এলিজা পর্ব ৮১+৮২

এলিজা পর্ব ৮১+৮২
Dayna

সূর্যর কিরনে নতুন একটি দিনের আগমন নিয়ে আসলো ‌। চারদিকে মানুষের কোলাহল ‌।ভরা জ্যামের নির্বিস গাড়ির শব্দ‌। উৎফুল্ল কাকের আনাগোনা। চৈত্র মাসের আগমন।
এলিজার ঘুম ভেঙ্গে যায় ‌‌। এলিজা দেখলো অপূর্বর বুকের উপর শুয়ে আছে‌। অপূর্ব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এলিজা অপূর্ব কে মায়ার দৃষ্টিতে পরোক্ষ করে।জোড়া ভ্রুর উপরে কালো তিল‌,গোলাপি ঠোঁট। অনেক
নিষ্পাপ দেখাচ্ছে মানুষ টাকে। এলিজা ধিরে ধিরে উঠে বসে‌। ভাবছে, কতদিন পর,তার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারলাম। এলিজা শান্তি অনুভব করলো ‌। মনের অজান্তেই ঠোঁটের এক কোনে হাঁসি চলে আসে। এলিজা এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে খোপা করছে। ক্লান্তি গলায় হঠাৎ করে অপূর্ব বললো,ম্যাডাম। আমাকে রেখেই উঠে খেলেন। এলিজা উৎফুল্ল হয়ে পেছনে তাকায়। অপূর্ব চোখ বুজে আছে। এলিজা মৃদু হেসে বললো, আপনি সজাগ থেকে ও ঘুমের ভান ধরে আছেন! অপূর্ব অমৃদু হাঁসি দিয়ে বলল, কখনো তোমার মিষ্টি হাসি দেখার জন্য ভান তো করতেই হয়।এলিজা মৃদু হেসে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।এলিজা অকারনেই লজ্জা পেলো‌‌। অপূর্ব এলিজাকে চট করে টেনে বুকের উপর সুইয়ে নেয়। অপূর্ব চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,এত লজ্জা পাচ্ছ যে! এলিজা ভ্রু কুঁচকে বললো, লজ্জা পেয়েছি তাও চোখ বুজে ই দেখেছেন!

অপূর্ব মৃদু হেসে শক্ত গলায় বললো, পুলিশের চোখ থাকে দুটো।একটা আসামিদের জন্য ‌,আরেকটা নিজের বউয়ের জন্য‌। এলিজা আওয়াজ করে হেসে উঠলো। অপূর্ব মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, তোমার মুখের হাঁসি দেখার জন্য আমি ,আইনের আদালতে হাজার বার হারতে রাজি।
এলিজা রান্না ঘরে চলে আসে।নুরনেসা বেগম,পান চিবোতে চিবোতে রান্না ঘরে উপস্থিত হয় ‌। এলিজা দেখে মৃদু হেসে বললো,ছোট আম্মা কিছু লাগবে,!বলেন, আমি দিচ্ছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নূরনেসা বললো,কড়া করে এককাপ চা দাও দেখি।নূরনেসা খেয়াল করলো, এলিজা নতুন শাড়ি পরা। একদম পরিপাটি ‌।নূরনেসা জিজ্ঞেস করলো, কোথাও যাচ্ছ? এলিজা মৃদু হেসে বললো, পাখির জন্য কিছু রান্না করে নিয়ে যাবো‌।নূরনেসা বৈঠকখানায় বসে। জাহাঙ্গীর হাতে ভারবহন লাঠি নিয়ে নিচে আসে। এলিজা জাহাঙ্গীর এর দিকে পরোক্ষ করলো, এলিজা ভাবলো,মানুষ টা কতটা নিস্তেজ হয়ে গেছে।তেজি মানুষটা আজ নিস্তেজ।সময় মানুষ কে উত্তম থেকে উত্তাপ করে দেয়।তার প্রমান আমার সামনে থাকা মানুষটি। এলিজা, জাহাঙ্গীর নূরনেসা দুজনের জন্য চা নিয়ে আসে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় অপূর্ব। অপূর্ব পুলিশ ইউনিফর্ম পরা। এলিজা পরোখ করলো। এলিজা রান্না ঘরে চলে যায়। অপূর্ব জাহাঙ্গীর কে উপেক্ষা করে,রান্না ঘরে চলে যায়। এলিজা উল্টো ঘুরে পাখির জন্য রান্না করছে। অপূর্ব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। এলিজা নরম গলায় বললো, সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরেন। অপূর্ব এলিজার কাদের উপর ধুতনি টা রেখে মৃদু হেসে বললো,এই সুযোগ আমার সারাজীবন থাকুক। এলিজা বললো, আপনি থানাতে যাচ্ছেন? অপূর্ব বললো,যেতে হচ্ছে ডিসি সাহেব নি,খোজ কিনা,এই নিয়ে তদন্ত করতে হবে ‌।

