটা মৃত লা’শ,টির পাশে বসে বসে গল্পের বই পরছে।একা একা হাসছে। তার পাশেই সাগরের লা,শ। অপূর্ব বিষিন্নত হয়। অপূর্ব মেয়েটির মুখ দেখতে চাইলো। কিন্তু মেয়েটি উল্টো দিকে ঘুরে আছে। অপূর্ব চালাদের দিকে, দৃষ্টি স্থাপন করলে, ওরা বুঝতে পারে। অপূর্ব কি বলতে চেয়েছে। একজন চালা, অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাতে তালি দেয়।মেয়েটা ঘুরে তাকায়। অপূর্ব দেখলো মেয়েটিকে।চুল গুলো উষ্কখুস্ক। চোখের নিচে কালো দাগ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেয়েটি অপূর্বর দিকে ঘুরেই,হুসসসস, আঙুলের ইশারায় চুপ করতে বলে। মেয়েটি ফিসফিস করে বলল, আমার স্বামি ঘুমোচ্ছে।এখন এখান থেকে যাও। অপূর্বর ভেতরে কম্পন শুরু হয়। কি অদ্ভুত।একটা মৃত লা,শের সাথে দিন কাটাচ্ছে। অপূর্ব অন্যঘর গুলো দেখতে চায়। সবগুলো ঘর সাধারণ ঘরের মতই সাজানো। তেমন কিছু নেই।একটা ঘরের সামনে চীপস ডুপিয়ালির নাম লেখা। দরজা খোলা। অপূর্ব দ্রুত পায়ে ভেতরে ঠুকে দেখতে পায় , হিমেল,চীপস ডুপিয়ালি কিছু নিয়ে আলোচনা করছে। অপূর্ব কে দেখে দুজন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।চীপস অপূর্বর দিকে তেরে আসতে চাইলেই, হিমেল হাত বাড়িয়ে চীপস কে বাধা দেয়। অপূর্ব দাতে দাঁত শক্ত করে চেপে ,ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। অপূর্ব সমস্ত বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখে। কিন্তু কোথাও কিছু পায়নি।
অপূর্ব চিন্তায় পড়ে যায়। অপূর্ব কিছুক্ষণ পায়চারি করে নিচে নেমে যায়। সূর্য সেই ঘরের ভেতরে চেয়ারটাতে বসে আছে। অপূর্ব ওর সামনে গিয়ে বসে পরে। মনস্থির করলো হাশেমের সাথে কথা বলে ,কয়েনের ব্যাপারে জানতে হবে। তৎক্ষণাৎ একটা চালা দ্রুত পায়ে উপস্থিত হয়। সূর্য কে উদ্দেশ্য করে বললো,স্যার ,ঐ পাগল টা মনে হয় বেঁচে নেই। অপূর্ব,চট করে দাঁড়িয়ে যায়। সূর্য দ্রুত পায়ে হাশেমের ঘরে যায়।সাথে অপূর্ব । হাশেম মেজেতে লুটিয়ে পড়ে আছে। অপূর্ব কাঁপা হাতে হাশেম কে জড়িয়ে ধরে বললো,হাশেম ভাই,হাশেম ভাই,চোখ খুলেন, হাশেম ভাই,। অপূর্ব পাল্স পর্যবেক্ষন করে দেখলো হাশেম আর নেই। অপূর্ব ধপাস করে বসে পরে। বুকের ভেতর ধুকবুকানি পরিস্কার শোনা যাচ্ছে। এবার আমি কি করে, এই মৃত্যু খেলার শিকড় পর্যন্ত যাবো।
