এলিজা পর্ব ৮৩+৮৪

এলিজা পর্ব ৮৩+৮৪
Dayna

অপূর্ব ঘুমন্ত পরীকে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে।
সূর্যের অহর্নিশি আলো তে ভরে গেছে চারপাশ। জানালা ভেদ করে সূর্যের রশ্মি সরাসরি পড়ে এলিজার চোঁখে। এলিজা টিপটিপ পলকে,চোখ মেলে। এলিজা অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে। মায়াবী চোখে অপূর্ব কে কয়েক প্রহর অনুদর্শন করে। এলিজা কাঁপা ঠোঁটে বিরবির করে বললো, আপনার বুক পাঁজর ছাড়া কি করে থাকবো! এলিজা সোয়া থেকে উঠে যায়। হাতের উল্টো দিক চোখ মুছে।হাত মুখ ধোয়ার জন্য স্নানঘরে প্রবেশ করে। অপূর্ব এলিজাকে পরোখ করলো।

এলিজার বিরবির করে কথাটা , অপূর্ব শুনে নেয়।কি এমন হয়েছে, এলিজা কোথায় যাবে! অপূর্বর বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। হঠাৎ এলিজার মুখে এরকম বাক্য অপূর্ব কে বিষিন্নত করে ফেললো। অপূর্ব উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে সোয়। এলিজা মুখ-হাত ধুয়ে রান্না করে চলে যায়। আজকে মনজুরা,মনোরা দু’জনে ই আছে।নূরনেসা এবং চাঁদনী দু’জনেই আজ চলে যাবে।এই ভেবে এলিজা ভালো মন্দ রান্না করছে। মনোরা খেয়াল করলো, এলিজা গভীর চিন্তায় মশগুল। তরকারি পুড়ে যাচ্ছে,সেদিকে এলিজার কোন খেয়াল ই নেই।মনোরা এলিজার শরীরে হাত দিয়ে ভাবনা ভাঙিয়ে দেয়। এলিজা মনোরার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। এলিজার চোখে মনোরা হতাশার ছাপ দেখতে পেলো।মনোরা, শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো, বউমনি কি ভাবছো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কি হয়েছে? ছোট দাদাবাবুর সাথে মনোমালিন্য হয়েছে?
এলিজা মৃদু হেসে বললো, কিছু হয়নি।পাখির জন্য চিন্তা হচ্ছে খুব।মনোরা নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়। এলিজা মনোরা এবং মনজুরা_ কে উদ্দেশ্য করে বললো, তোমাদের ছোট দাদাবাবু কি কি খেতে পছন্দ করেন!তার পছন্দ অপছন্দ তোমরা তো জানো তাই না? এলিজার মুখে হঠাৎ এরকম প্রশ্ন শুনে, মনোরা মনজুরা দু’জনেই অবাক হয়।মনোরা শান্ত স্বরে বললো, হুম, সব জানি এবং মাঝেমধ্যে তার পছন্দের খাবার তৈরি ও করে দেই। এলিজা মৃদু হেসে বললো,তার কিন্তু সমস্যা আছে, সবকিছু খেতে পারবে না।মনোরা হ্যা সুচক মাথা নেড়ে বললো,হ্যা তা তো জানি। কিন্তু হঠাৎ আমাদের এসব বলতেছো কেন,তার যত্ন নেয়ার জন্য তো তুমি ই সারাজীবন থাকবে। এলিজা কিছু বললো না। উল্টো দিকে ঘুরে ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেললো।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়।নূরনেসা চাঁদনী দু’জনেই চলে গেছে। অপূর্ব জরুরি কাজে থানাতে গেছে।
এলিজা অর্পার ঘরে।অর্পার চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে এলিজা।অর্পা তার বউমনির সাথে এটা,ওটা ব্লা ব্লা বিভিন্ন কথায় মশগুল। এলিজা অর্পার কথা শুনছে আর মিটিমিটি হাসছে। এলিজা অর্পার চুল বাঁধতে বাঁধতে বললো, তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক খুব গভীর ।তাইনা!
অর্পা ভ্রু কুঁচকে দেয়। এলিজা ভাঙা গলায় বললো, ভাই বোনের সম্পর্কটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তম সম্পর্কের মধ্যে একটি ‌সম্পর্ক।বড় ভাই বাবার পরে দ্বিতীয় ছায়া।অর্পা এলিজার, দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, হঠাৎ এসব বলছো কেন? এলিজা মৃদু হেসে বললো,বলতে ইচ্ছে করলো‌। সবসময় ভাইয়ের কথা মত চলবে,।তাকে গুরুত্ব দিবে এবং তার খেয়াল ও রাখবে। এবং তোমার ভাই ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। এলিজার কথা বলার ধরন অন্য_রকম‌।অর্পা উপেক্ষা করে ‌।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এলিজা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা তারা দেখছে। চৈত্র মাসের আগমন। কিন্তু এখনো শেষ শীতের, শীতল হাওয়া বইছে। এলিজা চাদর পরে দাড়িয়ে আছে। এলিজা কাঁপা ঠোঁটে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে প্রার্থনা স্বরুপ,বলছে আমার মহারাজা কে ভালো রেখো। কখনো কোনদিন তোমার কাছে কিছু চাইনি। কিন্তু আজ চাইছি। ভালো রেখো আমার মহারাজা কে।
ধমকা হাওয়াতে এলিজার কপালের কাছের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুল গুলো,উড়ে উল্টো দিকে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় অপূর্ব। অপূর্ব ঘর থেকে দেখলো, এলিজা বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপলকে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।বিরবির করে কিছু বলছে। অপূর্ব বুঝতে পারলো এলিজা কোন অজানা ভাবনাতে মশগুল। অপূর্ব এলিজার কাছে গিয়ে এলিজাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। এলিজা চমকে উঠলো। অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো,কি ভাবছো? এলিজা মায়া ভরা দৃষ্টিতে অপূর্বর দিকে পরোখ করে।