এলিজা বলল, টেবিলে গিয়ে বসুন আমি নাস্তা দিচ্ছি। অপূর্ব এলিজার কথা মত খেতে বসে‌। অপূর্ব এলিজার দিকে পরোখ করে বিরবির করে বলছে, আমার নিষ্পাপ স্বর্গিয়পরী। এলিজা মনোরার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে,আর খাবার বাড়ছে। অপূর্ব হাতের উপর গালের ভর দিয়ে অপলকে দেখছে‌। তৎক্ষণাৎ মনে পরে,ডিসি সাহেব এর কথা। কোথায় যাবেন উনি।কারা ওনাকে অপ,হরন করলো। যেভাবে কনস্টেবল বর্ননা দিলো,তাতে তো সূর্যর সাথে মিলে যায়। অপূর্ব তৎক্ষণাৎ এলিজা কে বললো,আমি ড্রাইভার কে বলে যাচ্ছি,উনি তোমায় হাসপাতাল ছেড়ে দিবে। আমার তারা আছে,এখনি যেতে হবে বলেই,এলিজার কপালে চুমু খায়। এলিজা মৃদু হেসে সাবধানে যেতে বললো।
সকাল ৯ টা নাগাদ।

শ্রাবন পাখি কে সকালের খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। শ্রাবন এদিক ওদিক কিছু খুঁজলো।পাখি বললো,কি খুজছেন? শ্রাবন ভাবনা নিয়ে বললো, চিরুনি কোথায়!! পাখি দেখিয়ে দেয়। শ্রাবন চিরুনি হাতে পাখির চুল গুলো আচরিয়ে দেয়।পাখি কাপা কন্ঠে বললো,আমি আর আপনাকে এভাবে এলোমেলো দেখতে পারছি না। আপনি দয়াকরে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিন। শ্রাবন পাখির চুল বেঁধে দেয়। শক্ত গলায় বললো, তুমি যখন বলছো,তবে তাই হোক।বউমনি আসুক।তাকে তোমার কাছে রেখে চুল ,দাড়ি কেটে একদম সেজে গুজে আসবো।পাখি সম্মতি জানায়।
অপূর্ব বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেয়।কোথাও ডিসি সাহেব এর হদিস মিললো না। অপূর্ব নতুন করে চিন্তায় পড়ে যায়। হঠাৎ মাথায় আসলো এলিজা হাসপাতালে।ভাবনা উপেক্ষা করে হাসপাতালে চলে আসে।পাখি, শ্রাবন,সবার সাথে বিভিন্ন কথা বলার মাঝে,এলিজা পরোখ করলো অপূর্বর চোখ মুখে চিন্তার ছাপ। তৎক্ষণাৎ শ্রাবন অপূর্ব কে বললো,কি ভাবছিস ?কি হয়েছে? অপূর্ব শ্বাস ফেলে বললো,ডিসি সাহেব কে পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রাবন কিছু একটা ভেবে বললো,ওনাকে আমি সূর্যর সাথে গতকাল কথা বলতে দেখেছি। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে বললো, কোথায়? শ্রাবন বললো, হাসপাতালের সামনে,যদিও আমি ডিসি সাহেব এর মুখ দেখিনি উল্টো ঘুরে থাকায় তবে উনিই হবে হয়তো । অপূর্ব দ্রুত পায়ে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে যায়।

