এলিজা পর্ব ৭৫+৭৬
Dayna
অপূর্ব নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।বুকের ভেতর ধুকবুকানি টা বেরে চলেছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।চোখে রক্ত উঠে কার্নিস লাল হয়ে গেছে।কথা বলার মত শক্তি নেই।
সূর্য চুপ করে বসে আছে।একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে টানতে শুরু করে।
অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো, আর কিছু অজানা আছে?
সূর্য ঠোঁট কুঁচকে হেসে বললো, এবার আসি ডাঃ জাকির এর কাছে।যখন আমি তোর কাছে বাবররাজ্যর নকশার কয়েন দেখি,তখন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।তুই ওটা নিয়ে ফরেন্সিক ল্যাবে যাস।তখন আমি কয়েনের ব্যাপার টা এলিজাকে বলি। এবং তোকে কয়েনের কথা ভুলিয়ে রাখার জন্য সেদিন তোর বাড়িতে গিয়েছিলাম। এবং সেই রাতে ডাঃ জাকির,ল্যান্থলাইনে তোকে ফোন দেয়। সৌভাগ্য বসত ফোন টা এলিজা রিসিভ করে।তখন জাকির বলেছিলো যে কয়েনটা চুরি করেছে তার খোজ পেয়েছি। মৃত রিয়ার এ্যাপ্রন পরে শ্যামলি ই তোকে বোকা বানিয়েছিলো। শ্যামলি কন্ঠস্বর পরিবর্তন করতে পারে। এবং জাকির কে শ্যামলি এবং চীপস,হিমেল মিলে হ,ত্যা করেছিলো।
এবং জাকির যে ইংলিশে লিখে গিয়েছিলো’The Gold ,এটার মানে ছিলো এই বাবররাজ্য।কারন বাবররাজ্যর অপর নাম,সোনার-নগর।জানি না এমন নাম কেন।হয়তো,বাবর এবং তার পিতৃপুরুষের কোন ঐতিহ্য থেকে নামটি দেয়া।
অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো, তারমানে তুই আর শ্যামলী আগে থেকেই দুজন দুজনকে চিন্তিস তবে,না চেনার অভিনয় কেন করেছিস?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
খুব সোজা।কারন আমি চাইনি তোর সামনে কোন ভাবে সন্দেহ জনক কিছু হোক।
অপূর্ব বললো, ঘরের ভেতর যে,ছবি টাঙানো,সে কে?
সূর্য বললো, রঞ্জনার ফুপি।যিনি অনেক বড় একজন নৃত্য শিল্পী ছিলো।আমরা দেখিনি তাকে।কম বয়সেই মারা যায়। আমি যে ঘরটাতে থাকি সেখানেও তার ই ছবি।
আর কিছু অজানা আছে?
সূর্য সিগারেট এর ধোঁয়া উপরের দিকে ছেড়ে বললো,এবার আসি এনজিওর ব্যাপারে।এলিজা কোন এনজিও তে কাজ করতো না।ওর মাঝে মধ্যে হা’র্ট পাচা’র করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে হতো।সেখানে এলিজা কে দরকার পরতো।তোর যাতে সন্দেহ না হয় সেইজন্য এই এনজিওর নাটক।
কাঠের পুতুল এর রহস্য কি ছিলো?
একবার পাখি আলি বাড়িতে বসে কাঠের পুতুল দেখে ভয়।যে ভয়ের প্রভাব ছিলো দীর্ঘদিন। এলিজার তোর বাবার প্রতি সেদিন রাগ হয়। জাহাঙ্গীর এর জন্য ই আজকে এতকিছু।এলিজা পাখিকে ভিষন ভালো বাসে।তাই অর্পা কে ভয় দেখানোর জন্য এরকম টি করেছিলো। চেয়েছিল জাহাঙ্গীর অর্পার চোখে ভয় দেখুক।
চীপস ছদ্মবেশে শ্রাবনের বিয়েতে কেন এসেছিল?