অপূর্ব এলিজার কাদের উপর থুতনি রেখে, দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলো, হঠাৎ করে তুমি এরকম শান্ত হয়ে গেলে কেন?কি ভাবছো?কি হয়েছে ?এলিজা আকাশের দিকে তাকিয়ে, ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, গল্প শুনবেন? অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে বললো,কি গল্প? এলিজা মৃদু হেসে বললো,এক রাজার গল্প। অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে বললো, হুম শুনতে চাই। এলিজা নরম কন্ঠে বললো, আমার পাশে এসে দাঁড়ান। অপূর্ব এলিজার কথা মত এলিজার গা-ঘেষে দাঁড়ায়। এলিজা অপূর্বর কাদে মাথা রেখে বলতে শুরু করবে,ঠিক তখনই মনজুরা উপস্থিত হয়। মনজুরা এলিজা কে উদ্দেশ্য করে বললো, বউমনি হাসপাতাল থেকে ফোন আসছে। এলিজা হাসপাতাল এর কথা শুনেই বিষিন্নত হয়ে যায়। উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,কি বলেছে? মনজুরা বললো, আপনাদের চেয়েছে। এলিজা ,অপূর্ব দ্রুত পায়ে নিচে আসে।

অপূর্ব হাসপাতালের ল্যন্থলাইনে ফোন করলে,ওপাশ থেকে একজন নার্স ফোন রিসিভ করে বললো, শ্রাবন চৌধুরী ফোন করেছিল,।আমাদের ল্যন্থলাইন থেকে। অপূর্ব ভাবলো,হয়তো হাসপাতালে আমাদের দরকার। অপূর্ব এলিজা দু’জনেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে। এলিজা অঝরে ঘামছে।না জানি পাখির কিছু হলো। অপূর্ব এলিজার দিকে পরোখ করে বললো,এত ঘাবরাচ্ছ কেন!হয়তো সাধারণ কোন বিষয় হবে,তাই ডেকেছে। অপূর্ব এলিজা কে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ এর মধ্যে পৌছে যায় হাসপাতালে। এলিজা দ্রুত পায়ে হেঁটে আসে।পাখি এলিজা কে দেখেই মৃদু হাসে! এলিজা পাখির কাছে বসে কাপা কন্ঠে বললো,বোন আমার!

অপূর্ব শ্রাবন কে উদ্দেশ্য করে বললো, হঠাৎ ডেকে পাঠালি!কিছু হয়েছে? শ্রাবন শান্ত স্বরে বললো,পাখি , বউমনির জন্য মন খারাপ করেছে।তাই ফোন দিয়েছিলাম। এলিজা পাখির গালে আলতো করে হাত দিয়ে বললো,মনে পারছিলো?পাখি হ্যা সুচক মাথা নাড়ে। এলিজা পাখির কপালে চুমু খেয়ে বললো,এই যে আমি, আমার ছোট্ট পাখির কাছে চলে এসেছি।পাখি কাঁপা কন্ঠে বললো,আমায় একা রেখে যেও না। আমার আজকাল কিছু ভালো_লাগছে না।খুব উদাস উদাস অনুভব হয়।এই অনুভুতির কোন ব্যাখ্যা পাচ্ছি না। এলিজা পাখিকে শান্তনা দেয়। অপূর্ব শ্রাবন কে বললো,চল বাহির থেকে হেঁটে আসি। ততক্ষণে এরা দু_বোন মিলে গল্প করুক।