ভাবতেই অপূর্ব চট করে দাড়িয়ে যায়। ঘৃনার চোখে সূর্য কে বললো,তুই একটা খু,নি। বলেই সূর্য কে ধাক্কা দেয়। সূর্য দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়। অপূর্ব সূর্যর দিকে তেরে যায়। সূর্যর কলার চেপে ধরে, রাগান্বিত কন্ঠে বললো,তুই নিরীহ মানুষের প্রান নিয়েছিস, কিভাবে করতে পারলি। সূর্য রাগান্বিত চোখে অপূর্ব কে বললো,কলার ছেড়ে দে। অপূর্ব বললো,কি করবি তুই? সূর্য রেগে যায়।দুজনার মধ্যে লরিঝাপটা শুরু হয়। তখন হিমেল আর চীপস ডুপিয়ালি উপস্থিত হয়।, অপূর্ব আর সূর্য কে আলাদা করে । অপূর্ব সাপে’র মত, ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। হিমেল অপূর্ব কে ধরে বললো, পাগল হয়ে গেছিস! এরকম করছিস কেন! নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করছিস! শান্ত হ।
অপূর্ব ঘরটার বাহিরে বের হয়।রাত শেষ হওয়ার পর্যায়। অপূর্বর হঠাৎ করে, চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।পূরো বাড়িটা ঘুরছে। অপূর্বর সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব সামনে এগোতে শুরু করবে,ঠিক তখনই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।দ্রুত পায়ে দৌড়ে আসে, সূর্য, হিমেল,সহ চালারা। সূর্য অপূর্ব কে এরকম অবস্থায় দেখে বিষিন্নত হয়ে যায়। অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে বললো,এই ভাই ,কি হয়েছে,চোখ খোল অপূর্ব।, সূর্য অস্থির হয়ে যায়। সূর্য, হিমেল দু’জনে ধরে নিয়ে অপূর্ব কে একটা ঘরে সুইয়ে দেয়।
অপূর্ব চীপস কে রক্ত মাখা চোখ নিয়ে বললো,দাড়িয়ে আছিস কেন! দেখ ওর কি হয়েছে! আমার বন্ধুর যাতে কিছু না হয়। হিমেল সূর্য কে শান্ত হতে বললো।বললো, এরকম করছিস কেন!ও দূর্বল হয়ে আছে।সারারাত জেগে আছে এইজন্য। হিমেল চীপস কে,তার ভাষাতে বুঝিয়ে বললো। চীপস, অপূর্বর চেকাপ করে। অপূর্ব কে ইনজেকশন দেয়।তার ভাষাতে বললো,সে দুর্বল, অতিরিক্ত চিন্তায় এমন হয়ে গেছে।ঠিক হয়ে যাবে। হিমেল চীপস চলে যায়। সূর্য অপূর্বর পাশে বসে আছে। অপূর্ব ঘুমোচ্ছে। সূর্য অপূর্বর খাটের সাথে ঝুঁকে মাথা দিয়ে বসে আছে। সূর্য মনের অজান্তেই ঘুমিয়ে পরে।
সূর্যর আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে যায়। পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ আসছে। কিছুদূর থেকে নদীর ঢেউয়ের আওয়াজ আসছে। অপূর্বর ঘুম ভেঙে যায়। এদিক সেদিক পরোক্ষ করতেই দেখে সূর্য,বসে বসেই ঘুমোচ্ছে। অপূর্ব অভাক হয়। হিমেল থাকলো না অপূর্বর পাশে। কিন্তু সূর্য সমস্ত রাত অপূর্বর পাশে এভাবেই ছিল। অপূর্ব দৃষ্টি সরিনে নেয়।মনের এক কোনেতে সূর্যর জন্য ঘৃনা জমেছে। সূর্য সজাগ হয়। চোখ পরিষ্কার করে দেখে, অপূর্ব বসে আছে। সূর্য মৃদু হাসি দিয়ে বলল,কি অবস্থা এখন? অপূর্ব কিছু বলছে না।খাট থেকে নেমে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়।বাহির টা দেখে।কতটা শ্মুনশান জায়গা। নিস্তব্ধ পরিবেশ। অপূর্বর ধম বন্ধ হয়ে আসছে। এরা এখানে কিভাবে থাকে।অপূর্ব শান্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। সূর্য নিচে চলে যায়। তৎক্ষণাৎ দুজন চালা অপূর্বর কাছে আসে। টেবিলের উপর কিছু খাবার রাখে। অপূর্ব কর্কট মেজাজে বললো, এগুলো নিয়ে যাও। আমার খিদে নেই।
