এলিজা পর্ব ৬৬+৬৭
Dayna
ঢাকা পিজি হাসপাতালে সবাই উপস্থিত হয়। এলিজা বসে বসে ফোপাচ্ছে। অপূর্ব দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মমতাজ অর্পা সিটে বসে আছে। শ্রাবন সিটের পাশে মেঝেতে লুটিয়ে বসে আছে। শ্রাবন ভেঙে পরেছে।ভেতরটা ভেঙে চুরে যাচ্ছে। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো ছিরে যাচ্ছে। চোখ গুলো রক্ত মাখা লাল হয়ে গেছে। অপূর্ব শ্রাবনের দিকে পরোখ করছে। শ্রাবনের কাছে যায়। শ্রাবনের কাঁদে শান্তনা মূলক হাত দিয়ে বললো,ডাক্তার দেখছে তো! এভাবে ভেঙে পরছিস কেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।শ্রাবন কিছু বলছে না। শুধু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। মমতাজ কাঁদছে,পাখির জন্য। দ্বিতীয়ত তার ছেলের জন্য। মমতাজ দেখছে শ্রাবন কতটা ভেঙে পরেছে।চোখ মুখ নিমিষেই বিষিন্নত হয়ে গেছে। নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে শ্রাবন।যদি পাখির কিছু হয়ে যায় তবে, শ্রাবন যে…
মমতাজ মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে যাতে পাখি সুস্থ হয়ে যায়। অপূর্ব এলিজার কাছে বসে। অপূর্ব এলিজার মাথা পাঁজরের উপর রাখে। অপূর্ব বলল, এভাবে ভেঙে পরলে কি করে হবে।পাখির কিছু হবে না। প্রার্থনা করো সব ঠিক হয়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ পাখির চেকাপ করে ডাক্তার বের হয়। শ্রাবন হকচকিয়ে উঠে দাড়ায়।ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে পাখির? ডাক্তার দৃষ্টি সংযত করে বললো, এখন পর্যন্ত ঠিক আছে। প্রার্থনা করুন যাতে ঠিক হয়ে যায়। ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি জ্ঞান ফিরলে দেখা করতে পারবেন।এই বলে ডাক্তার চলে যায়। শ্রাবন এক কদম -দু কদম করে,ধমকে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।গোটা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।কালো ধোঁয়া আমাকে গ্রা,স করার জন্য ধেয়ে আসছে।আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি, আমার জীবনের শেষ হাঁসি আমি আজকেই হেঁসে নিয়েছি।বুকের ভেতর কেন জানি কুহ ডাকছে। শরীরের সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে।এমন অনুভূতি কেন হচ্ছে। শ্রাবন এসব ভাবতে ভাবতে নিজের চুল গুলো নিজেই টানছে। অপূর্ব হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখ মুছে।পাখিকে নিজের ছোট বোনের মত স্নেহ করতো। মমতাজ দূরে সরে যায়। শ্রাবনের এরকম নিস্তেজ হওয়া সে সহ্য করতে পারছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত বেড়ে চলেছে। হাসপাতালের মানুষজন চারদিকে ছোটাছুটি করছে।কেউ নতুন মানুষের আগমন নিয়ে ব্যাস্ত,কেউ নিজের মানুষ হারানোর বেঁদনায় কাতর।কেউ কেউ তার কাছের মানুষ হারানোর ভয়ে চাপসে যাচ্ছে।
শ্রাবন হতাশায় এক কোনে বসে আছে।ভাবছে, কিছুক্ষণ আগেও তো পাখি কত সুন্দর হাসছিল, কথা বলছিলো,আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো,খাইয়ে দিয়েছিলো। হঠাৎ করে কি হলো পাখির। শ্রাবন প্রার্থনা করতে থাকে সৃষ্টিকর্তার কাছে,বিরবির করে বলছে,পাখির অসুস্থতা আমাকে দিয়ে দাও। আমার আয়ু পাখিকে দিয়ে দাও।পাখিকে সুস্থ করে দাও।
রাত বাড়ছে। অপূর্ব ভাবলো এভাবে সবাই হতভম্ব হয়ে বসে থাকলে সবাই নিস্তেজ হয়ে যাবে।বাড়িতে বাবা একা।তাই অপূর্ব মমতাজ, এলিজা-কে বললো বাড়ি ফিরে যেতে। এলিজা রাজি হলো না। অপূর্ব জোর করলো। এলিজা যেতে রাজি নয়। অপূর্ব কিছুক্ষণ বোঝানোর পর এলিজা যেতে রাজি হয়। অপূর্ব মমতাজ এলিজা-কে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
রাত ১১ টা নাগাদ।
শ্রাবন সিটের উপর বসে আছে।দু হাতের উপর মুখের ভর দিয়ে অঝরে কাঁদছে। শব্দহীন কান্না।নিরব কান্না’শ্রাবনের বুকের ভেতর টা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে।চোখ গুলো রক্ত মাখা হয়ে আছে। অপূর্ব পাশে বসে শ্রাবন কে পরোখ করছে। শ্রাবন উঠে দাড়ায়।আইসিইউর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গ্লাস দিয়ে দেখছে।পাখি নিস্তেজ হয়ে সুয়ে আছে। ফিসফিস করে বলছে,পাখিহহ..