অপূর্ব সূর্য দের বাড়ি উপস্থিত হয়। সূর্যর মা ঘরে। অপূর্ব আহত গলায় জিজ্ঞেস করলো, সূর্য কোথায়? সূর্যের মা বললো, রায়হান এর বাসায় গিয়েছে। অপূর্ব অবাক হয়। সম্পূর্ণ ভাবে হতভম্ব হয়ে যায়। মৃত ব্যক্তির বাসায় কি করছে। অপূর্ব স্থান ত্যাগ করে। বেড়িয়ে পরে রায়হান এর বাড়ির উদ্দেশ্যে। অপূর্ব রাগে গভীর হয়ে আছে ‌। রক্ত মাখা চোখে বিরবির করে বললো, সূর্য যদি আজ কোন উল্টো পাল্টা করে,তবে এর শেষ দেখে ছারবো। অপূর্ব উপস্থিত হয় রায়হানদের বাড়ি।বাড়িটা একদম নিঝুম হয়ে গেছে। রায়হানের মৃত্যুর পর, রায়হানের বাবাও মারা যায়। বেঁচে আছেন শুধু রায়হানের মা। অপূর্ব ভেতরে প্রবেশ করে,দরজা খোলাই ছিল।

অপূর্ব এদিক ওদিক পরোখ করে। হঠাৎ একজন মহিলা বাহির থেকে অপূর্ব কে উদ্যেশ্যে করে বললো,খালি বাড়িতে কি করছেন? রায়হান এর আম্মা গ্রামে গেছেন। অপূর্ব অবাক হয়ে যায়। সম্পূর্ন ভাবে বিষিন্নত হয়ে যায়। অপূর্ব ভাবলো তবে এখানে সূর্য কি করছে, অপূর্ব পিস্তল টা বের করে।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে, চারদিক অন্ধকার,দূর থেকে দেখতে পায়,রায়হান এর ঘরে আলো জ্বলছে‌। অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে ঘরটির দিকে এগোতেই যা দেখলো, অপূর্বর চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে যায়। শরীর থেকে অঝরে ঘাম ঝরতে থাকে। অপূর্ব দেখলো, ডিসি সাহেব কে ,একটা চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে।মুখে টেপ লাগানো। তৎক্ষণাৎ বাথরুম থেকে বের হয় সূর্য। সূর্য অপূর্ব কে দেখেই ডিসি সাহেব এর পেছনে দাড়ায়। অপূর্ব পিস্তল টা তাক করে রেখেছে সূর্যর দিকে, ।অপূর্ব কর্কট মেজাজে বললো,ছিঃ , আমার ঘৃনা হচ্ছে।এতটা নিষ্ঠুর মানুষ কি করে হতে পারে। বলেছিলাম, হাজার বার বুঝিয়েছি,আইন নিজের হাতে তুলে নিস না। মানছি তোদের সাথে খারাপ হয়েছে তাই বলে,আইন নিজের হাতে তুলে নিবি?

তুই আসলেই একটা পাপি। তৎক্ষণাৎ সূর্য পেছন থেকে মাঝারি সাইজের রাম,দা বের করে ডিসি সাহেব এর গলায় ধরলো। সূর্য শান্ত স্বরে বললো,আমাকে বাধা দিস না।এই পাষান লোকটিই আমার শেষ নিশানা। অপুর্ব শক্ত গলায় বললো,ছেড়ে দে বলছি।নয় কিন্তু….
সূর্য বললো,নয় কি করবি?
অপূর্ব পিস্তল টা লোড করে শেষ বারের মত বললো,ছেড়ে দে!
সূর্য বললো সম্ভব না।
অপূর্ব কর্কট মেজাজে বললো,তোকে আর এই মৃত্যু খেলা খেলতে দেবো না বলেই, সূর্যের বুকটা গুলিতে ছারখার করে দেয়। সূর্য নেতিয়ে পরে যায়।রাম,দা টা দূরে পরে যায়।ডিসি সাহেব কিছু বলার চেষ্টা করছে। অপূর্ব কে দেখা মাত্রই ছটফট শুরু করেছে। অপূর্ব ডিসি সাহেব এর মুখের টেপ টা খুলে দিলো।ডিসি সাহেব অঝরে কান্না শুরু করে। অপূর্ব সূর্যর রক্তা’ক্ত দেহের কাছে হাঁটু ঘেরে বসে পরে‌।ঘৃনা হচ্ছিল কিন্তু প্রানপ্রিয় বন্ধুর মৃ’ত দেহখানি দেখে অপূর্বর বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।কাপা কন্ঠে বললো,কেন মৃত্যু খেলায় নিজেকে জড়িয়ে নিলি। বন্ধু হিসেবে যদি এতটুকু আমায় ভালোবাসতি,তবে আমার একটা কথা রাখতিস!তবে আজ আর বন্ধুর হাতে মৃত্যু বরন হতো না।