এলিজা পাখিকে নিজের কোলে সুইয়ে নেয়।পাখির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, সবসময় নিজের যত্ন নিবি, নিজেকে যেকোনো ভাবে আনন্দিত রাখার
চেষ্টা করবি।মুখে সবসময় হাসি ফুটিয়ে রাখবি।কারন যেকোনো পরিস্থিতিতে, হাঁসি আমাদের শক্তি যোগায়‌। শ্রাবন কেও ভালো রাখার চেষ্টা করবি। এলিজার কথা বলার ভঙ্গিমা একদম অদ্ভুত। পাখি নরম গলায় বললো, এভাবে কথা বলছো কেন?কিছু কি হয়েছে? এলিজা মৃদু হেসে বললো,কি হবে!তুই একটু হলেই ভয় পেয়ে যাস,তাই বললাম। পাখি এলিজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এলিজার চোখ মুখের রঙ ভিন্ন।তার আচরণ হঠাৎ বদলে গেছে।
কিছু তো হয়েছে কিন্তু বলছে না ‌।পাখি ভাবনা উপেক্ষা করে।

রাত প্রাই ১০:৩০। অপূর্ব শ্রাবন বাহির থেকে ফিরে আসে। শ্রাবন বললো,তোরা ফিরে যা।রাত অনেক হয়েছে। এলিজা পাখিকে শান্ত স্বরে বললো, সকালে আবার আসবো। এখন তুই ঔষধ খেয়ে সুয়ে পর।
অপূর্ব এলিজা দু’জনেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।যেতে যেতে অপূর্ব বললো,ম্যাডাম আপনার গল্প কিন্তু শোনা হয়নি। আজ রাত বসে কিন্তু আপনার গল্প শুনবো। এলিজা মৃদু হেসে হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।
রাত বেড়ে চলেছে। এলিজার দৃষ্টিতে হতাশা।মুখের হাঁসি নিমিষেই ফুরিয়ে গেছে । অপূর্ব পরোক্ষ করলো। অপূর্ব এলিজা কে খাটের উপর বসতে বলে। এলিজা খাটের উপর বসে। অপূর্ব এলিজার সামনে বসে, মৃদু হাসি দিয়ে বলল, এবার তোমার গল্প শোনাও। এলিজা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। অপূর্ব এলিজার থুতনি ধরে, এলিজার দৃষ্টি নিজের দিকে করে নেয়।বললো,আমি কিন্তু আজ গল্প না শুনে ঘুমাবো না। এলিজা বললো,শুনবেন?

শোনার জন্য ই বসে আছি।
এলিজা মৃদু হেসে বলতে শুরু করলো,এক ছিলো রাজা।রাজার ছিল প্রচুর অর্থ সম্পত্তি।তার অর্থ সম্পত্তির চেয়েও দামি মহর’ছিলো তার ৪ সন্তান।রাজার ছিল,৩ কন্যা এবং একটি পুত্র সন্তান।রাজার জীবনে ছিল সুখ আর সুখ।তার তিন কন্যা ছিলো ,রাজার বড্ড আদরের।রাজার বড় দুই কন্যার একজন ছিলো, সাহসী।আর একজন ছিলো ভীতি প্রকৃতির। এবং তার ছোট কন্যা সেও ছিল শান্ত স্বভাবের। পূত্রের কথা না বলি।সবকিছু মিলিয়ে রাজার রাজকিয়,রাজ্য ভালোই কাটছিল কিন্তু হঠাৎ ধেয়ে আসে তাদের জীবনে কালো ধোঁয়া।
অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছিল?

এলিজা বললো, রাজার বড় দুই মেয়ের বিয়ে পাকাপোক্ত হয়।তাও একই সঙ্গে।সবাই তাদের বিয়ে নিয়ে আনন্দিত ছিল।রাজা খুব খুশি হয়।কারন তার দুই মেয়ের বিয়ে একই সঙ্গে এবং একই ঘরে ঠিক হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই, পাত্র পক্ষ বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।রাজা খুব ভেঙে পরে কারন তার আত্মসম্মানে লেগেছে। গ্রামের সবাই তার দিকে আঙুল তুলতে শুরু করে।