তৎক্ষণাৎ নার্স বেরিয়ে আসে। শ্রাবন হাতের উল্টো দিক চোখের পানি মুছে।নার্সকে দেখে অপূর্ব কাছে আসে।নার্স বললো,আপনারা দেখা করতে পারেন।তবে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। শ্রাবন নার্স এর কথা শেষ হওয়ার আগেই ভেতরে চলে যায়।পাখি ডান দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। শ্রাবন ধির পায়ে এগোয়।পাখির সামনে যায়।পাখি শ্রাবনের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে। শ্রাবন টুলের উপর বসে।পাখি জ্বল জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে। শ্রাবন পাখির হাত আলতো করে ধরে,ভাঙা গলায় বললো, এভাবে কেন আমায় কষ্ট দিচ্ছ!কেন আমার ভেতরটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছ! বেঁচে থাকতেও যে মরে যাচ্ছি।পাখি চোখে পানি নিয়ে মৃদু হেসে ধীরে ধীরে বললো,আমি মরে যাবো সেই ভেবে আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না,যতটা কষ্ট আপনার চোখে পানি দেখে হচ্ছে ”শ্রাবন পাখির হাতের উল্টো দিকে চুমু খায়।পাখি বললো, আপনি এভাবে ভেঙে পরবেন না।আমি যতটুকু সুস্থ হবো’আপনার এরকম অবস্থা দেখে আরো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি। শ্রাবন পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ভরসা স্বরে বলল,তুমি ঠিক হয়ে যাবে। কিছু হবে না তোমার। অপূর্ব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে। অপূর্ব চোখের পানি মুছে। পাখির যদি কিছু হয়ে যায় তবে যে শ্রাবন.. না ওর যাতে কিছু না হয়। অপূর্ব এসব ভাবতেই,নার্স হাজির হয়। শ্রাবন কে বললো। দয়াকরে এখন চলে যান। শ্রাবন পাখির কপালে চুমু খায়।হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে চলে যায়।
রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। হাসপাতাল নিরব হয়ে যাচ্ছে।
”’এলিজা ঘরের এক কোনেতে বসে আছে । পাখিই একমাত্র তার রক্তের বন্ধন।পাখির যদি কিছু হয়ে যায় তবে,এই দুনিয়াতে আর রক্তের বলতে কেউ থাকবে না। আমার বোন, আমার ছোট্ট পাখি,কি করে থাকবো আমার বোনকে ছাড়া। এলিজা ফোপাতে থাকে।অর্পা এলিজার ঘরে আসে।অর্পা ঘুমোয়নি।অর্পা এলিজার কাছে আসে।জ্বল জ্বল চোখে বললো,বউমনি আমার ও পাখির জন্য ভিষন কষ্ট হচ্ছে।আমি নামাজ পরে দোয়া করেছি।দেখবে পাখি ঠিক হয়ে যাবে।এলিজা উঠে এসে বারান্দায় দাড়ায়।শাড়ির আঁচল টা ধমকা হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।অর্পা পেছনে এসে দাড়ায়। এলিজা জ্বলজ্বল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,এই স্বার্থপর দুনিয়াতে কেন পাঠালে।যেখানে প্রিয় মানুষ গুলো মায়াজাল থেকে ছেড়ে চলে যায়।কতটা যে কষ্ট তাদের হারানো।