তখন একটা ডিল হওয়ার কথা ছিলো।সেই খবর ই চীপস দিতে এসেছিলো।
কোলাহল এর ভিতর এলিজার সাথে বলে চীপস। এবং সেই কথা সেদিন বায়েজিদ শুনে ফেলে। বায়েজিদ সেদিন অবাক হয়।ভিষন ভয় ও পায়। তারপর দিন বায়েজিদ রাত বসে কাঠ কাটছিলো। বায়েজিদ কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। এরপর এলিজা বাঁয়েজিদ কে জিজ্ঞেস করে।সেদিন বায়েজিদ কিছু বলার আগেই তুই এলিজার কাছে যাস।তারপর দিন বায়েজিদ কে জিজ্ঞেস করলে, বায়েজিদ কিছু বলার আগেই তোর বাবার লোক এলিজা কে আক্রমন করে। এবং বায়েজিদ বাচায়।
বায়েজিদ কোথায়?
সূর্য চোখের ইশারায় সামনের দিকে দেখিয়ে দেয়।
অপূর্ব আহত দৃষ্টিতে তাকায়। অপূর্ব দেখলো বায়েজিদ,পানির মধ্যে থেকে বেলিফুল গুলো কিছু একটার সাহায্য উঠাচ্ছে। অপূর্ব অবাক হয়ে যায়। অপূর্ব কথা বলার সমস্ত হারিয়ে ফেলেছে।চোখের পানি শুকিয়ে গালের সাথে লেগে আছে।
কাপা ঠোঁটে বললো, বায়েজিদ এসবের সাথে জড়িত কেন?
সূর্য বললো, এলিজা কোন কাঁচা খেলোয়াড় নয়।সে তার অন্ধকার জগতে সবাইকে নিয়ে এসেছে। বায়েজিদ সেদিন রাতে তোর বাবার,পাঠানো একজন গুন্ডাকে হ,ত্যা করে। এবং নিজেই সেই লা,শ পুতে ফেলে। সেটা এলিজার ভালো লেগেছিল।তাই টাকার লোভ দেখিয়ে বায়েজিদ কেও কিনে নিয়েছে।
অপূর্ব কাঁপা ঠোঁটে বললো,আর আমাকে কেন বাঁচিয়ে রেখেছে?
সূর্য বললো,কারন ও তোকে ভালোবাসে।আমরা ভেবেছিলাম,যে তোকে হয়তো কোন না কোন ভাবে মে’রে ফেলবে কিন্তু না,ও বলেছে আমার আর তার প্রতি কোন অভিযোগ নেই।কারন ভালোবাসার মানুষটার প্রতি কোন অভিযোগ থাকতে পারে না।তোর কোন সমস্যা হলে,এলিজা পাগলের মত হয়ে যেত। তোর থানা থেকে ফিরতে দেরি হলে,এলিজা তোর চিন্তায় বেকুল হয়ে যেত। এবং তোর জন্য হাজার টা খু,ন করার জন্য প্রস্তুত হত।
যদি তোর কোন ক্ষতি কেউ করতে চায়। তবে তাকে শেষ করে দেয়ার চিন্তা গ্রা,স করতো।তিলকনগর সেদিন যখন হাশেম কয়েনটি দেয়, এবং তোর মাথায় যে আঘাত করে,সে ছিল আমাদের দলের ই একজন।সেও ছিল বিদেশিয়ান। তোর শরীরে আঘাত করাতে,এলিজা ওকে শেষ করে দিয়েছিল।
অপূর্ব ঠোঁট কুঁচকে হেসে বললো, সব মিথ্যা।ছলনা করেছে আমার সাথে।যদি আমাকে ভালোবাসতো তবে, আমার সাথে একটার পর একটা মিথ্যা বলতে পারতো না। এই নোংরা মৃত্যু খেলা খেলতে পারতো না।সূর্য কিছু বললো না। অপূর্ব উপর দিক তাকিয়ে ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ায়। সূর্য বললো, কোথায় যাচ্ছিস।
অপূর্ব শক্ত গলায় বললো, শেষ বারের মত একবার, মালাইকা সিকদারিনীর সাথে কথা বলতে যাচ্ছি। সূর্য হকচকিয়ে উঠে। অপূর্ব সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। দরজা খুলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে।দেখলো ঘর খালি।ঘরটির ডান-দিকে একটি ঘর। অপূর্ব ঘরটিতে প্রবেশ করে দেখলো, এলিজা-আয়নার সামনে বসে আছে।দাসীরা কয়লার তাপ দিয়ে চুল শুকিয়ে দিচ্ছে।কেউ গলা থেকে অলংকার খুলছে। পরনে লেহেঙ্গা নেই। লেহেঙ্গা বদলে,শাড়ি পরেছে।সাজ দেখে মনে হচ্ছে,বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করবে। অপূর্ব এলিজাকে দেখা মাত্রই দূর্বল হয়ে যায়। ভাঙ্গা গলায় বললো,মালাইকা সিকদারিনী!