রাজা অপমান সহ্য করতে পারতো না। চিন্তায় চেতনায় রাজা হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পরে। এবং এক পর্যায়ে মারা যান‌। তাকে হারানোর বেদনা তার বড় মেয়ে সহ্য করতে না পেরে,সে আত্ম,হত্যা করে। রাজার সুখের সংসার নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।সেই মুহূর্তে রাজার দ্বিতীয় কন্যা প্রতিজ্ঞা করে ,যে সে, এসবের প্রতিশোধ নিবে।
রাজার মেজো কন্যা , ফন্দি এঁটে,যে পাত্রের সাথে বিয়ে ঠিক হয়,তাকে আবেগের জ্বালে ফাঁসায়। এবং তাকে বিয়েও করে।

রাজার মেজো মেয়ের নাম ছিল মাহিরা।ফন্দি এঁটে যাকে বিয়ে করে তার নাম ছিলো,মাহের। মাহিরা চেয়েছিল মাহের এর পরিবার কে শেষ করে দিবে। এবং একপর্যায়ে মাহিরা ,মাহের এর অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের সবাইকে খু,ন করে। কিন্তু তা মাহের এর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে‌।মাহের ভেবেছিল তাদের
শত্রুরা খু,ন করেছে। এভাবে কেটে যায় অনেক বছর।মাহিরা ধিরে ধিরে মাহের এর প্রেমে পরে যায়। চেয়েছিলো মাহের এর সাথে ই বাকি জিবন টা কাটাবে।মাহের ও মাহিরাকে তার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু, একপর্যায়ে মাহিরার সমস্ত সত্যি ,মাহেরের সামনে চলে আসে। যে,মাহিরাই তার পরিবারের সদস্যদের হ,ত্যা করেছে।মাহের এই অন্যায় মেনে না নিতে পেরে , মাহিরাকে ১০১ টি তলোয়ারের আঘাতে হ,ত্যা করে। কিন্তু যখন মাহিরাকে হত্যা করে,তখন মাহের খুব ভেঙ্গে পরে।

পরবর্তীতে মাহের নিজেকে গুটিয়ে নেয় এবং দ্বিতীয় বিয়ে করে সুখে সংসার করে। এলিজা মৃদু হেসে তৎক্ষণাৎ বললো, সমস্ত পূরুষদের মাহেরের মত শক্ত হতে হয়।
অপূর্ব ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, নিশ্চয়ই ঐ লোকটি স্বার্থপর ছিলো। ভালোবাসার মানুষ টি যত বড়ই পাপি হোক না কেন,তাকে ক্ষমা করে দিতে হয়।আর যদি খু,নের বদলে খু,ন করতেই হয়,তবে আমি মাহেরের জায়গায় থাকলে নিজেকেও শেষ করে দিতাম।
অপূর্বর কথা শুনে এলিজা হকচকিয়ে উঠে। আহত কন্ঠে বললো, পূরুষদের মন শক্ত করতে হয়। অপূর্ব কিছুটা কর্কট মেজাজে বললো, তুমি আমাকে এই গল্প দিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছ?আর তুমি আজকে সকালে এটাই বা বললে কেন?যে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।আমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে?
এলিজা জ্বলজ্বল চোখে বললো,আমি না থাকলে কি আপনার খুব বেশি কষ্ট হবে?…..

এলিজা সকালে ঘুম থেকে উঠেই জাহাঙ্গীর এর ঘরে আসে।এসে দেখে জাহাঙ্গীর ঘরে নেই।এত সকাল সকাল কোথায় যাবে।এলিজা চারদিকে পরোখ করতে থাকে। জাহাঙ্গীর ঘরে নেই।এলিজা জাহাঙ্গীর এর ঘর ত্যাগ করে রান্না ঘরে চলে আসে।অর্পা আগে থেকেই রান্না ঘরে। এলিজা অর্পাকে রান্না ঘরে দেখে ইতস্তত বোধ করে বললো, এখানে কি করছো!যা দরকার আমাকে বলো!আমি বানিয়ে দিচ্ছি।অর্পা মৃদু হেসে বললো, কিছু দরকার নেই। তোমরা কিভাবে রান্না করো দেখতে আসলাম। আমার ও খুব ইচ্ছে করে রান্না করতে। এলিজা মৃদু হাসলো।অর্পা খেয়াল করলো এলিজার চোখ মুখে আতংক।কোন কারনে এলিজা নিশ্চুপ হয়ে আছে।অর্পা নরম কন্ঠে বলল, বউমনি!পাখির জন্য চিন্তা করছো বুঝি? এলিজা অর্পার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,হ্যাঁ মনটার ভেতর খুব কুহ ডাকছে।সবাইকে খাইয়ে আমি হাসপাতালে যাবো।