একজন বললো, স্যার দিতে বলেছে। অপূর্ব খাটের এক কোণে বসে পরে।ভাবছে এখান থেকে চলে যাবে। এখানে কিছুই পেলো না।আর হাশেম ও পরপারে চলে গেলো। কিভাবে এর শিকড়ে যাবো।তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় সূর্য।একটা চেয়ার টেনে বসে।বললো, এখানে আর কাজ নেই।চল ফিরে যাই।ভয় ছিল হাশেম কে নিয়ে।সে ভয় এখন আর নেই। অপূর্ব কিছু বললো না।
ঢাকা —-
অপূর্ব ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ফিরে।ভয় হচ্ছে জাহাঙ্গীর এর। গতকাল বাড়ি ফিরেনি। না জানি কত টা রাগ করে আছেন। মনোরা রান্না ঘরে কাজ করছে।সাথে পাখি। অপূর্ব পাখিকে ডাকে।পাখি দ্রুত পায়ে এসে বললো, ভাইয়া আপনি! গতকাল কোথায় ছিলেন!বড় চাচা ভিষন চিন্তায় ছিলেন।আপু গতকাল সারারাত জেগে জেগে কেঁদেছে। সকাল থেকে গম্ভীর মুখে বসে আছে। অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে বললো,কিহ এলিজা ফিরেছে।পাখি হ্যা বলে। অপূর্ব অমৃদু হাঁসি দেয়। এলিজা এসেছে শুনে অপূর্ব খুশিতে আপ্লুত হয়ে যায়। দৌড়ে ঘরে চলে যায়। এলিজা জানালার দিকে উল্টো দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছে। অপূর্ব নরম গলায় বললো,ম্যাডাম!
এলিজা পেছন ঘুরে অপূর্ব কে দেখেই জড়িয়ে ধরে হুহু করে কান্না শুরু করে। এলিজার স্পর্শে অপূর্বর সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, আমার জন্য কাদছো ভালো ই লাগছে। এলিজা কাপা কন্ঠে বললো,আমাকে কষ্ট দিতে আপনার ভালো লাগে। কোথায় ছিলেন কাল থেকে আপনার কোন খবর নেই।কত চিন্তা হচ্ছিল জানেন।যদি আপনার কিছু হয়ে যেত। অপূর্ব এলিজার দুই স্বিনাতে হাত দিয়ে বললো, আমার কিছু হয়ে গেলে কি হতো! শুনি। এলিজা জ্বল জ্বল চোখে বললো! আপনিহীন আমি নিঃস্ব। তৃপ্তিময় দুনিয়ায়,আপনাকে ছাড়া যে , সবকিছু তৃপ্তিহীন মনে হয়। অপূর্ব এলিজাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।এত ভালো বাসো আমাকে! এলিজা অপূর্ব কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অপূর্ব বলল, কখনো ছেড়ে যাবেন নাতো ম্যাডাম!
এলিজা শক্ত গলায় বললো,আমার শরীরে যতদিন রুহ’আছে ততদিন আমি আপনার হয়েই থাকতে চাই। অপূর্ব আবেগ প্রবন হয়,কাপা কন্ঠে বললো,আমাকে ছুঁয়ে কথা দাও। কোনদিন ছেড়ে যাবে না!