অর্পা অপলকে দেখছে।ভাবছে, এলিজার কথা বলার ভঙ্গিমায় বোঝা যাচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সাথে অভিমানে কথা বলছে।অর্পা কিছু বললো না।
”পিজি হাসপাতাল”
”’অপূর্ব শ্রাবন কে শান্তনা দেয়। শ্রাবন কোন কথা বলছে না। অপূর্ব উঠে যায়।এদিক সেদিক হাঁটছে।ঘুরে ঘুরে দেখছে চারপাশে কত মানুষ নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। হাসপাতালে না আসলে বোঝা যায়না সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার কত বড় উপহার। অপূর্ব এক গলি থেকে আরেক গলিতে যাচ্ছে।কোন কিছু ভালো লাগছে না।পাখি অসুস্থ। শ্রাবন হতাশ।তার সাথে পূরো পরিবার হতাশ। এত এত চিন্তার মধ্যে ও সূর্যর চিন্তা গ্রা,স করে। অপূর্ব পায়চারি করতে থাকে। হঠাৎ অপূর্ব ডান দিকে পরোখ করে, অপূর্ব চোখ গুলো বড় বড় করে ফেলে, অপূর্ব দেখলো রেখা একজন নার্সের সাথে কথা বলছে।এই রেখা এখানে কি করছে। হাসপাতালে আসছে তবুও কাপড় পরিধান ঠিক নয়।অসহ্য’
অপূর্ব দূর থেকে খেয়াল করলো,রেখা আঙুল দেখিয়ে কথা বলছে তার সামনে থাকা নার্সের সাথে। অপূর্বর খটকা লাগলো কি বলছে। অপূর্ব সামনে এগোতে থাকে। অপূর্ব ধির পায়ে এগোতে থাকলে রেখা ততক্ষনে কথা শেষ করে অনেক দূর চলে যায়। অপূর্ব চেষ্টা করলো না রেখাকে ধরার। অপূর্ব আইসিইউর সামনে চলে আসে।এসে সিটে বসে কিন্তু আশেপাশে শ্রাবন নেই। অপূর্ব এদিক ওদিক পরোখ করে দেখলো।ভাবলো হয়তো আশেপাশে আছে। অপূর্ব বেশ কিছুক্ষণ বসে আছে। শ্রাবন আসছে না। অপূর্ব দ্রুত পায়ে উঠে দাড়ায়। আশেপাশে খুঁজতে থাকে কোথাও নেই শ্রাবন। অপূর্ব চিন্তায় পড়ে যায়,পাখিকে এখানে রেখে কোথায় যাবে। অপূর্ব দেখলো একটা আইসিইউ থেকে একজন নার্স বের হচ্ছে।তাকে জিজ্ঞেস করলো, সিস্টার! এখানে একজন লোক ছিলো দেখতে, লম্বাটে,ফর্সা,কালো জ্যাকেট পরিধান করা সে কোথায়?
নার্স টি মনে করে বললো,ওনাকে একজন লোকের সাথে কথা বলতে বলতে বাহিরে যেতে দেখেছি।
অপূর্ব চোখ বড় করে ফেলে।ভ্রু কুঁচকে আতংক স্বরে বলল,লোকটি দেখতে কেমন ছিলো?