অপূর্বর ঘুম ভাঙ্গে অনেক্ষন। অপূর্ব বিছানার এপাশ ওপাশ করছে।কোন ভাবেই শান্তি পাচ্ছে না। অপূর্ব সোয়া থেকে উঠে বসে।মনের মধ্যে গহিন চিন্তা আহরন করেছে। এলিজার অদ্ভুত আচরন, চোখের চাহনি, কথা বলার ভঙ্গিমা, এবং প্রতিটি বাক্যে কিছু লুকিয়ে আছে।কি হয়েছে এলিজার। বাবর রাজ্য কি কিছু হয়েছে!নাকি এলিজার মনে ,অন্য কোন চিন্তা ভাবনা ঘর বেঁধেছে। অপূর্ব এসব ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। স্নানঘরে প্রবেশ করে ‌।হাত মুখ ধুয়ে স্বচ্ছল হয়ে বের হয়। তোয়ালে টা কাঁদের উপর রেখেই,খাটের এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছে। এলিজার হঠাৎ কি হলো।কেন গতকাল রাতে, ওরকম একটা গল্প শুনালো।আমিতো এলিজা কে,হ,ত্যা করার চিন্তা ভুলক্রমেও ভাবিনি।কারন ভালোবাসার মানুষ টিকে কখনো ঘৃনা করা যায়না। অপূর্ব এসব বিরবির করে বলতেই,ঘরে উপস্থিত হয় এলিজা। এলিজা দেখলো অপূর্ব মুখ ভার করে বসে আছে।এলিজার ভাবনায় অপূর্ব মশগুল তা , এলিজা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। অপূর্বর ফ্যাকাশে মুখ এলিজা কে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। এলিজা নিজের মস্তিষ্ক স্বচ্ছল করে নরম গলায় বললো, এতক্ষনে ঘুম ভাঙলো! অপূর্ব এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,ঘুম আর হলো কোথায়। তুমি যা শুরু করেছো।কি সব উল্টা পাল্টা গল্প শোনালে।

এলিজা স্বাভাবিক আচরনে বললো, এভাবে বলবেন না।আমি তো আপনাকে শুধু একটা গল্প ই শুনেয়েছি।তার জন্য এত ভাবনা! অপূর্ব ভাবনা উপেক্ষা করে বললো,বাদ দাও এসব। তুমি শুধু আমার হয়ে থাকো,বাকি সবকিছু আমি দেখে নিবো। এলিজা মৃদু হেসে বললো, আমি পাখির কাছে যেতে চাই। গতকাল আমাকে দেখে কতটা খুশি হয়েছিলো।আমি ওর কাছে থাকলে ও হয়তো, শান্তি এবং ভরসা পায়। অপূর্ব সম্মতি জানিয়ে বললো,আমিও যাবো।
এলিজা যাওয়ার জন্য তৈরি হয়।সাথে অপূর্ব। অপূর্ব খেয়াল করলো, এলিজা এক_পলকে মেঝের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে কিছু ভাবছে, অপূর্ব ভাবনা ভাঙিয়ে বললো,কি ভাবছো?
এলিজা কাঁপা গলায় বলল,মনের ভেতর অস্থিরতা অনুভব হচ্ছে। শুধু কুহ ডাকছে‌। কিছু একটা হবে। ভালো লাগছে না কিছু। অপূর্ব এলিজার দুই গাল আলতো করে ধরে বললো, এরকম ভাবনাকে উপেক্ষা করো। কিছু হবে না।যা হবে ভালো ই হবে।
অপূর্ব এলিজা বেড়িয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
পিজি হাসপাতাল–

শ্রাবন সিটের উপর বসে আছে।চোখের কার্নিশে কার্নিশে রক্তের ছাপ। শ্রাবন দু হাতের উপর থুতনির ভর দিয়ে বসে আছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় এলিজা অপূর্ব। শ্রাবন অপূর্ব, এলিজা কে দেখে হকচকিয়ে উঠে দাড়ায়। শ্রাবণের চোখে হতাশার ছাপ ‌। অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো,কি হয়েছে তুই বাহিরে! শ্রাবন অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে বললো,পাখির শেষ রাত থেকে কান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। শ্রাবন ভারী গলায়,ফোপাচ্ছে। অপূর্ব শান্তনা মূলক কন্ঠে বললো, কিছু হবে না।এত ভেঙে পরছিস কেন! এরকম টা হয়।এত ঘাবরাস না। এলিজা সিটের উপর ধপাস করে বসে পরে‌। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়।চোখ দিয়ে অঝরে পানি গড়িয়ে পরছে। এলিজা বিরবির করে বলছে,পাখির কিছু হয়ে গেলে, পরপারে মা বাবাকে কি জবাব দেবো,আমি যে পারলাম না, পাখিকে বাঁচাতে।এই বুঝি হারিয়ে ফেলছি।