এলিজা মেঝের দিকে দৃষ্টি ছিল। হঠাৎ করেই এলিজা-হকচকিয়ে উঠে।চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। ভেতরের ধুকবুকানি টা বেরে যায়। এলিজা আয়নার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলে দেখতে পায়, উল্টো দিকে অপূর্ব দাড়িয়ে আছে । এলিজা হতভম্ব হয়ে যায়। শরীরের শক্তি ধিরে ধিরে শেষ হয়ে যায়।এলিজা কথা বলার বাক্য হারিয়ে ফেলে।
অপূর্ব কাপা ঠোঁটে বললো, খু,ন করতে চেয়েছিলে আমায়?
এলিজা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে,উল্টো দিকে ঘুরে কানের দুল খুলতে খুলতে সাধারণ ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
চেয়েছিলাম।
করলে না কেন?
আটকে গিয়েছিলাম!
কিসে?
আপনার ভালোবাসার মায়াজালে।
অপূর্ব ঠোঁট কুঁচকে হেসে দেয়। এলিজা দাসীদের হাতের ইশারা করে তারা চলে যায়। এলিজা উল্টো দিকে ঘুরে আছে। অপূর্বর চোখে চোখ রাখার মত শক্তি নিমিষেই শেষ। অপূর্ব এই এক – কদম দু-কদম পেছনে যেতে যেতে কাঁপা গলায় বলল, শেষ করে দিতে সেদিন।নিশি রাতের আড়ালে আমার বুকটা ছুরির আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে দিতে।
তোমাকে বলেছিলাম*তোমার এই রুপ যেন কোনদিন পাল্টে না যায়।
সৎ রুপের আড়ালে-লুকিয়ে থাকা অসৎ রুপের ঝলক’ আমাকে আগুনের মত ঝলসে দিচ্ছে ‘
প্রথম দেখাতেই বুক ছিরে হৃদয় টাকে নিয়ে নিতে’
মৃত্যুর চেয়েও বিষা’ক্ত ‘প্রিয় মানুষের ছলনার রুপ।
সৎ অঙ্গের আড়ালে ‘ লুকিয়ে থাকা অসৎ অঙ্গর ঝলক ‘আমাকে আগুনের মতন পুড়িয়ে দিচ্ছে”।
অপূর্ব থেমে যায়। এলিজা মাথা নত করে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে।হিং,স্রী মালাইকা,ধিরে ধিরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব এলিজার চুপ করে থাকা সহ্য করতে পারছে না। অপূর্ব এলিজার ডান হাতের কব্জি ধরে, নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।কব্জিতে থাকা অলংকার অপূর্বর হাতের স্পর্শে মাংসের ভেতর ঠুকে যাচ্ছে।এলিজা জ্বলজ্বল চোখে অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে। অপূর্ব ঘৃনা জড়িত কন্ঠে বললো,কেন করলে এমন!কেন আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করলে!কেন আমাকে তোমার মিথ্যে মায়ায় ফাসালে!কি দোষ করেছিলাম আমি! এলিজা নিশ্চুপ। অপূর্ব এলিজার ঘা ঘেষে মেঝেতে হাঁটুঘেরে বসে পরে। এলিজা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপূর্ব বেদনা সহ্য না করতে পেরে এলিজার পা জড়িয়ে ধরে।অঝরে কান্না শুরু করে বললো, তুমি তো আমাকে কথা দিয়েছিলে, তোমার এই রুপ কোনদিন পাল্টাবে না’সারাজিবন সাধারণ এলিজা হয়ে থাকতে’