ডিসি সাহেব অঝরে কাঁদদে কাদদে বললেন, সূর্য তোমার হাতেই মরতে চেয়েছিলো। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে ‌।ডিসি সাহেব কে,অস্থির কন্ঠে বললো,কি বলছেন আপনি! আমার হাতে মরতে চেয়েছিলো মানে!
ডিসি সাহেব,কাপা হাতে ,টেবিলের উপর দেখিয়ে দেয়। অপূর্ব দ্রুত পায়ে টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলো,একটা ডায়েরি! অপূর্ব দেখতে পেলো এটা সূর্যর ডায়েরি। অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে ডায়েরিটা খুললো, অপূর্ব দেখলো প্রথম পাতায় অপূর্ব কে নিয়ে একটা চিঠি লেখা । অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে পরতে শুরু করে।

প্রিয়
অপূর্ব। আমাদের পথচলা সেই ছোটবেলা থেকে। একসাথে বড় হওয়া, একসাথে পথচলা, একসাথে স্কুলে যাওয়া,রোজ বিকেলে একসাথে খেলতে যাওয়া,সুখ দুঃখ ভাগ করে নেয়া,কি করে ভুলে যাবো সেই পূরানো স্মৃতি ‌। বন্ধুত্বের বন্ধনে যখন আবধ্য হই,তখন একে অপরকে কথা দিয়েছি,জিবনের চলা প্রতিটা পথের একে অপরের সঙ্গি হবো।কি করে ভুলে যাবো সেই স্মৃতি গুলো।কি করে বেইমানি করবো বন্ধুত্বের বাঁধনের সাথে।এতটাই কি স্বার্থপর ছিলাম!
আমি এতটাও নিষ্ঠুর ছিলাম না। যেদিন রঞ্জনার ধ,র্ষন ও হ,ত্যা হয়, সেদিন রায়হানের কোন দোষ ছিল না। রায়হান এর বাবাকে দূর্জয় ওরা অপহ,রণ করে। এরপর রায়হান কে ওদের কাজে সাহায্যর জন্য বাধ্য করা হয়। রায়হান সেদিন রঞ্জনা কে বাঁচাতে চেয়েও বাঁচাতে পারেনি ‌। রায়হান আমাকে সত্যিটা অনেক বার বলতে চেয়েও বলতে পারেনি।