তৎক্ষণাৎ ডাক্তার পাখির চেকাপ-করে বের হয়।ডাক্তার অস্থিরতা দৃষ্টি নিয়ে বললো, পাখির শরীর থেকে অনেক রক্ত বেড়িয়ে গেছে। জরুরি ০-নেগেটিভ রক্ত লাগবে। কিন্তু এই গ্রুপের রক্ত আমাদের হাসপাতালে নেই।মিরপূর প্রাইভেট হাসপাতালে পাবেন। শ্রাবন দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়। রক্তের জন্য।শ্রাবন পথ ভুলে যাচ্ছে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র আচরে পরছে । শ্রাবনের ভেতরের ধুকবুকানি টা ধিরে ধিরে বেড়ে চলেছে। শ্রাবন গাড়ি নিয়ে বের হয় মিরপুরে প্রাইভেট হাসপাতাল এর উদ্দেশ্যে। শ্রাবন ধিরে ধিরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর এগোলেই গাড়ি আটকে যায় ভরা জ্যামে। শ্রাবন সামনে উঁকি দিয়ে দেখলো, অনেক রাস্তা অব্দি জ্যামের ভরাকান্ত।

শ্রাবন স্টেরিয়াং এ ক্রোথে এক ঘুষি মেরে জ্বলজ্বল চোখে বললো, আমার সাথে ই কেন এমনটা হয়। শ্রাবন দেখলো জ্যাম ছুটছে না। শ্রাবন গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে থাকে।ভরা জ্যামের মধ্যেখান থেকে,অঝরে কাঁদতে কাঁদতে ছুটছে শ্রাবন। কিছুক্ষণ এর মধ্যে পৌছে যায়, প্রাইভেট হাসপাতালে।রক্ত নিয়ে ফিরে আসে পিজি হাসপাতাল। শ্রাবন নিজেদের গাড়ি মাঝপথে ই ফেলে রেখে এসেছে সেদিকে কোন খেয়াল ই নেই। রিকশা নিয়ে চলে আসে পিজি হাসপাতালে। শ্রাবন হাসপাতালের ভেতরে যতই এক কদম দু কদম -করে প্রবেশ করে ততই শ্রাবণের বুকের ভেতর ধুকবুকানি টা বেড়ে যাচ্ছে ।শ্রাবন দ্রুত পায়ে হাঁটার চেষ্টা করলে, নিমিষেই নিস্তেজ হয়ে যায়।পায়ের শক্তি ফুরিয়ে যায়।

শ্রাবন আইসিইউর সামনে আসতে আসতে দেখলো, জাহাঙ্গীর,অর্পা, মমতাজ ,বাড়ির কাজের মহিলা,সহ শ্রাবণের দুজন বন্ধু সবাই উপস্থিত। এলিজা অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। শ্রাবন অপূর্ব কে কাপা কন্ঠে বললো,কি হয়েছে,সবাই এখানে কেন!কেউ শ্রাবণের কথার উত্তর দিলো না।সবার দৃষ্টি সংযত। শ্রাবন,ধির পায়ে আইসিইউর ভেতরে প্রবেশ করলে ,যা দেখে তৎক্ষণাৎ শ্রাবণের হাত থেকে রক্তটা মেঝেতে পরে যায়।শ্রাবনের চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে যায়। হৃদয়ের কম্পন ধিরে ধিরে বন্ধ হয়ে যায়।পাখিকে সাদা কাপড়ে- মুড়ি দিয়ে রেখেছে। পাশে থাকা ডাক্তার নিচু গলায় বললো, দুঃখিত আমরা পাখিকে বাঁচাতে পারিনি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে,হার্টের কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রাবন পাখির কাছে এগোয়।কাপা হাতে সাদা কাপড় টা মুখের উপর থেকে সরায়। শ্রাবন কাপা ঠোঁটে বললো,এই পাখি ,পাখি,চোখ খুলো,পাখি।শ্রাবনের কথা বলার শক্তি টুকু নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আমতা আমতা করে,কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,পাখি ,আমি জানি, আমার সাথে মজা করছো। এখানের সবাই মজা করছে।তু, তুমি কথা দিয়েছিলে না সারাজীবন আমার সাথে থেকে যাবে।তা, তাহলে আমায় রেখে কিভাবে যেতে পারো!এই ছলনাময়ী!, বেইমানি করলে আমার সাথে।আমায় নিঃস্ব করে রেখে যেতে পারলে,কি করে পারলে আমায় চিরদিনের জন্য শেষ করে দিতে।এই পাখি ,পাখি,। শ্রাবন বুক ফাটা কান্না শুরু করে।পাখির মৃত দেহটাকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নেয়।শ্রাবনের কান্নার শব্দে চারদিক থেকে হাসপাতালে থাকা লোকজন চলে আসে।