তোমার এই ভয়ং,কর রুপ আমি সহ্য করতে পারছি না। এলিজা কিছু বলছে না।থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।ডান হাতের ভেতর স্বর্নের বাজু ঠুকে পরাতে রক্ত বের হচ্ছে। রক্ত বেয়ে পরছে অথচ সেদিক এলিজার কোন খেয়াল নেই। হঠাৎ অপূর্ব দ্রুত উঠে দাড়ায়। নিজেকে শক্ত করে ঘৃনার ভঙ্গিতে বললো, তুই একটা ছলনাময়ী, কালনাগিনী, মিথ্যাবাদী। অপূর্ব এলিজার দুই স্বিনাতে হাত দিয়ে বললো, আর কোনদিন আমার চোখের সামনে আসবে না।আজ থেকে আমি কোন এলিজা–কে চিনি না।আর খুব শীঘ্রই তোর এই, ধ্বং,সলীলা আমি শেষ করবো। সমস্ত পুলিশ টিম এখানে পাঠাবো। এবং নিরীহদের উদ্ধার করবো। অপূর্ব ক্রোথের সরে কথা শেষ করে,এলিজাকে চটকে ছেড়ে দেয়। এলিজা মেঝেতে উপর হয়ে পরে যায়।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যায়।শাড়ির আচল টা অনেক বড়। অপূর্ব ঘৃনার দৃষ্টিতে এলিজার দিকে পরোখ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। অপূর্ব হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে যেতে থাকে। সূর্য দরজার বাহির থেকে হাত দুটো পাঁজা-বেধে দাড়িয়ে আছে। অপূর্ব যেতেই অপূর্ব কে উদ্দেশ্য করে বললো, প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতে হাত কড়া পরাতে পারবি? অপূর্ব থম মেরে দাঁড়িয়ে বললো, আমার স্ত্রী এলিজা মরে গেছে।যখনি তার ঐ ভয়ংকর রুপ দেখেছি তখনই সে আমার কাছে মৃত হয়ে গেছে।
সূর্য ঠোঁট কুঁচকে হেসে বললো,চোখে পানি কেন? অপূর্ব সূর্যর দিকে আর চোখে একবার তাকিয়ে চলে যায়।এলিজার ঘরে আসে শ্যামলী, শ্যামলি অস্থির ভঙিতে বললো, অপূর্ব কে আটকা!ওকে যেতে দিস না।বাধা দে,ওর পা ধরে মাফ চা।সে যে তোর স্বামী,। বিচ্ছেদের যন্ত্রণা আমি বুঝি। যা,যা ।বল যে তুই ভুল করেছিস।এলিজা হতভম্ব হয়ে যায়। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।পূরো পৃথিবী টা ঘুরছে।এলিজা উঠে দৌড়ে চলে যায়। অপূর্ব পাতাল ঘর থেকে বেড়িয়ে হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে যেতে থাকে। এলিজা পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে। অপূর্ব একবার পেছন ঘুরেও দেখছে না।
এলিজা দৌড়াচ্ছে,চুল গুলো দর্পন করছে।শাড়ির আঁচল টা উড়ে যাচ্ছে। অপূর্ব উপর তলা থেকে নিচ তলায় চলে আসে। এলিজা দৌড়ে আসতেই অপূর্ব বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এলিজা হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।ঘার ঘুরিয়ে অপূর্ব কে পরোখ করে। ততক্ষনে অপূর্ব বাবররাজ্যর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এলিজা উঠে বাড়ির সামনে আসলে দেখলোহ অপূর্ব চলে যাচ্ছে।রাত শেষ হয়ে ভোরের দর্পন হচ্ছে। অপূর্ব চলে যাচ্ছে। এলিজা থমকে দাঁড়িয়ে অপূর্বর যাওয়ার পানে দেখে।ভোরের আলো ফুটলেও এই ভোর অভিশপ্ত এক ভোর। চারদিক অভিশপ্ত আলোতে আলোকিত হচ্ছে। চারদিক নিশ্চুপ। প্রকৃতি আজ অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এলিজা নিস্তেজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে দাসীরা দেখছে।সবাই এলিজাকে দেখছে। এই কি সেই হিং,স্রী মালাইকা!যে আজ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।