রায়হান কখনো বেইমানি করতে পারে না,এটা আমার বিশ্বাস ছিল।তাই দুদিন আগে ওর বাড়িতে আসলে ওর ঘর থেকে ওর রেখে যাওয়া চিঠি থেকে সব জানতে পারি।তখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়েছিল।প্রানের চেয়েও প্রিয় বন্ধু কে নিজের হাতে মেরে ফেলেছি। অনুশোচনার আগুনে পুড়ে ছারখার হচ্ছিলাম। নিজেকে কখনো পাপি মনে হয়নি। হাজার টা নিরীহ মানুষের প্রান নেয়ার পরেও নিজেকে পাপি মনে হয়নি। কিন্তু যেদিন জেনেছি নির্দোষ বন্ধু কে মেরে ফেলেছি সেদিন থেকে নিজেকে পাপি মনে হয়েছে ‌।পাপের আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম। মনস্থির করি এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাকে করতে হবে।সেদিন ডিসি সাহেব কে আমিই অপহরণ করি। এবং সবকিছু খুলে বলি।এটাও বলেছি,যে আমি তোর হাতে মরতে চাই।কারন আমি পাপি তুই পবিত্র’তোর হাতে মৃত্যু হবে আমার জন্য শ্রেষ্ঠ ‘মৃত্য । ডিসি সাহেব কে অপহ,রণ করা,সবকিছু একটা সাজানো নাটক ছিল। কিন্তু উনি আপত্তি জানায়।তাই বেধে রাখতে বাধ্য হয়েছি।ডিসি সাহেব এর গলায় যে রাম,দাটা ধরেছি, সেটা ছিল ধারবিহীন রাম,দা। আজকে আমি মরেও শান্তি পাব।ভালোবাসি বন্ধুত্ব কে ,ভালোবাসি তোকে। অনেক মিথ্যার মাঝেও ছিল বন্ধুর জন্য মায়া।যা রয়ে গেলো অপ্রাকাশিত। ভালো থাকিস, নিজের যত্ন নিতে ভুলবি না।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস ‌‌।আর হ্যা এলিজা তোকে সত্যিই ভালোবাসে।এলিজাকে একটা বার সুযোগ দিস ।

ইতি
তোর পাপি সূর্য ।
অপূর্ব রাম,দা টা হাতে নিয়ে দেখলো এটা ধারবিহীন। অপূর্ব ছিটকে দূরে পরে যায় ।

অপূর্ব অঝরে কাদদে শুরু করে। সূর্যর মৃত টা দেহটা অপূর্ব বুকে জড়িয়ে নেয়। শুরু করে বুকফাটা কান্না। অপূর্বর কান্নায়, প্রকৃতি থমকে যায়। চারদিক নিশ্চুপ হয়ে যায়। অপূর্বর কাপা ঠোঁটে বললো,এটা আমি কি করলাম, নিজের হাতে নিজের বন্ধুকে হ,ত্যা করলাম।এই সূর্য চোখ খোল,কথা বলনা আমার সাথে। সূর্যর সমস্ত শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে। অপূর্ব নিস্তেজ হয়ে বসে পরে।ডিসি সাহেব কাপা কন্ঠে বললো,আমাকে সূর্য সেদিন সব বলেছে। আমি চাইনি‌। কিন্তু আমাকে জোড় করে আটকে রেখে, নিজের মৃত্যু নিজেই কামনা করলো।আমি তোমাদের বন্ধুত্ব সম্মান করি‌।

পরে আছে সূর্যের নিঃস্ব দেহখানি। অপূর্ব মেঝেতে লেপ্টে বসে আছে।ডিসি সাহেব বাহিরে বের হয়।একটা দোকানের ল্যান্থলাইন থেকে কনস্টেবল দের ফোন।তারা এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে। সূর্যর মৃত দেহ নিয়ে যায়। অপূর্ব রক্ত মাখা চোখে সূর্যের মৃত দেহকে পরোখ করে। হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে।নিয়ে চলে যায় সূর্য কে।ডিসি সাহেব অপূর্বর কাদে শান্তনা মূলক হাত রাখে। অপূর্ব আকাশের দিকে তাকিয়ে ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ডিসি সাহেব একটা রিকশা ডাকে, অপূর্ব কে বললো, বাসায় যাবে না থানায়? অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো, পিজি হাসপাতালে যাবো। সেখান থেকে সূর্যের জানাজায়। অপূর্ব রিকশায় উঠে যায়।