নিশ্চুপ হয়ে গেছে চারদিক। আকাশের নিল রঙ বদলে নিমিষেই কালো হয়ে গেছে।থমকে যাচ্ছে শ্রাবন। থমকে যাচ্ছে শ্রাবণের হ্রদয়। শ্রাবন রক্তমাখা চোখে,কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে শুরু করে,কি করে থাকবো আমি তোমায় ছাড়া।কি করে বাঁচবো আমি তোমায় ছাড়া। আমার যে , বুকের ভেতর টা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে।পাখি চোখ খুলো। একটা_বার আমার ডাকে সাড়া দাও। অপূর্ব, শ্রাবন এর বন্ধুরা এসে শ্রাবন কে সামলানোর চেষ্টা করে। মমতাজ তার ছেলের হাহা,কার দেখে অঝরে কাঁদছে।মনে মনে বলছে, সৃষ্টি কর্তা, তুমি তো মিরাক্কেল করতে পারো,তবে কি পারো না আমার রুহ টাকে কেড়ে নিয়ে পাখিকে বাঁচিয়ে তুলতে।আমি যে , আমার ছেলের কান্নার আহা,জারি দেখতে পারছি না।

শ্রাবন পাখির নেতিয়ে থাকা মৃত দেহটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। শ্রাবন ডাক্তার কে উদ্দেশ্যে করে কাপা ঠোঁটে, কাঁদতে কাঁদতে বললো,এই ডাক্তার এমন কিছু করুন যাতে আমিও মরে যাই,আমার শরীরে বিষ প্রয়োগ করুন।আমি বাঁচতে চাই না। আমি পাখির কাছে চলে যেতে চাই।পাখির সাথে সারাজীবন থাকার কথা দিয়েছি।আমি এই কথা রাখতে চাই,আমাকে মেরে ফেলুন। এরপর আমাদের একসাথে মাটি দেয়া হোক।আমি কবরেও পাখির সাথে থাকতে চাই।মেরে ফেলুন না আমায়।

শ্রাবনের কান্নায় থমকে যাচ্ছে চারদিক।পূরো পৃথিবীর সমস্ত ভার শ্রাবণের উপর আচরে পরছে।শ্রাবনের বুক ফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পরছে দেয়াল।থমকে যাচ্ছে প্রকৃতি। অপূর্ব হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে। নিজেকে শক্ত করে শ্রাবন কে পাখির কাছ থেকে সরিয়ে নেয়।৪জন ওয়ার্ডবয় এসে পাখির মৃত দেহ নিয়ে যায় হাসপাতালের বাহিরে থাকা এ্যাম্বুলেন্সের উদ্দেশ্যে।এলিজা ফোপাচ্ছে। নিস্তেজ হয়ে বসে আছে। মমতাজ শান্তনা দিচ্ছে। জাহাঙ্গীর কাঁপা কন্ঠে বললো,সবার বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হওয়া দরকার।সবাই শ্রাবনকে ধরে নিয়ে যায়।শ্রাবনের হাটার মত শক্তি নিমিষেই ফুরিয়ে গেছে। শ্রাবণের বুক ফাটা কান্না থামছে না। আশেপাশের সবাই শ্রাবনের আ,হাজারি দেখছে।
সবাই ফিরে আসে বাড়িতে।

পাখির মৃত দেহ রাখা হয় বাড়ির সামনে।শ্রাবন খাটিয়ার কাছে হাঁটুঘেরে বসে পরে।কাপা কন্ঠে বললো,কি করে থাকবো তোমায় ছাড়া।পাখিহীন শ্রাবন যে, নিঃস্ব। শ্রাবণের দু’চোখ থেকে গড়িয়ে বিন্দু বিন্দু পানি পরছে মাটিতে। অপূর্ব শ্রাবণের পাশে এসে শান্তনা মূলক কাদে হাত রাখে। শ্রাবন ,অপূর্বর পা দুটো জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো, আমার কাছ থেকে পাখিকে কেড়ে নিস না। আমি যে,পাখিকে ছাড়া থাকতে পারবো না। শ্রাবন অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে ক্লান্তি ঠোঁটে বললো,এই ভাই, জিবিত মানুষ কে কি কবর দেয়া যায়না! তাহলে আমাকেও পাখির সাথে কবর দে।না হয় আমাকে মেরে ফেল।
অপূর্ব এলিজাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। এলিজা ভাঙা গলায় বললো,আমি পারলাম না আমার বোনটাকে বাঁচাতে।পারলাম না পাখিকে আর কিছুদিন খুশি রাখতে। এলিজার চোখের পানি অপূর্ব মুছে দিয়ে বললো, এভাবে ভেঙ্গে পরো না।শান্ত হও।নয়তো,পাখির আত্মা কষ্ট পাবে।
ইমাম সাহেব আসেন। জাহাঙ্গীর এর সাথে কথা বলে। ,আসরের পর পাখির জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নির্ধারিত করে।