সিস্টার বললো, ইমাম-দের মত।
অপূর্ব বিষিন্নত হয়ে যায়।কার সাথে কোথায় গেলো।পাখিকে এভাবে রেখে কোথায় যাবে! অপূর্ব দ্রুত পায়ে বাহিরে বের হয়।
অর্পা ঘুমিয়ে পরে।সাথে মমতাজ। জাহাঙ্গীর আজকাল ঘর থেকে কম বের হয়।জয়া চলে যাওয়ার পর জাহাঙ্গীরের তেজ ও চলে যায়।কারো সাথে রাগ দেখান না। উচ্চ স্বরে কথাও বলে না।রাত অনেক জাহাঙ্গীর ঘুমোয়নি।ঘরের ভেতর পায়চারি করছে। পায়চারি করতে করতে লম্বা টে ভারী দেহ নিয়ে বসে পরে চেয়ারে।পরনে রাতের পোশাক।একটা সিগার ধরায়। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় মনোরা।হাতে চা নিয়ে।এত রাতে চা খাওয়া টা মনোরার অন্য রকম লাগলো। আজকাল জাহাঙ্গীর নিশ্চুপ থাকলেও,তার মনের ভেতর হাজারো ভাবনা ঘুরে।এসব ভাবনা ভেবেই উপেক্ষা করে মনোরা বললো,বড় দাদা আপনার চা। জাহাঙ্গীর হাত ইশারা করে মনোরা কে চলে যেতে বলে।মনোরা চলে যায় ।মনোরা গিয়ে সুয়ে পরে।
এলিজা বিছানায় সুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।পাখির চিন্তায় ঘুম আসছে না। অপূর্ব যে বালিশে সোয়,সেই বালিশ টা বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখেছে। অপূর্বর শরীরের গন্ধ আসছে বালিশ থেকে,তা শুঁকছে। এলিজা একপ্রকার শান্তি অনুভব করলো। অপূর্বর কথা ভাবতেই মনের অজান্তেই ঠোঁটের এক কোনে হাঁসি চলে আসে। এলিজা চোখ বুঝবে ঠিক তখনই শুনতে পায়,কারো পায়ের আওয়াজ। অচেনা কারো উপস্থিতি।রাত এখন গভীর। এলিজা কান খাড়া করে শুনতে পায় কেউ হেটে আসছে। এলিজা উঠে বসে।তার পায়ের আওয়াজ,এলিজার ঘরের সামনে এসেই থেমে যায়।এত রাতে কে আসবে। এলিজা চিন্তিত হয়।ঘরের ভেতরে রা,ম দা খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও রা,মদা পেলো না।কারন অপূর্ব সব ঘর থেকে সরিয়ে স্টোর ঘরে রাখে। এলিজা দরজার সামনে আসে।মনে হচ্ছে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে লোকটি। এলিজা দরজা খোলার মনস্থির করলো।তার আগে এলিজা কর্কট স্বরে বলল,কে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে? কি চাই?
ওমনি পায়ের আওয়াজ দূরে চলে যায়। অর্থাৎ,দরজার সামনে থেকে সরে গিয়েছে লোকটি।এলিজা অবাক হয় কে ছিলো। এলিজা দরজা খুলে দেয়।বাহিরে বের হয়। এদিক সেদিক পরোক্ষ করে। কোথায় কেউ নেই। এলিজা সামনে এগোয়। কোথাও কেউ নেই তবে কি মনের ভুল। এলিজা ঘরের উদ্দেশ্যে আসতেই , হঠাৎ করে কালো রঙের মুখোশ পরা একজন লোক এলিজার সামনে দাড়ায়। এলিজা থমকে যায়। মুখোশধারী লোকটির হাতে রামদা। এলিজা কর্কট মেজাজে বললো,কে তুই? আর আমার পেছনে কেন পরে আছিস?কে পাঠিয়েছে তোকে? লোকটি অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘার এদিক সেদিক করে।কোন কথার উত্তর দিলো না।লোকটি ধিরে ধিরে এলিজার দিকে এগোয়। এলিজা পেছনে সরে যায়। এলিজা দেয়াল ঘেঁষে যেতেই হাতের কাছে পায়, ফুলদানি। এলিজা ফুলদানি টা হাতে নিয়ে অচেনা লোকটির গায়ে ছুড়ে মারে।