‘আপনাকে ছুয়ে কথা দিলাম।যদি আমার মন কখনো আপনাকে ভুল করেও ভুলে যেতে চায়, কিংবা কখনও আমার মনে আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার ভাবনা আসে,তবে সেই ভাবনা পূরন হওয়ার আগেই’ নিজের জীবন টাই কো’রবান করে দেবো।
এলিজা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বললো, কোথায় ছিলেন আপনি? অপূর্ব ভাবলো, গতকাল কোথায় ছিলাম এসব এলিজাকে বলা যাবে না। চিন্তা করবে। অপূর্ব শান্ত স্বরে বললো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কেস চলে আসে। তারজন্য দূরে যেতে হয়। এলিজা অপূর্বর জুতো খুলে দিতে দিতে বললো, গোসল করে নিন।আমি আপনার জন্য কিছু খাবার তৈরি করি।
এলিজা রান্না ঘরে আসে।পাখিকে বললো তুই দেখ আমি কিভাবে রান্না করি।তোর করতে হবে না।পাখি বুঝতে পারলো, এলিজা চায়না সে থাকতে- পাখি কোন কাজ করুক।পাখি পাশে সরে দাড়ায়। এলিজা মৃদু হেসে বললো, শ্রাবন কখন বেড়িয়েছে।পাখি বললো, দুলাভাই না থাকায় তাকে আজ সকালে যেতে হয়েছে।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় মমতাজ।হামি দিতে দিতে রান্না ঘরে আসলো।পাখি বললো, আম্মা আপনার কিছু দরকার? মমতাজ বললো, কড়া করে চা বানিয়ে দাও।পাখি চা করে মমতাজ কে দেয়।পাখি পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মমতাজ বলল,পাশে বোস। মমতাজ চা’য়ে এক চুমুক দিয়ে বললো,তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। ছোট করে কত কথা বলেছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।পাখি মমতাজ এর কাছে এগিয়ে বললো, আম্মা আপনি এগুলো কি বলছেন! আপনি যে আমার মায়ের মতন। আপনি আমায় বকবেন,যা খুশি বলবেন,আমি আপনার কথায় কখনো রাগ করি না। এলিজা রান্নাঘর থেকে মমতাজ আর পাখির কথোপকথন শুনতে পায়। এলিজা মৃদু হাসে। মনোরা এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, মিটিমিটি হাসছো যে!এলিজা হাতের কাজ করতে করতে বললো, আমার বোনের মুখে হাসি দেখলে,আমি আনন্দিত হই।ওর খুশি ই যে আমার সুখ।
মনোরা মৃদু হাসে। অপূর্ব গোসল করে খাটের এক কোণে ঝিম মেরে বসে আছে। সূর্য আর ওর কর্মকাণ্ড অপূর্ব কে বার বার ভাবাচ্ছে।প্রানের বদলে প্রান নেয়াটাই কি সমাধান!কি করে পারলো সূর্য এমন করতে। আমার বন্ধু সে কিনা একজন…
অপূর্ব এসব ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে আসে। জাহাঙ্গীর বৈঠকখানায় বসে বসে নিউজ পেপার পড়ছে। অপূর্ব কে দেখে নিজের কাছে বসতে বলে। অপূর্ব বসে। জাহাঙ্গীর মৃদু হেসে বললো, আজকাল দেখছি ঘরেই বেশি থাকা হয়! কিছু হয়েছে?
অপূর্ব না সূচক মাথা নাড়ে। জাহাঙ্গীর এর কথা বলার ভঙ্গিমা, আচরণ আগের মতন নেই।জয়া চলে যাওয়ার পর থেকে জাহাঙ্গীর নিশ্চুপ হয়ে গেছে।
বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। শীতল হাওয়া বইছে।শীত এখন অনেক টাই কম। মমতাজ পান চিপোচ্ছে। একজন প্রতিবেশী এসেছে তার সাথে বিভিন্ন কথায় মশগুল। অর্পা পাখি ছাঁদে বসে চাঁদ দেখছে। এলিজা নিজ ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।বাড়ির পেছন দিকের ঝোপঝাড় টা দেখা যাচ্ছে ।ধমকা হাওয়া তে গাছের পাতা গুলো এদিক সেদিক নড়ছে। এলিজা অপূর্বর অপেক্ষায়। বিকেলে বের হয়েছে বললো, সূর্যর সাথে দরকার আছে। অপূর্ব কে ছাড়া এলিজা একাকিত্ব অনুভব করে। এলিজা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশের তারা গুলো দেখছে। কপালের কাছে ছোট চুল গুলো একদিকে উড়ছে।
সন্ধ্যার তারা গুলো ঘর পাল্টাচ্ছে। এলিজা অপলকে দেখছে।একা একা বির বির করে বলছে,হাজারো তারাদের মধ্যে একটা আমার বাবা,একটা মা,একটা আমার ভাই। আমাদের একা করে দিয়ে এভাবে চলে গেলে।খুব মনে পরে তোমাদের।এলিজার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে,, তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে এসে অপূর্ব জড়িয়ে ধরে। এলিজা হকচকিয়ে উঠে।দ্রুত হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে। অপূর্ব খেয়াল করলো এলিজা কাঁদছে। অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে বললো,কি হয়েছে কাঁদছো কেন! কিছু হয়েছে! এলিজা মৃদু হেসে বললো, কোথায় কাঁদছি।চোখে কিছু পরেছে। অপূর্ব বললো, আমার সাথে মিথ্যা বলে কি হবে!