অপূর্ব বাড়িতে ফিরেই উত্তেজিত মেজাজে জাহাঙ্গীর কে ডাকতে থাকে। বাবা বাবা বলে চেঁচাতে থাকে।মনোরা রান্না ঘর থেকে বললো, নিজের ঘরে আছে। অপুর্ব দ্রুত পায়ে হেঁটে উপরে উঠে। মমতাজ পরোখ করে। অপূর্বর হাবভাব স্বাভাবিক নয়। জাহাঙ্গীর চেয়ারে হেলানে বসে আছে । অপূর্ব কর্কট মেজাজে বললো, কথা আছে উঠে এসো। জাহাঙ্গীর চোখ বুজে আছে।চোখ বোজারত অবস্থায় কাপা কন্ঠে বললো, আমি জানি। তুই কি বলতে চাস।সব কিছু জেনে গেছিস ।আমি অন্যর জীবনের বিনিময় তোর জীবন বাঁচিয়েছি তাইতো। জাহাঙ্গীর উঠে দাড়ায়। অপূর্ব রাগে বিষিন্নত হয়ে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর পায়চারি করতে করতে বললো,জানিস খোকা! নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম বাবর কে। বন্ধু নয় ভাই ভেবেছি।ও যেদিন আমার কাছে জমির জন্য আসে, সেদিন আমি জমি দেইনি।আমি সেদিন ভুল করেছি। কিন্তু তাই বলে আমার গায়ে হাত তুলবে!সেদিন আমি একা ছিলাম বলে, ওর লোকেরা আমায় পেটায়।ওর লোকেদের সামনে বেইজ্জত করে। আমার সেদিন ওর প্রতি ঘৃনা জমে। কিন্তু আমি এভাবে প্রতিশোধ নিতে চাইনি। তুই যখন অসুস্থ ছিলিস, তখন কোথাও হা,র্ট খুজে পাচ্ছিলাম না।ছেলে হারানোর ভয়ে আমি সেদিন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজের ছেলের জীবন বাঁচাতে আমাকে,অন্যর জীবন কেড়ে নিতে হয়েছে।একটা পাপের জন্য হাজারটা পাপ করতে হয়েছে।
অপূর্ব ঘৃনা জড়িত কন্ঠে বললো,যেতাম আমি মরে।কি এমন হতো,আমি সেদিন মারা গেলে?সেদিন যদি আমি মারা যেতাম,তবে এই মৃত্যু খেলা শুরু হতো না।একটা প্রানের বিনিময়ে হাজার টা প্রান যেতো না।
জাহাঙ্গীর নরম কন্ঠে বললো, এর শাস্তি আমি পাচ্ছি।এই পাপ আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। অপূর্ব হাটুঘেরে ধপাস করে বসে পরে। জাহাঙ্গীর কিছু বললো না। অপূর্ব ভাঙা গলায় কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,মরে যেতাম সেদিন আমি।কেন বাঁচালে আমাকে।আজকে বেচে থাকাটাই আমার জন্য মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাহাঙ্গীর অপূর্বর এই বুক ফাটা কান্না সহ্য করতে পারছে না।
…বেলা অনেক। অপূর্ব গোসল করে ,ভেজা চুল,সাথে তাওয়াল নিয়ে বসে আছে খাটের এক কোনে। অপূর্বর একদিকে ঘৃনার তোলপাড়।অন্যদিকে মায়ার আড়ন্নতি। কাঁদদে চাচ্ছে অথচ চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয়, মমতাজ। মমতাজ বললো, অপূর্ব এলিজা কোথায়?