লোকটি দৃষ্টি অন্য দিকে দর্পন হয়। এলিজা দৌড়ে ঘরের দিকে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়। এলিজা পেছন ঘুরে পরোখ করতেই দেখে,কেউ দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা টে শরীর।ভারী দেহ,খানি নিয়ে কড়া চোখে তাকিয়ে আছে।সে আর কেউ নয় জাহাঙ্গীর। এলিজা ভ্রু কুঁচকে দেয়। এলিজা ভাঙা গলায় বললো, তারমানে আপনি বাবা..। এলিজা ধিরে ধিরে উঠে দাড়ায়। জাহাঙ্গীর কিছু বলছে না।এলিজা রক্ত মাখা চোখে বললো , আপনি আমাকে মারতে চান? জাহাঙ্গীর সাপের মত ফোঁস ফোস করছে।
মুখোশধারী লোকটি সামনে এগোয়, এলিজা কে ধরার জন্য, তৎক্ষণাৎ জাহাঙ্গীর মুখোশধারী লোকটির উপর রা,মদা দিয়ে আঘাত করে।লোকটির হাতের উপর আঘাত লাগে। জাহাঙ্গীর কর্কট মেজাজে বললো, আমার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছিস! এত বড় সাহস! শেষ করে দেবো আজ তোকে! মুখোশধারী লোকটি উল্টো দিকে দৌড়ে চলে যায়। এলিজা জাহাঙ্গীর এর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়।
পিজি হাসপাতাল—
অপূর্ব বাহিরে বের হয়। হাসপাতালের সামনের দিক থেকে,আনাচে কানাচে সব জায়গায় খুজে দেখে। কোথাও শ্রাবন নেই। অপূর্ব ক্লান্ত হয়ে যায়।ভাবলো যেখানেই আছে,হয়তো ফিরে আসবে।পাখিকে এভাবে রেখে কোথায় যাবে। অপূর্ব ভেতরে আসতেই চোখ পরে, হাসপাতালের পাশে ছোট মসজিদ এর সামনে জুতো রাখার দিকে।তাও দু জোড়া জুতো। অপূর্ব পরিষ্কার করে দেখার চেষ্টা করলে দেখে একজোড়া শ্রাবণের জুতো। অপূর্ব মসজিদ এর কাছে এগোয়।এত রাতে কেউ তো মসজিদে থাকবে না। এখন গভীর রাত। অপূর্ব ভেতরে উঁকি মেরে দেখতেই দেখে শ্রাবণ নামাজ পরছে। শ্রাবনের সাথে একজন ইমাম সাহেব।
অপূর্ব বুঝতে পেরেছে হয়তো এনার সাথেই শ্রাবন বাহিরে আসে। অপূর্ব মসজিদ এর মেঝেতে লুটিয়ে বসে। ক্লান্ত হয়ে আছে অপূর্ব। অপূর্ব শান্তির একটা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে।ভাবলো, শ্রাবন পাখিকে রেখে কোথাও চলে যাবে এটা কখনো হতে পারে না। শ্রাবন পাখির জন্য ই এত রাতে নামাজ পরছে ।
এলিজা পর্ব ৬৪+৬৫
শ্রাবন নামাজ পরছে।তার সাথে কাঁদছে।পাশে থাকা ইমাম সাহেব বুঝতে পারছে। ইমাম সাহেব,বির বির করে বলছে, এরকম স্বামীর ভালবাসা থেকে তার স্ত্রী কে দূরে সরিয়ে নিও না। শ্রাবন নামাজ শেষ করে বাহিরে আসে। দরজার সামনে দেখতে পায়,অপূর্ব বসে আছে। শ্রাবন বললো,ভাই তুই এখানে? অপূর্ব উঠে দাড়ায়।বললো,তোকে না পেয়ে আমি চিন্তায় পড়ে যাই। কোথায় না কোথায় চলে গেছিস। চারদিকে যা হচ্ছে । শ্রাবন মৃদু হেসে বললো, ভালো লাগছিল না কিছু।তখন এখানের ইমাম কে ভেতরে দেখি।ওনার মেয়েও অসুস্থ বললো,উনি তাহাজ্জুদ পরতেই আসছিলেন।তাই আমিও চলে আসলাম।পাখির জন্য দোয়া করলাম। অপূর্ব শ্রাবনের কাঁদে হাত দিয়ে বললো,তোর মত স্বামি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।যে কিনা তার স্ত্রীর অসুস্থতায়,নামাজে বসে কাঁদে।