ব্যাস্ত সহর আজ নিরব মনে হচ্ছে। চারদিক এর কোলাহল এর দগ্ধ, নিমিষেই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। একে একে সবাই কে হারালাম, সাদিক, রায়হান, সৈকত, অবশেষে সূর্য_ কেও।অপূর্ব হাতের উল্টো দিক চোখের পানি মুছে। নিজের চোখ মুখের রঙ স্বচ্ছল করে।এলিজা যাতে কিছু বুঝতে না পারে। অপূর্ব কিছুক্ষণ এর মধ্যে পৌছে যায় হাসপাতালে। এলিজা পাখি বিভিন্ন কথায় মশগুল। শ্রাবন টুলে বসে আছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় অপূর্ব। এলিজার চোখে চোখ পরতেই অপূর্ব মৃদু হাসে। বেশকিছু_ ক্ষন অপূর্ব পাখি,এলিজার সাথে কথা বলে। তৎক্ষণাৎ এলিজা অপূর্ব কে হতাশা কন্ঠে বললো, আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। অপূর্ব বাহিরে আসে।বাহিরের সিটে বসে। এলিজা ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে, অপূর্ব কে বললো, আমায় একবার বাবররাজ্য যেতে হবে‌। অপূর্ব এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে,ভ্রু কুঁচকে বললো, কিসের জন্য!তুমি তো সবকিছু ছেড়ে দিয়েছো।

এলিজা নরম গলায় বললো, আমাদের দলের সবাই তো আর এটা জানে না,চীপস ডুপিয়ালি এবং ডাঃ ইব্রাহিম এবং অন্যান্য অনেক এ আছেন!তাই তাদের সবার সাথে শেষ বারের মত, কথা বলা দরকার।আমি শেষ বারের মত বাবর রাজ্যে যেতে চাই। অপূর্বর দৃষ্টিতে আপত্তির ছাপ। অপূর্ব ভাবনা নিয়ে বললো, তোমার ইচ্ছে। এলিজা মৃদু হাসলো। অপূর্ব এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, কবে যেতে চাও? এলিজা বললো, আপনার আপত্তি না, থাকলে আজকেই যেতে চাই। অপূর্ব বললো,আমি আসবো তোমার সাথে? এলিজা আপত্তি স্বরে বলল, আপনাকে আমি দ্বিতীয় বার আমার পাপের সম্রাজ্য নিতে চাই না।
এলিজা চলে যায় , বাবর রাজ্যর উদ্দেশ্যে। অপূর্ব মনস্থির করলো, সূর্যর জানাজায় যাবে। অপূর্ব শ্রাবন পাখির কাছ থেকে বিদায় নেয়।

পাখির মুখের ছাপ চিন্তিত। শ্রাবন জিজ্ঞেস করলো,কি ভাবছো? কিছু হয়েছে?
পাখি নরম কন্ঠে বললো, আমার কিছু ভালো লাগছে না। শুধু মনের ভেতর কুহু ডাকছে। কোথাও থেকে কালো ধোঁয়া ধেয়ে আসছে। খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে ‌‌। শ্রাবন পাখির হাত দুটো ধরে বললো, এগুলো তোমার ভাবনা_ মাত্র ‌। খারাপ কিছু হবে না ‌।যা হবে ভালো ই হবে।পাখি মৃদু হাসলো‌।
রাত ৯ টা নাগাদ।
অপূর্ব চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে। গভীর চিন্তায় মশগুল। বুকের ভেতর চাপ চাপ বেথা হচ্ছে ‌।কি যেন কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অপূর্ব না চাইতেও হঠাৎ করে সূর্যের চিন্তা আহরন করে। সূর্যর সাথে কাটানো দিনগুলি, একসাথে পথচলা।কত কত স্মৃতি।সব চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় জাহাঙ্গীর। অপূর্ব বারান্দায় বসে আছে‌। জাহাঙ্গীর,দরজা খোলা থাকায় ঘরের মধ্যে চলে আসে।হাতে ভারবহন লাঠি। জাহাঙ্গীর দেখলো, অপূর্ব কে কোন ভাবনা গ্রা,স করেছে। জাহাঙ্গীর গলায় কাশি দিলো। অপূর্বর ভাবনা ভেঙ্গে যায়। অপূর্ব হালকা ঘার ঘুরিয়ে পরোখ করলো।
অপূর্ব শক্ত গলায় বললো, এখানে কেন? জাহাঙ্গীর ভাঙা গলায় বললো,কি হয়েছে?কি ভাবছিস এত? চোখ মুখে চিন্তার ছাপ ‌!