বলো কি হয়েছে!আমি তোমার মন ভালো করার চেষ্টা করবো! আর সেটাও না পারলে, তোমার মন খারাপের সঙ্গীই হলাম। এলিজা জ্বল জ্বল চোখে বললো,মা বাবার কথা খুব মনে পরছিলো। অপূর্ব এলিজা-কে শক্ত করে ধরে বললো, কখনো তোমার মা বাবার কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি।কিভাবে মারা যান তারা? এলিজা ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে বললো, স্বার্থপর ছিলো আমার বাবা মা! অপূর্ব অবাক হয়। এলিজা কে ছেড়ে দিয়ে এলিজার পাশে দাড়ায়।এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,কি করেছে তারা। এলিজা অপূর্বর ঘা ঘেষে হাতের উপর মাথা রেখে বললো, আমাকে ছেড়ে তারা অতি তাড়াতাড়ি চলে গেছে। অপূর্ব সান্ত স্বরে বলল, দুনিয়াতে যার যতদিন আয়ু থাকবে সে’তো ততদিন ই বাঁচবে।তাই বলে এভাবে বলতে হয়। তাদের জন্য দোয়া করবে। এলিজা কিছু বললো না।
রাত ১০ টা নাগাদ
পাখি বৈঠকখানায় বসে আছে। শ্রাবন কখন ফিরবে।পাখির শরীর ভালো নয়। অনুভব করলো,শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে। হঠাৎ হঠাৎ চোঁখের সামনে সব ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে। কানের ভেতর এক প্রকার শব্দ হচ্ছে।পাখি রান্না ঘরে গিয়ে পানি খায়।শরীর ঝিমঝিম করছে। শান্ত হয়ে কিছুক্ষণ বসে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় শ্রাবন। শ্রাবন পাখির কাছে এসেই পাখিকে জড়িয়ে ধরে। মৃদু হাসি দিয়ে বললো, পিচ্চি বেয়ান, আমার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বুঝি।পাখি বলল,আর কার জন্য অপেক্ষা করবো! পাখি শ্রাবন কে বললো,হাত মুখ ধুয়ে আসুন।আমি আপনাকে খাবার দিচ্ছি। শ্রাবন পাখির শরীর ঘেঁষে বসে বললো,আজকে তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।পাখি মৃদু হাসে। শ্রাবন সিড়ি বেয়ে উঠতেই,থম মেরে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে বললো , তোমাকে আমি বিশেষ একটা জিনিস দেখাবো।
পাখি ভ্রু কুঁচকে দেয়।
শ্রাবন খেতে বসলে খাবার না খেয়ে বসে আছে।পাখি ভেজা কন্ঠে বললো, খাচ্ছেন না কেন? শ্রাবন বললো,খাইয়ে না দিলে খাচ্ছি না।পাখি আওয়াজ করে হেসে বললো, আপনি না সত্যি ই পাগল।
তোমার মায়াতে পাগল”বললো শ্রাবন।
শ্রাবন খেতে খেতে বললো,বাকিরা কোথায়?
যে যার ঘরে।
তারা খেয়েছে?
হুম।
খাওয়া শেষে শ্রাবন বললো,এবার চলো।
কোথায়?