অপূর্ব কিছুটা হকচকিয়ে উঠে।আমতা আমতা করে বলল, এলিজা মামা মামীকে দেখতে গিয়েছে।সেটা জেনেও কেন জিজ্ঞেস করছো। মমতাজ কিছু বললো না।
পিজি হাসপাতাল–
পাখির শরীরের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। শ্রাবন পাখির কাছ থেকে এক মুহুর্তর জন্য কোথায় যাচ্ছে না।পাখি ঘুমোচ্ছে। শ্রাবন পাখির বেডের কাছে মাথা ঝুকে সুয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় ডাক্তার। শ্রাবন উপস্থিতি বুঝতে পেরে উঠে দাড়ায়।ডাক্তার চেকআপ করে বললো,আগের থেকে শরীরের অবস্থা ভালো। শ্রাবন ডাক্তারের কথায় খুশি হয়। শ্রাবন মৃদু হেসে বললো,আমি সারাক্ষন প্রার্থনা করি,যাতে আমার পাখি সুস্থ হয়ে যায়।ডাক্তার শ্রাবনের কাঁদে হাত দিয়ে বললো, আপনার মত স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। খেয়াল রাখবেন।বলেই ডাক্তার চলে যায়।
মমতাজ বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসে হাসপাতালে। শ্রাবন নিজ হাতে পাখিকে খাইয়ে দেয়।পাখি শ্রাবনের দিকে পরোক্ষ করলো,শ্রাবনের চোখ মুখ শুকিয়ে একাকার।চুল দাড়ি তে ভরে গেছে।পাখি ভাঙা গলায় বললো, আপনাকে আমি এভাবে এলোমেলো দেখতে পারছি না। নিজের যত্ন নিন। শ্রাবন মৃদু হেসে বললো, তোমার চোখের মায়াবি দৃষ্টি আমার যত্ন’ তোমার কাছে যতক্ষন থাকি ততক্ষন স্বর্গের সুখ পাই। মমতাজ খেয়াল করলো, তার ছেলের মুখের দিকে। শ্রাবনের চোখে পাখিকে হারানোর ভয়। মমতাজ মনে মনে, প্রার্থনা করলো, পাখিকে সুস্থ করো।প্রয়োজনে আমাকে নিয়ে নাও,তবুও পাখিকে রেখে যেও।কারন,পাখির কিছু হলে যে, আমার ছেলেটা বাচবে না। মমতাজ বাড়ি ফিরে যায়।
রাত বাড়ছে। মমতাজ জাহাঙ্গীর,অর্পা কে ডেকে খেতে দেয়। জাহাঙ্গীর খেতে পারলো না। খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।অর্পা পরোখ করছে। অপূর্ব কে খেতে ডাকলে,ঘরের দরজাই খুলেনি।কোন সাড়া শব্দ নেই। অপূর্ব ঘরের ভেতর পায়চারি করছে। এলিজা কে যে অবস্থায় দেখেছে,সেই চিত্র বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। অপূর্ব অস্থির হয়ে যাচ্ছে।বুকের ভেতর দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে।এলিজার কথা মনে পরতেই বুকের ভেতর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
অপূর্বর শরির খারাপ হতে থাকে। নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।বিরবির করে বলছে, আমার স্ত্রী অপরাধী’কিন্তু যেই হাত দিয়ে,তার কোমল শরীর স্পর্শ করেছি ‘সেই হাত দিয়ে ‘তার হাতে হাত কড়া পরানো কোনদিন সম্ভব নয়’!।
অপূর্বর চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরছে। একবার ফিসফিস করে বলল, তুমি আমায় কেন ভালোবাসলে না ‘।
অপূর্ব নিস্তেজ শরীরে সুয়ে পরে।রাত ১১ টা। অপূর্বর শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। শরীরের উপর চাদর নেই।চাদর টেনে দেয়ার মত শক্তি অপূর্বর নেই। অপূর্ব নিস্তেজ হয়ে সুয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ অপূর্ব অনুভব করলো তার শরীরে কেউ চাদর দিয়ে দিচ্ছে। অপূর্ব চোখ টিপ টিপ করে দেখলো,এলিজা। মিষ্টি রঙের শাড়ি পরনে।চুল বেনুনি।ভি_কার থুতনি।ফর্সা গায়ের রং।কি তার চাহনি। অপূর্ব ভাবলো,এ কি এলিজা!নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি। অপূর্ব অনুভব করলো,কেউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অপূর্ব ঝাপসা চোখে দেখলো, এলিজা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।জ্বরে কাতর শরীর। এলিজার উপস্থিতি,তার স্পর্শে, অপূর্ব শান্তি অনুভব করছে । সে সত্যিই এলিজা না, হ্যালোসোলেশন হচ্ছে। অপূর্ব নিস্তেজ।কথা বলার মত শক্তি নেই। শুধু ভাবছে কে এ,এলিজা না আমি স্বপ্ন দেখছি।
এলিজা পর্ব ৭৩+৭৪
অপূর্ব কাতর কন্ঠে একবার বললো,ম্যাডাম! এলিজা মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো, আপনি না চাইলেও আমি আপনার সামনে আসবো’ এহকাল-পরকালেও আপনি না চাইলেও আমি আপনার সামনে আসবো’। আপনি আমাকে আপনার থেকে দূরে করতে পারবেন না! একমাত্র মৃত্যু পারবে আমাকে আপনার থেকে দূরে করতে।
অপূর্ব চোখ বোজারত অবস্থায় ফিসফিস করে বলল, তুমি পাপি——