অপূর্ব মেরুদন্ড সোজা করে বসে বললো, কিছু ভাবছি না। মায়ের কথা খুব মনে পরছিলো।
জাহাঙ্গীর নত-যত কন্ঠে বললো,আমি পাপ করেছি। একবার নয় হাজার বার করেছি। আমার পাপের অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।আমি অনুতপ্ত।এর শাস্তি আমাকে পেতে হবে।আর এই শাস্তি যদি নিজের ছেলের হাতে পাই,তবেই হবে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত। অপূর্ব ঠোঁট কুঁচকে ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তোমার বেঁচে থাকাই তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ শাস্তি ‌। জাহাঙ্গীর কিছু বললো না। অপূর্বর দিকে কয়েকবার দৃষ্টি স্থাপন করে স্থান ত্যাগ করে।

অপূর্ব বসা থেকে উঠে, রেলিং ধরে দাঁড়ায়।মনে মনে ভাবছে, এলিজা এখনো কেন ফিরছে না! কিছু হলো নাতো।মনের ভেতর অস্থিরতা অনুভব হচ্ছে। সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। কোথাও কিছু একটা হওয়ার আশঙ্কা।মনে হচ্ছে বিপদ ধেয়ে আসছে। এরকম কেন অনুভূতি হচ্ছে। অপূর্বর অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। তৎক্ষণাৎ অপূর্ব অনুভব করলো কেউ তাঁকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে। অপূর্ব বুঝতে পেরে কাপা কন্ঠে বললো,ম্যাডাম আপনার এতক্ষনে ফেরার সময় হলো !কখন থেকে অপেক্ষা করছি। এলিজা অপূর্ব কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। অপূর্ব দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে? অপূর্ব পেছন ঘুরে ‌। অপূর্ব দেখলো, এলিজার চোখে পানি ‌। অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে বললো, চোঁখে পানি কেন!কি হয়েছে! এলিজা মৃদু হেসে বললো, কোথায় কি হবে! আজকে শেষ বারের মত, নিজের জন্মস্থান ত্যাগ করে এসেছি।তাই খারাপ লাগছে ‌। অপূর্ব এলিজার দুই গালে আলতো,করে ধরে বললো, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এলিজা অপূর্ব কে আঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে। অপূর্ব হতভম্ব হয়ে যায়। এলিজার আচরণ স্বাভাবিক নয়। হঠাৎ কি হলো। অপূর্ব এলিজা কে জড়িয়ে ধরে বললো, সবাইকে বলে দিয়েছো,আজ থেকে নির্মম এই পাপের খেলা বন্ধ? তুমি আর কোনদিন পাপের সম্রাজ্য ফিরে যাবে না? এলিজা ভারী কন্ঠস্বর নিয়ে বললো,হুমম।

রাতের খাবারের জন্য সবাই টেবিলে বসে আছে‌।এলিজা সবাইকে খাবার দিচ্ছে।নূরনেসা খাবার খেতে খেতে বললো,আমরা আগামীকাল চলে যাবো। অনেক দিন হয়েছে এসেছি। চাঁদনী নূরনেসার সাথে সহমত জানায়। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,আর কয়টা দিন থেকে যাওনা ছোট মা! হঠাৎ মা চলে যাওয়াতে , সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে।নূরনেসা বললো, নামাজ পরে সবসময় তোর মায়ের জন্য দোয়া করবি। অপূর্ব খেতে খেতে খেয়াল করলো, এলিজার আমাদের দিকে কোন খেয়াল ই নেই। এলিজা অজানা কোন ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে।কি হয়েছে এলিজার। অপূর্ব এসব ভাবতেই, এলিজার ভাবনা ভাঙিয়ে বললো,ম্যাডাম!
এলিজা হকচকিয়ে উঠে,ভাবনা ভেঙ্গে যায়। এলিজা আমতা আমতা করে বলল,কি লাগবে আপনার!মাছ,ভাত কিছু দিবো? অপূর্ব খেয়াল করলো, এলিজা সামনে থেকেও কিছু দেখছে না‌। অপূর্বর খাওয়া শেষ কখন,অথচ এমন প্রশ্ন ‌। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, খাওয়া শেষ কখন, কিন্তু তুমি গভীর চিন্তায় মশগুল।কি হয়েছে?