চলোই না! তার আগে চোখ বন্ধ করো!
পাখি ইতস্তত বোধ করে। শ্রাবন পাখির চোখ ধরে বাহিরে নিয়ে যায়।কিছুটা দূরে নিয়ে যায়।পাখি বললো, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
শ্রাবন হাত সরিয়ে দেয়।পাখি দেখলো চারদিক অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই।বাড়ির ভেতর ছোট বাগানের গাছ গুলো। আশেপাশে গাছ ,ছাড়া আর কিছুই নেই।পাখি অন্ধকার দেখে শ্রাবন কে আঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে। শ্রাবন খিল খিল করে হেসে বললো, তোমার চোখে ভুতের ভয় দেখলে আমার বেশ ভালো ই লাগে।পাখি রাগান্বিত হয়ে বললো, আপনি সবসময় আমার সাথে মজা করেন।
শ্রাবন হেসে বললো,পিচ্চি বেয়ান এর সাথেই তো মজা করতে হয়।আর কার সাথে করবো!পাখি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। শ্রাবন পরোখ করে দেখলো পাখি চোখ বুঝে আছে। শ্রাবন শান্ত গলায় বললো,চোখ খুলো আমি আছিতো।পাখি নরম গলায় বললো, ভুত আছে, অন্ধকার দেখলেই আমার ভয় হয়। শ্রাবন পাখিকে রাগানোর জন্য বললো, আমার তো আমার পিচ্চি বেয়ান কে দেখলেই ভয় লাগে।পাখি এটা শুনে শ্রাবন কে আদুরে আচে,মার শুরু করে। শ্রাবন পাখিকে রেখে ঘরের দিক দৌড় দিয়ে বললো,পারলে ছোঁয় আমাকে।পাখি শ্রাবনের পেছনে ছুটতে থাকে। শ্রাবন সিড়ি বেয়ে উপরে যেতেই,পাখি ধপাস করে মেঝেতে লুটিয়ে পরে। শ্রাবন হতভম্ব হয়ে যায়।মুখের রং নিমিষেই পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে যায়। শ্রাবন কাঁপা হাতে পাখিকে জড়িয়ে ধরে বললো,এই পাখি ,পাখি, হঠাৎ কি হলো।পাখি ,মজা করছো আমার সাথে।আমি কিন্তু বুঝতে পারছি।এই পাখি চোখ খুলো। শ্রাবন ভাবলো পাখি মজা করছে। শ্রাবন মৃদু হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,ঐ যে ভুতের সব রাজারা দল বেঁধে আসছে।চললাম আমি তোমায় রেখে।
শ্রাবন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।ভাবলো পাখি হয়তো পেছন থেকে এসে হয়তো জড়িয়ে ধরবে। শ্রাবন থমকে দাঁড়ায়।পাখি কিছু বলছে না। শ্রাবন পেছন ঘুরে পাখির দিকে দেখে পাখি বলে এক চিৎকার। শ্রাবন মেঝেতে লুটিয়ে পরে। শ্রাবন দেখলো পাখির কান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। শ্রাবন এর চিৎকার এর আওয়াজ শুনে বাড়ির সকলে বেড়িয়ে আসে। শ্রাবন পাখিকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কান্না শুরু করে।
এলিজা পর্ব ৬২+৬৩
ভাঙ্গা গলায় বললো,এই পাখি চোখ খুলো পাখি।আর ভয় দেখাবো না।কান ধরেছি।আর ভয় দেখাবো না উঠো। দ্রুত পায়ে সবাই ঘর থেকে থেকে চলে আসে। এলিজা লুটিয়ে পরে।সবাই আতংকিত হয়ে পরে। অপূর্ব পাল্স পর্যবেক্ষন করে বললো,দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
শ্রাবন পাখিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। অপূর্ব কে বললো, জলদি এ্যাম্বুলেন্স কে ফোন কর।
পাখি ধিরে ধিরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। শ্রাবনের চোখের পানিতে পাখির কপাল ভিজে যাচ্ছে……