পাখি কে কিছু মহিলারা গোসল করানো শুরু করে। শ্রাবন মেঝেতে লেপ্টে বসে আছে। শ্রাবন কান্না করছে।তবে কান্না শব্দহীন। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো পাখির ফেলে যাওয়া স্মৃতির জন্য ছিরে যাচ্ছে। মমতাজ শ্রাবণের পাশে বসে ,কাপা ঠোঁটে বললো, নিজের মনকে শক্ত কর।পাখিকে যে তোর স্ত্রি।তুই এভাবে কাঁদলে পাখির আত্মা কষ্ট পাবে।তুই কি চাস পাখি কষ্ট পাক! শ্রাবন হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছে।
কষ্টে ,বেদনায় , হাহাকারে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়।ইমাম সাহেব সবাইকে জানাযায় ডাকে। অনুষ্ঠিত হয় জানাযা।

চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে কবর খোঁড়া হয় পাখির জন্য।ইমাম সাহেব বললো,খাটিয়া, ৪ জনে ধরে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হোক। অপূর্ব শ্রাবন কে নিচু কন্ঠে বললো,খাটিয়া ধরতে হবে!
শ্রাবন রক্তমাখা চোখে ধির কন্ঠে বললো, আমার শক্তি নেই।
অপূর্ব চোখ দুটো বড় বড় করে শ্রাবন কে দেখলো।বুকের ভেতর চাপ চাপ বেথা অনুভব করলো। অপূর্ব বিরবির করে বললো, যেই শ্রাবন ১০০ টা আসামির সাথে লড়তো,সে আজ নিজের স্ত্রীর খাটিয়া ধরার মত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত,প্রিয় মানুষ টা কাছে থাকলে, তারজন্য সবকিছু ধ্বংস করে দেয়ার মত শক্তি জন্মায়।আর যখন প্রিয় মানুষটি একা করে চলে যায় ,তখন চোখের পলক ফেলার মত শক্তি ও ফুরিয়ে যায়।
পাখির দাফনের কাছ সম্পন্ন হয়। এঁকে এঁকে সবাই চলে যায়। শ্রাবন পাখির কবরের কাছে উপস্থিত হয়। ধপাস করে হাঁটু ঘেরে বসে পরে। নিস্তেজ শরীর নিয়ে বিরবির করে বললো, কিভাবে পারলে আমায় রেখে চলে যেতে। কিভাবে থাকবো আমি।কি করে বাঁচবো। কষ্ট হচ্ছে যে বড্ড। সবকিছু খালি খালি লাগছে। শ্রাবন অঝরে কাঁদতে থাকে। অপূর্ব এসে জোড় করে শ্রাবন কে ঘরে নিয়ে যায়।

রাত ৯ টা নাগাদ।
এলিজা ঘরের ফ্লোরে লেপ্টে বসে আছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। অপূর্ব চেয়ারে বসে আছে। এলিজার চোখে পানি অপূর্ব সহ্য করতে পারছে না।
শ্রাবন ঘরের এক কোণে বসে আছে। নিজের হাতে পাখির জন্য তৈরি করা পেইন্টিং টা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ‌।কাপা কন্ঠে বিরবির করে বলছে কি করে পারলে আমায় রেখে যেতে।পূরো পৃথিবী আজ নিস্তব্ধ। নিঃস্ব চারদিক।শ্রাবনের মুখের হাঁসি চিরদিনের জন্য চাঁপসে গেছে।
রাত বেড়ে চলেছে তবে এই রাত শেষ হবার নয়।

এলিজা পর্ব ৮১+৮২

মমতাজ শ্রাবণের ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।ছেলের নিস্তেজ মুখ,যে তার সহ্য হচ্ছে না। মমতাজ শ্রাবণের ঘরে এসে দেখলো শ্রাবন ঘরে নেই। মমতাজ হকচকিয়ে উঠে।বাড়ির সব জায়গায় খুজলো।কোথাও শ্রাবন নেই। মমতাজ আহত কন্ঠে বলল, কোথায় যাবে শ্রাবন। আবার আত্ম,হত্যা…. বলেই মমতাজ মুখে হাত চেপে ধরে

এলিজা পর্ব ৮৫+৮৬