এলিজা কিছু না বলে, টেবিল থেকে সব সরিয়ে নেয়। অপূর্ব পরোক্ষ করলো এলিজা কিছু লুকোচ্ছে। অপূর্ব ঘরে চলে যায়। ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে থাকে।ভাবতে থাকে, হঠাৎ এলিজার কি হলো! এরকম অদ্ভুত আচরণ কেন করছে‌!রাত বেড়ে চলেছে। অপূর্ব অপেক্ষা করছে,কখন এলিজা কাজ শেষ করে ঘরে আসবে। অনেক টা সময় কেটে যায় ‌। এলিজা আসছে না। অপূর্ব ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে এলিজার উদ্দেশ্যে। অপূর্ব দেখলো রান্না ঘরে নেই। এদিক সেদিক পরোক্ষ করে কোথাও নেই‌। অপূর্ব উপরে চলে আসে, তৎক্ষণাৎ আওয়াজ পায় জাহাঙ্গীর এর ঘর থেকে একাধিক কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। অপূর্ব গিয়ে দেখলো এলিজা সবার মাঝে বসে বসে কথা বলছে। জাহাঙ্গীর নূরনেসা, চাঁদনী অর্পা। অপূর্ব কে দেখে এলিজা স্থান ত্যাগ করে। অপূর্ব এলিজা কে ভ্রু কুঁচকে বললো, এতক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছি, অথচ তুমি এখানে! এলিজা আমতা আমতা করে বলল,ছোট আম্মা কাল চলে যাবেন,তাই একটু কথা বলছিলাম। অপূর্ব এলিজাকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। অপূর্ব এলিজা কে খাটের উপর বসিয়ে, শান্ত স্বরে বললো, কিছু হয়েছে? তুমি কিছু ভাবছো! কিন্তু কি হয়েছে! তোমার এরকম ফ্যাকাশে মুখ আমার ভালো লাগে না। এলিজা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।নরম গলায় বললো, এরকম কিছু নয়।মা বাবার কথা খুব মনে পরছিলো তাই ভালো লাগছে না। অপূর্ব এলিজার জবাবে সত্যতা পেলো না। অপূর্ব মনে মনে ভাবলো, হয়তো বাবর রাজ্য থেকে সবকিছু ছেড়ে আসাতে মন পূরছে‌।মা-বাবা ভাই সবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। অপূর্ব এসব ভেবে নিজের মনকে শান্ত_না দেয়।

অপূর্ব ভাবনা উপেক্ষা করে, এলিজার কপালে চুমু খায়। এলিজা শান্তি অনুভব করলো। অপূর্ব এলিজা কে সুইয়ে দিয়ে শরীরের উপর চাদর দিয়ে দেয়। এলিজার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ঘুমিয়ে পরো,অতি ভাবনা থেকে মুক্ত হও।আমি এক্ষুনি আসছি।বলেই অপূর্ব যেতেই, অপূর্বর ডান হাত টা চট করে ধরে ফেললো, অপূর্ব থমকে দাঁড়ায়। এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো ‌। এলিজা কাঁপা গলায় বলল, আপনার বুক পাঁজর ছাড়া যে আমার ঘুম হবে না। অপূর্ব মৃদু হেসে, এলিজার পাশে সুইয়ে পরে। এলিজা কে বুকের উপর সুইয়ে দেয়। এলিজার নিঃশ্বাস ভারী।

এলিজা পর্ব ৭৯+৮০

কেটে যায় অনেক প্রহর। অপূর্ব ঘুমোয়নি। অপূর্বর বুকের ভেতর চাপ চাপ বেথা হচ্ছে ‌‌।মনের গহিনে নতুন করে ভাবনা জন্ম নিয়েছে।এলিজার আচরণ স্বাভাবিক নয়।কি এমন হয়েছে! অপূর্ব অনুভব করলো,এলিজার চোঁখের পানি বুকের উপর পরছে। এলিজার চোখ দিয়ে অঝরে পানি পরছে‌। কিন্তু এলিজার কান্নায় শব্দ নেই।কি হয়েছে এলিজার???

এলিজা পর্ব ৮৩+৮৪